www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গল্পের Theme

আমি বসেছিলাম একা একা, অনেকক্ষণ ধরে। ভালো থিম আসছিলো না মাথায় গল্পের। ওদিকে কলেজ ম্যাগাজিনের জন্য স্বরচিত গল্প জমা দেবার শেষ দিন ও খুব কাছে চলে এসেছে। আমি বিদ্যাসাগর কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপিকা। আমাদের কলেজ থেকে প্রতিবছর "সুষমা" নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়। আমি আগের বছর ও সেটাতে "তিলার্ধ" নামে একটি গল্প ও লিখেছিলাম। সেই গল্পটির বিষয়বস্তু আমার এখন না মনে থাকলেও, সেটি যে ছাত্র-ছাত্রীদের খুব মনে ধরেছিল, তা আমার মনে আছে।

আমার হোমটাউন জলপাইগুড়ি। চাকরিসূত্রে কলকাতায় এই ভাড়ার বাড়িতে থাকি। আমার সাথে আলোমাসি থাকে। সূদুর জলপাইগুড়ি থেকে আমি আলো মাসিকে বহন করে এনেছি। আলোমাসির র্স্বামীটির নাম হস্তিক দাশ। হস্তিকটি অন্য হস্তিনীর সাথে পলায়ন করেছিলেন, আলোমাসি এবং তার দুই শিশুকন্যাকে ফেলে, পরবর্তীতে যখন রুমা আর ঝুমার বয়স যথাক্রমে ১৬ ও ১৪, তখন পিতৃদেব উদয় হলেন, আলো মাসির ঘর আলো করতে। এখন রুমা বিবাহিত , ঝুমা মৃত। হস্তিকটি আবার আর এক হস্তিনীর লেজ ধরে জীবন ও জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে বহুদুরে পারি দিয়েছেন। সুতরাং আলোমাসি নির্ঝঞ্ঝাট। ব্যস, আমিও খুব খুশি। এই কাজের লোকের আকালে , আলোমাসির মত কাউকে পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। ওর সংসার জন্নতে যাক বা জাহান্নামে যাক, তাতে আমার কিচ্ছু না। বেল পাকলে কাকের কী?

তা অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি। থিম কিছুতেই আসছে না। আলোমাসিকে ডেকে সন্ধ্যার চা দিতে বললাম।মাসি এসে চা দিয়ে মেঝেতেই বসে পড়ল। এতক্ষণ এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম। এমনিতেই থিম নেই, তার ওপর্ মাসির বকবক কাহাতক আর সহ্য করা যায়! তবু সহ্য করি, রাগ করে জলপাইগুড়ি ফেরত গেলে মহা বিপদ।

- "দিদিমণি ল্যাখত্যাসো?"

আমি মুখে হেসে বলি- "হ্যা গো গল্প লিখতে চাইছি, পারছি না।" মনে মনে বলি, - "না গো, খাতা কলম নিয়ে ডাংগুলি খেলছি।"

- "এ আর কুনো কাম হইল? আমি তোমারে কইত্যাসি, আমারে লইয়া ল্যাহো, অই যে আমার বর আমারে অন্য মেয়েছেলে নিয়া চইল্যা গ্যাছিলো, অইড্যা ল্যাহো। আমি কই, তুমি ল্যাহো।"

আমি বলি, - "তুমি বাদ দাও; ও গল্প পুরানো; কেউ পড়বে না।"

- "তাইলে, অই যে ঝুমাকে মন্দির থ্যিহা তুইল্যা নিয়া মাইরা হ্যালাইছিল বড়বাড়ির দীপুরা, অইড্যা ল্যাহো। অইড্যা মাত্তর ৪ বছর আগের কথা, পুরান হয় নাই।"

-"আমি বললাম, তুমি এসো মাসি, আজ পারলে ভাতটা একটু তাড়াতাড়ি চড়িও।"

আলোমাসি উঠে যেতে যেতে বলে, "দিদিমণি লিইহ্যো কিন্তু।"

আমি আলোমাসিকে কী করে বোঝাব এ থিম বস্তাপচা, পুরোনো, কোনো নতুনত্ব নেই। পাঠক আর আকৃষ্ট হয় না। রাত ১ টা অবধি জেগে থাকি। তবু মাথায় গল্পের থিম আসে না।

সকালবেলায় ঘুম ভাঙতে দেরি হয়। ৮ টার সময় ঘুম ভাঙে। হইচই শুনে ঘুম ভেঙে বাইরে গিয়ে দেখি, ভীড় জমে গেছে। যে বাড়িতে ভাড়া থাকি, সে বাড়ীর মালিক ব্যানার্জীবাবুর ছেলে রুপক গতরাতে মদ্যপ অবস্থায় পাড়ার একটি মেয়ে রীতা আহমেদ কে ধর্ষণ ও খুন করেছে। এই রীতা সেই মেয়েটা না, যে গতবারের মেলায় পায়রা বেচেছিল। আমাকে দিয়ে দুটা কিনিয়েছিল, বলেছিল- "আপপে আল্লাহ কি রহেমত বর্ষেগি।"আমি স্তব্ধ হয়ে মেঝেতে বসে পড়ি। হাওয়ায় কথা ভাসে-"আরে বড়লোকের ছেলে। ছাড়িয়ে নেবে, তার ওপর মাতাল অবস্থায় ছিল।" আমি ভাবছিলাম - রোজ এমন কত মেয়ে মড়ছে, কেউ আধমড়া হচ্ছে। তবু কেন এসব কিছুই বস্তাপচা পুরোনো হয়ে যায়? শুধু পাঠক আকর্ষণ কম বলে কেন একটি পৈশাচিক হত্যাকান্ড সামান্য একটি গল্পের থিম হবার যোগ্যতাও পায় না?
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৬৩৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৯/১০/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ভালো। বেশ ভালো।
  • Înšigniã Āvî ০৫/১১/২০১৪
    ekdom bastob...aajker somajchitro
  • আমি আলোমাসিকে কী করে বোঝাব এ থিম বস্তাপচা, পুরোনো, কোনো নতুনত্ব নেই।.... তবুও পুরাতনেরা নতুন হয়ে ভীড় করে নতুন ভাবে। শুভ কামনা
  • রইসউদ্দিন গায়েন ০২/১১/২০১৪
    গল্পটি প্রতিদিনের খবরের মতো হলেও ভাল লাগলো। তবে নাম নির্বাচনের আগে একটু সতর্ক থাকাই ভাল। নামে সাম্প্রদায়িক গন্ধ থাকলেই অনেক পাঠক/পাঠিকা আহত হতে পারেন, বিশেষত ধর্ষক এবং ধর্ষিতার প্রসঙ্গে। ধন্যবাদ,আপনার কথাগুলি গল্পচ্ছলে প্রকাশ করার জন্য!
    • রেনেসাঁ সাহা ০২/১১/২০১৪
      ধন্যবাদ জানবেন । এবার থেকে সতর্ক থাকব । :-)
  • চমৎকার গল্পটি পড়ে ভাল লাগল।
  • অনিরুদ্ধ বুলবুল ৩০/১০/২০১৪
    ধন্যবাদ রেনেসাঁ, অনুগল্পও যে একটা গল্প হয়ে গেল গো? লিখতে জানলে গল্পের থীমের অভাব বোধটাও যে একটা গল্প হয়ে যায় তাই প্রমাণ করলেন। মনটা ভারাক্রান্ত করে দিয়ে থেমে গেলেন....
  • বেশ সুন্দর একটি থিম। সব কমনই যে বস্তা পচাঁ না।
 
Quantcast