গোধূলি বেলায় তোমার চেহারা।
(এক)
কদম গাছের তলায় বসে পানি পান করে নিজেকে শীতল করলাম। শরীরটা খুবই ক্লান্ত লাগছে কিন্তু মনটা খুবই সতেজ তাই দুর্বলতা নেই । এই দীঘির স্বচ্ছ জল, দীঘির পাড়ে দূর্বাঘাস , বাদামী রংয়ের মিহি মিহি বালু আমার হৃদয়ের আকুলতা জানতো। অথচ আজ আমার মত নিঃসঙ্গ নিঃস্ব, কারো না কারো পায়ের তলার ধুলা কিংবা স্নান সেরে যাওয়া পরিত্যক্ত জল। এই জগত, এই সংসার, এই ছুটে চলা সবই জীবনের প্রয়োজনে আর এই প্রয়োজন নিজের কিংবা অন্যের যার ভিতর থাকে অনেকের স্বার্থহীন ভালোবাসা । চলার পথে অন্যের প্রতি প্রাকৃতিকভাবে যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয় তা অক্ষয় ও অবিনশ্বর। শুধু সমাজ, সংসার এবং ধর্ম-কর্মের ভয়ে মানুষ চুপ থাকে, ভুলে যাওয়ার অভিনয় করে । কারণ মানুষের জীবন একটা খোলা বই যে কেউ পড়তে পারে এই বইয়ের পাতা নষ্ট করাই অন্যায় ও অবিচার। তবে এই প্রাকৃতিক ভালোবাসাই আবার কখনো সুখের রাজা-রাণী করে আবার কখনো দুঃখের।
হ্যালো,তুমি কোথায় আছো এখন।
আমি বিজয় সিংহ দিঘির পার্কেই বসা আছি।
পাশাপাশি দুইজনে কিন্তু তবুও কতদুরে হাতটা ধরে জিজ্ঞাস করতে পারছিনা, জীবনের এই পড়ন্ত বেলাতেও “কেমন আছো তুমি মিতালি” ! দুইজনই নীরব নিঃস্পন্দ, মুখে কোনো কথা না হলেও মনে মনে মিলিয়ন মিলিয়ন কথা হচ্ছে।
নীরবতা ভেঙ্গে আমিই বলি, মনে হয় সাইত্রিশ বছর পর দেখা তোমার সাথে, দেখা করতে এসেছো এতেই আমি ধন্য এবং তোমাকে ধন্যবাদ।
আসলে আসা এত সহজ ছিলো না ।
তাহলে আসলে কেনো।
কিছু কিছ কাজ করা দরকার হয়ে পড়ে। বিনা কারণে মানুষ করতে বাধ্য হয়, ঠিক তেমন এই কাজটাও।
কেমন আছো তুমি রোহিত।
ভালোই তো আছি , দিন চলে যাচ্ছে।
মিতালির চোখে কালো ফ্রেমের চশমা, চোখগুলো আগের চেয়ে বড় দেখাচ্ছে হয়তো বয়সের কারণে।কপালের কাটা দাগটা এখনো স্পষ্ট তবে মাথার চুল সাদা অর্ধেকের বেশী। লাল ছোট ছোট ঘরের সাদা শাড়িতে দারুণ মানিয়েছে মিতালিকে। কপালের কাটা দাগটা আমি তির্যকভাবে দেখছি দেখে মিতালি মুচকি হাসে এবং চুল দিয়ে ঢেকে দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে।ছোট ছোট কথা বলে এক সময নীরব হই দুইজন।
আমি এখন একটা বটবৃক্ষ, ছেলে-মেয়ে এবং তাদের বাবা ও তাদের সন্তানদের ছায়া দেওয়াই আমার কাজ। কেউ গাছটার ডাল-পালা কেটে দিলে গাছটা কী করে বাঁচবে বলো রোহিত ।
তা ঠিক বাঁচবে না। ঝড়ে উপড়ে যাওয়া গাছ আর কখনই সোজা হয় না , সোজা হলেও বেঁচে থাকার ছন্দ পতন হয়। তাই যেমন আছো যেখানে আছো ভালোই আছো, আমিও ভালো আছি ।
পরিবার পরিজন নিয়ে তাহলে সুখেই আছো মিতালি।
সুখের সজ্ঞায় আমি যাবো যাবো না তবে যে লোকটা আমার স্বামী উনি নিরেট ভদ্রলোক তাই তুমিবিহীন বয়ে যাওয়া জীবন কাটাতে কষ্ট হয়নি।
আচ্ছা তুমি আমাকে কেনো বিয়ে করতে রাজি হওনি।
পাল্টা যদি আমি প্রশ্ন করি ইউরোপ গিয়ে কেনো আমার খোজ নাওনি রোহিত। কেনো তোমার পরিবার আমাকে বার বার অপমান করে তাড়িয়েছে । আত্মা হত্যা করা ভীরুতা আর কাপুরূষতা তাই মাথা উচূ করে ভদ্র ঘরের বউ হয়ে বেঁচে আছি। যেখানে হৃদয়ের অনেক অনেক গভীরে তুমি নামক একটা শব্দ ধুলাবালিতে জমা আছে।
সংসারের গতিময়তা, ভদ্রলোকের পরিবারের স্নেহ তোমাকে জীবনের বাহিরে রাখতে সাহায্য করছে, তবে একটুও ভুলি নাই রোহিত। চুপ করে আছো কেনো কিছু বলো। তোমার বউ-বাচ্চা কেমন আছে।
মিতালির কথায় মনে হয় শরীরটা হিমালয়ের বরফে ঢাকা লাশ। এই লাশটা নেপাল, ভুটান নাকি চীন সীমানায় কী জানি।
ফয়জুল মহী
০৯/০২/২২
কদম গাছের তলায় বসে পানি পান করে নিজেকে শীতল করলাম। শরীরটা খুবই ক্লান্ত লাগছে কিন্তু মনটা খুবই সতেজ তাই দুর্বলতা নেই । এই দীঘির স্বচ্ছ জল, দীঘির পাড়ে দূর্বাঘাস , বাদামী রংয়ের মিহি মিহি বালু আমার হৃদয়ের আকুলতা জানতো। অথচ আজ আমার মত নিঃসঙ্গ নিঃস্ব, কারো না কারো পায়ের তলার ধুলা কিংবা স্নান সেরে যাওয়া পরিত্যক্ত জল। এই জগত, এই সংসার, এই ছুটে চলা সবই জীবনের প্রয়োজনে আর এই প্রয়োজন নিজের কিংবা অন্যের যার ভিতর থাকে অনেকের স্বার্থহীন ভালোবাসা । চলার পথে অন্যের প্রতি প্রাকৃতিকভাবে যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয় তা অক্ষয় ও অবিনশ্বর। শুধু সমাজ, সংসার এবং ধর্ম-কর্মের ভয়ে মানুষ চুপ থাকে, ভুলে যাওয়ার অভিনয় করে । কারণ মানুষের জীবন একটা খোলা বই যে কেউ পড়তে পারে এই বইয়ের পাতা নষ্ট করাই অন্যায় ও অবিচার। তবে এই প্রাকৃতিক ভালোবাসাই আবার কখনো সুখের রাজা-রাণী করে আবার কখনো দুঃখের।
হ্যালো,তুমি কোথায় আছো এখন।
আমি বিজয় সিংহ দিঘির পার্কেই বসা আছি।
পাশাপাশি দুইজনে কিন্তু তবুও কতদুরে হাতটা ধরে জিজ্ঞাস করতে পারছিনা, জীবনের এই পড়ন্ত বেলাতেও “কেমন আছো তুমি মিতালি” ! দুইজনই নীরব নিঃস্পন্দ, মুখে কোনো কথা না হলেও মনে মনে মিলিয়ন মিলিয়ন কথা হচ্ছে।
নীরবতা ভেঙ্গে আমিই বলি, মনে হয় সাইত্রিশ বছর পর দেখা তোমার সাথে, দেখা করতে এসেছো এতেই আমি ধন্য এবং তোমাকে ধন্যবাদ।
আসলে আসা এত সহজ ছিলো না ।
তাহলে আসলে কেনো।
কিছু কিছ কাজ করা দরকার হয়ে পড়ে। বিনা কারণে মানুষ করতে বাধ্য হয়, ঠিক তেমন এই কাজটাও।
কেমন আছো তুমি রোহিত।
ভালোই তো আছি , দিন চলে যাচ্ছে।
মিতালির চোখে কালো ফ্রেমের চশমা, চোখগুলো আগের চেয়ে বড় দেখাচ্ছে হয়তো বয়সের কারণে।কপালের কাটা দাগটা এখনো স্পষ্ট তবে মাথার চুল সাদা অর্ধেকের বেশী। লাল ছোট ছোট ঘরের সাদা শাড়িতে দারুণ মানিয়েছে মিতালিকে। কপালের কাটা দাগটা আমি তির্যকভাবে দেখছি দেখে মিতালি মুচকি হাসে এবং চুল দিয়ে ঢেকে দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে।ছোট ছোট কথা বলে এক সময নীরব হই দুইজন।
আমি এখন একটা বটবৃক্ষ, ছেলে-মেয়ে এবং তাদের বাবা ও তাদের সন্তানদের ছায়া দেওয়াই আমার কাজ। কেউ গাছটার ডাল-পালা কেটে দিলে গাছটা কী করে বাঁচবে বলো রোহিত ।
তা ঠিক বাঁচবে না। ঝড়ে উপড়ে যাওয়া গাছ আর কখনই সোজা হয় না , সোজা হলেও বেঁচে থাকার ছন্দ পতন হয়। তাই যেমন আছো যেখানে আছো ভালোই আছো, আমিও ভালো আছি ।
পরিবার পরিজন নিয়ে তাহলে সুখেই আছো মিতালি।
সুখের সজ্ঞায় আমি যাবো যাবো না তবে যে লোকটা আমার স্বামী উনি নিরেট ভদ্রলোক তাই তুমিবিহীন বয়ে যাওয়া জীবন কাটাতে কষ্ট হয়নি।
আচ্ছা তুমি আমাকে কেনো বিয়ে করতে রাজি হওনি।
পাল্টা যদি আমি প্রশ্ন করি ইউরোপ গিয়ে কেনো আমার খোজ নাওনি রোহিত। কেনো তোমার পরিবার আমাকে বার বার অপমান করে তাড়িয়েছে । আত্মা হত্যা করা ভীরুতা আর কাপুরূষতা তাই মাথা উচূ করে ভদ্র ঘরের বউ হয়ে বেঁচে আছি। যেখানে হৃদয়ের অনেক অনেক গভীরে তুমি নামক একটা শব্দ ধুলাবালিতে জমা আছে।
সংসারের গতিময়তা, ভদ্রলোকের পরিবারের স্নেহ তোমাকে জীবনের বাহিরে রাখতে সাহায্য করছে, তবে একটুও ভুলি নাই রোহিত। চুপ করে আছো কেনো কিছু বলো। তোমার বউ-বাচ্চা কেমন আছে।
মিতালির কথায় মনে হয় শরীরটা হিমালয়ের বরফে ঢাকা লাশ। এই লাশটা নেপাল, ভুটান নাকি চীন সীমানায় কী জানি।
ফয়জুল মহী
০৯/০২/২২
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শুভজিৎ বিশ্বাস ১৮/০২/২০২২বাহ্। বেশ সুন্দর তো!
-
বোরহানুল ইসলাম লিটন ১৬/০২/২০২২বেশ ভালো লাগলো।
-
শ.ম.ওয়াহিদুজ্জামান ১৫/০২/২০২২খুব সুন্দর প্রকাশ।
-
মোঃ বুলবুল হোসেন ১১/০২/২০২২চমৎকার
-
আব্দুর রহমান আনসারী ১১/০২/২০২২অবশ্যই সুন্দর