www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

হাড়ানো এক ডাইরী

আমরা যখন জাগি তোমরা তখন ঘুমাও , তুমিও ঘুমাও রাজকুমারী , গলির কুত্তাও(কুকুর) তখন জাগেনি।
=====================


রোজ সকালে যখন ফজরের নামাজের সময় জেগে রাস্তার দিকে তাকাই, শূন্য এই শহরের বুকে কেউ থাকে না। কিছু নামাজি লোক থাকে। আর রাতের নিশাচর কিছু মানব।
১)রাস্তা ধরে হাটতে শুরু করেছি। আমাদের শহরের বিখ্যাত চাচার হোটেলে মানুষ জেগেছে। তারপর সামনে এগিয়ে হাটতে লাগলাম। দুই একটা রিক্সা বেড়িয়েছে। সকালে অনেকে হাটতে বের হয়। ডাইবেটিস রোগীরা হাটে।।
২)দুইটা কুকুর ঘুমিয়ে আছে। (কুত্তাটা হালকা জেগে গেলো রিক্সা চালকের টুন টুন আওয়াজে)। তার প্রেমিকা কুত্তি (মাদি কুকুর) এখনো ঘুমে । প্রথম সকাল তাদের। এখনো ঘুম থেকে জেগে তাদের সূর্য মামার সাথে দেখা হয়নি। চায়ের দোকানের ভিতরে এক কোণে তারা শুয়ে আছে। এখনো কাক গুলো এদিকে আসেনি।
২) খুব ভোরে অনেক রিক্সা চালক বের হয় তারা বের হচ্ছে। আসলে রিক্সা চালক ও দুই প্রকারের।(১) যারা দিনে রিক্সা চালায়। (২)যারা রাত বারোটার পর রিক্সা চালাতে শুরু করে। যারা দিনে রিক্সা চালায় তারা রাত পর্যন্ত থাকে। সকালে বের হয় রাস্তায়। আর যারা রাত ১২টার পর বের হয় তারা সারারাত রিক্সা চালায়। কারন রাতে রিক্সা থাকে কম। বিশেষ করে যারা রাতে দূরের যাত্রা করে। মনে করুন জামালপুর থেকে সিলেট আর সিলেট থেকে জামালপুর । ভা রাতের ট্রেনে যারা যাতায়াত করে। বা হঠাত কোন দিন আপনার রাতে কোথাও যেতে হল। একটা রিক্সাও নেই রাস্তাঘাটে। আপনার কাছে যা ভাড়া চাইবে তা দিতে আপনি বাধ্য। তাই বলা হয় যারা একটু কষ্ট করে রাতে রিক্সা চালায় তারা একটু বেশি ফায়দা হাসিল করে। তারা সারারাত রাতের ঘুম, আরাম শেষ করে। রাতে বিবিকে, বাচ্চাকে একা রেখে আপনাকে সেবা দিতে চলে আসে। তাই বিনিময়ে তারা একটু বেশি ভাড়া নেয়।
৩)রাতে যারা রিক্সা চালায়। বা সকালে যারা রিক্সা নিয়ে বের হয়। তারা চলে আসে চাচার ভাতের হোটেলে। এটির নাম চাচার ভাতের হোটেল।ময়মনসিংহ তে জেলা স্কুল মোড়ের এটি বিখ্যাত একটি হোটেল। আপনি গুগল ম্যাপে ও এটি খোঁজে পাবেন। তারা খুব সকালে উঠে রান্না করে। এই হোটেল যেদিন প্রথম দেখেছি। আমি প্রতিদিন যখন এই হোটেল দেখি তখনি আমার বিখ্যাত উপন্যাস, হিন্দু হোস্টেল এর কথা মনে পড়ে যায়। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর হিন্দু হোস্টেল। আমি অনেকবার পড়েছি। আমার অনুভূতিতে লেগে আছে সেই উপন্যাস। এই চাচার ভাতের হোটেল ও সেই একই রকম।নিম্নবিত্ত লোকেরা এইখানে আসে। আসে ছাত্র, বেচেলর, শিক্ষক রিকশা চালক।
৪) আর রাতে এক শ্রেণীর লোকেদের পাওয়া যায়। কেউ তাদের রাতের পরী বলে। কেউ বলে রাস্তার ফুল। রাতে তারা ঘুরে বেড়ায়। আবার তাদের এলাকার সামনে রাস্তায়, রেল স্টেশন পাড়ায় তাদের দেখা যায়। তখন ২০১৩ এর সাল। আমি ময়মনসিংহ তে থাকি। নতুন এসেছি শহরে। কিছুই চিনিনা। একটা ছাত্র হোস্টেলে থাকি। ভার্সিটির ভর্তি কোচিং করি। তো একদিন এক বন্ধুর আত্মীয় আসবে। কোথায় থেকে এটা মনে নাই। আমাকে বললো দোস্ত রাত হয়ে গেছে। আমিও শহর ভালো করে চিনিনা। চল দুইজন একসাথে যাই। আমি আর আমার রুমমেট এক সাথে গেলাম। প্রথমে রিক্সা করে। তারপর হাটতে হাটতে এক গলিতে হাজির। জানতাম না কোন গলিতে যাচ্ছি। হঠাত আবিস্কার করলাম কেউ ডাকছে। একজন মেয়ে নয়। চার পাঁচজন হবে। এই আয়, আরেকজন বললো তোকে খুব হ্যান্ডসাম লাগছে। আয়
আসবি না? আমরা আবিস্কার করলাম। এটা সেই গলি যার কথা শুনেছি কখনো যাইনি। আমার সাথের বন্ধু আমাকে টান শুরু করে দিলো। বুঝার আগেই সে ভো দৌর। আমি আর কি করতে পারি । আমিও তার সাথে আসলাম। আমি বললাম এতো ভয় পাওয়ার কি হল। তারা তোমাকে কামর দিতো না। তারা বাঘ না ভালুক। সে বলল ভাই তারা বাঘ না ভালুক না নীরিহ দরিদ্র অসহায় মানুষ। আমিও ভাবলাম আসলেই টাকার অভাবে হয়তো বিপদে পড়ে এই লাইনে । তবে তারা হিংস্র নয়। ওই গলিতে হিংস্র হল ওই দালাল গুলো যারা তাদের জন্য খদ্দের নিয়ে আসে। এই অসহায় মেয়েদের দেহ বিক্রি করে তারা লাখ টাকা উপার্জন করে। আর ওইখানে কাওকে পেলে সব টাকা রেখে দেয়। হিংস্র তো ওই নেতা, ওই পুলিশ যারা ওই এলাকা হতে হপ্তা খায়। মাসে মাসে টাকা তুলে। ওই মেয়ে গুলো খারাপ নয়, তারা বিপদে আছে। বড্ড বিপদে।
৫)আরেক শ্রেণীর লোক রাতে জাগে। তারা হল সরকারি হাসপাতালের সামনে গড়ে উঠা নৈশ ফার্মেসি। তারা জানে গভীর রাতে কারো ঔষদ প্রয়োজন হলে ছুটে আসবে তাদের কাছে। তাই তারাও এই সময় কিছু ফায়দা হাসিল করে নেয়। তারা বেশি দামে ঔষদ বিক্রি করে। ৫০টাকা মূল্য থাকলে তারা ১২০, বা ১৫০টাকা চেয়ে বসে। তারা যদি বুঝতে পারে একবার যে এই ঔষদটি কোথাও পাওয়া যাবে না। তাহলে আর আপনার রক্ষা নাই। ১০০টাকা দাম থাকলে ৫০০টাকা দিতে হবে। আমার এক বন্ধু ২বছর আগে ঘুমের বড়ি খেয়ে ফেলে। তখন ছিলো ছুটির দিন। তাও আবার রাত। রাত ১১টা বাজে। সব দোকান বন্ধ। সাধারণত পূজার বন্ধ হলে আমাদের শহরে অনেক দোকান দিনেও খোলে না। আর দশমি হলে তো কথায় নেই। তখন আবার শহরে রাত ৮টার পর দোকান বন্ধ করার একটা ঘোসনা ছিল। ডিসির পক্ষ থেকে । যাই হোক বন্ধুকে নিয়ে হাসপাতালে যাই। ৩টা ইনজেকশন এর ডোজ, নাম মনে নাই। চিনিনা তাই। আর গ্লুকোজ সেলাইন আনতে বলা হল। হাসপাতালে যা ছিলো তারা আরো সরকারি ঔষদ দিয়েছিলো, আমাকেও কিছু ক্রয় করতে হয়। সেদিন দেখেছি রাতের বেলা ফার্মেসি মালিক কত বেশি লাভ করার জন্য ফার্মেসি খোলা রাখে।
৬)যেই গলিতে গিয়েছিলাম তার নাম নাজমা বডিং মোর। সময় হলে আরেকদিন বলব তার কাহিনী। ততক্ষণের জন্য রইলো শুভ কামনা। বিদায়
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৭৫০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৮/১০/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast