নিলাদ্রীর প্রতি চিঠি ১
প্রিয় নিলাদ্রী - স্বপ্নের প্রস্থান।
১৮ই জ্যৈষ্ঠ তোমার পাকাপোক্ত প্রস্থান অনেক ব্যথিত না করলেও হাহাকার জাগিয়ে দিয়েছিলো অভ্যন্তরস্থ।
অনেক বেশি ভেঙে পড়লেও শক্ত করে নিয়েছিলাম নিজেকে সময়ের ব্যবধানে। তখন নিজের মনকে বুঝিয়েছিলাম সবকিছুই স্বাভাবিক। কারন শুধু আমার একারই নয়, লক্ষাদিক বালকের স্বপ্নগুলো শুক্রবার দিনটাতেই ঈশ্বর কেড়ে নেন। কারন তার কাছে এইসব অনেক ভালো লাগে। তিনি কষ্ট দিয়েই মানুষের প্রার্থনায় থেকে যেতে চান।
বছর তিনেক আগে একবার উড়ো খবরে শুনেছিলাম তুমি মা হচ্ছো। তোমাকে এই অবস্থায় কেমন দেখাচ্ছে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো। ঈশ্বর সেই সুযোগটুকুও অবশ্য আমায় দিয়েছিলেন। তোমার কয়েকখানা ফটো কাকতালীয়ভাবে আমার কাছে এসে পৌঁছেছিলো। তোমাকে গর্ভবতী অবস্থায় অপূর্ব দেখাচ্ছিলো। অবশ্য পৃথিবীর সব মেয়েকেই ওইসময় অপূর্ব দেখায়। কেমন যেনো একটা স্বর্গীয় ভাব থাকে। কিন্তু তার সাথে মনটাও খারাপ হয়েছিলো। কি জন্য হয়েছিলো সেটা অবশ্য তুমি ভালোভাবেই বুঝতে পারছো। সন্তানতো আর এমনিতেই হয়ে যায়না তার জন্য তো কিছু করতে হয়। ইচ্ছে হচ্ছিলো তোমার কাছে গিয়ে একবার বলে আসতে, ধন্যবাদ তোমাকে যত্ন করে কষ্ট দেওয়ার জন্য।
বছর দুয়েক পরে, কোন এক বিকেলে, পথের মাঝে তোমার সাথে আমার দেখা। প্রায় পাঁচ বছর পরে আমার নিলাদ্রীকে দেখতে পেলাম। একটুও চোখ ফেরাতে পারছিলামনা। যদিও তোমার গাড়িখানা আমিই গতিরোধ করে দিয়েছিলাম তোমাকে দেখার লোভে। তোমার চোখের নিচে কালো দাগ ছিলো কেনো? আচ্ছা তুমি কি রাত জাগো! তুমি কিন্তু একটুও বদলাওনি। সেই আগের মতোই আছো। তবে, এই প্রথম আমার সামনে তোমাকে লজ্জা পেতে দেখলাম! একটুও অবাক হইনি। যদিও অবাক হওয়ার কথা ছিলো। চোখে যতবারই চোখ পড়েছিলো তোমার চোখ নামিয়ে নিয়েছিলে। তোমার মুখখানা দেখেই পৃথিবী ভুলে গিয়েছিলাম। তোমাকে জড়িয়ে খুব কাঁদতেও ইচ্ছে হচ্ছিলো।
তোমার কোলে ঘুমুচ্ছিলো তোমার মেয়ে। আমি তার দিকে চোখ নিলাম। একদম দেখতে তোমার মতোই। খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো নিলীমাকে কোলে নিতে একবারের জন্য। তোমাকে বলেছিলাম আমার কোলে দাও একটু। তুমি চিন্তিত হলেও নিষেধ করোনি অবশ্য। খুব আলতো করে আমি নিলীমাকে কোলে তুলে নিয়েছিলাম আমার।এত্তো যত্নে কোনদিনই কোন কাজ করিনি আমি। কেমন যেন মনে হচ্ছিলো ওকে একটুখানি ব্যথা দিলেই পুরো পৃথিবী অভিশাপ দিবে আমায়। মেয়েটাকে আমার বুকে জড়িয়ে রেখেছিলাম কিছুক্ষন। কেমন যেনো মনে হচ্ছিলো আমার বুকের সাথে মিশে যাচ্ছিলো মেয়েটা। কোনদিনও এমন অনুভূতি হয়নি। খুব চুমো খেতে ইচ্ছে করছিলো নিলীমাকে তাই অনেকগুলো চুমো দিয়েছিলাম তার কপালে আর মাথায়। মেয়েটা তখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আমি কয়েকবার করে ডেকে জাগানোর চেষ্টায় ছিলাম কিন্তু জাগেনি। একদম তোমার মতোই ঘুম পাগলী। ইচ্ছে করছিলো মেয়েটাকে রেখে দিই আমার কাছে।
ওইদিন কেমন যেনো সব ওলট পালোট হয়ে গেলো সব।
মেয়েটার মুখ থেকে বাবা ডাকটা শুনার অধিকার মনে হচ্ছিলো শুধু আমারই ছিলো। আমার কেমন যেনো মনে হচ্ছিলো মেয়েটা জেগে উঠে বাবা বলে ডেকে উঠবে!। ওইদিন তোমাকে একবারের ছুঁয়ে দেখতেও খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো। কিন্তু সাহস হয়ে উঠেনি। তোমার মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে অনেক গভীর চিন্তায় ডুবে গিয়েছিলাম। এই মেয়েটাতো চিৎকার করে আমার বাড়ি মাতিয়ে রাখার কথা ছিলো। মেয়েটার কোমল পা দিয়ে ঘুরে বেড়ানোর কথা ছিলো আমার পুরো বাড়ি। এই সংসারখানাতো আমারই। কৈশোর থেকেইতো প্রতিটা সময় এই সাজানো পরিবারটাই কল্পনায় আর স্বপ্ন জুড়ে ছিলো। আর কালক্ষেপণ না করে তোমাকে চলে যেতে দিলাম অনিচ্ছা সত্ত্বেও।
সি এন জি নামক ধোঁয়া বিহীন গাড়িটা শুধু তোমাকেই নিয়ে যায়নি। সাথে নিয়ে গেলো আমার কৈশোরের স্বপ্নে সাজানো সংসারটা। আমি অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত তাকিয়ে রইলাম অপলক। মনের অজান্তেই দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়েছিলো চোখ থেকে। মেয়েটার প্রতি আমার কি কোন অধিকারই অবশিষ্ট ছিলোনা। দু ফোটা বীর্যের মালিকানা না থাকলে কি বাবা হওয়ার অধিকার পাওয়া যায়না!। সমাজ আর ধর্ম তিন অক্ষরের বাক্যের তিনবার পাঠেই সব বৈধতা দিয়ে দেয়। তোমারই বা কি দোষ, স্বয়ং ঈশ্বরইতো বৈধতায় বিশ্বাসী।
মা হওয়াতে তোমার কি পরিমাণ তৃপ্তি ছিলো তা এক বাক্যেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম বছর তিনেক আগে। তুমি যখন কেউ একজনকে বলেছিলে এই শুনছিস -"আমিতো মা হয়ে গেছিরে"। তাতে আমার কিছুই যায় আসেনি, কিন্তু মা হওয়ার পূর্বেকার কথা চিন্তা করলেই তোমার উপর অনেক রাগ চেপে বসতো। সন্তানতো তো এমনিতেই হয়ে যায়না!। আমার সবগুলো অধিকারই ঈশ্বর কেড়ে নিয়ে তুলে দিয়েছেন অন্য কারও কাছে।
তোমার জন্য এখনো অনেক কিছুই করতে ইচ্ছে করে।
একা থাকলে ইচ্ছে করে কান্না করতে আবার মাঝে মাঝে তোমাকে গালাগালি করতেও ইচ্ছে করে অনেক।
তবুও ভালো থেকো তুমি।
কারন প্রিয় মানুষগুলো যতকিছুই করুকনা কেনো তারা মোনাজেতেই থেকে যায় চিরদিন।
১৮ই জ্যৈষ্ঠ তোমার পাকাপোক্ত প্রস্থান অনেক ব্যথিত না করলেও হাহাকার জাগিয়ে দিয়েছিলো অভ্যন্তরস্থ।
অনেক বেশি ভেঙে পড়লেও শক্ত করে নিয়েছিলাম নিজেকে সময়ের ব্যবধানে। তখন নিজের মনকে বুঝিয়েছিলাম সবকিছুই স্বাভাবিক। কারন শুধু আমার একারই নয়, লক্ষাদিক বালকের স্বপ্নগুলো শুক্রবার দিনটাতেই ঈশ্বর কেড়ে নেন। কারন তার কাছে এইসব অনেক ভালো লাগে। তিনি কষ্ট দিয়েই মানুষের প্রার্থনায় থেকে যেতে চান।
বছর তিনেক আগে একবার উড়ো খবরে শুনেছিলাম তুমি মা হচ্ছো। তোমাকে এই অবস্থায় কেমন দেখাচ্ছে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো। ঈশ্বর সেই সুযোগটুকুও অবশ্য আমায় দিয়েছিলেন। তোমার কয়েকখানা ফটো কাকতালীয়ভাবে আমার কাছে এসে পৌঁছেছিলো। তোমাকে গর্ভবতী অবস্থায় অপূর্ব দেখাচ্ছিলো। অবশ্য পৃথিবীর সব মেয়েকেই ওইসময় অপূর্ব দেখায়। কেমন যেনো একটা স্বর্গীয় ভাব থাকে। কিন্তু তার সাথে মনটাও খারাপ হয়েছিলো। কি জন্য হয়েছিলো সেটা অবশ্য তুমি ভালোভাবেই বুঝতে পারছো। সন্তানতো আর এমনিতেই হয়ে যায়না তার জন্য তো কিছু করতে হয়। ইচ্ছে হচ্ছিলো তোমার কাছে গিয়ে একবার বলে আসতে, ধন্যবাদ তোমাকে যত্ন করে কষ্ট দেওয়ার জন্য।
বছর দুয়েক পরে, কোন এক বিকেলে, পথের মাঝে তোমার সাথে আমার দেখা। প্রায় পাঁচ বছর পরে আমার নিলাদ্রীকে দেখতে পেলাম। একটুও চোখ ফেরাতে পারছিলামনা। যদিও তোমার গাড়িখানা আমিই গতিরোধ করে দিয়েছিলাম তোমাকে দেখার লোভে। তোমার চোখের নিচে কালো দাগ ছিলো কেনো? আচ্ছা তুমি কি রাত জাগো! তুমি কিন্তু একটুও বদলাওনি। সেই আগের মতোই আছো। তবে, এই প্রথম আমার সামনে তোমাকে লজ্জা পেতে দেখলাম! একটুও অবাক হইনি। যদিও অবাক হওয়ার কথা ছিলো। চোখে যতবারই চোখ পড়েছিলো তোমার চোখ নামিয়ে নিয়েছিলে। তোমার মুখখানা দেখেই পৃথিবী ভুলে গিয়েছিলাম। তোমাকে জড়িয়ে খুব কাঁদতেও ইচ্ছে হচ্ছিলো।
তোমার কোলে ঘুমুচ্ছিলো তোমার মেয়ে। আমি তার দিকে চোখ নিলাম। একদম দেখতে তোমার মতোই। খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো নিলীমাকে কোলে নিতে একবারের জন্য। তোমাকে বলেছিলাম আমার কোলে দাও একটু। তুমি চিন্তিত হলেও নিষেধ করোনি অবশ্য। খুব আলতো করে আমি নিলীমাকে কোলে তুলে নিয়েছিলাম আমার।এত্তো যত্নে কোনদিনই কোন কাজ করিনি আমি। কেমন যেন মনে হচ্ছিলো ওকে একটুখানি ব্যথা দিলেই পুরো পৃথিবী অভিশাপ দিবে আমায়। মেয়েটাকে আমার বুকে জড়িয়ে রেখেছিলাম কিছুক্ষন। কেমন যেনো মনে হচ্ছিলো আমার বুকের সাথে মিশে যাচ্ছিলো মেয়েটা। কোনদিনও এমন অনুভূতি হয়নি। খুব চুমো খেতে ইচ্ছে করছিলো নিলীমাকে তাই অনেকগুলো চুমো দিয়েছিলাম তার কপালে আর মাথায়। মেয়েটা তখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আমি কয়েকবার করে ডেকে জাগানোর চেষ্টায় ছিলাম কিন্তু জাগেনি। একদম তোমার মতোই ঘুম পাগলী। ইচ্ছে করছিলো মেয়েটাকে রেখে দিই আমার কাছে।
ওইদিন কেমন যেনো সব ওলট পালোট হয়ে গেলো সব।
মেয়েটার মুখ থেকে বাবা ডাকটা শুনার অধিকার মনে হচ্ছিলো শুধু আমারই ছিলো। আমার কেমন যেনো মনে হচ্ছিলো মেয়েটা জেগে উঠে বাবা বলে ডেকে উঠবে!। ওইদিন তোমাকে একবারের ছুঁয়ে দেখতেও খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো। কিন্তু সাহস হয়ে উঠেনি। তোমার মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে অনেক গভীর চিন্তায় ডুবে গিয়েছিলাম। এই মেয়েটাতো চিৎকার করে আমার বাড়ি মাতিয়ে রাখার কথা ছিলো। মেয়েটার কোমল পা দিয়ে ঘুরে বেড়ানোর কথা ছিলো আমার পুরো বাড়ি। এই সংসারখানাতো আমারই। কৈশোর থেকেইতো প্রতিটা সময় এই সাজানো পরিবারটাই কল্পনায় আর স্বপ্ন জুড়ে ছিলো। আর কালক্ষেপণ না করে তোমাকে চলে যেতে দিলাম অনিচ্ছা সত্ত্বেও।
সি এন জি নামক ধোঁয়া বিহীন গাড়িটা শুধু তোমাকেই নিয়ে যায়নি। সাথে নিয়ে গেলো আমার কৈশোরের স্বপ্নে সাজানো সংসারটা। আমি অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত তাকিয়ে রইলাম অপলক। মনের অজান্তেই দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়েছিলো চোখ থেকে। মেয়েটার প্রতি আমার কি কোন অধিকারই অবশিষ্ট ছিলোনা। দু ফোটা বীর্যের মালিকানা না থাকলে কি বাবা হওয়ার অধিকার পাওয়া যায়না!। সমাজ আর ধর্ম তিন অক্ষরের বাক্যের তিনবার পাঠেই সব বৈধতা দিয়ে দেয়। তোমারই বা কি দোষ, স্বয়ং ঈশ্বরইতো বৈধতায় বিশ্বাসী।
মা হওয়াতে তোমার কি পরিমাণ তৃপ্তি ছিলো তা এক বাক্যেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম বছর তিনেক আগে। তুমি যখন কেউ একজনকে বলেছিলে এই শুনছিস -"আমিতো মা হয়ে গেছিরে"। তাতে আমার কিছুই যায় আসেনি, কিন্তু মা হওয়ার পূর্বেকার কথা চিন্তা করলেই তোমার উপর অনেক রাগ চেপে বসতো। সন্তানতো তো এমনিতেই হয়ে যায়না!। আমার সবগুলো অধিকারই ঈশ্বর কেড়ে নিয়ে তুলে দিয়েছেন অন্য কারও কাছে।
তোমার জন্য এখনো অনেক কিছুই করতে ইচ্ছে করে।
একা থাকলে ইচ্ছে করে কান্না করতে আবার মাঝে মাঝে তোমাকে গালাগালি করতেও ইচ্ছে করে অনেক।
তবুও ভালো থেকো তুমি।
কারন প্রিয় মানুষগুলো যতকিছুই করুকনা কেনো তারা মোনাজেতেই থেকে যায় চিরদিন।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
কামরুজ্জামান সাদ ১২/১০/২০১৭সুন্দর ভাবনা
-
আজাদ আলী ১২/১০/২০১৭Asadharan lekhni priy kobi. Suveccha nirantar .....
-
শাহানাজ সুলতানা (শাহানাজ) ১২/১০/২০১৭অসাধারণ
-
মধু মঙ্গল সিনহা ১২/১০/২০১৭অনন্য কবিতা।।