www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বাংলাভাষায় ইসলামি সাহিত্য এবং একটি ব্যাক্তিগত পর্যালোচনা – ইতিহাস

বাংলা ভাষায় ইসলামি সাহিত্য ফারসি ও উর্দু ভাষা হতে অনুপ্রাণিত , সরাসরি আরবি থেকে নয় ।
এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ অঞ্চলের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ইসলামি সাহিত্যকে নানান ভাবে প্রভাবিত করেছে । তবে এ সম্পর্কে অধিকাংশ ইতিহাসবিদদের আলোচনা বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পাওয়া যায় বিধায় নিজে থেকে সকল আলোচনার বিষয়কে একসাথে ও ক্ষুদ্র পরিসরে এনে ইসলামি সাহিত্যের কিছুটা স্বরূপ তুলে ধরার এক প্রয়াস করেছি হল মাত্র ----


আনুমানিক ১৪ শতক – ১৭৫৭ সালঃ

বাংলা ভাষার ইসলামি সাহিত্য সম্পর্কে অনুসন্ধানে দেখা যায় , এই ধারার শুরু হয়েছে আনুমানিক ১৪ শতক থেকে অর্থাৎ বাংলা সাহিত্যের প্রেক্ষাপটে মধ্যযুগ থেকে । এ সময়কার প্রাচীন কবি হচ্ছেন শাহ মুহাম্মদ সগীর আর তার লেখা “ইউসুফ-জোলেখ” সম্ভবত প্রথম পুঁথিগ্রন্থ । এই সময়কার মুসলিম সাহিত্যিকরা বাংলাভাষায় “পুঁথি” নামের এক নতুন কাব্যধারার সূচনা করেন , যার আবৃত্তির ঢং অনেকটা কোরআন থেকে নেয়া (অর্থাৎ একসুরে কিন্তু বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার ছাড়া ) ।
মূলত ইসলামি শাসনাধীনে থাকা এই বাংলায় , তৎকালীন সময়ে ইসলামি সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী হওয়া অনেকটাই স্বাভাবিক ; হয়েছিলও তাই কিন্তু বাংলাভাষায় না । বাঙালি মুসলিম সাহিত্যিকদের এই মাতৃভাষার প্রতি অনাগ্রহ কবি আব্দুল হাকিম তার ’বঙ্গবাণী’ কবিতায় অতি দারুনভাবে তুলে ধরেছিলেন ।
রাজভাষা ফারসি অথবা উর্দু হওয়ার সুবাদে এই অঞ্চলের মুসলিমরা নিজের মাতৃভাষার প্রতি তেমন একটা আগ্রহী ছিল না । তবে এই ক্ষেত্রে আরাকান রাজসভাকে ইতিহাসে অনেক উদার দেখতে পাওয়া যায় । যার কারনে মধ্যযুগের অধিকাংশ বাঙালি মুসলিম সাহিত্যিকদের সন্ধান মেলে চট্টগ্রাম অঞ্চলে । এদের মধ্যে রয়েছেনঃ দৌলত উজির বাহরাম খান (আনুমানিক ১৬শ শতক),মুহম্মদ কবির (১৬শ শতক),সাবিরিদ খান (১৬শ শতক),কোরেশী মাগন ঠাকুর (১৭শ শতক), নওয়াজিশ খান (১৭শ শতক) , দৌলত কাজী বা কাজী দৌলত (১৭শতক) মহাকবি আলাওল , রহিমুন্নিসা (প্রথম মুসলিম নারীকবি) প্রমুখ । আর এই সময়কালীন যত সাহিত্যকর্ম পা্ওয়া যায় তার অধিকাংশই ছিল অনুবাদ এবং ইসলামি স্তুতি সমৃদ্ধ ।


১৭৫৭ – ১৯৪৭ সালঃ

এই সময়কালের একেবারেই গোড়ার দিকে বাংলাভাষায় ইসলামি সাহিত্যের তেমন উল্লেখযোগ্য কাজ পাওয়া যায় না । কিছু সংখ্যক পুঁথি সাহিত্যের সন্ধান মেলে যার প্রতিটিই মূলত স্তুতি সমৃদ্ধ , সম্ভবত স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলাটা তখন অনেকের দ্বারাই উপলুব্ধ হয়নি ।কারণ ক্ষমতার রদবদল একটা নিত্য ঘটনার অংশ ছিল এই অঞ্চলের জন্য । গোড়ার দিকের কবিদের মধ্যে সৈয়দ শাহনূর (জন্মঃ ১৭৩০- মৃত্যু ১৮৫৪),কাজি হাসমত আলী (১৮৩২) অন্যতম ।
আবার হঠাৎ করে ক্ষমতা হারানো এই মুসলিম জাতি নব ক্ষমতাসীন শাসকশ্রেণীর সাথে তাল মেলাতে ব্যর্থ হয়েছিল প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই । একদিকে সুযোগ-সুবিধা হারানো এবং অপরদিকে নতুন চালু করা গণমাধ্যমে নিজেদেরকে যুক্ত করতে না পারার কারনে তাদের মধ্যে স্বদেশপ্রীতির উদ্ভব ঘটে এবং মধ্যযুগের থেকে বেড়িয়ে এসে নিজ মাতৃভাষার প্রতি অনুরাগী হয় ।
যার কারনে এই সময়ের মাঝদিকে এসে বাংলাভাষার ইসলামি সাহিত্য অনুবাদ ও স্তুতি ছাড়াও নিজস্বতা লাভ করে দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকে । আর তার পথে যুক্ত হয় নাটক , গল্প ও উপন্যাস ।
এইসময়কালের শেষের দিকে এসে ভারতের মুসলমানদের মধ্যে স্ব-জাতি চিন্তার আলাদা বিস্ফোরন ঘটে “দ্বি-জাতি ত্বত্ত” এর মাধ্যমে । যার কারনে মুসলিম মানসিকতার পূর্ণ ছাপ পড়ে নানান ভাষার মুসলিম সাহিত্যিকদের কলমে । আর বাংলা ভাষায় তার অন্যতম উদাহরণ পাওয়া যায় এই সময়কালের অন্যতম ইসলামি সাহিত্যিক কাজী নজরুল ইসলামের লেখায় ।
অর্থাৎ, এক কথা বলা যায় যে , বাংলাভাষায় ইসলামি সাহিত্যের এ পর্যায়ে ধর্মের সাথে সাথে মুসলিম জাতিস্বত্তা ও দেশপ্রেমের সন্ধান পাওয়া যায় ।


১৯৪৭ – ১৯৭১ সালঃ

পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম এ ভারতের মুসলামনদের জন্য আশার চাবিকাঠি হলেও, এই বাংলাভাষী অঞ্চলের মুসলিমরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পতিত হয় । দুই পাকিস্তানের উদ্ভবই যখন মুসলিম জাতিস্বত্তার উপর ভিত্তি করে ঠিক তখন বাংলাভাষী হওয়ার কারনে শাসকগোষ্ঠী শোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় । যা বাংলা ভাষায় ইসলামি সাহিত্যের সকল ধারার মাঝে এক নতুন ধারার জন্ম দেয় , যার নাম “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ” ।
এ সময়কালের ইসলামি সাহিত্যে তাই পূর্বকালের ইতিহাস , ঐতিহ্য - এর পাশাপাশি নব জাতীয়তাবাদ সূচনা দারুনভাবে উঠে আসে । এ সময়ের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যিকদের মধ্যে রয়েছেনঃ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ , ফররুখ আহমদ , মুনীর চৌধুরী প্রমুখ ।


১৯৭১ সাল – বর্তমানঃ

১৯৭১ সালে (বঙ্গঅঞ্চলের একাংশ যা পূর্ববাংলা নামে সুপরিচিত) পূর্ব পাকিস্তান হতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম ঘটে । এবং প্রায় দুইশত বছরের অধিক দীর্ঘ এই পরাধীনতা থেকে মুক্তি বাংলাদেশের সকল ধরনের সাহিত্যেই এক ইতিবাচক স্থিতিশীলতার জন্ম দেয় ।
যার কারনে বর্তমান বাংলা ভাষার ইসলামি সাহিত্যের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় ধর্মীয় স্ততি ও আলোচনা , ইতিহাস , ঐতিহ্য , মুসলিম জাতিয়তা , স্বদেশ প্রেম অর্থাৎ প্রায় সকল কিছুই ।
এসময়কার কয়েকজন উল্লেখযোগ্য সাহিত্যিক হচ্ছেন – আব্দুল মান্নান সৈয়দ , সুফিয়া কামাল, সিকান্দার আবু জাফর , মতিউর রহমান মল্লিক প্রমুখ ।

তথ্যসূত্রঃ
১. বাংলাপিডিয়া
২. উইকিপিডিয়া
৩. A History of Bangladesh, William Van Schendel
৪. Bangladesh: politics, Economy and Civil Society, David Lewis
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ১৬৭৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৪/০৯/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আবু সঈদ আহমেদ ২৪/০৯/২০১৪
    বাংলা ভাষায় একমাত্র মৌলিক মহাকাব্যের লেখক কায়কোবাদের কথা বাদ পড়ে গেছে। এছাড়াও সিরাজ সাঁই, লালন ফকিরের অনেক গানে ইসলামী দর্শন গুরুত্বপুর্ণ প্রভাব ফেলেছিল। তার সাথে বেশ কিছু লোকগীতিও ইসলামী ভাবাপন্ন ছিল। মীর মোশাররফ হোসেনের 'বিষাদ সিন্ধু' প্রবাদ প্রতীম হয়ে ওঠে।
    • তাইবুল ইসলাম ২১/১১/২০১৪
      সর্টকার্টে লিখলে যা হয় :)
  • আবু সাহেদ সরকার ১৫/০৯/২০১৪
    বেশ চমৎকার একটি প্রকাশ কবি বন্ধু।
  • একনিষ্ঠ অনুগত ১৫/০৯/২০১৪
    তথ্য সমৃদ্ধ লেখা।।
  • সহিদুল হক ১৫/০৯/২০১৪
    বেশ তথ্যসমৃদ্ধ লেখা।
  • ভাল লাগলো তথ্য গুলো জেনে ।
 
Quantcast