কবি
কবি তিনি যিনি সময়ের ভিতর দিয়ে হেঁটে যান কিন্তু সময়ের কাদামাটি গায়ে মাখেন না । নিজ অন্ত:পুরেই রাখেন সময়ের আক্ষেপ । কবি একজন natural character তাই তাকে নির্ভেজাল সাধক ও বলা যেতে পারে । তিনি সমগ্র সত্তা দিয়ে ভালবাসতে জানেন । কিন্তু ভালবাসার দাবি পুরণে তাকে পুরোপুরি ব্যর্থ বললে সবসময় অত্যুক্তি হয়না ।
প্রেয়সীর ভালবাসা প্রেয়সীর কল্পনার রঙে রিসিভ করার ফুরসত কবির নেই বলে কবি কে তার প্রেয়সী সবসময় সর্বসত্তা দিয়ে ভালবাসে না । ভাল বাসলে ও প্রেয়সীর ভালবাসা কবির কাছে অচ্ছুতই থেকে যায় ।
কবি আবুল হাসান একজন প্রেমিকার অভাব বোধ করছিলেন বেশ । গ্রামের মেয়ে হাসানের ভালবাসাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলো । শহুরে মেয়ে সত্তা দিয়ে ভালবেসেছিল কবি কে । অথচ তার রস আস্বাদন করার অবকাশ কবির হলো কোথায় ! ক্ষণজন্মা এই কবির মৃত্যুর পরে শহুরে প্রেয়সী কবির বুকের প’রে কেঁদে কেঁদে বলেছিলো, ‘ হাসানের এ বুকে ভালবাসা ছাড়া কিছুই ছিলোনা ।’
কবির কাছে কবিতার শব্দ ব্যতীত তামাম পৃথিবী যেন হাতুড়ির শব্দের ন্যায় কর্কশ এবং বিদঘুটে । কবিতাই যেন তার অক্সিজেন । সারাদিনের কর্মক্লান্তি কে কবি কাব্য চর্চার মাধ্যমেই refresh করে নেন । এ যেন নিস্বর্গে নিস্তব্দতার আয়েশ ।
কবি কখনও নির্ভরতার প্রতীক নন । লোকে কবি কে ভালবাসে কিন্তু পছন্দ করেনা । রবি ঠাকুর বলেন,‘ কবি-সাহিত্যিকদের কে দূর থেকে শ্রদ্ধা করা যায়; কাছে ডেকে বোনের বিয়ে দেয়া যায়না । ’
কবির মাঝে সংগ্রামী চেতনা কাজ করলে ও তিনি সেই চেতনা বাস্তবায়নের কর্মী নন-উস্কানিদাতা ।একটি চেতনা বাস্তবায়নে একাগ্রতা প্রয়োজন , প্রয়োজন টার্গেট ঠিক করা এবং দৃঢ়তার সাথে সেই ইচ্ছে পূরণের পথে এগিয়ে যাওয়া । কবির মধ্যে এসব গুণাবলীর উপস্থিতি কোথায় ?
মাইকেল মধূ‘র ‘একেই কি বলে সভ্যতা,’- প্রবন্ধে তিনি ইংরেজদের বেলেল্লেপনার বিরোধীতাকরেছেন কঠিনভাবে । অথচ বাস্তবে তিনি নিজেই ইংরেজদের অনুসারি ছিলেন । তবে কি কবি কে নড়বড়ে character বললে অত্যুক্তি হয় ?
যে নার্গিস একটু চোখের আড়াল হলেই নজরুলের প্রান হতো ওষ্ঠাগত; তিনি কিনা বিয়ের পরদিনই নার্গিসের জীবন থেকে চির তরে বিদায় নিলেন ! আমাদের জাতীয় কবি বাসর সেরেই সেই যে উধাও হলেন প্রিয়তমা নার্গিসের খবর নিলেন ১১ বছর পর, তখন তিনি অন্যের ঘরের ঘরনি ! কী ট্রাজেডি কী ট্রাজেডি !
কবি মাত্রই অভিনেতা । তিনি অন্যের সত্তায় ভর করে অন্যের জীবনদর্শন কে ফুটিয়ে তুলেন নিজের সত্তা দিয়ে । এখানে অনেকে কবি কে ভুল বুঝেন । সৃষ্টির প্রয়োজনে তিনি অন্যকে নিজের করে নেন। নিজেকে অন্যের হতে দেন - অথচ পুরো ব্যাপারটাই অভিনয় বৈ কি । তবে কবি যেহেতু রক্ত-মাংসেরই একজন মানুষ অভিনয় করতে যেয়ে কারো প্রতি বিশেষ দুর্বলতা এসেও যেতে পারে । তার প্রতিও কারো দুর্বলতা আসতে পারে । এজন্য অনেক সময় কবি কে অন্যের কটূক্তি কিংবা বিদ্রূপাত্মক দৃষ্টিভঙ্গীর ও শিকার হতে হয় । সৃষ্টির প্রয়োজনে তাকে এটুকু মেনে নিতেই হয় ।
স্বাভাবিকভাবে একটি প্রশ্ন এসেই যায়, কবি মাত্রই কি উদ্ভ্রান্ত পথিক ? এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর ।সমগ্র জীবনে তিনি ছিলেন নিয়মানুবর্তিত । তাঁর জীবন অনুসন্ধান করলে উদ্ভট কিছু খুঁজে পাওয়া ভার। সর্বক্ষেত্রেই যিনি নম্বর ওয়ান এক্ষেত্রে কেন তিনি পিছিয়ে থাকবেন ।
কবির নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই । ব্যক্তি বিশেষই সময়ের প্রয়োজন এবং উপযোগিতা অনুযায়ী কবি কে সংজ্ঞায়িত করেন । এটি সকলের কাছে সমভাবে সমাদৃত বা বর্জিত না হওয়াই স্বাভাবিক । বাস্তবতার নিরিখে কবি চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তোলার মধ্য দিয়ে চরিত্রটির স্রষ্ট্রার রুচির পরিচয় পাওয়া যায় । তাই চরিত্রটিকে কেন সজ্ঞায়িত করা হলো এ বিষযে সমালোচনা নয়; সমালোচনা হতে পারে যিনি চরিত্রটি সৃষ্টি করেচেন তার রুচিবোধ নিয়ে ।
কবি স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটেন । সময়ের পিঠে চাবুক মেরে সময়ের মুখে তুলেন উল্টোসুর । কবি মিথ্যেকে সত্য , সত্যকে মিথ্যে হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন । কবি যদি তার বুকে উত্তপ্ত গরল ধারণ করেন তবে তা ধ্বংসের প্রতিক না হয়ে হয়ে যায় সৃষ্টির প্রতীক । এ বিষয়গুলো যার মাঝে আছে তিনিই কবিত্বের দাবিদার ।
আরব্য গল্পের মিথ্যেবাদী বালকের কথা কার না জানা । অথচ কবি আল মাহমুদ বলেন, “লোকে বালককে মিথ্যেবাদী প্রতিপন্ন করলে ও প্রকৃত পক্ষে বালক ছিলো সত্যবাদী ! কেননা একদিন বাঘ এসে তাকে ঘ্রাস করবে- এ সংবাদ বালকের পূর্ব থেকেই জানা ছিলো ।” গণমানুষের মনে যুগযুগ ধরে যে ধারণা বদ্ধমূল ছিল আলমাহমুদ মুহূর্তেই তা উল্টে দিলেন এবং চিরন্তন একটি মিথ্যেকে পরিণত করলেন সত্যে-এটিই তার কবিত্বের পরিচয় ।
প্রেয়সীর ভালবাসা প্রেয়সীর কল্পনার রঙে রিসিভ করার ফুরসত কবির নেই বলে কবি কে তার প্রেয়সী সবসময় সর্বসত্তা দিয়ে ভালবাসে না । ভাল বাসলে ও প্রেয়সীর ভালবাসা কবির কাছে অচ্ছুতই থেকে যায় ।
কবি আবুল হাসান একজন প্রেমিকার অভাব বোধ করছিলেন বেশ । গ্রামের মেয়ে হাসানের ভালবাসাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলো । শহুরে মেয়ে সত্তা দিয়ে ভালবেসেছিল কবি কে । অথচ তার রস আস্বাদন করার অবকাশ কবির হলো কোথায় ! ক্ষণজন্মা এই কবির মৃত্যুর পরে শহুরে প্রেয়সী কবির বুকের প’রে কেঁদে কেঁদে বলেছিলো, ‘ হাসানের এ বুকে ভালবাসা ছাড়া কিছুই ছিলোনা ।’
কবির কাছে কবিতার শব্দ ব্যতীত তামাম পৃথিবী যেন হাতুড়ির শব্দের ন্যায় কর্কশ এবং বিদঘুটে । কবিতাই যেন তার অক্সিজেন । সারাদিনের কর্মক্লান্তি কে কবি কাব্য চর্চার মাধ্যমেই refresh করে নেন । এ যেন নিস্বর্গে নিস্তব্দতার আয়েশ ।
কবি কখনও নির্ভরতার প্রতীক নন । লোকে কবি কে ভালবাসে কিন্তু পছন্দ করেনা । রবি ঠাকুর বলেন,‘ কবি-সাহিত্যিকদের কে দূর থেকে শ্রদ্ধা করা যায়; কাছে ডেকে বোনের বিয়ে দেয়া যায়না । ’
কবির মাঝে সংগ্রামী চেতনা কাজ করলে ও তিনি সেই চেতনা বাস্তবায়নের কর্মী নন-উস্কানিদাতা ।একটি চেতনা বাস্তবায়নে একাগ্রতা প্রয়োজন , প্রয়োজন টার্গেট ঠিক করা এবং দৃঢ়তার সাথে সেই ইচ্ছে পূরণের পথে এগিয়ে যাওয়া । কবির মধ্যে এসব গুণাবলীর উপস্থিতি কোথায় ?
মাইকেল মধূ‘র ‘একেই কি বলে সভ্যতা,’- প্রবন্ধে তিনি ইংরেজদের বেলেল্লেপনার বিরোধীতাকরেছেন কঠিনভাবে । অথচ বাস্তবে তিনি নিজেই ইংরেজদের অনুসারি ছিলেন । তবে কি কবি কে নড়বড়ে character বললে অত্যুক্তি হয় ?
যে নার্গিস একটু চোখের আড়াল হলেই নজরুলের প্রান হতো ওষ্ঠাগত; তিনি কিনা বিয়ের পরদিনই নার্গিসের জীবন থেকে চির তরে বিদায় নিলেন ! আমাদের জাতীয় কবি বাসর সেরেই সেই যে উধাও হলেন প্রিয়তমা নার্গিসের খবর নিলেন ১১ বছর পর, তখন তিনি অন্যের ঘরের ঘরনি ! কী ট্রাজেডি কী ট্রাজেডি !
কবি মাত্রই অভিনেতা । তিনি অন্যের সত্তায় ভর করে অন্যের জীবনদর্শন কে ফুটিয়ে তুলেন নিজের সত্তা দিয়ে । এখানে অনেকে কবি কে ভুল বুঝেন । সৃষ্টির প্রয়োজনে তিনি অন্যকে নিজের করে নেন। নিজেকে অন্যের হতে দেন - অথচ পুরো ব্যাপারটাই অভিনয় বৈ কি । তবে কবি যেহেতু রক্ত-মাংসেরই একজন মানুষ অভিনয় করতে যেয়ে কারো প্রতি বিশেষ দুর্বলতা এসেও যেতে পারে । তার প্রতিও কারো দুর্বলতা আসতে পারে । এজন্য অনেক সময় কবি কে অন্যের কটূক্তি কিংবা বিদ্রূপাত্মক দৃষ্টিভঙ্গীর ও শিকার হতে হয় । সৃষ্টির প্রয়োজনে তাকে এটুকু মেনে নিতেই হয় ।
স্বাভাবিকভাবে একটি প্রশ্ন এসেই যায়, কবি মাত্রই কি উদ্ভ্রান্ত পথিক ? এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর ।সমগ্র জীবনে তিনি ছিলেন নিয়মানুবর্তিত । তাঁর জীবন অনুসন্ধান করলে উদ্ভট কিছু খুঁজে পাওয়া ভার। সর্বক্ষেত্রেই যিনি নম্বর ওয়ান এক্ষেত্রে কেন তিনি পিছিয়ে থাকবেন ।
কবির নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই । ব্যক্তি বিশেষই সময়ের প্রয়োজন এবং উপযোগিতা অনুযায়ী কবি কে সংজ্ঞায়িত করেন । এটি সকলের কাছে সমভাবে সমাদৃত বা বর্জিত না হওয়াই স্বাভাবিক । বাস্তবতার নিরিখে কবি চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তোলার মধ্য দিয়ে চরিত্রটির স্রষ্ট্রার রুচির পরিচয় পাওয়া যায় । তাই চরিত্রটিকে কেন সজ্ঞায়িত করা হলো এ বিষযে সমালোচনা নয়; সমালোচনা হতে পারে যিনি চরিত্রটি সৃষ্টি করেচেন তার রুচিবোধ নিয়ে ।
কবি স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটেন । সময়ের পিঠে চাবুক মেরে সময়ের মুখে তুলেন উল্টোসুর । কবি মিথ্যেকে সত্য , সত্যকে মিথ্যে হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন । কবি যদি তার বুকে উত্তপ্ত গরল ধারণ করেন তবে তা ধ্বংসের প্রতিক না হয়ে হয়ে যায় সৃষ্টির প্রতীক । এ বিষয়গুলো যার মাঝে আছে তিনিই কবিত্বের দাবিদার ।
আরব্য গল্পের মিথ্যেবাদী বালকের কথা কার না জানা । অথচ কবি আল মাহমুদ বলেন, “লোকে বালককে মিথ্যেবাদী প্রতিপন্ন করলে ও প্রকৃত পক্ষে বালক ছিলো সত্যবাদী ! কেননা একদিন বাঘ এসে তাকে ঘ্রাস করবে- এ সংবাদ বালকের পূর্ব থেকেই জানা ছিলো ।” গণমানুষের মনে যুগযুগ ধরে যে ধারণা বদ্ধমূল ছিল আলমাহমুদ মুহূর্তেই তা উল্টে দিলেন এবং চিরন্তন একটি মিথ্যেকে পরিণত করলেন সত্যে-এটিই তার কবিত্বের পরিচয় ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জাহিদুর রহমান ০৬/০২/২০১৫
-
অ ০৫/০২/২০১৫সুন্দর লাগল লেখাটি ।
শুভেচছা রইল ।
শুভেচছা রইল ।