ভালবাসার সালতামামি
ভালবাসা একটি সহজ-সরল শব্দ । এটি মানুষকে সুন্দর করে । মহান করে । শব্দটিতে আবেগের ছড়াছড়ি । আবেগ ছাড়া যেমন ভালবাসা হয়না তেমনি অতি আবেগ কখনো এর আবেদনকে ক্ষুণ্ন করে । তবে ভালবাসা আবেগ দিয়েই বিচার্য , যুক্তি দিয়ে নয় ।
ভালবাসা সর্বজনীন বলে হৃদয়বান মানুষের পক্ষেই এর সকল শাখায় বিচরণ করা সম্ভব। হৃদয়হীন মানুষ ও এর কোন কোন শাখায় হযতো আংশিক আথবা বিপজ্জনকভাবে বিচরণ করে । সেটা নগণ্য বটে । তবে হদয়বান মানুষ মাত্রই এর সকল শাখায় বিচরণ করবেন তা নয় । এর জন্য মেধা এবং যোগ্যতার চেয়ে যে জিনিষটি বেশি প্রয়োজন তা হচ্ছে সাধনা । কথায় বলে ভালবাসাই আযোগ্য কে যোগ্য করে তোলে । তাই ভালবাসা এবং ভালবাসার মানুষকে হৃদয় দিয়েই উপলব্দি করতে হবে, মেধা বা যোগ্যতা দিয়ে নয় । কারো যদি এক্সট্রা অর্ডিনারি কোন যোগ্যতা থাকে সেটির সদব্যবহার ভালবাসাকে অলংকৃত করতে পারে বৈকি ।
ভালোবাসার জন্য প্রয়োজন মৌনতা , বাকপটুতা নয় । আবেগের কারণে কখনও মৌনতার মাঝে ও বাকপটুতা আসতে পারে তবে ভালবাসাকে উপলব্দি করতে হবে মৌনতা দিয়েই ।
ভালবাসা শব্দটি সহজ হলেও এর চলার পথ সবসময় মসৃণ নয় । ভালবাসার জন্য একটি সভ্যতার পতন ঘটতে পারে । হতে পারে রক্তপাতও । ‘ভালবাসি’ একথা যেমন সহজে বলা যায়না তেমনি এর ভার বহন করা ও ঢের সহজ নয় ।
রবি ঠকুরের ভাষায় , ‘ সহজ কথা বলতে আমায় কহ যে
সহজ কথা বলা যায়না সহজে ।’
ভালবাসা কখনও নীতি এবং সংস্কারকে মান্যজ্ঞান করে, কখনওবা এসবের উর্ধ্বে উঠে ঠিকানাহীন গন্তব্যে যাত্রা করে ।
কবির ভাষায়-
‘
“ তুমি লিখোনা , লিখোনা আমায় বন্ধু !
সমাজ-সংস্কারের মাথা খেয়োনা
নেমো না কো মাঠে আদাজল খেয়ে
নিভৃতেই ফেলো নিঃশ্বাস
আমি ঘ্রাণ শুঁকে চিনে নিব
এ তোমারই দীর্ঘশ্বাস !”
ভালবাসা এখানে সংযমের ভূমিকায় - প্রেয়সিকে সংস্কারের খোলসমুক্ত হয়ে লোকালয়ে আসাকে নিষেধ করছে ।
অন্য দিকে-
‘ ভেঙ্গে দাও আজ সংযমের বাঁধ যত
আমি নিজের বুকেই বয়ে বেড়াব
নিজেরই নোংরামির ক্ষত ! ’
পরক্ষণেই ভালবাসা এখানে অপরিণামদর্শী গন্তব্যে প্রেয়সীকে আহ্বান করছে ।
ভালবাসা তার অপজিট পার্সনকে দূরে ঠেলার চেয়ে কাছেই টানে বেশি । এটিই ভালবাসার সহজাত ধর্ম । প্রিয় কে দূরে ঠেলে দিয়ে বিরহের সংস্কৃতির চর্চার মধ্য দিয়ে যারা নিজেকে সুখি বলে , তার মিথ্যে বলে । এতদসত্তে ও দূরে ঠেলে দেয়ার সংস্কৃতিতেই আমরা অভ্যস্থ । ক্ষত থেকে যা সৃষ্টি করা সম্ভব তার চেয়ে প্রিয়তমকে কাছে পাওয়ার আনন্দ থেকে মহত কিছু সৃষ্টি সম্ভব । আমাদের সংস্কৃতিতে মিডল পয়েন্ট ইমোশন কাজ করে বলেই অকারন দুঃখ-দুঃখ ভাব ।
রবি ঠাকুরের গান
‘ সখী, ভালোবাসা কারে কয় ! সে কি কেবলই
যাতনাময় ।
সে কি কেবলই চোখের জল ?
সে কি কেবলই দুখের
শ্বাস ?’
লোকে তবে করে কী সুখেরই তরে
এমন দুখের আশ । ‘
কবির ভাষায়- ‘ তুমি দুঃখ হয়ে এসোনা বন্ধু
সুখ হয়ে এসো সুখের ভেতরে
কবিতা হয়ে এসো কাব্যের ভিতরে । ’
পৃথিবীতে মায়ের ভালবাসার সাথে কোন কিছুই তুল্য নয় । পৃথিবীর কোন ভাষাই এ ভালাবাসাকে অলংকৃত করতে যথার্থ নয় ।
স্রষ্ট্রার সাথে যাদের প্রেমের সম্পর্ক স্রষ্ট্রার ইচ্ছেকে তারা নিজের জীবনের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠা করতে ব্রত থাকেন-
রবি ঠাকুরের ভাষায়-
‘আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার
চরণধূলার তলে ।’ (গীতাঞ্জলী)
কবি এখানে কেবল স্রষ্ট্রার পায়ের নিচে নয় , পায়ের নিচে যে ধুলো থাকে সেখানে আশ্রয় চাচ্ছেন । এভাবে স্রষ্টার ইচ্ছের মাঝে কবি নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন ।
কবি আরও বলছেন--
‘ তোমারি ইচ্ছা করো হে পূর্ণ
আমার জীবন-মাঝে ।’ (গীতাঞ্জলী)
ভালবাসা কখনও তার চার পাশে প্রতিহিংসার আবহ তৈরি করে । একদিকে ভালবাসার আগুন দগ্ধ করে প্রেমিক যুগল কে করে মহান । অন্য দিকে হিংসার আগুনে জ্বলে ক্ষমতাসীন শাসক গোষ্ঠী জ্বালিয়ে দেয় সভ্যত করে অকারন রক্তপাত !
হেলেন ও পেরিসের প্রেমের জন্য গ্রিক সৈন্যরা ট্রয়নগরীতে আগুন ধরিয়ে দেয় । প্রেমের আগুনে নয় প্রতি হিংসার আগুন ভস্ম হলো রূপবতি ট্রয়নগরি ।
এছাড়া দেশকে ভালবেসে জীবন দেয়োর সংস্কৃতির ইতিহাস প্রাচীন । ৭১ এ লাখো শহীদের খুনে সোনার বাংলাদেশ অর্জনের অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে ।
আবুল হাসানের ভাষায়-
“ছোটো ভাইটিকে আমি
কোথাও দেখিনা,
নরোম নোলক পরা বোনটিকে
আজ আর কোথাও দেখিনা !
কেবল পতাকা দেখি,
কেল উৎসব দেখি ,
স্বাধীনতা দেখি,
তবে কি আমার ভাই আজ
ঐ স্বাধীন পাতাকা ?
তবে কি আমার বোন, তিমিরের বেদীতে উৎসব ?”
অবুল হাসানের স্বাধীনতার এ করুন চিত্রে নোনাজল ধরে রাখা দায় হয়ে যায়-সে একান্ত ভালবাসার জন্যই ।
পৃতিবীতে আমরাই একমাত্র জাতি মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছি । এবিরল ভালবাসার গৌরবময় অভিজ্ঞান আমাদের ঝুলিতে এসেছে সেই ৫২ সালে ! এই বিরল অর্জনে এখনো বিশ্বের কোন জাতি ভাগ বসাতে পারে নি !
‘ আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি ।’
ভালবাসা সর্বজনীন বলে হৃদয়বান মানুষের পক্ষেই এর সকল শাখায় বিচরণ করা সম্ভব। হৃদয়হীন মানুষ ও এর কোন কোন শাখায় হযতো আংশিক আথবা বিপজ্জনকভাবে বিচরণ করে । সেটা নগণ্য বটে । তবে হদয়বান মানুষ মাত্রই এর সকল শাখায় বিচরণ করবেন তা নয় । এর জন্য মেধা এবং যোগ্যতার চেয়ে যে জিনিষটি বেশি প্রয়োজন তা হচ্ছে সাধনা । কথায় বলে ভালবাসাই আযোগ্য কে যোগ্য করে তোলে । তাই ভালবাসা এবং ভালবাসার মানুষকে হৃদয় দিয়েই উপলব্দি করতে হবে, মেধা বা যোগ্যতা দিয়ে নয় । কারো যদি এক্সট্রা অর্ডিনারি কোন যোগ্যতা থাকে সেটির সদব্যবহার ভালবাসাকে অলংকৃত করতে পারে বৈকি ।
ভালোবাসার জন্য প্রয়োজন মৌনতা , বাকপটুতা নয় । আবেগের কারণে কখনও মৌনতার মাঝে ও বাকপটুতা আসতে পারে তবে ভালবাসাকে উপলব্দি করতে হবে মৌনতা দিয়েই ।
ভালবাসা শব্দটি সহজ হলেও এর চলার পথ সবসময় মসৃণ নয় । ভালবাসার জন্য একটি সভ্যতার পতন ঘটতে পারে । হতে পারে রক্তপাতও । ‘ভালবাসি’ একথা যেমন সহজে বলা যায়না তেমনি এর ভার বহন করা ও ঢের সহজ নয় ।
রবি ঠকুরের ভাষায় , ‘ সহজ কথা বলতে আমায় কহ যে
সহজ কথা বলা যায়না সহজে ।’
ভালবাসা কখনও নীতি এবং সংস্কারকে মান্যজ্ঞান করে, কখনওবা এসবের উর্ধ্বে উঠে ঠিকানাহীন গন্তব্যে যাত্রা করে ।
কবির ভাষায়-
‘
“ তুমি লিখোনা , লিখোনা আমায় বন্ধু !
সমাজ-সংস্কারের মাথা খেয়োনা
নেমো না কো মাঠে আদাজল খেয়ে
নিভৃতেই ফেলো নিঃশ্বাস
আমি ঘ্রাণ শুঁকে চিনে নিব
এ তোমারই দীর্ঘশ্বাস !”
ভালবাসা এখানে সংযমের ভূমিকায় - প্রেয়সিকে সংস্কারের খোলসমুক্ত হয়ে লোকালয়ে আসাকে নিষেধ করছে ।
অন্য দিকে-
‘ ভেঙ্গে দাও আজ সংযমের বাঁধ যত
আমি নিজের বুকেই বয়ে বেড়াব
নিজেরই নোংরামির ক্ষত ! ’
পরক্ষণেই ভালবাসা এখানে অপরিণামদর্শী গন্তব্যে প্রেয়সীকে আহ্বান করছে ।
ভালবাসা তার অপজিট পার্সনকে দূরে ঠেলার চেয়ে কাছেই টানে বেশি । এটিই ভালবাসার সহজাত ধর্ম । প্রিয় কে দূরে ঠেলে দিয়ে বিরহের সংস্কৃতির চর্চার মধ্য দিয়ে যারা নিজেকে সুখি বলে , তার মিথ্যে বলে । এতদসত্তে ও দূরে ঠেলে দেয়ার সংস্কৃতিতেই আমরা অভ্যস্থ । ক্ষত থেকে যা সৃষ্টি করা সম্ভব তার চেয়ে প্রিয়তমকে কাছে পাওয়ার আনন্দ থেকে মহত কিছু সৃষ্টি সম্ভব । আমাদের সংস্কৃতিতে মিডল পয়েন্ট ইমোশন কাজ করে বলেই অকারন দুঃখ-দুঃখ ভাব ।
রবি ঠাকুরের গান
‘ সখী, ভালোবাসা কারে কয় ! সে কি কেবলই
যাতনাময় ।
সে কি কেবলই চোখের জল ?
সে কি কেবলই দুখের
শ্বাস ?’
লোকে তবে করে কী সুখেরই তরে
এমন দুখের আশ । ‘
কবির ভাষায়- ‘ তুমি দুঃখ হয়ে এসোনা বন্ধু
সুখ হয়ে এসো সুখের ভেতরে
কবিতা হয়ে এসো কাব্যের ভিতরে । ’
পৃথিবীতে মায়ের ভালবাসার সাথে কোন কিছুই তুল্য নয় । পৃথিবীর কোন ভাষাই এ ভালাবাসাকে অলংকৃত করতে যথার্থ নয় ।
স্রষ্ট্রার সাথে যাদের প্রেমের সম্পর্ক স্রষ্ট্রার ইচ্ছেকে তারা নিজের জীবনের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠা করতে ব্রত থাকেন-
রবি ঠাকুরের ভাষায়-
‘আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার
চরণধূলার তলে ।’ (গীতাঞ্জলী)
কবি এখানে কেবল স্রষ্ট্রার পায়ের নিচে নয় , পায়ের নিচে যে ধুলো থাকে সেখানে আশ্রয় চাচ্ছেন । এভাবে স্রষ্টার ইচ্ছের মাঝে কবি নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন ।
কবি আরও বলছেন--
‘ তোমারি ইচ্ছা করো হে পূর্ণ
আমার জীবন-মাঝে ।’ (গীতাঞ্জলী)
ভালবাসা কখনও তার চার পাশে প্রতিহিংসার আবহ তৈরি করে । একদিকে ভালবাসার আগুন দগ্ধ করে প্রেমিক যুগল কে করে মহান । অন্য দিকে হিংসার আগুনে জ্বলে ক্ষমতাসীন শাসক গোষ্ঠী জ্বালিয়ে দেয় সভ্যত করে অকারন রক্তপাত !
হেলেন ও পেরিসের প্রেমের জন্য গ্রিক সৈন্যরা ট্রয়নগরীতে আগুন ধরিয়ে দেয় । প্রেমের আগুনে নয় প্রতি হিংসার আগুন ভস্ম হলো রূপবতি ট্রয়নগরি ।
এছাড়া দেশকে ভালবেসে জীবন দেয়োর সংস্কৃতির ইতিহাস প্রাচীন । ৭১ এ লাখো শহীদের খুনে সোনার বাংলাদেশ অর্জনের অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে ।
আবুল হাসানের ভাষায়-
“ছোটো ভাইটিকে আমি
কোথাও দেখিনা,
নরোম নোলক পরা বোনটিকে
আজ আর কোথাও দেখিনা !
কেবল পতাকা দেখি,
কেল উৎসব দেখি ,
স্বাধীনতা দেখি,
তবে কি আমার ভাই আজ
ঐ স্বাধীন পাতাকা ?
তবে কি আমার বোন, তিমিরের বেদীতে উৎসব ?”
অবুল হাসানের স্বাধীনতার এ করুন চিত্রে নোনাজল ধরে রাখা দায় হয়ে যায়-সে একান্ত ভালবাসার জন্যই ।
পৃতিবীতে আমরাই একমাত্র জাতি মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছি । এবিরল ভালবাসার গৌরবময় অভিজ্ঞান আমাদের ঝুলিতে এসেছে সেই ৫২ সালে ! এই বিরল অর্জনে এখনো বিশ্বের কোন জাতি ভাগ বসাতে পারে নি !
‘ আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি ।’
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আহমাদ মাগফুর ২৮/০১/২০১৫
-
মিজান রহমান ২৭/০১/২০১৫ভালোবাসার সালতামামি ভালো লাগলো ।শুভেচ্ছা নিবেন...
-
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ২৬/০১/২০১৫সত্যি প্রশংসনীয় লেখা। অনেক ভালো। কিন্তু বাংলার মানুষ কেনো এখন আবার জাগছে না আমাদের এই নোংরা রাজনীতির প্রতিবাদে..........
-
আবিদ আল আহসান ২৪/০১/২০১৫ভালবাসা
-
হাসান ইমতি ২৪/০১/২০১৫ভালোবাসা ভালবাসার সালতামামির জন্য ...
-
সবুজ আহমেদ কক্স ২৪/০১/২০১৫love all time best . . . . love n love
কাঁদলাম... হাসলাম...শিখলাম!