অতঃপর উনি পকেটে রাখলেন চেয়ে থাকলাম।
রাস্তার পাশে জমিনটায় সবুজ ধান গাছ, বাতাসে হেলেদুলে লুটিয়ে পড়ছে। আমার লাগানো কৃষ্ণচূড়ার গাছটা ফুল ফুটে লাল রক্তিম হয়ে আছে। বাতাস এবং বৃষ্টির ঝাপটায় কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি কিছু রাস্তায় , কিছু ধান ক্ষেতে পড়ে আছে। বৃষ্টিতে ভেজা গন্ধ বিহীন কৃষ্ণচূড়ার কচি কচি পাপড়ি পড়ে রাস্তায় যেনো শহুরে রমণীর গাঢ় লাল রংয়ের লিপষ্টিকের ঠোঁটের আকার ধারণ করেছে।
শিমুল, পলাশ কিংবা কৃষ্ণচূড়ার সময়কাল আমাকে করে পাগলপ্রায়। কতোদিন ভেবেছি শুভ্র-শ্বেত আকাশের নিচে কৃষ্ণচূড়ার মৌসুমে তোমার হাত ধরে দাঁড়াবো। তোমার কালো কালো কেশে ঝরে পড়বে পাপড়ি ঠোঁটে থাকবে গাঢ় লাল লিপষ্টিক। আলতো করে হাত ধরে হেঁটে যাব বাঞ্ছারাম পুকুর , পাড় হতে সেই নামহীন স্বর্গে।
চিকন সরু কাঁদা মাটির রাস্তা। দুই পাশে লম্বা লম্বা দূর্বা ঘাস, মাঝখানে সাদা মিহি বালু। রাস্তার পশ্চিম পাশে নানাজাতের গাছের মাঝে কৃষ্ণচূড়া গাছ তারপর ফসলের জমি। পূর্ব পাশে কচুরি পেনায় ভরপুর বাঞ্ছারাম পুকুর। পেনায় জড়িয়ে লক লক করা কলমি শাক , পুকুর পাড়ে বসত করা লেদু মিয়া রান্না করে খায়। পুষ্টহীন ষাট বছরের লেদু মিয়াকে দেখলে মনে হয়, কলমি শাক খেয়েই কোনো রকম বেঁচে আছে। দরিদ্রতার প্যাচে পড়ে শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য কারো কোনো রকম সাহায্য ছাড়াই এই প্রাণপণ লড়াই। তারপরও দেখা হলে হেসে উঠে জানতে চায় “কেমন আছো বাবা”। আমিও হাসি মুখ করে উত্তর দিই “ স্বর্গে আছি” চাচা। মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সংসারের অভাব -অনটন তুলে ধরে। দীর্ঘশ্বাস আরো বড় হয় যখন বলে পুত্র সন্তান না থাকায় সংসারের হাল ধরার কোন মানুষ নাই । তারপরও আগে জিনিস সস্তা ছিলো ডাল ডিমে চলে যেতো দিন আর এখন সব ----।
আওয়াজ শুনে আমার ঘুম ঘুম ভাব ও স্বপ্নটা ভেঙ্গে যায়। সন্ধ্যা ৬-১৫ মিনিটের বাস যাত্রীদের আসন গ্রহণ করার জন্য কতৃপক্ষের অনুরোধ । প্রচণ্ড গরমেও বিশ্রামগারে চেয়ারে বসতেই তন্দ্রাচ্ছন্নভাব গ্রাস করে আমাকে। আজ কয়েকদিন হাসপাতালে ইদুর বিড়াল দৌড়ে ক্লান্ত শরীর, তাই আর রাজধানীতে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না। ডাক্তার দেখানো শেষ হলেই দৌড় দিলাম বাস ধরতে। পকেট হতে মোবাইল বাহির করে দেখি ছয়টার কাছাকাছি,আর আমার বাস ছাড়ার সময় ৬-১৫ মিনিট। অনেক আগে একবার “দেশ বাংলা ট্রাভেল” করে ঢাকা হতে বাড়ি গিয়ে ছিলাম, খুব আরামদায়ক ও নিরাপদ মনে হয়েছে। তাই এইবার আবারও “দেশ বাংলা ট্রাভেল”-এ ভ্রমণে মনস্থির করি। টিকেট হাতে নিয়ে ধাক্কা খাই বাস ভাড়া বৃদ্ধি করেছে শুনে কারণ তেলবাজ এই দেশেও তেলের দাম বেশী।
ব্যাগটা চেয়ারে রেখে বেসিনে যাওয়ার জন্য রওনা হই মুখটায় পানির ঝাপটা দিতে। পরিচ্ছন্ন টয়লেট এবং বেসিন আমাকে অনেকটা স্বস্তি দিলো। টয়লেট হতে বাহির হয়ে দেখি গায়ে একটা বিশেষ বাহিনীর পোষাক পরা মুখের দাড়ি ও মাথার চুলে লাল মেহেদি করা প্রায় পঞ্চাশ বছরের এক লোক টাকা গণনা করতেছে। একটাই বেসিন ওটার সামনে ওনি দাঁড়ানো হাতে নতুন পুরাতন পঞ্চাশ /শত টাকার নোট কচ কচ করে গণনা করছে এবং ভাঁজ করছে। ভাবলেশহীন উনি আমি দেখেও না দেখার ভান করে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, হচ্ছে না আমার মুখ ধোঁয়া। রোদে পুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই লোকটা অন্যের ডিম ডাল খাওয়ার টাকা আইনের দোহাই দিয়ে ছিনতাই করে দিন শেষে এই বাস কাউন্টারে হিসাব করে পকেটে নিচ্ছে নিজের উদর পূর্তি করতে। কার হবে এইসব টাকা রিক্সা, অটো রিক্সা, বাস, ট্রাক চালকের নাকি রাস্তার কোনো ফেরিওয়ালার। ভাবতে ভাবতে বাসে উঠে আসন গ্রহণ করি, হেডফোন কানে দিয়ে পাতলা কম্বল জড়িয়ে গান ছেড়ে দিই “এমন দেশটি পাবে----”।
(অনু গল্প)
২৩ /০৯ / ২০২২
শিমুল, পলাশ কিংবা কৃষ্ণচূড়ার সময়কাল আমাকে করে পাগলপ্রায়। কতোদিন ভেবেছি শুভ্র-শ্বেত আকাশের নিচে কৃষ্ণচূড়ার মৌসুমে তোমার হাত ধরে দাঁড়াবো। তোমার কালো কালো কেশে ঝরে পড়বে পাপড়ি ঠোঁটে থাকবে গাঢ় লাল লিপষ্টিক। আলতো করে হাত ধরে হেঁটে যাব বাঞ্ছারাম পুকুর , পাড় হতে সেই নামহীন স্বর্গে।
চিকন সরু কাঁদা মাটির রাস্তা। দুই পাশে লম্বা লম্বা দূর্বা ঘাস, মাঝখানে সাদা মিহি বালু। রাস্তার পশ্চিম পাশে নানাজাতের গাছের মাঝে কৃষ্ণচূড়া গাছ তারপর ফসলের জমি। পূর্ব পাশে কচুরি পেনায় ভরপুর বাঞ্ছারাম পুকুর। পেনায় জড়িয়ে লক লক করা কলমি শাক , পুকুর পাড়ে বসত করা লেদু মিয়া রান্না করে খায়। পুষ্টহীন ষাট বছরের লেদু মিয়াকে দেখলে মনে হয়, কলমি শাক খেয়েই কোনো রকম বেঁচে আছে। দরিদ্রতার প্যাচে পড়ে শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য কারো কোনো রকম সাহায্য ছাড়াই এই প্রাণপণ লড়াই। তারপরও দেখা হলে হেসে উঠে জানতে চায় “কেমন আছো বাবা”। আমিও হাসি মুখ করে উত্তর দিই “ স্বর্গে আছি” চাচা। মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সংসারের অভাব -অনটন তুলে ধরে। দীর্ঘশ্বাস আরো বড় হয় যখন বলে পুত্র সন্তান না থাকায় সংসারের হাল ধরার কোন মানুষ নাই । তারপরও আগে জিনিস সস্তা ছিলো ডাল ডিমে চলে যেতো দিন আর এখন সব ----।
আওয়াজ শুনে আমার ঘুম ঘুম ভাব ও স্বপ্নটা ভেঙ্গে যায়। সন্ধ্যা ৬-১৫ মিনিটের বাস যাত্রীদের আসন গ্রহণ করার জন্য কতৃপক্ষের অনুরোধ । প্রচণ্ড গরমেও বিশ্রামগারে চেয়ারে বসতেই তন্দ্রাচ্ছন্নভাব গ্রাস করে আমাকে। আজ কয়েকদিন হাসপাতালে ইদুর বিড়াল দৌড়ে ক্লান্ত শরীর, তাই আর রাজধানীতে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না। ডাক্তার দেখানো শেষ হলেই দৌড় দিলাম বাস ধরতে। পকেট হতে মোবাইল বাহির করে দেখি ছয়টার কাছাকাছি,আর আমার বাস ছাড়ার সময় ৬-১৫ মিনিট। অনেক আগে একবার “দেশ বাংলা ট্রাভেল” করে ঢাকা হতে বাড়ি গিয়ে ছিলাম, খুব আরামদায়ক ও নিরাপদ মনে হয়েছে। তাই এইবার আবারও “দেশ বাংলা ট্রাভেল”-এ ভ্রমণে মনস্থির করি। টিকেট হাতে নিয়ে ধাক্কা খাই বাস ভাড়া বৃদ্ধি করেছে শুনে কারণ তেলবাজ এই দেশেও তেলের দাম বেশী।
ব্যাগটা চেয়ারে রেখে বেসিনে যাওয়ার জন্য রওনা হই মুখটায় পানির ঝাপটা দিতে। পরিচ্ছন্ন টয়লেট এবং বেসিন আমাকে অনেকটা স্বস্তি দিলো। টয়লেট হতে বাহির হয়ে দেখি গায়ে একটা বিশেষ বাহিনীর পোষাক পরা মুখের দাড়ি ও মাথার চুলে লাল মেহেদি করা প্রায় পঞ্চাশ বছরের এক লোক টাকা গণনা করতেছে। একটাই বেসিন ওটার সামনে ওনি দাঁড়ানো হাতে নতুন পুরাতন পঞ্চাশ /শত টাকার নোট কচ কচ করে গণনা করছে এবং ভাঁজ করছে। ভাবলেশহীন উনি আমি দেখেও না দেখার ভান করে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, হচ্ছে না আমার মুখ ধোঁয়া। রোদে পুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই লোকটা অন্যের ডিম ডাল খাওয়ার টাকা আইনের দোহাই দিয়ে ছিনতাই করে দিন শেষে এই বাস কাউন্টারে হিসাব করে পকেটে নিচ্ছে নিজের উদর পূর্তি করতে। কার হবে এইসব টাকা রিক্সা, অটো রিক্সা, বাস, ট্রাক চালকের নাকি রাস্তার কোনো ফেরিওয়ালার। ভাবতে ভাবতে বাসে উঠে আসন গ্রহণ করি, হেডফোন কানে দিয়ে পাতলা কম্বল জড়িয়ে গান ছেড়ে দিই “এমন দেশটি পাবে----”।
(অনু গল্প)
২৩ /০৯ / ২০২২
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ২১/০৬/২০২৪অনবদ্য নিবেদন কবিবর
-
সুব্রত ব্রহ্ম ২৯/০৮/২০২২খুব ভালো লাগলো।
-
বোরহানুল ইসলাম লিটন ২৮/০৮/২০২২অতি সুন্দর অনুগল্প!
মুগ্ধতা ও শুভ কামনা রইল সম্মানিত কবি! -
সাইয়িদ রফিকুল হক ২৫/০৮/২০২২মানুষের বোধোদয় হোক।
-
শ.ম.ওয়াহিদুজ্জামান ২৪/০৮/২০২২সুন্দর লিখেছেন।