www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নিলাদ্রীর প্রতি চিঠি ২

প্রিয় নিলাদ্রী,
ডিপ্রেশন।

তোমাকে হারিয়ে ফেলার পর অনেক নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম। কি করবো,কই যাবো,কিভাবে সময় পার করবো কিছুই বুঝে উঠে পারতামনা। প্রাণচাঞ্চল্য ফিকে হয়ে গিয়েছিলো। জম্পেশ আড্ডার মাঝখানেই হঠাৎ আনমনা হয়ে যেতাম। কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠতো তুমি নেই ভেবে। তুমি কি করছো ভেবে। আমি যখন কোন কিছু নিয়ে হাঁসতাম তখনই কেমন যেনো মনে হতো নিজেকে। নিজেকে প্রশ্ন করতাম তুমি নেই আমি কিভাবে সবকিছু ভুলে হাঁসছি! সাথে সাথেই হাঁসিটা আমাবস্যা চাঁদের মতই নিরুদ্দেশ হয়ে যেতো।

স্নানের ঘরেও ফোনটা নিয়ে যেতাম সাথে করে যদি তোমার ফোন আসে! আমি যদি রিসিভ করতে না পারি! দিনের পর দিন আমি ভেঙে পড়ছিলাম। অনেক হিংস্র হয়ে যাচ্ছিলাম। সবকিছুতেই কেনো যেনো অনীহা। কাউকেই ভালো লাগতো নাহ। কারও সাথেও তেমন কথা বলা হয়ে উঠতো নাহ। পরিবারের সবার সাথেও অযথা রাগ করে বসে থাকতাম অনেক চেঁচামিচি করতাম এক সময়। পরে আবার নিজে বসে চিন্তা করতাম কিন্তু কারন খুঁজে পেতাম নাহ। সারারাতের নিদ্রাহীনতা শেষ করে সকালে ঘুমোতে যেতাম। রাত হয়ে আসলেই আমার কেমন যেনো ভয় হতো।
জানো নিলাদ্রী, একেকটা রাত! উফ! তোমাকে কখনোই বোঝানো যাবেনা। কতো বিষণ্ণতা।

আমি অনেক ধার্মিক ছিলাম, সেটা তুমিই বানিয়ে দিয়েগিয়েছিলে। তাই তুমি যাওয়ার পরে আমাকে ডিপ্রেশন এতোটা কাবু করে ফেলেছিলো যে মৃত্যুও কামনা করতাম। স্বর্গ পাবোনা, তার মানে তো তোমাকেও পাবোনা এই ভয়ে সুইসাইড করার অনেক ইচ্ছেজাগা স্বত্ত্বেও ওইসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতাম। তাছাড়া আমার এতো সাহসও ছিলোনা। আমি অনেক ভীতু টাইপের মানুষ! তা নাহলে বোকার মতো কবেই কঙ্কাল হয়ে ঢাকা মেডিক্যালে পড়ে রইতাম। রাতের পর রাত কত্তোকিছু করেছি কতোভাবে ধর্মকর্ম করেছি, কিছুই হয়নি। তাতে অবশ্য একটা লাভ হতো ডিপ্রেশন কিছুটা কমে যেতো। পুরুষ মানুষ নাকি কাঁদে নাহ! তুমিই বলোতো আমি কি কেঁদেছি?
মাঝে মাঝে চোখ ফুলে যেতো, লাল হয়ে থাকতো নামাজ পড়তে বের হওয়ার সময় কালো গ্লাস ব্যবহার করতে হতো।
জানো নিলাদ্রী, মাঝে মাঝে কেমন যেনো একটা মোচড় দিতো কলিজায় নাকি অন্য কোথাও সেটা বুঝে উঠিতে পারতামনা। ওই মোচড় যতোবারই দেয় ততবারই সেকেন্ডের ব্যবধানেই চোখে পানি চলে আসে। যারা ভালোবাসার মানুষ হারিয়েছে তারাই শুধু বুঝবে অনুভূতিটা কেমন।

দুইবছর নিজেকে বন্ধি করে রাখার পর পুনরায় সবার সাথে মিশতে শুরু করেছিলাম। তবুও মাঝে মাঝে আবার নিরুদ্দেশ হয়ে রইতাম। হাতেগোনা দুইএকজন বন্ধু ছাড়া কারও সাথেই কথা হতো নাহ। আমার জীবন বলতে একটা রুম আর বাসার পাশের মসজিদটার বারান্ধাই ছিলো। মাঝে মাঝে মোয়াজ্জেন এসে আমাকে জিজ্ঞেস করতো তোমার সমস্যা কি বাবা! বাসায় চলে যাও। চিন্তা করো, উনিও কষ্টটুকু বুঝে নিয়েছিলো। এতো কিছুর পরেও কিন্তু সৃষ্টিকর্তা ফেরত দেন নি আমাকে। দিবেনইবা কি করে, উনিতো আর আমাদের কথামতো চলেন নাহ। একঘেয়ে হয়েগিয়েছিলো সব একদম।

অনিদ্রা আর তোমাকে ভুলে থাকার চেষ্টায় যোগ হয়ে গিয়েছিলো নিদ্রানাশক। প্রচলিত খুব কম ঔষধই আছে যা আমি ট্রাই করিনি। ইপিক্লোন,বোপাম,রিভোট্রিল,সিডিল,ডেক্সপোটেন,এক্সপোটেন,ফেস টু আরো অনেক ঔষধ। পরে এইসব ঔষধেও কাজ করতো নাহ। নেশাদ্রব্যও চেষ্টা করেছিলাম তাতে বিপরীত হয়। তার সাথে যে তোমার বন্ধুত্ব গো! ওইসব খেলে তুমি আরো চেপে বসো। তুমি আর নেশা একই স্বত্বা।

শেষমেশ এক বন্ধু পরামর্শ দিলো প্রেম কর নতুন করে। তার কথা তেমন একটা মাথায় নিইনি। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত নিলাম প্রেমই করবো নতুন করে।
জানো নিলাদ্রী, অনেক চেষ্টা করেছি হয়না। আমি পারিনা। আমার ভেতর থেকে কেনো যেনো কথাই বের হতো নাহ। আমি তোমার গল্পই জুড়ে দিতাম। তাই ওটাও বাদ। এখনো পারিনি মাঝে মাঝে চেষ্টা করি কারও প্রেমে পড়তে, তোমার মতো করে কাউকে উজাড় করে ভালোবাসতে কিন্তু হয়ে উঠেনা। কয়েকদিন পরেই আমাকে বিষণ্ণতা চেপে ধরে। কোন মেয়ের প্রেমে পড়তে গেলেই তাকে তোমার সতীন মনে হয়। কতো মানুষ আমাকে নিয়ে হাঁসিঠাট্রা করে তুমি কি আদৌ জানো! ভেতরটাতো কেউ দেখেনা।

জানো নিলাদ্রী, আমার এখন অনেক অনেক ব্যস্ততা। ব্যস্ততায় প্রেম খুঁজে পাওয়া যায়না, বিষণ্ণতা খুঁজে পাওয়া যায়না। প্রাণ ভরে কান্না করা যায়না। এখানে কাঁদার কোন জায়গা নেইতো। কতোদিন প্রাণভরে তোমার জন্য কাঁদিনা। প্ল্যান আছে দেশে যখন আসবো তখন সমুদ্রকে সামনে রেখে গলা ফাটিয়ে তোমার জন্য কাঁদবো অনেক কাঁদবো। বিশ্বাস করো, এমন কোন সপ্তাহ নেই যে তোমাকে স্বপ্ন দেখা ছাড়া যায়। পঞ্চাশ ডিগ্রী সূর্য তাপের নিচেও আমি তোমার কথা ভেবে একঘণ্টা নিশ্চুপ বসে থাকি। তুমি কি করছো? কোথায় আছো? কিভাবে আছো? এইসব সবসময় মাথায় ঘুরপাক খায়। প্রতিদিন প্ল্যান করি কাল থেকে তোমাকে ভুলে যাবো কিন্তু পরে আর হয়ে উঠেনা!

স্বর্গে যদি যা চাই তা পাওয়া যায়, তবে তোমাকে কি আমি পাবো নাকি তোমার উনি পাবে নিলাদ্রী!
আমি সৃষ্টিকর্তার থেকে তোমার কার্বন কপিও কিন্তু চাইবো নাহ।
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ১০৯৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১২/১০/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast