www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

একটুখানি বিরহের জন্য

শুধু একটু বিরহের জন্য কত কিছুই
না করেছি জীবনে।ভেঙ্গেছি কত মন!
তারা আমাকে সত্যিই ভালবেসেছিল
কিনা জানিনা।কারন আমার কাছ
থেকে ছেঁকা খাওয়ার কয়েক সপ্তাহ
পরই তাদের দেখেছি অন্যের হাত
ধরে ঘুরে বেড়াতে।দেখে মনটা ছ্যাত্
করে ওঠেনি।এসেছে বিদ্রুপের হাসি।
এইতো সেদিন আমার
কাধে মাথা রেখে বলল,"তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব
না।তুমি ছাড়া আমার এই জীবন অর্থহীন।
আমাকে কখনো ছেড়ে যাবেনা তো?
যদি যাও,তবে জেনে রেখো আমার মরন
হবে।"
এই বাক্যগুলো হয়তো এখন এই
ছেলেটাকেও শুনাচ্ছে।তারপর ছেঁকা।
আবার অন্য ছেলে।আবার একই বাক্যব্যয়।
আমিও কম কী?কত মেয়েকে কত কী-ই
না বলেছি।কিন্তু মন
থেকে বলতে পারিনি কিছুই।কত
ছেকা(!!) খেলাম কিন্তু বিরহ অনল
নামের জিনিসটার সাথে পরিচয়
হয়নি আমার।এর একটা কারন অবশ্য
খুঁজে পেয়েছিলাম।বুঝেছিলাম,"বিরহ
পেতে হলে আগে সত্যিকারের
ভালবাসতে হবে।যাকে সত্যিকারের
ভালবাস,তার কাছ থেকেই একমাত্র
বিরহ পাওয়া সম্ভব।"
আপাতত লাইলি-মজনু,চন্ডিদাস-
রজকীনি,দেবদাস-পারু,সোনালি-দুঃখের
কাহিনী পরেই বিরহ চিনছিলাম।তখনই
এক স্নিগ্ধ বিকেলে এক পার্কে ওর
সাথে দেখা।সেদিন কি বার ছিল?
মনে নেই।মনে আছে সে পড়েছিল হলুদ
একটা জামা।বিকেলের হালকা রক্তিম
সূর্যের হলুদ আলোয় আর ওর জামার
দ্যোতিতে আমার চোখে একটা নেশার
মত সৃষ্টি হয়।
আশেপাশে কী ঘটছে ভুলে যায় আমি।শুধু
দেখছি আর দেখছি ওকে।ওর কথায়
হঠাত্ সম্বিত ফিরে পেয়েছিলাম,"একটু
বসতে পারি?"
আমার পাশে বসে সে।এটা সেটা কত
কথা!তারপর বন্ধুত্ব।এমনিভা
বে কাটতে থাকে সময়।গ্রীষ্ম যায়
বর্ষা আসে।বর্ষার প্রথম বাদল
দিনে সে আমাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল
এক কদম গাছের তলে।চারিদিক ঝুম
বৃষ্টি।ভিজছি আমরা দুজন।বৃষ্টির শব্দ
একটা নেশায় ভরে তুলেছিল চারপাশ।
সে শুনিয়েছিল রবীন্দ্রনাথের
কয়টা লাইন-
"এসো করো স্নান
নবধারা জলে
এসো নীপবনে
ছায়াবীথি তলে।
"
আমি বলেছিলাম,"সবই তো বুঝলাম।
কিন্তু নীপ কী?"
-কদমফুল।
-ও।তাই এই গাছের নিচে টেনে এনেছ
আমায়?
-হুম।কদম সম্পর্কে কি জানো তুমি?
-বেশি কিছু না।শুধু
জানি এইটা একটা ফুল আর
বর্ষাকালে ফুটে।
-এটাতো সবাই জানে।কিছু
কথা আছে যা সবাই জানে না।
-কী?
-কদম-ই একমাত্র ফুল যা পৃথিবীর কোথাও
ফুটে না বাংলাদেশ(এবং এর আশপাশে) ছাড়া।
-তাই নাকি?
-হুম।
-তাহলে তো কদম আমাদের জাতীয় ফুল
হওয়া উচিত ছিল।
-হুম।কবিদেরও কদমফুল ও বর্ষাপ্রকৃতি খুব
প্রিয় ছিল।
-আরও কিছু জানো কদম নিয়ে?
-হুম বর্ষার প্রথম বাদলে ঝরে পড়া কদম
যদি কোন প্রেমিক তার
প্রেমিকাকে দেয় তবে তাদের
সম্পর্কে আসে বিষাদ।তাই এই কেউ এই
ফুল কাউকে দেয় না।
আমি মুখটা হাসি হাসি করে নিচ
থেকে একটা ঝরে পড়া কদম ওর
হাতে তুলে দিয়েছিলাম।আর ওর
সে কি কান্না!আমার মনে হতে লাগল
বৃষ্টির জলে তো পায়ের
পাতা ডুবেছে,কিন্তু ওর
আঁখিজলে আমি পুরো ডুবে যাব।
গিয়েছিলামও তা-ই।ওর ভালবাসায়
ডুবে গিয়েছিলাম আমি।সেদিনের সেই
প্রথম চুম্বন এখনও মনে আছে আমার।ও
সেদিন উদ্বিপ্ত কন্ঠে গেয়েছিল
একটা গান।কী গান যেন?কদম ফুল নিয়েই
তো!হ্যা মনে পড়েছে-
"বাদল দিনের
প্রথম কদম ফুল
করেছ দান. . . ."
*******
এখন আমার বয়স কত?ষাট
কিংবা পয়ষট্টি।ও মারা গেছে দু'বছর
হল।ভাবছেন আমার ইচ্ছা পূরন হয়েছে?
আমি বিরহের সন্ধান পেয়ে গেছি?-না।
ভুল ভাবছেন।বিরহ আমি এখনও পায়নি।
কী করব আমি?সকালে ঘুম থেকে ওঠার
পর,রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত
আমার সকল অস্তিত্ব
জুড়ে আমি ওকে অনুভব করি।আমার
সারাটা বেলা কাটে ওর সাথেই।
আমি যে আপনাদের এই
গল্পটা শুনাচ্ছি,এইটা ওর কথা রাখতেই।
খুব জোর করছিল আমায়।এই যে দেখেন
আমার দিকে চেয়ে চেয়ে কেমন
হাসছে।আমি বুড়ো হয়ে গেছি কিন্তু ও
যেন এখনও কিশোরী।"কী করছ কী তুমি?"
কী করেছে জানতে চাচ্ছেন?
করেছে বেশি কিছু নয়।ও ওর
কিশোরী দুই ঠোট দ্বারা ছুয়ে দিল
আমার ওষ্ঠদ্বয়।
"আহা আবার কী হল?"
জানতে চাচ্ছেন আবার কী করছে?
সেটা বলা যাবে না।একান্তই
ব্যাক্তিগত. . . . .
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১১৬৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৭/১০/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • বুড়ো বয়সের ভিমরতি ভালোই লাগলো।।
  • ভাল লাগল।
  • পিয়ালী দত্ত ০৮/১০/২০১৪
    অসাধারন
  • ভাল লাগল।
  • ভলো হয়েছে।
  • ভাল লাগলো । ভাল লিখেছেন ।
 
Quantcast