আকাশ সংস্কৃতির অভিশাপ
প্রতিদিনের কর্মময় ও ব্যস্ত জীবনের এক ঘেয়ে ভাব দূর করাতে চিত্ত-বিনোদন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। চিত্ত-বিনোদনের নানাবিদ মাধ্যমের মধ্যে টেলিভিশন একটি অতি জনপ্রিয় ও পরিচিত মধ্যম। বিজ্ঞানের এই জয় যাত্রার যুগে টেলিভিশনে বৈচিত্র আনতে আবিষ্কৃত হয়েছে স্যাটেলাইট চ্যানেল। যার কল্যাণে একই পর্দায় ভেসে উঠে দেশ-বিদেশের রকমারি সব চ্যানেল। আর এসব চ্যানেলের কল্যাণেই একদেশ অন্যদেশের সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারছে। কিন্তু দূর্ভাগ্য জনক হলেও একথা সত্যি যে আমাদের দেশে বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার করা হয় তার তিন ভাগের দুই ভাগই ভারতীয় চ্যানেল। এক কথায় বলতে গেলে ভারতে সরকারি বেসরকারি প্রায় সকল চ্যানেলই বাংলাদেশে সম্প্রচারিত হয়। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি হলো যে ভারতে বাংলাদেশের কোন চ্যানেলই সম্প্রচার করে না। তাহলে আমরা কেন ভারতীয় চ্যানেল সমূহ সম্প্রচার করছি আর কেনই বা বছর শেষে মোটা অংকের টাকা তাদেরকে দিচ্ছি? অনেকেই হয়ত বলবেন যে ভারতীয় চ্যানেলগুলোর অনুষ্টান মানসম্মত তাই আমরা সম্প্রচার করছি সে তুলনা আমাদের অনুষ্ঠানগুলোর মান ভালো না তাই তারা আমাদের চ্যানেল সম্প্রচার করে না। এই কথার উত্তর দেবার আগে আমাদের বুঝতে হবে মানসম্মত বলতে আমরা কি বুঝি। মানসম্মত বলতে ঐ সকল বিষয়কে বুঝায় যার মাধ্যমে সমাজের কোন একটি বিশেষ লোককে সচেতন করার জন্য কোন কিছু তৈরি করা যা একটি বিশেষ বার্তা বহন করবে এবং এই বার্তা সমাজের সকলে স্বাভাবিক ভাবে নেবে। এছাড়া নিছক হাসির বা চিত্ত বিনোদনের জন্য কোন কিছু তৈরি করা যা সমাজের সকলে এক সাথে বসে দেখতে পারে। এবার আসি উপরের কথাগুলোর সাথে ভারত ও বাংলাদেশের অনুষ্ঠান সমূহের তুলনায়। ভারতীয় বিভিন্ন মেগা সিরিয়েলগুলো কি শিক্ষা দেয়। এসকল মেগা সিরিয়ালগুলো আমাদের নারী সমাজের মগজ ধোলাই করছে বেশ পোক্ত ভাবেই। কেননা আমাদের নারী সমাজের বর্তমান এই সিরিয়েল আসক্তির কারণে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। পত্রপত্রিকায় প্রায়শই একটি খবর চোখে পড়ে যে জি বাংলা বা স্টার জলসার সিরিয়ালে মগ্ন থাকার কারণে ভাবী ননদকে মেরে ফেলছে, কিংবা মায়ের সিরিয়েল মগ্নতার কারণে বাচ্চা পানিতে পড়ে মরছে, আবার কোথায় দেখা যাচ্ছে এই সিরিয়াল দেখাকে কেন্দ্র করে বহু সংসারে ভাঙ্গনের ডাক পড়ছে। এমনকি এই সকল ভারতীয় সিরিয়ালের বিভিন্ন মেয়ে চরিত্রের নামের সাথে মিল রেখে তৈরি হয় ভারতীয় বিভিন্ন পোশাক যা না পেলে হর হামেসাই জীবন দিচ্ছে এদেশের তরুণীরা। তাহলে এই কি মানসম্মতের নমুনা? যে মানসম্মত জিনিস মানুষের মস্তিষ্কে বিরূপ প্রক্রিয়া সৃষ্টি করে তাকে আমি কোন দৃষ্টিকোণ থেকে মানসম্মত বলছি আর কেনই বা এই বাজে চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ না করে উল্টো এর প্রচারের জন্য ভারতকে টাকা দিচ্ছি। অপর দিকে যদি আমরা আমাদের দেশে তৈরি নাটক, টেলিফিল্মগুলো দেখি তবে দেখবো সবকটাতেই কোন না কোন শিক্ষ রয়েছে, রয়েছে আমার দেশের সংস্কৃতির ছোয়াও। যা বেশি করে সম্প্রচারিত হলে মানুষ সচেতন হবে, এবং বাঙ্গালী সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে পারবে খুব সহজেই। কিন্তু কই ভারত তো আমাদের এই জিনিসগুলোকে সম্প্রচার করছে না। তাহলে আমরা কেন নিজের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ানোর মত ভারতকে আমাদের আগামী প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় করে তুলছি তা সত্যি আমার বোধঙ্গম্ম নয়। ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোর অধিক সম্প্রচারের কারণে আমাদের সবচেয়ে বড় যে ক্ষতি হচ্ছে তা হলো নতুন প্রজন্মের মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ লোপ পাওয়া। আমরা যদি আমাদের এই প্রজন্মে দিকে লক্ষ করি তবে খুব ভালো করেই এই বিষয়টি বুঝতে পারবো। এই প্রজন্ম বাংলায় শুদ্ধ করে কথা বলতে না পারলেও হিন্দিতে ঠিকই অনরগল কথা বলছে। আমি এমন অনেক পরিবারও দেখেছি যারা ছোট থেকে বড়, যুবক থেকে বৃদ্ধ সকলেই হিন্দিতে কথা বলছে যাদের দেখলেই মনে হয় এরা ভারতীয় কোন পরিবার। এরা ভুলে যাচ্ছে মাতৃ ভাষার জন্য প্রাণ দেয়া এই সকল বাঙ্গালীর গৌরবের ইতিহাস। এরা অবমাননা করছে এ জাতির সত্ত্বাকে। আমাদের এই প্রজন্মের অধিকাংশ ছেলেমেয়েরা বাংলা ও হিন্দির মিশ্রণ তৈরি করে কথা বলছে যা খুবই শ্রুতিকঠোর। এই মিশ্রিত ভাষার অশুদ্ধ ব্যবহার কিন্তু আইনের চোখে দন্ডনীয় অপরাধ।কিন্তু খুব সহজ ভাবে আমরা বর্তমানে এই কাজটি করে যাচ্ছি অথচ এই ব্যপারে উর্ধতন কর্মকর্তাদের কোন ভ্রুক্ষেপই নেই। ভারতের স্বার্থে এই জাতি শুধু দিয়ে যাচ্ছে। বন্ধুত্বের এই ঋণ কবে শেষ হবে কি দিয়ার পর শেষ হবে আধৌ শেষ হবে কি হবে না তা আমাদের অজানা। তবে এতটুকুই বলবো ভারত বন্ধুত্বের দাবীতে কি তাহলে আমাদের জাতি স্বত্তার মূল যে ভাষা সেই মাতৃভাষাকেই কেড়ে নিতে চাইছে। যদি এমনটিই হয় তবে আরো একটি ৫২ এর সৃষ্টি হউক। আর এই আন্দোলনের মর্মবাণী হউক ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ হউক মাতৃভাষার জয় হউক। ভারত যদি মানসম্মত কি না সেই প্রশ্ন তুলে আমাদের টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করা থেকে বিরত থাকতে পারে তবে আমরা কেন আমাদের সমাজ, জাতি ও আগামী প্রজন্ম রক্ষার স্বার্থে ভারতীয় চ্যানেলগুলো বন্ধ করতে। বর্তমানে এ দাবী অনেকটা আমাদের প্রাণের দাবী হয়ে উঠেছে। তাই আমাদের জাতি স্বত্তা রক্ষা স্বার্থে অবিলম্বে বন্ধ করা হউক ভারতীয় সকল চ্যানেল। আশা করি উর্ধতন কর্মকর্তারা বিষটি সুবিবেচনা করে আমাদের দাবীকে বাস্তবায়ন করবেন।
নির্বাহী সম্পাদক পারিস বার্তা ফ্রান্স
নির্বাহী সম্পাদক পারিস বার্তা ফ্রান্স
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মুহাম্মাদ রাসেল উদ্দীন ০১/০৯/২০১৬ঠিক
-
মোহাম্মাদ নেছার উদ্দিন ২৫/০৮/২০১৬ভালো লিখেছেন।
-
পরশ ২৪/০৮/২০১৬ভাল
-
মেহেদী হাসান (নয়ন) ২৪/০৮/২০১৬valo likhchen।। caliye jan