www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

একটা লজেন্স ও একটা স্বপ্ন

বাজারের একটা জরাজীর্ণ মুদি দোকানে আমার আড্ডাবাজি চলে,বলা যায় সেখানে আমার রাজপ্রাসাদ তাই হাতলবিশিষ্ট চেয়ারটই আমার সিংহাসন। সেইদিনও সিংহাসনে বসে গভীর মনে পত্রিকা পড়ছি। একটা লোক ডিম কিনতে এসেছে,লোকটা সম্ভবত নির্মাণ শ্রমিক বা দিনমজুর কিংবা রিক্সাচালক। শুকনা, বাঁশপাতার মত সরু হওয়ায় কণ্ঠের হাড্ডি হা করে বের হয়ে আছে। হা-ভাত লোকটাকে জীর্ণশীর্ণ করে রেখেছে।
কাঁধের উপর বাচ্চাটারও একই অবস্থা। গায়ে ময়লা গেন্জি যেনো ঢলঢল করছে গায়ে। চোখ দুইটা চামড়ার ভিতরে ঢুকানো মায়াবী চেহরা বাচ্চাটার। সে ছল ছল চোখে লেজেন্সের বয়ামের দিকে তাকিয়ে অছে, বেচারা চাওয়ার সাহস পাচ্ছে না কিন্তু বাবা সেটা বুঝতে পারে।

দারিদ্র্যতা আর জিনিসপত্রের দামের উর্ধ্বগতি মানুষকে কখনো কখনো ভালোবাসাহীন ও অমানবিক করে তোলে। তাই দারিদ্র্য বাবা নির্মম ও নির্দয় টিনের চশমা পরার ভান করে থাকতে হয়। তারপরও লজ্জিত বাবা “কথিত চশমার” ভিতর দিয়ে ছেলের মায়াভরা মুখটা দেখে ভালোবাসায় পরাজিত হয়ে দরদি ও ভেজা ভেজা গলায় জানতে চায় “কিচ্ছু লইবি আব্বু”? ছেলেটি মাথা নিচু করে চুপ থেকে লজেন্সের বয়াম দেখায়। বাবা রাজার মত গলা ছেড়ে দোকান কম্পিত এক অট্টহাসি দিয়ে ছেলেকে কাঁধ হতে নামিয়ে বলে “যা দুইটা ল ”। আর কিছু লইবি বাপ------।

সুরুজ মিয়ার দুই ছেলে , এইটা তাঁর ছোট ছেলে। লজেন্স পেয়ে আনন্দে বলে উঠে আব্বু আমি “দুইয়ে দুইয়ে চার” হয় যোগ করতে পারি। গর্বিত বাবা হাসি মুখে বলে তিন আর দুই যোগ করলে কত হয় বলো দেখি। দোকানের অন্য লোকজন আড়চোখে বাপ ছেলেকে দেখে। তাঁরাও অন্যদের দিকে তাকিয়ে থাকে ভিতরে ভিতরে একটা চাপা আনন্দময় উত্তেজনা। ছেলে আঙ্গুলে গণনা করে তিন আর দুইয়ে যোগ করলে ---। সবাই তাকিয়ে আছে যদি ছেলে না পারে। দোকানদার সরু করণ চোখে অন্যরা তাচ্ছিল্যপূর্ণ নজরে দেখছে পারে কিনা। বিডবিড় করে আঙ্গুলে গণণা করে বলে আব্বু পাঁচ হয় পাঁচ।

(অসমাপ্ত )
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৬/১০/২০২৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

 
Quantcast