www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

জীবন একটুকরা ফসলি জমিন

আমাকে একটা ভোট দিবেন আর একটা করে টাকাও দিবেন যাতে আমি নির্বাচনের পর মানুষের ধার-দেনা শোধ করতে পারি। ৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে ফেনী তিন নাম্বার আসনে নিজে প্রচার করতে এসে গরিবের বন্ধু খ্যাত ইন্তু মিয়া বলে ছিলেন বাজারে বাজারে। না কেউ ভোটও দেয়নি টাকাও দেয়নি। ন্যাপ ভাসানির রাজনীতি করতেন এই অতি মানবিক জনদরদী লোকটি। সোনাগাজী উপজেলার কুঠির হাট ইউনিয়নে জন্ম নেওয়া ইন্তু মিয়া নিজের সহায় সম্পদ বিলীয়ে দিয়েছেন মানবিক রাজনীতি করে। তাই শেষ বয়সে ভোট করতে এসে মানুষের কাছে হাত পাততে হয়েছে। শুনেছি ভাঙ্গা মাটির ঘরে শেষ নিঃশ্বাসও ত্যাগ করেন।

তালেব আলি আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলির সদস্য ছিলেন। উনিও ৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে ভোট করেছেন এবং আগে ও পরে আরো করেছেন। সম্পদ বলতে তেমন নিজের কিছুই ছিলো না। ঢাকা সেগুন বাগিচায় চিটাং হোটেলে একটা রুমে থাকতেন। আহ্ আজকাল রাজনীতিক নেতা বলতে মিলিয়ন বিলিয়ন টাকার মালিক ও বিদেশে সম্পদের পাহাড়। নবাবপুরের শিল্পপতি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল হাই সাহেবের ( আমার বাড়ির ভগ্নিপতি) গ্নীণল্যান্ড ওভারসীজ সেগুন বাগিচায়ায় তাই সেখানে যাওয়ায় সেই এলাকার লোকের সাথে চিটাং হোটেলে খেতে গিয়ে তালেব আলি সাহেবের সাথে দেখা । ছোট্ট একটা একজনের রুমে ভাড়া থাকতো যার টাকা সোনাগাজীর বিভিন্ন বড় বড় লোকজন পরিশোধ করতো। এখন অবাক চিত্তে ভাবি এত গরিব লোক এত বড় পদে বসে আওয়ামী রাজনীতি করেছে। কুঠির হাট এবং মতি গঞ্জে জন্ম নেওয়া এমন নেতা আমি এখন সারা বাংলাদেশে কেরোসিনের কুপি হাতে মাছের পোনা ধরা জাল দিয়ে খোজ করি আর বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলি
“প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ
জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ”।

শীতকাল নদী একদম শুকনা। নদীর মাঝখান দিয়ে হেটে মাথায় করে শীতকালীন সবজি বিক্রি করতে নিয়ে যায় নদীর পশ্চিমের কৃষক। কষৃক বসে কেজি হিসাবে বিক্রি করলে একটু লাভ বেশী পায় । আগের দিনে মানুষ বলতো ঘাটের ভিতর হলো পান্না ঘাট আর বাজারের ভিতর হলো লেইম্মা বাজার। তবে সব সময় সব সবজি বিক্রি হয় না। এতে মন খারাপ হয়, ফেরত নিয়ে এসে গরুকে খাওয়ায় কষৃক। সব কষ্ট যেনো জলে ভেসে যায়।

নদীর পশ্চিমে ছড়ানো-ছিটানো ঘর বাড়ি দিগন্তবিস্তৃত ফসলি জমিন। সবুজ ফসলের আইল পথদলিত করে ভোরের শিশির ঝরে পড়ার সাথে সাথেই পশ্চিমের ঠাকুর হাট কিংবা কুঠির হাট ,আনন্দপুর কিংবা সুন্দরপুরের মানুষ আলু কুমড়া এবং পাঁটি কাঁধে বা মাথায় করে রওনা দিতো লেমুয়া বাজারে। এই জন্য হয়তো বলে ঔই দিকের মানুষ কুমড়া বেশী খায় । তবে আজ সেটা অতীত। যেমন অতীত রাজনীতিতে ইন্তু মিয়া কিঃবা তালেব আলি। তবে অতীত হয়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের থালা-বাসন গিফট দেওয়া। অতীত হয়নি মেধাবী শব্দের আগে গরিব শব্দটা লেখা। অথচ আমরা আধুনিক ও সভ্য যুগে বাস করি। আমরা মহাকাশ জয় করার স্বপ্ন দিখি অথচ মেধাবীদের গরিব বলি।

(প্রথম কিস্তি)
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৯৯০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৬/০৩/২০২৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • নুরনবী সরকার ০৭/০৩/২০২৫
    আমরা ভালো-মন্দ বিবেচনা করতে পারিনা
 
Quantcast