এ সম্পর্কের শেষ কোথায়
এ সম্পর্কের শেষ কোথায়?
এখন ২০২১ সাল। কিন্তু নয় বছর আগে একবার ফিরে যাই। যখন স্বপ্ন আর সপ্না দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। ২০১২ সাল। স্বপ্ন ১ম ও ২য় শ্রেণীতে একটি স্কুলে পড়ার পর আরেকটি স্কুলে গিয়ে আবার ২য় শ্রেণিতে ভর্তি হয়। ভর্তি হয়ে ঐ দিন আর ক্লাস না করে স্বপ্ন চলে আসে। পরেরদিন স্বপ্ন ক্লাসে গিয়েছিল। একদিনে তার দু-একটা বন্ধুও হয়ে গিয়েছিল। কারণ সকলেই নতুন। সকলেই বন্ধু খুঁজছিল। পরেরদিন অর্থাৎ স্বপ্ন’র নতুন স্কুলে প্রথম ক্লাসের দিন, স্বপ্ন ক্লাসে ছিল এমন সময় এক নতুন মেয়ে আসল। ক্লাসের স্যার পরিচয় করে দিয়েছিলেন, মেয়েটি তাদের স্কুলে আজই ভর্তি হয়েছে। অর্থাৎ সেও আজ থেকে তাদের নতুন বন্ধু। ওর নাম সপ্না। পরিচয় করিয়ে দিবার সময় স্যার মজা করে বলেছিলেন “স্বপ্ন, তোমাদের দুজনের নামের কিন্তু মিল রয়েছে”। এভাবেই ওদের পরিচয় হয়েছিল।
ক্লাসে স্বপ্ন আর স্বপ্নার ভালো বন্ধুত্ব হয়েছিল ঐ দিন থেকেই। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের বন্ধুত্ব খুব ঘনিষ্ঠ হয়েছিল। স্বপ্না খুবই শান্তশিষ্ট আর স্থির প্রকৃতির মেয়ে ছিল। কথা কমই বলত। অপরদিকে স্বপ্ন চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে ছিল। সবসময় কথা বলত। ক্লাসের অন্যান্য ছাত্র ছাত্রীদের সাথেও তার খুব ভাব জমেছিল খুব অল্প দিনের মধ্যেই। স্বপ্ন ও স্বপ্না দুজনেই পড়াশোনায় ভালো ছিল। স্কুলের স্যাররাও তাদের খুব ভালোবাসত। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তে তখন তারা ছোট ছেলে-মেয়ে। আর ঐ বয়সে ছেলে-মেয়ে ভেদাভেদ ছিল না। ছেলে, মেয়ে সকলে একই রুমে ক্লাস করত। এমনকি ছেলে-মেয়ে একই বেঞ্চেও বসা চলত। টিফিন পিরিয়ডে স্বপ্ন ও স্বপ্না একই সাথে থাকত। স্কুল মাঠে সকল ছাত্র ছাত্রী মিলে ছুটোছুটি করে খেলত। এক বছর এখনো হয়নি। অর্থাৎ তারা এখনো তৃতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়নি। স্বপ্না এখন কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। আগে কথা কম বলত, বেশি ছুটোছুটি করত না। এখন স্বপ্না আগের চেয়ে বেশি কথা বলে আর একটু চঞ্চল প্রকৃতিরও হয়েছে বটে। এভাবে এক বছর কেটে গেছে। দ্বিতীয় শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষায় স্বপ্ন ১ম হয়েছিল আর স্বপ্না হয়েছিল ২য়। প্রত্যেকেই খুশি। ঐ এক বছরে তাদের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছিল। স্কুলে স্যাররাও সেটা খেয়াল করতেন। তারা খুশিই হতেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন সম্পর্ক থাকা ভালো। তাদের মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ ছিল বটে। কিন্তু তাই বলে ক্লাসের অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে তাদের যে সম্পর্ক ছিলনা তা কিন্তু নয়। ক্লাসে তখন সকলেরই পরস্পরের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। এখানে তাদের সম্পর্ক তখন তাই বিশেষ ভাবে কারো নজরে পড়ার মতো ছিল না। তখন তারা প্রত্যেকেই ছোট। আর এই সময় সকলেরই এরকম সম্পর্ক স্বাভাবিকভাবেই থাকে। সারাদিন ছুটোছুটি, খেলাধুলা করেও তারা পড়াশোনায় ভালো ছিল। এরকমভাবে আরও একবছর কেটে গেল। তাদের তৃতীয় শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষাও হলো। সেবারও স্বপ্ন হয়েছিল ১ম আর স্বপ্না হয়েছিল ২য়। কিন্তু ফলাফল প্রকাশের দিন স্বপ্ন স্কুলে গিয়ে দেখেছিল স্বপ্না আসেনি। স্বপ্ন নিজের পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে খুব খুশি ছিল। তবুও স্বপ্নাকে একটু মিস করেছিল। কিন্তু তখন এত কিছু বুঝত না তারা তাই খুব একটা খারাপ লাগেনি স্বপ্ন’র। কিন্তু চতুর্থ শ্রেণীর ক্লাস শুরু হওয়ার পর সপ্তাহ খানিক পার হলেও যখন স্বপ্না ক্লাসে এসেছিল না তখন স্বপ্ন’র বারবার মনে হয়েছিল স্বপ্নার কথা। একদিন ক্লাসে এসে স্যার জানিয়েছিলেন, স্বপ্না আর ক্লাসে আসবে না। তখন স্বপ্ন’র একটু খারাপ লেগেছিল। কিন্তু তার মাত্রাটা খুব বেশি প্রবল হয়নি। ক্লাসে স্বপ্ন’র আরো অনেক বন্ধু ছিল। তারপরও স্বপ্ন স্বপ্নাকে একটু মিস করত। কিন্তু তারপর ঐ স্কুলে তাদের আর কোনদিন দেখা হয়নি। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর অর্থাৎ স্বপ্না চলে যাওয়ার এক বছর পর স্বপ্নও ঐ স্কুল ছেড়ে অন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু এখানেই কি এই সম্পর্কের শেষ? না। তাহলে, এ সম্পর্কের শেষ কোথায়?
২০১৯ সাল। স্বপ্ন নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। বিঙ্গান বিভাগে ভর্তি হয়েছে। তখন স্বপ্না’র কথা তার আর খুব বেশি মনে পড়েনা। প্রায় পাঁচটা বছর কেটে গেছে দুজনের দেখা হয়নি, কথা হয়নি।
স্বপ্ন তখন বাজারে একটা স্যারের কাছে ম্যাথ কোচিং শুরু করেছে। তাদের স্কুলেরই স্যার। সেখানে আশেপাশের আরো তিন-চার স্কুলের ছাত্রছাত্রী পড়ে। সেখানে এসে স্বপ্ন’র আরো বন্ধু-বান্ধব জুটেছে। এখন স্বপ্নার কথা খুব একটা মনে পড়েনা তার। পাঁচ বছর পার হইয়ে গেল দেখা হয়নি। দেখা হলে হয়তো সে চিনতে পারবে।
একদিন কোচিং এ গিয়ে ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে। স্বপ্ন পিছনের বেঞ্চে বসে আছে। হঠাৎ তারা সকলেই চমকে উঠল একটা সালাম শুনে। একটা মেয়ের কণ্ঠ। দরজার দিকে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখল তার পরিচিত মেয়েটা। সাথে সাথে তার মনে হল কিন্ডার গার্টেন স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির কথা। সেদিনও ঠিক এভাবেই এসেছিল স্বপ্না। কোচিং এর গেটে তাকে দেখেই স্বপ্ন’র বুকের মধ্যে কেমন জানি করে উঠল। তবে সেদিন স্যার, ঐ কিন্ডার গার্টেন স্কুলের স্যারের মতো শেষে আসা মেয়েটিকে সকলের সাথে পরিচয় করে দিলেন না। অবশ্য তার দরকারও ছিলনা। সেদিন প্রথমার দেখেই সে স্বপ্নাকে চিনতে পেরেছিল। যাইহোক, সেদিনের মতো কোচিং শেষ হয়ে গেল। সকলেই বাড়িতে ফিরল। রুমের বাইরে এসে স্বপ্ন একবার স্বপ্নার সাথে কথা বলার চিন্তা করেছিল। আবার সাহস ও করেনি। এতদিনে স্বপ্না তাকে চিনতে পারবে কিনা! কে জানে। তারপর সে একটা মেয়ে তার সাথে নিজ থেকে কথা বলতে গেলে যদি সে কথা না বলে তাহলে আবার সমস্যা হবে। এরকম চিন্তা ভাবনা করে স্বপ্ন সেদিন আর স্বপ্নার সাথে কথা বলতে সাহস করেনি। সেদিন সকলের সাথে সেও বাড়িতে ফিরিয়া আসিল। বাড়িতে আসিয়া রাতে পড়তে বসে একপলকে তাহার কিন্ডার গার্টেন স্কুলের কথা মনে পড়িয়া গেল। সেদিন রাতে তার আর ভালোমতো পড়া হলোনা। পরদিন সকালে সে কোচিং এ গিয়ে দেখল স্বপ্না তার আগে এসেছে। সে শুধু দেখল সেদিনও কিছু বলতে পারল না। এভাবে প্রায় এক মা সময় কাটিল স্বপ্ন প্রতিদিনই স্বপ্নাকে দেখে কথা বলবে, ভাবে, আবার সাহসও করেনা। এরকমভাবে এক-দেড় মাস কাটিলে একদিন কোচিং শেষে কোচিং রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে স্বপ্ন তার বন্ধুর সাথে কথা বলতেছে। সেদিন কোচিং এ বেশি ছাত্র-ছাত্রী আসেনি। হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন জিজ্ঞেস করল, “কি রে কেমন আছিস?”
একটা মেয়ে কণ্ঠের আওয়াজ। স্বপ্ন পিছনে ফিরে দেখল সে আর অপরিচিত কেউ নয়। তার ছোটবেলার ফ্রেন্ড স্বপ্না। স্বপ্ন উত্তর দিল, “আমি ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?”
স্বপ্নাও উত্তর দিল, হ্যাঁ, আমিও ভালো আছি। আজকাল তুই যে কথাই বলিস না।
আমি কথা বলিনা? নাকি, তুই কথা বলিস না। আমি ঠিকই কথা বলতে চাই, তুই তো পাত্তাই দিস না। আমি মনে করলাম ভুলেই গেলি নাকি আমাকে!
বাহ রে একদিন কথাই বললি না আর আগেই ভেবে নিলি আমি তোকে ভুলে গেছি না!
আরে, কথা তো বলতেই চাই কিন্তু সাহস হয়না। তুই মেয়ে যে!
স্বপ্না একটু হেসে বলল, তুই কি মেয়ে নাকি যে আমার সাথে কথা বলতে ভয় লাগে। আর তাছাড়া আমার সাথে কথা বলতে তোর ভয় লাগে? তোর ছোটবেলার কথা মনে নেই?
আরে, ভয় না। মানে যখন তোকে ডাক দিব ভাবি, তখনই আবার মনে হয় তুই যদি চিনতে না পারিস? আর ছোটবেলার কথা সবই মনে আছে। তোকে এখানে দেখে আরো বেশি মনে পড়েছে।
তুই তো একদিন ডাক দিয়েই দেখলি না আগে ভেবে বসে থাকলি আমি তোকে চিনতে পারব না।
স্বপ্ন হেসে বলল, আচ্ছা ওসব কথা বাদ দে। চল এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে সামনে এগিয়ে যাই।
স্বপ্না জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাবি?
স্বপ্ন:আজ তো স্কুল ছুটি, বাড়িতে যাব। চল যেতে যেতে গল্প করি।
স্বপ্না:আমরা আমাদের বাজারের বাড়িতে থাকি। গ্রামের বাড়িতে আর থাকি না। ওদিকে যাব না। তুই তাহলে যা। কাল দেখা হবে।
স্বপ্ন:আচ্ছা কাল কোচিং এ আসিস কিন্তু!
আচ্ছা বলিয়া স্বপ্না তার বাসার দিকে এবং স্বপ্ন নিজের বাসার দিকে চলল। সেদিন বাসায় গিয়ে স্বপ্ন শুধু এসব কথাই ভেবেছে। এরপর থেকে প্রতিদিনই কোচিং এ এসে দুজনের মধ্যে কথা হত। আবার কিন্ডার গার্টেন স্কুলের মতো সম্পর্ক হয়ে গেল। না ঠিক হুবহু না। তখন একসাথে একই বেঞ্চে বসা চলত, কত ছুটোছুটি, চিৎকার, চেঁচামেচি সবই চলত। কিন্তু এখন এসবের কিছুই হয়না। এখন এসব শুধু মাঝে মাঝে কিছুক্ষণ গল্পের বিষয়। তারপরও দুজনেরই এখন কোচিং এ ভালোই সময় কাটছে আরো অনেক বন্ধু-বান্ধব তো আছেই। কিন্তু এভাবেও বেশি দিন চলল না। তিন-চার মাস পর স্বপ্না ঐ কোচিং ছেড়ে অন্য কোচিং এ ভর্তি হলো। তখন আবার তাদের কিছুদিন পূর্বের মতো অবস্থা হয়ে গেল। কারণ তখনো একে অপরের কন্টাক্ট নাম্বার জানেনা। আবার দুজন দুই স্কুলে পড়ত। তবে মাঝে মাঝে রাস্তা দিয়ে চলার সময় দেখা হতো, কথা হলেও সেরকমভাবে কথা বলার সুযোগ হয়নি। এভাবে তাদের নবম শ্রেণী পুরোটাই কেটে গেল। একে অপরের সাথে কথা বলা হয়নি।
কিন্তু তাতেও শেষ হয়ে যায়নি এ সম্পর্ক। দশম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হবার পর দুজনে আবার একই কোচিং এ ভর্তি হলো। সেখানে কথা হতো না তাদের।
অবশ্য এ কোচিং এ তারা বেশিদিন পড়েনি। কিছুদিন পরই একে একে দুজনেই গিয়ে ভর্তি হলো অন্য একটা কোচিং এ। এবার আরো ভালো। এ কোচিং এ ছাত্র-ছাত্রী কম। কিন্তু এবার স্বপ্ন প্রথম দিনেই স্বপ্নাকে বলল, তোর কন্টাক্ট নাম্বারটা দে তো।
স্বপ্না বলল, আমিও ভাবতেছি আজ আগে গিয়ে তোর কন্টাক্ট নাম্বার চাইব। কত দিন কথা হয়নি বল!
স্বপ্ন এবার বুঝিল, শুধু সে ই স্বপ্নাকে ভাবে না স্বপ্নাও তাকে ভাবে। আবার খটকা লাগল, আমাকে ভাবে তো আমার সাথে দেখা হলেও কোনদিন কথা বলতে আসে না তো। তখনই মনে হলো, আজ থেকে যতবারই দুজন দুজনের থেকে দূরে গিয়ে আবার কাছে এসেছে ততবারই স্বপ্নাই আগে কথা বলেছে।
স্বপ্ন বলল, বাহ আমার কথা তোর মনে ছিল।
স্বপ্না:বাহ রে তুই ভুলে যেতে বলছিস?
স্বপ্ন:আরে তা কেন বলব। আমি ভাবলাম আমিই শুধু তোকে ভাবি।
স্বপ্না:তোর চেয়ে বেশি আমার মনে পড়ে তোর কথা। কত দিনের সম্পর্ক বল! এত তাড়াতাড়ি কি শেষ হয়ে যায়?
স্বপ্ন:তা তুই ঠিকই বলেছিস। আট- নয় বছরের সম্পর্ক। কখনো দ্বিমত হয়নি দুজনের। আচ্ছা তোর কি ক্লাস টু- থ্রি’র কথা মনে পড়ে।
স্বপ্না হেসে বলল, মনে পড়বে না। স্বপ্নের মতো দিন কেটেছে তখন। সেসব কথা মনে করে করে আজ অবধি কত যে হেসেছি! কতবার মনে হয়েছে আবার যদি সেদিন ফিরে পেতাম!
স্বপ্ন:যে দুই বছর একসাথে ছিলাম তার অনেকটা সময় তুই নষ্ট করেছিস। কারণ তুই প্রথম দিকে বেশি কথা বলতিস না। তোকে কথা শেখাতেই অনেক দিন লেগেছে।
স্বপ্না আবার হাসিল। তবে তোর সাথে থেকে দুই বছরে আমিও অনেকটা বাচাল হয়ে গিয়েছিলাম।
স্বপ্ন:তখনই তো যত মজা হয়েছে।
স্বপ্না:সেই জন্যই আমার মনে হয় সেদিন যদি আবার ফিরে পেতাম, তবে ওইভাবে আর সময় নষ্ট করতাম না।
স্বপ্ন:ভেবে লাভ নেই। ঐ দিন আর ফিরে পাওয়া যাবে না।
এভাবে তাদের কথা হত প্রতিদিন। কোন ঝামেলা নেই, বিরোধ নেই দুজনের। লেখাপড়াও চলছে, আনন্দ ফুর্তিও চলছে সবমিলিয়ে ভালোই দিন কাটছে তাদের। কোচিং এ সামনাসামনি কথা হয়, ম্যাসেঞ্জারে চ্যাটিং হয়, আবার ফোনেও কথা হয় তাদের। তাদের বলতে শুধু তাদেরই নয়, সকল বন্ধু-বান্ধব মিলে ম্যাসেঞ্জারে আড্ডা হয়। তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলও অনেক বড়। সকলে সমানে আড্ডা চলে প্রতিদিন । সকলেই নিজেদের মধ্যে ফ্রি। খোলামেলা কথা চলে। ফ্রেন্ডদের মধ্যে যেরকম হয় আর কি! কিন্তু স্বপ্ন আর স্বপ্না নিজেদের মধ্যে আরো একটু বেশি খোলামেলা। নিজেদের সকল পার্সোনাল কথাও শেয়ার হয় তাদের মধ্যে। দুজনে গল্প করতে করতে মাঝে মধ্যে স্বপ্ন বলেও তোর বয়-ফ্রেন্ড কেমন আছে?
স্বপ্নাও উত্তর দেয় হ্যাঁ ভালোই আছে। তোর তো গার্ল-ফ্রেন্ড নাই। তাই আমার আর খবর নেওয়া লাগেনা। তুই কি কোনদিন প্রেম করতে পারবি না বল তো!
স্বপ্ন হয়তো একটু হেসে বলে আরে আমার প্রেম-টেম ওসব ভালো লাগেনা। তোরা ফ্রেন্ডরা আছিস, এই ভালো।
স্বপ্না:আসলেই কি তোর প্রেম করতে ভালো লাগেনা নাকি অন্য কোন কারন? বলতো।
স্বপ্ন আবার হেসে বলে আরে অন্য কারণ আবার কি? কাউকে এসব কথা বলতে সাহস হয়না। আমার প্রোপোসাল কি কেউ একসেপ্ট করবে বল! আমার কি প্রেম করার যোগ্যতা আছে?
স্বপ্না একটু ঢং করে বলে, তুই আমার ফ্রেন্ড, তোর যোগ্যতা নেই কে বলেছে হ্যাঁ!
স্বপ্ন:আরে বাদ দে, কি যোগ্যতা আছে আমার? বাপের টাকায় খাই। বাপের টাকা দিয়ে আমি গার্ল-ফ্রেন্ডকে গিফটও দিতে পারব না প্রেমও করতে পারব না। অসব কথা ছাড় তো। তোদের মতো ফ্রেন্ড আছে এই যথেষ্ট।
স্বপ্না:এসব কথা বললেই তুই শুধু বলিস বাদ দে। আচ্ছা তুই কি ছেলে মানুষ নয় নাকি!
স্বপ্ন:ছেলেমানুষ হলেই প্রেম করতে হবে তোকে কে বলেছে?
স্বপ্না:আজকাল সব ছেলেই তো প্রেম করে, তাই বললাম।
স্বপ্ন:সব ছেলেই যে প্রেম করে তোকে কে বলেছে? আর সব ছেলে প্রেম করল আমি নাহয় না-ই করলাম। আমি সবার থাকে ব্যতিক্রম। এটা আমার ভালো লাগে।
স্বপ্না:বুঝছি। তোর সাথে তো কথায় পারা যাবে না।
স্বপ্ন:সবই বুঝিস আবার বলিস কেন? পাগলি।
এমন কথাবার্তাও হত তাদের মধ্যে মাঝে মাঝে। একদিন কোচিং এ এসে স্বপ্ন লক্ষ্য করল, স্বপ্না মন খারাপ করে বসে আছে। স্বপ্ন জিজ্ঞেস করল, কি রে ছাগল মন খারাপ কেন? স্বপ্না কিছু বলল না। বারবার বলার পর স্বপ্ন জানতে পারল স্বপ্নার রিলেশনশিপ ব্রেক-আপ হয়েছে। শুনিয়া স্বপ্ন, স্বপ্নাকে রাগাবার জন্য কিছুক্ষণ তার সামনে হাসল, স্বপ্না রেগে গিয়ে বলল, কুত্তা তোর খুব আনন্দ হচ্ছে না!
স্বপ্ন বলল হবেই তো তোকে আমি আগেই বলেছিলাম ঐ ছেলেটা ভালো নয়। তুই আমার কথা শুনিসনি এখন দেখ কেমন লাগে......... স্বপ্ন, স্বপ্নার সামনে গিয়ে জিহ্বা বের করে তাকে ব্যাঙ্গ করতে লাগল। সেদিন স্বপ্না বেশি কথা বলল না। বাড়িতে গিয়ে সেদিন স্বপ্নকে কল ও করল না। রাতে স্বপ্ন কল করে স্বপ্নাকে সান্ত্বনা দিতে লাগল। কোচিং এ যে ঠাট্টা সে করেছে তার জন্য স্বপ্নাকে ‘সরি’ও বলল। সে রাত কেটে গেল।
দুইদিন পর স্বপ্না স্বপ্নকে কল করে বলল, বন্ধু তুই ঠিকই বলেছিলি। প্রেম-টেম বাদ দিয়ে এখন আমিও খুব শান্তিতে আছি। এখন থেকে আমিও তোর মতো হয়ে যাব আর প্রেম করব না। এখন থেকে আমরা আরো বেশি মজা করব। স্বপ্নও মনে হয় কি রকম একটা আনন্দ উপভোগ করল। বলল, আচ্ছা তুই কাল কোচিং এ আয়।
পরদিন কোচিং এ তাদের দেখা হলো। কোচিং শেষে ফিরবার সময় স্বপ্ন বলল, তোকে একটা সত্য কথা বলব?
স্বপ্না স্বাভাবিকভাবেই বলল, আচ্ছা বল।
স্বপ্ন একটু নিজের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, না থাক।
স্বপ্না স্বপ্ন’র কাঁধে একটা খোঁচা দিয়ে বলল, আরে বল।
স্বপ্ন:না থাক। দরকার নেই।
স্বপ্না:আরে বল না! কোন সমস্যা নেই। তুই আর আমিই তো।
স্বপ্ন মাথা জাগিয়ে বলল তুই ভালো আছিস তো না!
স্বপ্না হেসে বলল তা আর বলতে! খুব ভালো আছি।
স্বপ্ন:ওকে ঠিক আছে। ভালো। আচ্ছা চল আজ যাই।
সেদিন তারা নিজ নিজ বাসায় চলে গেল। পরদিন আবার কোচিং শেষে গল্প করতে করতে স্বপ্ন বলল, তোকে একটা কথা বলি। মাইন্ড করিস না।
স্বপ্না স্বাভাবিকভাবে বলল, আরে তোর কথায় মাইন্ড করার কি আছে। তুই তো সবসময় আজেবাজে কথা বলিস।
স্বপ্ন:ভাবছি বলব নাকি বলব না।
আজ আর সুযোগ না দিয়ে স্বপ্না আগেই বলল, তুই কি জানিস, ছোটবেলা তুই আমার স্বপ্নে ছিলি।
স্বপ্ন অবাক হয়ে স্বপ্নার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, মানে কি?
স্বপ্না বলল, আরে হাঁদারাম, ছোটবেলায় তোকে আমার ভালো লাগত।
স্বপ্ন তেমন অবাক হয়েই বলল, এখন ভালো লাগে না?
আরে ছাগল, এটা অন্যরকম ভালোলাগা। যেরকমটা আমার বয়-ফ্রেন্ডের সাথে ছিল।
স্বপ্ন এবার একটু লজ্জা পেয়েই আস্তে আস্তে বলল, অহ আচ্ছা। তা ভালো লাগত, তো কখনো বলতে ইচ্ছে হয়নি?
আরে তখন ছোট না! তখন কি অত বুঝতাম নাকি? শুধু ভালো লাগত তাই।
স্বপ্নার কথা শুনে স্বপ্ন একটু সাহস পেয়ে বলল, আমারও তোকে ভালো লাগত। কিন্তু, ঐ যে একদিন বললাম না এসব কথা কাউকে বলার সাহস আমার হয়না।
স্বপ্নার এবার মুখে হাত দিয়ে অনেকটা হেসে বলল, তার মানে তুই আগে থেকেই হাঁদারাম।
স্বপ্ন এবার একটু হেসে স্বপ্নার মাথায় খোঁচা দিয়ে বলল, আরে ধুর।
তারপর দুজন কিছুক্ষন চুপ করে থাকল, এরপর স্বপ্ন আবার বলল আচ্ছা এখন আমি যদি তোকে প্রেমের প্রপোজ করি, তুই কি করবি?
স্বপ্না:তোকে থাপ্পর মারব।
স্বপ্ন:আমাকে তুই থাপ্পড় মারতে পারবি?
স্বপ্না:হ্যাঁ হ্যাঁ খুব পারব। আমার আবার একটু দয়া-মায়া কম তুই তো জানিসই।
স্বপ্ন:হ! জানিই তো। তোর মার আর আদর সমান।
স্বপ্না:আচ্ছা এবার তোকে জোরে মারব, যা বললাম।
স্বপ্ন:তোর গায়ের সম্পূর্ণ জোর দিয়ে মারলেও আমার কিচ্ছু হবে না।
স্বপ্না:আচ্ছা দেখবনি।
সেদিন এরকম আরো অনেক কথা তাদের মধ্যে চলল। এভাবে তাদের কত দিন কেটেছে। কোন ঝগড়া নেই, ঝামেলা নেই, সিরিয়াস ব্যাপারে কথা কাটাকাটি পর্যন্ত নেই তাদের। সব কাজেই তারা একমত। এভাবে পড়াশোনার সাথে সাথে মিষ্টি মিস্টি দিন কাটে তাদের। স্বপ্নও স্বপ্নাকে ভালোবাসে আর স্বপ্নাও স্বপ্নকে ভালোবাসে কিন্তু কেউ কাউকে তাদের মনের কথাটা বলতে পারেনা। এজন্যই তাদের মধ্যে একটু দূরত্ব। এছাড়া তারা একই মানুষ। স্বপ্ন বারবারই কথাটা বলতে গিয়ে ফিরে এসেছে।
হঠাৎ স্বপ্ন একদিন লক্ষ্য করল, স্বপ্না তাকে ফেসবুকে আন-ফ্রেন্ড করে রেখেছে। এবং তার প্রোফাইলও লোক করা। দুদিন স্বপ্ন লক্ষ্য করল কিন্তু স্বপ্না তাকে আবার এড রিকুয়েস্ট পাঠাল না। পরে ফোন করে স্বপ্ন জানল স্বপ্নার একটা ঝামেলা হয়েছে। সেদিন বহুক্ষন তাদের কথা হলো কিন্তু স্বপ্না তাকে আর এড রিকুয়েস্ট পাঠাল না।
কিন্তু তাতেও তাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়নি। এখনও তাদের যোগাযোগ হয়। সেদিন কথা বলার সময় স্বপ্ন বলল, আমাদের সম্পর্কটা রেললাইনের মতো। সবসময় পাশাপাশি আছি আর থাকব হয়তো চিরদিনই কিন্তু কখনো আমাদের মিলন হবেনা।
হয়তো চিরদিন এরকমই রয়ে যাবে তাদের সম্পর্ক। কেউ কাউকে ছাড়া থাকতেও পারবে না আবার কেউ কাউকে তাদের মনের কথাটা বলতেও পারবে না।
এখন ২০২১ সাল। কিন্তু নয় বছর আগে একবার ফিরে যাই। যখন স্বপ্ন আর সপ্না দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। ২০১২ সাল। স্বপ্ন ১ম ও ২য় শ্রেণীতে একটি স্কুলে পড়ার পর আরেকটি স্কুলে গিয়ে আবার ২য় শ্রেণিতে ভর্তি হয়। ভর্তি হয়ে ঐ দিন আর ক্লাস না করে স্বপ্ন চলে আসে। পরেরদিন স্বপ্ন ক্লাসে গিয়েছিল। একদিনে তার দু-একটা বন্ধুও হয়ে গিয়েছিল। কারণ সকলেই নতুন। সকলেই বন্ধু খুঁজছিল। পরেরদিন অর্থাৎ স্বপ্ন’র নতুন স্কুলে প্রথম ক্লাসের দিন, স্বপ্ন ক্লাসে ছিল এমন সময় এক নতুন মেয়ে আসল। ক্লাসের স্যার পরিচয় করে দিয়েছিলেন, মেয়েটি তাদের স্কুলে আজই ভর্তি হয়েছে। অর্থাৎ সেও আজ থেকে তাদের নতুন বন্ধু। ওর নাম সপ্না। পরিচয় করিয়ে দিবার সময় স্যার মজা করে বলেছিলেন “স্বপ্ন, তোমাদের দুজনের নামের কিন্তু মিল রয়েছে”। এভাবেই ওদের পরিচয় হয়েছিল।
ক্লাসে স্বপ্ন আর স্বপ্নার ভালো বন্ধুত্ব হয়েছিল ঐ দিন থেকেই। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের বন্ধুত্ব খুব ঘনিষ্ঠ হয়েছিল। স্বপ্না খুবই শান্তশিষ্ট আর স্থির প্রকৃতির মেয়ে ছিল। কথা কমই বলত। অপরদিকে স্বপ্ন চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে ছিল। সবসময় কথা বলত। ক্লাসের অন্যান্য ছাত্র ছাত্রীদের সাথেও তার খুব ভাব জমেছিল খুব অল্প দিনের মধ্যেই। স্বপ্ন ও স্বপ্না দুজনেই পড়াশোনায় ভালো ছিল। স্কুলের স্যাররাও তাদের খুব ভালোবাসত। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তে তখন তারা ছোট ছেলে-মেয়ে। আর ঐ বয়সে ছেলে-মেয়ে ভেদাভেদ ছিল না। ছেলে, মেয়ে সকলে একই রুমে ক্লাস করত। এমনকি ছেলে-মেয়ে একই বেঞ্চেও বসা চলত। টিফিন পিরিয়ডে স্বপ্ন ও স্বপ্না একই সাথে থাকত। স্কুল মাঠে সকল ছাত্র ছাত্রী মিলে ছুটোছুটি করে খেলত। এক বছর এখনো হয়নি। অর্থাৎ তারা এখনো তৃতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়নি। স্বপ্না এখন কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। আগে কথা কম বলত, বেশি ছুটোছুটি করত না। এখন স্বপ্না আগের চেয়ে বেশি কথা বলে আর একটু চঞ্চল প্রকৃতিরও হয়েছে বটে। এভাবে এক বছর কেটে গেছে। দ্বিতীয় শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষায় স্বপ্ন ১ম হয়েছিল আর স্বপ্না হয়েছিল ২য়। প্রত্যেকেই খুশি। ঐ এক বছরে তাদের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছিল। স্কুলে স্যাররাও সেটা খেয়াল করতেন। তারা খুশিই হতেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন সম্পর্ক থাকা ভালো। তাদের মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ ছিল বটে। কিন্তু তাই বলে ক্লাসের অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে তাদের যে সম্পর্ক ছিলনা তা কিন্তু নয়। ক্লাসে তখন সকলেরই পরস্পরের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। এখানে তাদের সম্পর্ক তখন তাই বিশেষ ভাবে কারো নজরে পড়ার মতো ছিল না। তখন তারা প্রত্যেকেই ছোট। আর এই সময় সকলেরই এরকম সম্পর্ক স্বাভাবিকভাবেই থাকে। সারাদিন ছুটোছুটি, খেলাধুলা করেও তারা পড়াশোনায় ভালো ছিল। এরকমভাবে আরও একবছর কেটে গেল। তাদের তৃতীয় শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষাও হলো। সেবারও স্বপ্ন হয়েছিল ১ম আর স্বপ্না হয়েছিল ২য়। কিন্তু ফলাফল প্রকাশের দিন স্বপ্ন স্কুলে গিয়ে দেখেছিল স্বপ্না আসেনি। স্বপ্ন নিজের পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে খুব খুশি ছিল। তবুও স্বপ্নাকে একটু মিস করেছিল। কিন্তু তখন এত কিছু বুঝত না তারা তাই খুব একটা খারাপ লাগেনি স্বপ্ন’র। কিন্তু চতুর্থ শ্রেণীর ক্লাস শুরু হওয়ার পর সপ্তাহ খানিক পার হলেও যখন স্বপ্না ক্লাসে এসেছিল না তখন স্বপ্ন’র বারবার মনে হয়েছিল স্বপ্নার কথা। একদিন ক্লাসে এসে স্যার জানিয়েছিলেন, স্বপ্না আর ক্লাসে আসবে না। তখন স্বপ্ন’র একটু খারাপ লেগেছিল। কিন্তু তার মাত্রাটা খুব বেশি প্রবল হয়নি। ক্লাসে স্বপ্ন’র আরো অনেক বন্ধু ছিল। তারপরও স্বপ্ন স্বপ্নাকে একটু মিস করত। কিন্তু তারপর ঐ স্কুলে তাদের আর কোনদিন দেখা হয়নি। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর অর্থাৎ স্বপ্না চলে যাওয়ার এক বছর পর স্বপ্নও ঐ স্কুল ছেড়ে অন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু এখানেই কি এই সম্পর্কের শেষ? না। তাহলে, এ সম্পর্কের শেষ কোথায়?
২০১৯ সাল। স্বপ্ন নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। বিঙ্গান বিভাগে ভর্তি হয়েছে। তখন স্বপ্না’র কথা তার আর খুব বেশি মনে পড়েনা। প্রায় পাঁচটা বছর কেটে গেছে দুজনের দেখা হয়নি, কথা হয়নি।
স্বপ্ন তখন বাজারে একটা স্যারের কাছে ম্যাথ কোচিং শুরু করেছে। তাদের স্কুলেরই স্যার। সেখানে আশেপাশের আরো তিন-চার স্কুলের ছাত্রছাত্রী পড়ে। সেখানে এসে স্বপ্ন’র আরো বন্ধু-বান্ধব জুটেছে। এখন স্বপ্নার কথা খুব একটা মনে পড়েনা তার। পাঁচ বছর পার হইয়ে গেল দেখা হয়নি। দেখা হলে হয়তো সে চিনতে পারবে।
একদিন কোচিং এ গিয়ে ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে। স্বপ্ন পিছনের বেঞ্চে বসে আছে। হঠাৎ তারা সকলেই চমকে উঠল একটা সালাম শুনে। একটা মেয়ের কণ্ঠ। দরজার দিকে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখল তার পরিচিত মেয়েটা। সাথে সাথে তার মনে হল কিন্ডার গার্টেন স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির কথা। সেদিনও ঠিক এভাবেই এসেছিল স্বপ্না। কোচিং এর গেটে তাকে দেখেই স্বপ্ন’র বুকের মধ্যে কেমন জানি করে উঠল। তবে সেদিন স্যার, ঐ কিন্ডার গার্টেন স্কুলের স্যারের মতো শেষে আসা মেয়েটিকে সকলের সাথে পরিচয় করে দিলেন না। অবশ্য তার দরকারও ছিলনা। সেদিন প্রথমার দেখেই সে স্বপ্নাকে চিনতে পেরেছিল। যাইহোক, সেদিনের মতো কোচিং শেষ হয়ে গেল। সকলেই বাড়িতে ফিরল। রুমের বাইরে এসে স্বপ্ন একবার স্বপ্নার সাথে কথা বলার চিন্তা করেছিল। আবার সাহস ও করেনি। এতদিনে স্বপ্না তাকে চিনতে পারবে কিনা! কে জানে। তারপর সে একটা মেয়ে তার সাথে নিজ থেকে কথা বলতে গেলে যদি সে কথা না বলে তাহলে আবার সমস্যা হবে। এরকম চিন্তা ভাবনা করে স্বপ্ন সেদিন আর স্বপ্নার সাথে কথা বলতে সাহস করেনি। সেদিন সকলের সাথে সেও বাড়িতে ফিরিয়া আসিল। বাড়িতে আসিয়া রাতে পড়তে বসে একপলকে তাহার কিন্ডার গার্টেন স্কুলের কথা মনে পড়িয়া গেল। সেদিন রাতে তার আর ভালোমতো পড়া হলোনা। পরদিন সকালে সে কোচিং এ গিয়ে দেখল স্বপ্না তার আগে এসেছে। সে শুধু দেখল সেদিনও কিছু বলতে পারল না। এভাবে প্রায় এক মা সময় কাটিল স্বপ্ন প্রতিদিনই স্বপ্নাকে দেখে কথা বলবে, ভাবে, আবার সাহসও করেনা। এরকমভাবে এক-দেড় মাস কাটিলে একদিন কোচিং শেষে কোচিং রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে স্বপ্ন তার বন্ধুর সাথে কথা বলতেছে। সেদিন কোচিং এ বেশি ছাত্র-ছাত্রী আসেনি। হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন জিজ্ঞেস করল, “কি রে কেমন আছিস?”
একটা মেয়ে কণ্ঠের আওয়াজ। স্বপ্ন পিছনে ফিরে দেখল সে আর অপরিচিত কেউ নয়। তার ছোটবেলার ফ্রেন্ড স্বপ্না। স্বপ্ন উত্তর দিল, “আমি ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?”
স্বপ্নাও উত্তর দিল, হ্যাঁ, আমিও ভালো আছি। আজকাল তুই যে কথাই বলিস না।
আমি কথা বলিনা? নাকি, তুই কথা বলিস না। আমি ঠিকই কথা বলতে চাই, তুই তো পাত্তাই দিস না। আমি মনে করলাম ভুলেই গেলি নাকি আমাকে!
বাহ রে একদিন কথাই বললি না আর আগেই ভেবে নিলি আমি তোকে ভুলে গেছি না!
আরে, কথা তো বলতেই চাই কিন্তু সাহস হয়না। তুই মেয়ে যে!
স্বপ্না একটু হেসে বলল, তুই কি মেয়ে নাকি যে আমার সাথে কথা বলতে ভয় লাগে। আর তাছাড়া আমার সাথে কথা বলতে তোর ভয় লাগে? তোর ছোটবেলার কথা মনে নেই?
আরে, ভয় না। মানে যখন তোকে ডাক দিব ভাবি, তখনই আবার মনে হয় তুই যদি চিনতে না পারিস? আর ছোটবেলার কথা সবই মনে আছে। তোকে এখানে দেখে আরো বেশি মনে পড়েছে।
তুই তো একদিন ডাক দিয়েই দেখলি না আগে ভেবে বসে থাকলি আমি তোকে চিনতে পারব না।
স্বপ্ন হেসে বলল, আচ্ছা ওসব কথা বাদ দে। চল এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে সামনে এগিয়ে যাই।
স্বপ্না জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাবি?
স্বপ্ন:আজ তো স্কুল ছুটি, বাড়িতে যাব। চল যেতে যেতে গল্প করি।
স্বপ্না:আমরা আমাদের বাজারের বাড়িতে থাকি। গ্রামের বাড়িতে আর থাকি না। ওদিকে যাব না। তুই তাহলে যা। কাল দেখা হবে।
স্বপ্ন:আচ্ছা কাল কোচিং এ আসিস কিন্তু!
আচ্ছা বলিয়া স্বপ্না তার বাসার দিকে এবং স্বপ্ন নিজের বাসার দিকে চলল। সেদিন বাসায় গিয়ে স্বপ্ন শুধু এসব কথাই ভেবেছে। এরপর থেকে প্রতিদিনই কোচিং এ এসে দুজনের মধ্যে কথা হত। আবার কিন্ডার গার্টেন স্কুলের মতো সম্পর্ক হয়ে গেল। না ঠিক হুবহু না। তখন একসাথে একই বেঞ্চে বসা চলত, কত ছুটোছুটি, চিৎকার, চেঁচামেচি সবই চলত। কিন্তু এখন এসবের কিছুই হয়না। এখন এসব শুধু মাঝে মাঝে কিছুক্ষণ গল্পের বিষয়। তারপরও দুজনেরই এখন কোচিং এ ভালোই সময় কাটছে আরো অনেক বন্ধু-বান্ধব তো আছেই। কিন্তু এভাবেও বেশি দিন চলল না। তিন-চার মাস পর স্বপ্না ঐ কোচিং ছেড়ে অন্য কোচিং এ ভর্তি হলো। তখন আবার তাদের কিছুদিন পূর্বের মতো অবস্থা হয়ে গেল। কারণ তখনো একে অপরের কন্টাক্ট নাম্বার জানেনা। আবার দুজন দুই স্কুলে পড়ত। তবে মাঝে মাঝে রাস্তা দিয়ে চলার সময় দেখা হতো, কথা হলেও সেরকমভাবে কথা বলার সুযোগ হয়নি। এভাবে তাদের নবম শ্রেণী পুরোটাই কেটে গেল। একে অপরের সাথে কথা বলা হয়নি।
কিন্তু তাতেও শেষ হয়ে যায়নি এ সম্পর্ক। দশম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হবার পর দুজনে আবার একই কোচিং এ ভর্তি হলো। সেখানে কথা হতো না তাদের।
অবশ্য এ কোচিং এ তারা বেশিদিন পড়েনি। কিছুদিন পরই একে একে দুজনেই গিয়ে ভর্তি হলো অন্য একটা কোচিং এ। এবার আরো ভালো। এ কোচিং এ ছাত্র-ছাত্রী কম। কিন্তু এবার স্বপ্ন প্রথম দিনেই স্বপ্নাকে বলল, তোর কন্টাক্ট নাম্বারটা দে তো।
স্বপ্না বলল, আমিও ভাবতেছি আজ আগে গিয়ে তোর কন্টাক্ট নাম্বার চাইব। কত দিন কথা হয়নি বল!
স্বপ্ন এবার বুঝিল, শুধু সে ই স্বপ্নাকে ভাবে না স্বপ্নাও তাকে ভাবে। আবার খটকা লাগল, আমাকে ভাবে তো আমার সাথে দেখা হলেও কোনদিন কথা বলতে আসে না তো। তখনই মনে হলো, আজ থেকে যতবারই দুজন দুজনের থেকে দূরে গিয়ে আবার কাছে এসেছে ততবারই স্বপ্নাই আগে কথা বলেছে।
স্বপ্ন বলল, বাহ আমার কথা তোর মনে ছিল।
স্বপ্না:বাহ রে তুই ভুলে যেতে বলছিস?
স্বপ্ন:আরে তা কেন বলব। আমি ভাবলাম আমিই শুধু তোকে ভাবি।
স্বপ্না:তোর চেয়ে বেশি আমার মনে পড়ে তোর কথা। কত দিনের সম্পর্ক বল! এত তাড়াতাড়ি কি শেষ হয়ে যায়?
স্বপ্ন:তা তুই ঠিকই বলেছিস। আট- নয় বছরের সম্পর্ক। কখনো দ্বিমত হয়নি দুজনের। আচ্ছা তোর কি ক্লাস টু- থ্রি’র কথা মনে পড়ে।
স্বপ্না হেসে বলল, মনে পড়বে না। স্বপ্নের মতো দিন কেটেছে তখন। সেসব কথা মনে করে করে আজ অবধি কত যে হেসেছি! কতবার মনে হয়েছে আবার যদি সেদিন ফিরে পেতাম!
স্বপ্ন:যে দুই বছর একসাথে ছিলাম তার অনেকটা সময় তুই নষ্ট করেছিস। কারণ তুই প্রথম দিকে বেশি কথা বলতিস না। তোকে কথা শেখাতেই অনেক দিন লেগেছে।
স্বপ্না আবার হাসিল। তবে তোর সাথে থেকে দুই বছরে আমিও অনেকটা বাচাল হয়ে গিয়েছিলাম।
স্বপ্ন:তখনই তো যত মজা হয়েছে।
স্বপ্না:সেই জন্যই আমার মনে হয় সেদিন যদি আবার ফিরে পেতাম, তবে ওইভাবে আর সময় নষ্ট করতাম না।
স্বপ্ন:ভেবে লাভ নেই। ঐ দিন আর ফিরে পাওয়া যাবে না।
এভাবে তাদের কথা হত প্রতিদিন। কোন ঝামেলা নেই, বিরোধ নেই দুজনের। লেখাপড়াও চলছে, আনন্দ ফুর্তিও চলছে সবমিলিয়ে ভালোই দিন কাটছে তাদের। কোচিং এ সামনাসামনি কথা হয়, ম্যাসেঞ্জারে চ্যাটিং হয়, আবার ফোনেও কথা হয় তাদের। তাদের বলতে শুধু তাদেরই নয়, সকল বন্ধু-বান্ধব মিলে ম্যাসেঞ্জারে আড্ডা হয়। তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলও অনেক বড়। সকলে সমানে আড্ডা চলে প্রতিদিন । সকলেই নিজেদের মধ্যে ফ্রি। খোলামেলা কথা চলে। ফ্রেন্ডদের মধ্যে যেরকম হয় আর কি! কিন্তু স্বপ্ন আর স্বপ্না নিজেদের মধ্যে আরো একটু বেশি খোলামেলা। নিজেদের সকল পার্সোনাল কথাও শেয়ার হয় তাদের মধ্যে। দুজনে গল্প করতে করতে মাঝে মধ্যে স্বপ্ন বলেও তোর বয়-ফ্রেন্ড কেমন আছে?
স্বপ্নাও উত্তর দেয় হ্যাঁ ভালোই আছে। তোর তো গার্ল-ফ্রেন্ড নাই। তাই আমার আর খবর নেওয়া লাগেনা। তুই কি কোনদিন প্রেম করতে পারবি না বল তো!
স্বপ্ন হয়তো একটু হেসে বলে আরে আমার প্রেম-টেম ওসব ভালো লাগেনা। তোরা ফ্রেন্ডরা আছিস, এই ভালো।
স্বপ্না:আসলেই কি তোর প্রেম করতে ভালো লাগেনা নাকি অন্য কোন কারন? বলতো।
স্বপ্ন আবার হেসে বলে আরে অন্য কারণ আবার কি? কাউকে এসব কথা বলতে সাহস হয়না। আমার প্রোপোসাল কি কেউ একসেপ্ট করবে বল! আমার কি প্রেম করার যোগ্যতা আছে?
স্বপ্না একটু ঢং করে বলে, তুই আমার ফ্রেন্ড, তোর যোগ্যতা নেই কে বলেছে হ্যাঁ!
স্বপ্ন:আরে বাদ দে, কি যোগ্যতা আছে আমার? বাপের টাকায় খাই। বাপের টাকা দিয়ে আমি গার্ল-ফ্রেন্ডকে গিফটও দিতে পারব না প্রেমও করতে পারব না। অসব কথা ছাড় তো। তোদের মতো ফ্রেন্ড আছে এই যথেষ্ট।
স্বপ্না:এসব কথা বললেই তুই শুধু বলিস বাদ দে। আচ্ছা তুই কি ছেলে মানুষ নয় নাকি!
স্বপ্ন:ছেলেমানুষ হলেই প্রেম করতে হবে তোকে কে বলেছে?
স্বপ্না:আজকাল সব ছেলেই তো প্রেম করে, তাই বললাম।
স্বপ্ন:সব ছেলেই যে প্রেম করে তোকে কে বলেছে? আর সব ছেলে প্রেম করল আমি নাহয় না-ই করলাম। আমি সবার থাকে ব্যতিক্রম। এটা আমার ভালো লাগে।
স্বপ্না:বুঝছি। তোর সাথে তো কথায় পারা যাবে না।
স্বপ্ন:সবই বুঝিস আবার বলিস কেন? পাগলি।
এমন কথাবার্তাও হত তাদের মধ্যে মাঝে মাঝে। একদিন কোচিং এ এসে স্বপ্ন লক্ষ্য করল, স্বপ্না মন খারাপ করে বসে আছে। স্বপ্ন জিজ্ঞেস করল, কি রে ছাগল মন খারাপ কেন? স্বপ্না কিছু বলল না। বারবার বলার পর স্বপ্ন জানতে পারল স্বপ্নার রিলেশনশিপ ব্রেক-আপ হয়েছে। শুনিয়া স্বপ্ন, স্বপ্নাকে রাগাবার জন্য কিছুক্ষণ তার সামনে হাসল, স্বপ্না রেগে গিয়ে বলল, কুত্তা তোর খুব আনন্দ হচ্ছে না!
স্বপ্ন বলল হবেই তো তোকে আমি আগেই বলেছিলাম ঐ ছেলেটা ভালো নয়। তুই আমার কথা শুনিসনি এখন দেখ কেমন লাগে......... স্বপ্ন, স্বপ্নার সামনে গিয়ে জিহ্বা বের করে তাকে ব্যাঙ্গ করতে লাগল। সেদিন স্বপ্না বেশি কথা বলল না। বাড়িতে গিয়ে সেদিন স্বপ্নকে কল ও করল না। রাতে স্বপ্ন কল করে স্বপ্নাকে সান্ত্বনা দিতে লাগল। কোচিং এ যে ঠাট্টা সে করেছে তার জন্য স্বপ্নাকে ‘সরি’ও বলল। সে রাত কেটে গেল।
দুইদিন পর স্বপ্না স্বপ্নকে কল করে বলল, বন্ধু তুই ঠিকই বলেছিলি। প্রেম-টেম বাদ দিয়ে এখন আমিও খুব শান্তিতে আছি। এখন থেকে আমিও তোর মতো হয়ে যাব আর প্রেম করব না। এখন থেকে আমরা আরো বেশি মজা করব। স্বপ্নও মনে হয় কি রকম একটা আনন্দ উপভোগ করল। বলল, আচ্ছা তুই কাল কোচিং এ আয়।
পরদিন কোচিং এ তাদের দেখা হলো। কোচিং শেষে ফিরবার সময় স্বপ্ন বলল, তোকে একটা সত্য কথা বলব?
স্বপ্না স্বাভাবিকভাবেই বলল, আচ্ছা বল।
স্বপ্ন একটু নিজের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, না থাক।
স্বপ্না স্বপ্ন’র কাঁধে একটা খোঁচা দিয়ে বলল, আরে বল।
স্বপ্ন:না থাক। দরকার নেই।
স্বপ্না:আরে বল না! কোন সমস্যা নেই। তুই আর আমিই তো।
স্বপ্ন মাথা জাগিয়ে বলল তুই ভালো আছিস তো না!
স্বপ্না হেসে বলল তা আর বলতে! খুব ভালো আছি।
স্বপ্ন:ওকে ঠিক আছে। ভালো। আচ্ছা চল আজ যাই।
সেদিন তারা নিজ নিজ বাসায় চলে গেল। পরদিন আবার কোচিং শেষে গল্প করতে করতে স্বপ্ন বলল, তোকে একটা কথা বলি। মাইন্ড করিস না।
স্বপ্না স্বাভাবিকভাবে বলল, আরে তোর কথায় মাইন্ড করার কি আছে। তুই তো সবসময় আজেবাজে কথা বলিস।
স্বপ্ন:ভাবছি বলব নাকি বলব না।
আজ আর সুযোগ না দিয়ে স্বপ্না আগেই বলল, তুই কি জানিস, ছোটবেলা তুই আমার স্বপ্নে ছিলি।
স্বপ্ন অবাক হয়ে স্বপ্নার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, মানে কি?
স্বপ্না বলল, আরে হাঁদারাম, ছোটবেলায় তোকে আমার ভালো লাগত।
স্বপ্ন তেমন অবাক হয়েই বলল, এখন ভালো লাগে না?
আরে ছাগল, এটা অন্যরকম ভালোলাগা। যেরকমটা আমার বয়-ফ্রেন্ডের সাথে ছিল।
স্বপ্ন এবার একটু লজ্জা পেয়েই আস্তে আস্তে বলল, অহ আচ্ছা। তা ভালো লাগত, তো কখনো বলতে ইচ্ছে হয়নি?
আরে তখন ছোট না! তখন কি অত বুঝতাম নাকি? শুধু ভালো লাগত তাই।
স্বপ্নার কথা শুনে স্বপ্ন একটু সাহস পেয়ে বলল, আমারও তোকে ভালো লাগত। কিন্তু, ঐ যে একদিন বললাম না এসব কথা কাউকে বলার সাহস আমার হয়না।
স্বপ্নার এবার মুখে হাত দিয়ে অনেকটা হেসে বলল, তার মানে তুই আগে থেকেই হাঁদারাম।
স্বপ্ন এবার একটু হেসে স্বপ্নার মাথায় খোঁচা দিয়ে বলল, আরে ধুর।
তারপর দুজন কিছুক্ষন চুপ করে থাকল, এরপর স্বপ্ন আবার বলল আচ্ছা এখন আমি যদি তোকে প্রেমের প্রপোজ করি, তুই কি করবি?
স্বপ্না:তোকে থাপ্পর মারব।
স্বপ্ন:আমাকে তুই থাপ্পড় মারতে পারবি?
স্বপ্না:হ্যাঁ হ্যাঁ খুব পারব। আমার আবার একটু দয়া-মায়া কম তুই তো জানিসই।
স্বপ্ন:হ! জানিই তো। তোর মার আর আদর সমান।
স্বপ্না:আচ্ছা এবার তোকে জোরে মারব, যা বললাম।
স্বপ্ন:তোর গায়ের সম্পূর্ণ জোর দিয়ে মারলেও আমার কিচ্ছু হবে না।
স্বপ্না:আচ্ছা দেখবনি।
সেদিন এরকম আরো অনেক কথা তাদের মধ্যে চলল। এভাবে তাদের কত দিন কেটেছে। কোন ঝগড়া নেই, ঝামেলা নেই, সিরিয়াস ব্যাপারে কথা কাটাকাটি পর্যন্ত নেই তাদের। সব কাজেই তারা একমত। এভাবে পড়াশোনার সাথে সাথে মিষ্টি মিস্টি দিন কাটে তাদের। স্বপ্নও স্বপ্নাকে ভালোবাসে আর স্বপ্নাও স্বপ্নকে ভালোবাসে কিন্তু কেউ কাউকে তাদের মনের কথাটা বলতে পারেনা। এজন্যই তাদের মধ্যে একটু দূরত্ব। এছাড়া তারা একই মানুষ। স্বপ্ন বারবারই কথাটা বলতে গিয়ে ফিরে এসেছে।
হঠাৎ স্বপ্ন একদিন লক্ষ্য করল, স্বপ্না তাকে ফেসবুকে আন-ফ্রেন্ড করে রেখেছে। এবং তার প্রোফাইলও লোক করা। দুদিন স্বপ্ন লক্ষ্য করল কিন্তু স্বপ্না তাকে আবার এড রিকুয়েস্ট পাঠাল না। পরে ফোন করে স্বপ্ন জানল স্বপ্নার একটা ঝামেলা হয়েছে। সেদিন বহুক্ষন তাদের কথা হলো কিন্তু স্বপ্না তাকে আর এড রিকুয়েস্ট পাঠাল না।
কিন্তু তাতেও তাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়নি। এখনও তাদের যোগাযোগ হয়। সেদিন কথা বলার সময় স্বপ্ন বলল, আমাদের সম্পর্কটা রেললাইনের মতো। সবসময় পাশাপাশি আছি আর থাকব হয়তো চিরদিনই কিন্তু কখনো আমাদের মিলন হবেনা।
হয়তো চিরদিন এরকমই রয়ে যাবে তাদের সম্পর্ক। কেউ কাউকে ছাড়া থাকতেও পারবে না আবার কেউ কাউকে তাদের মনের কথাটা বলতেও পারবে না।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
লেখক : মেহেদী হাসান রনি ১৭/০৮/২০২১ভালো হয়েছে খুব
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১৬/০৮/২০২১প্রেম-কাহিনী।