কবি ও কবিতা
কবি তিনি যিনি সাধারণের মাঝে বিচরণ করেন । সাধারণ কে সত্তায় ধারণ করেন । কিন্তু সাধারণের আবেগ অনুভূতিকে সত্তায লালন করেন না । এজন্য কবি সাধারণের কাছে অপাঙক্তেয় ; কারো কাছে অপাদার্থ ও বটে । লোকে সপ্ন দেখে মানুষ হবার কিন্তু কবি কি জানে তার স্বপ্ন কি ? তিনি এক অপরিনামদর্শী সাধানায় লিপ্ত । কবির পদযাত্রা ঠিকানহীন গন্তব্যে নয় কি ? তিন লিখেন আত্মার মুক্তির জন্য ; কাউকে মুক্ত করার জন্য নয় । কবি নিজেই অস্পৃশ্যের শৃঙখল থেকে মুক্ত নন- কোন অদৃশ্য শক্তির টানে তিনি লিখে যান ; উড়ে যান কোন এক সুতো ছেঁড়া ঘুড়ির মতো ।
ব্ন্ধুবর আইবেকশাহ আকাশের ভাষায়-
“ হায় সুতো ছেঁড়া ঘুড়ি
তুমি তো জানলেনা
ফেরারি ফিরলো কোথায় ?
অবশেষে কোন দৈব্য অমানিশারে
দিল উড়ো চিঠি ! ”
লোকে বলে কবির চেয়ে কাকের সংখা নাকি বেশি । সস্পটতই বোঝা যাচ্ছে কবি তে এ শ্রেণীর এলার্জি ।অথচ জীবনানন্দ বলছেন, ‘ সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি ।’ ফরাসি কবি শার্ল বোদলেয়ারের সংগ্রাম ছিলো যা কিছু কবিতা নয় তাকে কবিতা থেকে বাদ দিতে হবে । কবি মুহাম্মদ রফিক বলেন , ‘সব শালা কবি হতে চায় । ’
কবিতা লেখলেই কি কবি হওয়া যায় ? আমরা সাধারণত বলি আমি একটি কবিতা লেখেছি । একটু চিন্তা করছিনা সেটি আসলে কবিতা হয়েছে কিনা ? হলে আদৌ কতটুকু হয়েছে । বুঝতে ও পারছিনা আমার ভেতরে কবিতার বোধ আছে কতটুকু ! ভাবছিনা কবিতা বিষয়ে আদৌ আমার কোন পড়াশুনা আছে কিনা । অথচ মনে মনে নিজেকে নিয়ে যাচ্ছি অনন্য উচ্চতায় । নামের সাথে কবি শব্দ ব্যবহার করে কেউ কেউ নিজেকে ধন্য করছেন !
কবিতার নির্দিষ্ট কোন সংগা নেই । কবিতা অনুভূতির বিষয় । যুক্তি বিদ্যায় কবিতার বিশ্লেষণ চলেনা । অনেকে কবিদের কে জ্ঞান দেন - এভাবে লেখবেন না , ও ভাবে লেখবেন , এত কঠিন করে লেখেন কেন ? কবিতার পক্ষে কি আদৗ কঠিন কিংবা সহজ হওয়া সম্ভব ? কবিতা কে কি করে কৃষকের কাছে পৌঁছানো যেতে পারে ? এর একটি ভাব আছে । এঁর একটি শৈল্পীক মুল্য ও থাকা চাই ।
একজন ভদ্র লোক সারা জীবন ব্যয় করেছেন শিল্পের পেছনে অথচ তিনি কিনা একটি সিনেমা নির্মান করলেন- যার নাম ‘ খাইছি তোরে ।’ আর যাই হোক ‘খাইছি তোরে’-এর সাথে কবি ও কবিতার কোন সম্পর্ক থাকতে পারেনা । ব্যবসায়িক সাফল্য এবং গণমানুষের মনোরঞ্জণের সাথে কবি ও কবিতার সম্পর্ক নেই । কবিতা গণমানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন কোন সত্তা নয় তবে গণ মানুষই এর অর্থ উদ্ধারে ব্যর্থ হন । ফলশ্রুতিতে কবি ও কবিতার সাথে তৈরি হয় এক অদৃশ্য বিদ্বেষ । এর জন্য কে দায়ী জানিনা তবে এর দায় ভার কবি ও কবিতা নিতে পারেনা ।
“আমি কবি বলে অন্ধেরা খুলে দেয়
বন্ধ দুয়ার
আমি কবি বলে নারীর সফেদ বুকে
নামে হিমেল অন্ধকার
আমি কবি বলে শ্যাওলা পড়া পাথরের বুকে হয়
রেশমের চাষ
আমি কবি বলে সৌম্য চঞ্চল চোখে তার
প্লাবনের উদ্ভাস ”
এটি আদৌ কবিতা হয়েছে কিনা বা কতটুকু হয়েছে সে বিশ্লেষণে না গিয়ে যুক্তি বাদীরা যখন প্রশ্ন করে বসেন- কি করে অন্ধেরা বন্ধ দুয়ার খুলবে ? কি ভাবে পাথরের বুকে রেশমের চাষ হবে ? তখন কবিতা বিষয়ে যুক্তিবাদীদের জ্ঞানের গভীরতা টের পাওয়া যায় । কবিদের মধ্যে ও কেউ কেউ এধরনের প্রশ্ন করেন । এসমস্ত কবি ও যুক্তিবাদীরাই কবিতাকে সহজ করে লেখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ।
কবিতার পাঠক কবি ও সাহিত্যিকরাই ….এতদসত্তেও সমকালীন কবিদের পরস্পরের মধ্যে ও বিদ্বেষ কাজ করতে পারে জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারেও । ফরাসি কবি গোতিয়ে এবং শার্লবোদলেয়ার দুজনই ঐ দেশের বিখ্যাত কবি ছিলেন কিন্তু গোতিয়ে কখনও বোদলেয়ার কে কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেন নি । এতে বোদলেয়ার তার সহজাত লেখা থেকে এতটুকু বিচ্ছুত হন নি ।
কবি একটি confusing character এর নাম । confidence রেখে কোন প্রতিশ্রুতি দেয়া কবি কে মানায় না বলে সুনির্ষ্ট লক্ষ্য স্থির করা তার জন্য কঠিন ।
কবির ভাষায়--
“তুমি লিখোনা, লিখোনা আমায় বন্ধু !”
সমাজ-সংস্কারের মাথা খেয়োনা
নেমোনা কো মাঠে আদাজ্বল খেয়ে
নিভৃতেই ফেলো নিঃশ্বাস !
আমি ঘ্রাণ শুঁকে চিনে নিবো
এ তোমারই দীর্ঘশ্বাস !!”
কবি এখানে সংযমের ভূমিকায় - প্রেয়সিকে সংস্কারের খোলসমুক্ত হয়ে লোকালয়ে আসাকে নিষেধ করছেন ।
অন্য দিকে
কবি বলছেন--
“আমার চোখ ফেটে যায় বুক ভেঙ্গে যায়
না বলা কথার কান্নায়
সূর্য ওঠে সূর্য ডোবে কাল কাটে প্রতিক্ষায়
তবু অসেনা সময়
শিউলির গন্ধ ভেসে আসে আসোনা তুমি !”
যে কবি প্রেয়সীকে সংস্কারের খোলসে থাকতেই অনুরোধ করেছেন তিনিই আবার এখানে করুণ সুরে প্রেয়সী কে আহ্বান করলেন !
কবি কখনও প্রেয়সির হৃদয়ের গরল পান করে মহান হন --
হে নির্বাক নন্দিনী---
পথে হলো দেখা
নির্মোহ হাত দুটি দিলে বাড়িয়ে
গড়ে দিলে মঞ্চ এক
তুলে সুরের ঐকতান
হৃদয়ের গরল হৃদয়ে ঢেলে
করিয়ে দিলে স্নান !
কখনওবা হৃদয়েই পূঞ্জীভূত রাখেন হৃদয়ের উত্তাপ--
“ছিন্ন পালকের মতোই ছিলাম
কখনও বা বিবর্ণ পথিক
উর্বশী হৃদয়ের উত্তাপে পোড়ালে আমায়ে
দিলে নিঃস্বর্গের আয়েশ ।
আরশিতে নিজের শ্রী দেখে ভেবে ছিলে
এ বুঝি আমারই মুখ !
হৃদ মন্দিরে তোমার হৃদয়া হেয়েছি
এ আমারই পরম সুখ ।”
কবিতা হলো কবির আত্মা । মার্কেটিং এর শব্দগুলোর সাথে কবি ও কবিতার আজন্ম বিদ্বেষ । এতদসত্তে ও কবি কে করে যেতে হচ্ছে আজন্ম আত্মার মার্কেটিং ।
কবি এক অভিমানি সত্তার নাম । অভিমান কবির রক্তে দুন্ধুভি বাজায় । তুলে সকরুণ সুর--
“ কবি, অতৃপ্তির কালি দিয়ে
তোমার ভাগ্য লেখা
সাধ্য কি তুমি তৃপ্ত হও !
অভিমান তোমার রক্তে দুন্ধুভি বাজায়
এ ভাবেই ছাড়তে হবে ভূবন ।”
ব্ন্ধুবর আইবেকশাহ আকাশের ভাষায়-
“ হায় সুতো ছেঁড়া ঘুড়ি
তুমি তো জানলেনা
ফেরারি ফিরলো কোথায় ?
অবশেষে কোন দৈব্য অমানিশারে
দিল উড়ো চিঠি ! ”
লোকে বলে কবির চেয়ে কাকের সংখা নাকি বেশি । সস্পটতই বোঝা যাচ্ছে কবি তে এ শ্রেণীর এলার্জি ।অথচ জীবনানন্দ বলছেন, ‘ সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি ।’ ফরাসি কবি শার্ল বোদলেয়ারের সংগ্রাম ছিলো যা কিছু কবিতা নয় তাকে কবিতা থেকে বাদ দিতে হবে । কবি মুহাম্মদ রফিক বলেন , ‘সব শালা কবি হতে চায় । ’
কবিতা লেখলেই কি কবি হওয়া যায় ? আমরা সাধারণত বলি আমি একটি কবিতা লেখেছি । একটু চিন্তা করছিনা সেটি আসলে কবিতা হয়েছে কিনা ? হলে আদৌ কতটুকু হয়েছে । বুঝতে ও পারছিনা আমার ভেতরে কবিতার বোধ আছে কতটুকু ! ভাবছিনা কবিতা বিষয়ে আদৌ আমার কোন পড়াশুনা আছে কিনা । অথচ মনে মনে নিজেকে নিয়ে যাচ্ছি অনন্য উচ্চতায় । নামের সাথে কবি শব্দ ব্যবহার করে কেউ কেউ নিজেকে ধন্য করছেন !
কবিতার নির্দিষ্ট কোন সংগা নেই । কবিতা অনুভূতির বিষয় । যুক্তি বিদ্যায় কবিতার বিশ্লেষণ চলেনা । অনেকে কবিদের কে জ্ঞান দেন - এভাবে লেখবেন না , ও ভাবে লেখবেন , এত কঠিন করে লেখেন কেন ? কবিতার পক্ষে কি আদৗ কঠিন কিংবা সহজ হওয়া সম্ভব ? কবিতা কে কি করে কৃষকের কাছে পৌঁছানো যেতে পারে ? এর একটি ভাব আছে । এঁর একটি শৈল্পীক মুল্য ও থাকা চাই ।
একজন ভদ্র লোক সারা জীবন ব্যয় করেছেন শিল্পের পেছনে অথচ তিনি কিনা একটি সিনেমা নির্মান করলেন- যার নাম ‘ খাইছি তোরে ।’ আর যাই হোক ‘খাইছি তোরে’-এর সাথে কবি ও কবিতার কোন সম্পর্ক থাকতে পারেনা । ব্যবসায়িক সাফল্য এবং গণমানুষের মনোরঞ্জণের সাথে কবি ও কবিতার সম্পর্ক নেই । কবিতা গণমানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন কোন সত্তা নয় তবে গণ মানুষই এর অর্থ উদ্ধারে ব্যর্থ হন । ফলশ্রুতিতে কবি ও কবিতার সাথে তৈরি হয় এক অদৃশ্য বিদ্বেষ । এর জন্য কে দায়ী জানিনা তবে এর দায় ভার কবি ও কবিতা নিতে পারেনা ।
“আমি কবি বলে অন্ধেরা খুলে দেয়
বন্ধ দুয়ার
আমি কবি বলে নারীর সফেদ বুকে
নামে হিমেল অন্ধকার
আমি কবি বলে শ্যাওলা পড়া পাথরের বুকে হয়
রেশমের চাষ
আমি কবি বলে সৌম্য চঞ্চল চোখে তার
প্লাবনের উদ্ভাস ”
এটি আদৌ কবিতা হয়েছে কিনা বা কতটুকু হয়েছে সে বিশ্লেষণে না গিয়ে যুক্তি বাদীরা যখন প্রশ্ন করে বসেন- কি করে অন্ধেরা বন্ধ দুয়ার খুলবে ? কি ভাবে পাথরের বুকে রেশমের চাষ হবে ? তখন কবিতা বিষয়ে যুক্তিবাদীদের জ্ঞানের গভীরতা টের পাওয়া যায় । কবিদের মধ্যে ও কেউ কেউ এধরনের প্রশ্ন করেন । এসমস্ত কবি ও যুক্তিবাদীরাই কবিতাকে সহজ করে লেখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ।
কবিতার পাঠক কবি ও সাহিত্যিকরাই ….এতদসত্তেও সমকালীন কবিদের পরস্পরের মধ্যে ও বিদ্বেষ কাজ করতে পারে জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারেও । ফরাসি কবি গোতিয়ে এবং শার্লবোদলেয়ার দুজনই ঐ দেশের বিখ্যাত কবি ছিলেন কিন্তু গোতিয়ে কখনও বোদলেয়ার কে কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেন নি । এতে বোদলেয়ার তার সহজাত লেখা থেকে এতটুকু বিচ্ছুত হন নি ।
কবি একটি confusing character এর নাম । confidence রেখে কোন প্রতিশ্রুতি দেয়া কবি কে মানায় না বলে সুনির্ষ্ট লক্ষ্য স্থির করা তার জন্য কঠিন ।
কবির ভাষায়--
“তুমি লিখোনা, লিখোনা আমায় বন্ধু !”
সমাজ-সংস্কারের মাথা খেয়োনা
নেমোনা কো মাঠে আদাজ্বল খেয়ে
নিভৃতেই ফেলো নিঃশ্বাস !
আমি ঘ্রাণ শুঁকে চিনে নিবো
এ তোমারই দীর্ঘশ্বাস !!”
কবি এখানে সংযমের ভূমিকায় - প্রেয়সিকে সংস্কারের খোলসমুক্ত হয়ে লোকালয়ে আসাকে নিষেধ করছেন ।
অন্য দিকে
কবি বলছেন--
“আমার চোখ ফেটে যায় বুক ভেঙ্গে যায়
না বলা কথার কান্নায়
সূর্য ওঠে সূর্য ডোবে কাল কাটে প্রতিক্ষায়
তবু অসেনা সময়
শিউলির গন্ধ ভেসে আসে আসোনা তুমি !”
যে কবি প্রেয়সীকে সংস্কারের খোলসে থাকতেই অনুরোধ করেছেন তিনিই আবার এখানে করুণ সুরে প্রেয়সী কে আহ্বান করলেন !
কবি কখনও প্রেয়সির হৃদয়ের গরল পান করে মহান হন --
হে নির্বাক নন্দিনী---
পথে হলো দেখা
নির্মোহ হাত দুটি দিলে বাড়িয়ে
গড়ে দিলে মঞ্চ এক
তুলে সুরের ঐকতান
হৃদয়ের গরল হৃদয়ে ঢেলে
করিয়ে দিলে স্নান !
কখনওবা হৃদয়েই পূঞ্জীভূত রাখেন হৃদয়ের উত্তাপ--
“ছিন্ন পালকের মতোই ছিলাম
কখনও বা বিবর্ণ পথিক
উর্বশী হৃদয়ের উত্তাপে পোড়ালে আমায়ে
দিলে নিঃস্বর্গের আয়েশ ।
আরশিতে নিজের শ্রী দেখে ভেবে ছিলে
এ বুঝি আমারই মুখ !
হৃদ মন্দিরে তোমার হৃদয়া হেয়েছি
এ আমারই পরম সুখ ।”
কবিতা হলো কবির আত্মা । মার্কেটিং এর শব্দগুলোর সাথে কবি ও কবিতার আজন্ম বিদ্বেষ । এতদসত্তে ও কবি কে করে যেতে হচ্ছে আজন্ম আত্মার মার্কেটিং ।
কবি এক অভিমানি সত্তার নাম । অভিমান কবির রক্তে দুন্ধুভি বাজায় । তুলে সকরুণ সুর--
“ কবি, অতৃপ্তির কালি দিয়ে
তোমার ভাগ্য লেখা
সাধ্য কি তুমি তৃপ্ত হও !
অভিমান তোমার রক্তে দুন্ধুভি বাজায়
এ ভাবেই ছাড়তে হবে ভূবন ।”
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সবুজ আহমেদ কক্স ৩০/০১/২০১৫দারুন......।অনেক ভালো লাগলো.........
-
সুব্রত দাশ আপন ৩০/০১/২০১৫আপনার লিখা পড়ে আজ অনেক কিছু জানলাম। বেশ ভালো পরামর্শ মূলক কথাগুলো। কবিতা লিখলেই যে কবি হওয়া যায় না, তা আসলেই ঠিক। সত্যিই বলেছেন কবি সাধারণের মাঝে বিচরণ করেন। তার মনের সত্ত্বা দিয়ে মনের আবেগ গুলো প্রকাশ করেন কবিতার মাধ্যমে। শুভেচ্ছা কবি আপনাকে।