www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মহীয়সী


'শালার বুড়ি,কুটনি বুড়ি,বের
হ ঘর থেকে!এত
মানুষের মৃত্যু হয়,তোর
মৃত্যু হয় না..?--
বলে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের
করে দেয় মরিয়ম
বিবিকে তার
ছেলে রাতুল ।
ঘর থেকে বের
হয়ে মরিয়ম
বিবি হাঁটা শুরু
করলেন
অজানা গন্তব্যের
দিকে । তার
অশ্রুসজল
দৃষ্টি গিয়ে পড়ে দূর
অতীতে । সেই
ভরা যৌবনে । বিয়ের
পরবর্তী
সময়ে । তখন
তিনি গর্ভবতী ।
ব্যথায়
কাতরাচ্ছেন,হঠাত্
খবর এল তার স্বামী
সড়ক-দূর্ঘটনায় প্রাণ
হারিয়েছেন ।
একদিকে প্রসব-বেদনা অন্যদিকে স্বামী
হারানোর যন্ত্রণায়
তিনি অজ্ঞান
হয়ে যান । যখন তার
জ্ঞান ফেরে,তখন
দেখেন
তার
পাশে ফুটফুটে একটি শিশু
হাত-পা নেড়ে খেলছে ।
তার মুখের
দিকে একদৃষ্টে
তাকিয়ে থাকেন
তিনি । ভুলে যান
স্বামী-বিয়োগের
দুঃসহ স্মৃতি । বিরহের
গানের পরিবর্তে তার
মুখ
থেকে বেরিয়ে আসে আনন্দের
গান । সন্তানের
ভবিষ্যত্ কামনায়
গার্মেন্টসে চাকুরি নেন তিনি ।
বখাটে ছেলেদের
ইভটিজিং উপেক্ষা করে এবং যৌবনকে তিলে তিলে শেষ
করে বড় করে তোলেন
তার সন্তানকে ।
তাকে
বিয়ে করতে অনেকেই
প্রস্তাব
দিয়েছিল,কিন্তু
সন্তানের ভবিষ্যত্
নষ্ট হয়ে
যাওয়ার ভয়ে প্রবল
ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও
কারো বিয়ের
পিঁড়িতে বসেননি ।
একদিন তার ছেলে বড়
হল,অনেক বড় ।
বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে স্নাতকোত্তর
ডিগ্রি
নিয়েছে সে । ছেলের
পছন্দের
মেয়েটিকে পরম
আদরে 'বউ'
বানিয়ে ঘরে তুলে নেন ।
ছেলের বউটি ছিল
অত্যন্ত আধুনিকা ।
পর্দার কোন পরোয়া করত না সে ।
মরিয়ম বিবি আপত্তি করায় তার সাথে প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকত । একপর্যায়ে মেয়েটি তার স্বামীকে বলে বসল-- 'তোমার
মাকে ঘর থেকে বের
করে দাও,না-হলে আমি তোমার
সাথে সংসার করব না ।'ব্যস,এটুকুই ।
ছেলে সাথে সাথে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের
করে দেয় তার মাকে। সে ভুলে গেল তার মা কত রাত যে বিনীদ্র কাটিয়েছেন তার
সুখের জন্যে,তার
মুখে খাবার
তুলে দেওয়ার জন্য
কতদিন যে অনাহারে-অর্ধাহারে
থেকেছেন;কত
যে কষ্ট-
যাতনা নীরবে সহ্য
করেছেন
তাকে প্রতিষ্ঠিp
করার জন্যে । সব,সব ভুলে গেল
সে ।
ভাবতে ভাবতে এক
ফোঁটা অশ্রু গাল
বেয়ে মাটিতে পড়ল
মরিয়ম বিবির ।
সাথে সাথে
মাটিসহ তা তুলে নেন
তিনি । যেন এই অশ্রু
তার আদরের
একমাত্র ছেলের
জন্য
অভিশাপ না হয় ।

হাসপাতালের
বেডে শুয়ে আছে রাতুল । একটু আগে জ্ঞান ফিরেছে তার । একটি মারাত্মক দূর্ঘটনায় তার উভয়
কিডনী নষ্ট হয়ে গিয়েছিল ।
অপরিচিরিত কেউ
একজন
নিজের উভয়
কিডনী তার জন্য
বিনামূল্যে প্রদান
করেছেন ।
রক্ষা করেছেন তার
জীবন । 'কিন্তু কে তিনি ?' ডাক্তারকে প্রশ্ন করে রাতুল । 'জানি না,কোথাকার এক পাগলি এসে আপনাকে কিডনী ডোনেট করার ইচ্ছে পোষণ করে এবং আমাদেরকে খুব জোরালোভাবে অনুরোধ করে । সে পাশের কেবিনে আছে,চলুন, দেখি ।'
পাশের কেবিনে পড়ে আছে উষ্খোখুষ্খো চুলওয়ালি একজন পাগলির নিথর দেহ। 'মা'-বলে ডাক দেয় রাতুল । কিন্তু কোন সাড়া নেই । মরিয়ম বিবি পাড়ি জমিয়েছেন ওপারে,না-ফেরার দেশে । মুখে তার তৃপ্তির হাসি । হয়তো তার আদরের ছেলেটির জীবন বেঁচে যাওয়ার কারণে..।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮৮০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৭/০১/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast