www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মোবাইল বদল

মিতা’র আব্বু ইশতিয়াক সাহেব উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা।তিনি ঢাকায় থাকেন। মিতা’র মা অল্প বয়ষ্ক শিউলি বেগম প্রতিষ্ঠত কোম্পানীর অফিসিয়াল চাকুরি করেন।মিতার সামনে এইচ এস সি পরীক্ষা।এক শুক্রবার দুপুরে মিতা ডাইনিং টেবিলে মোবাইল সেট রেখে পড়ছিল। দুপুরের খাবার খেয়ে অন্যরুমে মা শিউলি টিভিতে নাটক দেখছিলেন।পাশের বাড়িতে একটি অনুষ্ঠান চলছিল।জোরে মাইকের আওয়াজ বের হচ্ছিল।হঠাৎ মোবাইলে রিং বেজে উঠল। মিতা তার বন্ধু অপু’র ফোন ভেবে দৌড়ে এসে ফোন ধরলো। কিন্তু মাইকের আওয়াজ এতো বেশি যে, অপর পাশের রিং দাতার কথা  ভালমতো শুনা যাচ্ছিল না। মিতা বলল-ফাংশন হচ্ছে।মাইকে যা আওয়াজ! বোর লাগছে! কিচ্ছু শোনা যায় না সোনা মধু!পাঁচটায় পান্না সিনেমা হলের সামনে দেখা করতে হবে এই তো! মনে আছে গো।তোমার কথা যেন ঠিক থাকে।ঠিক পাঁচটা! কথা শোনা যাচ্ছে না।মাই লাভ রাখি?

মা শিউলি বাথরুমে গেল। এমন সময় রিং বেজে উঠল অন্য মোবাইলে।দু’বার রিং বাজল।শিউলি মনে মনে ভাবল-আশিক ছাড়া এখন কে ফোন করবে! আজকে তো চাইনিজ হোটেলে যাওয়ার কথা আশিকের সাথে।তৃ্তীয়বার অনেক্ষন রিং বাজার পর হম্বিতম্বি হয়ে না দেখেই ফোন ধরলেন শিউলি বেগম।একে তো বাইরে ফাংশন তার উপর নেটওয়ার্ক সমস্যা।অপর প্রান্ত থেকে স্পস্ট কিছু শুনা যায় না।শিউলি বলল-কথা শুনা যাচ্ছে না।কথা তো আগেই হয়ে আছে। ভোজন বিলাসে চারটার সময় চাইনিজ খাওয়ার কথা বলছো তো?আচ্ছা সোনা মনে আছে।আজ তোমার সাথে অনেক কথা আছে।বুড়োভামের আর ভাল লাগেনা!সব কিচ্ছুর আজ ফয়সালা হবে। লক্ষীটি,ঠিক চারটায় ‘ভোজন বিলাসে’ আসা চায় কিন্তু! কথা ঠিক থাকে যেন!

মিতা’র বাবা ইশতিয়াক সাহেব ভাবেন, বউ বুড়োভাম কাকে বলল?কিসের ফয়সালা আবার? অ, এবার টাকা কম পাঠানো হয়েছে বলে কি বউ রাগ করেছে? কিন্তু পরে তো লক্ষী সোনা বলল!মেয়ে মিতা ‘মাই লাভ,’সোনা মধু’-এরকম করে তো কোনদিন বলেনি! তাহলে অনেক দিন বাড়ি না যাওয়ায় মেয়ের মন খারাপ হচ্ছে? যত কাজই থাক, আগামী সপ্তাহে বাড়ি যেতেই হবে।সবার আগে তো বউ-বাচ্চা!

হঠাৎ তিনটা পয়তাল্লিশ মিনিটের সময় মা শিউলি পরিপাটি, বডি স্প্রে , সুগন্ধি মেখে বেড়িয়ে পরল।মিতা বলল-মা তুমি কোথায় যাচ্ছো?শিউলি বলল-অফিসে যা কাজের চাপ! শুক্রবারেও কাজ করতে হয়! আর ভাল লাগে না! মিতা ভাবল, মা তো আব্বুর সামনে এরকম শাড়ি পরেনা! কি সুন্দর দেখাচ্ছে আম্মুকে! আব্বু দেখলে কতই না খুশি হতেন! মনে মনে খুশিই হ’ল মিতা।যাক নির্বিঘ্নে পাঁচটায় অপুর সাথে দেখা করা যাবে!

শিউলি খুবই কিপটে স্বভাবের।সাড়ে চারটা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরেও যখন আশিক আসল না তখন মনে মনে খুব রাগ হ’ল। কথা না রাখা লোকের সাথে আর যাই হোক প্রেম করা যায় না, ঘর সংসার করা যায় না!আবার ভাবল,কাজের চাপে হয়তো দেরি হচ্ছে! অতএব, মেন্যুর অর্ডার দিয়ে দিই।আশিক আসলে বিল দিয়ে দেবে।এর আগেও তো এরকম হয়েছে! সন্ধ্যা ছ’টা বেজে গেল তবু আশিক আসে না।হোটেল বয় দেড় হাজার  টাকার বিল ধরিয়ে দিল শিউলির হাতে।শিউলির প্রচন্ড রাগ হলো।দেখাচ্ছি মজা বলেই ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে খুব কষ্ট করে বিল পরিশোধ করে বাড়ি ফিরলেন।

পাঁচটার আগেই মিতা প্রেমিক অপু’র সাথে রোমান্সে কিছু সময় কাটানোর জন্য ‘পান্না সিনেমা হল’র নির্দিষ্ট জায়গায় হাজির হলো।সাড়ে পাঁচটার দিকেও অপু আসল না। মিতার খুব অভিমান হলো। বিড়বিড় করে বলল-দেখা হোক! তারপর দেখাচ্ছি মজা! ছোট লোকের প্রেম করা শিখাচ্ছি! তারপর ভাবল-অপু তো আর যাই হোক কোনদিন কথার  বরখেলাপ করেনি! তাহলে কি অসুখটা বেড়ে গেল! সাতপাঁচ ভেবে সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার দিকে বাড়ি ফিরলো। মা শিউলি বলল-পরীক্ষার সময় না পড়ে কোথায় গিয়েছিলি? মিতা বলল-খুব গুরত্বপুর্ণ নোট আনতে স্যারের বাসায় গিয়েছিলাম। হঠাৎ ইংরেজির স্যার ফোন করেছিলেন। মনঃকষ্ট নিয়ে দু’জনেই যার যার রুমে গেলেন।

পরের দিন সকালে মিতা পড়তে যাবে। গনিতের স্যার পড়াবে কিনা ফোন করে জানতে ইচ্ছে হলো।ফোন বের করে রিং করবে এমন সময় দেখলো, মোবাইল সেটের উপরে লাল স্টিকারে লেখা ‘এস’। চক্ষূ চড়কগাছ! এটা তো আম্মুর সেলফোন! উপরি পাওনা পেয়ে বাবা গত মাসে মা ও মেয়ে কে একই রকম দু’টি মোবাইল সেট কিনে দিয়েছিলেন। আব্বুর প্রতি মিতা’র খুব রাগ হলো।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭১৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৫/০৯/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সালমান মাহফুজ ২৫/০৯/২০১৩
    ভালো লিখেছেন সালেহ ভাই । মজাদার গল্প ।
  • সহিদুল হক ২৫/০৯/২০১৩
    বেশ ঝামেলায় পড়ে গেল তো মিতা।
  • Înšigniã Āvî ২৫/০৯/২০১৩
    ভালই লাগলো
  • সালেহ ভাই কবিতা পেয়েছি, এবার পেলাম গল্প। আপনার দক্ষতা আছে বলতেই হবে
  • খুবই মজা লাগল। অসাধারন লেখনি :)
  • ইব্রাহীম রাসেল ২৫/০৯/২০১৩
    --গল্পময় হলে আরো ভালো হত --লিখতে থাকুন
 
Quantcast