নীলাম্বরী নীলা
হঠাৎ চমকে উঠলাম। অনুভব করলাম মস্তিষ্কে অন্যরকম ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটছে। হ্নৎপৃন্ডে রক্ত চলাচল বেড়ে গেল। অতীত কিছু সুখ স্মৃতি,কিছু কষ্টের বেদনা হঠাৎ যেন চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠল। শরীরটা কাঁপুনি দিয়ে উঠল। জানিনা আকাশে মেঘ ছিল কিনা, জানিনা আকাশ হতে বৃষ্টি ঝরছিল কিনা, বজ্রপাতের কঠিন শব্দে কেউ চৈতন্য হারিয়ে ফেলল কিনা তাও জানিনা। কিন্তু এ কথা নি:সন্দেহে বলতে পারি আমার হ্নদয় আকাশ ক্ষণিকের জন্য হলেও ঘনকালো মেঘে ঢেকে গিয়েছিল। দু’চাখে তপ্ত অশ্রু ঝরেছিল, বুঝতে পারছিলাম মস্তিষ্কে বজ্রপাত ঘটেছে, যার জন্য হারানো চৈতন্য নতুন করে ফিরে এল।
বৃহস্প্রতিবার। অফিস শেষ করে গিয়ে দাঁড়ালাম রেল স্টেশনে । বাড়ী ফিরতে হবে। ট্রেন এসে দাঁড়ালো । প্রচন্ড ভীড়,সবাই ব্যস্ত, তুমুল প্রতিযোগিতা, কে কার আগে গিয়ে উঠবে। অনেক কষ্টে ট্রেনটিতে উঠে দাঁড়ালাম। কোন সিট ফাঁকা নেই। পাশের সিটে বসেছিল অরুনা। প্রথমে চিনতে পারিনি,তবু কেন জানি বার বার দেখতে ইচ্ছে করছিল। চেনা চেনা তবু যেন অচেনা।তাই পাশে দাঁড়িয়ে থেকে দৃষ্টি প্রখর করে বার বার দেখছিলাম। হঠাৎ চমকে উঠলাম। আবিষ্কার করলাম তুমি। আমার জীবনের সবচেয়ে পরিচিত সেই মুখ। মনে হল হ্নদয়ের স্পন্দন বুঝি থেমে গেছে, আমি মৃত না জীবিত ঠিক বুঝতে পারছিলম না। নিরব পাথরের মত স্থির হয়ে রইলাম।
নীল শাড়ীতে তোমাকে এত সুন্দর লাগে জীবনে কল্পনা করতে পারিনি।নীল ব্লাউজ, নীল টিপ, নীল দুল, নীল মালা , নীল ঠোঁট। কি অপূর্ব ম্যাচিং। কষ্টের রং যদি নীল হয় তবে তোমাকে কেন নীলাম্বরে এত মহনীয় মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব সুখ তুমি একাই ধারণ করে আছ। নাকি উপরে সবই কৃত্রিম ? ভেতরের তুমি আর বাহিরের তুমি এক নও? ভেতরের তুমি অন্য এক রকম-অন্য এক জন? নীল কষ্ট তোমার ভেতরে রাজত্ব করছে? স্ত্রী লোকের মন এত গভীর যে কোন পুরুষ তো দূরের কথা দেবতাও এর গভীরতা র্নিণয় করতে পারেনা।
ট্রেন চলছে হেলেদুলে। বাতাসে চুলগুলো এলোমেলো। শাড়ীর আঁচল খানি কখন যে পায়ের নীচে পড়ে গেছে তা দেখার অবকাশ তার ছিল না।সে অন্য মনষ্ক। দৃষ্টি তার অনেক দূরে। হয়ত নৈসর্গিক কোন দৃশ্যের উপর যা তাকে যাদু মন্ত্রের ন্যায় মুগ্ধ করে রেখেছে। হয়ত অনেক আগের কোন স্মৃতি লোমন্থর করছে। জানিনা , জানার চেষ্টাও করছি না। জীবনের এই প্রথম জানা আর না জানার মাঝখানে।
কি করব ঠিক বুঝতে পারছি না। হৃদয়ের এত কাছের মানুষ আজ পাশে থেকেও কত দুরে......। এই তুমি কি সেই তুমি যে আমাকে একদিন একটু স্পর্শ করতে না পারলে রাতে ঘুমাতে পারতে না। আমি হাসতে হাসতে বলেছিলাম , আচ্ছা নীলা ; যদি আমাদের কখনও বিচ্ছেদ ঘটে? তুমি মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলেছিলে, নীরব এমন কথা কখনই মুখে আনবে না,বিশ্বাস রেখ কখনই এমনটি ঘটবে না ,আর যদি ঘটেই তবে আমি নির্ঘুম রাত কাটাব, জীবনে আর কখনো রাতে ঘুমাব না। সেই তুমিই এখন নিশ্চিত আমাকে ছাড়াই রাতের পর রাত ঘুমাচ্ছ। অন্য কারও সাথে অন্য কারও হাত ধরে। আবেগ আর বাস্তব দু’য়ে কতই না পার্থক্য।
নিজেকে স্থির রাখতে পারছি না। এক বার শুধু এক বার বলতে ইচেছ হচেছ “কেমন আছ তুমি”। মুখের ভাষা হারিয়ে যাচেছ। কেউ যেন গলা টিপে ধরে আছে। প্রচন্ড রকম অভিমান আর ঘৃনায় কিছুই বলতে পারলাম না। পারলাম না তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে। বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে একাকার হয়ে যাচেছ। দু’চোখ জুড়ে কখন যে পানি এসে গেছে তা বুঝতে পারিনি। ছলছল চোখে শুধু দেখতে পাচ্ছিলাম চুরি যাওয়া সেই দিনগুলিকে। অতি আপন সেই দিনগুলি। যে দিনগুলি ছিল তোমার আর আমার। এখন সে দিনগুলি শুধুই আমার। একান্তই আমার। জীবনের মাত্র কয়েকটি দিনকে পুঁজি করে আমার জীবনের বাকী সমস্ত দিন চলতে হবে-চলতে হচ্ছে। কিন্তু অতীত অতীতই তাইনা ? তাইতো তুমি অতীত মনে করে ছিঁড়ে ফেলেছ অতীতের সকল খাতা, ভুলে গেছ সব স্মৃতি। আমার সীমাবদ্ধতাকে দারিদ্রতা মনে করে প্রেমের মতো পবিত্র বন্ধন ছিন্ন করে সুখের আশায় চলে গেলে অন্যর হাত ধরে ঐশ্বয্যের আহবানে। তার ঘরের ঘরনী হয়ে গড়েছ সুখের নীড় । কিন্তু আমি ...................। আমি আজও একাই রয়ে গেলাম , পারলাম না , পারলাম না অন্য কাউকে হ্নদয়ে ঠাই দিতে।
পৃথিবী বড়ই বৈচিত্রময়! কাউকে নীলে সাজায়, কাউকে নীৗলে কষ্ট দেয়। নিষ্ঠুর পৃথিবী ! স্বার্থপর মানুষ! পৃথিবী শুধুই চেনে অর্থ,বৈভব ! ভালবাসার চাইতে পৃথিবীৗতে মহাদৌলত কিছু আছে? হয়ত আছে, আমার জানা নাই। নিজের স্বার্থের জন্য মানুষ মানুষকে খুন করে। কাউকে খুন করে মেরে ফেলা তাওতো ভাল। কিন্তু তুমি আমাকে, আমার পৃথিবীকে,আমার বেঁচে থাকার প্রেরণাকে, আমার স্বপ্নকে এমন ভাবে খুন করেছো .. এখন না পারছি মরতে-না পারছি বাঁচতে। ভাবতে অবাক লাগে,যে তুমি এত আপন ছিলে , যে তুমি আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝতেনা , একদিন না দেখলে আমায় পাগলের মত হয়ে যেতে, যে তুমি প্রায় হাতে হাত রেখে বলতে –“তোমাকে ছাড়া আমি এক মুহূত বাঁচবনা”। সেই তুমিই আজ কত সুন্দরভাবে তোমার পৃথিবীটাকে সাজিয়েছো; বেঁেচ আছ ঠিক আমাকে ছাড়াই; অথচ দেখ আমি আজ মরেও বেঁচে আছি, বুকের মাঝে এক নিদারুন কষ্ট নিয়ে। ওহ কি দুঃসহ জীবন!!
সেই সব দিনের কথা ভুলে গেছ তুমি। ভুলেতো যাবেই ,তোমার প্রেম যে ছিল শুধুই ছলনা তোমার ভালবাসা ছিল মিথ্যের উপর দাঁড়িয়ে। তুমি হ্নদয় দিয় নয়, হ্নদয় নিয়ে খেলেছো।তুমি যে হ্নদয়হীনা। কিন্তু আমার প্রেম শুধুই প্রেম ছিলনা, তাতে মিশে ছিল ভালবাসা, বুক ভরা ভালবাসা । যে ভালবাসা কখনও নিঃশেষ হয়না, যে ভালবাসা কখনও হারিয়ে যায় না। যে ভালবাসা অম্লান, অক্ষয়, অমর-অবিনশ্বর। যে ভালবাসার বীজ আমি বপন করেছি- তা হয়ত কোন দিন অংকুরোদগম, হয়ত শাখা-প্রশাখা মেলে দিবেনা, সুপ্ত অবস্থায় থাকবে, তবু সে ভালবাসা একখন্ড হীরের টুকরো-তোমার মত কাঁচের টুকরো নয়। তাইতো আজও তোমার স্মৃতিকে সযতনে বুকে আগলে রেখেছি। শুধু তোমাকে ঘিরে আমার পৃথিবী, আমার বেঁচে থাকা। বুঝতে পারিনি কখন যে আমার চোখের জল তোমার হাতের উপর গড়িয়ে পড়ল। সেই তপ্ত অশ্রুতে তোমার দৃষ্টির পট পরিবর্তন হল।
আমার চোখে চোখ পড়ল তোমার । নীল রংয়ে রাঙা ঠোট দুটি নড়ে উঠল-হয়ত কিছু বলতে চাও, কিন্তু বলতে পারলেনা। শুধু নীলাভ চোখে কিছক্ষন নীরবে তাকিয়ে রইলে। যে চোখ সব সময় আমাকে তাড়া করে ফিরত,সে চোখ তোমার আজও আছে ; একটুও বদলায়নি , শুধু বদলে গেছে সে চোখের ভাষা,বদলে গেছে সেই চাহনি, সেই সম্মোহনী শক্তি। যে চোখে পৃথিবীর একমাত্র যোগ্য পুরুষ ছিলাম আমি-সেই আমি আর নেই। হারিয়ে গেছি। অতীত হয়ে গেছি...........................
যান্ত্রিক ট্রেনও আমায় সময় দিল না। যে ট্রেন প্রতিদিন সময়ক্ষেপণ করে অনেক পরে আমার গন্তব্যে এসে পৌছে সেই ট্রেন আজ সময়ের আগেই চলে এল। নিষ্ঠুর ট্রেন ভালবাসা বুঝেনা। কেননই বা বুঝবে, যেখানে রক্তে মাংশে গড়া মানুষই বুঝেনা। মন চাইলেও শেষ বারের মত তোমার দিকে তাকাতে পারলাম না। কারন জানতাম হারানো জিনিসের দিকে তাকালে শুধু কষ্টই পেতে হয়। অশ্রু মিশ্রিত ভেজা রুমালটা কখন যেন পড়ে গেছে। ট্রেন থেকে নামবার সময় কেউ একজন পেছন থেকে ডেকে বলছিল-ভাই রুমালটা ফেলে গেলেন।
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললাম-আর রুমাল, ট্রেনে তো আজ আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদই ফেলে গেলাম।
বৃহস্প্রতিবার। অফিস শেষ করে গিয়ে দাঁড়ালাম রেল স্টেশনে । বাড়ী ফিরতে হবে। ট্রেন এসে দাঁড়ালো । প্রচন্ড ভীড়,সবাই ব্যস্ত, তুমুল প্রতিযোগিতা, কে কার আগে গিয়ে উঠবে। অনেক কষ্টে ট্রেনটিতে উঠে দাঁড়ালাম। কোন সিট ফাঁকা নেই। পাশের সিটে বসেছিল অরুনা। প্রথমে চিনতে পারিনি,তবু কেন জানি বার বার দেখতে ইচ্ছে করছিল। চেনা চেনা তবু যেন অচেনা।তাই পাশে দাঁড়িয়ে থেকে দৃষ্টি প্রখর করে বার বার দেখছিলাম। হঠাৎ চমকে উঠলাম। আবিষ্কার করলাম তুমি। আমার জীবনের সবচেয়ে পরিচিত সেই মুখ। মনে হল হ্নদয়ের স্পন্দন বুঝি থেমে গেছে, আমি মৃত না জীবিত ঠিক বুঝতে পারছিলম না। নিরব পাথরের মত স্থির হয়ে রইলাম।
নীল শাড়ীতে তোমাকে এত সুন্দর লাগে জীবনে কল্পনা করতে পারিনি।নীল ব্লাউজ, নীল টিপ, নীল দুল, নীল মালা , নীল ঠোঁট। কি অপূর্ব ম্যাচিং। কষ্টের রং যদি নীল হয় তবে তোমাকে কেন নীলাম্বরে এত মহনীয় মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব সুখ তুমি একাই ধারণ করে আছ। নাকি উপরে সবই কৃত্রিম ? ভেতরের তুমি আর বাহিরের তুমি এক নও? ভেতরের তুমি অন্য এক রকম-অন্য এক জন? নীল কষ্ট তোমার ভেতরে রাজত্ব করছে? স্ত্রী লোকের মন এত গভীর যে কোন পুরুষ তো দূরের কথা দেবতাও এর গভীরতা র্নিণয় করতে পারেনা।
ট্রেন চলছে হেলেদুলে। বাতাসে চুলগুলো এলোমেলো। শাড়ীর আঁচল খানি কখন যে পায়ের নীচে পড়ে গেছে তা দেখার অবকাশ তার ছিল না।সে অন্য মনষ্ক। দৃষ্টি তার অনেক দূরে। হয়ত নৈসর্গিক কোন দৃশ্যের উপর যা তাকে যাদু মন্ত্রের ন্যায় মুগ্ধ করে রেখেছে। হয়ত অনেক আগের কোন স্মৃতি লোমন্থর করছে। জানিনা , জানার চেষ্টাও করছি না। জীবনের এই প্রথম জানা আর না জানার মাঝখানে।
কি করব ঠিক বুঝতে পারছি না। হৃদয়ের এত কাছের মানুষ আজ পাশে থেকেও কত দুরে......। এই তুমি কি সেই তুমি যে আমাকে একদিন একটু স্পর্শ করতে না পারলে রাতে ঘুমাতে পারতে না। আমি হাসতে হাসতে বলেছিলাম , আচ্ছা নীলা ; যদি আমাদের কখনও বিচ্ছেদ ঘটে? তুমি মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলেছিলে, নীরব এমন কথা কখনই মুখে আনবে না,বিশ্বাস রেখ কখনই এমনটি ঘটবে না ,আর যদি ঘটেই তবে আমি নির্ঘুম রাত কাটাব, জীবনে আর কখনো রাতে ঘুমাব না। সেই তুমিই এখন নিশ্চিত আমাকে ছাড়াই রাতের পর রাত ঘুমাচ্ছ। অন্য কারও সাথে অন্য কারও হাত ধরে। আবেগ আর বাস্তব দু’য়ে কতই না পার্থক্য।
নিজেকে স্থির রাখতে পারছি না। এক বার শুধু এক বার বলতে ইচেছ হচেছ “কেমন আছ তুমি”। মুখের ভাষা হারিয়ে যাচেছ। কেউ যেন গলা টিপে ধরে আছে। প্রচন্ড রকম অভিমান আর ঘৃনায় কিছুই বলতে পারলাম না। পারলাম না তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে। বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে একাকার হয়ে যাচেছ। দু’চোখ জুড়ে কখন যে পানি এসে গেছে তা বুঝতে পারিনি। ছলছল চোখে শুধু দেখতে পাচ্ছিলাম চুরি যাওয়া সেই দিনগুলিকে। অতি আপন সেই দিনগুলি। যে দিনগুলি ছিল তোমার আর আমার। এখন সে দিনগুলি শুধুই আমার। একান্তই আমার। জীবনের মাত্র কয়েকটি দিনকে পুঁজি করে আমার জীবনের বাকী সমস্ত দিন চলতে হবে-চলতে হচ্ছে। কিন্তু অতীত অতীতই তাইনা ? তাইতো তুমি অতীত মনে করে ছিঁড়ে ফেলেছ অতীতের সকল খাতা, ভুলে গেছ সব স্মৃতি। আমার সীমাবদ্ধতাকে দারিদ্রতা মনে করে প্রেমের মতো পবিত্র বন্ধন ছিন্ন করে সুখের আশায় চলে গেলে অন্যর হাত ধরে ঐশ্বয্যের আহবানে। তার ঘরের ঘরনী হয়ে গড়েছ সুখের নীড় । কিন্তু আমি ...................। আমি আজও একাই রয়ে গেলাম , পারলাম না , পারলাম না অন্য কাউকে হ্নদয়ে ঠাই দিতে।
পৃথিবী বড়ই বৈচিত্রময়! কাউকে নীলে সাজায়, কাউকে নীৗলে কষ্ট দেয়। নিষ্ঠুর পৃথিবী ! স্বার্থপর মানুষ! পৃথিবী শুধুই চেনে অর্থ,বৈভব ! ভালবাসার চাইতে পৃথিবীৗতে মহাদৌলত কিছু আছে? হয়ত আছে, আমার জানা নাই। নিজের স্বার্থের জন্য মানুষ মানুষকে খুন করে। কাউকে খুন করে মেরে ফেলা তাওতো ভাল। কিন্তু তুমি আমাকে, আমার পৃথিবীকে,আমার বেঁচে থাকার প্রেরণাকে, আমার স্বপ্নকে এমন ভাবে খুন করেছো .. এখন না পারছি মরতে-না পারছি বাঁচতে। ভাবতে অবাক লাগে,যে তুমি এত আপন ছিলে , যে তুমি আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝতেনা , একদিন না দেখলে আমায় পাগলের মত হয়ে যেতে, যে তুমি প্রায় হাতে হাত রেখে বলতে –“তোমাকে ছাড়া আমি এক মুহূত বাঁচবনা”। সেই তুমিই আজ কত সুন্দরভাবে তোমার পৃথিবীটাকে সাজিয়েছো; বেঁেচ আছ ঠিক আমাকে ছাড়াই; অথচ দেখ আমি আজ মরেও বেঁচে আছি, বুকের মাঝে এক নিদারুন কষ্ট নিয়ে। ওহ কি দুঃসহ জীবন!!
সেই সব দিনের কথা ভুলে গেছ তুমি। ভুলেতো যাবেই ,তোমার প্রেম যে ছিল শুধুই ছলনা তোমার ভালবাসা ছিল মিথ্যের উপর দাঁড়িয়ে। তুমি হ্নদয় দিয় নয়, হ্নদয় নিয়ে খেলেছো।তুমি যে হ্নদয়হীনা। কিন্তু আমার প্রেম শুধুই প্রেম ছিলনা, তাতে মিশে ছিল ভালবাসা, বুক ভরা ভালবাসা । যে ভালবাসা কখনও নিঃশেষ হয়না, যে ভালবাসা কখনও হারিয়ে যায় না। যে ভালবাসা অম্লান, অক্ষয়, অমর-অবিনশ্বর। যে ভালবাসার বীজ আমি বপন করেছি- তা হয়ত কোন দিন অংকুরোদগম, হয়ত শাখা-প্রশাখা মেলে দিবেনা, সুপ্ত অবস্থায় থাকবে, তবু সে ভালবাসা একখন্ড হীরের টুকরো-তোমার মত কাঁচের টুকরো নয়। তাইতো আজও তোমার স্মৃতিকে সযতনে বুকে আগলে রেখেছি। শুধু তোমাকে ঘিরে আমার পৃথিবী, আমার বেঁচে থাকা। বুঝতে পারিনি কখন যে আমার চোখের জল তোমার হাতের উপর গড়িয়ে পড়ল। সেই তপ্ত অশ্রুতে তোমার দৃষ্টির পট পরিবর্তন হল।
আমার চোখে চোখ পড়ল তোমার । নীল রংয়ে রাঙা ঠোট দুটি নড়ে উঠল-হয়ত কিছু বলতে চাও, কিন্তু বলতে পারলেনা। শুধু নীলাভ চোখে কিছক্ষন নীরবে তাকিয়ে রইলে। যে চোখ সব সময় আমাকে তাড়া করে ফিরত,সে চোখ তোমার আজও আছে ; একটুও বদলায়নি , শুধু বদলে গেছে সে চোখের ভাষা,বদলে গেছে সেই চাহনি, সেই সম্মোহনী শক্তি। যে চোখে পৃথিবীর একমাত্র যোগ্য পুরুষ ছিলাম আমি-সেই আমি আর নেই। হারিয়ে গেছি। অতীত হয়ে গেছি...........................
যান্ত্রিক ট্রেনও আমায় সময় দিল না। যে ট্রেন প্রতিদিন সময়ক্ষেপণ করে অনেক পরে আমার গন্তব্যে এসে পৌছে সেই ট্রেন আজ সময়ের আগেই চলে এল। নিষ্ঠুর ট্রেন ভালবাসা বুঝেনা। কেননই বা বুঝবে, যেখানে রক্তে মাংশে গড়া মানুষই বুঝেনা। মন চাইলেও শেষ বারের মত তোমার দিকে তাকাতে পারলাম না। কারন জানতাম হারানো জিনিসের দিকে তাকালে শুধু কষ্টই পেতে হয়। অশ্রু মিশ্রিত ভেজা রুমালটা কখন যেন পড়ে গেছে। ট্রেন থেকে নামবার সময় কেউ একজন পেছন থেকে ডেকে বলছিল-ভাই রুমালটা ফেলে গেলেন।
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললাম-আর রুমাল, ট্রেনে তো আজ আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদই ফেলে গেলাম।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ২১/০৭/২০২৩বেশ ভালো লেখা
-
সুব্রত ভৌমিক ২৩/০৯/২০২১খুব সুন্দর গল্পের প্লট
খুব সুন্দর লিখেছেন।
ধন্যবাদ। -
ন্যান্সি দেওয়ান ১৮/০৯/২০২১Sundor
-
ফয়জুল মহী ১১/০৯/২০২১অসামান্য লেখনী ।
-
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ১১/০৯/২০২১It is very good. Thanks.