www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

স্পোর্টসম্যান

মালতী কাঁদছিল। কাঁদতে কাঁদতেই সে রজনীগন্ধায় সাজানো গাড়িটাতে উঠে পড়ল।

তার মনে পড়ে সে যখন খুব ছোট, তখন দাদা তাকে একজোড়া কেডস্ কিনে দিয়েছিল। সাদা সাদা জুতোয় পা গলাতে গলাতে, সে অনেক দৌড়বার স্বপ্ন দেখেছিল। ক্লাস ওয়ান থেকেই মাঠের নেশা তাকে পেয়ে বসে। মাঠের মাঝে চকে টানা সাদা দাগদুটোর সাথে খুব বন্ধুত্ব হয়েছিল তার।

মায়ের হাতে ভাত খেয়ে, কখনও না খেয়েই সে চলে আসত পাড়ার মাঠে। তার শক্ত পা দু'টো যেন ঘাসের পরশ পেয়ে ধন্য হত। দৌড়ের সময় তার মনে হত, সে বুঝি রাজকন্যে। সকালে দাদার সাথে দৌড়াত পাড়ার মাঠে, তারপর বাড়ি ফেরা। তারপর একজনের ভাত দু'জন খেয়ে, আবার মাঠে। অনেক স্বপ্ন ছিল তার, সে দৌড়াচ্ছে, ছাড়িয়ে যাচ্ছে সকল প্রতিদ্বন্দীদের। দৌড়াতে দৌড়াতে তার শরীর হয়ে উঠত একটা শুকনো তৃণখন্ড, যেন সে দৌড়াচ্ছেই না, যেন হাওয়াই উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাকে। তারপর যেবার সে স্কুল চ্যাম্পিয়ন হল, তার ডাক পড়ল এথলিট ট্রেনিং সেন্টারে।

মা-বাবা বহুবার বারণ করেছিল-গরিব ঘরের মেয়েমানুষ, তার হাতে খুন্তিই ভালোলাগে, দৌড়ঝাপ করে জিতে আসা সোনালি রঙের চাকতি না। গরিবের ঘরের মেয়েমানুষ, সে থাকবে মর্যাদার মধ্যে। সেই মর্যাদার দৌড় রান্নাঘর থেকে পাড়ার শিবমন্দির পর্যন্ত।তবু সে দুঃসাহসীর মত ৪ মাইল হেঁটে চলে যেত সেন্টারে।

সেখানে আলাপ অমৃতস্যারের সাথে। বয়স ৫৬, রঙ কালো, নাক টিকালো, শিকারীর মত দু'চোখে স্পোর্টস্ম্যানশিপের ছাপ স্পষ্ট। স্যার খুব যত্ন নিয়েই দৌড় করাতেন, যখন বয়স ১২, সে বাড়িতে না জানিয়েই দাদার সাথে শহরের স্টেডিয়ামে চলে গিয়েছিল। ডিস্ট্রিক্ট ৫০০ মি রেসে সে দ্বিতীয় হয়েছিল। প্রথম স্থানাধিকারী মধ্যমা সেন। সে যদি শহরে জন্মাত, তবে এইরকমই সাদা গেঞ্জি, সাদা হাফপ্যান্ট পড়ে সেও দৌড়াতে পারত এসব ভাবছিল আর কাঁদছিল সে, অমৃতস্যার এসে তাকে বলেছিল-

"স্পোর্টসম্যানরা কাঁদে না কোনদিন , হারে না কখনও।"

তারপর থেকেই সে ঠিক করেছিল, সেও কাঁদবে না, হারবে না। কিন্তু হল কই?

এখন সে ক্লাস এইট। অমৃত্স্যার বদলি হয়ে গেছেন। দাদার গলায় অন্যরকম সুর-"ধিঙ্গি মেয়ে! দৌড় থামা এবার তোর!" দাদার কল্যাণেই এবার দাদার এক বন্ধুর সাথে বিয়ে হয়ে গেল মালতীর। হেরে গিয়েছে সে।

তার পড়ের গল্পটুকু সবার জানা, এরকম কত স্পোর্টসম্যান হারিয়ে যায় বিস্মৃতির অন্ধকারে, কেউ খোঁজার চেষ্টাও করে না।

আজ রাতে সে পানপাতার মধ্যে কেবল সবুজ মাঠ দেখেছে। কেদেছে যখন সে বুঝতে পারছিল না, কার জন্য কাঁদছে -তার মা বাবার জন্য না প্রিয় মাঠের জন্য? বুনুকে তার কেডস্ জোড়া দিয়ে এসেছে সে। বুনুর ও দৌড়াবার শখ।

গাড়ি যখন খালি মাঠ দিয়ে অন্ধকারে পাস করছে, জানালার কাঁচ দিয়ে সে কিছুই স্পষ্ট বুঝছিল না। তবু সে কল্পনা করছিল, সবুজ মাঠে পড়ে আছে চকখড়ির দাগ।মা- বাবারা কবে মেয়েদের শেখাবেন?-

"স্পোর্টসম্যানরা কাঁদে না কোনদিন, হারে না কখনও।"
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৩৪৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১১/১১/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আপনার স্ট্যান্ডার্ড এ সাধারণ লেখা। কোনো লাইন বোল্ড করবেন না , যেন হিন্দি ছবিতে কোনো জোরালো ডায়লগ হলে , ঝম করে আওয়াজ। লাইন তার ভাষার গুনেই বোল্ড হয়ে উঠবে। একবার বানান এডিট করে নিন।
  • বিজয় ২১/১২/২০১৪
    valo laglo
  • বিজয় ০৮/১২/২০১৪
    hum
  • আবিদ আল আহসান ০৬/১২/২০১৪
    ভালো লাগলো
  • Înšigniã Āvî ০৩/১২/২০১৪
    আপনি ভালো লেখেন তাই
    https://www.facebook.com/thekobitaclub/photos/a.240335046059200.54095.202173269875378/730975773661789/?type=1&relevant_count=1

    এই লিঙ্কটা দেখতে পারেন, এটি পাব্লিক পোস্ট যে কেউ দেখতে পারে।
  • বিজয় ২৩/১১/২০১৪
    nice
  • চন্দ্রশেখর ২১/১১/২০১৪
    হারে না কখনও... হারে না রেনেসাঁরাও
  • রহিমুল্লাহ শরিফ ১৩/১১/২০১৪
    ভাল লাগল পড়ে
  • ভাল লাগলো আপনার গল্প......।।
  • শুধু কি স্পাের্টসম্যান। আমার মত কত হতভাগার কত স্বপ্নতো এভাবেই অচিরেই হারিয়ে যায়। হয়তো কেউ জানে হয়তো বা কেউ জানে না। আপনার বাণীটা চরম হয়েছে।
  • ভাল লাগল। সুন্দর উপস্থাপনা।
  • অনিরুদ্ধ বুলবুল ১১/১১/২০১৪
    "স্পোর্টসম্যানরা কাঁদে না কোনদিন, হারে না কখনো" -
    এই বানী চিরঅম্লান হয়ে জেগে থাকুক প্রতিটি ফটন্ত কুঁড়ির হৃদয়ে।

    প্লটগুলো মনে হয় তোমার তাৎক্ষণিক সৃষ্টি!
    গল্প লেখায় তোমার হাত ভালো - আমি একেবারেই গাড়েল নম্বর ওয়ান। ভালো লাগলো, শুভেচ্ছা -
    • রেনেসাঁ সাহা ১১/১১/২০১৪
      ধন্যবাদ কবি। গল্প লেখা কবিতার চেয়ে সোজা। মিথ্যে কথা আর সত্যি কথা একসাথে জুড়ে দিলেই হল। চেষ্টা করতে পারেন ।
      • অনিরুদ্ধ বুলবুল ১১/১১/২০১৪
        আরে ভাই, আমি একেবারেই বেতের লাঠি - বাঁকা করে ছেড়ে দিলে আবার সোজা হয়ে যায়।

        জীবনে খুব বেশী রকম গবেট মার্কা সততা লালন করায় ভনিতার ছায়া আমার উপর পড়তে পারে না। গল্প লিখতে হলে খানিকটা কল্পনা, খানিক জীবনের ছায়া আর বাকিটা প্রতীমা গড়ার কাদামাটির মতই সত্য মিথ্যার উপাচার দরকার হয়। খুঁজতে গেলে আমি তার কোনটাই পাই না! বরং কবিতা বা প্রবন্ধ চেষ্টা করলে দু'একটি জন্ম দিতে পারি।
 
Quantcast