www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

হাদারামের উত্তর



বনলতা,
তোমার চিঠি পেয়ে পৃথিবীর সেরা সৌভাগ্যবানদের একজন মনে হয়েছিল নিজেকে। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, স্বপ্ন দেখছিনা তো? নিজেকে চিমটি কেটে কেটে পরীক্ষা করে নিয়েছিলাম বেশ কয়েকবার। আমার জীবনের ঐ একটি দিনই আমি অমন খুশি হয়েছিলাম, যা বাকী জীবনে আর কোন দিনও কোন কিছুতেই ঐ খুশির বিন্দু মাত্রও খুজে পাইনি, পাবও না আর হয়তো কোন দিনও। তোমার প্রতিটি কথা মনে পরলে আমার হৃদয়ে আজও ঝড় বয়ে যায়, ক্ষত-বিক্ষত হৃদয় আজও স্বপ্ন দেখে, খন্ড-বিখন্ড স্বপ্ন গুলোকে জোড়া লাগিয়ে লাগিয়ে আজও বাস্তবায়নের ইচ্ছে জাগে।

তোমার প্রতিটি কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলাম এই আমি হাদারাম। প্রথম বার চিঠি পড়ারত অবস্থায়ই ফতুয়াটা খুলে ফেলে দিয়েছিলাম চিরতরে। মাথা নিচু করে আর হাটিনি কোন একদিনও। আশেপাশে তাকিয়েছিও, খুজেও পেয়েছি তোমাকে, তোমার চোখ তোমাকে চিনিয়ে দিতে একফোঁটাও কার্পন্য করেনি। কিন্তু বুঝতে দিইনি তোমাকে। তোমার চিঠি পড়ে মনে মনে সংকল্প করেছিলাম তোমারই মত একটা সারপ্রাইজ দেব বলে।

তোমার চিঠিটা আমার জীবনে এতই প্রভাব ফেলেছিল যে, জিনিয়ার সাথে মনের ভুলে কথা বলতে বলতে হেসে ফেললেই আতংকে নিজের অজান্তেই হাত চলে যেত চোয়ালে, পরীক্ষা করে দেখতাম, কেউ সত্যি সত্যিই চুলের কাঁটা ডুকিয়ে দিল কি না! জুনিয়র মেয়েদের নোট প্রদান করা বন্ধ করতে পারিনি, তবে দিতাম লুকিয়ে লুকিয়ে, অনেকটা চোরেরই মত, সারাক্ষন একটা ভয় কাজ করতো, কখন আবার পর্যবেক্ষনরত তোমার চোখ দুটির কাছে ধরা পড়ে যাই!

তোমার চিঠির শেষের অংশে দেখানো অতি বাস্ববতার কাছে আমি পরাজিত। তাই তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়া আর হলো না আমার মত হাদারামের এই জীবনে, হবেও না আর কোন দিনও।

পরীক্ষায় কম নাম্বার পেয়ে মন খারাপ করিনি বাকী জীবনে কোন একবারও। কখন পরীক্ষা শেষ হবে, কখন পাশ করে বের হবো, কখন ভাল একটা চাকুরী পাব, আর সর্বপরি কখন স্বপ্নের 'বনলতা সেন' কে কাধে মাথা রেখে শ্রাবনের চাঁদ দেখার স্বপ্ন পূরন করবো,  সেই ভাবনাতেই  পার হয়ে যেত প্রতিটি মুর্হুত, প্রতিটি ক্ষন, প্রতিটি দিন।

স্বপ্নের জাল বুনে যেতে যেতেই একদিন পা রাখতে শুরু করলাম কঠিন বাস্তবতার নির্মম দুনিয়াতে। ক্যাম্পাস জীবনের শেষ রেজাল্টা হাতে নিয়ে একফোটাও মন খারাপ করিনি। তোমার বিচক্ষন চোখ দু'টোয় নিশ্চয়ই ধরা পড়েছিল সেদিন। সেদিন অনেকক্ষন তাকিয়ে ছিলাম তোমার দিকে অপলক নয়নে। বুঝিয়ে দিতে, চিঠি প্রেরক বনলতা সেনকে খুজে পেতে ভুল করিনি আমি। ঠোটের কোনায় মৃদু হাসিও আড়াল করিনি, চোখের ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছিলাম মুখে না বলতে পারা কথা গুলো, 'অপেক্ষা করো, আর মাত্রই কয়েকটা দিন। তোমার দেখা স্বপ্ন মিথ্যে হতে দেব না কোন দিনও। তোমার হাজারো স্বপ্ন আমি পূরন করে দেবই। আমার কাঁধে নিশ্চিন্তে মাথা রেখে অনন্ত কাল শ্রাবনের চাঁদ দেখে যাবে তুমি। প্লিজ আর মাত্র ক'টা দিন অপেক্ষা করো।' তুমি ঠিকই বুজতে পেরেছিলে আমার চোখের ভাষা। তোমার চোখেও দেখতে পেয়েছিলাম খুশির ঝিলিক। তুমিও চোখের ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছিলে এই হাদারামকে, 'হাদারাম, আমি জানি তুমি আমার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবে, এই হাদারামটির উপর আমার এতটুকু আস্থা আছে। অনন্ত কাল ধরে অপেক্ষায় থাকবো, শুধুই তোমারই বুকে শান্তিতে মাথা রাখার জন্যে।'

চাকুরীর জন্য হন্যে হয়ে ছুটতে শুরু করলাম প্রতিনিয়ত। ছোট বড় কোন একটি বিজ্ঞপ্তিও বাদ দিইনি। প্রতিটি পরীক্ষায় ভাল করতাম। ইন্টারভিউয়ের ডাকও পেলাম প্রায় সকল জায়গা থেকেই। শিক্ষা জীবনের অর্জিত বিদ্যা দ্বারা জবাবও দিয়েছিলাম অনেক কঠিন কঠিন প্রশ্নের। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই অতি সহজ একটি প্রশ্নের কাছে আমি হেরে যাই, কেননা অতি সহজ ঐ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা আমার মত প্রকৃত হাদারামের ছিল না। বাবা-মা অনেক কষ্ট করে লেখা-পড়া করার ব্যবস্থা করলেও ২ আর ৩ যোগ করলে কত হয়, এমন প্রশ্নের উত্তরের ব্যবস্থা করার মত সামর্থ্য ছিলনা তাদের। তাই প্রতিনিয়ত ফিকে হতে শুরু করে আমার স্বপ্ন গুলো। এভাবে উদ্ভান্তের মত দ্বারে দ্বারে দৌড়াতে দৌড়াতে পার হয়ে যায় অনেক গুলো দিন, অনেক গুলো বছর। হেরে যাই আমি কঠিন বাস্তবতার কাছে, ভাঙ্গতে শুরু করে অতি যতনে গড়া স্বপ্ন গুলো এক এক করে। আর তাই ফিরে যাওয়া হয়নি সেই মিথ্যে স্বপ্ন দেখানো ক্যাম্পাসটিতে, অধীর আগ্রহে অপেক্ষারত বনলতার খোজে।

এখন আমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াই, অনেকটা উদ্ভান্ত, পাগলেরই মত, স্বপ্ন ভঙ্গের এক বুক যন্ত্রনা নিয়ে নিড়বে হেটে চলি অজানা গন্তব্যের দিকে। রাস্তার কোন মোড়ে ট্রাফিক সিগ্ন্যালে বা কোন যানজটে আশেপাশে তাকিয়ে দেখো একবার, গাড়ির কালো গ্লাসের মধ্য-দিয়ে দেখেই এই হাদারাম কে ঠিকই চিনতে পারবে তুমি, শুধু মাত্র চোখ দু'টো দেখে, যে চোখ জোড়া আজও খুজে ফেরে তোমার দেখানো স্বপ্ন বাস্তবায়নের উপায়। অবশ্য চোখের কালো দাগ আরও গাঢ় হয়েছে, জিন্সের তলায় কয়েকটি সুতো বেড়িয়ে নেই, পুরোপুরি একটা অংশ বিলীন হয়ে গেছে, খোঁচা খোঁচা দাঁড়িও খুজে পাবেনা, অনেক লম্বা আকার ধারন করেছে, পাকনও ধরেছে দু'-চারটায়।

এতকিছুর পরও আমি এই হাদারাম জীবনে আর একবারও ফতুয়া পড়তে পারিনি কোন একদিনও, শুধু তোমারই অদৃশ্য চোখ রাঙ্গানির ভয়ে।
চড়ম সত্য একটি কথা লিখেছিলে তুমি তোমার চিঠিতে, 'তখন সারা জীবন কে সামলাবে আপনার মতো হাদারামকে?'

ইতি
হাদারাম।

পুনশ্চঃ বনলতাদের প্রতি অনুরোধ রইল, হাদারামের এই অতি বাস্তব চিঠি পড়ে অন্তত হাদারাম নির্ধারনের ক্ষেত্রে সামন্যতম সর্তকতা অবলম্বন করুন। জীবনে এমন কোন 'হাদারাম' সিলেক্ট করবেন না যেন বনলতার দেখানো স্বপ্ন পূরনের সামান্যতম যোগ্যতা তার না থাকে। তাতে অন্তত প্রকৃত 'হাদারামেরা' স্বপ্ন ভঙ্গের যন্ত্রনা থেকে মুক্ত থাকবে আর 'বনলতারাও'
তাদের সুযোগ্য 'হাদারাম'দের কাঁধে মাথা রেখে শ্রাবনের চাঁদ দেখে যেতে পারবে অনন্ত কাল।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৪৯৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/০২/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • কোনো কথা না স্যার। সোজা প্রিয়তে রেখে দিলাম।
    • সহিদুল ইসলাম ২৫/০২/২০১৫
      ধন্যবাদ স্যার, অবদান কিন্তু আপনারও আছে, সংগ্রহীত হলেও এমন জীবন্ত একটা চিঠি প্রকাশ করায় আমি পড়তে পেরেছি এবং তাই লিখতে পেরেছি। ২য়টি অবশ্য ছবি বাছাই করতে গিয়ে। ছবিটা গল্পের সাথে মিলে কিন্তু ফতুয়াটা ডিস্টাব করছিল। তাই ২য় অংশও লিখা।
  • সবুজ আহমেদ কক্স ২৪/০২/২০১৫
    দারুন ভালো লিখা ......।।
  • সবুজ আহমেদ কক্স ২৪/০২/২০১৫
    ফাইন .....................।
  • ২৪/০২/২০১৫
    ভালো ।
 
Quantcast