মা ও ছেলে
সবে ভোর হয়েছে তখন। পাহাড় থেকে আঙুরবাগিচার গন্ধ আসছে।সূর্য উঠল কেবল। গাছের ফলায় আর ঘাসের ডগায় বরফের বিন্দু জমে আছে। পাহাড়ের স্তব্ধ খাদের মধ্যে ছুঁড়ে দেওয়া একটা ধূসর ফিতের মত রাস্তাটা। পাথর দিয়েই বাঁধানো। তবু মনে হয় মখমলের মতই নরম। ইচ্ছে হয় ছুয়ে দেখি। ভূ-স্বর্গ কাশ্মীর। হাজার বরফ থাক। কাশ্মীরকে সত্যিই ভালোবাসে খুব সূর্যটা।
তাবুতে ঢুকে গেলেন রেজওয়ানা চৌধুরী। বাইরে একটু পরেই নাকি তুষারপাত শুরু হবে। আপাতত শত্রুদের আক্রমণের কোনো আশঙ্কা নেই। ভিতরে প্রচুর ভারতীয় সৈন্য।এই তাঁবুটিতে সবাই তাকে সন্দেহের চোখে দেখে, তিনি জানেন। বহু পরিশ্রমে আর অধ্যাবসায়ে তিনি ভারতবর্ষের আর্মি বিভাগের প্রধান পদটি লাভ করেছিলেন। এখন সেই পদ থেকে সরতে সরতে তার স্থান হয়েছে তৃতীয় সহকারী প্রধানের। তবু সে পদের যোগ্য সম্মানের কাঁনাকড়িও তিনি পান না। তিনি জানেন যে যতই সম্ভ্রম দেখান না কেন এখানে তাকে, তিনি তাদের কাছে আর কর্নেল নন, তিনি কেবল জঙ্গি-প্রধানের মা। আর পাশের তাঁবুটিতে রান্না হচ্ছে। এখানেও সবাই তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখে। তিনিও বাধ্য হন দূরত্ব বজায় রাখতে। এখন এভাবেই চলছে তাঁর জীবন। অথচ এমনটাতো হবার কথা ছিল না। ২৩ বছর বয়সে শুরু করেছিলেন তার বিবাহিত জীবন। স্বামী ইব্রাহিম রহমান ছিলেন গোঁড়া মুসলিম। ৫ বক্ত নমাজ পড়তেন। বোরখা পড়ে থাকতে হয়েছিল তাকে। তবে আজ তার স্বীকার করতে ইচ্ছে হয় পতিভক্তির থেকে বেশি ছিল তার দেশভক্তি। লড়াই করবার জেদ। তারপর স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহের প্রতিবাদ করতে গিয়েই তালাক হয় তার। মুক্তি হল রেজওয়ানা রহমান - র; ভারত পেলো কর্নেল রেজওয়ানা চৌধুরীকে। তার সন্তান ইকবাল রহমান। ইকবালের জিনগত টানটি পেলো বায়ার দিকের। সেও স্বাত্বিক মুসলমান। যদিও 'ইসলাম' -শব্দটির অর্থ শান্তির সাথে তার কোনো যোগাযোগ নেই।
পরের দিনের সকালেই শত্রুর ওপর চড়াও হবার জন্য বেড়িয়ে পড়ে তাদের দল। পাহাড়ের গায়ে গায়ে লুকিয়ে থেকে ৩ দিনের যুদ্ধের পর অনেকটাই পিছু হটে এসেছেন তারা ইকবালের দলের থেকে। কতজন সৈন্য মারা গেছেন।
আশেপাশে জল পাবার মত যে ক'টি নদী ছিল; তার সবকটিতে মৃতদেহ ফেলেছে শত্রুরা। ৩ মাসের মধ্যে চারপাশের যত আঙুরবাগিচা ছিল, সব পুঁড়িয়ে ছাই করেছে। সব ঘরবাড়ির জানালা ব্ন্ধ। তবু কান পাত্লে শোনা যেত আহতদের চিৎকার, ধর্ষিতাদের গোঙানি আর শিশুদের কান্না।
ছেলের মা তিনি এবং দেশের রক্ষক। মনে মনে তিনি যেন তুলাদন্ডে ওজন করে চলেন, কোনটা বেশি? পুত্র-স্নেহ না দেশের প্রতি কর্তব্য, পেশাদারিত্ব? কোনটা বেশি না বুঝতে পারেন না কিছুতেই। অর্জুন নামক নতুন আর্মি অফিসারটির সাথে তার পারিবারিক আলাপ গড়ে উঠেছিল। অর্জুনের মা তাকে রেঁধে খাইয়েছিলেন। স্ত্রী-টিও খুবই বীনিত। ২দিন আগে অর্জুন মাড়া গেছেন। স্বান্তনাপত্রে লেখা হয়েছিল, "দেশের জন্য যারা মড়ে তারা শহিদ।"তার উত্তরে বলেছেন অর্জুনের মা-"আমার ছেলে দেশের জন্য যুদ্ধ করে সসম্মানে প্রান দিতে পেরেছে। অভিশাপ লাগুক জঙ্গিপক্ষের নেতা আর তার মাকেও......"
অবশেষে তিনি সকলের আড়ালে বের হয়ে আসেন নতুন তাঁবু থেকে। দরকার নেই একজন অবিশ্বাসী কেও। পাহাড় পেরিয়ে গুহায় প্রবেশ করেন তিনি, আগের দিন যে গুহার সন্ধান তিনি পেয়েছিলেন, সেটিতেই। বললেন এক ছায়ামূর্তি কে, তোমাদের প্রধান আমার সন্তান। ১২ বছর পর ছেলের সাথে দেখা। দেড় ঘন্টা ধরে কথা বললেন তারা। সুখ-দুঃখের কথা। কথা শেষ হতেই ছেলে ঘুমিয়ে পড়ল মায়ের কোলে মাথা দিয়ে। রেজওয়ানা দেরি করলেন না। ছেলের বুকে শ্যুট করলেন মা, তক্ষনই মারা গেলো ছেলেটি। ছেলের রক্তে ভিজে যাওয়া পকেট থেকে বের করলেন ভারতের একটি রক্তভেজা ম্যাপ। তার দিকে চেয়ে বিড়বিড় করে বললেন-"আমি আমার দেশের প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছি। মা হিসেবে আমার জায়গা ছেলের সাথে।" সঙ্গে সঙ্গে নিজের বুকেও চালালেন গুলি। ছেলের রক্তে পিস্তল টা তখন ও ভিজে। এবার ও তার হাত কাঁপলো না।
* * * * * * এ গল্পটি নিতান্তই কল্পনাপ্রস্রূত। বাস্তব সম্পর্কে কোনও খোঁজ না নিয়েই লিখেছি। কাশ্মীর এও কোনোদিন যাই নি। তাই ভুলগুলিকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখ্লে বাধিত হব। * * * * * *
তাবুতে ঢুকে গেলেন রেজওয়ানা চৌধুরী। বাইরে একটু পরেই নাকি তুষারপাত শুরু হবে। আপাতত শত্রুদের আক্রমণের কোনো আশঙ্কা নেই। ভিতরে প্রচুর ভারতীয় সৈন্য।এই তাঁবুটিতে সবাই তাকে সন্দেহের চোখে দেখে, তিনি জানেন। বহু পরিশ্রমে আর অধ্যাবসায়ে তিনি ভারতবর্ষের আর্মি বিভাগের প্রধান পদটি লাভ করেছিলেন। এখন সেই পদ থেকে সরতে সরতে তার স্থান হয়েছে তৃতীয় সহকারী প্রধানের। তবু সে পদের যোগ্য সম্মানের কাঁনাকড়িও তিনি পান না। তিনি জানেন যে যতই সম্ভ্রম দেখান না কেন এখানে তাকে, তিনি তাদের কাছে আর কর্নেল নন, তিনি কেবল জঙ্গি-প্রধানের মা। আর পাশের তাঁবুটিতে রান্না হচ্ছে। এখানেও সবাই তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখে। তিনিও বাধ্য হন দূরত্ব বজায় রাখতে। এখন এভাবেই চলছে তাঁর জীবন। অথচ এমনটাতো হবার কথা ছিল না। ২৩ বছর বয়সে শুরু করেছিলেন তার বিবাহিত জীবন। স্বামী ইব্রাহিম রহমান ছিলেন গোঁড়া মুসলিম। ৫ বক্ত নমাজ পড়তেন। বোরখা পড়ে থাকতে হয়েছিল তাকে। তবে আজ তার স্বীকার করতে ইচ্ছে হয় পতিভক্তির থেকে বেশি ছিল তার দেশভক্তি। লড়াই করবার জেদ। তারপর স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহের প্রতিবাদ করতে গিয়েই তালাক হয় তার। মুক্তি হল রেজওয়ানা রহমান - র; ভারত পেলো কর্নেল রেজওয়ানা চৌধুরীকে। তার সন্তান ইকবাল রহমান। ইকবালের জিনগত টানটি পেলো বায়ার দিকের। সেও স্বাত্বিক মুসলমান। যদিও 'ইসলাম' -শব্দটির অর্থ শান্তির সাথে তার কোনো যোগাযোগ নেই।
পরের দিনের সকালেই শত্রুর ওপর চড়াও হবার জন্য বেড়িয়ে পড়ে তাদের দল। পাহাড়ের গায়ে গায়ে লুকিয়ে থেকে ৩ দিনের যুদ্ধের পর অনেকটাই পিছু হটে এসেছেন তারা ইকবালের দলের থেকে। কতজন সৈন্য মারা গেছেন।
আশেপাশে জল পাবার মত যে ক'টি নদী ছিল; তার সবকটিতে মৃতদেহ ফেলেছে শত্রুরা। ৩ মাসের মধ্যে চারপাশের যত আঙুরবাগিচা ছিল, সব পুঁড়িয়ে ছাই করেছে। সব ঘরবাড়ির জানালা ব্ন্ধ। তবু কান পাত্লে শোনা যেত আহতদের চিৎকার, ধর্ষিতাদের গোঙানি আর শিশুদের কান্না।
ছেলের মা তিনি এবং দেশের রক্ষক। মনে মনে তিনি যেন তুলাদন্ডে ওজন করে চলেন, কোনটা বেশি? পুত্র-স্নেহ না দেশের প্রতি কর্তব্য, পেশাদারিত্ব? কোনটা বেশি না বুঝতে পারেন না কিছুতেই। অর্জুন নামক নতুন আর্মি অফিসারটির সাথে তার পারিবারিক আলাপ গড়ে উঠেছিল। অর্জুনের মা তাকে রেঁধে খাইয়েছিলেন। স্ত্রী-টিও খুবই বীনিত। ২দিন আগে অর্জুন মাড়া গেছেন। স্বান্তনাপত্রে লেখা হয়েছিল, "দেশের জন্য যারা মড়ে তারা শহিদ।"তার উত্তরে বলেছেন অর্জুনের মা-"আমার ছেলে দেশের জন্য যুদ্ধ করে সসম্মানে প্রান দিতে পেরেছে। অভিশাপ লাগুক জঙ্গিপক্ষের নেতা আর তার মাকেও......"
অবশেষে তিনি সকলের আড়ালে বের হয়ে আসেন নতুন তাঁবু থেকে। দরকার নেই একজন অবিশ্বাসী কেও। পাহাড় পেরিয়ে গুহায় প্রবেশ করেন তিনি, আগের দিন যে গুহার সন্ধান তিনি পেয়েছিলেন, সেটিতেই। বললেন এক ছায়ামূর্তি কে, তোমাদের প্রধান আমার সন্তান। ১২ বছর পর ছেলের সাথে দেখা। দেড় ঘন্টা ধরে কথা বললেন তারা। সুখ-দুঃখের কথা। কথা শেষ হতেই ছেলে ঘুমিয়ে পড়ল মায়ের কোলে মাথা দিয়ে। রেজওয়ানা দেরি করলেন না। ছেলের বুকে শ্যুট করলেন মা, তক্ষনই মারা গেলো ছেলেটি। ছেলের রক্তে ভিজে যাওয়া পকেট থেকে বের করলেন ভারতের একটি রক্তভেজা ম্যাপ। তার দিকে চেয়ে বিড়বিড় করে বললেন-"আমি আমার দেশের প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছি। মা হিসেবে আমার জায়গা ছেলের সাথে।" সঙ্গে সঙ্গে নিজের বুকেও চালালেন গুলি। ছেলের রক্তে পিস্তল টা তখন ও ভিজে। এবার ও তার হাত কাঁপলো না।
* * * * * * এ গল্পটি নিতান্তই কল্পনাপ্রস্রূত। বাস্তব সম্পর্কে কোনও খোঁজ না নিয়েই লিখেছি। কাশ্মীর এও কোনোদিন যাই নি। তাই ভুলগুলিকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখ্লে বাধিত হব। * * * * * *
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
দেবব্রত সান্যাল ১৩/১০/২০১৫বানান গুলো দেখে নিন প্লিজ। মারা , মরে , বিনীত
-
আবিদ আল আহসান ০৫/১২/২০১৪এতো ভালো লিখে কেমনে?????
-
Înšigniã Āvî ০৮/১১/২০১৪বাহ...... ভাল লাগলো
-
অনিরুদ্ধ বুলবুল ০৩/১১/২০১৪কল্পনা তো গাছের মগডালে চড়েনি!
এ তো দেখছি বরফাচ্ছাদিত কাশ্মীরের পাহাড়ের উঁচু চূড়ায় নবীন সূর্যের রৌদ্র কিরণ গায়ে মাখতে চড়ে বসে আছে?
ভাল লাগল 'সব্যসাচী' - আমার দিদি ভাই। -
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ০৩/১১/২০১৪বাংলা একটা ভাবসম্প্রসরন পড়েছিলাম কিছুতেই মনে করতে পারছি না। তবে অর্থটা এমন যে বিচারক বিচারকই। সে অন্যায়ের সঠিক বিচার করবেই এতে অন্যায়কারী যেই হোক। এতে হয়তো বিচারকের হৃদয়ো ব্যাথিত হবে। জানিনা গুছিয়ে বলতে পেরেছি কিনা। তবে লেখাটা ভালো।
-
মঞ্জুর হোসেন মৃদুল ০২/১১/২০১৪বাহ ভাল লাগল।