www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ভূত এখন আকাশের তারা

প্রতিদিন আমরা আট দশ জন বন্ধু দেশের চন্ডী আট চালাই খেলতে যাই।সন্ধ্যা বেয়ে আঁধার গড়ালে আমরা ফিরি।বাড়ি ফেরার পথে একটা পিল্লাই বট গাছ।প্রায় দশ বারোটি ঝুরি নেমেছে।ঝুরি গুলিও মাটির সাক্ষাতে এক একটা প্রকান্ড গুঁড়ি হয়েছে।দুচার কাটা জুড়ে যেন একটা বটের বাগান।কিছু ডাল মাটি ছুঁই ছুঁই।হাত বাড়িয়ে তার ডাল ধরে অনায়াসেই উঠে দোল খাওয়া যাবে।আমরা বটের কাছাকাছি আসলেই মনে হয় কেউ লাফিয়ে বট গাছে উঠল,সামনের ডাল গুলি নড়ে উঠল,ঝরঝর শব্দ হল,একটা অজানা অচেনা শব্দ আমাদের বুকের পাটাটাকে মোচড় খাইয়ে দিল।আমরা ভয় পেয়ে কেউ কাঁদতে থাকি,কেউ রাম রাম বলি,কেউ বলি আমাদের কাছে আসলেই আঁশবঁটিই করে গলা কেটে দেব।তবে আমাদের বন্ধু শুটকে প্রচন্ড ভয় তরাসে, সেই সবচেয়ে বেশি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।তাকে আমরা গোল করে ঘিরে যেতে থাকি।কোনরকমে বট গাছটা ডিঙালেই কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে এসে জুটেন আমাদের পাড়ার দাদু।শশব্যস্ত হয়ে বলেন,'তোরা এত কাঁদছিস কেন?ভয় পেয়েছে বুঝি!আমি তোদের কান্না শুনেই ছুটে এলাম।' শুটকে দাদুর গলা জড়িয়ে বলত,ওই বটগাছে বড় বড় ভূত আমাদের দেখে,লাফালাফি করছে,দোল খাচ্ছে,আর ডাল গুলো শুধুই নাড়াচ্ছে।দাদু গোঁফের মোচে তা দিতে দিতে বললেন,'কই কোথায়?'চোখ গুলো পাকিয়ে,গলাটা চড়িয়ে বললেন,কোন ভূতরে তুই মেছোভুত নাকি মামদো,শাকচুন্নী নাকি চরাচুন্নি,পেত্নী না ডাইনি।ভূতেদের বিভিন্ন বংশ আর নাম নিতে শুরু করল।কোথায় তোরা?আমার কাছে আই তোদের কলিজার কালিয়া বানিয়ে আমার পেটের খিদে মেটাই বলতে বলতেই ছুটে চলে যেতেন বটগাছের দিকে,আর গাছের কাছাকাছি গিয়ে আমাদের বলতেন,'তোরা যা আমি দেখছি।' আমরা আইলা গতিতে বাড়ি ফিরতাম।
দাদুর নাম চাঁদু।তার মোচ খানা লতার মত কিছুটা নেমে চিবুক বেয়ে দোদুল নৃত্যে নাচ করে।সম্পর্কে দাদু হলেও,বয়সটা ঠিক দাদু না হয়ে জেঠুর বয়েসী,আর মেশামেশিতে কিশোর বন্ধু।সকল কাজের পান্ডা দাদু।কেউ মরলে সৎকারে দাদু,বিয়ে বাড়ির পাকা কথাই দাদু,গাজনে প্রধান সন্ন্যাসী দাদু,বারোয়ারি পুজোর মাথা...।এককথায় গ্রামের সব কাজের মধ্যমণি তিনি।রাতের বেলা কেউ বাড়ি ফিরেনি জানতে পারলেই একহাতে টর্চ আর একটা শক্তপোক্ত লাঠি নিয়ে খোঁজ করতে বেরিয়ে পড়েন আর বলে যান,'তোরা নিশ্চিন্তে থাক আমি দেখছি।'কারও বাড়িতে ডাকাতি বা চুরি এসেছে বলে চেঁচিয়ে উঠলেই হাতের সামনে যা পান তা নিয়েই ছুটে আসেন এবং বলেন,'তোরা ঘুমা আমি দেখছি।'
সেদিন সকলে খেলে বাড়ি ফিরছি।বট গাছের তলা দিয়ে যখন আসছি হঠাৎ চড়চড় শব্দে ছোট খাটো কয়েকটা ডাল ভেঙে আমাদের রাস্তার সামনে পড়ে গেল।রাম,কৃষ্ণ আঁশবঁটি আর কান্নার রোলে দারুন জগাখিচুড়ি অবস্থা।হঠাৎ হালুম করেই দাদুর আবির্ভাব।সেই একই অভয় বাণী 'তোরা যা,আমি দেখছি।'
আমাদের কাছে বট গাছ মানেই গা ছমছম,বিদঘুটে একটা ভয়ঙ্কর ক্ষেত্র,ভুতেদের নিবাস।ওদিকে দিনের বেলাও আমরা একা একা যেতে সাহস পাইনা।আর দাদু মানেই ভয়ের আবহে একটা আশ্রয়,হাজার কঠিন কাজের চটজলদি মুশকিল আসান।
একদিন বিকেলে শুনলাম চাঁদু দাদুর হার্ট ফেল,তিনি আর নেই।আমরা তার জন্য শোকাহত।সকলেই কাঁদছি আর বলছি এরপর সন্ধ্যায় আমাদের ভয়ের মালুম পেয়ে হালুম করে কে এগিয়ে আসবে।আমরা বেশ কয়েকদিন চন্ডী আটচালাই খেলা বন্ধই করে দিলাম।কিন্তু সুন্দর, সাবলীল,ঝঞ্ঝাটহীন ক্রীড়াক্ষেত্র আটচালা ছাড়া আর কোথাও নেই।মন খারাপের এক বিকেলে যুক্তি করলাম সকলে মিলে চল,আজ আটচালাতেই খেলতে যায়,সন্ধ্যা হবার আগেই ফিরে আসব।কয়েকদিন সন্ধ্যা হওয়ার আগেই বাড়ি ফিরলাম।তবে খেলার সময় ভুলতে শুরু করলাম বট গাছের বিপদের কথা।ধীরে ধীরে প্রতিদিন একটু একটু করে বাড়ি ফিরতে দেরি হতে থাকল, সকলে একসাথে আসতে থাকলাম।আশ্চর্য গাছ নড়ছে না, ডাল ভাঙছে না,ঝরঝর শব্দ হচ্ছেনা,কোন বিকট আওয়াজও নেই।শুধু পাতার ফাঁকে ফাঁকে জোছনার ফিনকি কিলবিল করছে আর গাছের পাতা গুলো বাতাসের ছন্দে সুর তুলছে 'ভূত এখন আকাশের তারা।'
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৭৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৬/১১/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আবু সঈদ আহমেদ ২৫/১১/২০১৮
    জয় দাদুর জয়
  • বাহ্।বেশ
  • চমৎকার
  • গল্পটা ভালো লাগলো
  • জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা।
  • আপনার গল্প লেখার হাত খুব ভালো
 
Quantcast