মনোরঞ্জন ব্যাপারীর ‘চণ্ডাল জীবন’ সম্মানিত
এ-বছর বাংলা একাডেমি-প্রদত্ত সুপ্রভা মজুমদার পুরস্কার পাচ্ছেন বাংলার অনন্য দলিত সাহিত্যিক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। ১১ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে তাঁর ‘‘ইতিবৃত্তে চণ্ডাল জীবন’ বইটির জন্য। সুপ্রভা মজুমদারওড়িশার ভুবনেশ্বরের মন্দিসমূহের স্থাপত্যশৈলী নিয়ে কাজ করেছেন। ইতিহাস, সাহিত্য, সঙ্গীত ও খেলাধুলায়ও বিশেষ কর্মযজ্ঞের স্বাক্ষর রেখে গেছেন।
বাংলায় মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষের সাহিত্যগুণান্বিত আত্মকথন খুব কম। সেই কারণেই মনোরঞ্জন ব্যাপারীর এই পুরস্কার প্রাপ্তি বিশেষ উল্লেখের। দেশভাগের সময় যে শিশুটিকে উদ্বাস্তু হয়ে এই বাংলা চলে আসার পর থেকে ভাগ্যের তাড়নায় বার বার মৃত্যুর সাক্ষাৎকার নিতে হয়েছে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে আপনা থেকেই জড়িয়ে গিয়ে সহ্য করতে হয়েছে নানা অত্যাচার, চরম ঘৃণিত জীবনের অভিজ্ঞতার থেকে সঞ্চয় করতে হয়েছে মধ্য আর যৌবনের প্রায় বিদায়লগ্নে এসে কারাগারের অন্তরালে যার অক্ষরজ্ঞান, তাঁর লেখা আত্মজৈবনিক গ্রন্থের পুরস্কার প্রাপ্তি অবশ্যই বিশেষ ঘটনা। তাঁর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া, “এই স্বীকৃতি আমার জীবনের নয়, গোতা দেশের দলিত সাহিত্যের। এটা দরকার ছিল”।
মনোরঞ্জনের আরেক কীর্তি বাংলায় দলিত সাহিত্যের উৎস ও বিকাশ খুঁজে বার করে লেখা, যে কারণে অক্সফোর্ড তাঁকে দিয়েছে বিশেষ সম্মান। ‘ইতিবৃত্তে চণ্ডাল জীবন’ পাঠের উপলব্ধি প্রসঙ্গে শঙ্খ ঘোষ বলছিলেন, আজও এই সমাজে হেটে-চলে বেড়ান মনোরঞ্জনকে দেখার একতা প্রবল ইচ্ছা তাঁকে পেয়ে বসেছিল। আরেক কঠোর সাহিত্য সমালোচক দেবেশ রায় আজও মনোরঞ্জনকে দেখেন নি। তিনি ইতিবৃত্ত সম্পর্কে লিখেছেন ‘এপিক’, অর্থাৎ মহাকাব্য। সেই মনোরঞ্জন আজও এক কঠিন শ্রমের বিনিময়ে সংসারের গ্রাসাচ্ছাদনের পাশাপাশি নিরলস সাহিত্যসৃজন করে চলেছেন।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, গত বছর এই পুরস্কার পেয়েছিলেন এমনই আরেকজন লেখক সদানন্দ পাল। ঢাকার রায়েরবাজারের কুমোরপাড়ার সদানন্দ বাবু প্রথাগত শিক্ষার প্রথম ধাপের পর আর এগোনোর সুযোগ পাননি। কৈশোরেই তাঁকে যোগ দিতে হয় পারিবারিক কুমোরের পেশায়। তার পর দেশভাগ, উদ্বাস্তু জীবন, দিনমজুরি, পান-বিড়ি ফেরি, আর চাক ঘুরিয়ে মাটির পাত্র বানানো। কঠোর জীবনসংগ্রাম, দারিদ্র্যে বার বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা। তারি মধ্যে তিনি লিখেছেন কবিতা, নাটক, ছোটগল্প আর জীবনের সংগ্রামের মুহূর্তগুলিকে যেন কুমোরের ঘূর্ণিচাকে জাড়িত করে জন্ম দিয়েছেন আত্মকথা ‘একা কুম্ভ’।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
দীপঙ্কর বেরা ০৬/০১/২০১৪Vesh. Janlam