বাংলাভাষায় ইসলামি সাহিত্য এবং একটি ব্যাক্তিগত পর্যালোচনা – প্রথম কথা
প্রথম কথা ।।
১.
বাংলাভাষায় ইসলামি সাহিত্য নিয়ে কথা বলার আগে ইসলামি সাহিত্য বলতে কী বোঝায় তা জানা উচিৎ ?
সবার মনেই একটা বদ্ধমূল ধারনা যে , ইসলামি সাহিত্য মানেই আরব্য রজনীর গল্প (অন্তত উইকিপিডিয়ায় তাই লেখা), আসলে না ।
ইসলামি সাহিত্য যে কোন ভাষাতেই হতে পারে । আর এর মূল ঘোষণা করেছেন আল্লাহ তাআলা নিজেই , যা আল কোরআনের সূরা আশ-শুআ’রা(২৬) – এর শেষ আয়াতসমূহে দেখতে পাওয়া যায় ঠিক এভাবে –
২২৪: এবং কবিদেরকে অনুসরন করে বিভ্রান্তরাই ।
২২৫: তুমি কী দেখনা তারা (কবিরা) উদ্ভ্রান্ত হয়ে প্রত্যেক উপত্যকায় ঘুরে বেড়ায় ?
২২৬: এবং যা তারা করেনা তা বলে ।
২২৭: কিন্তু তারা ব্যতিত যারা ঈমান আনে ও আমিলুস সলিহা করে এবং আল্লাহকে বারবার স্মরণ করে এবং অত্যাচারিত হবার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে । অত্যাচারিরা শীঘ্রই জানবে তাদের গন্তব্যস্থল কোথায় ।
উপরোক্ত প্রথম তিন আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট যে , এই আয়াতসমূহ তৎকালীন জাহেলী সাহিত্য এবং সাহিত্যিকদের উদ্দেশ্যে ব্যাক্ত করা হয়েছে ।
কিন্তু সর্বশেষ আয়াতের মাধ্যমে যা উল্লেখ করা হয়েছে, তাই হচ্ছে “ইসলামি সাহিত্য”- এর মূল ভিত্তি । অর্থাৎ, ঈমান , আমিলুস সলিহা , আল্লাহর স্মরণ এবং অত্যাচারিত হবার পর প্রতিশোধ গ্রহণ (কলমের দ্বারা জিহাদ করা) ।
এখানের প্রতিটি খুব সহজেই বোঝা যায় “আমিলুস সলিহা” ছাড়া । কারন সকল বঙ্গানুবাদে আমিলুস সলিহাকে “সৎ কর্ম” বলা হয়ে থাকে যদিও এই শব্দটির অর্থ করতে গিয়ে সকল ইসলামি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিগণ অনেক বিশদ আলোচনা করেছেন । মোটকথা হচ্ছে ঈমানকে আমলে রূপান্তর করার নামই “আমিলুস সলিহা” ।
সাহাবীদের মধ্যে –
হযরত আলী (রাঃ)(রাসুলুল্লাহ (সাঃ)এর চাচাতো ভাই ও জামাতা) ,
হযরত মুআবিয়া (রাঃ)(রাসুলুল্লাহ (সাঃ)এর শ্যালক) ,
হযরত হাসসাস ইবনে সাবিত (রাঃ) ,
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রা্ওয়াহা (রাঃ) ,
হযরত কা’ব ইবনে মালিক (রাঃ)(কোন কোন রেওয়াতে তার নাম উল্লেখ নেই) ,
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যাবআরী (রাঃ) ,
হযরত আবু সুফিয়ান ইবনে হারিস (রাঃ)(রাসুলুল্লাহ (সাঃ)এর চাচাতো ভাই)
প্রমূখ সাহাবী ইসলামী সাহিত্যের সাথে পরিপূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন ।
আবার , সাহাবী হযরত নু’মান ইবনে আ’দী ইবনে ফুযলা (রাঃ) যিনি একজন স্বনামধন্য কবি এবং মাইসান শহরের গভর্নর ছিলেন (হযরত উমর (রাঃ)এর শাসনামলে), তাকে পদচ্যুত করা হয় অতিরিক্ত উপমার দ্বারা ঘোলাটে সাহিত্য রচনার জন্যে । তিনি যেই কবিতা রচনা করেছিলেন তা একাধিক অর্থ বাহিত ছিল এবং হযরত উমর (রাঃ) দুটি অর্থই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন । তবু্ও তাকে তার পদ হারাতে হয় তার সাহিত্য ত্রুটির কারনে ।(সূত্রঃ কিতাবুল ফুকাহাত)
২.
অর্থাৎ এ কথা স্পষ্ট করে বলা যায় , ইসলামি সাহিত্য হতে হবে সেই সকল গুণ সমৃদ্ধ যা কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে । এবং এর জন্য অবশ্যই ইসলামি জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয় । আর আল কোরআনের অধিকাংশ স্থানে জ্ঞান অর্জনের জন্য খুব জোর দেয়া হয়েছে ।
আবার কিছু কিছু ঘটনা দ্বারা এটাও প্রতীয়মান হয় যে , সকল ইসলামি রচনাই মূলত ইসলামি রচনা নয় যদি তা দোষ যুক্ত হয়ে থাকে । যেমন - শেখ সাদী , জালাল উদ্দীন রুমী , কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ উল্লেখযোগ্য মুসলিম সাহিত্যিকদের প্রায় ইসলামি রচনাই আলেম-উলামারা দোষযুক্ত বলেছেন ।
তাদের রচনায় দোষ থাকার কারনগুলোর মধ্যে অনেকেই ”ওয়াহ’দাতুল ওযুদ”(সেই সকল শিরক যা সহজে বোঝা যায়না) উপস্থিত থাকার কথা বলেছেন ।
তবে যাই হোক , এই আশা প্রত্যেক মুসলিম সাহিত্যিকদের মধ্যে দেখা যায় তারা কলমের জিহাদ বা ইসলামি সাহিত্য রচনায় খুবই আবেগ প্রবণ এবং অন্তপ্রাণ ।
**আমি কোন তাফসিরবিদ বা মুহাদ্দিস নই, তাই এখানে আয়াতের ব্যাখা বা পূর্ণাঙ্গ হাদিস কিংবা তাদের মাতান উল্লেখ করলাম না । বরং নিচে তথ্যসূত্র সংযুক্ত করে দিলাম নিজ দ্বায়িত্বে দেখে নেবেন ।
তথ্যসূত্রঃ
১. আল কোরআন (২৬: ২২৪-২২৭ আয়াত)
২. তাফসির ইবনে কাসির (খন্ড – ১৫: সূরা আশ-শুআ’রা)
৩. মা’রেফুল কোরআন (বঙ্গানুবাদ – ২য় খন্ড)
১.
বাংলাভাষায় ইসলামি সাহিত্য নিয়ে কথা বলার আগে ইসলামি সাহিত্য বলতে কী বোঝায় তা জানা উচিৎ ?
সবার মনেই একটা বদ্ধমূল ধারনা যে , ইসলামি সাহিত্য মানেই আরব্য রজনীর গল্প (অন্তত উইকিপিডিয়ায় তাই লেখা), আসলে না ।
ইসলামি সাহিত্য যে কোন ভাষাতেই হতে পারে । আর এর মূল ঘোষণা করেছেন আল্লাহ তাআলা নিজেই , যা আল কোরআনের সূরা আশ-শুআ’রা(২৬) – এর শেষ আয়াতসমূহে দেখতে পাওয়া যায় ঠিক এভাবে –
২২৪: এবং কবিদেরকে অনুসরন করে বিভ্রান্তরাই ।
২২৫: তুমি কী দেখনা তারা (কবিরা) উদ্ভ্রান্ত হয়ে প্রত্যেক উপত্যকায় ঘুরে বেড়ায় ?
২২৬: এবং যা তারা করেনা তা বলে ।
২২৭: কিন্তু তারা ব্যতিত যারা ঈমান আনে ও আমিলুস সলিহা করে এবং আল্লাহকে বারবার স্মরণ করে এবং অত্যাচারিত হবার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে । অত্যাচারিরা শীঘ্রই জানবে তাদের গন্তব্যস্থল কোথায় ।
উপরোক্ত প্রথম তিন আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট যে , এই আয়াতসমূহ তৎকালীন জাহেলী সাহিত্য এবং সাহিত্যিকদের উদ্দেশ্যে ব্যাক্ত করা হয়েছে ।
কিন্তু সর্বশেষ আয়াতের মাধ্যমে যা উল্লেখ করা হয়েছে, তাই হচ্ছে “ইসলামি সাহিত্য”- এর মূল ভিত্তি । অর্থাৎ, ঈমান , আমিলুস সলিহা , আল্লাহর স্মরণ এবং অত্যাচারিত হবার পর প্রতিশোধ গ্রহণ (কলমের দ্বারা জিহাদ করা) ।
এখানের প্রতিটি খুব সহজেই বোঝা যায় “আমিলুস সলিহা” ছাড়া । কারন সকল বঙ্গানুবাদে আমিলুস সলিহাকে “সৎ কর্ম” বলা হয়ে থাকে যদিও এই শব্দটির অর্থ করতে গিয়ে সকল ইসলামি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিগণ অনেক বিশদ আলোচনা করেছেন । মোটকথা হচ্ছে ঈমানকে আমলে রূপান্তর করার নামই “আমিলুস সলিহা” ।
সাহাবীদের মধ্যে –
হযরত আলী (রাঃ)(রাসুলুল্লাহ (সাঃ)এর চাচাতো ভাই ও জামাতা) ,
হযরত মুআবিয়া (রাঃ)(রাসুলুল্লাহ (সাঃ)এর শ্যালক) ,
হযরত হাসসাস ইবনে সাবিত (রাঃ) ,
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রা্ওয়াহা (রাঃ) ,
হযরত কা’ব ইবনে মালিক (রাঃ)(কোন কোন রেওয়াতে তার নাম উল্লেখ নেই) ,
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যাবআরী (রাঃ) ,
হযরত আবু সুফিয়ান ইবনে হারিস (রাঃ)(রাসুলুল্লাহ (সাঃ)এর চাচাতো ভাই)
প্রমূখ সাহাবী ইসলামী সাহিত্যের সাথে পরিপূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন ।
আবার , সাহাবী হযরত নু’মান ইবনে আ’দী ইবনে ফুযলা (রাঃ) যিনি একজন স্বনামধন্য কবি এবং মাইসান শহরের গভর্নর ছিলেন (হযরত উমর (রাঃ)এর শাসনামলে), তাকে পদচ্যুত করা হয় অতিরিক্ত উপমার দ্বারা ঘোলাটে সাহিত্য রচনার জন্যে । তিনি যেই কবিতা রচনা করেছিলেন তা একাধিক অর্থ বাহিত ছিল এবং হযরত উমর (রাঃ) দুটি অর্থই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন । তবু্ও তাকে তার পদ হারাতে হয় তার সাহিত্য ত্রুটির কারনে ।(সূত্রঃ কিতাবুল ফুকাহাত)
২.
অর্থাৎ এ কথা স্পষ্ট করে বলা যায় , ইসলামি সাহিত্য হতে হবে সেই সকল গুণ সমৃদ্ধ যা কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে । এবং এর জন্য অবশ্যই ইসলামি জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয় । আর আল কোরআনের অধিকাংশ স্থানে জ্ঞান অর্জনের জন্য খুব জোর দেয়া হয়েছে ।
আবার কিছু কিছু ঘটনা দ্বারা এটাও প্রতীয়মান হয় যে , সকল ইসলামি রচনাই মূলত ইসলামি রচনা নয় যদি তা দোষ যুক্ত হয়ে থাকে । যেমন - শেখ সাদী , জালাল উদ্দীন রুমী , কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ উল্লেখযোগ্য মুসলিম সাহিত্যিকদের প্রায় ইসলামি রচনাই আলেম-উলামারা দোষযুক্ত বলেছেন ।
তাদের রচনায় দোষ থাকার কারনগুলোর মধ্যে অনেকেই ”ওয়াহ’দাতুল ওযুদ”(সেই সকল শিরক যা সহজে বোঝা যায়না) উপস্থিত থাকার কথা বলেছেন ।
তবে যাই হোক , এই আশা প্রত্যেক মুসলিম সাহিত্যিকদের মধ্যে দেখা যায় তারা কলমের জিহাদ বা ইসলামি সাহিত্য রচনায় খুবই আবেগ প্রবণ এবং অন্তপ্রাণ ।
**আমি কোন তাফসিরবিদ বা মুহাদ্দিস নই, তাই এখানে আয়াতের ব্যাখা বা পূর্ণাঙ্গ হাদিস কিংবা তাদের মাতান উল্লেখ করলাম না । বরং নিচে তথ্যসূত্র সংযুক্ত করে দিলাম নিজ দ্বায়িত্বে দেখে নেবেন ।
তথ্যসূত্রঃ
১. আল কোরআন (২৬: ২২৪-২২৭ আয়াত)
২. তাফসির ইবনে কাসির (খন্ড – ১৫: সূরা আশ-শুআ’রা)
৩. মা’রেফুল কোরআন (বঙ্গানুবাদ – ২য় খন্ড)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আবু সঈদ আহমেদ ২৪/০৯/২০১৪
-
মঞ্জুর হোসেন মৃদুল ১৪/০৯/২০১৪বাহ বেশ সুন্দর উপস্থাপনা। অনেক কিছু জানলাম।
-
কামরুল পাশা ১৪/০৯/২০১৪Calo laglo
-
একনিষ্ঠ অনুগত ১৪/০৯/২০১৪অনেক কিছু জানা গেল। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ও হাদীসের কথা কিছু যোগ করতে পারতে। শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা রইল।