হাদারামের ফতুয়া পড়া ও বনলতার স্বপ্ন পূরন
চিঠি আর ছবির মাঝে একটা মিথ্যে লুকিয়ে আছে। আমি হাদারাম লিখেছিলাম জীবনে আর কোন দিনও আমার শখের ফতুয়াটা পড়তে পারেনি, অদৃশ্য চোখ রাঙ্গানীর ভয়ে। সত্যিই আর পড়িনি কোন দিন। তবে একবার ঘর হতে বের হওয়ার সময় মনে করেছিলাম আজ ফতুয়াটা পড়ে বের হই, যদি রাস্তায় বনলতা দেখে ফেলে, তবে তার বুকের গভীরে জমানো বিশ্বাস টুকু ভেঙ্গে যাবে, আমার মত একটা হাদারামের জন্য অন্য সুযোগ্য হাদারামের সাথে প্রতারনা করবে কেন? আমি পারিনি বলে অন্যকেউই কি কাঁধে মাথা রেখে শ্রাবনের চাঁদ দেখাতে পারবে না?
সত্যিই সেদিন রাস্তায় দেখা হয়ে যায় বনলতার সাথে। গাড়ী থেকে নেমে দৌড়ে ছুটে আসে আমার কাছে। কিছুক্ষন চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে, হাজার টা প্রশ্ন নিয়ে। পর মুহর্তেই ফতুয়াটা চোখে পড়ে যায়, দেখা মাত্রই আতকে ওঠে, বুঝতে পারে হাদারামের হৃদয়ে বনলতার জন্য আর বিন্দুমাত্র জায়গা নেই। এক মুহুর্ত আর দাঁড়ায় না। কোন কথা না বলে মাথা নীচু করে ফিরে যায় গাড়ীর দিকে। আর একটি বারের জন্যেও ফিরে তাকায় না আমার দিকে।
আমি হাদারাম অসহায়ের মত অপলক দৃষ্টিতে তার চলে যাওয়া দেখতে থাকি। অপ্রত্যাশিত ঘটনায় হতভম্ব হয়ে পড়ি। নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা নির্দয় কষ্ট আর আনন্দ মিশ্রিত অশ্রু ঝড়ে পড়ে ফোঁটায় ফোঁটায়। বুক থেকে একটা পাথর নেমে যায়, পরাজিত মনকে শান্তনা দিই, বনলতা আজ থেকে তুমি মুক্ত, স্বাধীন, আজকে তুমি তোমার যোগ্য হাদারামের কাঁধে নিঃসংকোচে মাথা রেখে শ্রাবনের চাঁদ দেখতে পারবে। এই হাদারামকে নিয়ে মনের মধ্যে যে স্বপ্নের প্রাসাদ গড়ে ছিলে, অনায়াসে পূরণ করতে পারবে তুমি তোমার প্রতিটি স্বপ্ন। জীবনে কোন দিনও একটি বারের জন্যও মনে কোন অপরাধ বোধ কাজ করবে না। নিজের স্বপ্ন গুলো বাস্তবায়ন করতে পারিনি, তাতে কষ্ট হলেও, বনলতার স্বপ্ন বাস্তবায়নেতো আর বাঁধা রইল না।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিই, আর যতটা দিন বেঁচে থাকবো, ততটা দিনই এই ফতুয়া পড়ে যাবো। কোন দিনও খুলবো না আর শরীর থেকে, সামন্য ফতুয়ার যদি এত ক্ষমতা, এত দিনের গড়া বিশ্বাস যদি এই ফতুয়াতেই মুহুর্তের মধ্যে বিলীন হয়ে যেতে পাড়ে, সামান্যতম একটা পোশাক দ্বারা যদি মনের গভীরতা পরিমাপ করা যায়, তবে তাকে তো গুরুত্ব দিতেই হবে!
আসলে বনলতাদের বিশ্বাসটুকু এমনি ঠুংকো, নিজেদের স্বার্থপরতা ঢাকার জন্য এমনই সামান্য কোন অজুহাতই যথেষ্ট। আর হাদারামদের জন্মই শুধু পাপ না করেও জন্মগত পাপের বোঝা টেনে যাওয়া, টেনে যাবে অনন্ত কাল, মুক্তি পাবে না কোন দিনও, যতদিন না এমন হাদারামদের মৃত্যু হয়।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
অ ২৮/০২/২০১৫সুন্দর গল্প ।।
-
জাহিদুর রহমান ২৫/০২/২০১৫Sundor
-
সবুজ আহমেদ কক্স ২৫/০২/২০১৫দারুন ..........................................।............
-
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ২৫/০২/২০১৫অনেক আবেগপ্রবন হয়ে পড়লাম। ভালো লাগলো।