কমন পড়িনি
ফারুক-সোহানা দম্পতি বসাবস করেন এক মফঃস্বল শহরে। ফারুক একজন সরকারী কর্মকর্তা, খুবই লাজুক টাইপের।বিপরীত অবস্থা সোহানা’র মানে তার স্ত্রীর।তাদের একমাত্র মেয়ে প্রভা।ফারুক সাহেব কর্মস্থলে ব্যস্ত থাকায় মেয়ের দেখভাল করার দায়িত্ব নিয়েছেন মা সোহানা।স্বামী বড় কর্মকর্তা তাই মেয়েকে নামকরা স্কুলে ভর্তি করাতে না পারলে জাত যাবে! এ নিয়ে মহা টেনশনে সোহানা।১ম শ্রেনীর ভর্তি পরীক্ষায় মেয়েকে ভিক্টোরিয়া স্কুলে ভর্তি করাতে পারলেই ছয়-সাত বছর বা তার বেশি ভর্তি নিয়ে আর টেনশন করা লাগবেনা ভেবে মেয়েকে চোখেচোখে রাখেন।তিন তিন জন গৃহ শিক্ষক রেখেছেন।যে করেই হোক মেয়েকে ভর্তি করাতেই হবে!ফারুক সাহেবের এ নিয়ে কোন চিন্তা নেই।সব দায় যেন তার! রাত দিন এ নিয়ে মহাব্যস্ত, মহা টেনশন। মেয়ে যদি এ স্কুলে ভর্তি হতে না পারে!
এক শুক্রবার ভর্তি পরীক্ষার দিনক্ষন ঠিক হলো।সোহানা তার স্বামীকে বললেন-তোমার তো সময় হয় না, মেয়ে যেন শুধু আমার!আজ ছুটির দিন চলো ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্রে।রিক্সাযোগে তিনজন যাত্রা করলেন।ভিক্টোরিয়া স্কুল কেন্দ্রে পৌঁছালো সকাল আট টায়।পরীক্ষা দশটায়। সোহানা দারোওয়ানকে বলে রোল ৪৬৫।রূম কোন দিকে? দারোয়ান বটগাছ পানে ইশারা করে।ফারুক সাহেব বলেন এতো পরীক্ষার্থী যে গাছতলাতেও পরীক্ষা! বউ সোহানা বলেন, আরে না!ঐখানে সীটপ্লান দেওয়া আছে।সময় যতই যাই সোহানার টেনশন ততই বেড়ে যায়।শীতেও তার গা বেয়ে ঘাম ছুটছে! মেয়ে প্রভা অংকে দুর্বল। তাই হলে যাওয়ার আগে বারবার অংক নিয়ে টিপস দিচ্ছেন।পরিক্ষা শুরু হলো।দু’ঘন্টা সময় কিভাবে কাটায়- ভাবছেন ফারুক সাহেব।বউকে প্রস্তাব দিলো-চল কফি পান করে আসি!কফি খুবই প্রিয় হলেও টেনশনে সোহানার কিছুই ভালো লাগছেনা!৫০ আসনের বিপরীতে বারোশত পরীক্ষার্থী!-শুনে আরো মন খারাপ হয় সোহানার।সোহানা ভাবছে, কতো ডিমান্ড! কর্তৃপক্ষ কেনো সেকশন বাড়ায় না?ফারুক সাহেব বলেলেন, এতো ভর্তি পরীক্ষা নয় যেনো এলিমিনেশন টেস্ট!-বাদ দেওয়া পরীক্ষা!সোহানা বললেন বাদ দাও তোমার দার্শনিক কথাবার্তা!
একঘন্টা শেষে টয়লেটে যাওয়ার জন্য এক শিক্ষার্থী বের হতেই সোহানা এগিয়ে যায়। সাথে শত শত অভিভাবিকা!কেউ জিজ্ঞাসা করে অংক সহজ হয়েছে তো?কেউ বলে রচনা কমন পড়েছে তো? ইংরেজী সহজ তো! ইত্যাদি ইত্যাদি।ছেলেটি যেনো কোন মন্ত্রী বা ভি আই পি জাতীয় কেউ!মনে হচ্ছে দু’পাশে নারী সাংবাদিকেরা সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন!পরিদর্শক বললেন-কোন কথা নয়,আপনারা কোন ডিস্টার্ব করেন না, ছেলেটিকে টয়লেটে যেতে দিন! ছেলেটিও হেলেদুলে ভি আই পি’র মতো মাথা নিঁচু করে কোন কথা না বলে বাথরুমের দিকে চলল। সব অভিভাবিকারা-ই চিন্তিত হলেন।প্রশ্ন মনে হয় কমন আসেনি! মেয়ে অংক পারছে কি! আমি তো মেয়েকে বলেছি-ছিঁড়ে গেলে, ফেটে গেলে,উড়ে গেলে, ভেঙ্গে গেলে,পচে গেলে বা খেয়ে ফেললে বিয়োগ হবে। মনে আছে তো প্রভা’র? ছেলেটিকে তো দেখে মনে হচ্ছে প্রশ্নপত্র খুবই জটিল!—ইত্যাদি চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে সোহানার মাথায়।
বেশিরভাগ অভিভাবকই চিন্তিত। কিন্তু সোহানা একটু বেশিই চিন্তিত।মনে মনে ভেবে রেখেছেন- মেয়ে চান্স পেলেই তার স্বামীকে বলবেন মেয়ের কৃ্তিত্ত্বে সব অবদানই তার।মেয়ে শুধু জন্ম দিলেই হয় না! দেখাশুনাও করা লাগে!ইত্যাদি ইত্যাদি।এখন কি হবে? আরে না আমার মেয়ে ভালই পারবে!ফুল ফল, বিভিন্ন প্রানীর নাম, অংগপ্রতঙ্গের নাম গড়গড় করে পড়তে পারে। বাংলা তো তার কাছে ডালভাত!আমার মেয়ে ভর্তি হতে পারবে না তো কে পারবে?
দেড় ঘন্টা পর আরো কয়েকশিক্ষার্থী প্রস্রাবের জন্য বের হলেই সোহানা দৌড়ে তাদের কাছে গেলো।সাথে শত শত মা।কেউ বলেছে রচনা কমন পড়েছে? কেউ বলেছে ইংরেজী কী খুব কঠিন?সোহানার মাথায় শুধুই অংক। তিনি বললেন- অংক কি কমন পড়েছে?আপনারা সরে দাড়ান, বিরক্ত করেন না- পরিদর্শকের কথায় সবায় ইচ্ছে না থাকলেও সরে গেলেন।কেউ কেউ বলেনেন-আজ পরিদর্শকের কতো ক্ষমতা! অন্য দিন আমাকে আন্টি আন্টি বলে ডাকলেও উত্তর দিই নে-তার আবার ভাব!-বলল সোহানা।সোহানা আরো চিন্তিত হয়ে গেলেন।কেউ কথা বলেছে না তাহলে কি অঙ্ক জটিল হয়েছে? কমন পরেনি?হঠাৎ স্বামী ফারুক সোহানার কাঁধে হাত রাখতেই জ্ঞান ফিরে পায় যেন সোহানা।সোহানা স্বামীকে বলেছে- প্রশ্নপত্র খুবই কঠিন। ফারুক বললেন কীভাবে তুমি বুঝলে?-টয়লেটে যাওয়ার সময় যেসকল শিক্ষার্থী বের হচ্ছে তাদের সবার মুখই ভার।আমার মেয়ে ভালই পারবে, তাই না গো?
পরীক্ষা শেষে মেয়ে প্রভা’কে দেখেই সোহানা সব কিছু ফেলেই দৌঁড় দিল মেয়ের দিকে।কোলে তুলে এগালে ওগালে চুমু খেতে লাগল আর বিভিন্ন প্রশ্ন করতে লাগল।আমার মেয়ে পারবেনা তো কে পারবে?অংক সবগুলো হয়েছে তো? ইংরেজী কমন হয়েছে তো? রচনা লিখতে পেরেছো তো?মেয়ে মাথা নাড়ায়।মা আনন্দে গদগদ বলে আমার মেয়ে চান্স পাবে না তো কে চান্স পাবে! স্বামীকে বলে-মিষ্টি কিন্তু কিনে রেখো। কোন আত্ত্বীয় পাড়াপ্রতিবেশি যেন মিষ্টিমুখ না করে আমার বাসা থেকে না ফেরে! এসব বলে আর মেয়ে’কে আলতো করে চুমু খায়।মেয়ে বলল। রচনা বানিয়ে লিখেছি। খুব ভাল হয়েছে।মা আবার মেয়ের গালে কপালে চুমু খায় আর স্বামীকে বলে দেখতে হবেনা কে দেখাশুনা করে! -তো মা কি রচনা পরেছিল? মেয়ে বলল। খুব সহজ রচনা! –‘তোমার মা’। কি লিখলে মা? মেয়ে বলল; আমি লিখলাম, আমার মার নাম সোহানা।তারপর—জিজ্ঞাসিল মা।মেয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল-এটুকুই।কমন পরেনি তো!-মুখুস্তের বাইরে না!
সোহানা কিংকর্তব্যবিমুঢ়!
এক শুক্রবার ভর্তি পরীক্ষার দিনক্ষন ঠিক হলো।সোহানা তার স্বামীকে বললেন-তোমার তো সময় হয় না, মেয়ে যেন শুধু আমার!আজ ছুটির দিন চলো ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্রে।রিক্সাযোগে তিনজন যাত্রা করলেন।ভিক্টোরিয়া স্কুল কেন্দ্রে পৌঁছালো সকাল আট টায়।পরীক্ষা দশটায়। সোহানা দারোওয়ানকে বলে রোল ৪৬৫।রূম কোন দিকে? দারোয়ান বটগাছ পানে ইশারা করে।ফারুক সাহেব বলেন এতো পরীক্ষার্থী যে গাছতলাতেও পরীক্ষা! বউ সোহানা বলেন, আরে না!ঐখানে সীটপ্লান দেওয়া আছে।সময় যতই যাই সোহানার টেনশন ততই বেড়ে যায়।শীতেও তার গা বেয়ে ঘাম ছুটছে! মেয়ে প্রভা অংকে দুর্বল। তাই হলে যাওয়ার আগে বারবার অংক নিয়ে টিপস দিচ্ছেন।পরিক্ষা শুরু হলো।দু’ঘন্টা সময় কিভাবে কাটায়- ভাবছেন ফারুক সাহেব।বউকে প্রস্তাব দিলো-চল কফি পান করে আসি!কফি খুবই প্রিয় হলেও টেনশনে সোহানার কিছুই ভালো লাগছেনা!৫০ আসনের বিপরীতে বারোশত পরীক্ষার্থী!-শুনে আরো মন খারাপ হয় সোহানার।সোহানা ভাবছে, কতো ডিমান্ড! কর্তৃপক্ষ কেনো সেকশন বাড়ায় না?ফারুক সাহেব বলেলেন, এতো ভর্তি পরীক্ষা নয় যেনো এলিমিনেশন টেস্ট!-বাদ দেওয়া পরীক্ষা!সোহানা বললেন বাদ দাও তোমার দার্শনিক কথাবার্তা!
একঘন্টা শেষে টয়লেটে যাওয়ার জন্য এক শিক্ষার্থী বের হতেই সোহানা এগিয়ে যায়। সাথে শত শত অভিভাবিকা!কেউ জিজ্ঞাসা করে অংক সহজ হয়েছে তো?কেউ বলে রচনা কমন পড়েছে তো? ইংরেজী সহজ তো! ইত্যাদি ইত্যাদি।ছেলেটি যেনো কোন মন্ত্রী বা ভি আই পি জাতীয় কেউ!মনে হচ্ছে দু’পাশে নারী সাংবাদিকেরা সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন!পরিদর্শক বললেন-কোন কথা নয়,আপনারা কোন ডিস্টার্ব করেন না, ছেলেটিকে টয়লেটে যেতে দিন! ছেলেটিও হেলেদুলে ভি আই পি’র মতো মাথা নিঁচু করে কোন কথা না বলে বাথরুমের দিকে চলল। সব অভিভাবিকারা-ই চিন্তিত হলেন।প্রশ্ন মনে হয় কমন আসেনি! মেয়ে অংক পারছে কি! আমি তো মেয়েকে বলেছি-ছিঁড়ে গেলে, ফেটে গেলে,উড়ে গেলে, ভেঙ্গে গেলে,পচে গেলে বা খেয়ে ফেললে বিয়োগ হবে। মনে আছে তো প্রভা’র? ছেলেটিকে তো দেখে মনে হচ্ছে প্রশ্নপত্র খুবই জটিল!—ইত্যাদি চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে সোহানার মাথায়।
বেশিরভাগ অভিভাবকই চিন্তিত। কিন্তু সোহানা একটু বেশিই চিন্তিত।মনে মনে ভেবে রেখেছেন- মেয়ে চান্স পেলেই তার স্বামীকে বলবেন মেয়ের কৃ্তিত্ত্বে সব অবদানই তার।মেয়ে শুধু জন্ম দিলেই হয় না! দেখাশুনাও করা লাগে!ইত্যাদি ইত্যাদি।এখন কি হবে? আরে না আমার মেয়ে ভালই পারবে!ফুল ফল, বিভিন্ন প্রানীর নাম, অংগপ্রতঙ্গের নাম গড়গড় করে পড়তে পারে। বাংলা তো তার কাছে ডালভাত!আমার মেয়ে ভর্তি হতে পারবে না তো কে পারবে?
দেড় ঘন্টা পর আরো কয়েকশিক্ষার্থী প্রস্রাবের জন্য বের হলেই সোহানা দৌড়ে তাদের কাছে গেলো।সাথে শত শত মা।কেউ বলেছে রচনা কমন পড়েছে? কেউ বলেছে ইংরেজী কী খুব কঠিন?সোহানার মাথায় শুধুই অংক। তিনি বললেন- অংক কি কমন পড়েছে?আপনারা সরে দাড়ান, বিরক্ত করেন না- পরিদর্শকের কথায় সবায় ইচ্ছে না থাকলেও সরে গেলেন।কেউ কেউ বলেনেন-আজ পরিদর্শকের কতো ক্ষমতা! অন্য দিন আমাকে আন্টি আন্টি বলে ডাকলেও উত্তর দিই নে-তার আবার ভাব!-বলল সোহানা।সোহানা আরো চিন্তিত হয়ে গেলেন।কেউ কথা বলেছে না তাহলে কি অঙ্ক জটিল হয়েছে? কমন পরেনি?হঠাৎ স্বামী ফারুক সোহানার কাঁধে হাত রাখতেই জ্ঞান ফিরে পায় যেন সোহানা।সোহানা স্বামীকে বলেছে- প্রশ্নপত্র খুবই কঠিন। ফারুক বললেন কীভাবে তুমি বুঝলে?-টয়লেটে যাওয়ার সময় যেসকল শিক্ষার্থী বের হচ্ছে তাদের সবার মুখই ভার।আমার মেয়ে ভালই পারবে, তাই না গো?
পরীক্ষা শেষে মেয়ে প্রভা’কে দেখেই সোহানা সব কিছু ফেলেই দৌঁড় দিল মেয়ের দিকে।কোলে তুলে এগালে ওগালে চুমু খেতে লাগল আর বিভিন্ন প্রশ্ন করতে লাগল।আমার মেয়ে পারবেনা তো কে পারবে?অংক সবগুলো হয়েছে তো? ইংরেজী কমন হয়েছে তো? রচনা লিখতে পেরেছো তো?মেয়ে মাথা নাড়ায়।মা আনন্দে গদগদ বলে আমার মেয়ে চান্স পাবে না তো কে চান্স পাবে! স্বামীকে বলে-মিষ্টি কিন্তু কিনে রেখো। কোন আত্ত্বীয় পাড়াপ্রতিবেশি যেন মিষ্টিমুখ না করে আমার বাসা থেকে না ফেরে! এসব বলে আর মেয়ে’কে আলতো করে চুমু খায়।মেয়ে বলল। রচনা বানিয়ে লিখেছি। খুব ভাল হয়েছে।মা আবার মেয়ের গালে কপালে চুমু খায় আর স্বামীকে বলে দেখতে হবেনা কে দেখাশুনা করে! -তো মা কি রচনা পরেছিল? মেয়ে বলল। খুব সহজ রচনা! –‘তোমার মা’। কি লিখলে মা? মেয়ে বলল; আমি লিখলাম, আমার মার নাম সোহানা।তারপর—জিজ্ঞাসিল মা।মেয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল-এটুকুই।কমন পরেনি তো!-মুখুস্তের বাইরে না!
সোহানা কিংকর্তব্যবিমুঢ়!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
Înšigniã Āvî ০৮/১০/২০১৩ভাল গল্প
-
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. ০৮/১০/২০১৩অসম্ভব চমৎকার হয়েছে।এতো সহজ ভাষায় আপনি সমাজের যে চরম সত্য ফুটিয়ে তুলেছেন, তা সত্যিই প্রসংশনীয়।আমাদের আসলেই ভাবা দরকার।না হলে আমাদের ও সোহানার কিংকর্তব্যবিমূঢ় হতে হবে।
-
সুবীর কাস্মীর পেরেরা ০৮/১০/২০১৩আপনি ভাল গল্পও লিখেন সালেহ ভাই। খুব ভাল লাগল