আঁধারে আলো
দৃশ্য/এক
(গ্রাম্য পরিবেশ আক্কাচ আলীর উচুঁ পোতা ছনের চালের ঘর সামনে খোলা উঠান মধ্য বয়সি গেজ্ঞি গায়ে লুঙ্গি পরা আক্কাচ আলী ঘরের দাওয়ায় বসা। সস্তা তাতের শাড়ী পড়া আম্বিয়ার প্রবেশ। তাদেখে -- )
(গ্রাম্য পরিবেশ আক্কাচ আলীর উচুঁ পোতা ছনের চালের ঘর সামনে খোলা উঠান মধ্য বয়সি গেজ্ঞি গায়ে লুঙ্গি পরা আক্কাচ আলী ঘরের দাওয়ায় বসা। সস্তা তাতের শাড়ী পড়া আম্বিয়ার প্রবেশ। তাদেখে -- )
আক্কাচ ঃ ও আলোর মা ক-নে গিলে খালোই আর জালগাছ আইনে দাও (স্বগত) খালে বিলে মাছ গেছে
কুইমে এহন আর বড় বড় কৈ মাগুর শিং পাওয়া যায় না । (আম্বিয়া সব এনে দেবে) কই গামছা
আইনলেনা।
আম্বিয়া ঃ এগুলো তুমি একটু নিয়ে নিতি পারোনা? আমার কত ঝামেলা, (চলে যেতে পিছনে ফিরে
বলবে) আর শোনো আসার সময় মাষ্টের বাড়ি ঘুইরে আইসো আলোর জন্ন্যি প্রাইভেট মাষ্টার
লাগবে।
আক্কাচ ঃ মাষ্টার লাগবে কি এত্তি- ও নিজি নিজি পড়ুক।
দৃশ্য/ দুই
(গ্রামের মোঠো পথ ধরে আসার সময় হামেদ মোল্লা ডাকবে ।)
হামেদ ঃ ও আক্কাচ আলী দাঁড়াও (কাছে এসে ) তুমার ম্যাইয়েডা তো ভাল শ্যাকনা অইয়ে উঠিছে দেইহ
পড়তি পড়তি যেন কারো ঘাঁড়ে না উইঠে পড়ে । ভাবগতি ভালঠেকতিছেনা।
আক্কাচ ঃ আপনি কি কতি চাচ্ছেন ভাল এইরে বুঝোয় কন, আমি অতো প্যাচের কতা বুঝিনে ।
হামেদ ঃ না মানে কতিলাম ম্যাইয়ে মানসির অতো লিহা পড়া শিহে কি হবে । ওরে বিয়ে দিয়ে দেও তা না
হলি তুমার মুহি ----------। (হামেদ তার কথা দিয়ে একটা খারাপ কিছু বুঝাতে চায়)
আক্কাচ ঃ কিন্তু আলোর মা তো কয় মাইয়েগে বেশি লিহা পড়া করা দরকার ।
হামেদ ঃ ওই তো সমস্যা- তুমি সরল মানুষ। কিন্তু তোমার বউ ডা বড় বেশি চালাক । (আক্কাচ খুশি হয়ে )
আক্কাচ ঃ হ হ ঠিক ধরিছেন- আমার বউ লিহা পড়ে জানেতো তাই আমার চাইয়ে এট্টু বেশিই বোঝে ।
হামেদ ঃ যা কইচি তাই, তুই মাইয়ে মানুষ রান্নাবাড়া করবি, ছাল মাইয়ে মানুষ করবি, আর স্বামীর
খেদমত করবি। তোরে আল্লা বান্নাইছে সেই জন্ন্যি।
আক্কাচ ঃ ঠিক কইছেন হামেদ ভাই কিন্তু আমি কি এরি। মাছ ধইরে বেইচে খাই । কিন্তু সারা বেলা কষ্ট
এইরে দ্যাহেন এই পাইছি। (মাছের ব্যাগ দেখাবে হামেদকে)
হামেদ ঃ এই তো পাবা অলক্ষি বিটি মানুষ যার ঘরে তার কপাল এমনি এইরেই পোড়ে। এই আমি এহন
যাই কাজ আছে ।পরে কতা হবেনে ।
আক্কাচ ঃ ঠিক আছে আমিও আইজ বাড়ি যাইয়ে মুগুর দিয়ে বুঝোবানি ।
দৃশ্য/তিন
(আক্কাচ রাগান্নিত ভাবে বাড়ি ফিরছে এমন সময়, বাড়ির সামনে সেলিমের সাথে দেখা। )
সেলিম ঃ ও --- কা ওরাম এইরে আইটে আসতিছো ক্যান । দ্যাহি কি মাছ পাইছো
আক্কাচ ঃ এই আমার মাথা গরম তোর মাছ দেকতি অবে না তুই যা ।
সেলিম ঃ তোমর মাথা গরম ক্যান- মাছ পাওনি
আক্কাচ ঃ (রাগান্নিত ভাবে) হামেদ মোল্লা কলো অলক্ষি বিটি মানুষ ঘরে থাকলি কপাল পোড়ে ।
সেলিম ঃ শালা হামেদ মোল্লা- কাকার মাথাডা খাইছে (স্বগতো) কাকা খালে বিলে মাছতো তোমরাই হতি
দেওনা । হামেদের কথায় কাকির দোষ দিয়ে লাভ কি ?
আক্কাচ ঃ এই আমরা মাছ হতি দিইনে- এই এর মানে কি ?
সেলিম ঃ মানে তো সহজ কাকা আমার ছোট ভাই বাজারেত্তে আধা কেজি কৈ মাছ আনিছে। তাতে ধরো
৬০/৭০ ডে হবে। সে গুলোর তো হাতুড় ও ছাড়াইনি সরকার তো মাঝে মাঝে খালে বিলে মাছ
ছাড়ে সেই চাড়া মাছ গুলো তোমরা ধইরে আইনে বাজারে বেচো । এই ছোট মাছ যদি তোমরা ধইরে না বেইচতে তালি খালে বিলে আরো বেশি মাছ হতো। তোমাগের ধারেত্তে এই মাছ যারা কেনে তাগের ও শাস্তি হওয়া উচিত ।
আক্কাচ ঃ এই তুই এহন এনতে যা- আমার মাথা টাতা ঘুত্তিছে । (আক্কাচ বির বির করে বলতে বলতে হেটে
বাড়ির রওনা দিল) হামেদ মোল্লা কি কলো আর অইতি কি কলো- কিন্তু সেলিম মাছের কতা তো
ঠিকি কইছে ।
দৃশ্য/চার
(রাসেল আর আলো গ্রামের পথ ধরে কথা বলতে বলতে হাটছে )
রাসেল ঃ আমার কি মনে হয় জানিস ।
আলো ঃ কি মনে হয় তোর ।
রাসেল ঃ আমাগে দেশ টা আগুতি আগুতি কিরাম যেন পিছোয়ে যাচ্ছে ।
আলো ঃ কিরাম অলো কতাডা ?
রাসেল ঃ দ্যাখ সরকারী বে-সরকারী সংস্থা গুলো শিক্ষা, সংস্কৃতি, নারী উন্নয়নের কত চেষ্টা করতিছে কিন্তু
মানুষ সচেতন হচ্ছে না । কিছু মানুষতো নারী নির্যাতনের বিভিন্ন রকমের আজে বাজে ফতোয়া
দিয়েই যাচ্ছে ।
আলো ঃ হ সত্যি কতা কইছিস। শালার হামেদ মোল্লা গ্রামডা জ্বালায় পড়ায় খাচ্ছে। কয় দিন আগে
আমাগের ঘরে একটা অশান্তি বাদাইলো।
রাসেল ঃ চল বাড়ির দিকে যাই ।
দৃশ্য/পাঁচ
(সামাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাবার সময় কান্না ও চেচামেচি শুনতে পায়।
সামাদ ঃ এই শোন আমি বাড়ি আইসি যেনো তোর এই মাইয়ি না দেহি। মাইরে ফেরবি কি এতিমখানায়
দিবি তুই জানিস । যদি দেহি তোরে আমি তালাক দেবো মনে থাহে যেনো ।
(সামাদ ব্যাপারি বাড়ির বাইরে চলে যায়)
জরিমন ঃ ও--রে আল্লা আমি এহন এই দুই দিনির ম্যাইয়ে নিয়ে কনে যাবো। নিজির প্যাটের সন্তান আমি
কি কইরে মাইরে ফেলবো । আমারে তো তালাক দেবে। আমি এহন কি করবো আল্লা
আলো ঃ চল তো ভিতরে যাইয়ে দেহি কি হলো ।
রাসেল ঃ চল যাই- সামাদ ব্যাপারি লোকটা ভাল না খালি বিয়ে করে আর মাইয়ে হয় দেইহে বউ তালাক
দেয়।
আলো ঃ বহু বিবাহ আইনত অপরাধ। তার পর এত অত্যাচার চল যাই।
দৃশ্য/ছয়
(হামেদ মোল্লার সাথে রাস্তায় ব্যাপারির দেখা)
হামেদ ঃ ও ব্যাপারি খবর কি ?
সামাদ ঃ আরে খবর আর কি- আবার সেই মাইয়ে ।
হামেদ ঃ তোমারে কইলাম না মাইয়ে মানুষ ভাল না হলি তার পাটে খালি মাইয়েই হয় । তুমি আর একটা
রিস্ক নিয়ে দেহ কি হয়।
সামাদ ঃ তা-ই চিন্তা করিছি হামেদ ভাই ।
হামেদ ঃ আচ্ছা ঠিক আছে পরে কতা কবানি- সালিশ আছে যাই ।
দৃশ্য/সাত
(সামাদের বউ জরিমন কণ্যা শিশুটি বুকে নিয়ে কাঁদছে আলো রাসেলের প্রবেশ)
আলো ঃ কি হইছে আপনি কানতিছেন ক্যান ?
জরিমন ঃ এই দেহেন আপা মাইয়ে হইছে দেইহে আমারে তালাক দেবে। মাইয়ে মাইরে ফেলতি
কয়। আমার কি দোষ আপা।
রাসেল ঃ ছুয়াল মাইয়ে যা অবে তার জন্ন্যি তো পরুষই দায়ি এ-নি নারীর কোন ভূমিকা নেই বল্লিই চলে।
আলো ঃ আপনি কোনো চিন্তা কইরেন না- আপনের স্বামী মানবাধিকার লঙ্ঘন করিছে। নারী ও শিশু
নির্যাতন আইনে সরকার এর বিচার করবে।
রাসেল ঃ সামাদ ব্যাপারির জেল হবে। সাতে ঐ কু-বুদ্ধিদাতা হামেদ মোল্লারও ।
জরিমন ঃ আমি আপনাগে পায় ধরতিছি- আপনারা আমার স্বামীরে জেলে দিয়েন না। খালি আমরা যাতে
শান্তিতে থাকতি পারি তার ব্যবস্থা কইরে দেন । আমি আর কিছু চাই নে ।
আলো ঃ এত বড় অন্যায় যারা করে আপনারাই তাগের বাঁচান। পরে তো সে আপনার উপর আরো বেশি
অত্যাচার করতি পারে। আচ্ছা ঠিক আছে আমরা আপনার খোঁজ খবর রাখবো- চল যাই।
দৃশ্য/আট
(আক্কাচের বাড়ি আলোর প্রবেশ বারান্দায় বসা আক্কাচ হুকা টানছে আম্বিয়া একটু দুরে দাঁড়ানো। )
আক্কাচ ঃ এই যে তোমার মাইয়ে আইছে জিঞ্চেস কইরে দ্যাহো কনে গেইলো । কইনি আমার অতো লিহা
পড়ার দরকার নেই ।
আম্বিয়া ঃ সরকার এহন কলেজ পর্যন্ত মাইয়েগে লিহা পড়ার খরচ দেয়।
আলো ঃ আব্বা সব মাইয়েরাই এহন লেহা পড়া করে ।
আম্বিয়া ঃ (মেয়েকে) এই তুই ঘরে যা (স্বামীকে নরম সুরে) তুমি কি জানো মাইয়েরা ডাক্তার- ইজ্ঞিনিয়ার-
পাইলট পর্যন্ত হয়। তোমাগে ঐ সামাদ আর হামেদ মোল্লা গে জন্ন্যি এই সমাজে মাইয়েরা মাতা
উঁচু কইরি দাঁড়াতি পারেনা ।
আক্কাচ ঃ হামেদ বাই যে ক-য় ।
আম্বিয়া ঃ তোমার ঐ হামেদ হল একটা আস্ত হারামজাদা ।
আক্কাচ ঃ এই হামেদরে সবাই মানে সে একজন মাতুব্বর মানুষ ।
আম্বিয়া ঃ সবাই মানে তো ওর টাকা পয়সা আছে তাইতি ।
আক্কাচ ঃ হামেদ কি তালি আসলেই খরাপ লোক ।
(রাসেল আর সেলিমের প্রবেশ )
রাসেল ঃ এই আলো শিগগিরি বাইরি আয় ।
আক্কাচ ঃ এই ওরে ডাকতিছিস ক্যান - তোরা যা এনতে।
সেলিম ঃ কাকা তুমিও চলো হামেদ মোল্লা কি করিছে জানো?
আক্কাচ ঃ কি এরিছে ?
সেলিম ঃ সামাদ বাড়ি নেই, এই ফাকে তার বউরে বুদ্ধি দেচ্ছে- ব্যাপারি তুমারে তালাক দিলি তালাক
নিবা- তোমারে আমি বিয়ে করবানি ।
রাসেল ঃ সামাদ ও বাড়ি চইলে আইছে মনে হয় বউ তালাক দেবে । চলো এইবার আমারা দুডোরে
একসাতে সাইজ করবো । সবাই চলো
আক্কাচ ঃ এই আমার দা খান বাইর কর। হামেদরে আমি জবাই করবো ।
শেষ দৃশ্য
(সামাদের বাড়ি আক্কাচ, আম্বিয়া, রাসেল, সেলিম, আলোর প্রবেশ জরিমন একপাশে বসে কাঁদছে। হামেদ তামাশা দেখছে)
সামাদ ঃ এক তালাক- দুই তালাক
আক্কাচ ঃ আর আমারা এবার তোগে দুডোর অবস্থা করবো খারাপ।
(সামাদ আর হামেদ পালাতে যাবে এমন সময় আক্কাচ আর আম্বিয়া ধরে বসবে সামাদরে রাসেল আর সেলিম ধরবে হামেদরে। আলো জরিমনকে ধরে তুলবে । সবাই ফ্রিজ)
সমাপ্তি
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. ০২/০২/২০১৪আপনার গল্পের মূল ভাবনা খুবই ভালো লাগলো। আপনি আরোও ভালো লিখতে পারেন। ধন্যবাদ।