গল্প কাল্পনিক মন্তব্য সত্য
গল্প কাল্পনিক মন্তব্য সত্য
আব্দুল মান্নান মল্লিক
দীর্ঘদিন ধরে একটি ভুলকে বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরে বয়ে বেড়াচ্ছি। সেই ভুল আজও আমার মনকে বিচলিত করেই চলেছে। কি সেই ভুল, সেটা বুঝাতেই আজ আমি একটি কাল্পনিক গল্পের ছায়াতলে বসেছি।
সে অনেকদিন আগের কথা। প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম। ক্লাসের মাস্টার মশাই তখন প্রতিদিন কিছু না কিছু প্রশ্ন দিতেন, তার উত্তরটা পরেরদিন বাড়ি থেকে লিখে আনতে বলতেন। যথারীতি সেদিনও দিলেন এমনই একটি প্রশ্ন।
প্রশ্নটি ছিল; শূন্যস্থান পূরণ,
রাজু’র বাবা রাজুকে মেরেছিল, তাই সে — করে কাল ভাত খায়নি।
যথারীতি প্রতিদিনের ন্যায় পরেরদিন উত্তর লিখে স্কুলে গেছি। অন্যন্য ছেলেদের সাথে টেবিলের উপর খাতা জমা রেখে, মাস্টার মশাই আসবেন সেই অপেক্ষায় বসে রয়েছি।
যথাসময়ে মাস্টার মশাই ক্লাসে প্রবেশ করলেন।
আমরা উঠে দাঁড়াতেই মাস্টার মশাই সবাইকে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করতে বলেন।
আমরা বসে পড়তেই মাস্টার মশাই একটা একটা করে নাম ডেকে ডেকে হাজিরা খাতায় আমাদের নাম নথিভুক্ত করেন।
তারপর শুরু হল খাতা দেখার পালা। একটা একটা করে খাতা দেখে, আর যে যার মতো রাইট মার্ক দিয়ে ফেরত দেন।
একসময় আমার খাতাটি হাতে নিয়ে মাস্টার মশাই গম্ভীর স্বরে আমাকে কাছে ডাকলেন।
আমি কাছে যেতেই জোরসে দিলেন এক বেত্রাঘাত।
তারপর আমি ডান হাত বাম হাতের বাহুতে দিয়ে দেখি, এক বেত্রাঘাতেই ফুলে উঠেছে।
মাস্টার মশাই বললেন: তোর মতো ছাত্রের এমনটাই হওয়া উচিত। যা বস-গে, গেঁয়ো কোত্থেকে যে এসেছে।
আমি চুপ-চাপ নিজের জায়গায় বসে পড়ি।
মাস্টার মশাই তখন পেন্সিল হাতে বোর্ডে লিখে বুঝাতে থাকেন।
রাজু’র বাবা রাজুকে মেরেছিল, তাই সে — করে কাল ভাত খায়নি।
ওই যে শূন্যস্থান জায়গা, ওখানে “রাগ” শব্দটি ব্যবহার করতে হবে, তবেই বাক্যটি সম্পূর্ণ হবে, যেমন,
রাজু’র বাবা রাজুকে মেরেছিল, তাই সে “রাগ” করে কাল ভাত খায়নি।
তোমরা সবাই ঠিকই লিখেছ। আর মান্নান লিখেছে সম্পূর্ণ ভুল। আসলে গেঁয়ো ছেলে, তাই মান্নানের ভাষা জ্ঞানটুকুও নাই।
অন্যান্য ছেলেরা জিজ্ঞাসা করে; মান্নান কি লিখেছে স্যার?
স্যার বলেন: মান্নান রাগ না লিখে; লিখেছে ”আগ”, তাই আমি নিজেই লজ্জিত।
মাস্টার মশায়ের কথা শুনে ক্লাসের যতো ছেলেরা সবাই হো-হো করে হাসতে থাকে আর বলে, গেঁয়ো ছেলেরা সব এমনই হয় স্যার।
আমি মাস্টার মশায়ের অনুমতি নিয়ে বলতে শুরু করি:
আমি ছাত্র আপনি আমার শিক্ষক। তাই আমার কথা সম্পূর্ণ হলে, আমি আশা করবো আমার ভুল ত্রুটিগুলো শুধরে দিবেন।
শোনেন মাস্টার মশাই, আমি গেঁয়ো ছেলে সেটাই আমার গর্ব। আমি যতটুকু জানি, “রাগ” শব্দের অর্থ শ্রুতিধারা। যার বিভিন্ন দিক নিয়ে বিদ্যমান। স্বর, তান ও লহরী, নানান প্রকার হতে পারে। যা মানুষের মনকে সিক্ততায় স্পন্দিত করে তোলে।
আমি দেখলাম আপনার ওই শূন্যস্থান পূরণ করতে “রাগ” শব্দটির সাথে কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছিনা, তাই আপনার ওই শূন্যস্থান পূরণ করতে রাগ শব্দটি ব্যবহার করতে আমার বিবেক থেকে বাধা দিয়েছিল।
তাই বলে গেঁয়ো ভাষা?
না মাস্টার মশাই ভাষা যা তাই। ভাষা কখনো গেঁয়ো বা শহুরে আলাদা হতে পারে না। তবুও যদি বলেন তাহলে, আমি বলবো ভাষার উৎপত্তিস্থল এক্কেবারে গেঁয়ো গ্রাম। তাছাড়া আপনি যেটা গেঁয়ো ভাষা বলছেন, তাহলে শুনুন মাস্টার মশাই, “আগ” এই শব্দটি এসেছে হিন্দি ভাষা থেকে। এর বাংলা অর্থ আগুন।
অতএব কথা না বাড়িয়ে আসুন মাস্টার মশাই, দেখি আমরা কোথায় কেমনভাবে কতো জায়গায় ভুল শব্দ বসিয়ে থাকি। “আগ” অর্থ যদি আগুন হয়!
রাগে আমার গা গরগর করছে। “রাগ” কখনো গরগর করেনা, “আগ” গরগর করে।
রাগের জ্বালায় ছটফট করে। “রাগ” কখনো জ্বলে না, “আগ” জ্বলে।
“রাগ” ধরাবি না, আমার মাথা গরম হলে রক্ষা পাবি না। “রাগ” কখনো ধরে না বা গরম হয়না। “আগ” ধরে এবং গরম হয়।
এবার বলেন স্যার, এমন কি ভুল আমি করেছি?
ঠিক আছে, ঠিক আছে; অন্য একদিন বুঝিয়ে বলবো, বলে মাস্টার মশাই ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলেন।
তারপর কোনোদিনই স্যার বুঝিয়ে বলেননি। আমিও আর জিজ্ঞাসা করতে সাহস পাইনি। সেই যে বেত্রাঘাত, তাই আর কি!
( আমার যা বলার বলেছি। আপনাদের বলার থাকলে অবশ্যই বলবেন।)
আব্দুল মান্নান মল্লিক
দীর্ঘদিন ধরে একটি ভুলকে বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরে বয়ে বেড়াচ্ছি। সেই ভুল আজও আমার মনকে বিচলিত করেই চলেছে। কি সেই ভুল, সেটা বুঝাতেই আজ আমি একটি কাল্পনিক গল্পের ছায়াতলে বসেছি।
সে অনেকদিন আগের কথা। প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম। ক্লাসের মাস্টার মশাই তখন প্রতিদিন কিছু না কিছু প্রশ্ন দিতেন, তার উত্তরটা পরেরদিন বাড়ি থেকে লিখে আনতে বলতেন। যথারীতি সেদিনও দিলেন এমনই একটি প্রশ্ন।
প্রশ্নটি ছিল; শূন্যস্থান পূরণ,
রাজু’র বাবা রাজুকে মেরেছিল, তাই সে — করে কাল ভাত খায়নি।
যথারীতি প্রতিদিনের ন্যায় পরেরদিন উত্তর লিখে স্কুলে গেছি। অন্যন্য ছেলেদের সাথে টেবিলের উপর খাতা জমা রেখে, মাস্টার মশাই আসবেন সেই অপেক্ষায় বসে রয়েছি।
যথাসময়ে মাস্টার মশাই ক্লাসে প্রবেশ করলেন।
আমরা উঠে দাঁড়াতেই মাস্টার মশাই সবাইকে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করতে বলেন।
আমরা বসে পড়তেই মাস্টার মশাই একটা একটা করে নাম ডেকে ডেকে হাজিরা খাতায় আমাদের নাম নথিভুক্ত করেন।
তারপর শুরু হল খাতা দেখার পালা। একটা একটা করে খাতা দেখে, আর যে যার মতো রাইট মার্ক দিয়ে ফেরত দেন।
একসময় আমার খাতাটি হাতে নিয়ে মাস্টার মশাই গম্ভীর স্বরে আমাকে কাছে ডাকলেন।
আমি কাছে যেতেই জোরসে দিলেন এক বেত্রাঘাত।
তারপর আমি ডান হাত বাম হাতের বাহুতে দিয়ে দেখি, এক বেত্রাঘাতেই ফুলে উঠেছে।
মাস্টার মশাই বললেন: তোর মতো ছাত্রের এমনটাই হওয়া উচিত। যা বস-গে, গেঁয়ো কোত্থেকে যে এসেছে।
আমি চুপ-চাপ নিজের জায়গায় বসে পড়ি।
মাস্টার মশাই তখন পেন্সিল হাতে বোর্ডে লিখে বুঝাতে থাকেন।
রাজু’র বাবা রাজুকে মেরেছিল, তাই সে — করে কাল ভাত খায়নি।
ওই যে শূন্যস্থান জায়গা, ওখানে “রাগ” শব্দটি ব্যবহার করতে হবে, তবেই বাক্যটি সম্পূর্ণ হবে, যেমন,
রাজু’র বাবা রাজুকে মেরেছিল, তাই সে “রাগ” করে কাল ভাত খায়নি।
তোমরা সবাই ঠিকই লিখেছ। আর মান্নান লিখেছে সম্পূর্ণ ভুল। আসলে গেঁয়ো ছেলে, তাই মান্নানের ভাষা জ্ঞানটুকুও নাই।
অন্যান্য ছেলেরা জিজ্ঞাসা করে; মান্নান কি লিখেছে স্যার?
স্যার বলেন: মান্নান রাগ না লিখে; লিখেছে ”আগ”, তাই আমি নিজেই লজ্জিত।
মাস্টার মশায়ের কথা শুনে ক্লাসের যতো ছেলেরা সবাই হো-হো করে হাসতে থাকে আর বলে, গেঁয়ো ছেলেরা সব এমনই হয় স্যার।
আমি মাস্টার মশায়ের অনুমতি নিয়ে বলতে শুরু করি:
আমি ছাত্র আপনি আমার শিক্ষক। তাই আমার কথা সম্পূর্ণ হলে, আমি আশা করবো আমার ভুল ত্রুটিগুলো শুধরে দিবেন।
শোনেন মাস্টার মশাই, আমি গেঁয়ো ছেলে সেটাই আমার গর্ব। আমি যতটুকু জানি, “রাগ” শব্দের অর্থ শ্রুতিধারা। যার বিভিন্ন দিক নিয়ে বিদ্যমান। স্বর, তান ও লহরী, নানান প্রকার হতে পারে। যা মানুষের মনকে সিক্ততায় স্পন্দিত করে তোলে।
আমি দেখলাম আপনার ওই শূন্যস্থান পূরণ করতে “রাগ” শব্দটির সাথে কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছিনা, তাই আপনার ওই শূন্যস্থান পূরণ করতে রাগ শব্দটি ব্যবহার করতে আমার বিবেক থেকে বাধা দিয়েছিল।
তাই বলে গেঁয়ো ভাষা?
না মাস্টার মশাই ভাষা যা তাই। ভাষা কখনো গেঁয়ো বা শহুরে আলাদা হতে পারে না। তবুও যদি বলেন তাহলে, আমি বলবো ভাষার উৎপত্তিস্থল এক্কেবারে গেঁয়ো গ্রাম। তাছাড়া আপনি যেটা গেঁয়ো ভাষা বলছেন, তাহলে শুনুন মাস্টার মশাই, “আগ” এই শব্দটি এসেছে হিন্দি ভাষা থেকে। এর বাংলা অর্থ আগুন।
অতএব কথা না বাড়িয়ে আসুন মাস্টার মশাই, দেখি আমরা কোথায় কেমনভাবে কতো জায়গায় ভুল শব্দ বসিয়ে থাকি। “আগ” অর্থ যদি আগুন হয়!
রাগে আমার গা গরগর করছে। “রাগ” কখনো গরগর করেনা, “আগ” গরগর করে।
রাগের জ্বালায় ছটফট করে। “রাগ” কখনো জ্বলে না, “আগ” জ্বলে।
“রাগ” ধরাবি না, আমার মাথা গরম হলে রক্ষা পাবি না। “রাগ” কখনো ধরে না বা গরম হয়না। “আগ” ধরে এবং গরম হয়।
এবার বলেন স্যার, এমন কি ভুল আমি করেছি?
ঠিক আছে, ঠিক আছে; অন্য একদিন বুঝিয়ে বলবো, বলে মাস্টার মশাই ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলেন।
তারপর কোনোদিনই স্যার বুঝিয়ে বলেননি। আমিও আর জিজ্ঞাসা করতে সাহস পাইনি। সেই যে বেত্রাঘাত, তাই আর কি!
( আমার যা বলার বলেছি। আপনাদের বলার থাকলে অবশ্যই বলবেন।)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জে এস এম অনিক ০৮/০২/২০২৪Nice
-
আলমগীর সরকার লিটন ২৮/০১/২০২৪চমৎকার
-
শ.ম.ওয়াহিদুজ্জামান ২৫/০১/২০২৪বেশ অভিজ্ঞতা।
-
আব্দুর রহমান আনসারী ২৩/০১/২০২৪বেশ ভালো