ছেদি ঠকের গল্প
ছেদি ঠকের গল্প
আব্দুল মান্নান মল্লিক
ইশানপুর গ্রামের এক বাসিন্দা এই ছেদি ঠক। লোকমুখে শুনেছি, ওর আসল নাম ছিল ছেদি রহমান সেখ। পাশের গ্রামেই শশুরবাড়ি। ছেদি ঠকের কোনো সন্তান ছিলনা, যাকে বলে নিঃসন্তান।
অল্প বয়সেয় বাবা, মা মারা যায়। ছেদি ঠকের বুদ্ধি ছিলো খুব তীক্ষ্ণ, কিন্তু সে তার বুদ্ধি ভাল কাজে না লাগিয়ে, লাগাতো অকাজে। ছেলেবেলা থেকেই খাটাখাটনির অভ্যাস তার ছিলনা। যাকে বলে একেবারে কুড়ে। বাবার অল্প যতটুকু জমি জায়গা ছিল, সেটাও বেচে খেয়েছে। এখন ছেদি নিঃস্ব।
নিরুপায় হয়ে ছেদি তার কু-বুদ্ধি কাজে লাগাতে শুরু করে। আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব কিছু মানতো না। সকলকে ঠকিয়ে, ধাপ্পাবাজী করে সংসার চালাতো। ওর শ্বশুর সেও জামাই বাড়ি আসতে ভয় পেতো। কারণ শ্বশুরের পকেট থেকে একবার টাকা চুরি করে ধরা পড়েছিল এই ছেদি । তখন থেকেই এই ছেদি রহমান সেখের নাম হয় ছেদি ঠক।
এখন ছেদি ঠক বলে এক ডাকে সবাই চিনে। আসল পেশা এখন লোক ঠকানো। ছেদি ঠকের লোক ঠাকানোর বেশ মজার মজার কিছু কাহিনী আছে।
ইশানপুরের প্রতিটা লোকই একবার না, একবার ছেদি ঠকের খপ্পরে পড়েছে। এখন সবাই বুঝে গেছে। ওকে দূর হয়ে আসতে দেখলেই গ্রামের সবাই অন্য রাস্তা ধরে। ওর সঙ্গে কথা বলতেও সবাই ভয় পায়। কারণ কথার মারপেঁচে হইতো ছেদি ঠকের খপ্পরে পড়ে যাবে।
সকলের জানাজানিতে, গ্রামে ছেদি ঠকের লোক ঠকানো ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। বেচারা কি আর করে, তাই গ্রাম ছেড়ে সে দূর-দূরান্তে লোক ঠকানো শুরু করে।
স্বর্ণকারের কাছ হতে ছেদি ঠক লোহার একটা বড় মুদ্রা বানিয়ে, তার উপরে সোনার রং পালিশ করে স্বর্নমুদ্রা তৈরি করে নিয়েছিলো। সবসময় ছেদি ঠক ওটাকে কাছেই রাখত।
ইশানপুর হতে মাইল দশেক দূরে ভাবানীপুর গ্রাম। ভিখারী বেশে ছেদি ঠক এই গ্রামে ভিক্ষা করতে ঢুকে। ভিক্ষা করতে করতে এমন একটা বাড়িতে উঠলো যে, দেখেই বোঝা যায় বিশাল ধনী লোকের বাড়ি। বাড়ির সামনে একটা পুরোনো নিম গাছ। পূর্বদিকে একটা বড় পুকুর।
ভিক্ষা করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছেদি ঠক মনে মনে ফন্দি আঁটে। এই বাড়ীওয়ালাকে ঠকিয়ে বেশ বড় রকমের ধান্দা করা যাবে।
ভবানীপুর গ্রামের ভিতর থেকে বেরিয়ে দেখে, কতকগুলো লোক মাঠের কাজ সেরে বাড়ি ফিরছে। ছেদি ঠক ওদেরকে দেখে ভাবতে থাকে, এই একটা সুযোগ। একটা বিড়ি হাতে ধরে ওদেরকে ডাকতে থাকে, এইযে ভাই একটু আগুন হবে? ডাক শুনে একজন বললো, আমাকে ডাকছো ভায়া? ছেদি ঠক বললো হাঁ ভাই । লোকটি কাছে আসলে, ছেদি ঠক একটা বিড়ি বার করে বললো, তোমার নামটা কি ভাই? লোকটি বললো হাঁদা। ছেদি ঠক বললো বাঃ, খুব ভালো। তোমার কাছে আগুন আছে? তা আছে বৈকি, মাঠে ঘাটে খাটি, একটু আধটু বিড়ি না খেলে কি আর চলে ভায়া? ছেদি ঠক নিজের বিড়ি পকেটে রেখে দিয়ে বললো, কৈ দাওতো একটা তোমার দেশের বিড়ি, খেয়ে দেখি। হাঁদা দুটো বিড়ি বার করে দুজনে ধরিয়ে মৌজ করে গল্প শুরু করে দিল। হাঁদা জোর একটা টান দিয়ে এক রাশ ধোঁয়া ছেড়ে জিজ্ঞেস করে, তা হাঁ ভায়া তুমি কোথায় থেকে আসছো ? ছেদি ঠক অঙুল দেখিয়ে বললো ওই যে গাছগুলো দেখা যাচ্ছে, ওই গ্রামেই ঢুকেছিলাম। এই গ্রামে অনেক বড়লোক আছে। হাঁদা বলে, হাঁ ভায়া, ওটাইতো আমাদের গ্রাম। আমাদের গ্রামের সবচেয়ে যে বড়লোক, তার নাম রহিম মোড়ল। উনার বড় ছেলেটা বিদেশে থাকে। তার নাম হাতিম। যখন বিদেশ থেকে বাড়ি আসে, তখন প্রচুর টাকা-পয়সা নিয়ে আসে। শুনে ছেদি ঠকের লোমগুলো কাঁটা দিয়ে উঠলো, হাত হতে বিড়িটা নিজে থেকে পড়ে গেল। হাঁদা তখনও বলে চলেছে, আর ছোট ছেলেটা বাড়িতে আছে নাম সাকিম। আচ্ছা ভায়া আমি এখন আসি, কথায় কথায় অনেক দেরী হয়ে গেল। ছেদি ঠক অন্যমনস্ক হয়ে কোনরকমে ঘাড় নেড়ে সাঁই দিল।
রহিম মোড়লের নাড়িনক্ষত্রের বর্ণনা পেয়ে ছেদি ঠক নিশ্চিন্ত হল। এবার কাজের অনেক সুবিধা হবে। ছেদি ঠকের মাথায় ঘুর-ঘুর, ঘুর-ঘুর করতে লাগলো, শুধু বড়লোক রহিম মোড়লের কথা। ভাবতে ভাবতে ছেদি ঠক বাড়ি ফিরে এল।
দিন আর ফুরাতে চায়না। কি করবে ভাবতে আরও দুইদিন কেটে গেলো। অবশেষে দুইদিন পরে ওঝার বেশে ভোরের অন্ধকারে ছেদি ঠক বেরিয়ে পড়ল রহিম মোড়লের বাড়ির উদ্দেশ্যে। এমন ওঝার বেশ ধরেছে, ছেদি ঠক বলে চেনাই যায়না। কিছু গাছ-গাছড়া, আরও কিছু হিজি-বিজি ঝোলার মধ্যে পুরে নিয়েছে।
একসময় ভবানীপুরে ছেদি ঠক পৌছে গেল। ছলনা করে গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে গাছ গাছড়া, ঔষধ বিক্রি করতে থাকে। সবার মুখে মুখে রটে গেল, গ্রামে একটা বড় ওস্তাদ এসেছে। লোকের ভীড় জমে গেল ওস্তাদ ছেদি ঠককে দেখতে।
ছেদি ঠক ঘুরতে ঘুরতে রহিম মোড়লের বাড়ির সামনে হাজির হল। বাড়ির চারিদিকে দুইবার ঘুরে নিল। সবাই অবাক হয়ে দেখতে থাকে। ছেদি ঠক মাথায় হাত দিয়ে হঠাৎ বসে পড়েই শুধু হায় হায় করে চিৎকার করে। সবাই একেবারে থৌ হয়ে গেল। সর্বনাশ ওস্তাদের এমন হল কেন? পাড়ার লোকে মাথায় জল ঢালবে, এমন সময় হাতের ইশারা দিয়ে জানালো আমি ঠিক আছি। হৈ-চৈ শুনে রহিম মোড়ল বাড়ি থেকে বেরিয়ে এই কাণ্ড দেখে। ছেদি ঠক আস্তে আস্তে সুস্থতা প্রকাশ করে। উঠে জোর দিয়ে বলে, কোথায় রহিম মোড়ল? রহিম মোড়ল কাঁপা কণ্ঠে বললো এইতো আমি, ওস্তাদজি! তোমার ছোট ছেলে সাকিমকে ডাক। হাতিম তো এখন বিদেশে।
সব ঠিকঠিক বলতে দেখে, সবাই ভীষন অবাক হয়ে গেল। সারা ভবানীপুরে ওস্তাদের নামে একেবারে রৈ-রৈ।
ছেদি ঠক বললো, তোমরা সবাই শুনে রাখো, এই রহিম মোড়লের পূর্ব পুরুষের সই-সম্পত্তি, ধন-দৌলতের কোনো হিসাব ছিলনা। বাড়ির সিমানাতেই রেখে গেছে পরপর সাতটা পিতলের হাঁড়ি ভর্তি স্বর্ণ-মুদ্রা। ঐগুলো আগলে আছে পূর্ব পুরুষের প্রেতাত্মা।
রহিম মোড়ল জিজ্ঞাসা করে, ওস্তাদজি ওই মুদ্রা উদ্ধার করা যাবেনা? ছেদি ঠক বলে, প্রেতাত্মার বুক থেকে মুদ্রা বার করে নিয়ে আসাটা অত সহজ কর্ম নই বাবাজী! তবে যখন বলছ, চেষ্টা করে দেখছি! এই বলে ছেদি ঠক ধ্যানে বসলো। কিছুক্ষণ দম বন্ধ করে থাকার পর উঠে বললো, স্বর্ণমুদ্রা উদ্ধার করা যাবে বাবাজী! তবে- - -! বলে ছেদি ঠক থেমে গেলো। রহিম মোড়ল কাকুতি হয়ে জিজ্ঞেস করে তবে কি বাবাজী? ছেদি ঠক বললো, বাবাজী! অনেক কাঠখড়ি পুড়বে! রহিম মোড়ল বললো যত কিছু করতে হবে, আমি তাই করব। আপনি কোনো চিন্তা করবেননা ওস্তাদজি।
আচ্ছা, আমাকে একটা নির্জন ঘরে জায়গা করে দাও। দরজা জানালা বন্ধ করলে যেন কোনো ছিদ্র দেখতে না পাওয়া যায়। ঘরের মধ্যে চিৎকার চেঁচামেচি শুনলে তোমরা কেউ ভয় পেওনা। ঘরটা খুলতে চেষ্টা কর না, তাহলে আমার মুখ দিয়ে রক্ত উঠে আমি সঙ্গে সঙ্গে মারা যাব। আমার সঙ্গে প্রেতাত্মার অনেক তর্কাতর্কি এমনকি ধ্বস্তাধস্তিও হতে পারে। এতগুলো স্বর্নমুদ্রা এত সহজে ছাড়বে প্রেতাত্মা?
সকলেই বললো, আপনার কথা মতো সবকিছু হবে ওস্তাদজী, কথার একটুও এদিক ওদিক হবেনা। ওস্তাদের কথামতো ঘর দেওয়া হল। ছদি ঠক বেশ ওস্তাদি ভঙ্গিমায় ঘরে প্রবেশ করল। সবার যেন গা শিহরণী ভাব! কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর, ভিতর থেকে কন্ঠস্বর শোনা গেল, বিকট আওয়াজে। বাইরে থেকে পরিস্কার কিছু বুঝা যায়না। তবে একটুখানি শুনতে পাওয়া গেল, তোর বাবার মুদ্রা? তোরা তো এখন এই জগতের বাইরে। তোরা সবাই প্রেতাত্মা। এইটুকু শুনার পর আর কিছু বুঝা গেলনা। কিছুক্ষণ পরে চুপচাপ হয়ে গেল। ওস্তাদজি ক্লান্ত দেহে বাইরে এল। যেন বেঁচে ফিরে এল। ছেদি ঠকের কাছে থাকা নিজের বানিয়ে নেওয়া স্বর্নমুদ্রা সবাইকে দেখিয়ে বললো, এই স্বর্নমুদ্রাটাই সাত হাঁড়ি স্বর্নমুদ্রার আসল শক্তি। এইটা যার কাছে থাকবে সেই হবে সাত হাঁড়ি স্বর্নমুদ্রার মালিক। এই বলে ছেদি ঠক রহিম মোড়লের হাতে দিয়ে বললো, এটা প্রেতাত্মার দেওয়া স্বর্নমুদ্রা। অনেক কৌশল করে ওদের কাছ থেকে হাত করেছি। ওদের সঙ্গে দিন ধার্য হয়েছে, মাঝে একদিন পরে অমাবশ্যার রাত্রি। ঐ রাত্রিতে ওরা সাত হাড়ি স্বর্নমুদ্রা হস্তান্তর করে, আমাদের হাতে তুলে দিবে। আজকের মতো আমি বাড়ি যাচ্ছি, ঐদিন আবার আসবো,এবং ওদের সঙ্গে বুঝা পাড়া করে স্বর্নমুদ্রা হস্তান্তর করে নেব। আর হাঁ রহিম মোড়ল, এই দুইদিন একটু সাবধানে চলতে হবে, তোমার হাতে দেওয়া মুদ্রাটি যেন প্রেতাত্মারা ছিনিয়ে নিতে না পারে। একা কোথাও যেওনা।
এই কথা শুনে রহিম মোড়ল ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। এমনিতেই ঘরের মধ্যে তর্কাতর্কি শুনে, তখন থেকেই রহিম মোড়লের ভিতরের কম্পন এখনো থামেনি। তাই রহিম মোড়ল বললো, ওস্তাদজী, এই মুদ্রা আপনি নিজের কাছেই রাখুন। কখন কোন প্রয়োজনে লাগবে সেটা আপনিই ভাল জানেন। ছেদি ঠক বললো, কি আর করবো, বুঝতে পারছি, তুমি ভয় পেয়েছ। বলে ছেদি ঠক নিজের কাছে রেখে দিল, আর বললো, পাঁচ কিলো সোনা, পাঁচ কিলো খাঁটি গাওয়া ঘি, দশ কিলো চন্দন কাঠ এইগুলো জোগাড় করে রেখো। মাঝে একদিন সময় আছে। আজকের মতো চলি। নির্ধারিত দিনে আমি আসব। বলে ছেদি ঠক সেদিনের মতো বাড়ি ফিরলো।
নির্ধারিত দিনে কথা মতো ছেদি ঠক আবার ওঝার বেশে ভোরবেলায় সবার অগোচরে বেরিয়ে পড়লো। যথাসময়ে ভবানীপুরে পৌঁছে দেখে, রহিম মোড়ল সমস্ত কিছু জোগাড় করে ওস্তাদের অপেক্ষায় বসে আছে। ওস্তাদকে আসতে দেখে সবাই ভীষণ খুশি। বিভিন্ন প্রকার তন্ত্র-মন্ত্র আড়ম্বরতায় , সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত্রি হল। এবার হবে ওস্তাদের কেরামতি।
ছেদি ঠক সবাইকে বলে রাখলো, গ্রামের কেউ যেন রাত্রিতে রাস্তায় না বেরোয়। কারণ আজকের রাত্রিটা হবে প্রেতাত্মার রাত্রি। ওরাই ঘোরাঘুরি করবে। যদি কারও চোখে পড়ে, কথা বলনা। বলা যায়না কারও কোনো বড় রকমের ক্ষতি হয়ে যায়। বাকিটা আমি তোমাদেরকে যখন যেটা বলবো, তোমরা সেটাই করবে।
সকলেই সাঁই দিল। সকলের মনে কেমন যেন ভয়ের ছাপ। সকলের লোম খাড়া হয়ে উঠলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই রাস্তা ঘাট একেবারে শুন-শান। ভয়ে রাস্তায় রাস্তায় কেউ বেরোতে চাইনা।
এবার জোগাড় করা সবকিছু ওস্তাদের সামনে হাজির করলো। শুরু হল ওস্তাদি কেরামতি। চন্দন কাঠ সাজিয়ে, পাঁচ কেজি ঘি সবটাই সাজানো চন্দন কাঠের উপর ঢেলে দিয়ে, আগুন জ্বালিয়ে দিল। আগুন দাও দাও করে জ্বলতে থাকে। ওস্তাদ তন্ত্র মন্ত্রের সাথে আগুনের চারিদিকে দুইবার ঘুরে তপে বসে পড়লো । সকলে স্তম্ভিত হয়ে দেখতে থাকে। ওস্তাদ বললো আমি এখন চুপচাপ চক্ষু বন্ধ করে ধ্যানমগ্ন হয়ে থাকবো। তোমরা সকলেই কিছুক্ষণ চক্ষু বন্ধু কর, যতক্ষন না আমি বলবো, ততক্ষণ চক্ষু খুলবে না। কেউ যদি খুলে, তাহলে সে জীবনের মত অন্ধ হয়ে যাবে। সকলেই চক্ষু বন্ধ করে বসে রইলো। এদিকে ছেদি ঠক সোনার পুঁটলি মাথায় তুলে সোজা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হল। প্রভাতের আলো ফোটার আগেই ছেদি ঠক নিজের বাড়িতে পৌঁছে গেল এবং সঙ্গে সঙ্গে ওঝার বেশ ছেড়ে দিল। কে আর চিনবে ওঝা হিসাবে, এই ছেদি ঠককে?
***★***★***★***★***
( পরে একদিন সময় বুঝে নাস্তানাবুদ ছেদি ঠক গল্পটি শোনাবো )
আব্দুল মান্নান মল্লিক
ইশানপুর গ্রামের এক বাসিন্দা এই ছেদি ঠক। লোকমুখে শুনেছি, ওর আসল নাম ছিল ছেদি রহমান সেখ। পাশের গ্রামেই শশুরবাড়ি। ছেদি ঠকের কোনো সন্তান ছিলনা, যাকে বলে নিঃসন্তান।
অল্প বয়সেয় বাবা, মা মারা যায়। ছেদি ঠকের বুদ্ধি ছিলো খুব তীক্ষ্ণ, কিন্তু সে তার বুদ্ধি ভাল কাজে না লাগিয়ে, লাগাতো অকাজে। ছেলেবেলা থেকেই খাটাখাটনির অভ্যাস তার ছিলনা। যাকে বলে একেবারে কুড়ে। বাবার অল্প যতটুকু জমি জায়গা ছিল, সেটাও বেচে খেয়েছে। এখন ছেদি নিঃস্ব।
নিরুপায় হয়ে ছেদি তার কু-বুদ্ধি কাজে লাগাতে শুরু করে। আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব কিছু মানতো না। সকলকে ঠকিয়ে, ধাপ্পাবাজী করে সংসার চালাতো। ওর শ্বশুর সেও জামাই বাড়ি আসতে ভয় পেতো। কারণ শ্বশুরের পকেট থেকে একবার টাকা চুরি করে ধরা পড়েছিল এই ছেদি । তখন থেকেই এই ছেদি রহমান সেখের নাম হয় ছেদি ঠক।
এখন ছেদি ঠক বলে এক ডাকে সবাই চিনে। আসল পেশা এখন লোক ঠকানো। ছেদি ঠকের লোক ঠাকানোর বেশ মজার মজার কিছু কাহিনী আছে।
ইশানপুরের প্রতিটা লোকই একবার না, একবার ছেদি ঠকের খপ্পরে পড়েছে। এখন সবাই বুঝে গেছে। ওকে দূর হয়ে আসতে দেখলেই গ্রামের সবাই অন্য রাস্তা ধরে। ওর সঙ্গে কথা বলতেও সবাই ভয় পায়। কারণ কথার মারপেঁচে হইতো ছেদি ঠকের খপ্পরে পড়ে যাবে।
সকলের জানাজানিতে, গ্রামে ছেদি ঠকের লোক ঠকানো ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। বেচারা কি আর করে, তাই গ্রাম ছেড়ে সে দূর-দূরান্তে লোক ঠকানো শুরু করে।
স্বর্ণকারের কাছ হতে ছেদি ঠক লোহার একটা বড় মুদ্রা বানিয়ে, তার উপরে সোনার রং পালিশ করে স্বর্নমুদ্রা তৈরি করে নিয়েছিলো। সবসময় ছেদি ঠক ওটাকে কাছেই রাখত।
ইশানপুর হতে মাইল দশেক দূরে ভাবানীপুর গ্রাম। ভিখারী বেশে ছেদি ঠক এই গ্রামে ভিক্ষা করতে ঢুকে। ভিক্ষা করতে করতে এমন একটা বাড়িতে উঠলো যে, দেখেই বোঝা যায় বিশাল ধনী লোকের বাড়ি। বাড়ির সামনে একটা পুরোনো নিম গাছ। পূর্বদিকে একটা বড় পুকুর।
ভিক্ষা করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছেদি ঠক মনে মনে ফন্দি আঁটে। এই বাড়ীওয়ালাকে ঠকিয়ে বেশ বড় রকমের ধান্দা করা যাবে।
ভবানীপুর গ্রামের ভিতর থেকে বেরিয়ে দেখে, কতকগুলো লোক মাঠের কাজ সেরে বাড়ি ফিরছে। ছেদি ঠক ওদেরকে দেখে ভাবতে থাকে, এই একটা সুযোগ। একটা বিড়ি হাতে ধরে ওদেরকে ডাকতে থাকে, এইযে ভাই একটু আগুন হবে? ডাক শুনে একজন বললো, আমাকে ডাকছো ভায়া? ছেদি ঠক বললো হাঁ ভাই । লোকটি কাছে আসলে, ছেদি ঠক একটা বিড়ি বার করে বললো, তোমার নামটা কি ভাই? লোকটি বললো হাঁদা। ছেদি ঠক বললো বাঃ, খুব ভালো। তোমার কাছে আগুন আছে? তা আছে বৈকি, মাঠে ঘাটে খাটি, একটু আধটু বিড়ি না খেলে কি আর চলে ভায়া? ছেদি ঠক নিজের বিড়ি পকেটে রেখে দিয়ে বললো, কৈ দাওতো একটা তোমার দেশের বিড়ি, খেয়ে দেখি। হাঁদা দুটো বিড়ি বার করে দুজনে ধরিয়ে মৌজ করে গল্প শুরু করে দিল। হাঁদা জোর একটা টান দিয়ে এক রাশ ধোঁয়া ছেড়ে জিজ্ঞেস করে, তা হাঁ ভায়া তুমি কোথায় থেকে আসছো ? ছেদি ঠক অঙুল দেখিয়ে বললো ওই যে গাছগুলো দেখা যাচ্ছে, ওই গ্রামেই ঢুকেছিলাম। এই গ্রামে অনেক বড়লোক আছে। হাঁদা বলে, হাঁ ভায়া, ওটাইতো আমাদের গ্রাম। আমাদের গ্রামের সবচেয়ে যে বড়লোক, তার নাম রহিম মোড়ল। উনার বড় ছেলেটা বিদেশে থাকে। তার নাম হাতিম। যখন বিদেশ থেকে বাড়ি আসে, তখন প্রচুর টাকা-পয়সা নিয়ে আসে। শুনে ছেদি ঠকের লোমগুলো কাঁটা দিয়ে উঠলো, হাত হতে বিড়িটা নিজে থেকে পড়ে গেল। হাঁদা তখনও বলে চলেছে, আর ছোট ছেলেটা বাড়িতে আছে নাম সাকিম। আচ্ছা ভায়া আমি এখন আসি, কথায় কথায় অনেক দেরী হয়ে গেল। ছেদি ঠক অন্যমনস্ক হয়ে কোনরকমে ঘাড় নেড়ে সাঁই দিল।
রহিম মোড়লের নাড়িনক্ষত্রের বর্ণনা পেয়ে ছেদি ঠক নিশ্চিন্ত হল। এবার কাজের অনেক সুবিধা হবে। ছেদি ঠকের মাথায় ঘুর-ঘুর, ঘুর-ঘুর করতে লাগলো, শুধু বড়লোক রহিম মোড়লের কথা। ভাবতে ভাবতে ছেদি ঠক বাড়ি ফিরে এল।
দিন আর ফুরাতে চায়না। কি করবে ভাবতে আরও দুইদিন কেটে গেলো। অবশেষে দুইদিন পরে ওঝার বেশে ভোরের অন্ধকারে ছেদি ঠক বেরিয়ে পড়ল রহিম মোড়লের বাড়ির উদ্দেশ্যে। এমন ওঝার বেশ ধরেছে, ছেদি ঠক বলে চেনাই যায়না। কিছু গাছ-গাছড়া, আরও কিছু হিজি-বিজি ঝোলার মধ্যে পুরে নিয়েছে।
একসময় ভবানীপুরে ছেদি ঠক পৌছে গেল। ছলনা করে গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে গাছ গাছড়া, ঔষধ বিক্রি করতে থাকে। সবার মুখে মুখে রটে গেল, গ্রামে একটা বড় ওস্তাদ এসেছে। লোকের ভীড় জমে গেল ওস্তাদ ছেদি ঠককে দেখতে।
ছেদি ঠক ঘুরতে ঘুরতে রহিম মোড়লের বাড়ির সামনে হাজির হল। বাড়ির চারিদিকে দুইবার ঘুরে নিল। সবাই অবাক হয়ে দেখতে থাকে। ছেদি ঠক মাথায় হাত দিয়ে হঠাৎ বসে পড়েই শুধু হায় হায় করে চিৎকার করে। সবাই একেবারে থৌ হয়ে গেল। সর্বনাশ ওস্তাদের এমন হল কেন? পাড়ার লোকে মাথায় জল ঢালবে, এমন সময় হাতের ইশারা দিয়ে জানালো আমি ঠিক আছি। হৈ-চৈ শুনে রহিম মোড়ল বাড়ি থেকে বেরিয়ে এই কাণ্ড দেখে। ছেদি ঠক আস্তে আস্তে সুস্থতা প্রকাশ করে। উঠে জোর দিয়ে বলে, কোথায় রহিম মোড়ল? রহিম মোড়ল কাঁপা কণ্ঠে বললো এইতো আমি, ওস্তাদজি! তোমার ছোট ছেলে সাকিমকে ডাক। হাতিম তো এখন বিদেশে।
সব ঠিকঠিক বলতে দেখে, সবাই ভীষন অবাক হয়ে গেল। সারা ভবানীপুরে ওস্তাদের নামে একেবারে রৈ-রৈ।
ছেদি ঠক বললো, তোমরা সবাই শুনে রাখো, এই রহিম মোড়লের পূর্ব পুরুষের সই-সম্পত্তি, ধন-দৌলতের কোনো হিসাব ছিলনা। বাড়ির সিমানাতেই রেখে গেছে পরপর সাতটা পিতলের হাঁড়ি ভর্তি স্বর্ণ-মুদ্রা। ঐগুলো আগলে আছে পূর্ব পুরুষের প্রেতাত্মা।
রহিম মোড়ল জিজ্ঞাসা করে, ওস্তাদজি ওই মুদ্রা উদ্ধার করা যাবেনা? ছেদি ঠক বলে, প্রেতাত্মার বুক থেকে মুদ্রা বার করে নিয়ে আসাটা অত সহজ কর্ম নই বাবাজী! তবে যখন বলছ, চেষ্টা করে দেখছি! এই বলে ছেদি ঠক ধ্যানে বসলো। কিছুক্ষণ দম বন্ধ করে থাকার পর উঠে বললো, স্বর্ণমুদ্রা উদ্ধার করা যাবে বাবাজী! তবে- - -! বলে ছেদি ঠক থেমে গেলো। রহিম মোড়ল কাকুতি হয়ে জিজ্ঞেস করে তবে কি বাবাজী? ছেদি ঠক বললো, বাবাজী! অনেক কাঠখড়ি পুড়বে! রহিম মোড়ল বললো যত কিছু করতে হবে, আমি তাই করব। আপনি কোনো চিন্তা করবেননা ওস্তাদজি।
আচ্ছা, আমাকে একটা নির্জন ঘরে জায়গা করে দাও। দরজা জানালা বন্ধ করলে যেন কোনো ছিদ্র দেখতে না পাওয়া যায়। ঘরের মধ্যে চিৎকার চেঁচামেচি শুনলে তোমরা কেউ ভয় পেওনা। ঘরটা খুলতে চেষ্টা কর না, তাহলে আমার মুখ দিয়ে রক্ত উঠে আমি সঙ্গে সঙ্গে মারা যাব। আমার সঙ্গে প্রেতাত্মার অনেক তর্কাতর্কি এমনকি ধ্বস্তাধস্তিও হতে পারে। এতগুলো স্বর্নমুদ্রা এত সহজে ছাড়বে প্রেতাত্মা?
সকলেই বললো, আপনার কথা মতো সবকিছু হবে ওস্তাদজী, কথার একটুও এদিক ওদিক হবেনা। ওস্তাদের কথামতো ঘর দেওয়া হল। ছদি ঠক বেশ ওস্তাদি ভঙ্গিমায় ঘরে প্রবেশ করল। সবার যেন গা শিহরণী ভাব! কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর, ভিতর থেকে কন্ঠস্বর শোনা গেল, বিকট আওয়াজে। বাইরে থেকে পরিস্কার কিছু বুঝা যায়না। তবে একটুখানি শুনতে পাওয়া গেল, তোর বাবার মুদ্রা? তোরা তো এখন এই জগতের বাইরে। তোরা সবাই প্রেতাত্মা। এইটুকু শুনার পর আর কিছু বুঝা গেলনা। কিছুক্ষণ পরে চুপচাপ হয়ে গেল। ওস্তাদজি ক্লান্ত দেহে বাইরে এল। যেন বেঁচে ফিরে এল। ছেদি ঠকের কাছে থাকা নিজের বানিয়ে নেওয়া স্বর্নমুদ্রা সবাইকে দেখিয়ে বললো, এই স্বর্নমুদ্রাটাই সাত হাঁড়ি স্বর্নমুদ্রার আসল শক্তি। এইটা যার কাছে থাকবে সেই হবে সাত হাঁড়ি স্বর্নমুদ্রার মালিক। এই বলে ছেদি ঠক রহিম মোড়লের হাতে দিয়ে বললো, এটা প্রেতাত্মার দেওয়া স্বর্নমুদ্রা। অনেক কৌশল করে ওদের কাছ থেকে হাত করেছি। ওদের সঙ্গে দিন ধার্য হয়েছে, মাঝে একদিন পরে অমাবশ্যার রাত্রি। ঐ রাত্রিতে ওরা সাত হাড়ি স্বর্নমুদ্রা হস্তান্তর করে, আমাদের হাতে তুলে দিবে। আজকের মতো আমি বাড়ি যাচ্ছি, ঐদিন আবার আসবো,এবং ওদের সঙ্গে বুঝা পাড়া করে স্বর্নমুদ্রা হস্তান্তর করে নেব। আর হাঁ রহিম মোড়ল, এই দুইদিন একটু সাবধানে চলতে হবে, তোমার হাতে দেওয়া মুদ্রাটি যেন প্রেতাত্মারা ছিনিয়ে নিতে না পারে। একা কোথাও যেওনা।
এই কথা শুনে রহিম মোড়ল ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। এমনিতেই ঘরের মধ্যে তর্কাতর্কি শুনে, তখন থেকেই রহিম মোড়লের ভিতরের কম্পন এখনো থামেনি। তাই রহিম মোড়ল বললো, ওস্তাদজী, এই মুদ্রা আপনি নিজের কাছেই রাখুন। কখন কোন প্রয়োজনে লাগবে সেটা আপনিই ভাল জানেন। ছেদি ঠক বললো, কি আর করবো, বুঝতে পারছি, তুমি ভয় পেয়েছ। বলে ছেদি ঠক নিজের কাছে রেখে দিল, আর বললো, পাঁচ কিলো সোনা, পাঁচ কিলো খাঁটি গাওয়া ঘি, দশ কিলো চন্দন কাঠ এইগুলো জোগাড় করে রেখো। মাঝে একদিন সময় আছে। আজকের মতো চলি। নির্ধারিত দিনে আমি আসব। বলে ছেদি ঠক সেদিনের মতো বাড়ি ফিরলো।
নির্ধারিত দিনে কথা মতো ছেদি ঠক আবার ওঝার বেশে ভোরবেলায় সবার অগোচরে বেরিয়ে পড়লো। যথাসময়ে ভবানীপুরে পৌঁছে দেখে, রহিম মোড়ল সমস্ত কিছু জোগাড় করে ওস্তাদের অপেক্ষায় বসে আছে। ওস্তাদকে আসতে দেখে সবাই ভীষণ খুশি। বিভিন্ন প্রকার তন্ত্র-মন্ত্র আড়ম্বরতায় , সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত্রি হল। এবার হবে ওস্তাদের কেরামতি।
ছেদি ঠক সবাইকে বলে রাখলো, গ্রামের কেউ যেন রাত্রিতে রাস্তায় না বেরোয়। কারণ আজকের রাত্রিটা হবে প্রেতাত্মার রাত্রি। ওরাই ঘোরাঘুরি করবে। যদি কারও চোখে পড়ে, কথা বলনা। বলা যায়না কারও কোনো বড় রকমের ক্ষতি হয়ে যায়। বাকিটা আমি তোমাদেরকে যখন যেটা বলবো, তোমরা সেটাই করবে।
সকলেই সাঁই দিল। সকলের মনে কেমন যেন ভয়ের ছাপ। সকলের লোম খাড়া হয়ে উঠলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই রাস্তা ঘাট একেবারে শুন-শান। ভয়ে রাস্তায় রাস্তায় কেউ বেরোতে চাইনা।
এবার জোগাড় করা সবকিছু ওস্তাদের সামনে হাজির করলো। শুরু হল ওস্তাদি কেরামতি। চন্দন কাঠ সাজিয়ে, পাঁচ কেজি ঘি সবটাই সাজানো চন্দন কাঠের উপর ঢেলে দিয়ে, আগুন জ্বালিয়ে দিল। আগুন দাও দাও করে জ্বলতে থাকে। ওস্তাদ তন্ত্র মন্ত্রের সাথে আগুনের চারিদিকে দুইবার ঘুরে তপে বসে পড়লো । সকলে স্তম্ভিত হয়ে দেখতে থাকে। ওস্তাদ বললো আমি এখন চুপচাপ চক্ষু বন্ধ করে ধ্যানমগ্ন হয়ে থাকবো। তোমরা সকলেই কিছুক্ষণ চক্ষু বন্ধু কর, যতক্ষন না আমি বলবো, ততক্ষণ চক্ষু খুলবে না। কেউ যদি খুলে, তাহলে সে জীবনের মত অন্ধ হয়ে যাবে। সকলেই চক্ষু বন্ধ করে বসে রইলো। এদিকে ছেদি ঠক সোনার পুঁটলি মাথায় তুলে সোজা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হল। প্রভাতের আলো ফোটার আগেই ছেদি ঠক নিজের বাড়িতে পৌঁছে গেল এবং সঙ্গে সঙ্গে ওঝার বেশ ছেড়ে দিল। কে আর চিনবে ওঝা হিসাবে, এই ছেদি ঠককে?
***★***★***★***★***
( পরে একদিন সময় বুঝে নাস্তানাবুদ ছেদি ঠক গল্পটি শোনাবো )
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সুদীপ দেবনাথ ১৩/০১/২০১৬ছেদী ঠকের পর্দা ফাঁসের অপেক্ষায় রইলাম।
-
শাহানাজ সুলতানা (শাহানাজ) ০২/১২/২০১৫বেশ লাগলো
-
সি.এম.সালাহ উদ্দিন ০১/১২/২০১৫Nice
-
দেবাশীষ দিপন ২৮/১১/২০১৫দারুণ লাগলো পড়ে।
-
হাসান কাবীর ২৬/১১/২০১৫মজা পেয়েছি।
-
আব্দুল মান্নান মল্লিক ২৫/১১/২০১৫এবারের মতো ছেদি ঠক রেহাই পেলেও পরবর্তী পদক্ষেপে ছেদি ঠক ধরা পড়েছিলো। পরবর্তী গল্প্র শোনাবো