নিখাদ ভালবাসা
১.
বসন্ত কাল। উদাস হাওয়া যেন আপন মনে ব্যকুল ভাবে বয়ে যাচ্ছে। বাতাসের এই
প্রবাহের সাথে সাথে গাছের পাতাগুলোও যাচ্ছে ঝরে। কয়েক দিন ধরে আকাশে
হালকা মেঘ আসা-যাওয়া করলেও গত রাত থেকে তা আরও ঘণীভূত হয়ে বৃষ্টি হয়ে
নেমে আসছে। জীর্ণ গাছের নবীন কুঁড়িগুলো তাতে ভিজে যেন আপনার ঝকমকে রূপকে
শতগুণে প্রকাশ করতে লাগল। প্রকৃতির সাথে তা যেন গড়ে তুলল এক অনুপম
মিতালী।
এমন মিশ্র অনুভুতি জাগানিয়া পরিবেশে বারান্দায় একটা হাতাওয়ালা চেয়ারে বসে
গালে হাত দিয়ে উদাস দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে আশিক। দুশ্চিন্তায়
তার মাথা ভোঁ-ভোঁ করছে। আনিকা কি সত্যিই তাকে পাশ কাটিয়ে দূরে সরে গেল?
অনেক যত্নে মনে পোষা স্বপ্নটা কি ঘুচে যাবে শেষ-মেষ? কিছুই যেন ভাবতে
পারছে না সে। চোখ দু’টো তার ঝাপসা হয়ে আসছে ।
‘বাবা আশিক। আশিক। এই আশিক।’ এই ভাবে কয়েকটা ডাক দেয় আশিকের মা। ডাক
শুনে হঠাৎ আত্মমগ্নতা ভেঙ্গে যায় আশিকের।
‘কি আম্মা। কিছু কইবা?’
‘কি হইছে তোর? কয়ডা ডাক দিলাম- এতক্ষণে কথা কইতাস!’
‘কিছু না আম্মা। মাথাটা কেমন জানি করছে।’
‘তাই না কি! কই কিছু তো বলিস নাই।’
‘না, তেমন কিছু না। এই আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে তো, তাই বোধ হয় একটু-আধটু
জর-টর হতে পারে।’
‘অবহেলা করিস না। ডাক্তার দেখায়া ওষুধ নিয়া আয়।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে, যাব। তুমি কেন ডাকছিলা সেটা কও।’
‘তোকে রেখা একটু খুঁজছে।’
‘কই?’
‘ড্রয়িং রুমে।’
‘ঠিক আছে এখানে আসতে বল।’
তার মা চলে গিয়ে রেখাকে পাঠিয়ে দিল বারান্দায়। প্রতিবেশি রেখা আশিকের
চেয়ে কয়েক বছরের ছোট। তাই আশিককে ভাই বলে ডাকে। তারপরও তাদের মধ্যে ভাল
বন্ধত্ব।
পিছন থেকে আশিককে খুব গভীর চিন্তিত দেখে রসিকতা শুরু করল রেখা।
‘কি আশিক ভাই, যে ভাব নিয়ে বসে আছ, কবি হয়ে গেলে না কি! তা..... লম্বা
চুল রেখে, হাতে সিগারেট জ্বালিয়ে, বস্তাপঁচা কতগুলো উদ্ভট কথাকে খাতার
মধ্যে লিখে জোর-জবরদস্তি করে কবি বনে যাওয়া যায়! তোমার তো এ সবের কিছু্ই
দেখছি না।,
‘কবি হওয়া কি মুখের কথা? ওরে বাবা কি কঠিন জগত রে সেটা!’
‘আরে আশিক ভাই, তুমি তো ব্যবসায়ী মানুষ তাই বোধ হয় কবিতা-টবিতা পড় না।
একবার চেষ্টা করে কর, তুমিও পারবা। এই ধর- ড্রয়িং রুমে জীবন্ত খেজুর গাছ,
পাহাড়ের ঝর্ণায় মধুর ধারা, সোফার মাঝে রূপালী হাসি- এই সব লিখে যাইবা। আর
নদী, সাগর, চাঁদ, সূর্য- এগুলি তো আছেই!’
‘এই সব লিখলেই কবি হওয়া যায়- না? ফালতু কথা রেখে যা এখান থেকে। আমার ভাল
লাগছে না কিছু।’
‘আশিক ভাই, ফালতু না- ফালতু না! আচ্ছা ঠিক আছে- যাও, তোমার ভাব যেহেতু
এসেছে, তাহলে কবিতা লিখার আরেকটা পদ্ধতি বলে দেই তোমাকে। ধর, একটা সাদা
পাতা নিবা, আরেকটা পেন্সিল নিবা। এরপর পাতায় যে কোন একটা কাহিনী বা কোন
কিছুর বর্ণনা লিখবা। গল্প হলেও চলবে। আবার তোমার নিজের সর্ম্পকে লিখলেও
কোন অসুবিধা নেই! তারপর পাতাটির ডান এবং বাম পাশে সমপরিমান মার্জিন
টানবা। সবশেষে ঐ মার্জিনের বাহিরের শব্দগুলো মুছে দিবা। বাস্! হয়ে যাবে
একটা আধুনিক কবিতা। না না শুধু আধুনিক না, একেবারে অত্যাধুনিক কবিতা!
‘আরেকটা কথা। পাঠক তোমার কবিতা যত কম বুঝবে, এর সার্থকতা তত বেশি হবে,
তুমি তত বড় কবি হতে পারবা। আর পকেটের কয়টা টাকা খরচ করে যদি একটা বই
প্রকাশ করতে পার, তাহলে তো আর কথাই নেই!’
একটু বাচাল প্রকৃতির মেয়ে রেখা কথা বলে বেশ গুছিয়ে। তাই বেশি কথা শুনতেও
খুব একটা বিরক্তি বোধ হয় না। তবে আজ আশিকের এসব কথা শুনতে ভাল লাগছে না।
‘তুই থাম রেখা। প্লিজ তুই আজ চলে যা। আমার ভাল লাগছে না কিছু।’ আনিকার
প্রতি আশিকের দূর্বলতা রেখার কাছে আগেই কিছুটা ধরা পড়েছিল। কিন্তু তা সে
কাউকে বুঝতে দেয়নি। কি জানি ভেবে সে হঠাৎ আনিকার প্রসঙ্গ টেনে বলল, ‘কেন,
আনিকার সাথে কি কথা হয় না নাকি?’ আশিকের মা শুনতে পারে- এই আশংকায় কথাটা
আস্তে বলে রেখা।
‘হয়। কিন্তু.....’
‘কিন্তু কি?’
‘একটা সমস্যা হয়ে গেছে।’
‘সমস্যা! কি সমস্যা?’
‘কি ভাবে যে বলি?’
‘আমার সাথে বলতে সংকোচ! সমস্যা নেই, সব কিছু খুলে বল।’
‘আমি আনিকাকে মনে মনে ভালবাসতাম। কিন্তু অনেক বার বলতে চেয়েও লজ্জায় তা
বলতে পারিনি। বেশ কষ্টে লজ্জাটাকে পাশ কাটিয়ে গত সোমবার কথাটা তাকে
জানিয়েছিলাম। কিন্তু এতে সে আমার প্রতি অস্বাভাবিক আচরণ করে- রীতিমত
দূর্ব্যবহার করে আমার সাথে। আর জানিয়ে দিয়েছে- আমার সাথে না কি তার
বন্ধুত্বের সম্পর্কটাও রাখা আর সম্ভব না।’
‘তাই না কি? তুমি তো এ কথা আমাকে কখনও জানাওনি।’
‘তুই জেনে কি করবি?’
‘কি করব মানে? সে আমার বন্ধবী। আর কিছু না হোক, তাকে তো অন্তত জিজ্ঞাসা
করতে পারতাম।’
‘কি লাভ হত? জোর করে রাজ্য জয় করা যায়- মন জয় করা না। প্রেম-প্রীতির
বন্ধন আপনা থেকে গড়ে উঠতে হয়।’
‘জোরের কথা আসছে কেন? আমি তাকে বুঝাতে পারতাম। তাছাড়া তুমি তো তার অযোগ্য নও।’
‘যোগ্যতা-অযোগ্যতা বুঝি না। তাকে ভাল লেগেছে। তোর মাধ্যমেই তার সাথে আমার
পরিচয়। যে দিন প্রথম দেখলাম তখনই ভাল লেগেছিল। কথা-বার্তা বেশ চমৎকার।
অত্যন্ত বুদ্ধিমতী। বন্ধুত্বও গড়ে উঠল। ধীরে ধীরে তার প্রতি আমার মনের
একটা গভীর আকর্ষণ অনুভূত হল। কিন্তু তা পোষে রেখেছিলাম সতর্ক ভাবেই। তবে
বেশ কয় দিন ধরেই ভাবছিলাম, কথাটা এবার তাকে জানানো দরকার। কিন্তু সাহস
হচ্ছিল না। অবশেষে একবার বলে ফেললাম।’
‘তারপর?’
‘তারপর আর কি? সে যা বলল, তা কল্পনাতীত। সত্যি বলতে কি- তার প্রতি আমার
ভাল ধারণাই ছিল। কিন্তু.....’
আনিকার আচরণটা আশিকের প্রতি করলেও তা যেন এক অদৃশ্য কারণে ব্যঁকা সেল হয়ে
রেখার হৃদয়ে আঘাত করতে লাগল। তবে তা গোপন রেখে বলল-
‘আনিকা তো এমন মেয়ে নয়। ঠিক আছে, তারপরও তুমি চিন্তা কর না। আমি তার সাথে কথা বলব।’
বলে সে বিদায় নিল। আশিক ঘরে গিয়ে গা এলিয়ে দিল বিছানায়।
২.
কিছুক্ষণ আগেই বৃষ্টি থেমেছে। মেঘও কেটে গেছে প্রায়। ভেজা পাতায় বিকালের
রোদ ঝিলিক দিচ্ছে। এমন সময় রেখা গেল আনিকার সাথে দেখা করতে।
‘আনিকা। আনিকা বাসায় আছিস? আনিকা।’
‘কে?’ ঘরের ভিতর থেকে আওয়াজ আসল।
‘আমি রেখা।’
‘ও, রেখা! আয়, ভিতরে আয়।’
‘কি করছিস।’
‘তেমন কিছু না। পত্রিকাটা একটু দেখছিলাম।’ বুক ভরে একটা প্রশান্তির
নিশ্বাস নিয়ে আবার বলল, ‘তারপর, কি অবস্থা?’ আজকাল তো প্রায় আসিসই না।
সময় কেমনে কাটছে?’
‘কেমনে আর কাটিবে? তোরও যা- আমারও তো তা-ই। প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা!
অউফ! সারাটা দিন বাচ্চাদের সাথে মাথা-মাথা করতে করতে অসহ্য! আর ভাল্লাগে
না।’
‘ও.....। বুঝেছি। শুন রেখা। তুই তোর কাজটাকে বুঝা মনে করছিস। তাই মজা পাস
না। কষ্ট তো আছেই। তারপরও মজাটা খুঁজেনে। দেখবে আর বিরক্তি লাগবে না।’
এ ভাবে অনেক কথা বলে- শেষে আশিকের কথাটা তুলল রেখা।
‘আচ্ছা, আশিক ভাইয়ের সাথে দেখা হয় না তোর।’
আশিকের নামটা শুনেই চমকে উঠল আনিকা।
‘হ্যাঁ। দেখা হয়েছিল কয়েক দিন আগে। কেন কি হয়েছে।’
‘আমার কিছু হয়নি। কিন্তু তুই এ ভাবে চমকে উঠলি কেন?’
‘না, এমনি।’
‘এমনি না আনিকা। তুই কিছু লুকাতে চাইছিস। কিছু হয়েছে নাকি? অবশ্য কিছু
হয়ে থাকলে আমাকে বলতে পারিস।’
‘বললাম তো কিছু হয়নি।’
‘ঠিক আছে কিছু না হলেই ভাল। তবে আমি আবার বলছি- আমার মনে হয় তুই কিছু
লুকাতে চাইছিস- তোর চোখ-মুখ দেখে এমনটাই মনে হচ্ছে।’
একটু ইতস্তত করে এবার আনিকা বলল-
‘আসলে আমি একটা মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছি।’
‘মানসিক যন্ত্রণা! কিন্তু কেন?’
আশিকের সাথে যে দূর্ব্যবহার আনিকা করেছে- এটা যে সে জানে তা চেপে গেল।
তাই সম্পূর্ণ ঘটনাটা আবার শুনল আনিকার কাছে। সব শুনে রেখা বলল- ‘কয়েক দিন
ধরে আশিক ভাই কেমন জানি মনমরা হয়ে আছে। এখন ঠিক মত বুঝলাম বিষয়টা।’ একটু
থেমে আবার বলল, ‘তুই কাজটা ভাল করিসনি। বেচারা তোকে তার একটা মতামত
জানিয়েছে, তাই বলে তুই এই রকম খারাপ আচরণ করবি? তুই তো জানিস, আশিক ভাই
কত ভাল মানুষ। তারপরও তুই এটা কেমন করে করলি?’
‘এমনটা করে আমারও খুব খারাপ লাগছে। তবু এটা ইচ্ছাকৃত ভাবে আমি করেছি। আমি
চাই না উনার মত একজন ভাল মানুষ আমাকে পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হোক।’
‘মানে?’
‘মানে আর কি? আমার খারাপ আচরণে হয়ত রুষ্ট হয়ে আমার কাছ থেকে দূরে সরে
যাবেন তিনি। তাই সাময়িক একটু কষ্ট হলেও পরিণতিতে তারই ভাল হবে।’
‘তাঁর ভাল তুই বেশি বুঝিস! তাছাড়া পাগলের মত তুই কি বলছিস- আমি তো কিছুই
বুঝতে পারছি না। তোকে পেলে সে ক্ষতিগ্রস্থ হবে কেন? আর না পেলে লাভই বা
কি? যাক আমি এ সব শুনতে চাই না। তুই অনেক বড় একটা অপরাধ করেছিল। আশিক
ভাইয়ের কাছে তুই “সরি” বলবে।’
‘তুই আমার কথাটা শুন।’
‘আমি কোন কথা শুনতে চাই না। আমার সোজা কথা- তুই আশিক ভাইকে “সরি” বলবে।
আর শুন, শুক্রবার ছাড়া তো আবার আমাদের কথা বলার তেমন একটা সুযোগ হয় না-
তাই আগামী শুক্রবার কলেজের সামনে বকুল তলায় সকাল নয়টায় আসবি। আমি আশিক
ভাইকে আসতে বলব।’
‘পাগলামি করিস না রেখা। তুই আমার কথাটা শুনবি তো।’
‘এখন আর কোন কথাই আমি শুনব না। যা শুনার আশিক ভাইয়ের সাথেই শুনব। যা
বললাম সেই মত কাজ করবি- বাস!’
কিছুটা চড়া স্বরে কথাটা বলল রেখা। তাই আনিকা চুপসে গিয়ে তার কথা মেনে
নিল। রেখার বাবা এলাকায় প্রভাবশালী। সে তাঁর একমাত্র আদুরে মেয়ে। তাই
সামাজিক প্রতিরক্ষার খাতিরে আনিকা রেখার বন্ধত্বকে সবসময়ই যথেষ্ট গুরুত্ব
দিয়ে থাকে। দুই বছর আগে এখানে স্কুলে জয়েন করার পর থেকে আনিকা কৌশলী
বন্ধত্বটা গড়ে তুলে রেখার সাথে। তবে অল্প দিনে তা নিখাদ বন্ধুত্বে পরিণত
হয়।
৩.
নির্ধারিত দিনে বকুল তলায় বসে আছে আনিকা আর রেখা। ফুলে সুশোভিত বকুল গাছ
থেকে আসা মনকাড়া গন্ধে বিমহিত চারদিক। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছবির মত সুন্দর
ছোট্ট নদী। বসন্তের উদাস হাওয়ায় মেতে উঠছে পাতাগুলো। হয়ত এ রকম স্বপ্নীল
পরিবেশে বহমান কোন নদীতে বাতাসের তালে ঢেউয়ের তোরে পাল তোলা নৌকার মত
ছন্দে ছন্দে নেঁচে উঠে রসিকের মন!
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে রেখা ফোন দেয় আশিককে।
‘হ্যালো, আশিক ভাই কোথায় আছ?’
‘এই তো কাছাকাছি চলে এসেছি।’
‘তাড়াতাড়ি আস। আমরা বসে আছি।’
‘ঠিক আছে, আসছি। আমার আসতে আর মিনিট পাঁচেক লাগতে পারে।’
বলে ফোন রেখে দিল। অল্পক্ষণের মধ্যেই আশিক আসল। তাকে দেখে আনিকা একটা
অসস্থি বোধ নিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইল। রেখা মুচকি হাসল।
‘সরি। একটু দেরি হয়ে গেল। ব্যবসায়ীদের কত ঝামেলা যে পোহাতে হয়! এখানে
আসার আগ মুহুর্তে আরেকটা নতুন ঝামেলা দেখা দিল। ঐটার জন্যই আসতে একটু
দেরি হল।’
‘ঠিক আছে সমস্যা নেই। বস। তো..... ঝামেলা কি মিটিছে? ’
‘সম্পূর্ণ মিটেনি। বাকিটা এখান থেকে গিয়ে দেখব।’
আশিক চুপচাপ বসল। এবার রেখা মূল কথায় আসল।
‘কি হয়েছে তোমাদের মধ্যে।’ রেখা জানতে চায় আশিকের কাছে।
‘আসলে বলতে গেলে এটা তেমন কিছুই না- আবার অনেক কিছুই।’
‘কথা না ঘুরিয়ে সরাসরি বল আশিক ভাই।’
‘ব্যাপারটা হল গিয়ে, আমি বোধ হয় একটা ভুল করে ফেলেছি। গত দুই বছর ধরেই তো
ওকে আমি চিনি। আনিকার সাথে পরিচয়ের হওয়ার পর থেকেই আমার এক ধরণে ভাল লাগা
কাজ করত। কিন্তু সেটা সাহস করে বলতে পারতাম না। লজ্জায় তোকেও কিছু বলিনি।
এরপর এক এটা নিয়ে এক বন্ধুর সাথে কথা বলি। তার পরামর্শ্যে সরাসরি কথা বলি
আনিকাকে। কিন্তু এটা এভাবে প্রতিক্রিয়ার কারণ হবে- তা আমি ঠিক বুঝতে
পারিনি। যদি জানতাম এমনটা হবে তাহলে কথাটা কখনোই বলতাম না।’
‘এটা এমন কি ব্যাপার? তুমি তোমার কথাটাই তো জানিয়েছ মাত্র। এটাতে আনিকা
রাগ করবে কেন?’ একটু থেমে সে আনিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘আনিকা, আশিক
ভাইয়ের কথা তোর ভাল না লাগলে না করে দিতে পারতি। কিন্তু এরকম আচরণ করলি
কেন?’
‘আমি আন্তরিক ভাবেই দুঃখিত। আমার পক্ষে এই প্রস্তাব গ্রহণ করা সম্ভব ছিল
না। তখন যে আচরণ করেছিলাম, সেটাই আমার কাছে সর্বোত্তম মনে হয়েছিল এবং এটা
আমি করেছিলাম ঠান্ডা মাথায়ই!’ এবার আশিকের দিকে তাকিয়ে সে বলল, ‘আমাকে
ক্ষমা করে দিবেন আশিক ভাই। আমি এর জন্য লজ্জিত!’
‘না না ঠিক আছে। আমি কিছু মনে করিনি।’ বলে রেখার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘রেখা
দেখ্, ওর আচরণে মনটা সাময়িক ভাবে একটু খারাপ হয়েছিল। তারপরও ওর কথাই ঠিক।
আমার প্রস্তাব যেহেতু তার পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়- তাই সরাসরি বলে
দিয়েই ভাল করেছে।’ বলে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার বলল, ‘আমি উঠি তাহলে।’
‘না, তুমি বস। আমার কথা আছে।’
‘তোর কি কথা?’
‘তুমি শুধু বসে শুন। কোন কথা বল না।’
আশিক চুপ করে বসে থাকে। এবার আনিকার দিকে তাকিয়ে সে বলল, ‘তোর পক্ষে
সম্ভব নয়- বুঝলাম। কিন্তু খারাপ আচরণ করলি কেন? তাঁকে না করে দিলেই তো
পারতি।’
‘এই কারণ আমি বলতে পারব না।’
‘না আজকে আমি কোন কথাই শুনব না। তোকে এর কারণ বলতেই হবে।’
রেখাকে বাঁধা দিয়ে আশিক বলল, ‘এভাবে চাপ দেওয়া ঠিক নয় রেখা। ও যেহেতু
বলতে চায় না, তাহলে জোর করে দরকার কি?’
‘তুমি চুপ করা আশিক ভাই। আমাকে এর উত্তর জানতেই হবে। তুমি যা বলেছ, তাতে
এমন কোন ঘটনা ঘটে যায়নি- যার জন্য তাকে এমন আচরণ করতে হবে।’ আনিকার দিকে
তাকিয়ে সে আবার বলল, ‘বল আনিকা, তুই এমনটা কেন করলি?’
‘আমি কাউকে ঠকাতে চাই না।’
‘এখানে ঠকানো-জিতানোর প্রশ্ন আসবে কেন?’
‘কারণ আছে।’ বলে বুক ভরে একটা শ্বাস নিয়ে একটু শক্ত হয়ে বসে কন্ঠটাকে দৃঢ়
করে সে আবার বলতে শুরু করল, ‘শুন তাহলে, শুরু থেকেই বলছি।
‘তখন আমার বয়স নয় বছর। মা-বাবা রোড এক্সিডেন্টে মারা যান। চাচার বাসায়
থেকে বড় হতে থাকি। নিজের সন্তানের মতই আদর করতেন চাচা। মা-বাবার সমস্ত
আদরই তার কাছ থেকেই পেতাম। চাচীও আদর করতেন। তাঁদের দুই সন্তান। এক ছেলে
এক মেয়ে। মেয়েটা বয়সে আমার কিছু দিনের ছোট হলেও, ছেলেটা ছিল আমার চেয়ে
সাত বছরের বড়। ঐ চাচাত ভাই তরুণ বয়স থেকে নষ্ট ছেলেদের সাথে মিশতে থাকে।
এক পর্যয়ে নেশা থেকে শুরু করে ছিনতাই ভাড়াটে গুন্ডামি পর্যন্ত করতে থাকে।
এই দুঃসময়ে চাচাও মারা যান। এই সময় আই.এ. পাস করেছি মাত্র। তখন চাচী
চাইলেন আমাকে তার পুত্র বধু হিসাবে তার ঘরে রেখে দিতে। তাঁর ইচ্ছাটা যে
মহৎ ছিল না, এমনটা নয়। তিনি আমাকে খুব পছন্দ করতেন। আবার তাঁর ধারণা ছিল,
আমার চেষ্টায় হয়ত তাঁর সন্তান সুপথে ফিরে আসবে। প্রথমে রাজি না থাকলেও
পরে চাঁচীর মতকে অসম্মান করতে পারিনি। কিন্তু এরপরই ঘটে যায়.....।’
এবার কণ্ঠে কিছুটা আড়ষ্টতা আসে। কিঞ্চিত কাঁপতে থাকে তার কণ্ঠস্বর। চোখে
কিছুটা অশ্রুও জমে আসে। কাঁদতে কাঁদতে জানায় তার নেশাখোড় চাচাত ভাইয়ের
সুযোগ মত জবরদস্তিমূলক অপকর্মের কথা।
‘কথাটা আমি চেপে যাই। কিছু দিন পর শরীরটা ভাল যাচ্ছিল না। ডাক্তার জানায়
আমি অন্তঃসত্ত্বা। চাচিও এবার বেঁকে বসলেন। দোষাদোষি করলেন আমাকে। কি আর
করা! একবার ভেবেছিলাম আত্মহত্যা করব। কিন্তু পরে ভাবলাম- আমি আত্মহত্যা
করব কেন? আমি তো কোন দোষ করিনি? দোষ করেনি আমার পেটের সন্তানও। মনকে শক্ত
করে সিদ্ধান্ত নিলাম নতুন করে। জীবন কোন ছেলে খেলা নয়।
‘চলে গেলাম মামার বাড়ি। মামা মানসিক ভাবে চাপ প্রয়োগ করলেন বাচ্চা নষ্ট
করে ফেলতে। ভাবলাম- তা হবে না। রুষ্ট হলেন তিনি। তাঁদের সাথে আমাকে রাখা
সম্ভব হবে না- সাফ জানিয়ে দিলেন তিনি। বাবা দু’টি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। তার
একটাতে গিয়ে উঠলাম। অপর ফ্লেটের ভাড়ায় দিন কেটে যেত।
‘এ ভাবেই সময় কাটছিল। এক পর্যায়ে সময় মত একটা মেয়ে হল। ভেবে ছিলাম সাথে
রাখব। কিন্তু সম্ভব হল না। সমাজ-বাস্তবতা ছিল প্রতিকূলে। তাই তাকে একটা
শিশু সদনে দিয়ে দিলাম। এখনও সেখানেই আছে সে। আর আমি শিক্ষকতার পেশা
নিলাম। এখান থেকে যতটুকু সম্ভব- ওর জন্য কিছু করার চেষ্টা করি।
‘বুঝ্ তাহলে! এই অবস্থায় আশিক ভাইয়ের কাছ থেকে আমি কি ভাবে আত্মগোপন করতে
পারতাম ? তাঁকে সহজে দূরে সরিয়ে দেওয়া জন্য এটাই যে ছিল শ্রেষ্ঠ পথ!’
এতগুলো কথা রেখা আর আশিক তন্ময় হয়ে শুনছিল। বিশ্ময়ে তাদের চোখ বিস্ফোরিত
হওয়ার অবস্থা।
‘বলিস কি! এই কথা তো কোন দিন বলিসনি।’ বলে রেখা।
‘রেখা, এটা কি বলার কথা। এটা সু্প্ত আগ্নেয়গিরির মত- উত্তপকে বুকে ধারণ
করা যায়- কিন্তু তা অন্যের কাছে প্রদর্শন করা যায় না।’
এবার মুখ খুলে আশিক।
‘ছি! ছি! আনিকা। এই জন্য তুমি আমার সাথে এমন আচরণ করবা। আমি তো পশু নই-
মানুষ। আমি হাঁড়ে জরানো একখণ্ড মাংসপিণ্ডকে ভালবাসিনি। আরে..... ভালবাসা
মানুষের দেহে নয়- মনে! তোমার মন-মানসিকতায় আমি মুগ্ধ। তাই তোমাকে
ভালবেসেছিলাম- এখনও ভালবাসি। তাই বলে..... না না, আমি আর ভাবতে পারছি না।
ঐখানে তো তোমার কোন দোষ ছিল না। সন্তানকে ত্যাগ না করে তুমি মহত্বে
পরিচয় দিয়েছ। তোমার বিবেকের তাড়নায় সততার আশ্রয় নিয়েছ। তোমার কথা না ভেবে
আমার দিক নিয়ে ভেবেছ। তোমার মত ভাল মানুষ কয় জন আছে আমাদের সমাজে! তোমার
এই ভাল মনুষ্যত্বটাকে আমি ভালবেসেছি। তোমাকে আমি ভালবাসি- তোমাকেই আমি
চাই। তোমার প্রতি আমার ভালবাসা- নিখাদ ভালবাস।’
আনিকা পাথরের মত বসে কথাগুলো শুনছে। অনতিদূরে নদীর পাশে একটা গাছের উঁচু
ডালে বসা এক জোড়া কোকিলের ক্রমানুক্রমিক কুহু-কুহু মিষ্টি সুর ভেসে আসছে
তাদের কানে।
বসন্ত কাল। উদাস হাওয়া যেন আপন মনে ব্যকুল ভাবে বয়ে যাচ্ছে। বাতাসের এই
প্রবাহের সাথে সাথে গাছের পাতাগুলোও যাচ্ছে ঝরে। কয়েক দিন ধরে আকাশে
হালকা মেঘ আসা-যাওয়া করলেও গত রাত থেকে তা আরও ঘণীভূত হয়ে বৃষ্টি হয়ে
নেমে আসছে। জীর্ণ গাছের নবীন কুঁড়িগুলো তাতে ভিজে যেন আপনার ঝকমকে রূপকে
শতগুণে প্রকাশ করতে লাগল। প্রকৃতির সাথে তা যেন গড়ে তুলল এক অনুপম
মিতালী।
এমন মিশ্র অনুভুতি জাগানিয়া পরিবেশে বারান্দায় একটা হাতাওয়ালা চেয়ারে বসে
গালে হাত দিয়ে উদাস দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে আশিক। দুশ্চিন্তায়
তার মাথা ভোঁ-ভোঁ করছে। আনিকা কি সত্যিই তাকে পাশ কাটিয়ে দূরে সরে গেল?
অনেক যত্নে মনে পোষা স্বপ্নটা কি ঘুচে যাবে শেষ-মেষ? কিছুই যেন ভাবতে
পারছে না সে। চোখ দু’টো তার ঝাপসা হয়ে আসছে ।
‘বাবা আশিক। আশিক। এই আশিক।’ এই ভাবে কয়েকটা ডাক দেয় আশিকের মা। ডাক
শুনে হঠাৎ আত্মমগ্নতা ভেঙ্গে যায় আশিকের।
‘কি আম্মা। কিছু কইবা?’
‘কি হইছে তোর? কয়ডা ডাক দিলাম- এতক্ষণে কথা কইতাস!’
‘কিছু না আম্মা। মাথাটা কেমন জানি করছে।’
‘তাই না কি! কই কিছু তো বলিস নাই।’
‘না, তেমন কিছু না। এই আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে তো, তাই বোধ হয় একটু-আধটু
জর-টর হতে পারে।’
‘অবহেলা করিস না। ডাক্তার দেখায়া ওষুধ নিয়া আয়।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে, যাব। তুমি কেন ডাকছিলা সেটা কও।’
‘তোকে রেখা একটু খুঁজছে।’
‘কই?’
‘ড্রয়িং রুমে।’
‘ঠিক আছে এখানে আসতে বল।’
তার মা চলে গিয়ে রেখাকে পাঠিয়ে দিল বারান্দায়। প্রতিবেশি রেখা আশিকের
চেয়ে কয়েক বছরের ছোট। তাই আশিককে ভাই বলে ডাকে। তারপরও তাদের মধ্যে ভাল
বন্ধত্ব।
পিছন থেকে আশিককে খুব গভীর চিন্তিত দেখে রসিকতা শুরু করল রেখা।
‘কি আশিক ভাই, যে ভাব নিয়ে বসে আছ, কবি হয়ে গেলে না কি! তা..... লম্বা
চুল রেখে, হাতে সিগারেট জ্বালিয়ে, বস্তাপঁচা কতগুলো উদ্ভট কথাকে খাতার
মধ্যে লিখে জোর-জবরদস্তি করে কবি বনে যাওয়া যায়! তোমার তো এ সবের কিছু্ই
দেখছি না।,
‘কবি হওয়া কি মুখের কথা? ওরে বাবা কি কঠিন জগত রে সেটা!’
‘আরে আশিক ভাই, তুমি তো ব্যবসায়ী মানুষ তাই বোধ হয় কবিতা-টবিতা পড় না।
একবার চেষ্টা করে কর, তুমিও পারবা। এই ধর- ড্রয়িং রুমে জীবন্ত খেজুর গাছ,
পাহাড়ের ঝর্ণায় মধুর ধারা, সোফার মাঝে রূপালী হাসি- এই সব লিখে যাইবা। আর
নদী, সাগর, চাঁদ, সূর্য- এগুলি তো আছেই!’
‘এই সব লিখলেই কবি হওয়া যায়- না? ফালতু কথা রেখে যা এখান থেকে। আমার ভাল
লাগছে না কিছু।’
‘আশিক ভাই, ফালতু না- ফালতু না! আচ্ছা ঠিক আছে- যাও, তোমার ভাব যেহেতু
এসেছে, তাহলে কবিতা লিখার আরেকটা পদ্ধতি বলে দেই তোমাকে। ধর, একটা সাদা
পাতা নিবা, আরেকটা পেন্সিল নিবা। এরপর পাতায় যে কোন একটা কাহিনী বা কোন
কিছুর বর্ণনা লিখবা। গল্প হলেও চলবে। আবার তোমার নিজের সর্ম্পকে লিখলেও
কোন অসুবিধা নেই! তারপর পাতাটির ডান এবং বাম পাশে সমপরিমান মার্জিন
টানবা। সবশেষে ঐ মার্জিনের বাহিরের শব্দগুলো মুছে দিবা। বাস্! হয়ে যাবে
একটা আধুনিক কবিতা। না না শুধু আধুনিক না, একেবারে অত্যাধুনিক কবিতা!
‘আরেকটা কথা। পাঠক তোমার কবিতা যত কম বুঝবে, এর সার্থকতা তত বেশি হবে,
তুমি তত বড় কবি হতে পারবা। আর পকেটের কয়টা টাকা খরচ করে যদি একটা বই
প্রকাশ করতে পার, তাহলে তো আর কথাই নেই!’
একটু বাচাল প্রকৃতির মেয়ে রেখা কথা বলে বেশ গুছিয়ে। তাই বেশি কথা শুনতেও
খুব একটা বিরক্তি বোধ হয় না। তবে আজ আশিকের এসব কথা শুনতে ভাল লাগছে না।
‘তুই থাম রেখা। প্লিজ তুই আজ চলে যা। আমার ভাল লাগছে না কিছু।’ আনিকার
প্রতি আশিকের দূর্বলতা রেখার কাছে আগেই কিছুটা ধরা পড়েছিল। কিন্তু তা সে
কাউকে বুঝতে দেয়নি। কি জানি ভেবে সে হঠাৎ আনিকার প্রসঙ্গ টেনে বলল, ‘কেন,
আনিকার সাথে কি কথা হয় না নাকি?’ আশিকের মা শুনতে পারে- এই আশংকায় কথাটা
আস্তে বলে রেখা।
‘হয়। কিন্তু.....’
‘কিন্তু কি?’
‘একটা সমস্যা হয়ে গেছে।’
‘সমস্যা! কি সমস্যা?’
‘কি ভাবে যে বলি?’
‘আমার সাথে বলতে সংকোচ! সমস্যা নেই, সব কিছু খুলে বল।’
‘আমি আনিকাকে মনে মনে ভালবাসতাম। কিন্তু অনেক বার বলতে চেয়েও লজ্জায় তা
বলতে পারিনি। বেশ কষ্টে লজ্জাটাকে পাশ কাটিয়ে গত সোমবার কথাটা তাকে
জানিয়েছিলাম। কিন্তু এতে সে আমার প্রতি অস্বাভাবিক আচরণ করে- রীতিমত
দূর্ব্যবহার করে আমার সাথে। আর জানিয়ে দিয়েছে- আমার সাথে না কি তার
বন্ধুত্বের সম্পর্কটাও রাখা আর সম্ভব না।’
‘তাই না কি? তুমি তো এ কথা আমাকে কখনও জানাওনি।’
‘তুই জেনে কি করবি?’
‘কি করব মানে? সে আমার বন্ধবী। আর কিছু না হোক, তাকে তো অন্তত জিজ্ঞাসা
করতে পারতাম।’
‘কি লাভ হত? জোর করে রাজ্য জয় করা যায়- মন জয় করা না। প্রেম-প্রীতির
বন্ধন আপনা থেকে গড়ে উঠতে হয়।’
‘জোরের কথা আসছে কেন? আমি তাকে বুঝাতে পারতাম। তাছাড়া তুমি তো তার অযোগ্য নও।’
‘যোগ্যতা-অযোগ্যতা বুঝি না। তাকে ভাল লেগেছে। তোর মাধ্যমেই তার সাথে আমার
পরিচয়। যে দিন প্রথম দেখলাম তখনই ভাল লেগেছিল। কথা-বার্তা বেশ চমৎকার।
অত্যন্ত বুদ্ধিমতী। বন্ধুত্বও গড়ে উঠল। ধীরে ধীরে তার প্রতি আমার মনের
একটা গভীর আকর্ষণ অনুভূত হল। কিন্তু তা পোষে রেখেছিলাম সতর্ক ভাবেই। তবে
বেশ কয় দিন ধরেই ভাবছিলাম, কথাটা এবার তাকে জানানো দরকার। কিন্তু সাহস
হচ্ছিল না। অবশেষে একবার বলে ফেললাম।’
‘তারপর?’
‘তারপর আর কি? সে যা বলল, তা কল্পনাতীত। সত্যি বলতে কি- তার প্রতি আমার
ভাল ধারণাই ছিল। কিন্তু.....’
আনিকার আচরণটা আশিকের প্রতি করলেও তা যেন এক অদৃশ্য কারণে ব্যঁকা সেল হয়ে
রেখার হৃদয়ে আঘাত করতে লাগল। তবে তা গোপন রেখে বলল-
‘আনিকা তো এমন মেয়ে নয়। ঠিক আছে, তারপরও তুমি চিন্তা কর না। আমি তার সাথে কথা বলব।’
বলে সে বিদায় নিল। আশিক ঘরে গিয়ে গা এলিয়ে দিল বিছানায়।
২.
কিছুক্ষণ আগেই বৃষ্টি থেমেছে। মেঘও কেটে গেছে প্রায়। ভেজা পাতায় বিকালের
রোদ ঝিলিক দিচ্ছে। এমন সময় রেখা গেল আনিকার সাথে দেখা করতে।
‘আনিকা। আনিকা বাসায় আছিস? আনিকা।’
‘কে?’ ঘরের ভিতর থেকে আওয়াজ আসল।
‘আমি রেখা।’
‘ও, রেখা! আয়, ভিতরে আয়।’
‘কি করছিস।’
‘তেমন কিছু না। পত্রিকাটা একটু দেখছিলাম।’ বুক ভরে একটা প্রশান্তির
নিশ্বাস নিয়ে আবার বলল, ‘তারপর, কি অবস্থা?’ আজকাল তো প্রায় আসিসই না।
সময় কেমনে কাটছে?’
‘কেমনে আর কাটিবে? তোরও যা- আমারও তো তা-ই। প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা!
অউফ! সারাটা দিন বাচ্চাদের সাথে মাথা-মাথা করতে করতে অসহ্য! আর ভাল্লাগে
না।’
‘ও.....। বুঝেছি। শুন রেখা। তুই তোর কাজটাকে বুঝা মনে করছিস। তাই মজা পাস
না। কষ্ট তো আছেই। তারপরও মজাটা খুঁজেনে। দেখবে আর বিরক্তি লাগবে না।’
এ ভাবে অনেক কথা বলে- শেষে আশিকের কথাটা তুলল রেখা।
‘আচ্ছা, আশিক ভাইয়ের সাথে দেখা হয় না তোর।’
আশিকের নামটা শুনেই চমকে উঠল আনিকা।
‘হ্যাঁ। দেখা হয়েছিল কয়েক দিন আগে। কেন কি হয়েছে।’
‘আমার কিছু হয়নি। কিন্তু তুই এ ভাবে চমকে উঠলি কেন?’
‘না, এমনি।’
‘এমনি না আনিকা। তুই কিছু লুকাতে চাইছিস। কিছু হয়েছে নাকি? অবশ্য কিছু
হয়ে থাকলে আমাকে বলতে পারিস।’
‘বললাম তো কিছু হয়নি।’
‘ঠিক আছে কিছু না হলেই ভাল। তবে আমি আবার বলছি- আমার মনে হয় তুই কিছু
লুকাতে চাইছিস- তোর চোখ-মুখ দেখে এমনটাই মনে হচ্ছে।’
একটু ইতস্তত করে এবার আনিকা বলল-
‘আসলে আমি একটা মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছি।’
‘মানসিক যন্ত্রণা! কিন্তু কেন?’
আশিকের সাথে যে দূর্ব্যবহার আনিকা করেছে- এটা যে সে জানে তা চেপে গেল।
তাই সম্পূর্ণ ঘটনাটা আবার শুনল আনিকার কাছে। সব শুনে রেখা বলল- ‘কয়েক দিন
ধরে আশিক ভাই কেমন জানি মনমরা হয়ে আছে। এখন ঠিক মত বুঝলাম বিষয়টা।’ একটু
থেমে আবার বলল, ‘তুই কাজটা ভাল করিসনি। বেচারা তোকে তার একটা মতামত
জানিয়েছে, তাই বলে তুই এই রকম খারাপ আচরণ করবি? তুই তো জানিস, আশিক ভাই
কত ভাল মানুষ। তারপরও তুই এটা কেমন করে করলি?’
‘এমনটা করে আমারও খুব খারাপ লাগছে। তবু এটা ইচ্ছাকৃত ভাবে আমি করেছি। আমি
চাই না উনার মত একজন ভাল মানুষ আমাকে পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হোক।’
‘মানে?’
‘মানে আর কি? আমার খারাপ আচরণে হয়ত রুষ্ট হয়ে আমার কাছ থেকে দূরে সরে
যাবেন তিনি। তাই সাময়িক একটু কষ্ট হলেও পরিণতিতে তারই ভাল হবে।’
‘তাঁর ভাল তুই বেশি বুঝিস! তাছাড়া পাগলের মত তুই কি বলছিস- আমি তো কিছুই
বুঝতে পারছি না। তোকে পেলে সে ক্ষতিগ্রস্থ হবে কেন? আর না পেলে লাভই বা
কি? যাক আমি এ সব শুনতে চাই না। তুই অনেক বড় একটা অপরাধ করেছিল। আশিক
ভাইয়ের কাছে তুই “সরি” বলবে।’
‘তুই আমার কথাটা শুন।’
‘আমি কোন কথা শুনতে চাই না। আমার সোজা কথা- তুই আশিক ভাইকে “সরি” বলবে।
আর শুন, শুক্রবার ছাড়া তো আবার আমাদের কথা বলার তেমন একটা সুযোগ হয় না-
তাই আগামী শুক্রবার কলেজের সামনে বকুল তলায় সকাল নয়টায় আসবি। আমি আশিক
ভাইকে আসতে বলব।’
‘পাগলামি করিস না রেখা। তুই আমার কথাটা শুনবি তো।’
‘এখন আর কোন কথাই আমি শুনব না। যা শুনার আশিক ভাইয়ের সাথেই শুনব। যা
বললাম সেই মত কাজ করবি- বাস!’
কিছুটা চড়া স্বরে কথাটা বলল রেখা। তাই আনিকা চুপসে গিয়ে তার কথা মেনে
নিল। রেখার বাবা এলাকায় প্রভাবশালী। সে তাঁর একমাত্র আদুরে মেয়ে। তাই
সামাজিক প্রতিরক্ষার খাতিরে আনিকা রেখার বন্ধত্বকে সবসময়ই যথেষ্ট গুরুত্ব
দিয়ে থাকে। দুই বছর আগে এখানে স্কুলে জয়েন করার পর থেকে আনিকা কৌশলী
বন্ধত্বটা গড়ে তুলে রেখার সাথে। তবে অল্প দিনে তা নিখাদ বন্ধুত্বে পরিণত
হয়।
৩.
নির্ধারিত দিনে বকুল তলায় বসে আছে আনিকা আর রেখা। ফুলে সুশোভিত বকুল গাছ
থেকে আসা মনকাড়া গন্ধে বিমহিত চারদিক। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছবির মত সুন্দর
ছোট্ট নদী। বসন্তের উদাস হাওয়ায় মেতে উঠছে পাতাগুলো। হয়ত এ রকম স্বপ্নীল
পরিবেশে বহমান কোন নদীতে বাতাসের তালে ঢেউয়ের তোরে পাল তোলা নৌকার মত
ছন্দে ছন্দে নেঁচে উঠে রসিকের মন!
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে রেখা ফোন দেয় আশিককে।
‘হ্যালো, আশিক ভাই কোথায় আছ?’
‘এই তো কাছাকাছি চলে এসেছি।’
‘তাড়াতাড়ি আস। আমরা বসে আছি।’
‘ঠিক আছে, আসছি। আমার আসতে আর মিনিট পাঁচেক লাগতে পারে।’
বলে ফোন রেখে দিল। অল্পক্ষণের মধ্যেই আশিক আসল। তাকে দেখে আনিকা একটা
অসস্থি বোধ নিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইল। রেখা মুচকি হাসল।
‘সরি। একটু দেরি হয়ে গেল। ব্যবসায়ীদের কত ঝামেলা যে পোহাতে হয়! এখানে
আসার আগ মুহুর্তে আরেকটা নতুন ঝামেলা দেখা দিল। ঐটার জন্যই আসতে একটু
দেরি হল।’
‘ঠিক আছে সমস্যা নেই। বস। তো..... ঝামেলা কি মিটিছে? ’
‘সম্পূর্ণ মিটেনি। বাকিটা এখান থেকে গিয়ে দেখব।’
আশিক চুপচাপ বসল। এবার রেখা মূল কথায় আসল।
‘কি হয়েছে তোমাদের মধ্যে।’ রেখা জানতে চায় আশিকের কাছে।
‘আসলে বলতে গেলে এটা তেমন কিছুই না- আবার অনেক কিছুই।’
‘কথা না ঘুরিয়ে সরাসরি বল আশিক ভাই।’
‘ব্যাপারটা হল গিয়ে, আমি বোধ হয় একটা ভুল করে ফেলেছি। গত দুই বছর ধরেই তো
ওকে আমি চিনি। আনিকার সাথে পরিচয়ের হওয়ার পর থেকেই আমার এক ধরণে ভাল লাগা
কাজ করত। কিন্তু সেটা সাহস করে বলতে পারতাম না। লজ্জায় তোকেও কিছু বলিনি।
এরপর এক এটা নিয়ে এক বন্ধুর সাথে কথা বলি। তার পরামর্শ্যে সরাসরি কথা বলি
আনিকাকে। কিন্তু এটা এভাবে প্রতিক্রিয়ার কারণ হবে- তা আমি ঠিক বুঝতে
পারিনি। যদি জানতাম এমনটা হবে তাহলে কথাটা কখনোই বলতাম না।’
‘এটা এমন কি ব্যাপার? তুমি তোমার কথাটাই তো জানিয়েছ মাত্র। এটাতে আনিকা
রাগ করবে কেন?’ একটু থেমে সে আনিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘আনিকা, আশিক
ভাইয়ের কথা তোর ভাল না লাগলে না করে দিতে পারতি। কিন্তু এরকম আচরণ করলি
কেন?’
‘আমি আন্তরিক ভাবেই দুঃখিত। আমার পক্ষে এই প্রস্তাব গ্রহণ করা সম্ভব ছিল
না। তখন যে আচরণ করেছিলাম, সেটাই আমার কাছে সর্বোত্তম মনে হয়েছিল এবং এটা
আমি করেছিলাম ঠান্ডা মাথায়ই!’ এবার আশিকের দিকে তাকিয়ে সে বলল, ‘আমাকে
ক্ষমা করে দিবেন আশিক ভাই। আমি এর জন্য লজ্জিত!’
‘না না ঠিক আছে। আমি কিছু মনে করিনি।’ বলে রেখার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘রেখা
দেখ্, ওর আচরণে মনটা সাময়িক ভাবে একটু খারাপ হয়েছিল। তারপরও ওর কথাই ঠিক।
আমার প্রস্তাব যেহেতু তার পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়- তাই সরাসরি বলে
দিয়েই ভাল করেছে।’ বলে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার বলল, ‘আমি উঠি তাহলে।’
‘না, তুমি বস। আমার কথা আছে।’
‘তোর কি কথা?’
‘তুমি শুধু বসে শুন। কোন কথা বল না।’
আশিক চুপ করে বসে থাকে। এবার আনিকার দিকে তাকিয়ে সে বলল, ‘তোর পক্ষে
সম্ভব নয়- বুঝলাম। কিন্তু খারাপ আচরণ করলি কেন? তাঁকে না করে দিলেই তো
পারতি।’
‘এই কারণ আমি বলতে পারব না।’
‘না আজকে আমি কোন কথাই শুনব না। তোকে এর কারণ বলতেই হবে।’
রেখাকে বাঁধা দিয়ে আশিক বলল, ‘এভাবে চাপ দেওয়া ঠিক নয় রেখা। ও যেহেতু
বলতে চায় না, তাহলে জোর করে দরকার কি?’
‘তুমি চুপ করা আশিক ভাই। আমাকে এর উত্তর জানতেই হবে। তুমি যা বলেছ, তাতে
এমন কোন ঘটনা ঘটে যায়নি- যার জন্য তাকে এমন আচরণ করতে হবে।’ আনিকার দিকে
তাকিয়ে সে আবার বলল, ‘বল আনিকা, তুই এমনটা কেন করলি?’
‘আমি কাউকে ঠকাতে চাই না।’
‘এখানে ঠকানো-জিতানোর প্রশ্ন আসবে কেন?’
‘কারণ আছে।’ বলে বুক ভরে একটা শ্বাস নিয়ে একটু শক্ত হয়ে বসে কন্ঠটাকে দৃঢ়
করে সে আবার বলতে শুরু করল, ‘শুন তাহলে, শুরু থেকেই বলছি।
‘তখন আমার বয়স নয় বছর। মা-বাবা রোড এক্সিডেন্টে মারা যান। চাচার বাসায়
থেকে বড় হতে থাকি। নিজের সন্তানের মতই আদর করতেন চাচা। মা-বাবার সমস্ত
আদরই তার কাছ থেকেই পেতাম। চাচীও আদর করতেন। তাঁদের দুই সন্তান। এক ছেলে
এক মেয়ে। মেয়েটা বয়সে আমার কিছু দিনের ছোট হলেও, ছেলেটা ছিল আমার চেয়ে
সাত বছরের বড়। ঐ চাচাত ভাই তরুণ বয়স থেকে নষ্ট ছেলেদের সাথে মিশতে থাকে।
এক পর্যয়ে নেশা থেকে শুরু করে ছিনতাই ভাড়াটে গুন্ডামি পর্যন্ত করতে থাকে।
এই দুঃসময়ে চাচাও মারা যান। এই সময় আই.এ. পাস করেছি মাত্র। তখন চাচী
চাইলেন আমাকে তার পুত্র বধু হিসাবে তার ঘরে রেখে দিতে। তাঁর ইচ্ছাটা যে
মহৎ ছিল না, এমনটা নয়। তিনি আমাকে খুব পছন্দ করতেন। আবার তাঁর ধারণা ছিল,
আমার চেষ্টায় হয়ত তাঁর সন্তান সুপথে ফিরে আসবে। প্রথমে রাজি না থাকলেও
পরে চাঁচীর মতকে অসম্মান করতে পারিনি। কিন্তু এরপরই ঘটে যায়.....।’
এবার কণ্ঠে কিছুটা আড়ষ্টতা আসে। কিঞ্চিত কাঁপতে থাকে তার কণ্ঠস্বর। চোখে
কিছুটা অশ্রুও জমে আসে। কাঁদতে কাঁদতে জানায় তার নেশাখোড় চাচাত ভাইয়ের
সুযোগ মত জবরদস্তিমূলক অপকর্মের কথা।
‘কথাটা আমি চেপে যাই। কিছু দিন পর শরীরটা ভাল যাচ্ছিল না। ডাক্তার জানায়
আমি অন্তঃসত্ত্বা। চাচিও এবার বেঁকে বসলেন। দোষাদোষি করলেন আমাকে। কি আর
করা! একবার ভেবেছিলাম আত্মহত্যা করব। কিন্তু পরে ভাবলাম- আমি আত্মহত্যা
করব কেন? আমি তো কোন দোষ করিনি? দোষ করেনি আমার পেটের সন্তানও। মনকে শক্ত
করে সিদ্ধান্ত নিলাম নতুন করে। জীবন কোন ছেলে খেলা নয়।
‘চলে গেলাম মামার বাড়ি। মামা মানসিক ভাবে চাপ প্রয়োগ করলেন বাচ্চা নষ্ট
করে ফেলতে। ভাবলাম- তা হবে না। রুষ্ট হলেন তিনি। তাঁদের সাথে আমাকে রাখা
সম্ভব হবে না- সাফ জানিয়ে দিলেন তিনি। বাবা দু’টি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। তার
একটাতে গিয়ে উঠলাম। অপর ফ্লেটের ভাড়ায় দিন কেটে যেত।
‘এ ভাবেই সময় কাটছিল। এক পর্যায়ে সময় মত একটা মেয়ে হল। ভেবে ছিলাম সাথে
রাখব। কিন্তু সম্ভব হল না। সমাজ-বাস্তবতা ছিল প্রতিকূলে। তাই তাকে একটা
শিশু সদনে দিয়ে দিলাম। এখনও সেখানেই আছে সে। আর আমি শিক্ষকতার পেশা
নিলাম। এখান থেকে যতটুকু সম্ভব- ওর জন্য কিছু করার চেষ্টা করি।
‘বুঝ্ তাহলে! এই অবস্থায় আশিক ভাইয়ের কাছ থেকে আমি কি ভাবে আত্মগোপন করতে
পারতাম ? তাঁকে সহজে দূরে সরিয়ে দেওয়া জন্য এটাই যে ছিল শ্রেষ্ঠ পথ!’
এতগুলো কথা রেখা আর আশিক তন্ময় হয়ে শুনছিল। বিশ্ময়ে তাদের চোখ বিস্ফোরিত
হওয়ার অবস্থা।
‘বলিস কি! এই কথা তো কোন দিন বলিসনি।’ বলে রেখা।
‘রেখা, এটা কি বলার কথা। এটা সু্প্ত আগ্নেয়গিরির মত- উত্তপকে বুকে ধারণ
করা যায়- কিন্তু তা অন্যের কাছে প্রদর্শন করা যায় না।’
এবার মুখ খুলে আশিক।
‘ছি! ছি! আনিকা। এই জন্য তুমি আমার সাথে এমন আচরণ করবা। আমি তো পশু নই-
মানুষ। আমি হাঁড়ে জরানো একখণ্ড মাংসপিণ্ডকে ভালবাসিনি। আরে..... ভালবাসা
মানুষের দেহে নয়- মনে! তোমার মন-মানসিকতায় আমি মুগ্ধ। তাই তোমাকে
ভালবেসেছিলাম- এখনও ভালবাসি। তাই বলে..... না না, আমি আর ভাবতে পারছি না।
ঐখানে তো তোমার কোন দোষ ছিল না। সন্তানকে ত্যাগ না করে তুমি মহত্বে
পরিচয় দিয়েছ। তোমার বিবেকের তাড়নায় সততার আশ্রয় নিয়েছ। তোমার কথা না ভেবে
আমার দিক নিয়ে ভেবেছ। তোমার মত ভাল মানুষ কয় জন আছে আমাদের সমাজে! তোমার
এই ভাল মনুষ্যত্বটাকে আমি ভালবেসেছি। তোমাকে আমি ভালবাসি- তোমাকেই আমি
চাই। তোমার প্রতি আমার ভালবাসা- নিখাদ ভালবাস।’
আনিকা পাথরের মত বসে কথাগুলো শুনছে। অনতিদূরে নদীর পাশে একটা গাছের উঁচু
ডালে বসা এক জোড়া কোকিলের ক্রমানুক্রমিক কুহু-কুহু মিষ্টি সুর ভেসে আসছে
তাদের কানে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শান্তনু ব্যানার্জ্জী ০৮/০৭/২০১৫একদিকে ভালোবাসা, আর একদিকে সমাজের মুখে চরম কশাঘাত - অসাধারণ বন্ধু, খুব ভাল লাগলো।
-
অ ২৬/০৬/২০১৫অনেক বড় কিন্তু সুন্দর লেখা ।
-
T s J ২১/০৬/২০১৫অসাধারন
-
জে এস সাব্বির ২১/০৬/২০১৫বাস্তবতার রূঢ় প্রভাব আর ভালবাসার অসীম ক্ষমতা এই দুইয়ের সংমিশ্রণে আপনার লেখনি হয়ে উঠেছে অসাধারণ ।
-
মোবারক হোসেন ২১/০৬/২০১৫ভাল লাগলো।অসাধারন।