অভিশাপ
অফিসের ড্রাইভার বলে ওকে বাদ দেবার কোন সুযোগ নেই । কিন্তু রাসেলকে চৈতির মাঝে মাঝে একদমই ভালো লাগে না !
প্রাইভেট কার বলে একটু আরাম করেই বসতে না পারলে কিসের প্রাইভেট কার ? তবেতো বাসই ভালো ...বিড়বিড় করে চৈতি !
কখনো বসতে যেয়ে কামিজটা একটু হাঁটুর উপরে উঠে গেলেও রাসেলের হায়েনা মার্কা চোখ মিস করে না তা দেখতে ! কারের সামনে বা পাশে বা কাছাকাছি কোন নারীকে দেখলেতো চৈতির রিতিমতো টেনশন লেগে যায় সেই নারীর দিকে তাকাতে তাকাতে রাসেল না আবার এক্সিডেন্ট করে বসে !
নাহ, রাসেল কখনোই এক্সিডেন্ট করে নি ! খুবই দক্ষতার সাথে এবং সুযোগ পেলে খুবই স্পিডে গাড়ি চালিয়েছে ।
রাসেলের কাছ থেকেই চৈতির ভেতর এই রোগটা সম্ভবত সংক্রমিত হয়েছে...রাস্তায় কোন মেয়ে দেখলে মাথা থেকে পা পর্যন্ত মেয়েটির চোখে পড়ার আগেই দেখে নেয়া ।
চৈতি খুব মন খারাপ করে আমায় বলেছে..."জানিস, সিক্তা, রাসেলের সুন্দরী বউতো বটেই একটা বাচ্চাও আছে !"
মাঝে মাঝেই রাসেল বেশ তাগাদা দিত, জোর করতো ..."ভাবী, স্যার তো সময় পাবে না, আপনি নিজে থেকেই ড্রাইভিংটা শিখে নেন । আমি কয়েকদিন দেখিয়ে দিলেই পারবেন।"
দৃষ্টির সমস্যা থাকলেও এমনিতে সব ব্যাপারে খুবই আন্তরিক রাসেলের কথায় চৈতি সায়ও দিয়েছিল । মঈনকে না জানিয়ে কখনো কখনো রাসেলের বাড়ির কাছেই মাটিকাটা রাস্তায় প্র্যাকটিস করেছেও রাসলের সহযোগিতা নিয়ে । নাহ, স্টিয়ারিং কন্ট্রোলে রাসেল সচেতনভাবে হাত ছোঁয়ার চেষ্টা করে নি । কিন্তু চৈতি যখন ড্রাইভিং সিটে বসা অবস্থায় থাকতো তখন রাসেলের দৃষ্টি ঘুরতো চৈতির উপর ! বড্ড অস্বস্তি, বড্ড অসহ্য লাগতো সেই দৃষ্টি !
তাই আর ড্রাইভিংয়ের প্র্যাকটিসটা কন্টিনিউ করা হয় নি, আর মঈনও পরে আড়ালে চৈতিকে নিষেধ করে দিয়েছিল । যদিও রাসেলের ব্যাপার সরাসরি কিছু বলে নি।
কখনো কোন লম্বা ট্রিপে গেলে ওদের সাথে ওর হোম এ্যাসিস্ট্যান্ট নাজুও থাকতো । বমি করতে যখন নাজু অস্থির হয়ে রাস্তার পাশে গাড়ি থেকে নামতো তখন চৈতি নামার আগেই "ভাবী, আপনি বসেন" বলে রাসেল দৌড়াতো নাজুকে হেল্প করতে...ওদের সখ্যতা দেখে রাসেলের বৌ-এর মুখটা চৈতির বড্ড মনে পড়ে যেত বারবারই ...
বিভিন্নভাবে নাজুকে রাসেল-এর সাথে কথা বলা, মেশা থেকে দুরে রাখার চেষ্টায় চৈতির কোন কমতি ছিল না। ....
কেমন যেন অলুক্ষুণে, কুডাক চৈতির মনে বারবারই ডেকে যেতে চায় ! চৈতি নিজেকেই ধমক দেয় ... নিজেকেই পাপী মনের মনে করে প্রবোধ দেয় ...
তারপরও চৈতির মন থেকে খচখচানি কমে না .... !
নাজুর বেশ ক'দিন থেকেই জ্বর । একেবারেই খা্ওয়া দা্ওয়ার রুচি নেই । ভাইরাস জ্বর ভেবে চৈতি নাপা চালাচ্ছে তিন বেলা । জ্বরের প্রকোপে নাজুর বমিও হচ্ছে ।
চারদিনের দিন জ্বর কমে গেলেও শরীর দুর্বল থাকায় প্রায়ই বমি হচ্ছে ।
নাজু ইদানিং খেতেই পাচ্ছে না ।
বেশ কিছুদিন এভাবে চলার পর চৈতি বাধ্য হলো নাজুকে ডাক্তারের কাছে নিতে ।
ডাক্তার বেশ কিছু প্রশ্ন করার ফাঁকে কিছু মেয়েলী প্রশ্নও উঠে আসায় নাজুকে ইউরিন টেস্ট করতে দিল ।
রিপোর্ট পেয়ে চৈতির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো !
এই অবস্থায় কি করা উচিত কিছুই বুঝে উঠতে পাচ্ছে না । মইনকে ঘটনা জানানোর পর রাসেলকে ডাকা হলো...রাসেল পুরোপুরি সব অস্বীকার করে তার কাঁধে অপবাদ দেয়া হয়েছে ব্লেইম করে চাকুরী থেকে ইস্তফা চাইল ।
নাজুকে পুরো পরিস্থিতিটা বোঝাতে অনেক কষ্ট হয়েছে চৈতির তবে শেষ পর্যন্ত সে ক্লিনিকে যেতে রাজি হয়েছে ।
কিন্তু স্বপ্ন দেখা নাজু বুঝতেও পারে নি-এতো ভালোবাসা, আন্তরিকতা যে তার জীবনে অভিশাপ হয়ে আসবে !
রাসেল ক'দিন থেকেই তার বউকে অকথ্য শারীরিক অত্যাচার করছে গরীব বাবার কাছ থেকে সিএনজি কেনার টাকা এনে দিতে ! না হলে রাসেলের পক্ষে হাতি পোষা আর সম্ভব নয় বলেও হুমকি দিয়েছে ।
রাসেলের বউ বেশ ক'দিন থেকেই বাবার বাড়িতে । ছোট বাচ্চাটি জানে না তার কি অপরাধ ! কেন সে বাবাকে ছাড়া নানার বাড়িতে আছে ! এক অনিশ্চিত জীবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এক গরীব পিতার কন্যা আর তার নাতীর জীবন !
---
গল্প
(Post20131025033037)
প্রাইভেট কার বলে একটু আরাম করেই বসতে না পারলে কিসের প্রাইভেট কার ? তবেতো বাসই ভালো ...বিড়বিড় করে চৈতি !
কখনো বসতে যেয়ে কামিজটা একটু হাঁটুর উপরে উঠে গেলেও রাসেলের হায়েনা মার্কা চোখ মিস করে না তা দেখতে ! কারের সামনে বা পাশে বা কাছাকাছি কোন নারীকে দেখলেতো চৈতির রিতিমতো টেনশন লেগে যায় সেই নারীর দিকে তাকাতে তাকাতে রাসেল না আবার এক্সিডেন্ট করে বসে !
নাহ, রাসেল কখনোই এক্সিডেন্ট করে নি ! খুবই দক্ষতার সাথে এবং সুযোগ পেলে খুবই স্পিডে গাড়ি চালিয়েছে ।
রাসেলের কাছ থেকেই চৈতির ভেতর এই রোগটা সম্ভবত সংক্রমিত হয়েছে...রাস্তায় কোন মেয়ে দেখলে মাথা থেকে পা পর্যন্ত মেয়েটির চোখে পড়ার আগেই দেখে নেয়া ।
চৈতি খুব মন খারাপ করে আমায় বলেছে..."জানিস, সিক্তা, রাসেলের সুন্দরী বউতো বটেই একটা বাচ্চাও আছে !"
মাঝে মাঝেই রাসেল বেশ তাগাদা দিত, জোর করতো ..."ভাবী, স্যার তো সময় পাবে না, আপনি নিজে থেকেই ড্রাইভিংটা শিখে নেন । আমি কয়েকদিন দেখিয়ে দিলেই পারবেন।"
দৃষ্টির সমস্যা থাকলেও এমনিতে সব ব্যাপারে খুবই আন্তরিক রাসেলের কথায় চৈতি সায়ও দিয়েছিল । মঈনকে না জানিয়ে কখনো কখনো রাসেলের বাড়ির কাছেই মাটিকাটা রাস্তায় প্র্যাকটিস করেছেও রাসলের সহযোগিতা নিয়ে । নাহ, স্টিয়ারিং কন্ট্রোলে রাসেল সচেতনভাবে হাত ছোঁয়ার চেষ্টা করে নি । কিন্তু চৈতি যখন ড্রাইভিং সিটে বসা অবস্থায় থাকতো তখন রাসেলের দৃষ্টি ঘুরতো চৈতির উপর ! বড্ড অস্বস্তি, বড্ড অসহ্য লাগতো সেই দৃষ্টি !
তাই আর ড্রাইভিংয়ের প্র্যাকটিসটা কন্টিনিউ করা হয় নি, আর মঈনও পরে আড়ালে চৈতিকে নিষেধ করে দিয়েছিল । যদিও রাসেলের ব্যাপার সরাসরি কিছু বলে নি।
কখনো কোন লম্বা ট্রিপে গেলে ওদের সাথে ওর হোম এ্যাসিস্ট্যান্ট নাজুও থাকতো । বমি করতে যখন নাজু অস্থির হয়ে রাস্তার পাশে গাড়ি থেকে নামতো তখন চৈতি নামার আগেই "ভাবী, আপনি বসেন" বলে রাসেল দৌড়াতো নাজুকে হেল্প করতে...ওদের সখ্যতা দেখে রাসেলের বৌ-এর মুখটা চৈতির বড্ড মনে পড়ে যেত বারবারই ...
বিভিন্নভাবে নাজুকে রাসেল-এর সাথে কথা বলা, মেশা থেকে দুরে রাখার চেষ্টায় চৈতির কোন কমতি ছিল না। ....
কেমন যেন অলুক্ষুণে, কুডাক চৈতির মনে বারবারই ডেকে যেতে চায় ! চৈতি নিজেকেই ধমক দেয় ... নিজেকেই পাপী মনের মনে করে প্রবোধ দেয় ...
তারপরও চৈতির মন থেকে খচখচানি কমে না .... !
নাজুর বেশ ক'দিন থেকেই জ্বর । একেবারেই খা্ওয়া দা্ওয়ার রুচি নেই । ভাইরাস জ্বর ভেবে চৈতি নাপা চালাচ্ছে তিন বেলা । জ্বরের প্রকোপে নাজুর বমিও হচ্ছে ।
চারদিনের দিন জ্বর কমে গেলেও শরীর দুর্বল থাকায় প্রায়ই বমি হচ্ছে ।
নাজু ইদানিং খেতেই পাচ্ছে না ।
বেশ কিছুদিন এভাবে চলার পর চৈতি বাধ্য হলো নাজুকে ডাক্তারের কাছে নিতে ।
ডাক্তার বেশ কিছু প্রশ্ন করার ফাঁকে কিছু মেয়েলী প্রশ্নও উঠে আসায় নাজুকে ইউরিন টেস্ট করতে দিল ।
রিপোর্ট পেয়ে চৈতির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো !
এই অবস্থায় কি করা উচিত কিছুই বুঝে উঠতে পাচ্ছে না । মইনকে ঘটনা জানানোর পর রাসেলকে ডাকা হলো...রাসেল পুরোপুরি সব অস্বীকার করে তার কাঁধে অপবাদ দেয়া হয়েছে ব্লেইম করে চাকুরী থেকে ইস্তফা চাইল ।
নাজুকে পুরো পরিস্থিতিটা বোঝাতে অনেক কষ্ট হয়েছে চৈতির তবে শেষ পর্যন্ত সে ক্লিনিকে যেতে রাজি হয়েছে ।
কিন্তু স্বপ্ন দেখা নাজু বুঝতেও পারে নি-এতো ভালোবাসা, আন্তরিকতা যে তার জীবনে অভিশাপ হয়ে আসবে !
রাসেল ক'দিন থেকেই তার বউকে অকথ্য শারীরিক অত্যাচার করছে গরীব বাবার কাছ থেকে সিএনজি কেনার টাকা এনে দিতে ! না হলে রাসেলের পক্ষে হাতি পোষা আর সম্ভব নয় বলেও হুমকি দিয়েছে ।
রাসেলের বউ বেশ ক'দিন থেকেই বাবার বাড়িতে । ছোট বাচ্চাটি জানে না তার কি অপরাধ ! কেন সে বাবাকে ছাড়া নানার বাড়িতে আছে ! এক অনিশ্চিত জীবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এক গরীব পিতার কন্যা আর তার নাতীর জীবন !
---
গল্প
(Post20131025033037)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
suman ২৭/১০/২০১৩লেখকের দেখার চোখের তারিফ না করে পারছিনা ...এমন সব ঘটনা আমিসহ অন্য পাঠকদেরও মুখোমুখি হোতে হয় ...অনেক ভালো লেখা ...
-
সুবীর কাস্মীর পেরেরা ২৭/১০/২০১৩অসাধারণ লিখেছ সিক্তা
-
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. ২৬/১০/২০১৩সমাজের চরম বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলেছেন সার্থকতার সাথে।ভালো লাগলো।
-
জহির রহমান ২৫/১০/২০১৩কোন চরিত্রটাকে গুরুত্ব দেবো বুঝতেছিনা। সমাজের বাস্তব চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে গল্পটিতে।
-
আহমাদ সাজিদ ২৫/১০/২০১৩গল্পটা বাস্তবতায়। ভাল লাগল।
-
ডাঃ প্রবীর আচার্য নয়ন ২৫/১০/২০১৩বেশ সুন্দর উপস্থাপন। খুব ভালো লেগেছে