www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রমজান মাসে দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি ও আমাদের মানসিকতা

এই মহামারী কবলিত রমজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা,কেমন মানসিকতা?হাদিস কি বলে। °°°°__°___°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে প্রিয় রহমত বরকত মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান অতি নিকটে। এটি মুসলমানদের জন্য বিশেষ ইবাদত-বন্দেগির মাস। সারা বছরে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হয়ে আত্মশুদ্ধি অর্জন হয় এ পবিত্র মাসে।

পবিত্র রমজান মাসে এক শ্রেণির লোক ব্যবসার নামে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ কৃত্রিমভাবে কমিয়ে বেশি মুনাফা লাভে দ্রব্যসামগ্রীর দাম বাড়ানোর পাশাপাশি খাদ্যে ভেজাল মেশায়। এসব কর্মকাণ্ড শুধুমাত্র নিপীড়নমূলক ও অনৈতিক কাজই নয় বরং তা মানুষের অধিকারের ওপর চরম হস্তক্ষেপ এবং অত্যাচার-নির্যাতনের মতো মারাত্মক অপরাধও বটে।
রমজান বলে, তুমি সংযমী হও। এই সংযম কেবল খালি পেটে দিন পার করার নাম নয়। মাথায় টুপি পরা আর মসজিদে যাওয়া-আসার নাম নয়। সংযম দেখাতে হয় জীবনের সব ক্ষেত্রে- পথে-ঘাটে, আচার-আচরণে, অফিসে-দোকানে, ব্যবসা-বাণিজ্যে। আমরা কিছু মানি, কিছু মানি না। রমজান তো কেবল এই বছর দেখছি এমন নয়, প্রতিবছরই দেখে আসছি- রমজান এলেই একটা হাহাকার শুরু হয় বাজার নিয়ে। এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী (তারাও মানুষ, তারাও রোজা রাখেন) হুটহাট করে পণ্যের দাম এতটা বাড়িয়ে দেন যে, বাজারে একটা আগুনে পরিস্থিতি তৈরি হয়।

পত্রিকায় এসেছে, মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশিরভাগ মুসলিম দেশেই রমজান উপলক্ষে পণ্যের দাম কমে। কেবল বাংলাদেশই ব্যতিক্রম! এখানে কেবল বাড়ে না- দ্বিগুণ, তিনগুণ, বহুগুণ বাড়ে।

মূল্যবৃদ্ধির পেছনে ব্যবসায়ীদের যে কত অজুহাত তার সীমা পরিসীমা নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি, আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়া,আমদানি কম,পরিবহনের সমস্যা,করোনার লকডাউন, গ্রাম থেকে সবজি না আসা, যোগান কম, মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টি, জ্বালানি তেল ও সিএনজির মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া প্রভৃতি।

মাওলানা সাইফুল ইসলাম ফারুকী বলেন, ব্যবসা- বাণিজ্য করা আল্লাহর রাসূলের (সা.) সুন্নত। যদিও দৃশ্যত এটাকে দুনিয়াদার সুলভ কাজ মনে হয়। কিন্তু এ কাজ যদি কেউ সততা ও সত্যবাদিতার সাথে করে, তবে তার জন্য এটা ইবাদতে পরিণত হয়। আর সদগুণাবলীর অধিকারী ব্যবসায়ীরা আল্লাহ তায়ালার পুণ্যবান বান্দা নবী, সিদ্দিক ও আল্লাহর পথে শাহাদাত বরণকারীদের সাহচর্য লাভ করবেন। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২১৩৯)

পক্ষান্তরে যারা ভোক্তার অধিকার ক্ষুণ্ন করে, সিন্ডিকেট করে বাজারে পণ্যের সংকট সৃষ্টি করে তারা কেয়ামতের দিন অপরাধীদের কাতারে থাকবে। কেননা, দীন হচ্ছে কল্যাণকামিতা। অন্যের উপকার করা, সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ কামনা করা। এই কল্যাণকামিতার নামই ইসলাম। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৯৫)

(সা.) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি যথা সময়ে বাজারে সরবরাহ করে সে আল্লাহর রহমত ও অধিকতর জীবিকা লাভের যোগ্য। আর যে ব্যক্তি মজুদদারীতে লিপ্ত, সে অভিশপ্ত’। (ইবনে মাজা) হযরত মুয়ায থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন: ‘মজুদদার হচ্ছে নিকৃষ্ট বান্দা। যদি জিনিসপত্র সস্তা করে দেন তবে সে মনোকষ্টে ভোগে। আর যদি বাজারে দাম বাড়ে তবে সে খুশী হয়’। (মিশকাত)

অতিরিক্ত মুনাফালোভী ও সিন্ডিকেটের বিষয়ে ইসলাম কী বলে?

উত্তর : পর্যাপ্ত পণ্যদ্রব্য থাকা সত্ত্বেও অধিক মুনাফার আশায় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মানুষকে কষ্ট দেয়া ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম। এ ধরনের লোকের কোনো ইবাদত কবুল হয় না বলে হাদিসে স্পষ্ট বর্ণনা এসেছে। স্টককৃত দ্রব্য সরকার নিজের জিম্মায় নিয়ে বিক্রি করে দেয়ার অধিকারও রাখে।

হজরত মা’মার ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে ফাজালা (রা.) বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি, পাপাচারি ছাড়া অন্য কেউ মজুদদারি করে না। (তিরমিজি)। অন্য হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি ৪০ রাত পর্যন্ত খাদ্যদ্রব্য মজুদ রাখে, আল্লাহর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক থাকে না।

মধ্যস্বত্বভোগীদের ব্যাপারে ধর্মের ব্যাখ্যা কী?

উত্তর : এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী স্বল্পমূল্যে দ্রব্য খরিদ করে পাইকারি বাজারে তাদের ইচ্ছানুযায়ী উচ্চমূল্যে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া যায়। পণ্য হস্তগত করার আগে ফের বিক্রি, মালিকানা অর্জনের আগেই বিক্রি, নামে মাত্র বিক্রি ইত্যাদি বেচাকেনাগুলো ইসলাম হারাম ও নিষিদ্ধ করে মূলত মধ্যস্বত্বভোগকে নিরুৎসাহিত করেছে।

কারণ অনেক সময় মধ্যস্বত্বভোগীদের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপের কারণেই পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। ইসলাম এ ধরনের লালসার কঠোরবিরোধী। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) স্বল্পমূল্যে কেনার জন্য বহিরাগত বিক্রেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করেছেন। (তিরমিজি)।

তাবরানি শরিফে বর্ণিত রয়েছে, রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মূল্য বৃদ্ধির অসৎ উদ্দেশ্যে মুসলমানদের লেনদেনে হস্তক্ষেপ করে, কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা তাকে আগুনের পাহাড়ে উঠিয়ে শাস্তি দেবেন।

অন্য এক হাদিসে আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, কোনো শহরবাসী কোনো গ্রামবাসীর পক্ষ হয়ে বিক্রি করবে না। মানুষকে তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দাও, যেন আল্লাহতায়ালা তাদের একের মাধ্যমে অন্যের রিজিকের ব্যবস্থা করেন।’ (তিরমিজি)।

হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমদানি করবে, সে রিজিকপ্রাপ্ত হবে। আর যে গুদামজাত করবে, সে অভিশপ্ত হবে। (ইবনে মাজাহ : ২১৪৪, সুনানে দারেমি : ২৪৬৪)

ইহাদের মানসিকতা : দেশে এখন যে পরিস্থিতি চলছে। যাদের আয় কম বা আয়ের কোন উৎস নাই। তাদের কি অবস্থা হবে একথা তারা চিন্তা করছেন না। গ্রামে যেখানে কৃষক বেগুন, সহ অন্যান্য তরকারি বিক্রয় করতে পারছে না। মূল্য কম ডিমের । সেখানে শহরে কিছু ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগী বেশি মোনাফা লুফে নিচ্ছে । এদের মানসিকতা এমন যে কেয়ামত হয়ে যাক দেশ ধ্বংস হয়ে যাক তাতে কি। আমার লাভ করেতেই হবে। কিছু ব্যবসায়ী তো গোপনে ত্রাণের চাল, সয়াবিন তেল স্টক করেছেন, যাতে বাজারে বেশি মূল্যে বিক্রি করতে পারে। খাটের নিচে তেল পাওয়া যায়। ঘরে সরকারি ত্রাণের চাল।
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেশী ।

রমজান মাস জুড়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রেখে ভেজালমুক্ত হালাল খাবার পরিবেশনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন ও নৈতিক উন্নত চরিত্র গঠনে এগিয়ে আসি। মহান আল্লাহ সব ব্যবসায়ী ভাইকে পবিত্র রমজান মাসের সঠিক বুঝ ও যথাযথ দায়িত্ব পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৬৭৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৫/০৪/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast