www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আর্তনাদ

আর্তনাদ
দাদুভাই যে মারা গেছে, দেখতে ওরা দেবেনা, বোন
এমনি প্রতিদিন মরছে কত, কাঁদছে কতজন!
সেই ছোটটি ছিনু, বুঝিতাম না কিছু ভালো করে
দাদু যে আমায় কত ভালবাসিত, আজও মনে পরে।
সকাল হতেই ফিরিতাম তাহার পিছন পিছন
গরুর পিঠে চড়িতাম মাঠে যাইত যখন।
মাঠে কাজ করিত দাদু, সেই ভোর হতে
খাবার লইয়া ছুটিতাম একটু বেলা উঠিতে ।
সেই ভাতের বাটি খুলিত দাদু, আমায় পাশে নিয়ে
একই পাত হতে খাইতাম খাবার, মিলেমিশে দুই ভাইয়ে।
হাটে যাইবার সময় পিছু ধরিতাম নতুন জামা পড়ে
বাধ্য হয়ে নিত সাথে, জিদ সইতে না পেরে।
পাশের পাড়ায় মেলা বসিয়াছে, কত না আয়োজন!
তখনও বায়না ধরিতাম খেলনা কিনিবার প্রয়োজন।
এমনি করিয়া কত খেলনা কিনিয়াছি, কত জিদ করে
কত না আনন্দ ছিল জীবনের সে প্রহরে !
বাবা সেদিন ক’টি টাকা দিয়েছিল, স্কুল যাবার পথে
ফিরিবার সময় একটি পান আনিয়াছিলাম পাড়ার দোকান হতে।
সেই পান পেয়ে কি যে খুশি হয়েছিল দাদু, দেখেছিলাম চাহিয়া
আমায় কোলে নিয়ে কেঁদেছিল দাদু, দুই ফোটা অশ্রু ঝরাইয়া।
আজি সেই ভালোবাসার দেবতার হয়েছে জীবনাবসান
ষোল বছরের ভালোবাসার বিন্দুমাত্র দিতে পারিনি প্রতিদান।
বুক ফেটে যায়, চোখের জল যায় শুকিয়ে
বিশ্বাস হয়না, সেই মানুষটাও গেছে হারিয়ে।
এত ভালোবাসা হয়তো তুই পাসনি, আমার মতন করে
আর পাবিই বা কেমনে? তুই তো হয়েছিসই আমার পরে।

বাবা যে সেদিন অফিসে গেল, আসেনাই আর ফিরিয়া
তিনদিন হলো এমন স্নেহে নেয়নি কেউ কোলে তুলিয়া।
সারাদিন বাহিরে থাকিত বাবা, রাতে বাড়ি ফিরিত
ছড়ার বই কিনিয়া দিয়েছিল, তাই নিয়ে পড়াইত।
পড়িতে আমি চাহিতাম না, বড়ই দুষ্ট ছিলাম
একটু বকা দিলে বাবা, আপনিই কাঁদিয়া ফেলিতাম।
সেই কান্না থামাতে কত আদর যে করিত!
আজও মনে পড়িলে লজ্জা করে, সত্য।
আরো একটু বড় হলে, প্রয়োজন পড়ে কত!
চলার খরচ, পড়ার খরচ বাবা সবই মিটাইত।
এত বড় হয়েছি, এক পয়সা কখনো করিনি আয়
অথচ প্রতিদিন কত দিকে, কত করেছি ব্যয়।
বাবার ঘরে বসে বসে কতদিন করেছি পার
ভাবিনি কখনো কত কঠিন এই সংসার।
ভাবিনি কখনো, কেমনে বাবা এত করিত নিয়ন্ত্রণ
পরিবারের এত সদস্যের নিত্যি এত প্রয়োজন।
এমনি একজন মানুষ হারিয়ে গেছে মৃত্যুর তলে
বাড়িতে তাকে আসতে দেয়নি পাড়ার লোক মিলে।
শেষ দেখা দেখতে পাইনি, দিতে পারিনি কবর
ছোট জীবনে, এই ছোট হাতে কত মৃতদেহে দিয়েছি চাদর।
কাঁদছিস বোন, বড্ড কষ্ট হচ্ছে বুঝি ?
হবারই কথা, আমার মতো এত আদর তুই এখনো পাসনি কিছুই।
কাঁদতে যে পারিনা,চোখে জল শুকাইছে রাতারাতি
রাজা কেমনে হব? আমার হারাইছে সেনাপতি।
বড় হয়ে তুই দোয়া করিস বোন, নামাজ আদায় করে
খোদা যেন বেহেশত নসিব করে, আমাদের বাবার তরে।

বাবা নাহয় বাইরে গিয়েছিল, স্বান্তনা দিয়েছে লোকদলে
মা তো আমার ঘরেই ছিল, পর্দার আড়ালে।
কি-বা বুঝিব নিজে, আর কি স্বান্তনা দিব তোরে
আয় বোন চিৎকার করে কাঁদি, গলাগলি ধরে।
সারাদিন কত বিদ্রূপ করিতাম মা’রে, হিসেব নেই তার
কখনো তার কঠোর হাতের আঘাত লাগেনি গায়ে আমার।
জন্মের পর প্রথম বসিয়াছিলাম তাহার কোলে
সেই অধিকার আজ মিশিয়া গেছে ধুলিতলে।
সেই ছোটটি ছিলুম বুঝিতাম না কিছুই তখন
প্রথম বুঝেছিলাম, মা বুঝিয়েছিল যখন।
তাহার কমল হাত ধরিয়া হয়েছিল আমার হাতেখড়ি
জীবনে এত শিক্ষক আসিয়াছে,আসেনি কেউ তার মতো করি।
জীবনে যা কিছু শিখিয়াছি, প্রথম তার অবদান
তারেও আজ হারাইছি, দিতে পারিনি বিন্দুমাত্র প্রতিদান।
কত কষ্ট দিয়েছি তারে, আজ মনে পড়ে
কখনো তো ফেলে দেয়নি আমায়, রাগ করে।
কাঁদ বোন, আজ কাঁদ উচ্চস্বরে
এমন ভাষা জানা নেই আমার, স্বান্তনা দিব তোরে।
নিজেরই বুক ফেটে যায়, ইচ্ছে করে গিয়ে জরায়ে ধরি
তাহার উপায় নাই, গাঁয়ের লোক তার লাশটারেও দিয়েছে তাড়ি।
বাবা তবু মরেছিল গাঁয়ের বাইরে গিয়ে
মা তো মরেছে ঘরে, তবু লোকে কবর দেয়নি বাশতলায় নিয়ে।
বড় হয়ে তুই দোয়া করিস বোন, নামাজ আদায় করে
খোদা যেন মায়ের দেখা দেয় আমাদের, গিয়ে ওপারে।

ভাইয়া যে শহরে ছিল, আসতে পারেনি, কি যেন কাজ ছিল বলে
তাই বলে কখনো যে ফিরিবেনা, ভাবিনি কোন কালে।
সকল আবদার পূরণ করিত সে সর্বদাই হাসিমুখে
ছেলেবেলার খেলার সাথী ছিল সে, সুখ কিংবা দুঃখে।
স্কুলে রাখিয়া আসিত, হাত ধরে রাস্তা পার করে
এমনি করিয়া জীবন কাটাতে চেয়েছিলাম ঐ হাত ধরে।
বলেছিল সে পাশে থাকবে, বাবার অবর্তমানে
সে ও হঠাৎ চলে গেছে পথের মাঝখানে।
প্রতিবারই বাড়ি ফিরিত ছ’মাস হলে পার
হঠাৎ কাল শুনলাম, ফিরবেনা কখনো সে আর।
না জানি, তার লাশ পড়ে আছে কোথায় কেমন
গাঁয়ের লোক তারেও দেখতে দেয়নি শেষবারের মতন।
কাঁদিস না বোন, হয়তো এটাই জীবন
কে দেখিবে আমাদের কান্না? কাঁদিস না রে বোন।
শুধু দোয়া করিস খোদার ইবাদত করে
হারানো সকলরে পাই যেন, গিয়ে ওপারে।

তোর-আমার মতো আর্তদের আর্তনাদ দেখার সময় নেই কারো
আমাদের মতো শত বালক-বালিকা কাঁদছে বোধহয় আরো।
হে পৃথিবী, তুমি নিষ্পাপ শিশুর কান্নার জন্য দায়ী থাকবে
তুমি দায়ী থাকবে যতদিন এই শিশুরা কান্না নিয়ে বাঁচবে।
যতদিন এই আকাশ-বাতাস আছে ধরণী মাঝে
খেসারত দিরে হবে তোমাকে প্রতিটি প্রজন্মের কাছে।
জানি, এ বালকের আর্তনাদ শুনবে না কেউ কোনদিনই
আকাশে বাতাসে ভাসছে আজ এমন শত আর্তনাদের ধ্বনি।
এমন করুন স্বরে চিৎকার, ব্যাথা জ্বালাময়ী
দায়ী পৃথিবী, এর জন্য তুমিই দায়ী।
বিষয়শ্রেণী: কবিতা
ব্লগটি ৩৫৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৪/০৭/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ন্যান্সি দেওয়ান ১০/০৭/২০২১
    Sotti Darun
 
Quantcast