www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

চেষ্টা কর সব হবে

------- চেষ্টা কর সব হবে
------------- অন্তর চন্দ্র

জ্ঞান সূর্য দীপ্ত হয় শত সাধনার পর। এমন কোন কাজ নেই যা অসম্ভব। নিজের কর্ম দ্বারা সবকিছুই হয়। শুধু একটু চেষ্টার অপেক্ষা। আমার তখন ছেলেবেলা খুবই ছোট্ট আমি। তখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি। আমি বেশ ভালো ছাত্র ছিলাম। সব সময় সবার কাছে নিজেকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসাতাম। খুব মেধাবী ছিলাম। আমার খুব কাছের বন্ধু একজন ছিল স্কুলে। আমরা দুইজন ছোটবেলা থেকে এখনো খুব কাছের। হঠাৎ কিছু মনোমালিন্য হলেও দুজন ঠিকই সামলে নিতাম। আমাদের এলাকায় একটি কোচিং প্রতিষ্ঠিত হয়। বাবা সেখানে ভর্তি করে দিলেন। বিকেল চারটে বাজলেই কাঁধে স্কুল ব্যাগ দিয়ে বলতেন এবার কোচিংয়ে যাও। তখনকার দিনে আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। কোচিং ছুটি হতো রাত ৮ টায়। তাই হাতে হারিকেন নিয়ে যেতে হতো। নিভু নিভু আলো ছোট ছোট চোখ দিয়ে দেখতাম আর তর্জনী দিয়ে স্পর্শ করি। মাস্টারমশাই পড়া না হলে বেশ মারতো। ভয়ে ভয়ে পড়া মুখস্ত করে আসতাম। বাবা, স্বপ্ন দেখতো ছেলেকে বড় করার জন্য, মানুষের মত মানুষ করার জন্য। আমি প্রফুল্ল চিত্তে বাবাকে খুশি রাখতাম। কয়েক দিন কোচিংএ যাওয়ার পর পরিচয় হলো অন্য এক বন্ধুর সাথে। সে বেশ অলস ছিল। পড়ার প্রতি তার কোন মনোযোগ ছিলোনা। মাস্টারমশাই প্রতিদিন তাকে পড়া না হওয়ার জন্য মারতো। আমরা তিন বন্ধুর মধ্যেও ছিল খুবই অমনোযোগী। পড়াতে খুব কম পেতো। আমি যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি তখন সে স্বরবর্ণ - ব্যঞ্জনবর্ণ জানত না। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। আমি নিরলসভাবে তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। মাস্টারমহাশয় যখন তাকে মারতো তখন আমার খুব কষ্ট হতো। আমি যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি তখন মনে হয় এক মাস কোচিং যাওয়ার পর বাদ দিয়েছিলাম। তারপর সমাপনী পরীক্ষা দেওয়ার পর চলে গেলাম মামার বাড়িতে। ভর্তি হলে আমি ষষ্ঠ শ্রেণীতে সেখানেই এক বছর থাকলাম। সেখানে থাকতে মন চাইছিলো না তাই আবার বাড়িতে চলে আসলাম। বাবা-মা ঢাকায় থাকতো তাই একটু কষ্ট হতো। তবুও বাড়িতে থেকে গেলাম। আবার ভর্তি হলাম বাড়ির পার্শ্ববর্তী স্কুলে। সেখানে অনেক ছাত্রছাত্রী বহুদূর থেকে আসতো। আমি সপ্তম শ্রেণীর বই হাতে পেয়ে বেশ মুগ্ধ সেদিন। প্রফুল্ল হয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। দু'চারদিন স্কুলে যাওয়ার পর দেখি ছোটবেলার সেই দ্বিতীয় বন্ধুটি যে কিনা কিছুই জানত না। আজ তাকে দেখে আমি মুগ্ধ। তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বললাম। কিন্তু যখন আমি ক্লাসে গিয়ে বসলাম। মাস্টারমশাই
পড়াতে লাগলেন হঠাৎ আমি আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ যে ছেলেটি "অ" বর্ণটির কথাই জানত না। আজকে স্যারের পড়া দিচ্ছে মুক্ত মনে। তার হয়তো পরবর্তী জীবনে পড়ার প্রতি এতটাই মনোযোগ শুধু যে তার কোনো কিছুই অসম্ভব ছিল না। সেদিন তার প্রখর মনোযোগ আমাকে নতুন কিছু হবে অভিজ্ঞতা শিখিয়েছিল। যা প্রত্যেকের জীবনে করণীয়। আমি তার দিকে লক্ষ্য করে ভেবেছিলাম জীবনে এমন কিছুই নেই যা অসম্ভব। চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। তার কাছ থেকে এই শিক্ষাটুকু পেয়েছিলাম। আজ সে আমাকে ছড়িয়ে গেছে। আমি তার কাছে হার মেনেছি। তার পড়াশোনার প্রতি এত নজর ছিল যে পরবর্তীকালে সে স্কুলে একজন মেধাবী ছাত্র। সেদিন আমিও তার কাছে যেতে পারিনি। তার চেষ্টা শক্তির কাছে আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম।

তাইতো বলি যদি কোন কাজ করতে চাও তার দৃঢ় মনোযোগ দিয়ে করো। ভালো কিছু চেষ্টা করলে সফলতা নিশ্চয়ই আসবে। এতে কোন সন্দেহ নাই। নতুনত্বের প্রসার খুব ধীরগতিতে হয়। তাই চেষ্টা করো কিভাবে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৩৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০২/০৮/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ফয়জুল মহী ০৩/০৮/২০২১
    অসাধারণ নির্মাণ
 
Quantcast