গণমাধ্যম ও নারী - সিনেমা পর্ব
সিনেমার নাম 'অভিমান', নায়িকা টিভির সফল নিউজ প্রেজেন্টার। সেটেল ম্যারেজে বিশ্বাসী নায়িকা অপেক্ষা করছিলো পারিবারিকভাবে দেখাশুনা হওয়ার মাধ্যমে বিয়ে হোক। তাই হলো। শ্বশুর বাড়ির মানুষতো মহা খুশি এমন গুণবতী, সেলিব্রিটি বউ পেয়ে। বৌ-ভাতের পরদিনই নায়িকার লাইভ শো থাকায় তার বাসর রাতেও স্বামীকে বাড়তি কোন রোমান্টিক সিনে মজে থাকতে দেখা না যাওয়ায় সত্যি মারাত্নক অবাক হয়েছিলাম! কারণ এমনটা তো স্বাভাবিক না! দরজা বন্ধ হবে তারপরই শুরু হবে লিলা খেলা। যাইহোক পরদিন সকালে বউ মন্ত্রীর লাইভ সাক্ষাতকার নিবেন সুতরাং তাকে যেতে হবে টিভি সেন্টারে, শাশুড়ি এমন আদর যত্ন করছিলো যে সত্যিই আমি জেলাস ছিলাম। দীর্ঘশ্বাস আটকে রেখে অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করছিলো পরের কাহিনীর জন্য, কেননা পরের থ্রিল, এ্যাকশান যে খুব শিগগীর শুরু হবে! নায়িকা মানে নতুন সেলিব্রেটি বউকে তার স্বামী নিজে গাড়ী (সম্ভবত হ্যারিয়ার হবে) চালিয়ে দিয়ে আসেন। এবং কথা থাকে যে বউ অফিসের পরে বাইরে আরেক জায়গায় যাবেন (কেন, কি কারণে, ঠিক কোথায় যাবে এটা জানতে না পেরে বিরক্তই ছিলাম!) সেখান থেকে তার স্বামী তাকে নিয়ে যাবেন।
সময়টা ছিলো বিশিষ্ট নারীবাদী একজন লেখিকার অন্যদেশে টুরিস্ট ভিসা নিয়ে দিনের পর দিন থাকা নিয়ে সে দেশে সৃষ্টি রাজনৈতিক নৈরাজ্য নিয়ে। এবং দাঙ্গায় সেখানে একপর্যায়ে সরকার কার্ফু চালু করতে বাধ্য হয়। এ অবস্থায় বউটি সেই দাঙ্গায় আটকে যায়। এবং ঘটনাক্রমে এক মহান ছিনতাইকারীর খপ্পরে পরে তার আস্তানায় রাত কাটাতে বাধ্য হয়। পরদিন বউ যখন তার সেই মহান রক্ষাকর্তা ছিনতাইকারীকে সাথে নিয়ে শ্বশুরবাড়ীর সবার সাথে পরিচয় করাতে যান তখনই ঘটে আসল বিপত্তি। আমি কারো সাথে রাত তিনটার সময় দেখা করতে গেলে আপনারাও নির্ঘাত বলবেন যে, আরজু পনির চরিত্র খারাপ তাই না?! ঘটনা ভয়ানক আকার ধারণ করলে বউ ব্লেড দিয়ে তার হাতের শিরা কেটে আত্নহত্যার চেষ্টা করলেও মহানুভব ডাক্তাররা তাকে বাঁচাতে সক্ষম হন। এবং ততক্ষণে স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ীর মানুষ বউয়ের লেখা চিঠি পড়ে নিজেদের ভুল বুঝতে পারলেও সেই আভিমানী বউ আর ফিরে আসে নি।
সাধারণত আমাদের দেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের বেশিরভাগ দর্শক হলেন নিম্নবিত্ত শ্রেণীর খেটে খাওয়া মানুষ। কিন্তু এসব চলচ্চিত্রে নারীকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়, তাতে মনে হয় একজন কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর একমাত্র কাজ হচ্ছে প্রেমে পড়া । তাকে লেখাপড়া করতে হয় না, লাইব্রেরী ওয়ার্ক করতে হয় না, এমনকি পরীক্ষা নিয়েও দুশ্চিন্তা করতে হয় না। এখানে নারীর ভুমিকা হলো নায়কের চারপাশে নাচগান করা, অসহায় হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়া, নির্যাতিত হওয়া (সিনেমার নাম মনে নেই আলেকজান্ডার বো আর মুনমুন মুল চরিত্রে, যেখানে মযুরীরর কাজই ছিলো রেপ হওয়া), নায়ক বা কোন পুরুষের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা ইত্যাদি। সাধারণত মূল ঘটনায় নিয়ন্ত্রকের ভুমিকায় নারীকে দেখা যায় না। একসময়ের সেনেমার পদা কাঁপানো নারীকুল শিরোমনি শ্রদ্ধেয় "শাবানা"-র কাজই ছিলো স্বামী, শ্বাশুরী, ননদদের হাতে নির্যাতিত হয়ে অবহেলিত লাঞ্ছিত জীবন যাপন করতে। স্বামী মদ খেয়ে মাতাল হয়ে বাসায় ফিরলেও শাবানা ম্যাডাম সেই মাতাল স্বামীর ঘাম মুছে "ওগো" "হ্যাঁগো" বলে স্বামীর পায়ের জুতা খুলে দিতে। একটা গান মনে পড়ে গেল এক্ষেত্রে
এদেশের মূলধারার চলচ্চিত্রে নারী মূখ্য নয়, গৌণ মাত্র। অথচ চলচ্চিত্রের মতো একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম নারীর ইতিবাচক ইমেজ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে। আর তাই এদেশের যে সব নারী কর্মক্ষেত্রে , সংসারে সর্বত্র সামাজিক অর্থিনৈতিক- সাংস্কৃতিক অবদান রেখে চলছেন - তাদের জীবন সংগ্রাম , সাফল্য ও বঞ্চনার চিত্রায়ণ হওয়া প্রয়োজন চলচ্চেত্রের মতো একটি শক্তিশালী গণমাধ্যমে, সমাজ জীবনে যার প্রভাব খুব বেশি ।
-----------
নারী, গণমাধ্যম
(Post20131031083431)
সময়টা ছিলো বিশিষ্ট নারীবাদী একজন লেখিকার অন্যদেশে টুরিস্ট ভিসা নিয়ে দিনের পর দিন থাকা নিয়ে সে দেশে সৃষ্টি রাজনৈতিক নৈরাজ্য নিয়ে। এবং দাঙ্গায় সেখানে একপর্যায়ে সরকার কার্ফু চালু করতে বাধ্য হয়। এ অবস্থায় বউটি সেই দাঙ্গায় আটকে যায়। এবং ঘটনাক্রমে এক মহান ছিনতাইকারীর খপ্পরে পরে তার আস্তানায় রাত কাটাতে বাধ্য হয়। পরদিন বউ যখন তার সেই মহান রক্ষাকর্তা ছিনতাইকারীকে সাথে নিয়ে শ্বশুরবাড়ীর সবার সাথে পরিচয় করাতে যান তখনই ঘটে আসল বিপত্তি। আমি কারো সাথে রাত তিনটার সময় দেখা করতে গেলে আপনারাও নির্ঘাত বলবেন যে, আরজু পনির চরিত্র খারাপ তাই না?! ঘটনা ভয়ানক আকার ধারণ করলে বউ ব্লেড দিয়ে তার হাতের শিরা কেটে আত্নহত্যার চেষ্টা করলেও মহানুভব ডাক্তাররা তাকে বাঁচাতে সক্ষম হন। এবং ততক্ষণে স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ীর মানুষ বউয়ের লেখা চিঠি পড়ে নিজেদের ভুল বুঝতে পারলেও সেই আভিমানী বউ আর ফিরে আসে নি।
সাধারণত আমাদের দেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের বেশিরভাগ দর্শক হলেন নিম্নবিত্ত শ্রেণীর খেটে খাওয়া মানুষ। কিন্তু এসব চলচ্চিত্রে নারীকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়, তাতে মনে হয় একজন কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর একমাত্র কাজ হচ্ছে প্রেমে পড়া । তাকে লেখাপড়া করতে হয় না, লাইব্রেরী ওয়ার্ক করতে হয় না, এমনকি পরীক্ষা নিয়েও দুশ্চিন্তা করতে হয় না। এখানে নারীর ভুমিকা হলো নায়কের চারপাশে নাচগান করা, অসহায় হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়া, নির্যাতিত হওয়া (সিনেমার নাম মনে নেই আলেকজান্ডার বো আর মুনমুন মুল চরিত্রে, যেখানে মযুরীরর কাজই ছিলো রেপ হওয়া), নায়ক বা কোন পুরুষের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা ইত্যাদি। সাধারণত মূল ঘটনায় নিয়ন্ত্রকের ভুমিকায় নারীকে দেখা যায় না। একসময়ের সেনেমার পদা কাঁপানো নারীকুল শিরোমনি শ্রদ্ধেয় "শাবানা"-র কাজই ছিলো স্বামী, শ্বাশুরী, ননদদের হাতে নির্যাতিত হয়ে অবহেলিত লাঞ্ছিত জীবন যাপন করতে। স্বামী মদ খেয়ে মাতাল হয়ে বাসায় ফিরলেও শাবানা ম্যাডাম সেই মাতাল স্বামীর ঘাম মুছে "ওগো" "হ্যাঁগো" বলে স্বামীর পায়ের জুতা খুলে দিতে। একটা গান মনে পড়ে গেল এক্ষেত্রে
এদেশের মূলধারার চলচ্চিত্রে নারী মূখ্য নয়, গৌণ মাত্র। অথচ চলচ্চিত্রের মতো একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম নারীর ইতিবাচক ইমেজ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে। আর তাই এদেশের যে সব নারী কর্মক্ষেত্রে , সংসারে সর্বত্র সামাজিক অর্থিনৈতিক- সাংস্কৃতিক অবদান রেখে চলছেন - তাদের জীবন সংগ্রাম , সাফল্য ও বঞ্চনার চিত্রায়ণ হওয়া প্রয়োজন চলচ্চেত্রের মতো একটি শক্তিশালী গণমাধ্যমে, সমাজ জীবনে যার প্রভাব খুব বেশি ।
-----------
নারী, গণমাধ্যম
(Post20131031083431)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ১০/১০/২০১৪আপনি সত্যি অসাধারন লিখেন। শুভ কামনা আপনার জন্য।
-
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. ৩১/১০/২০১৩সবখানেই আপনি ফাটাফাটি! খুবই সুন্দর করে বিষয় টি সরলভাবে উপস্থাপন করেছেন।শেষের কথা গুলো খুব মজা পেয়েছি।কিন্তু এটা অস্বীকার করার কিছু নেই যে, আসলেই আমাদের দেশে এখনো নারীদের স্থান শক্তিশালী নয়।
-
রাখাল ৩১/১০/২০১৩মিডিয়া আর কর্পোরেট জগতের কাজই ব্যবসা সেখানে নীতিটিতি বলতে কিছু নেই ।
আপনাকে কেউ ততক্ষণ ছোট করতে পারবেনা, যতক্ষণ না আপনি নিজেকে ছোট করেন ।
"নারীরা আজ নিজেরাই নিজেদের বানায় পণ্য
বিতর্কিত হলেও সবাই চিনে, তাতেই ধন্য ।"