শান্তা গান্ধী ও খালেদ চৌধুরি - দুই কৃতির জন্মদিন
আজ ২০ ডিসেম্বর এমন এক দিন, যেদিন ভারতের গণনাট্য আন্দোলনের দুই শ্রুতকীর্তি মানুষের জন্ম হয়েছিল।
একজন হলেন শান্তা গান্ধী, যিনি ১৯৮৪ সালে পদ্মশ্রী ও ২০০১ সালে সঙ্গীত নাটক আকাদেমী পুরস্কার পেয়েছিলেন। অবশ্য তাঁর পরের বছর - ৬ মার্চ, ২০০২ তিনি প্রয়াত হন। আরেকজনের নাম খালেদ চৌধুরী, যার পরিচয় সংস্কৃতিপ্রেমী বাঙালিকে খুব বেশী আলাদা করে দিয়ে হয় না। শান্তা গান্ধী জন্মেছিলেন ১৯১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর, আর খালেদ চৌধুরি জন্মান তাঁর দু-বছর পর, ১৯১৯-এ।
কলকাতা-নিবাসী অবিবাহিত খালেদ চৌধুরির বয়স এখন ৯৪ বছর। তিনি ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘে অবশ্য এসেছিলেন অনেক পরের দিকে, ১৯৪৫-এ। আর আগে থেকেই তিনি বাংলা এবং হিন্দি নাটকের সঙ্গে কাজ করা শুরু করেন। শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্র, শ্যামানন্দ জালান ও পরে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের সঙ্গে তিনি নাট্য দির্দেশনা, মঞ্চ সজ্জা, পোষাক পরিকল্পনা, এমনকি সঙ্গীত পরিচালনার মত কাজও করেছেন। তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারত সরকার ২০১২ সালে তাঁকে পদ্মভূষণ দিয়ে সম্মানিত করেছে। খালেদ চৌধুরীর জন্ম চন্দ্রনাথ ও হেমনলিনী দত্ত চৌধুরির ঘরে আসামের করিমগঞ্জে। তাঁর দিদিমার ভাই ছিলেন গুরুসদয় দত্ত। গুরুসদয়বাবু নাতির নাম রেখেছিলাম চিরকুমার। পরে চন্দ্রনাথবাবু সেটাই বদলে করেন চিররঞ্জন। কিন্তু খালেদ চৌধুরী নিজেই ১৯৪৩ সালে নাম বদলে রাখেন ‘খালেদ’ আর দত্ত চৌধুরির ‘দত্ত’টা বাদ দেন। তিনি কিন্তু ধর্ম-পরিবর্তন করেন নি, শুধুই নাম বদল। এ-নিয়ে বাবার সঙ্গে প্রচণ্ড বিরোধের জেরে তিনি ১৯৪৫-এ কলকাতায় আসেন এবং জড়িয়ে পড়েন গণনাট্য আন্দোলনে। করিমগঞ্জের পাশেই সিলেটের দুই কৃতি সন্তান হেমাঙ্গ বিশ্বাস আর নির্মনেন্দু চৌধুরির টানেই তাঁর আই পি টি এ-তে চলে আসা। ১৯৪৭-এ কমিউনিস্ট পার্টির শহীদদের নিয়ে তাঁর শ্যাডো আর্ট ‘শহীদের ডাক’ তাঁকে দারুণ জনপ্রিয় করেছিল। পাশাপাশি হেমাংগ-নির্মলেন্দুর প্রভাবে তিনি লোকসঙ্গীত ও লোকসংস্কৃতি নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। ১৯৬৫-এ ফোক মিউজিক অ্যান্ড ফোকলোর রিসার্চ সেন্টারের জন্ম থেকেই তিনি তাঁর সম্পাদক। সংগ্রহ করেছেন পূর্ব বাংলার বহু লোকগীতি, যেগুলি তিনি পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতিকেন্দ্র’-কে দান করেছেন।
শান্তা চৌধুরী জন্মেছিলেন মহারাষ্ট্রের নাসিকে। তাঁর বোনের নাম দীনা গান্ধী, যিনি পরে দীনা পাঠক নামে ভারতীয় নাটক ও চলচ্চিত্রে স্বমহিমায় ভাস্বর ছিলেন। আইপিটিএ-র যে কেন্দ্রীয় নাচের টি ছিল, শান্তা গান্ধী ছিলেন তাঁর প্রতিষ্ঠাতা। প্রাচীন ভারতীয় নাটক, বিশেষত সংস্কৃত নাটকগুলিকে তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে পরিবেশনায় তাঁর দক্ষতা ছিল অসাধারণ। গোটা ৫০-এর দশকটাই তিনি আর নৃত্যনাট্যের দল নিয়ে গোটা দেশ ঘুরে বেরিয়েছেন। সেই সময় তাঁর অন্যতম দুই সেরা নিবেদন ছিল ‘সুলতানা রাজিয়া’ এবং গুজরাতী রূপকথার ভিত্তিতে সতীদাহ-বিরোধী ‘জসমা ঊড়ান’। তাঁর বিশেষ নৃত্যশৈলীকে বলা হয় ‘ভাওয়াই’ স্টাইল। বোন দীনে পাঠককে নিয়ে তাঁর ‘ম্যায়না গুরজারি’ এমনই এক ভাওয়াই শৈলীর অনবদ্য কীর্তি। ১৯৮২-১৯৮৪ তিনি ছিলেন ন্যাশানাল স্কুল অফ ড্রামার প্রধান। তাঁকে ঐ পদে নিয়োগ করেন ১৯৩২-এ পণের পিপলস ওন স্কুল নামে এক পরীক্ষামূলক আবাসিক স্কুলের সহপাঠী তথা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। মজার বিষয় হল, ছাত্রাবস্থাতেই তিনি বামপন্থার দিকে ঝুকছেন বলে ব্বা তাঁকে লন্ডনে চিকিৎসাশাস্ত্র পড়তে পাঠান। কাছেই থাকতেন ফিরোজ গান্ধী। কিছুদিনের মধ্যেই ইন্দিরাও সেখানে চলে এলে এই ত্রয়ীর বন্ধুত্ব বেরে যায়। ইন্দিরা-ফিরোজের গোপনে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার খবর জানতেন কেবল শান্তাই। এই সময়ে ইন্ডিয়া হাউস নিবাসী কৃষ্ণমেননের সঙ্গে পরিচয়ের সুবাদে তিনি নাচের দল তৈরি করে স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের জন্য অর্থ সংগ্রহ শুরু করেন। দ্বীতিয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতেই বাবার ডাকে চিকিতসাশাহত্র শিক্ষা ছেড়ে দেশে ফেরেন। যোগ দেন উদয়শঙ্কর ইন্ডিয়া ন্যালে সেন্টারে। ১৯৪২-এ সেটি বন্ধ হওয়ায় পর থেকে আইপিটিএ-র লিটল ব্যালে ট্রুপ তৈরি করে তা নিয়েই পড়ে থাকতেন। তারই ডাকে বাকি দুই বোন দীনা (পরে পাঠক) ও তরলা গান্ধীও চলে আসেন। ‘ আইপিটিএ-র অবিশ্বরণীয় ইন্ডিয়া, ইম্মর্টাল ম্যান অ্যান্ড মেশিন’-এ তিনি কাজ করেধেন রবিশঙ্কর, শান্তি বর্ধন, উদয়শঙ্করদের সঙ্গে।
শান্তা গান্ধীকে নিয়ে লেখার যেমন বহু কিছু রয়ে গেছে, রয়ে গেছে আজও জীবিত আইপিটিএ-র অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পী খালেদ চৌধুরিকে নিয়েও বহু অকথিত কাহিনী। এ-কেবল তাদের জন্মদিনে সামান্য শ্রদ্ধার্ঘ্য।
একজন হলেন শান্তা গান্ধী, যিনি ১৯৮৪ সালে পদ্মশ্রী ও ২০০১ সালে সঙ্গীত নাটক আকাদেমী পুরস্কার পেয়েছিলেন। অবশ্য তাঁর পরের বছর - ৬ মার্চ, ২০০২ তিনি প্রয়াত হন। আরেকজনের নাম খালেদ চৌধুরী, যার পরিচয় সংস্কৃতিপ্রেমী বাঙালিকে খুব বেশী আলাদা করে দিয়ে হয় না। শান্তা গান্ধী জন্মেছিলেন ১৯১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর, আর খালেদ চৌধুরি জন্মান তাঁর দু-বছর পর, ১৯১৯-এ।
কলকাতা-নিবাসী অবিবাহিত খালেদ চৌধুরির বয়স এখন ৯৪ বছর। তিনি ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘে অবশ্য এসেছিলেন অনেক পরের দিকে, ১৯৪৫-এ। আর আগে থেকেই তিনি বাংলা এবং হিন্দি নাটকের সঙ্গে কাজ করা শুরু করেন। শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্র, শ্যামানন্দ জালান ও পরে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের সঙ্গে তিনি নাট্য দির্দেশনা, মঞ্চ সজ্জা, পোষাক পরিকল্পনা, এমনকি সঙ্গীত পরিচালনার মত কাজও করেছেন। তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারত সরকার ২০১২ সালে তাঁকে পদ্মভূষণ দিয়ে সম্মানিত করেছে। খালেদ চৌধুরীর জন্ম চন্দ্রনাথ ও হেমনলিনী দত্ত চৌধুরির ঘরে আসামের করিমগঞ্জে। তাঁর দিদিমার ভাই ছিলেন গুরুসদয় দত্ত। গুরুসদয়বাবু নাতির নাম রেখেছিলাম চিরকুমার। পরে চন্দ্রনাথবাবু সেটাই বদলে করেন চিররঞ্জন। কিন্তু খালেদ চৌধুরী নিজেই ১৯৪৩ সালে নাম বদলে রাখেন ‘খালেদ’ আর দত্ত চৌধুরির ‘দত্ত’টা বাদ দেন। তিনি কিন্তু ধর্ম-পরিবর্তন করেন নি, শুধুই নাম বদল। এ-নিয়ে বাবার সঙ্গে প্রচণ্ড বিরোধের জেরে তিনি ১৯৪৫-এ কলকাতায় আসেন এবং জড়িয়ে পড়েন গণনাট্য আন্দোলনে। করিমগঞ্জের পাশেই সিলেটের দুই কৃতি সন্তান হেমাঙ্গ বিশ্বাস আর নির্মনেন্দু চৌধুরির টানেই তাঁর আই পি টি এ-তে চলে আসা। ১৯৪৭-এ কমিউনিস্ট পার্টির শহীদদের নিয়ে তাঁর শ্যাডো আর্ট ‘শহীদের ডাক’ তাঁকে দারুণ জনপ্রিয় করেছিল। পাশাপাশি হেমাংগ-নির্মলেন্দুর প্রভাবে তিনি লোকসঙ্গীত ও লোকসংস্কৃতি নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। ১৯৬৫-এ ফোক মিউজিক অ্যান্ড ফোকলোর রিসার্চ সেন্টারের জন্ম থেকেই তিনি তাঁর সম্পাদক। সংগ্রহ করেছেন পূর্ব বাংলার বহু লোকগীতি, যেগুলি তিনি পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতিকেন্দ্র’-কে দান করেছেন।
শান্তা চৌধুরী জন্মেছিলেন মহারাষ্ট্রের নাসিকে। তাঁর বোনের নাম দীনা গান্ধী, যিনি পরে দীনা পাঠক নামে ভারতীয় নাটক ও চলচ্চিত্রে স্বমহিমায় ভাস্বর ছিলেন। আইপিটিএ-র যে কেন্দ্রীয় নাচের টি ছিল, শান্তা গান্ধী ছিলেন তাঁর প্রতিষ্ঠাতা। প্রাচীন ভারতীয় নাটক, বিশেষত সংস্কৃত নাটকগুলিকে তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে পরিবেশনায় তাঁর দক্ষতা ছিল অসাধারণ। গোটা ৫০-এর দশকটাই তিনি আর নৃত্যনাট্যের দল নিয়ে গোটা দেশ ঘুরে বেরিয়েছেন। সেই সময় তাঁর অন্যতম দুই সেরা নিবেদন ছিল ‘সুলতানা রাজিয়া’ এবং গুজরাতী রূপকথার ভিত্তিতে সতীদাহ-বিরোধী ‘জসমা ঊড়ান’। তাঁর বিশেষ নৃত্যশৈলীকে বলা হয় ‘ভাওয়াই’ স্টাইল। বোন দীনে পাঠককে নিয়ে তাঁর ‘ম্যায়না গুরজারি’ এমনই এক ভাওয়াই শৈলীর অনবদ্য কীর্তি। ১৯৮২-১৯৮৪ তিনি ছিলেন ন্যাশানাল স্কুল অফ ড্রামার প্রধান। তাঁকে ঐ পদে নিয়োগ করেন ১৯৩২-এ পণের পিপলস ওন স্কুল নামে এক পরীক্ষামূলক আবাসিক স্কুলের সহপাঠী তথা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। মজার বিষয় হল, ছাত্রাবস্থাতেই তিনি বামপন্থার দিকে ঝুকছেন বলে ব্বা তাঁকে লন্ডনে চিকিৎসাশাস্ত্র পড়তে পাঠান। কাছেই থাকতেন ফিরোজ গান্ধী। কিছুদিনের মধ্যেই ইন্দিরাও সেখানে চলে এলে এই ত্রয়ীর বন্ধুত্ব বেরে যায়। ইন্দিরা-ফিরোজের গোপনে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার খবর জানতেন কেবল শান্তাই। এই সময়ে ইন্ডিয়া হাউস নিবাসী কৃষ্ণমেননের সঙ্গে পরিচয়ের সুবাদে তিনি নাচের দল তৈরি করে স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের জন্য অর্থ সংগ্রহ শুরু করেন। দ্বীতিয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতেই বাবার ডাকে চিকিতসাশাহত্র শিক্ষা ছেড়ে দেশে ফেরেন। যোগ দেন উদয়শঙ্কর ইন্ডিয়া ন্যালে সেন্টারে। ১৯৪২-এ সেটি বন্ধ হওয়ায় পর থেকে আইপিটিএ-র লিটল ব্যালে ট্রুপ তৈরি করে তা নিয়েই পড়ে থাকতেন। তারই ডাকে বাকি দুই বোন দীনা (পরে পাঠক) ও তরলা গান্ধীও চলে আসেন। ‘ আইপিটিএ-র অবিশ্বরণীয় ইন্ডিয়া, ইম্মর্টাল ম্যান অ্যান্ড মেশিন’-এ তিনি কাজ করেধেন রবিশঙ্কর, শান্তি বর্ধন, উদয়শঙ্করদের সঙ্গে।
শান্তা গান্ধীকে নিয়ে লেখার যেমন বহু কিছু রয়ে গেছে, রয়ে গেছে আজও জীবিত আইপিটিএ-র অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পী খালেদ চৌধুরিকে নিয়েও বহু অকথিত কাহিনী। এ-কেবল তাদের জন্মদিনে সামান্য শ্রদ্ধার্ঘ্য।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
Înšigniã Āvî ২১/১২/২০১৩জেনে ভাল লাগলো