রাষ্ট্রপতির সর্বচ্চ পদটিকে সংবিধানের জাতাকলে পিষ্ঠ
বাংলাদেশ সংবিধান রাষ্ট্রপতি........
রাষ্ট্রপতি হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রধান, কিন্তু এই সর্বচ্চ পদটিকে সংবিধানের জাতাকলে পিষ্ঠ করা হয়েছে। এটা এখন নামসর্বস্য সর্বচ্চ পদ যা এখন মন্ত্রি পরিষদ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মন্ত্রি পরিষদ থেকে পাশ করা সিদ্ধান্ত হ্যাকে হ্যা বলা, নাকে না। এমনকি সংসদে রাষ্ট্রপতি যে বক্তব্য দেবেন সেখানে তার একটি ভাষা বা শব্দ ব্যবহারেরও সুযোগ,নেই। রাষ্ট্রপতির লিখিত ভাষণ তৈরী করে মন্ত্রিসভায় অনুমোনের পর। রাষ্ট্রপতি শুধু নিয়ম রক্ষায় সংসদে দাঁড়িয়ে তা পাঠ করেন। রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেন না। ভাষণ পাঠ করেন। রাষ্ট্রপতির মত এত বড় একটি পদ এখন সেটি স্বাক্ষরের জন্য রোবটের ভূমিকায় রাখা হয়েছে। এ প্রসংঙ্গে একটা গল্প বলি চাকলাদার বাড়ীর বউ করিমন, অনেক বড় সংসার, অর্থ পতিপত্তির কমতি নেই। ছেলে মেয়ে অনেক গুলো তবে প্রত্যেকটি ছেলে মেয়েরই জ্ঞান বুদ্ধি জন্ম গত ভাবেই কম। হঠাৎ করে তার স্বামী গৃহকর্তা মতলব আলী হার্ট এ্যাটাক করে মৃত্যু বরণ করেন। অর্থবৃত্ত থাকলেও সংসারটা পড়ে যায় অথই সাগরে। করিমনও বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। পাড়া পতিবেশিরাও খুব একটা ভাল না। এত গুলো সন্তান সন্তততি নিয়ে সে কি করবে। একসময় মনস্থির করল দুর্সম্পর্কের নাতি মদন লালকে তার সংসারে নিয়ে আসবে। ছেলেটি দেখতে শুনতে ও বেশ ভাল, সুঠাম দেহের অধিকারী জ্ঞান বুদ্ধিতে চাটুল্য। অল্প বয়সে মা মারা যায়। বাবা এখন তাইয় আব্বা হয়েছে। বিয়ে করে দিব্বি সংসার করছে। করিমন মদনলালকে বোঝায় আমি তোমাকে করুনা করে আমার সংসারে নিচ্ছিনা। বরঞ্চ সম্মান দিয়ে নিতে চাই। এখন থেকে আমার সংসারের সকল দ্বায়িত্ব তোমার। তুমি আমার সংসারের প্রধান, একমাত্র মাথা। তুমি এখন থেকে আমার সংসারের মোড়ল। এটা শুনে তো মদন খুশিতে বাকবাকুম। তবে শর্ত হচ্ছে, আমার কথার বাইরে কোন কাজ করতে পারবেনা। আমি যা বলব তুমি শুধু তাই শুনবে, কোন প্রতি উত্তর করতে পারবেনা। তবে শর্ত যেটাই হোক একটা সংসারের মোড়ল হওয়া তো আর কম কথা নয়, তাতেই সে রাজি। এভাবে দিন বেশ ভালই কাটছিল। একদিন এক লোক হাপাতে হাপাতে চাকলাদার বাড়ীর সামনে এসে হাজির । বৈঠক খানায় বসা ছিল মদন লাল । আগত ব্যক্তি তাকে উদ্দেশ্যে করে বলে ভাই এই বাড়ীর কর্তা কে? মদন বলে আমি। ভাই ভাই আমাকে একটি সাপে তাড়া দিয়েছে ভেতর থেকে একটা লাঠি এনে দেবেন? মদন লাল বলে পারবোনা। লাঠি দেবে কি দেবে না সেটা আমার নানি জানে। আগত ব্যক্তি মদন লালের উপর ভিষণ রেগে গিয়ে বলল বাড়ির কর্তা হয়ছো সাপ মারা লাঠি চাইলে বল নানি জানে, একটা লাঠি এনে দিতে পার না মোড়ল মাড়াও। প্রসংগ ক্রমে গল্পটা চলেএলো ২০১৩ সালে রাজনৈতিক সংকট নামের শাপে যখন তারা করছিল আমাদের পুরো জাতীকে। দংশনের শিকার হচ্ছিল সাধারণ মানুষ ঠিক সেই সময় এই রাজনৈতিক সংকট নামের শাপকে মারার জন্য সংবিধান প্রনেতা ড. কামাল হোসেন সিভিল সোসাইটির বিশিষ্টজনদের সাথে নিয়ে রাষ্ট্রের প্রধান রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি পদে শপথ নেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে বলেছিলেন রাজনৈতিক এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে আপনি ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখতে পারেন। উত্তরে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সংবিধান খুলে বিনয়ের সঙ্গে ড. কামাল হোসেনকে বলেন সংবিধানটা তো আপনিই তৈরী করেছেন। সংবিধানের প্রতি আনুগত্য রাখার শপথই তো আমি নিয়েছি। আমাকে দেখান তো শপথ অনুযায়ী সংবিধানের কোন জায়গায় সুযোগ আছে ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখার? নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংকটকালে তৎকালীন নেতা বেগম খালেদা জিয়া জোট নেতাদের নিয়ে বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন দাবিনামা নিয়ে। রাষ্ট্রপতিকে সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তার বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই বলেছিলেন আমার এখানে এসেছেন, আগে চা- নাশতা করুন, তারপর আলোচনা করা যাবে। খাওয়া শেষে বেগম খালেদা জিয়ার দাবিনামা হাতে নিতে তিনি বললেন, আপনার আর প্রধানমন্ত্রীর এক জায়গায় মিল আছে! শুনেই বেগম খালেদা জিয়া নড়েচড়ে বসে জানতে চাইলেন- মিল মানে? উত্তরে স্বভাবসূলভ ভঙ্গিতে রাষ্ট্রপতি তাকে বললেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কতটা ছিনিয়ে নেওয়া যায় সে ব্যাপারে আপনারা দু-জনই বেশ দক্ষ্য। এমনকি সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ আপনারাই তৈরী করেন, আপনারাই মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করেন। রাষ্ট্রপতি শুধু নিয়ম রক্ষায় সংসদে দাঁড়িয়ে তা পাঠ করেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সেদিন খালেদা জিয়াকে বলেছিলেন, সংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতিকে পঙ্গু বানিয়ে রেখেছেন। একজন পঙ্গু মানুষের কাছে কী চাইতে পারেন, আর কীইবা দিতে পারে!
এবার বলুন এই সংবিধান কাদের জন্য?
এবার বলুন এই সংবিধান কাদের জন্য?
মন্তব্য করতে ভুলবেন না ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মীর মামুন হোসেন ০৬/০২/২০১৪
ধন্যবাদ