www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বিশ্বাসঘাতক



গত ফেব্রুয়ারী মাসে বড় আপার শ্বশুরবাড়ী গিয়েছিলাম, পঞ্চগড়ে । এটা বড় আপার প্রথম শ্বশুরবাড়ী ভ্রমণ, তাই আমাকেও সাথে নিল । বড় আপা খুব এক্সাইটেড ছিলো প্রথম শ্বশুর বাড়ী ভ্রমণে ।

তারপরের কথাগুলো বড় আপা যা বলেছে তা হুবহু তুলে দিলাম...

...শ্বশুরবাড়ীতে ওয়েলকাম কিভাবে জানাবে তা নিয়ে একটু অস্বস্তিতে ছিলাম । যখন বাড়ির কাছে পৌঁছলাম তখন সবই বেশ হাসি মুখে রিসিভ করতে এলো । প্রথম দফাতেই ভালো লেগে গেল । ভেতর বাড়িতে ঢুকতে বইরে একটা পুকুর ঘাট, বাঁশঝাড়, কবরস্থান এসব পাড় হয়ে তার পর ভেতর বাড়িতে যেতে হয় কিন্তু যখন পুকুরপার দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন কেমন যেন শীত শীত করছিলো একটু বেশিই ! পাত্তা দেইনি ব্যাপারটায় । ভেতর বাড়িতে যাওয়ার পর কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে, নাস্তা সারার পর মুরুব্বীরা শ্বশুরের কবর জিয়ারত করতে নিয়ে গেলেন যা কি না বাঁশ ঝাড়ের পাশেই, আর তার একটু অদূরেই সেই শীত লাগা পুকুর টা ! কবর জিয়ারত করে মনটা খুব খারাপ লাগছিলো, বাসার ভেতরে যাওয়ার জন্য যখন অন্যদের তাড়া খাচ্ছিলাম তখন আমার খুব ইচ্ছে করছিলো পুকুর পাড়টাতে বসতে ।
পারলাম না অন্যদের তাড়া খেয়ে । কিন্তু মনটা পড়ে রইলো পুকুর ঘাটে ।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে আর আমি টের পাচ্ছি আমার ভেতর কেমন যেন অস্থিরতা পেয়ে বসছে ! পুকুরটা বড্ড টানছে আমায় । একবার যেতে নিলাম, বাঁশঝাড় পাড় ওয়ার সময় কেমন যেন শিরশির লাগছিলো । পুকুরঘাটে যেয়ে বসলাম, মনে হলো যেন ইয়ের সাথে বসেছি গল্প করতে । বর হন্তদন্ত হয়ে খুঁজে আমায় ভেতরে নিয়ে গেল । খাওয়া দাওয়া শেষে কিছুক্ষণ গল্প হলো শ্বশুর বাড়ির পুরনো ঐতিহ্য নিয়ে । কিছুক্ষণ টিভিও দেখা হলো । এরপর সবই যার যার মতো ঘুমাতে চলে গেল । আমি বরের পাশে শুয়ে আছি, খুব রোমান্টিক সময় কাটার কথা । কিন্তু আমি কোনভাবেই মনযোগ দিতে পাচ্ছি না । বরকে বললাম , "চল পুকুর ঘাটে যেয়ে বসি", বর কিছুটা বোঝানোর সুরে বললো এই মুহুর্তে যাওয়াটা বেমানান দেখায় । কিন্তু আমি ততক্ষণে ভেতরে একধরণের অস্থিরতা বোধ করছি । বর ঘুমিয়ে পড়েছে ভেবে বিছানা থেকে উঠে আসতে নিলাম, কিন্তু ঘুমের মধ্যেই সে আমার হাত টেনে ধরলো ! এরপর বেশ কিছুক্ষণ মরার মতো পড়ে রইলাম । বর ঘুমিয়েছে নিশ্চিত হয়ে বিছানা থেকে নেমে পা টিপে টিপে ঘর থেকে বেরুলাম, আকাশে চাদের ম্লান আলো কেমন যেন এক বিষন্ন পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে । ঘরগুলো পার হয়ে এবার বাঁশঝাড়,এদিক সেদিক তাকিয়েএগিয়ে যাচ্ছি । কেমন যেন শিহরণ লাগছে, হঠাৎ করেই দূরে দেখলাম সাদা শিফনের মতো শাড়ী গায়ে, পিঠ ছাপিয়ে চুল ঘোমটার ভিতর দিয়েও দেখা যাচ্ছে । আমি অবাক হলাম ! এতো ছিপছিপে গড়নের সাদা শিফনের শাড়ী গায়ে রমনী আমাকে অদ্ভুত ভাবে তার পেছনে টানছে । আমি তাকে অনুসরণ করতে শুরু করলাম । আশ্চর্য ! সে এতো রাতে পুকুরে নামছে কেন ??! একসময় কান্নার শব্দে শরীররটা পানিতে ডুব মারলো ! ততক্ষণে আমি ঘাটের কাছে চলে এসেছি । পেছন থেকে কেউ আমায় হ্যাচকা টান মারলো । বর!!!! তাকেতো ঘুমের মধ্যে রেখে এসেছি ! সেই ! পাশে না দেখে খুঁজতে বেরিয়েছে ।

ঘরে গেলাম, আমার ঘাম ছুটছে, আবার প্রচন্ড শীত করছে । কেমন যেন অসহায় লাগছিলো । তোর কথা মনে পড়ে গেল । ডুকরে কেঁদে উঠলাম । বর মুখ চাপা দিয়ে বললো, কি করো ? সবাই কি ভাববে ?! আমি ভোরের অপেক্ষা করতে করতে রাত পার হয়ে গেল ।

তখনও তুই ঘুমাচ্ছিস । আমি প্রথমে বড় জা' কে বললাম গতরাতের ঘটনা ! উনি চোখ বড় করে আঁতকে উঠাটাকে লুকাতে চাইলেন । গেলাম আরও তিন/চারজনের কাছে । সবাই কেমন যেন আঁতকে উঠে ঢোক গিলে।বুঝতে পাচ্ছি কিছু একটা ব্যাপার আছে। কিন্তু কেউ মুখ না খুললে বুঝবো কেমন করে । গেলাম বড় জেইয়ার কাছে । বেশ দূর্বল হয়ে গেছেন, ফজরের নামায শেষ করে যায়নামাযে বসে তসবী জপছিলেন । মওকা মতো পেয়ে পাশে যেয়ে সালাম করে বসলাম । উনি স্নিগ্ধ হাসিটা ছড়িয়ে দিলেন । যখন গতরাতের ঘটনা উনাকে জিজ্ঞেস করে কেঁদে ফেললাম, উনি বিব্রত হয়ে গেলেন । বললেন, "বৌমা, তোমার কি এটা না জানলেই না ?" আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম, "জেইয়া, পুকুর তো আমাকে টানছে !" এই কথা শুনে উনার মুখটা আমসি হয়ে গেল । আমি উনার বিবর্ণ মুখটা দেখতে পেলাম ...বললেন

"একযুগ পরে বৌ যে কেন তোমাকেই দেখা দিলো সেটাইতো অবাক লাগছে!"

আমি ধাক্কা খেলাম "বৌ?!"

উনি বললেন, এই বাসায় গত ১২ বছরে আরো ৪ জন বৌ এসেছে, কিন্তু দীপালি বৌমাতো তাদের কাউকেই দেখা দেয়নি!!!!


বিশ্বাসঘাতক-১ম পর্ব


----
গল্প
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৭৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২২/১০/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • কি যে বলেন পনিদা।এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করলাম।খুবই সুন্দর সেই সাথে বরই রহস্যময়।আমার অসম্ভব ভালো লাগলো গল্প।আপনি সব ক্ষেত্রে ই সার্থক।সত্যিই অসাধারণ!
    • আরজু নাসরিন পনি ২৪/১০/২০১৩
      আপনার মতো আন্তরিক পাঠক পেলে সত্যিই আমার মতো নবিস একজনও নির্ঘাত কোন এক সময় ভালো লেখক হয়ে উঠতে বাধ্য ।
      অনেক কৃতজ্ঞতা প্রিয় সাখাওয়াৎ ।
      ভালো থাকুন সবসময়ই ।।
  • suman ২২/১০/২০১৩
    গভীর রাতে এক নিবিড় রহস্যময়তার আবহ তৈরী হয়েছে ...
    • আরজু নাসরিন পনি ২৩/১০/২০১৩
      গল্পটা আসলে অনেক বড়...তাই কয়েক পর্বে দিচ্ছি ।
      এটা শুরুর পর্ব ।
      কষ্ট করে পড়লেন...অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই আপনাকে ।।
      • suman ২৩/১০/২০১৩
        সমৃদ্ধ লেকা ...কষ্ট নয় ...pleasure
 
Quantcast