সড়ক
গত বছর বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ২১ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। বর্তমানে এর সংখ্যা আরো অনেক বেশি। দুর্ঘটনার মৃত্যুর ৩২ শতাংশ নিরীহ পথচারী। অথচ পাশের দেশ ভারতে পথচারীর এ মৃত্যুহার ৯ শতাংশ এবং ভুটানে এ মৃত্যুর হার ৩ শতাংশ। সড়ক দুর্ঘটনায় যাত্রী মৃত্যুহার ৪১ শতাংশ এবং চালক মৃত্যুর হার ২৭ শতাংশ, বাকিরা পথচারী। উন্নত দেশের তুলনায় অনুন্নত দেশে এ হার প্রায় দ্বিগুণ এবং বৈশ্বিক সড়ক দুর্ঘটনার মৃত্যুর ৯০ শতাংশ হয় অনুন্নত দেশে। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬৫ শতাংশ লোকই পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। যারা উপার্জনের জন্য রাস্তায় বের হয়। ফলে তার মৃত্যুতে সম্পূর্ণ পরিবারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বার্ষিক জিডিপির ১.৬ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বাংলাদেশে ৭০ শতাংশ সড়ক ব্যবহার করে মাত্র ৫ শতাংশ লোকের প্রাইভেট কার বা ব্যক্তিগত গাড়ি (তথ্য : The Daily Star-2110-2015) বাংলাদেশের সড়ক এখন একটি মৃত্যুর ফাঁদ। এ ফাঁদে পড়ে মৃত্যুবরণ করছে, নিরীহ মানুষের পাশাপাশি বিশিষ্ট শিল্পী, সাহিত্যিক, মন্ত্রী-এমপির ছেলেমেয়ে, রাষ্ট্রদূত, সাংবাদিক, জজ ও ব্যারিস্টারসহ প্রায় সব পেশার মানুষ তারপরও এ ফাঁদ দিন দিন আরো ভয়ঙ্কর হচ্ছে। আর কত বড় মাপের মানুষ বা আর কত নিরীহ মানুষের লাশ পড়লে আমরা এর থেকে পরিত্রাণ পাবো।
গত ১ জুন ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষার জন্য চার বন্ধু একত্রে রওনা দেই রাজধানীর জোয়ার সাহারায় BRTA ঢাকা বিআরটিএ অফিসে। আমার এক বন্ধু আগেই দালালের মাধ্যমে আমাদের চারজনের Learner (প্রশিক্ষণার্থী) কার্ড তৈরি করে রেখেছিল। প্রশিক্ষণার্থী কার্ডে বা লার্নার কার্ডে তিন ধরনের পরীক্ষা। দেখে ভয় লাগছিল। i) লিখিত পরীক্ষা ii) মৌখিক পরীক্ষা iii) ব্যবহারিক বা গাড়ি চালিয়ে দেখানোর পরীক্ষা। BRTA অফিসে ঢুকে আমাদের দালাল অফিসে কর্মরত (রূপক নাম- বাচ্চু) একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। বলল, আজকের তিনটি পরীক্ষাই সে দেখবে। ভেতরে ঢুকতেই দেখি প্রায় ৩০০ প্রশিক্ষণার্থী পরীক্ষার অপেক্ষায় আছে। তার মধ্যে ৮-৯ জন গাড়ি চালানোর রীতিনীতির ওপর ব্যাপক পড়াশোনা করছে। বাকিরা খোশগল্পে ব্যস্ত। আমি বাচ্চুকে জিজ্ঞেস করলাম, কিসের ওপর পড়ালেখা করব? বাচ্চু বলল, একটু পরেই প্রশ্ন জানিয়ে দিবো, পড়ার দরকার নেই। ২০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় বাচ্চু আগে যা জানিয়েছিল তাই এসেছে। ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার বিরতিতে অফিসের পাশে আমার এক ব্যবসায়ী বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেলে বন্ধু হাসতে হাসতে বলল, লাইসেন্স করাতে আবার পরীক্ষা দিতে আসতে হয়? আমি তো পাঁচ মাস আগে টাকার বিনিময়ে কোনো পরীক্ষা না দিয়েই সরাসরি BRTA অফিসে গিয়ে ছবি তুলে ও স্বাক্ষর দিয়ে লাইসেন্স নিয়েছি। বেলা ১টা ৩০ মিনিটে ফলাফল ঘোষণা হলো। কৃতকার্য নম্বর ১২ ছিল, সম্ভবত আমি ২০-এ ২০ পেয়েছি এবং আমার লার্নার কার্ডে W/T Pass লিখে দিলো। তবে আফসোস, ৮-৯ জন ব্যাপক পড়াশোনা করেছিল; তাদের মধ্যে তিনজন অকৃতকার্য হলো। অথচ যাদের গাড়ি চালানো সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জ্ঞান নেই তারাও কৃতকার্য হয়েছে। বুঝতে পারলাম, তারাও আমাদের মতো আগে প্রশ্ন পেয়ে গেছে। আর অকৃতকার্যরা হয়তো বা কোনো দালালের শরণাপন্ন হয়নি। বেলা ২টা ৪৫ মিনিট থেকে Viva শুরু। প্রায় ২৬০-২৭০ জনের বিশালাকৃতি লাইন কিন্তু Viva নিচ্ছে মাত্র একজন। আমি বাচ্চুকে বললাম, কোন দিকে দাঁড়াব, বাচ্চু বলল, লাইনে দাঁড়ানোর দরকার নেই। যেকোনো এক জায়গায় গিয়ে বসেন। ১৫-২০ মিনিট পর বাচ্চু প্রশিক্ষণার্থী কার্ডে O/T Pass লেখা কার্ডটি নিয়ে এলো। বাচ্চুকে বললাম, পরীক্ষা তো দেইনি, পাস করলাম কিভাবে? বাচ্চু হেসে দিলো। সর্বশেষ Practical পরীক্ষা দিতে হবে। আমি বাচ্চুর দিকে তাকাতেই বাচ্চু বলল, টেনশন করবেন না, বিকল্প ব্যবস্থা আছে। দেখলাম কিছুক্ষণ পর বাইরে থেকে দুটি প্রাইভেট কার ভেতরে এলো। তারা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে টাকা সংগ্রহের মহড়া চালাচ্ছে জনপ্রতি ৩০০-৪০০-৫০০ টাকা (তিন মিনিটের মতো সময় ড্রাইভ করিয়ে) নিচ্ছে। আমি বললাম, আমার দুই বন্ধু গাড়ি চালাতে একেবারে কাঁচা। বাচ্চু বলল, সমস্যা নেই ওনাদের চালাতে হবে না। পরে দেখলাম আমার প্রশিক্ষণার্থী কার্ডসহ বাকি চার বন্ধুর কার্ডে ML/|F/T & R/T PASS পাস লেখা।
আমরা Practical পরীক্ষাই দেইনি, অথচ যারা বাড়তি টাকা না দিয়ে ড্রাইভ করছে, তাদেরকে এ সমস্যা ওই সমস্যা বলে ধমকাচ্ছে। যখনই ২০০ টাকা হাতে দেয়, তখনই কার্ডে লিখে দিচ্ছে Pass । কিছুদিন পর BRTA অফিসে গিয়ে ছবি তুলে এবং স্বাক্ষর করে পরীক্ষা ছাড়াই পেয়ে গেলাম ড্রাইভিং লাইসেন্স। সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনা দেখাশোনার দায়িত্ব যে BRTA এর, তারাই এই মৃত্যুর ফাঁদকে শক্তিশালী করছে হত্যার লাইসেন্স (পরীক্ষা ছাড়াই ড্রাইভিং লাইসেন্স) দিয়ে। অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে তারা দিচ্ছে সড়কে নির্বিচারে মানুষ হত্যার লাইসেন্স।
- See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/153210#sthash.sdwhtNI9.dpuf
গত ১ জুন ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষার জন্য চার বন্ধু একত্রে রওনা দেই রাজধানীর জোয়ার সাহারায় BRTA ঢাকা বিআরটিএ অফিসে। আমার এক বন্ধু আগেই দালালের মাধ্যমে আমাদের চারজনের Learner (প্রশিক্ষণার্থী) কার্ড তৈরি করে রেখেছিল। প্রশিক্ষণার্থী কার্ডে বা লার্নার কার্ডে তিন ধরনের পরীক্ষা। দেখে ভয় লাগছিল। i) লিখিত পরীক্ষা ii) মৌখিক পরীক্ষা iii) ব্যবহারিক বা গাড়ি চালিয়ে দেখানোর পরীক্ষা। BRTA অফিসে ঢুকে আমাদের দালাল অফিসে কর্মরত (রূপক নাম- বাচ্চু) একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। বলল, আজকের তিনটি পরীক্ষাই সে দেখবে। ভেতরে ঢুকতেই দেখি প্রায় ৩০০ প্রশিক্ষণার্থী পরীক্ষার অপেক্ষায় আছে। তার মধ্যে ৮-৯ জন গাড়ি চালানোর রীতিনীতির ওপর ব্যাপক পড়াশোনা করছে। বাকিরা খোশগল্পে ব্যস্ত। আমি বাচ্চুকে জিজ্ঞেস করলাম, কিসের ওপর পড়ালেখা করব? বাচ্চু বলল, একটু পরেই প্রশ্ন জানিয়ে দিবো, পড়ার দরকার নেই। ২০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় বাচ্চু আগে যা জানিয়েছিল তাই এসেছে। ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার বিরতিতে অফিসের পাশে আমার এক ব্যবসায়ী বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেলে বন্ধু হাসতে হাসতে বলল, লাইসেন্স করাতে আবার পরীক্ষা দিতে আসতে হয়? আমি তো পাঁচ মাস আগে টাকার বিনিময়ে কোনো পরীক্ষা না দিয়েই সরাসরি BRTA অফিসে গিয়ে ছবি তুলে ও স্বাক্ষর দিয়ে লাইসেন্স নিয়েছি। বেলা ১টা ৩০ মিনিটে ফলাফল ঘোষণা হলো। কৃতকার্য নম্বর ১২ ছিল, সম্ভবত আমি ২০-এ ২০ পেয়েছি এবং আমার লার্নার কার্ডে W/T Pass লিখে দিলো। তবে আফসোস, ৮-৯ জন ব্যাপক পড়াশোনা করেছিল; তাদের মধ্যে তিনজন অকৃতকার্য হলো। অথচ যাদের গাড়ি চালানো সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জ্ঞান নেই তারাও কৃতকার্য হয়েছে। বুঝতে পারলাম, তারাও আমাদের মতো আগে প্রশ্ন পেয়ে গেছে। আর অকৃতকার্যরা হয়তো বা কোনো দালালের শরণাপন্ন হয়নি। বেলা ২টা ৪৫ মিনিট থেকে Viva শুরু। প্রায় ২৬০-২৭০ জনের বিশালাকৃতি লাইন কিন্তু Viva নিচ্ছে মাত্র একজন। আমি বাচ্চুকে বললাম, কোন দিকে দাঁড়াব, বাচ্চু বলল, লাইনে দাঁড়ানোর দরকার নেই। যেকোনো এক জায়গায় গিয়ে বসেন। ১৫-২০ মিনিট পর বাচ্চু প্রশিক্ষণার্থী কার্ডে O/T Pass লেখা কার্ডটি নিয়ে এলো। বাচ্চুকে বললাম, পরীক্ষা তো দেইনি, পাস করলাম কিভাবে? বাচ্চু হেসে দিলো। সর্বশেষ Practical পরীক্ষা দিতে হবে। আমি বাচ্চুর দিকে তাকাতেই বাচ্চু বলল, টেনশন করবেন না, বিকল্প ব্যবস্থা আছে। দেখলাম কিছুক্ষণ পর বাইরে থেকে দুটি প্রাইভেট কার ভেতরে এলো। তারা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে টাকা সংগ্রহের মহড়া চালাচ্ছে জনপ্রতি ৩০০-৪০০-৫০০ টাকা (তিন মিনিটের মতো সময় ড্রাইভ করিয়ে) নিচ্ছে। আমি বললাম, আমার দুই বন্ধু গাড়ি চালাতে একেবারে কাঁচা। বাচ্চু বলল, সমস্যা নেই ওনাদের চালাতে হবে না। পরে দেখলাম আমার প্রশিক্ষণার্থী কার্ডসহ বাকি চার বন্ধুর কার্ডে ML/|F/T & R/T PASS পাস লেখা।
আমরা Practical পরীক্ষাই দেইনি, অথচ যারা বাড়তি টাকা না দিয়ে ড্রাইভ করছে, তাদেরকে এ সমস্যা ওই সমস্যা বলে ধমকাচ্ছে। যখনই ২০০ টাকা হাতে দেয়, তখনই কার্ডে লিখে দিচ্ছে Pass । কিছুদিন পর BRTA অফিসে গিয়ে ছবি তুলে এবং স্বাক্ষর করে পরীক্ষা ছাড়াই পেয়ে গেলাম ড্রাইভিং লাইসেন্স। সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনা দেখাশোনার দায়িত্ব যে BRTA এর, তারাই এই মৃত্যুর ফাঁদকে শক্তিশালী করছে হত্যার লাইসেন্স (পরীক্ষা ছাড়াই ড্রাইভিং লাইসেন্স) দিয়ে। অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে তারা দিচ্ছে সড়কে নির্বিচারে মানুষ হত্যার লাইসেন্স।
- See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/153210#sthash.sdwhtNI9.dpuf
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।