চিত্রাঙ্গদা - নহি দেবী নহি সামান্যা নারী
কাব্যনাট্য 'চিত্রাঙ্গদা' মহাভারতের চিত্রাঙ্গদা উপাখ্যান নিয়ে কিছু রূপান্তরসহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করেন কাব্যনাটক 'চিত্রাঙ্গদা' । মণিপুর রাজকূলে যখনপুত্র সন্তান না হয়ে কন্যা সন্তান চিত্রাঙ্গদার জন্ম হল রাজা তাকে পুত্ররূপেই পালন করলেন । রাজকন্যা অভ্যাস করলেন ধনুর্বিদ্যা, শিক্ষা করলেন যুদ্ধবিদ্যা, রাজনীতিবিদ্যাও । আর এর ফলে চিত্রাঙ্গদা পুরুষের সবল মানসিকতা নিয়েই বেড়ে উঠতে থাকলেও তৃতীয় পান্ডব অর্জুন যখন বার বছরের জন্যে ব্রহ্মচর্য ব্রত পালনের সময় ভ্রমণ করতে করতে এলেন মণিপুররাজ্যে তখন চিত্রাঙ্গদা অর্জুনের প্রেমে অনুরক্ত হলেও বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের অভাবে অর্জুন চিত্রাঙ্গদাকে অগ্রাহ্য করেন । এতে অপমাণিত হয়ে চিত্রাঙ্গদা প্রেমের দেবতা মদন এবং যৌবনের দেবতা বসন্তের কাছে প্রার্থনার পরিপ্রেক্ষিতে রুক্ষ চিত্রাঙ্গদা হয়ে উঠেন অসামান্যা সুন্দরী এবং যথারীতি অর্জুন তার ব্রত ভেঙ্গে সুন্দরী চিত্রাঙ্গদার প্রেমে পড়েন।
কিন্তু ক্রমশ চিত্রাঙ্গদার মধ্যে দ্বৈত স্বত্ত্বার দ্বন্দ্ব শুরু হয় এজন্যে যে অর্জুন তাকে বাহ্যিক রূপের কারণে ভালোবাসে যেখানে চিত্রাঙ্গদার প্রকৃত অস্তিত্ব অবহেলিত ।
এর মধ্যে মনিপুর রাজ্যের বিপদের আভাসে একসময় অর্জুন নারীর মমতায় প্রজা বৎসল,সাহসে শক্তিতে পুরুষের মতো সবল চিত্রাঙ্গদার কথা লোকমুখে জানতে পারে। রবী ঠাকুরের প্রকাশে-
শুনি স্নেহে সে নারী
বীর্যে সে পুরুষ ,
শুনি সিংহাসনা যেন সে
সিংহবাহিনী ।
একজন পুরুষ মনে একজন রমনীয় সবল নারীকে দেখার উদগ্র বাসনায় ... অর্জুন প্রকাশ করে তার আগ্রহ -
আগ্রহ মোর অধীর অতি—
কোথা সে রমণী বীর্যবতী ।
কোষবিমুক্ত কৃপাণলতা —
দারুণ সে , সুন্দর সে
উদ্যত বজ্রের রুদ্ররসে ,
নহে সে ভোগীর লোচনলোভা ,
ক্ষত্রিয়বাহুর ভীষণ শোভা।
এমতাবস্থায় চিত্রাঙ্গদা নিজেকে অর্জুনের কাছে নিজেকে প্রকাশ করে এভাবে-
নহি দেবী, নহি সামান্যা নারী।
পূজা করি মোরে রাখিবে ঊর্ধ্বে
সে নহি নহি,
হেলা করি মোরে রাখিবে পিছে
সে নহি নহি।
যদি পার্শ্বে রাখ মোরে
সংকটে সম্পদে,
সম্মতি দাও যদি কঠিন ব্রতে
সহায় হতে,
পাবে তবে তুমি চিনিতে মোরে।
পরিশেষে এ উপলব্ধি হয় যে, বাহ্যিক রূপের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান মানুষের চারিত্রশক্তি এবং এতেই প্রকৃতপক্ষে আত্নার স্থায়ী পরিচয় ।
শিল্পকলা একাডেমিতে স্বপ্নদল এর যুগপূর্তিতে জাহিদ রিপন-এর নির্দেশনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যনাট্যরূপ চিত্রাঙ্গদার উপস্থাপন ছিল অসাধারণভাবে আকর্ষনীয় ।মঞ্চে চিত্রাঙ্গদার একটি চরিত্রের দ্বৈতসত্ত্বার উপস্থাপন ছিল অসাধারণ । নারী শুধুই নরম, কোমল, অসহায়-এই রূপটাকে ভেঙ্গে রবি ঠাকুরের চিত্রাঙ্গদায় আমি নিজে একজন নারী হয়ে এমন একজন নারীর প্রকাশই দেখতে চাই বাস্তব জীবনে ।
----------
তথ্য সুত্র:
■ রচনাঃ কাব্য নাটক
পরবর্তী রূপঃ ১৯৩৬ সালে রচনা করেন নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা।
প্রকাশকালঃ ২৮ ভাদ্র, ১২৯৯ (১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দ)
রচনাস্থানঃ শান্তিনিকেতন
উৎসর্গঃ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর' ১৫ শ্রাবণ ১২৯৯
■ চিত্রাঙ্গদা:উইকিপিডিয়া
■ নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা
■ চিত্রাঙ্গদা : উইকিসংকলন
■ চিত্রাঙ্গদা (গীতবিতান)
■ "স্বপ্নদল" প্রকাশিত যুগপূর্তি ব্রোশিয়ো ২০১২
■ 'স্বপ্নদল' পরিবেশনায় জাহিদ রিপন-এর নির্দেশনায় কাব্যনাটক 'চিত্রাঙ্গদা'-র মঞ্চরূপ ২০১৩
■ ফেসবুকে চিত্রাঙ্গদা : স্থিরচিত্র
--------------
গণমাধ্যম, মঞ্চনাটক
(Post20131026094037)
কিন্তু ক্রমশ চিত্রাঙ্গদার মধ্যে দ্বৈত স্বত্ত্বার দ্বন্দ্ব শুরু হয় এজন্যে যে অর্জুন তাকে বাহ্যিক রূপের কারণে ভালোবাসে যেখানে চিত্রাঙ্গদার প্রকৃত অস্তিত্ব অবহেলিত ।
এর মধ্যে মনিপুর রাজ্যের বিপদের আভাসে একসময় অর্জুন নারীর মমতায় প্রজা বৎসল,সাহসে শক্তিতে পুরুষের মতো সবল চিত্রাঙ্গদার কথা লোকমুখে জানতে পারে। রবী ঠাকুরের প্রকাশে-
শুনি স্নেহে সে নারী
বীর্যে সে পুরুষ ,
শুনি সিংহাসনা যেন সে
সিংহবাহিনী ।
একজন পুরুষ মনে একজন রমনীয় সবল নারীকে দেখার উদগ্র বাসনায় ... অর্জুন প্রকাশ করে তার আগ্রহ -
আগ্রহ মোর অধীর অতি—
কোথা সে রমণী বীর্যবতী ।
কোষবিমুক্ত কৃপাণলতা —
দারুণ সে , সুন্দর সে
উদ্যত বজ্রের রুদ্ররসে ,
নহে সে ভোগীর লোচনলোভা ,
ক্ষত্রিয়বাহুর ভীষণ শোভা।
এমতাবস্থায় চিত্রাঙ্গদা নিজেকে অর্জুনের কাছে নিজেকে প্রকাশ করে এভাবে-
নহি দেবী, নহি সামান্যা নারী।
পূজা করি মোরে রাখিবে ঊর্ধ্বে
সে নহি নহি,
হেলা করি মোরে রাখিবে পিছে
সে নহি নহি।
যদি পার্শ্বে রাখ মোরে
সংকটে সম্পদে,
সম্মতি দাও যদি কঠিন ব্রতে
সহায় হতে,
পাবে তবে তুমি চিনিতে মোরে।
পরিশেষে এ উপলব্ধি হয় যে, বাহ্যিক রূপের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান মানুষের চারিত্রশক্তি এবং এতেই প্রকৃতপক্ষে আত্নার স্থায়ী পরিচয় ।
শিল্পকলা একাডেমিতে স্বপ্নদল এর যুগপূর্তিতে জাহিদ রিপন-এর নির্দেশনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যনাট্যরূপ চিত্রাঙ্গদার উপস্থাপন ছিল অসাধারণভাবে আকর্ষনীয় ।মঞ্চে চিত্রাঙ্গদার একটি চরিত্রের দ্বৈতসত্ত্বার উপস্থাপন ছিল অসাধারণ । নারী শুধুই নরম, কোমল, অসহায়-এই রূপটাকে ভেঙ্গে রবি ঠাকুরের চিত্রাঙ্গদায় আমি নিজে একজন নারী হয়ে এমন একজন নারীর প্রকাশই দেখতে চাই বাস্তব জীবনে ।
----------
তথ্য সুত্র:
■ রচনাঃ কাব্য নাটক
পরবর্তী রূপঃ ১৯৩৬ সালে রচনা করেন নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা।
প্রকাশকালঃ ২৮ ভাদ্র, ১২৯৯ (১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দ)
রচনাস্থানঃ শান্তিনিকেতন
উৎসর্গঃ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর' ১৫ শ্রাবণ ১২৯৯
■ চিত্রাঙ্গদা:উইকিপিডিয়া
■ নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা
■ চিত্রাঙ্গদা : উইকিসংকলন
■ চিত্রাঙ্গদা (গীতবিতান)
■ "স্বপ্নদল" প্রকাশিত যুগপূর্তি ব্রোশিয়ো ২০১২
■ 'স্বপ্নদল' পরিবেশনায় জাহিদ রিপন-এর নির্দেশনায় কাব্যনাটক 'চিত্রাঙ্গদা'-র মঞ্চরূপ ২০১৩
■ ফেসবুকে চিত্রাঙ্গদা : স্থিরচিত্র
--------------
গণমাধ্যম, মঞ্চনাটক
(Post20131026094037)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আবির ইমন ২৭/১০/২০১৩
-
আবির ইমন ২৭/১০/২০১৩মেয়ে তোমাকে বলছি
হ্যা তোমাকে বলছি।
মেয়ে,কান পেতে শোনো ;
শিল্পের মতো
মুখ
ওষ্ঠ
বাহু
গ্রীবা
অটুট রেখ চিরকাল।
ভালোবেসে গাধাদের দেহ দিয়ো,
কবিদের দিয়ো সপ্ন।
মনে রেখ
কবিরা
হ্রদয়ের
কারবারী
তাই সপ্ন ভালোবাসে
চিরকাল।
যদি অনুপুঙ্খ ভালোবাসা
পেতে চাও ,কবিদের কাছে
আসতে হবে তোমাকে
দুঃখের পাঠ নিতে চাও যদি
শেষ ভরসা
তোমার
কবিরাই।
বিস্তর ফারাক কবিতে গাধাতে। -
suman ২৬/১০/২০১৩অসম্ভব মেধাবী লেখা ...স্চেতনতা আর নারীর প্রতি দায়বদ্ধতা উভয়ই বলিষ্ঠ্ভাবে প্রকাশিত হয়েছে ...ভালো থাকুন ...আর এমন আরো লেখা লিখুন ...
হ্যা তোমাকে বলছি।
মেয়ে,কান পেতে শোনো ;
শিল্পের মতো
মুখ
ওষ্ঠ
বাহু
গ্রীবা
অটুট রেখ চিরকাল।
ভালোবেসে গাধাদের দেহ দিয়ো,
কবিদের দিয়ো সপ্ন।
মনে রেখ
কবিরা
হ্রদয়ের
কারবারী
তাই সপ্ন ভালোবাসে
চিরকাল।
যদি অনুপুঙ্খ ভালোবাসা
পেতে চাও ,কবিদের কাছে
আসতে হবে তোমাকে
দুঃখের পাঠ নিতে চাও যদি
শেষ ভরসা
তোমার
কবিরাই।
বিস্তর ফারাক কবিতে গাধাতে।