টেকসই উন্নয়ন ও নিরাপদ খাদ্য
বর্তমান বাংলাদেশে একটি বহুল আলোচিত প্রত্যয় হলো ‘উন্নয়ন’। শুধু বাংলাদেশে নয়, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যেখানেই ‘উন্নয়ন’ অবধারণটি উচ্চারিত হয় সেখানেই সামনে আসে বাংলাদেশের নাম। একদা ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ অপবাদ ঘুচিয়ে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন ক্ষেত্রে বিশ্বের নিকট এক রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সুমহান চেতনায় উজ্জীবিত আত্মপ্রত্যয়ী বাঙালী জাতি তাই আজ শুধু উন্নয়ন শব্দটির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে রাজি নয়, বরং উন্নয়ন কিভাবে টেকসই করা যায় সে বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন হলো পরিবেশকে ভিত্তি করে সংঘটিত আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। অর্থাৎ যেখানে উন্নয়নও হবে আবার পরিবেশও ঠিক থাকবে- এমন একটি প্রক্রিয়া হলো টেকসই উন্নয়ন। টেকসই উন্নয়নরে সাথে বহুমাত্রিক বিষয় জড়িত। সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ তেমনই একটি বিষয় যা টেকসই উন্নয়নের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার এক, দুই, তিন, ও ছয় নম্বর অভীষ্টের সাথে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি সরাসরি জড়িত। তাই সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে না পারলে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট র্অজন সহজ হবে না।
http://www.fanslave.net/ref.php?ref=1936649
টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে ইতোপূর্বে অনেকেই ভেবেছেন। তবে সম্প্রতি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সম্মলেন ২০১৫ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই বিষয়টি সকল মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। ওই সম্মলেনে বিশ্বের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন কর্মসূচির শিরোনাম করা হয়েছে “আমাদের পৃথিবীর রূপান্তর: ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন কার্যক্রম।” টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পুষ্টি, শিক্ষাসহ বহুমাত্রিক বিষয় জড়িত। অগ্রাধিকারের দিক থেকে এসডিজির ১৭টি উদ্দেশ্যের মধ্যে দুই নম্বরটি হলো ক্ষুধা নির্মূল করা, খাদ্যনিরাপত্তা অর্জন, পুষ্টির উন্নয়ন এবং স্থায়িত্বশীল কৃষির অগ্রগতি সাধন করা। এ উদ্দেশ্যের মাঝে নিহিত আছে নিরাপদ খাদ্যরে বিষয়টি। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ বলতে ভেজাল, দূষণমুক্ত, পুষ্টিকর খাদ্যের উৎপাদন ও সহজপ্রাপ্যতা এবং সকল মানুষের উক্ত খাদ্যের উপর টেকসই এনটাইটলেমন্টে সুবিধা থাকাকে বুঝায়। সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে না পারলে ক্ষুধামুক্তি ও দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নত পুষ্টির লক্ষ্য অর্জন, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করা, সব বয়সের সবার কল্যাণ করা, বৈষম্য দূরীকরণ টেকসই উন্নয়নের প্রভৃতি লক্ষ্য র্অজন করা যাবে না। সুতরাং, সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার উপর অনেকাংশে নির্ভর করবে টেকসই উন্নয়নের অন্যান্য লক্ষ্যগুলো অর্জনের সফলতা।
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল আয়তন ও ক্রমবর্ধিষ্ণু বিশাল জনগোষ্ঠীর এ দেশে এক সময় খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি বড় করে দেখা হতো। ১৯৭১ সালরে স্বাধীনতার পর ৭ কোটি থেকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১৬ কোটিতে পৌঁছেছে। এ বিপুল জনগোষ্ঠির দু’বেলা খাবারের সংস্থান করাই ছিলো আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকে বাংলাদেশে ম্যালথ্যাসের জনসংখ্যা তত্ত্ব কার্যকর হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সে তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত করে খাদ্যের উৎপাদন জ্যামিতিক হারে বাড়াতে সক্ষম হয়েছে এবং খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসর্ম্পূণতা র্অজন করেছে। স্বাধীনতার পর থকেে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচ গুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে দশ গুণ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর চাল ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদশে এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে। বাংলাদেশের মানুষের দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ২৩২০ কিলোক্যালরি। সুতরাং খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নটি ছাপিয়ে এখন নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি সামনে এসেছে। কেননা আগামী ২০৩০ সালরে মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রতুশ্রুতির মধ্যে অন্যতম।
বলা হয়ে থাকে, বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য জরুরি হলেও তার চেয়ে বশি জরুরি নিরাপদ খাদ্য। অথচ খাদ্যে ভেজাল মেশানোর মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য হয়ে ওঠে অনিরাপদ ও ভয়ংকর। সাধারণত বাজারে দুই ধরনের খাবার পাওয়া যায়— সরাসরি উৎপাদন করা ও প্রক্রিয়াজাত খাবার। উভয় প্রকার খাবারই অনিরাপদ হতে পারে। মূলত: উৎপাদন, পরিবহণ এবং সংরক্ষণ— এই তিন স্তরে খাদ্যে ভেজাল মেশানো হয়ে থাকে। উৎপাদন পর্যায়ে দূষিত মাটি, পানি, মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার এবং অধিক ফলনের আশায় হরমোনের ব্যবহার— কোন কোন ক্ষেত্রে জেনেটিক্যালি মোডিফাইড শস্যের চাষ প্রভৃতি খাদ্যকে অনিরাপদ করে তোলে। খাদ্য-শস্য বাজারজাতকরণে প্রায়শ র্দীঘপথ পাড়ি দিতে হয় এবং দীর্ঘক্ষণ সংরক্ষণ করতে হয়। তাই পরিবহণ ও সংরক্ষণের সুবিধার্থে খাদ্যদ্রব্যের সাথে হরহামেশাই মেশানো হয় ফরমালিন, হাইড্রোক্সাইড, কার্বাইডসহ বিভিন্ন বিষ যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আবার খাদ্য ক্রয়-বিক্রয়ের স্থানের পরিবেশ দূষিত হলে নিরাপদ খাবার হয়ে উঠতে পারে অনিরাপদ। আধুনিক জীবনে শিল্পজাত বা প্রক্রিয়াজাত খাদ্য একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে সোডিয়াম সাইক্লামেট, কাপড়ের বিষাক্ত রং, সাইট্রিক এসিড, অ্যাডিটিভ ও প্রিজারভেটিভ এর ব্যবহার খাদ্যকে অনিরাপদ করে তোলে।
টেকসই জীবন ও সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নেই। অনিরাপদ খাদ্য শুধু স্বাস্থ্য ঝুঁকিরই কারণ না, বরং দেহে রোগের বাসা বাঁধারও অন্যতম কারণ। ডায়রিয়া থেকে শুরু করে ক্যান্সার— এমন দুই শতাধিক রোগের জন্য দায়ী অনিরাপদ খাদ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতিবছর প্রায় ৬০ কোটি মানুষ দূষিত খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়। এ কারণে প্রতিবছর মারা যায় চার লাখ ৪২ হাজার মানুষ। ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে শিশু ও গর্ভবতী মহিলারা সবচেয়ে বেশি আক্ত্রান্ত হচ্ছেন। ভেজাল খাদ্যের কারণে শিশু বিকলাঙ্গ হওয়া এবং শিশুখাদ্যে ভেজাল মেশানো আগামী প্রজন্মের জন্যে নিঃসন্দেহে এক অশনিসংকেতই বটে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৪৩ শতাংশই খাবার জনিত রোগে আক্রান্ত হয়, এর মধ্যে প্রতিবছর প্রাণ হারায় ১ লাখ ২৫ হাজার শিশু।
আমাদের দেশে খাদ্যে ভেজাল
মেশানোর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এটি বেশি দিনের নয়। যখন ক্রমর্বধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদার যোগান দিতে সীমিত জমিতে শুরু হয় অধিক ফলন প্রতিযোগিতা, মূলত তখন থেকেই খাদ্যে ভেজাল মেশানো কিংবা নানা ধরনের রাসায়নিক সার/কীটনাশক ব্যবহারের প্রবণতা শুরু হয়। বেশি দিন তাজা রাখা, উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, কাঁচা ফলকে দ্রুত বাজারজাতকরণের জন্য পাকিয়ে তোলা প্রভৃতি উদ্দেশ্য সাধনে এখন হর-হামেশাই ব্যবহার করা হচ্ছে ফরমালিন, হাইড্রোক্সাইড, কার্বাইডসহ বিভিন্ন বিষ। মুরগীর খাবারে মেশানো হচ্ছে ট্যানারী বর্জ্য, গরু মোটাতাজাকরণে ব্যবহৃত হচ্ছে গ্রোথ হরমোন। পোল্ট্রি মুরগতিে ব্যবহৃত হচ্ছে বার্ড ক্রোমিয়াম। শুঁটকিমাছ প্রক্রিয়াজাত ও গুদামজাত করতে ডিডিটি ও অন্যান্য কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। অনুরূপভাবে, শিল্পজাত খাদ্যে সোডিয়াম সাইক্লামেট, কাপড়ের বিষাক্ত রং, সাইট্রিক এসিড ও প্রিজারভেটিভ এর ব্যবহার হচ্ছে নির্বিচারে। এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা ঠেকাতে সরকার ‘নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩’ প্রণয়ন করেছে যেখানে এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। ইতোপূর্বে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্নভাবে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু সেসব উদ্যেগের মাধ্যমে উৎপাদনের মাঠ থেকে ভোক্তার হাত পর্যন্ত ভেজাল ও দূষণমুক্ত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা যায় নি। এ প্রেক্ষাপটে দেশে বিদ্যমান আইন ‘পিওর ফুড অর্ডিন্যান্স ১৯৫৯’ রহিত করে ২০১৩ সালে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩’ প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে- বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা; খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, মজুদ বিপণন, পরিবহণ ও বিক্রয়— পুরো যে খাদ্যশৃঙ্খল আছে, মাঠের উৎপাদন থেকে ভোক্তার হাত পর্যন্ত সব শৃঙ্খল সমন্বয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ এবং দক্ষ ও কার্যকর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা। এরই অংশ হিসেবে ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়। এ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার প্রধান কাজ হলো অনিরাপদ ও ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধের নিয়মকানন নির্ধারণ, সমন্বয় ও পরিবীক্ষণ। মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ নিরাপদ খাদ্য আইনে তফসিলভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া এদেশে যেসব খাদ্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আছে তাদের ১২০টিরও বেশি আইন, বিধি, প্রবিধি, নীতিমালা ইত্যাদি রয়েছে। এসব বিধি-বিধান বাস্তবায়নে ৬৪টি জেলায় ও আটটি বিভাগীয় শহরে ৭৪টি নিরাপদ খাদ্য আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ নিরাপদ খাদ্য আইন মেনে চলার জন্য নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা এবং সীমিত পরিসরে বাজার মনিটোরিংয়ের কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১২টি মন্ত্রণালয় এবং তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন দপ্তর, সংস্থা, অধিদপ্তর ও স্থানীয় সরকারের প্রায় ৪৮৬টি প্রতিষ্ঠান নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ- এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। প্রায় ১৫ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে এবং ১০ লাখ পরোক্ষভাবে খাদ্য ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত। খাদ্য নিরাপদ রাখার বিষয়ে তাদের জ্ঞান ও প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। ফুড সেফটি অথোরিটি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে তার দায়িত্ব সর্ম্পকে সচেতন করছে। এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অন্য প্রতিষ্ঠানের যােগাযােগ ও সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়ে কাজের গতি বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ৪২২ জন লোকবল সম্বলিত একটি শক্তিশালী বোর্ড গঠন করেছে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে তারা। এছাড়া নিরাপদ খাদ্য আইন নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করার জন্য নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পোস্টার, স্টিকার ও প্ল্যানচেট তৈরি করে থাকে। এগুলো বিভিন্ন জেলা-উপজেলা শহরে বিতরণসহ টেলিভিশনে জিঙ্গল করে থাকে। উপরন্তু জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের কর্মশালাও আয়োজন করে থাকে তারা। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, মজুদ, সরবরাহ, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, বিপণন ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিতকল্পে তারা জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উদযাপন করে থাকে। এবছর জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উদযাপিত হয়েছে ২ ফেব্রুয়ারি। এ উপলক্ষে ২-৩ ফেব্রুয়ারি কৃসিবিদ ইন্সটিটিউশনে নিরাপদ খাদ্য মেলার আয়োজন করা হয়।
উৎপাদন থকেে ভােক্তা পর্যন্ত নিরাপদ খাদ্যের ব্যবস্থাপনা একটি জটিল বিষয়। খাদ্যে ভেজাল ও দূষণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা মানেই ধরো-মারো-শাস্তি দাও— এমন নয়, বরং কৃষক থেকে ভোক্তাপর্যায়ে সচেতনতা তৈরি করার মাধ্যমে ভেজাল ও দূষণ রোধ করা উত্তম। তাই নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনায় গুণগত পরিবর্তন আবশ্যক। আমরা জানি, যেকোন প্রতিষ্ঠানকে নির্ভর করতে হয় কৃষকের উপর। তাই সচেতনতা কৃষক থেকেই শুরু হতে হবে। আধুনকি ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে চাষাবাদের জন্য কৃষককে আগ্রহী করতে হবে। তাদেরকে উত্তম উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। যথাযথ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অনুমােদন ছাড়া ফসলে কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না।খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রতিটি পর্যায়ে সম্ভাব্য সমস্যা নিরুপণ এবং তা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হতে হবে। খাদ্যের মান ঠিক রাখতে সরবরাহকারীকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এককথায় খাদ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, পরিবহণ, বিক্রয় ও ভােক্তার খাদ্য গ্রহণ—প্রতিটি পর্যায়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
http://www.fanslave.net/ref.php?ref=1936649
টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে ইতোপূর্বে অনেকেই ভেবেছেন। তবে সম্প্রতি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সম্মলেন ২০১৫ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই বিষয়টি সকল মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। ওই সম্মলেনে বিশ্বের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন কর্মসূচির শিরোনাম করা হয়েছে “আমাদের পৃথিবীর রূপান্তর: ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন কার্যক্রম।” টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পুষ্টি, শিক্ষাসহ বহুমাত্রিক বিষয় জড়িত। অগ্রাধিকারের দিক থেকে এসডিজির ১৭টি উদ্দেশ্যের মধ্যে দুই নম্বরটি হলো ক্ষুধা নির্মূল করা, খাদ্যনিরাপত্তা অর্জন, পুষ্টির উন্নয়ন এবং স্থায়িত্বশীল কৃষির অগ্রগতি সাধন করা। এ উদ্দেশ্যের মাঝে নিহিত আছে নিরাপদ খাদ্যরে বিষয়টি। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ বলতে ভেজাল, দূষণমুক্ত, পুষ্টিকর খাদ্যের উৎপাদন ও সহজপ্রাপ্যতা এবং সকল মানুষের উক্ত খাদ্যের উপর টেকসই এনটাইটলেমন্টে সুবিধা থাকাকে বুঝায়। সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে না পারলে ক্ষুধামুক্তি ও দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নত পুষ্টির লক্ষ্য অর্জন, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করা, সব বয়সের সবার কল্যাণ করা, বৈষম্য দূরীকরণ টেকসই উন্নয়নের প্রভৃতি লক্ষ্য র্অজন করা যাবে না। সুতরাং, সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার উপর অনেকাংশে নির্ভর করবে টেকসই উন্নয়নের অন্যান্য লক্ষ্যগুলো অর্জনের সফলতা।
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল আয়তন ও ক্রমবর্ধিষ্ণু বিশাল জনগোষ্ঠীর এ দেশে এক সময় খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি বড় করে দেখা হতো। ১৯৭১ সালরে স্বাধীনতার পর ৭ কোটি থেকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১৬ কোটিতে পৌঁছেছে। এ বিপুল জনগোষ্ঠির দু’বেলা খাবারের সংস্থান করাই ছিলো আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকে বাংলাদেশে ম্যালথ্যাসের জনসংখ্যা তত্ত্ব কার্যকর হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সে তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত করে খাদ্যের উৎপাদন জ্যামিতিক হারে বাড়াতে সক্ষম হয়েছে এবং খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসর্ম্পূণতা র্অজন করেছে। স্বাধীনতার পর থকেে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচ গুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে দশ গুণ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর চাল ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদশে এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে। বাংলাদেশের মানুষের দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ২৩২০ কিলোক্যালরি। সুতরাং খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নটি ছাপিয়ে এখন নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি সামনে এসেছে। কেননা আগামী ২০৩০ সালরে মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রতুশ্রুতির মধ্যে অন্যতম।
বলা হয়ে থাকে, বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য জরুরি হলেও তার চেয়ে বশি জরুরি নিরাপদ খাদ্য। অথচ খাদ্যে ভেজাল মেশানোর মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য হয়ে ওঠে অনিরাপদ ও ভয়ংকর। সাধারণত বাজারে দুই ধরনের খাবার পাওয়া যায়— সরাসরি উৎপাদন করা ও প্রক্রিয়াজাত খাবার। উভয় প্রকার খাবারই অনিরাপদ হতে পারে। মূলত: উৎপাদন, পরিবহণ এবং সংরক্ষণ— এই তিন স্তরে খাদ্যে ভেজাল মেশানো হয়ে থাকে। উৎপাদন পর্যায়ে দূষিত মাটি, পানি, মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার এবং অধিক ফলনের আশায় হরমোনের ব্যবহার— কোন কোন ক্ষেত্রে জেনেটিক্যালি মোডিফাইড শস্যের চাষ প্রভৃতি খাদ্যকে অনিরাপদ করে তোলে। খাদ্য-শস্য বাজারজাতকরণে প্রায়শ র্দীঘপথ পাড়ি দিতে হয় এবং দীর্ঘক্ষণ সংরক্ষণ করতে হয়। তাই পরিবহণ ও সংরক্ষণের সুবিধার্থে খাদ্যদ্রব্যের সাথে হরহামেশাই মেশানো হয় ফরমালিন, হাইড্রোক্সাইড, কার্বাইডসহ বিভিন্ন বিষ যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আবার খাদ্য ক্রয়-বিক্রয়ের স্থানের পরিবেশ দূষিত হলে নিরাপদ খাবার হয়ে উঠতে পারে অনিরাপদ। আধুনিক জীবনে শিল্পজাত বা প্রক্রিয়াজাত খাদ্য একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে সোডিয়াম সাইক্লামেট, কাপড়ের বিষাক্ত রং, সাইট্রিক এসিড, অ্যাডিটিভ ও প্রিজারভেটিভ এর ব্যবহার খাদ্যকে অনিরাপদ করে তোলে।
টেকসই জীবন ও সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নেই। অনিরাপদ খাদ্য শুধু স্বাস্থ্য ঝুঁকিরই কারণ না, বরং দেহে রোগের বাসা বাঁধারও অন্যতম কারণ। ডায়রিয়া থেকে শুরু করে ক্যান্সার— এমন দুই শতাধিক রোগের জন্য দায়ী অনিরাপদ খাদ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতিবছর প্রায় ৬০ কোটি মানুষ দূষিত খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়। এ কারণে প্রতিবছর মারা যায় চার লাখ ৪২ হাজার মানুষ। ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে শিশু ও গর্ভবতী মহিলারা সবচেয়ে বেশি আক্ত্রান্ত হচ্ছেন। ভেজাল খাদ্যের কারণে শিশু বিকলাঙ্গ হওয়া এবং শিশুখাদ্যে ভেজাল মেশানো আগামী প্রজন্মের জন্যে নিঃসন্দেহে এক অশনিসংকেতই বটে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৪৩ শতাংশই খাবার জনিত রোগে আক্রান্ত হয়, এর মধ্যে প্রতিবছর প্রাণ হারায় ১ লাখ ২৫ হাজার শিশু।
আমাদের দেশে খাদ্যে ভেজাল
মেশানোর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এটি বেশি দিনের নয়। যখন ক্রমর্বধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদার যোগান দিতে সীমিত জমিতে শুরু হয় অধিক ফলন প্রতিযোগিতা, মূলত তখন থেকেই খাদ্যে ভেজাল মেশানো কিংবা নানা ধরনের রাসায়নিক সার/কীটনাশক ব্যবহারের প্রবণতা শুরু হয়। বেশি দিন তাজা রাখা, উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, কাঁচা ফলকে দ্রুত বাজারজাতকরণের জন্য পাকিয়ে তোলা প্রভৃতি উদ্দেশ্য সাধনে এখন হর-হামেশাই ব্যবহার করা হচ্ছে ফরমালিন, হাইড্রোক্সাইড, কার্বাইডসহ বিভিন্ন বিষ। মুরগীর খাবারে মেশানো হচ্ছে ট্যানারী বর্জ্য, গরু মোটাতাজাকরণে ব্যবহৃত হচ্ছে গ্রোথ হরমোন। পোল্ট্রি মুরগতিে ব্যবহৃত হচ্ছে বার্ড ক্রোমিয়াম। শুঁটকিমাছ প্রক্রিয়াজাত ও গুদামজাত করতে ডিডিটি ও অন্যান্য কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। অনুরূপভাবে, শিল্পজাত খাদ্যে সোডিয়াম সাইক্লামেট, কাপড়ের বিষাক্ত রং, সাইট্রিক এসিড ও প্রিজারভেটিভ এর ব্যবহার হচ্ছে নির্বিচারে। এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা ঠেকাতে সরকার ‘নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩’ প্রণয়ন করেছে যেখানে এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। ইতোপূর্বে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্নভাবে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু সেসব উদ্যেগের মাধ্যমে উৎপাদনের মাঠ থেকে ভোক্তার হাত পর্যন্ত ভেজাল ও দূষণমুক্ত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা যায় নি। এ প্রেক্ষাপটে দেশে বিদ্যমান আইন ‘পিওর ফুড অর্ডিন্যান্স ১৯৫৯’ রহিত করে ২০১৩ সালে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩’ প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে- বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা; খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, মজুদ বিপণন, পরিবহণ ও বিক্রয়— পুরো যে খাদ্যশৃঙ্খল আছে, মাঠের উৎপাদন থেকে ভোক্তার হাত পর্যন্ত সব শৃঙ্খল সমন্বয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ এবং দক্ষ ও কার্যকর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা। এরই অংশ হিসেবে ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়। এ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার প্রধান কাজ হলো অনিরাপদ ও ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধের নিয়মকানন নির্ধারণ, সমন্বয় ও পরিবীক্ষণ। মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ নিরাপদ খাদ্য আইনে তফসিলভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া এদেশে যেসব খাদ্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আছে তাদের ১২০টিরও বেশি আইন, বিধি, প্রবিধি, নীতিমালা ইত্যাদি রয়েছে। এসব বিধি-বিধান বাস্তবায়নে ৬৪টি জেলায় ও আটটি বিভাগীয় শহরে ৭৪টি নিরাপদ খাদ্য আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ নিরাপদ খাদ্য আইন মেনে চলার জন্য নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা এবং সীমিত পরিসরে বাজার মনিটোরিংয়ের কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১২টি মন্ত্রণালয় এবং তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন দপ্তর, সংস্থা, অধিদপ্তর ও স্থানীয় সরকারের প্রায় ৪৮৬টি প্রতিষ্ঠান নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ- এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। প্রায় ১৫ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে এবং ১০ লাখ পরোক্ষভাবে খাদ্য ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত। খাদ্য নিরাপদ রাখার বিষয়ে তাদের জ্ঞান ও প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। ফুড সেফটি অথোরিটি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে তার দায়িত্ব সর্ম্পকে সচেতন করছে। এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অন্য প্রতিষ্ঠানের যােগাযােগ ও সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়ে কাজের গতি বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ৪২২ জন লোকবল সম্বলিত একটি শক্তিশালী বোর্ড গঠন করেছে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে তারা। এছাড়া নিরাপদ খাদ্য আইন নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করার জন্য নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পোস্টার, স্টিকার ও প্ল্যানচেট তৈরি করে থাকে। এগুলো বিভিন্ন জেলা-উপজেলা শহরে বিতরণসহ টেলিভিশনে জিঙ্গল করে থাকে। উপরন্তু জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের কর্মশালাও আয়োজন করে থাকে তারা। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, মজুদ, সরবরাহ, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, বিপণন ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিতকল্পে তারা জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উদযাপন করে থাকে। এবছর জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উদযাপিত হয়েছে ২ ফেব্রুয়ারি। এ উপলক্ষে ২-৩ ফেব্রুয়ারি কৃসিবিদ ইন্সটিটিউশনে নিরাপদ খাদ্য মেলার আয়োজন করা হয়।
উৎপাদন থকেে ভােক্তা পর্যন্ত নিরাপদ খাদ্যের ব্যবস্থাপনা একটি জটিল বিষয়। খাদ্যে ভেজাল ও দূষণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা মানেই ধরো-মারো-শাস্তি দাও— এমন নয়, বরং কৃষক থেকে ভোক্তাপর্যায়ে সচেতনতা তৈরি করার মাধ্যমে ভেজাল ও দূষণ রোধ করা উত্তম। তাই নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনায় গুণগত পরিবর্তন আবশ্যক। আমরা জানি, যেকোন প্রতিষ্ঠানকে নির্ভর করতে হয় কৃষকের উপর। তাই সচেতনতা কৃষক থেকেই শুরু হতে হবে। আধুনকি ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে চাষাবাদের জন্য কৃষককে আগ্রহী করতে হবে। তাদেরকে উত্তম উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। যথাযথ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অনুমােদন ছাড়া ফসলে কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না।খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রতিটি পর্যায়ে সম্ভাব্য সমস্যা নিরুপণ এবং তা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হতে হবে। খাদ্যের মান ঠিক রাখতে সরবরাহকারীকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এককথায় খাদ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, পরিবহণ, বিক্রয় ও ভােক্তার খাদ্য গ্রহণ—প্রতিটি পর্যায়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জসিম বিন ইদ্রিস ০৭/০৪/২০১৯গঠনমূলক সুন্দর আলোচনার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০২/০৩/২০১৯সহমত।