মেয়ে ও মায়া মাদক ও রাষ্ট্র
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৫০তম পর্ব।
এই সময় সুজনই ফোন করবে।
হ্যাঁলো সুজন। আমি বাসে আছি এবং বাসও ছেড়ে দিয়েছে। সরি ফোন করতে ভুলে গিয়েছি আর প্রথম একটু ভয় ভয় লেগে ছিলো শিউলীর কথা মনে পড়ায়
আচ্ছা ঠিক আছে ভয় করিস না। আল্লাহ সহায় আছে, ঠিকভাবে পৌছে যেতে পারবি।
দোয়া কর। অবশ্যই আমি এখন বাহিরের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতেছি জানালা দিয়ে। তোর মত আমারও অভ্যাস বাসের জানালার পাশে বসা এবং বাহিরে তাকিয়ে থাকা। তুই সাথে থাকলে দারুণ হতো।
আমি সেই রাস্তায় অনেক চলেছি খুব সুন্দর দেখতে।
রাস্তার দুই পাশের গাছ যেন এক নয়াভিরাম দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে। মানুষ বলে গাছ অক্সিজেন দেয়, ছায়া দেয়, গাছের উপকারিতার শেষ নাই। আসলে গাছ অপরূপ দৃশ্যও উপহার দেয়। সবচেয়ে বড় কথা গাছপালা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় মূর্খ ভূমিকা রাখে। খুলনায় সুন্দরবন আর কক্সবাজারে ঝাওবন বার বার প্রমাণ দিয়েছে। তারপরও আমরা গাছ কেটে বনাঞ্চল উজাড় করছি। নিজের গাছ কেটে আরেকটা গাছ লাগাইতে চাই না। কাঠ চোরাচালানকারী পার্বত্য অঞ্চল কিংবা গাজীপুর কিছুই বাদ দিচ্ছে না। আর এতে জনসাধারণের চোখের আড়ালে সহযোগিতা করে টাকা কামাই করে সরকারি লোকেরা। উগাণ্ডার মত দেশে আইন আছে গাছ কাটলে গাছ লাগাতে হবে সেটা সরকারি কিংবা বেসরকারী যার হোক। এই আইন মানতে সবাই বাধ্য কারণ কঠোরভাবে সরকার তদারকি করে আর না মানলে জেল জরিমানা অবধারিত, কোন ধরনের ছাড় বা মাফ নাই। অথচ আমরা রামগড়, খাগড়াছড়ি, বান্দারবন, রাঙ্গামাটি ও গাজীপুর সরকারি বন উজাড় করতে তুলে দিয়েছি বনদূস্যদের হাতে। যারা বনাঞ্চল পাহারা দেয় তারা মিলিত হয় যখন যে সরকার থাকে তাঁর দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে, মিলেমিশে খায় বনের কাঠ ফলমূল ও লতাপাতা। মনে হয় যেন চোর ডাকাতের সংসার।
আবার সৎ বন কর্মকর্তার হাতে কখনো কখনো বনদূস্য ধরাও পড়ে, এই ধরা পড়া দূস্য আইনের ফাঁকফোঁকরে বের হয়ে পুরাতন কারবার আবার শুরু করে। বনাঞ্চলকে ঘিরে গাজীপুর শত শত অবৈধ করাত কল গড়ে উঠেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং আশেপাশে হাজার হাজার অবৈধ করাত কল আছে। রামগড় হতে করেরহাট ও ফেনী। একদিকে করেরহাট হতে ফেনীর উপজেলা শহর ভারতের ত্রিপুরার সীমান্ত এলাকা ছাগলনাইয়া। আরেক দিকে বারইয়ার হাট যার মাঝখান দিয়ে ঢাকা চট্টগ্রামের হাই ওয়ে। রামগড় খাগড়াছড়ি জেলার পৌরসভা শহর করেরহাট ছোট বাজার এবং বাইয়ারহাট চট্টগ্রামের পৌরসভা শহর। করেরহাট, ছাগলনাইয়া ও বাইয়ারহাট এই তিন জায়গায়ই শুধু প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার গাছ করাত মিলে কাটা হয় যা সম্পন্ন অবৈধ এবং চোরাই কাঠ। এবং তিন জায়গাই একটু পর পর আছে ফরেস্ট অফিস। করেরহাট ছাগলনাইয়া বাইয়ারহাট হতে ঢাকা চট্টগ্রামে কোটি কোটি টাকার ফার্নিচার যায় যার পুরোই চোরাই কাঠে তৈরী। আমার মনে হয় ছাগলনাইয়া কাঠের ফার্নিচারের জন্য বিখ্যাত সারা বাংলাদেশে। অবশ্যই এর সাথে শত শত ফার্নিচার শ্রমিকের রুটিরুজির ব্যবস্থাও হয়েছে। সেগুন, মেহগনি ও গামারিসহ নাম না জানা অসংখ্য পাহাড়ী গাছ প্রতিদিন আসে রামগড় ও খাগড়াছড়ি হতে এইসব অঞ্চলে। তবে মাঝে মাঝে করাত কলে ফরেস্টের অভিযান পরিচালনা হয় আর এতে করাত কল মালিকের যৎসামান্য টাকার ক্ষতি হয় মনে হয়। দুই এক দিন পর আবার সেই পুরানো চেহারায় ফিরে যায়।
করাত কলের পাশে থাকে পুকুর খাল ও বিল। আর এইসব পুকুর খাল ও বিলে পানির ভিতর লুকানো থাকে শত শত পাহাড়ী গাছ। হাই ওয়ের পাশে কিংবা রেল রাস্তার পাশে কোথায় নিরাপদ নয় গাছ। সবখানে বনদুস্য তাদের করাতের আচড় লাগায়। রেল রাস্তার পাশে গাছ কাটার জন্য এক অভিনব কৌশল অবলম্বন করে। একসাথে অনেক গাছ কাটে গাড়ি আসার সময় যাতে গাড়ির আওয়াজে গাছ কাটার আওয়াজ শুনা না যায়। এখন ঢাকা চট্টগ্রাম টু ওয়ে রেল লাইন এবং সড়কও টু ওয়ে। নতুন রাস্তা তৈরি করার জন্যও প্রচুর গাছ কাটা হয়েছে যেখানে যেখানে রাস্তার কাজ শেষ সেখানে সেখানে গাছ লাগানো অতি জরুরী। রেল রাস্তায় খালি জায়গা পড়ে আছে অথচ গাছ লাগানো হয় না। শুধু রাস্তা নয় সমস্ত সরকারি জায়গা টিলা পাহাড় সব জায়গায় প্রচুর গাছ লাগাতে হবে মোট কথা কোনো জায়গাই গালি রাখা যাবে না। গাছই পারবে জলবায়ু পরিবর্তনে প্রধান ভূমিকা রাখতে আর কিছুই না।
অথচ আমরা প্রতি বছর বর্ষাকালে বৃক্ষরোপণ করার জন্য মেলা করি। ঢাক ঢোল পিটিয়ে নেতা নেত্রীরা গাছ লাগানো উদ্বোধন করে। একদিকে গাছ লাগায় আরেক দিকে ছাগল এসে সেই গাছ খেয়ে পেলে এই হলো আমাদের দেশের বাস্তবতা। মজার বিষয় হলো ভরা বর্ষায় নেতা গাছ লাগায় ছাতা মাথা দিয়ে আর সঙ্গীরা সেই গাছে পানি ঢালে। অথচ আমরাই উগাণ্ডাকে নিয়ে হাসি ও মজা করি। সেখানে গাছ কাটার অপরাধে কঠোর শাস্তি প্রয়োগ হয়। যার যে দায়িত্ব তা সৎ ও দক্ষভাবে পালন করে। কয়েকটা কঠোর আইন ও প্রয়োগে সরকার বদ্ধপরিকর তার মধ্যে গাছ ব্যপারে একটা। অথচ উগাণ্ডা পুরোটাই পাহাড়ী বনাঞ্চলের দেশ।
(চলবে)।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৫১তম পর্ব।
হ্যাঁ সুজন।
শুনতেছি, বল নাহিদ।
আমি এসে গিয়েছি সুজন।
যাক, আলহামদুল্লিল্লা। আমি ভাবনাতে ছিলাম সারা বিশ্বে দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে কিন্তু বিশ্বনেতারা তা রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পৃথিবীর প্রাণ আমাজান বন আগুনে পুড়ে ধ্বংস করা হচ্ছে অথচ এই বনই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী অক্সিজেন দিচ্ছে। ব্রাজিলে অবস্থিত এই আমাজান সেই দেশের সরকারই হাজার হাজার একর ধ্বংস করতেছে। আর বিশ্ব নেতারা চুপ করে আছে কেন বুঝি না।
তা ঠিক। হাঃ হাঃ হাঃ।
নাহিদ শিউলীর মা বাবাকে আমার সালাম বলবি।
ঠিক আছে বলবো।
আচ্ছা ঠিক আছে। রাখি এখন নাহিদ।
সুজন সত্যিই একজন ভালো মন ও মানের মানুষ, একজন মানবিক ও সমাজ দরদী মানুষ কিন্তু রাজনীতি তার একদম অপছন্দ তাই সে রাজনীতি করতে ও নিষেধ করে। তার মত একজন বন্ধু পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার।
মায়ের উদর হতে জন্ম নেওয়া মানুষটি ভাই কিংবা বোন হয় যা সৃষ্টিকর্তার নিপুণ সৃষ্টি। অবশ্যই ভাইয়ে ভাইয়ে কিংবা বোনে বোনে কখনো কখনো চাওয়া পাওয়ার স্বার্থপরতা এসে ভালোবাসার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে মিত্র হতে শত্রুতে পরিনতও হয় । কিন্তু বন্ধু মানুষ পছন্দ করে যা সৃষ্টিকর্তার দেওয়া প্রাকৃতিকভাবে ভালোবাসা সৃষ্টি। এইটি সৃষ্টিকর্তার আরো সুনিপুণ সৃষ্টি। এখানে চাওয়া পাওয়ার হিসাব থাকে না দুই বন্ধু সতর্ক থাকলে এই ভালোবাসা হয় স্বর্গীয়।
আমি অনেক ভুল করলেও সুজন তা সংশোধন করে দেয়। কখনো আমার কথা বা কাজে মন খারাপ করে না, স্বার্থ খোজে না।
“বিধিরে ঘরের মানুষ পর করলো
আর পর করলো আপন। বিধিরে সবই
তোমার লীলা খেলা বিধিরে ওহ বিধি।”
নাহিদ মনে মনে গান ধরে আর হাসে। স্বচ্ছ আকাশ কোথাও কোনো মেঘের চিহৃ নাই, ইস! মানুষের জীবনটা যদি এই রকম স্বচ্ছ সুবিশাল আকাশ হতো। দুঃখজনক কালো মেঘ জমাট বেঁধে যদি বৃষ্টি না ঝরতো তাহলে মানুষ সুখের পায়রা হয়ে এই সুবিশাল আকাশে উঠে বেড়াত। বাংলাদেশের ধনীরা উন্নত দেশ সিঙ্গাপুর, মালেয়শিয়া, কানাডা ও যুক্তরাজ্যে ব্যবসা বাণিজ্যে বিনিয়োগ করে এইসব দেশে নাগরিক হয়। আর গরিব নিজ দেশের মাটিতে চির দিন শুধু নীলময় আকাশে সুখ খোজতে লড়াইয়ে লড়াইয়ে জীবনের অবসান করে। অবশ্যই কারো কারো সুখের খোজ হলেও আর কারো কারো নশ্বর দেহ মাটিতে বিলীন হয়। হয়তো আমিও সুখের পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে একদিন ধপ করে পড়ে মাটিতে বিলীন হবো। যে মাটিতে শিউলীর দেহ বিলীন হয়েছে সেই মাটিতে। আত্মার বিচরণ হবে চাঁদের ওপারে কোন সুখময় রাজ্যে। শিউলী, সেখানে তোমাকে সুখের একটা প্রসাদ দিবো তুমি রাণী হয়ে হুকুম করবে আর সেই হুকুম আমি মেনেই চলবো। সেই জীবনের শুরু আছে কোনো শেষ নাই। সেই জীবন এক অন্য রকম জীবন, সেইটা পৃথিবীর জীবনের মতো না। সেখানে খাবারের অভাব হবে না কখনোই। কোনো দুষ্ট লোকও থাকবে না তবে জীবনটা হবে অন্তহীন কারণ সে জীবনে কখনোই মৃত্যু থাকবে না।
আজ তোর মনে পড়লো আমাকে নাহিদ। এতদিন তোর কোন ফোন নাই একটু খবর নাই।
আমি অনেক ঝামেলায় ছিলাম আন্টি।
তোর আম্মু আব্বু সবাই কেমন আছে । তাদের কাছে তোর কথা জিজ্ঞাসা করে লাভ নাই তাই, চুপ থাকি।
ভালো করেছেন।
যা হাত মুখ ধোয়া মোছা করে ফ্রেশ হয়ে আয়। খাবার দিচ্ছি আমি এমনিতে অনেক সময় হয়েছে।
ঠিক আছে খাবার দিন, আমারও খুব ক্ষুধা পেয়েছে।
আমি তোর ছোট খালা হয়ে সবসময় তোকে আদর ও স্নেহ দেওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু তোর কাজকর্মে আমাকে লজ্জিত হতে হয় নানান জন নানারকম কথা শুনায়। তুই কি এইসব ভেবে দেখেছিস কখনো। নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করে বউটাও হারিয়েছিস। তোর এইসবে দুঃখ হয় না কষ্ট হয় না। আমার তোর জন্য দুঃখ লাগে তোর আম্মু ফোন করে কান্না করে।
আন্টি এখন খেতে দাও রাতে বসে সব কথা হবে।
কি লাগবে নিস রাগ করিস না। তুই আমার সন্তান নয় কিন্তু তোকে সন্তানই মনে করি।
জানি আমি এই জন্য তুমি আমার সুইট আন্টি।
আমি শিউলীর মা বাবার সাথেও দেখা করতে চাই ।
আমি শুনেছি দেখতে শুনতে মেয়েটা রূপসী ছিল তাই বলে একজন নিঃস্ব মানুষের মেয়ে বিয়ে করলি।
এইসব এখন অতীত কারণ শিউলী জীবিত নাই। তাকে নিয়ে আমি সুখী হতে চেয়ে ছিলাম সেই নাই অতএব এইসব কথা বলে কি লাভ এখন।
তারপরও তোর জীবনে একটি দাগ পড়ে গেল।
হাঃ হাঃ হাঃ (সরি আন্টি)।
(চলবে)।
মেয়ে ও মায়া,মাদক ও রাষ্ট্র।
৫২তম পর্ব।
হাসির কি হলো।
তুমি অনেক বোকা ও সহজ সরল সুন্দর মনের মানুষ। এই জন্য তুমি,আমি নাহিদের দরদি আন্টি।শিউলীদের বাড়িতে আমার সাথে কালকে আপনি যাবেন কিনা বলেন।
না বাবা আমি যাবো না।
আচ্ছা ঠিক আছে।এখন তার মায়ের সাথে একটু কথা বলেন, আমি যে যাবো জানিয়ে দেন।
না,আমি পারবো না।তোর আব্বু শুনলে আমার সাথে এবার আর সম্পর্কই রাখবে না।
হাঃহাঃহাঃ। তুমি আমার আন্টি মনি,মা মনি আমি তোমার আব্বু হই।
আমি ফোন করলে যদি উনারা খারাপ কিছু বললে।
কিছুই বলবে না। আপনি পরিচয় দিয়ে আমার কথা বলে রেখে দিবেন, উনি কথা বলার সুযোগই পাবে না।
জানি না এবার আবার কোন ঝামেলা সৃষ্টি করবি। আরে খালামনি আমার বাঁধানো ঝামেলা সমাধান করা আপনার আর আম্মুর কাজ।
তোর কারণে তোর আম্মু একবুক কষ্ট বয়ে বেড়ায়।
খালামনি এইসব কথা শুনতে এবং বলতে ভালো লাগে না।
এই নিন ফোন কথা বলেন।
তোর যন্ত্রণা আর সহ্য হয় না।
কথা বলা শেষ করে অনেক বকা দিতে পারবেন আমি শুনতে রাজি আছি। তুমি আর আম্মু ছাড়া আমাকে ভালোবাসার পৃথিবীতে আর কেউ নাই।
হ্যাঁলো ভাবী,আসসালামুলাইকুম,কেমন আছেন।
জ্বি ভালো আছি। আপনারা কেমন আছেন।
আমরাও ভালো আছি। একটা কথা বলতে ফোন দিয়েছি।
জ্বি বলেন আমি শুনতেছি।
একটু আগে শিউলীর খালা শাশুড়ী ফোন দিয়ে বললো শিউলীর স্বামী আমাদের সাথে দেখা করতে সকালে আসতে চায়। আমরা হ্যাঁ অথবা না কিছুই বলি নাই, এখন কি বলবো আপনি বলেন। আর বাড়ির মানুষ সমাজের মানুষ এইটা নিয়ে হয়তো কানাঘুষো করতেও পারে।
ওহ আচ্ছা ঠিক আছে আমি লোকজনকে বলে দিবো সমস্যা নাই এবং জামাইকে আসতে দিন, ভালো খাওয়া-দাওয়া ও ভালো আচরণ করবেন। মেয়ে যখন নাই আর তার স্বামীর উপর রাগ রেখে লাভ কি। সে আপনাদের ভালো আচরণ দেখলে হয়তো আজীবন-পোষিত হবে।
আচ্ছা ঠিক আছে ভাবী। মৌরি মাকে বলবেন আমাদের খোজ খবর নিতে সে অনেক দিন ফোন করে না। চাচীর সাথে দুইদিন আগে কথা বলেছি।
আচ্ছা, আমার কাছেও সকালে ফোন করেছে। আজ নাকি উনার শরীরটা খারাপ লাগতেছে। দোয়া করবেন।
জ্বি ভাবী, অবশ্যই দোয়া করবো।
ঠিক আছে রাখি এখন।
আসসালামুলাইকুম।
নাহিদকে বাড়ির সদর রাস্তা হতে এগিয়ে নেওয়ার জন্য শিউলীর বাবা অপেক্ষা করে । নাহিদ রিক্সা হতে নামতেই দুইজনের দেখা হয় এবং মুখামুখি হলে চিনতে চেষ্টা করে একে অপরকে।
তুমি নাহিদ?
জ্বি।
আমি শিউলীর আব্বু। কেমন আছো।
আমি ভালো আছি। (নাহিদের চোখ হতে টিপ টিপ জল গড়িয়ে বুকে আসে)। আপনি কেমন আছেন?
আবদুর রহমান জোরে কান্না করে বুকে জড়িয়ে ধরে নাহিদকে। কেন আমার মেয়েটাকে নিয়ে গিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে না বাবা।
বাবা আমি আসছি আপনাদের সামনে, আমি অপরাধী যেই শাস্তি দিতে মন চায় দেন।
দুইজনের কান্না এবং কথায় জড়ো হওয়া অন্যরাও চুপ হয়ে যায়। এক মহিলা বলে উঠে আরে শিউলীর জামাইকে ঘরে নিয়ে যান পরে কথা হবে।
ওহ! আমি ভুলে গিয়েছি। আসো বাবা আসো।
সবাই নাহিদকে দেখে হতবাক স্মার্ট নাহিদ পোষাক পরিচ্ছেদে পরিপাটি দেখতে। দেখতে যেন শতে এক। ঘরে এসে পা রাখতে শিউলীর মার কান্নায় এক হৃদয়গ্রাহী দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
মা আমিও আপনার সন্তান আমি শিউলীকে ফেরত দিতে পারবো না কিন্তু আমি আপনাদের বুকে আগলে রাখতে পারবো। আমি এসেছি আপনাদেরকে দেখতে আমি এসেছি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইতে, সুখে দুঃখে পাশে থাকার ওয়াদা করতে। শিউলীর মত ভালো মেয়ের মা-বাবা আপনারা তাই সম্মান জানাতে
ছেলেটাকে বসতে দাও, যাও নাস্তা পানি দাও। বাবারে আমরা গরিব মানুষ তোমার উপযুক্ত সম্মান না হলে মন খারাপ করো না।
আমি সব জানি এবং জেনেশুনে আপনার মেয়েকে বিয়ে করেছি। ধনী গরিব সবাই মানুষ এক বিধাতার সৃষ্টি। আমার কাছে মনুষ্যত্ব বড় তাই ছুটে এসেছি আপনাদের কাছে। যদি পারেন ক্ষমা করে দিবেন।
ক্ষমা করতে কষ্ট হলেও পাশে থাকার সুযোগ দিবেন। যেন আমি আপনাদের খোজ খবর রাখতে পারি। এই সুযোগ হতে বঞ্চিত করবেন না বাবা।
নাও, নাস্তা নাও। এই তোমরা সবাই আসো জামাইর সাথে নাস্তা করতে। নতুন বউ অথবা জামাই আসলে বাড়ির মুরব্বিদের ডাকতে হয়, সবাই পরিচয় হয়।এইটা গ্রাম অঞ্চলের পুরাতন প্রথা। আমার এক চাচী উনার ছেলের সাথে কানাডা থাকে, আজ বাড়িতে থাকলে তোমাকে মাথায় তুলে রাখতো উনার ছেলের বউ জলি ভাবী সেই রকম। ভাবী ঢাকায় একা থাকে, একটাই মেয়ে সেও বিদেশে পড়তে গিয়েছে।
আমি উনার কথা সব জানি শিউলী সব সময় আন্টির কথা বলতো।
(চলবে)।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৫৩তম পর্ব।
কষ্ট লাগতেছে মেয়েটা যাওয়ার পর আর ফোনও করে নাই কোন দিন। মরার আগে মেয়েটার সাথে কথা বলতে পারি নাই একটু। (জল পড়ে চোখ হতে)।
থাক বৌমা এইসব কথা, নাতিন জামাই এসেছে তোমাদের দেখতে মাফ করে দাও আর শিউলীর জন্য দোয়া করো।
আমিও বলি চাচী কিন্তু সে আছে কান্নাকাটি নিয়ে। নাহিদ চুপ করে বসে সবার কথা শুনে কোন কথা বলে না। বাড়ির মুরব্বি নারী পুরুষ সবাই নাহিদকে দেখতে আসে। শিউলীর মা থেমে থেমে নাক চোখ মুছে শাড়ির আচঁলে। নানা রকমের নাস্তা জরাজীর্ণ ঘরে খুবই বেমানান, তবুও নতুন জামাইকে নাস্তায় ও খাওয়া-দাওয়ায় আদর সমাদরের কমতি করা যায় না। এত খাবার আইটেম যে সব খাওয়া সম্ভব হয় না তবুও ঘরের মুরব্বি মেহমানের সামনে এসে হাত কচালে বলে তেমন কিছুই করতে পারিনি আপনাদের জন্য। মনে কষ্ট না নিয়ে ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আসলে এটা একটা ভদ্রতা মেহমানকে সম্মান ও আন্তরিকতা দেখানোর।
এই আসো বউ মা তুমিও বসো নাস্তা করতে। তোমার ছেলেটা দেখছি না যে তাকে জামাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দাও।
আছে চাচী, সে উঠানে খেলা করতেছে।
ডেকে নিয়ে আসো নাস্তা করবে একসাথে।
আপনার নাম জানা হয়নি এখনো।
উনি আপনার দাদী শাশুড়ী জামাই।
জ্বি আমার নাম নাহিদ বীন হোসেন। ডাকে নাহিদ।
আপনার মা-বাবা, ভাই-বোন কে কে আছে।
আমার মা-বাবা সবাই আছে। আমরা এক ভাই এক বোন। মা গৃহিনী, আব্বু কাস্টমস অফিসার এবং বোন স্বামীর সাথে দুবাই থাকে। আর আমি আপনার নাতনী জামাই।
সবাই হেসে উঠে। আর তাতে পরিবেশ অনেকটা হালকা হয়। সবাই এটা সেটা খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে একে অপরের সাথে আলাপচারিতায় মগ্ন । নাহিদও গ্রামের নাম না জানা হাতে বানানো পিঠা খেতে থাকে। বাড়ির সবাই মিলে নাহিদকে সুন্দর ও সহজেই আপন করে নেয়। বয়স্ক লোকদের পরামর্শে সমাজের লোকজন শিউলীর মা-বাবা এবং নাহিদকে কোন ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন করে নাই। নাস্তা শেষে দুই একজন বাদে সবাই উঠে চলে যায়। তাদের সাথে শিউলীর বাবাও চলে যায়। শিউলীর মা রান্নাঘরে ব্যস্ত আর নাহিদ নীরব হয়ে বসে আছে । পুরাতন বেড়া এবং পুরাতন টিনের ঘরে বেড়ে উঠা অমায়িক ও সামাজিক মানুষের সুখী জীবনের সুন্দর বসবাস। অথচ দালান প্রাসাদে বাস করে সুখের জন্য টাকা আর টাকা করে অসুখী বিত্তবান।
সমজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনসহ নিজ গোত্রের পনর বিশ জনকে দাওয়াত দেয় শিউলীর বাবা উদ্দেশ নতুন জামাইকে সমাজে পরিচয় করা। কতশত নিয়ম সমাজ সংসারে মানুষের পায়ে পায়ে। শিউলী পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ঘরে ডুকতে পারিনি সমাজ এবং সংসারের ভয়ে। আর আজ শিউলীর দেহ মাটির অংশ হওয়ার পর তার স্বামীকে সমাজে তুলছে এই সমাজ। সমাজের আগুনে জ্বলে ভালোবাসা সংসারের আগুনে জ্বলে সুখ আর বিশ্বাস । কিন্তু কথা ছিলো ভালোবাসার পরশে সমাজের আগুন নিভে যাওয়ার ভালোবাসার পরশে সংসার ও বিশ্বাস দৃঢ় হওয়ার।
নাহিদ উসখুস করে লেমন ট্রি পান করার জন্য। এমন সময় শিউলীর বাবা ঘরে প্রবেশ করে হাকডাক শুরু করে। তোমরা সবাই জামাইকে একা রেখে কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছো। আপনার কিছু লাগবে বাবা।
জ্বি, রং চা দিতে বলেন লেবু দিয়ে।
আচ্ছা এখনি দিবে।
শিউলীর মা-বাবা নতুন জামাইয়ের সমাদরে কোনো কিছু কমতি রাখে নাই। এবং নিজ গোত্রের লোকজনও সন্তুষ্ট খাওয়া-দাওয়ায়। সবাইর শিউলীর বর পছন্দও হয়েছে, প্রসংশাও করছে।
খাওয়ার পর একটু ঘুম দিতে পারলে ভালো লাগতো। তা যেন শুশুর সাহেব বুঝতে পারে তাই সব গুছিয়ে আমাকে বিছানা করে দেয় আমিও সাথে সাথে শুইয়ে পড়লাম।
(চলবে)।
মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র ।
৫৪তম পর্ব।
আজ যেতে দিবো না জামাইকে।
তা অবশ্যই।
একদিন না থেকে কেমন করে চলে যায়।
আপনি ফোনটা ধরেন, আমি মুরব্বিদের নিয়ে জিনিসপত্র দেখি জামাই কি নিয়ে আসছে।
এই শিউলীর মা, তোমাদের বাড়ি হতে ফোন দিয়েছে। আসসামুলাইকুম মা। আপনারা কেউ আসলেন না কেন, এত করে বললাম আসার জন্য।
আমার ইচ্ছা ছিল হঠাৎ করে শরীরটা খারাপ করায় আর যাওয়া হয়নি।
মা এখন রাখেন একটু কাজ আছে।
নাস্তা-পানি, খাওয়া-দাওয়া সব ঠিকমতো হয়েছে।
জ্বি হয়েছে, জামাই এখন ঘুমে উঠলে চা দিবো।
ঠিক আছে এখন রাখছি পরে কথা হবে ।
চাচী এই দেখেন জামাই এইসব নিয়ে আসছে। জিনিস দিয়ে আর কি করবো আমার নাতনীই নেই দুনিয়াতে। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন, উনার যা সুন্দর মনে হয়ে হয়েছে তাই উনি করেছেন, ধৈর্য্য ধরে দোয়া করো। আমরা সব দেখলাম তুমি এখন সব গুছিয়ে রাখো।
জামাই ঘুম হতে উঠে পড়েছে তুমি চা বানাতে যাও।আপনি উনাকে আমাদের নলকুপ দেখিয়ে দেন। শিউলীর মা-বাবার কথা-বার্তার ফাঁকে নাহিদ ঘর ঘুরে দেখে একবার আর এইটা দেখে শুশুর-শাশুড়ী দুই জনই হেসে উঠে, নাহিদ তা খেয়াল করে না।
আসেন বাবা ঘরের পিছনে নলকুপ আর বার্থরুম আছে, হাত মুখ ধুয়িয়ে আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন। আমি আপনার শাশুড়ীকে চা দিতে বলেছি।
রং চা দিলে ভালো হয়।
ঠিক আছে । (হাসি দিয়ে) রং চা আপনার পছন্দ। গ্রামের মানুষের আগের হতে স্বাস্থ্য সচেতনতা অনেক বেড়েছে যা দেখে খুব ভালো লাগলো। এক সময় গ্রামে খোলা বার্থরুম ছিলো, নলকূল ছিলো না এখন ঘরে ঘরে সব হচ্ছে মানুষ কষ্ট করে হলেও এইসব ব্যবস্থা করতেছে। এতে সরকারও যথেষ্ট সচেতন তাই স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশান এবং বিশুদ্ধ পানির জন্য সব রকম সহযোগিতা দিতেছে। স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে সরকার প্রতিটি পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষার বলয় গড়ে তুলতে চাইতেছে তাই এতে জনসাধারণের ব্যাপক অংশগ্রহণও বাড়ছে। এতে অনেক জীবাণুবাহী রোগ কমে যাবে। শিউলীদের পরিবারের মত দিনে এনে দিনে খাওয়া লোকজন স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশান ও গভীর নলকূল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ব্যবহার করা দেখে অন্যরাও শিখবে এবং অন্যরা হয়তো আগে হতে ব্যবহার করতেছে। বিশেষ করে উনাদের সব কিছু খুব পরিষ্কার দেখে ভালো লাগলো বার্থরুম অপরিষ্কার একদম অসহ্য লাগে।
শিউলীরা এক বোন এক ভাই আর মা-বাবাসহ ছোটোখাটো ছিমছাম পরিবার। সেখান হতে শিউলী আজ নেই সত্যিই খুবই নির্মম ও নির্দয় লীলা খেলা মহান অধিপতির। গরিবের সহায় সম্পদ ছিনতাই করার ক্ষমতা দিয়ে সম্পদশালীদের আরো বেপরোয়া করে স্বর্গে তাদের বিচরণ করার সুযোগ তোমার ইচ্ছায় হয়ে থাকে হে অধিপতি। গরিবের দুঃখ কষ্টের ভিতর বেড়ে উঠা সন্তানের অকাল মরণ সেটাও তোমার একান্ত ইচ্ছায় হয় হে সৃষ্টিকারী। তখন গরিব আর জীবনের গতির বাঁকে ঘুরে দাঁড়াতে পারে না তাই তাদের ক্ষয় হতে থাকে হৃদয়। তারপরও গরিব তোমাকে ভুলে যায় না , তোমার এই লীলা খেলার তরঙ্গ ঢেউয়ে জীবন নৌকার বৈঠা মারে সামন্য সুখ নামক আলোটার জন্য। আর এতে তারা সুখ নামক অমূল্য রত্ন পেয়ে গেলেও কৃতজ্ঞ চিত্তে তোমাকে স্বরণ ও প্রণাম করে। তাই উচিত শিউলীর পরিবারকে শক্তি দেওয়া আর আমাকে অর্থনৈতিক সামর্থ্য দাও যাতে আমি এই পরিবারের পাশে থাকতে পারি।
নাহিদকে চুপচাপ দেখে শিউলীর আব্বু পাশে এসে বসে তার মাথায় হাত রাখে। এমনি নাহিদ কেঁদে উঠে নীরবে, টপ টপ করে অশ্রুজল ঘরের মাটিতে পড়ে। জামাইয়ের কান্না দেখে শুশুর সাহেব দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে তবে হাত এখনো নাহিদের মাথার উপরে।
এমন সময় শাশুড়ী ট্রে করে চা নিয়ে আসে বলে এই নিন, জামাই শুশুর চা পান করেন।
রাতে সবাই মিলে আলাপ করবো। বিশেষ করে দুই তিন জন মানুষের সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই টেলিফোনে।
আমি এখন চলে যেতে হবে যে।
না বাবা এখন যেতে পারবেন না, আগামী কাল সকালে যাবেন।
জ্বি জামাই আপনার শাশুড়ী ঠিকই বলেছে।
আর কথা বলে লাভ নাই উনাদের আবদার রক্ষা করাই ভালো হবে।
শিউলী যখন বেঁচে নাই তখন আর আমাকে উনাদের কাছে মেলে ধরে কি লাভ, বরঞ্চ উনারা কষ্ট পাবে। শিউলী রূপসী হলেও গরিব ও অর্ধশিক্ষিত পরিবারের মেয়ে ছেলের বউ হিসাবে আমার নামী-দামী পিতা কখনো মেনে নিতো না যেতই আমি চাই। আর শিউলীর পরিবার গরিব হলে যদি জানে আমি পরিবার হতে বিছিন্ন তাহলে শিউলী থাকলে মেনে নিতো না আর এখন শুনলেও কষ্ট পাবে। তাই সবই গোপন থাকুক হৃদয়ের গভীরে।
(চলবে)
মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র ।
৫৫তম পর্ব।
ব্রাদার-ইন-ল টাও ছোট তার সাথে কথা বলে সময় কাটানো যাবে, একা একা চুপচাপ থেকে সময় অতিবাহিত করা কষ্টকর ব্যাপার। এমনিতে আমার স্বভাব নেই একদম চুপচাপ থাকা। মাঝে মাঝে বাড়ির দাদা-দাদী, চাচা-চাচীরা এসে দেখা করে গেলেও সন্ধ্যার পর সুনশান নীরব হয়ে বসে আছি। তবে গহিন গ্রামেও বিদ্যুৎ থাকায় বাড়ির আঙ্গিনা ও ঘরের উঠান আলোময় হওয়ায় বিদঘুটে অন্ধকার হতে বেঁচে গেলাম। কোনো কোনো ঘরের জানালা খোলা থাকায় বাচ্চাদের পড়ার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। আগে গ্রামে মায়েরা সন্ধ্যার পর ভাত খাওয়ানোর জন্য বাচ্চাদের তাগদা দিতো কারণ বাচ্চা না হয় ঘুয়িয়ে যাবে। আবার অনেক মাও সন্ধ্যার পর ঘুমিয়ে যেত কারণ সারা দিন কাজের চাপে ঘুম চোখে টলমল করতো। এখন তা আর নেই কাজের তাগিদও কম এবং মায়েরাও শিক্ষিত হওয়ায় অনেক সচেতন। আসলে গরিবের সত্যিকারের সম্পদ হলো বই আর শিক্ষা। দিনে তেমন একটা যুবক-যুবতী দেখা যায়নি দাদা-দাদী ও চাচা-চাচীদের ছাড়া। বেশ কয়েকজন চাচী এসে কথা বলেছে যে তারা মার্জিত, ভদ্র ও শিক্ষিত। দুই একজনতো খুবই স্মার্ট মহিলা, খুব সুন্দর শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা দেখে বুঝা যায় উনারা শালীন পরিবারের মানুষ।
একজন দাদাতো উনাদের বংশ মর্যাদা সম্পর্কে বিরাট এক কাহিনী শুনালেন। বাড়ির সামনে বড় পুকুর তার পাড়ে দুইধারে দুই পাকা ঘাট। ঘাটে মানুষ বসারও জায়গা আছে তাই ঘাটের দুই পাশে দুইটা নিম গাছ। এতে বুঝা মানুষের মন মানসিকা এবং রুচিবোধ। বাড়ির একপাশে বিশাল বড় মসজিদ তার পাশে নুরাণী মাদ্রাসা সব মিলিয়ে দাদা আমার পাক্কা খানদানী মানুষ। গ্রামের মানুষ সমীহ করে চলতো শিক্ষা-দীক্ষা, টাকাপয়সা ও প্রভাব- প্রতিপত্তি অগাধ থাকার কারণে। দাদা অতীতে এই বাড়ির মানুষের গৌরবজনক ইতিহাস শুনালেন। অনেক জায়গা জমির মালিক হওয়ায় গ্রামের কিংবা পাশের গ্রামের মানুষ উনাদের ক্ষেত খামারে কাজ করতো এবং জমি বর্গা চাষ করে তাদের পরিবার -পরিজন চলতো। আমি দাদার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি বুঝা যায় এতে দাদা খুশি হয়। দাদার সাথে কথা বলতে বলতে মাগরিবের আজান হয় দাদা তাড়াতাড়ি উঠে চলে যায় আমি সোফায় বসে দাদার চলে যাওয়া পরখ করি। ঘরের দরজা জানালা সব খোলা যেন সন্ধ্যার শীতল হাওয়া হু হু করে ঘরে ঢুকে ঘরকে শীতলতায় স্নান করাচ্ছে।
আমার যে চাচীটা কানাডা থাকে আর উনার ছেলের বউয়ের সাথে কথা বললে ভালো হতো।
জ্বি ফোন দিলে ভালো হতো আমিসহ কথা বলবো।
হ্যাঁলো ভাবী, আসসালামুলাইকুম। কেমন আছেন। আমি শিউলীর আব্বু।
ওয়ালাইকুম সালাম। জ্বি আমি ভালো আছি ভাই। আপনারা কেমন আছেন।
আমরাও ভালো আছি ভাবী। আমাদের জামাই বাবা সকালে আসছে আপনার সাথে কথা বলতে ফোন দিয়েছি। সকালে আপনি স্কুলে ব্যস্ত থাকেন বলে -----। এখন কথা বলা যাবে ভাবী।
জ্বি এখন আমি বাসায় ফ্রী আছি।
আচ্ছা জামাইকে দিচ্ছি। আর চাচীর কাছে ফোন এখন করা যাবে? নাকি পরে করবো, সেখানের সময়তো আমি জানি না কখন দিন আর কখন রাত। না থাক উনাকে ফোন দিতে হবে না আমি বলে দিবো।আচ্ছা জামাইয়ের সাথে কথা বলেন।
আসসালামুলাইকুম আন্টি। কেমন আছেন।
আমি ভালো আছি তুমি কেমন আছো, তোমার মা- বাবা কেমন আছে।
জ্বি সবাই ভালো আছে।
সময় সুযোগ করে একদিন আন্টির বাসায় আসিও। তোমার দাওয়াত যখন সময় হয় মন চায় চলে আসবে কোন অসুবিধা নাই।
ঠিক আছে আন্টি।
এইবার আপনার নানা শুশুর বাড়ীতে ফোন করি, আপনার নানী শাশুড়ী কথা বলবে বলেছে।
ঠিক আছে ফোন দেন, কথা বলবো সমস্যা নাই।
উনারা মুরব্বি মানুষ কথা বললে খুশি হবে, দোয়া করবে।
আমি আবার সময় করে আসবো তখন বেড়াতে যাবো আপনাদের সাথে নিয়ে।
হাঃ হাঃ হাঃ তাহলে ভালো হবে। সব সময় ফোন দিয়ে আপনার খবরাখবর জানাবেন এবং আমাদেরও খবর নিবেন। এখন ফোন নাম্বার আছে আমরাও ফোন দিবো আপনার খবর নিতে।
জ্বি অবশ্যই ।
(চলবে)।
৫০তম পর্ব।
এই সময় সুজনই ফোন করবে।
হ্যাঁলো সুজন। আমি বাসে আছি এবং বাসও ছেড়ে দিয়েছে। সরি ফোন করতে ভুলে গিয়েছি আর প্রথম একটু ভয় ভয় লেগে ছিলো শিউলীর কথা মনে পড়ায়
আচ্ছা ঠিক আছে ভয় করিস না। আল্লাহ সহায় আছে, ঠিকভাবে পৌছে যেতে পারবি।
দোয়া কর। অবশ্যই আমি এখন বাহিরের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতেছি জানালা দিয়ে। তোর মত আমারও অভ্যাস বাসের জানালার পাশে বসা এবং বাহিরে তাকিয়ে থাকা। তুই সাথে থাকলে দারুণ হতো।
আমি সেই রাস্তায় অনেক চলেছি খুব সুন্দর দেখতে।
রাস্তার দুই পাশের গাছ যেন এক নয়াভিরাম দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে। মানুষ বলে গাছ অক্সিজেন দেয়, ছায়া দেয়, গাছের উপকারিতার শেষ নাই। আসলে গাছ অপরূপ দৃশ্যও উপহার দেয়। সবচেয়ে বড় কথা গাছপালা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় মূর্খ ভূমিকা রাখে। খুলনায় সুন্দরবন আর কক্সবাজারে ঝাওবন বার বার প্রমাণ দিয়েছে। তারপরও আমরা গাছ কেটে বনাঞ্চল উজাড় করছি। নিজের গাছ কেটে আরেকটা গাছ লাগাইতে চাই না। কাঠ চোরাচালানকারী পার্বত্য অঞ্চল কিংবা গাজীপুর কিছুই বাদ দিচ্ছে না। আর এতে জনসাধারণের চোখের আড়ালে সহযোগিতা করে টাকা কামাই করে সরকারি লোকেরা। উগাণ্ডার মত দেশে আইন আছে গাছ কাটলে গাছ লাগাতে হবে সেটা সরকারি কিংবা বেসরকারী যার হোক। এই আইন মানতে সবাই বাধ্য কারণ কঠোরভাবে সরকার তদারকি করে আর না মানলে জেল জরিমানা অবধারিত, কোন ধরনের ছাড় বা মাফ নাই। অথচ আমরা রামগড়, খাগড়াছড়ি, বান্দারবন, রাঙ্গামাটি ও গাজীপুর সরকারি বন উজাড় করতে তুলে দিয়েছি বনদূস্যদের হাতে। যারা বনাঞ্চল পাহারা দেয় তারা মিলিত হয় যখন যে সরকার থাকে তাঁর দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে, মিলেমিশে খায় বনের কাঠ ফলমূল ও লতাপাতা। মনে হয় যেন চোর ডাকাতের সংসার।
আবার সৎ বন কর্মকর্তার হাতে কখনো কখনো বনদূস্য ধরাও পড়ে, এই ধরা পড়া দূস্য আইনের ফাঁকফোঁকরে বের হয়ে পুরাতন কারবার আবার শুরু করে। বনাঞ্চলকে ঘিরে গাজীপুর শত শত অবৈধ করাত কল গড়ে উঠেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং আশেপাশে হাজার হাজার অবৈধ করাত কল আছে। রামগড় হতে করেরহাট ও ফেনী। একদিকে করেরহাট হতে ফেনীর উপজেলা শহর ভারতের ত্রিপুরার সীমান্ত এলাকা ছাগলনাইয়া। আরেক দিকে বারইয়ার হাট যার মাঝখান দিয়ে ঢাকা চট্টগ্রামের হাই ওয়ে। রামগড় খাগড়াছড়ি জেলার পৌরসভা শহর করেরহাট ছোট বাজার এবং বাইয়ারহাট চট্টগ্রামের পৌরসভা শহর। করেরহাট, ছাগলনাইয়া ও বাইয়ারহাট এই তিন জায়গায়ই শুধু প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার গাছ করাত মিলে কাটা হয় যা সম্পন্ন অবৈধ এবং চোরাই কাঠ। এবং তিন জায়গাই একটু পর পর আছে ফরেস্ট অফিস। করেরহাট ছাগলনাইয়া বাইয়ারহাট হতে ঢাকা চট্টগ্রামে কোটি কোটি টাকার ফার্নিচার যায় যার পুরোই চোরাই কাঠে তৈরী। আমার মনে হয় ছাগলনাইয়া কাঠের ফার্নিচারের জন্য বিখ্যাত সারা বাংলাদেশে। অবশ্যই এর সাথে শত শত ফার্নিচার শ্রমিকের রুটিরুজির ব্যবস্থাও হয়েছে। সেগুন, মেহগনি ও গামারিসহ নাম না জানা অসংখ্য পাহাড়ী গাছ প্রতিদিন আসে রামগড় ও খাগড়াছড়ি হতে এইসব অঞ্চলে। তবে মাঝে মাঝে করাত কলে ফরেস্টের অভিযান পরিচালনা হয় আর এতে করাত কল মালিকের যৎসামান্য টাকার ক্ষতি হয় মনে হয়। দুই এক দিন পর আবার সেই পুরানো চেহারায় ফিরে যায়।
করাত কলের পাশে থাকে পুকুর খাল ও বিল। আর এইসব পুকুর খাল ও বিলে পানির ভিতর লুকানো থাকে শত শত পাহাড়ী গাছ। হাই ওয়ের পাশে কিংবা রেল রাস্তার পাশে কোথায় নিরাপদ নয় গাছ। সবখানে বনদুস্য তাদের করাতের আচড় লাগায়। রেল রাস্তার পাশে গাছ কাটার জন্য এক অভিনব কৌশল অবলম্বন করে। একসাথে অনেক গাছ কাটে গাড়ি আসার সময় যাতে গাড়ির আওয়াজে গাছ কাটার আওয়াজ শুনা না যায়। এখন ঢাকা চট্টগ্রাম টু ওয়ে রেল লাইন এবং সড়কও টু ওয়ে। নতুন রাস্তা তৈরি করার জন্যও প্রচুর গাছ কাটা হয়েছে যেখানে যেখানে রাস্তার কাজ শেষ সেখানে সেখানে গাছ লাগানো অতি জরুরী। রেল রাস্তায় খালি জায়গা পড়ে আছে অথচ গাছ লাগানো হয় না। শুধু রাস্তা নয় সমস্ত সরকারি জায়গা টিলা পাহাড় সব জায়গায় প্রচুর গাছ লাগাতে হবে মোট কথা কোনো জায়গাই গালি রাখা যাবে না। গাছই পারবে জলবায়ু পরিবর্তনে প্রধান ভূমিকা রাখতে আর কিছুই না।
অথচ আমরা প্রতি বছর বর্ষাকালে বৃক্ষরোপণ করার জন্য মেলা করি। ঢাক ঢোল পিটিয়ে নেতা নেত্রীরা গাছ লাগানো উদ্বোধন করে। একদিকে গাছ লাগায় আরেক দিকে ছাগল এসে সেই গাছ খেয়ে পেলে এই হলো আমাদের দেশের বাস্তবতা। মজার বিষয় হলো ভরা বর্ষায় নেতা গাছ লাগায় ছাতা মাথা দিয়ে আর সঙ্গীরা সেই গাছে পানি ঢালে। অথচ আমরাই উগাণ্ডাকে নিয়ে হাসি ও মজা করি। সেখানে গাছ কাটার অপরাধে কঠোর শাস্তি প্রয়োগ হয়। যার যে দায়িত্ব তা সৎ ও দক্ষভাবে পালন করে। কয়েকটা কঠোর আইন ও প্রয়োগে সরকার বদ্ধপরিকর তার মধ্যে গাছ ব্যপারে একটা। অথচ উগাণ্ডা পুরোটাই পাহাড়ী বনাঞ্চলের দেশ।
(চলবে)।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৫১তম পর্ব।
হ্যাঁ সুজন।
শুনতেছি, বল নাহিদ।
আমি এসে গিয়েছি সুজন।
যাক, আলহামদুল্লিল্লা। আমি ভাবনাতে ছিলাম সারা বিশ্বে দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে কিন্তু বিশ্বনেতারা তা রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পৃথিবীর প্রাণ আমাজান বন আগুনে পুড়ে ধ্বংস করা হচ্ছে অথচ এই বনই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী অক্সিজেন দিচ্ছে। ব্রাজিলে অবস্থিত এই আমাজান সেই দেশের সরকারই হাজার হাজার একর ধ্বংস করতেছে। আর বিশ্ব নেতারা চুপ করে আছে কেন বুঝি না।
তা ঠিক। হাঃ হাঃ হাঃ।
নাহিদ শিউলীর মা বাবাকে আমার সালাম বলবি।
ঠিক আছে বলবো।
আচ্ছা ঠিক আছে। রাখি এখন নাহিদ।
সুজন সত্যিই একজন ভালো মন ও মানের মানুষ, একজন মানবিক ও সমাজ দরদী মানুষ কিন্তু রাজনীতি তার একদম অপছন্দ তাই সে রাজনীতি করতে ও নিষেধ করে। তার মত একজন বন্ধু পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার।
মায়ের উদর হতে জন্ম নেওয়া মানুষটি ভাই কিংবা বোন হয় যা সৃষ্টিকর্তার নিপুণ সৃষ্টি। অবশ্যই ভাইয়ে ভাইয়ে কিংবা বোনে বোনে কখনো কখনো চাওয়া পাওয়ার স্বার্থপরতা এসে ভালোবাসার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে মিত্র হতে শত্রুতে পরিনতও হয় । কিন্তু বন্ধু মানুষ পছন্দ করে যা সৃষ্টিকর্তার দেওয়া প্রাকৃতিকভাবে ভালোবাসা সৃষ্টি। এইটি সৃষ্টিকর্তার আরো সুনিপুণ সৃষ্টি। এখানে চাওয়া পাওয়ার হিসাব থাকে না দুই বন্ধু সতর্ক থাকলে এই ভালোবাসা হয় স্বর্গীয়।
আমি অনেক ভুল করলেও সুজন তা সংশোধন করে দেয়। কখনো আমার কথা বা কাজে মন খারাপ করে না, স্বার্থ খোজে না।
“বিধিরে ঘরের মানুষ পর করলো
আর পর করলো আপন। বিধিরে সবই
তোমার লীলা খেলা বিধিরে ওহ বিধি।”
নাহিদ মনে মনে গান ধরে আর হাসে। স্বচ্ছ আকাশ কোথাও কোনো মেঘের চিহৃ নাই, ইস! মানুষের জীবনটা যদি এই রকম স্বচ্ছ সুবিশাল আকাশ হতো। দুঃখজনক কালো মেঘ জমাট বেঁধে যদি বৃষ্টি না ঝরতো তাহলে মানুষ সুখের পায়রা হয়ে এই সুবিশাল আকাশে উঠে বেড়াত। বাংলাদেশের ধনীরা উন্নত দেশ সিঙ্গাপুর, মালেয়শিয়া, কানাডা ও যুক্তরাজ্যে ব্যবসা বাণিজ্যে বিনিয়োগ করে এইসব দেশে নাগরিক হয়। আর গরিব নিজ দেশের মাটিতে চির দিন শুধু নীলময় আকাশে সুখ খোজতে লড়াইয়ে লড়াইয়ে জীবনের অবসান করে। অবশ্যই কারো কারো সুখের খোজ হলেও আর কারো কারো নশ্বর দেহ মাটিতে বিলীন হয়। হয়তো আমিও সুখের পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে একদিন ধপ করে পড়ে মাটিতে বিলীন হবো। যে মাটিতে শিউলীর দেহ বিলীন হয়েছে সেই মাটিতে। আত্মার বিচরণ হবে চাঁদের ওপারে কোন সুখময় রাজ্যে। শিউলী, সেখানে তোমাকে সুখের একটা প্রসাদ দিবো তুমি রাণী হয়ে হুকুম করবে আর সেই হুকুম আমি মেনেই চলবো। সেই জীবনের শুরু আছে কোনো শেষ নাই। সেই জীবন এক অন্য রকম জীবন, সেইটা পৃথিবীর জীবনের মতো না। সেখানে খাবারের অভাব হবে না কখনোই। কোনো দুষ্ট লোকও থাকবে না তবে জীবনটা হবে অন্তহীন কারণ সে জীবনে কখনোই মৃত্যু থাকবে না।
আজ তোর মনে পড়লো আমাকে নাহিদ। এতদিন তোর কোন ফোন নাই একটু খবর নাই।
আমি অনেক ঝামেলায় ছিলাম আন্টি।
তোর আম্মু আব্বু সবাই কেমন আছে । তাদের কাছে তোর কথা জিজ্ঞাসা করে লাভ নাই তাই, চুপ থাকি।
ভালো করেছেন।
যা হাত মুখ ধোয়া মোছা করে ফ্রেশ হয়ে আয়। খাবার দিচ্ছি আমি এমনিতে অনেক সময় হয়েছে।
ঠিক আছে খাবার দিন, আমারও খুব ক্ষুধা পেয়েছে।
আমি তোর ছোট খালা হয়ে সবসময় তোকে আদর ও স্নেহ দেওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু তোর কাজকর্মে আমাকে লজ্জিত হতে হয় নানান জন নানারকম কথা শুনায়। তুই কি এইসব ভেবে দেখেছিস কখনো। নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করে বউটাও হারিয়েছিস। তোর এইসবে দুঃখ হয় না কষ্ট হয় না। আমার তোর জন্য দুঃখ লাগে তোর আম্মু ফোন করে কান্না করে।
আন্টি এখন খেতে দাও রাতে বসে সব কথা হবে।
কি লাগবে নিস রাগ করিস না। তুই আমার সন্তান নয় কিন্তু তোকে সন্তানই মনে করি।
জানি আমি এই জন্য তুমি আমার সুইট আন্টি।
আমি শিউলীর মা বাবার সাথেও দেখা করতে চাই ।
আমি শুনেছি দেখতে শুনতে মেয়েটা রূপসী ছিল তাই বলে একজন নিঃস্ব মানুষের মেয়ে বিয়ে করলি।
এইসব এখন অতীত কারণ শিউলী জীবিত নাই। তাকে নিয়ে আমি সুখী হতে চেয়ে ছিলাম সেই নাই অতএব এইসব কথা বলে কি লাভ এখন।
তারপরও তোর জীবনে একটি দাগ পড়ে গেল।
হাঃ হাঃ হাঃ (সরি আন্টি)।
(চলবে)।
মেয়ে ও মায়া,মাদক ও রাষ্ট্র।
৫২তম পর্ব।
হাসির কি হলো।
তুমি অনেক বোকা ও সহজ সরল সুন্দর মনের মানুষ। এই জন্য তুমি,আমি নাহিদের দরদি আন্টি।শিউলীদের বাড়িতে আমার সাথে কালকে আপনি যাবেন কিনা বলেন।
না বাবা আমি যাবো না।
আচ্ছা ঠিক আছে।এখন তার মায়ের সাথে একটু কথা বলেন, আমি যে যাবো জানিয়ে দেন।
না,আমি পারবো না।তোর আব্বু শুনলে আমার সাথে এবার আর সম্পর্কই রাখবে না।
হাঃহাঃহাঃ। তুমি আমার আন্টি মনি,মা মনি আমি তোমার আব্বু হই।
আমি ফোন করলে যদি উনারা খারাপ কিছু বললে।
কিছুই বলবে না। আপনি পরিচয় দিয়ে আমার কথা বলে রেখে দিবেন, উনি কথা বলার সুযোগই পাবে না।
জানি না এবার আবার কোন ঝামেলা সৃষ্টি করবি। আরে খালামনি আমার বাঁধানো ঝামেলা সমাধান করা আপনার আর আম্মুর কাজ।
তোর কারণে তোর আম্মু একবুক কষ্ট বয়ে বেড়ায়।
খালামনি এইসব কথা শুনতে এবং বলতে ভালো লাগে না।
এই নিন ফোন কথা বলেন।
তোর যন্ত্রণা আর সহ্য হয় না।
কথা বলা শেষ করে অনেক বকা দিতে পারবেন আমি শুনতে রাজি আছি। তুমি আর আম্মু ছাড়া আমাকে ভালোবাসার পৃথিবীতে আর কেউ নাই।
হ্যাঁলো ভাবী,আসসালামুলাইকুম,কেমন আছেন।
জ্বি ভালো আছি। আপনারা কেমন আছেন।
আমরাও ভালো আছি। একটা কথা বলতে ফোন দিয়েছি।
জ্বি বলেন আমি শুনতেছি।
একটু আগে শিউলীর খালা শাশুড়ী ফোন দিয়ে বললো শিউলীর স্বামী আমাদের সাথে দেখা করতে সকালে আসতে চায়। আমরা হ্যাঁ অথবা না কিছুই বলি নাই, এখন কি বলবো আপনি বলেন। আর বাড়ির মানুষ সমাজের মানুষ এইটা নিয়ে হয়তো কানাঘুষো করতেও পারে।
ওহ আচ্ছা ঠিক আছে আমি লোকজনকে বলে দিবো সমস্যা নাই এবং জামাইকে আসতে দিন, ভালো খাওয়া-দাওয়া ও ভালো আচরণ করবেন। মেয়ে যখন নাই আর তার স্বামীর উপর রাগ রেখে লাভ কি। সে আপনাদের ভালো আচরণ দেখলে হয়তো আজীবন-পোষিত হবে।
আচ্ছা ঠিক আছে ভাবী। মৌরি মাকে বলবেন আমাদের খোজ খবর নিতে সে অনেক দিন ফোন করে না। চাচীর সাথে দুইদিন আগে কথা বলেছি।
আচ্ছা, আমার কাছেও সকালে ফোন করেছে। আজ নাকি উনার শরীরটা খারাপ লাগতেছে। দোয়া করবেন।
জ্বি ভাবী, অবশ্যই দোয়া করবো।
ঠিক আছে রাখি এখন।
আসসালামুলাইকুম।
নাহিদকে বাড়ির সদর রাস্তা হতে এগিয়ে নেওয়ার জন্য শিউলীর বাবা অপেক্ষা করে । নাহিদ রিক্সা হতে নামতেই দুইজনের দেখা হয় এবং মুখামুখি হলে চিনতে চেষ্টা করে একে অপরকে।
তুমি নাহিদ?
জ্বি।
আমি শিউলীর আব্বু। কেমন আছো।
আমি ভালো আছি। (নাহিদের চোখ হতে টিপ টিপ জল গড়িয়ে বুকে আসে)। আপনি কেমন আছেন?
আবদুর রহমান জোরে কান্না করে বুকে জড়িয়ে ধরে নাহিদকে। কেন আমার মেয়েটাকে নিয়ে গিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে না বাবা।
বাবা আমি আসছি আপনাদের সামনে, আমি অপরাধী যেই শাস্তি দিতে মন চায় দেন।
দুইজনের কান্না এবং কথায় জড়ো হওয়া অন্যরাও চুপ হয়ে যায়। এক মহিলা বলে উঠে আরে শিউলীর জামাইকে ঘরে নিয়ে যান পরে কথা হবে।
ওহ! আমি ভুলে গিয়েছি। আসো বাবা আসো।
সবাই নাহিদকে দেখে হতবাক স্মার্ট নাহিদ পোষাক পরিচ্ছেদে পরিপাটি দেখতে। দেখতে যেন শতে এক। ঘরে এসে পা রাখতে শিউলীর মার কান্নায় এক হৃদয়গ্রাহী দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
মা আমিও আপনার সন্তান আমি শিউলীকে ফেরত দিতে পারবো না কিন্তু আমি আপনাদের বুকে আগলে রাখতে পারবো। আমি এসেছি আপনাদেরকে দেখতে আমি এসেছি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইতে, সুখে দুঃখে পাশে থাকার ওয়াদা করতে। শিউলীর মত ভালো মেয়ের মা-বাবা আপনারা তাই সম্মান জানাতে
ছেলেটাকে বসতে দাও, যাও নাস্তা পানি দাও। বাবারে আমরা গরিব মানুষ তোমার উপযুক্ত সম্মান না হলে মন খারাপ করো না।
আমি সব জানি এবং জেনেশুনে আপনার মেয়েকে বিয়ে করেছি। ধনী গরিব সবাই মানুষ এক বিধাতার সৃষ্টি। আমার কাছে মনুষ্যত্ব বড় তাই ছুটে এসেছি আপনাদের কাছে। যদি পারেন ক্ষমা করে দিবেন।
ক্ষমা করতে কষ্ট হলেও পাশে থাকার সুযোগ দিবেন। যেন আমি আপনাদের খোজ খবর রাখতে পারি। এই সুযোগ হতে বঞ্চিত করবেন না বাবা।
নাও, নাস্তা নাও। এই তোমরা সবাই আসো জামাইর সাথে নাস্তা করতে। নতুন বউ অথবা জামাই আসলে বাড়ির মুরব্বিদের ডাকতে হয়, সবাই পরিচয় হয়।এইটা গ্রাম অঞ্চলের পুরাতন প্রথা। আমার এক চাচী উনার ছেলের সাথে কানাডা থাকে, আজ বাড়িতে থাকলে তোমাকে মাথায় তুলে রাখতো উনার ছেলের বউ জলি ভাবী সেই রকম। ভাবী ঢাকায় একা থাকে, একটাই মেয়ে সেও বিদেশে পড়তে গিয়েছে।
আমি উনার কথা সব জানি শিউলী সব সময় আন্টির কথা বলতো।
(চলবে)।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৫৩তম পর্ব।
কষ্ট লাগতেছে মেয়েটা যাওয়ার পর আর ফোনও করে নাই কোন দিন। মরার আগে মেয়েটার সাথে কথা বলতে পারি নাই একটু। (জল পড়ে চোখ হতে)।
থাক বৌমা এইসব কথা, নাতিন জামাই এসেছে তোমাদের দেখতে মাফ করে দাও আর শিউলীর জন্য দোয়া করো।
আমিও বলি চাচী কিন্তু সে আছে কান্নাকাটি নিয়ে। নাহিদ চুপ করে বসে সবার কথা শুনে কোন কথা বলে না। বাড়ির মুরব্বি নারী পুরুষ সবাই নাহিদকে দেখতে আসে। শিউলীর মা থেমে থেমে নাক চোখ মুছে শাড়ির আচঁলে। নানা রকমের নাস্তা জরাজীর্ণ ঘরে খুবই বেমানান, তবুও নতুন জামাইকে নাস্তায় ও খাওয়া-দাওয়ায় আদর সমাদরের কমতি করা যায় না। এত খাবার আইটেম যে সব খাওয়া সম্ভব হয় না তবুও ঘরের মুরব্বি মেহমানের সামনে এসে হাত কচালে বলে তেমন কিছুই করতে পারিনি আপনাদের জন্য। মনে কষ্ট না নিয়ে ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আসলে এটা একটা ভদ্রতা মেহমানকে সম্মান ও আন্তরিকতা দেখানোর।
এই আসো বউ মা তুমিও বসো নাস্তা করতে। তোমার ছেলেটা দেখছি না যে তাকে জামাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দাও।
আছে চাচী, সে উঠানে খেলা করতেছে।
ডেকে নিয়ে আসো নাস্তা করবে একসাথে।
আপনার নাম জানা হয়নি এখনো।
উনি আপনার দাদী শাশুড়ী জামাই।
জ্বি আমার নাম নাহিদ বীন হোসেন। ডাকে নাহিদ।
আপনার মা-বাবা, ভাই-বোন কে কে আছে।
আমার মা-বাবা সবাই আছে। আমরা এক ভাই এক বোন। মা গৃহিনী, আব্বু কাস্টমস অফিসার এবং বোন স্বামীর সাথে দুবাই থাকে। আর আমি আপনার নাতনী জামাই।
সবাই হেসে উঠে। আর তাতে পরিবেশ অনেকটা হালকা হয়। সবাই এটা সেটা খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে একে অপরের সাথে আলাপচারিতায় মগ্ন । নাহিদও গ্রামের নাম না জানা হাতে বানানো পিঠা খেতে থাকে। বাড়ির সবাই মিলে নাহিদকে সুন্দর ও সহজেই আপন করে নেয়। বয়স্ক লোকদের পরামর্শে সমাজের লোকজন শিউলীর মা-বাবা এবং নাহিদকে কোন ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন করে নাই। নাস্তা শেষে দুই একজন বাদে সবাই উঠে চলে যায়। তাদের সাথে শিউলীর বাবাও চলে যায়। শিউলীর মা রান্নাঘরে ব্যস্ত আর নাহিদ নীরব হয়ে বসে আছে । পুরাতন বেড়া এবং পুরাতন টিনের ঘরে বেড়ে উঠা অমায়িক ও সামাজিক মানুষের সুখী জীবনের সুন্দর বসবাস। অথচ দালান প্রাসাদে বাস করে সুখের জন্য টাকা আর টাকা করে অসুখী বিত্তবান।
সমজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনসহ নিজ গোত্রের পনর বিশ জনকে দাওয়াত দেয় শিউলীর বাবা উদ্দেশ নতুন জামাইকে সমাজে পরিচয় করা। কতশত নিয়ম সমাজ সংসারে মানুষের পায়ে পায়ে। শিউলী পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ঘরে ডুকতে পারিনি সমাজ এবং সংসারের ভয়ে। আর আজ শিউলীর দেহ মাটির অংশ হওয়ার পর তার স্বামীকে সমাজে তুলছে এই সমাজ। সমাজের আগুনে জ্বলে ভালোবাসা সংসারের আগুনে জ্বলে সুখ আর বিশ্বাস । কিন্তু কথা ছিলো ভালোবাসার পরশে সমাজের আগুন নিভে যাওয়ার ভালোবাসার পরশে সংসার ও বিশ্বাস দৃঢ় হওয়ার।
নাহিদ উসখুস করে লেমন ট্রি পান করার জন্য। এমন সময় শিউলীর বাবা ঘরে প্রবেশ করে হাকডাক শুরু করে। তোমরা সবাই জামাইকে একা রেখে কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছো। আপনার কিছু লাগবে বাবা।
জ্বি, রং চা দিতে বলেন লেবু দিয়ে।
আচ্ছা এখনি দিবে।
শিউলীর মা-বাবা নতুন জামাইয়ের সমাদরে কোনো কিছু কমতি রাখে নাই। এবং নিজ গোত্রের লোকজনও সন্তুষ্ট খাওয়া-দাওয়ায়। সবাইর শিউলীর বর পছন্দও হয়েছে, প্রসংশাও করছে।
খাওয়ার পর একটু ঘুম দিতে পারলে ভালো লাগতো। তা যেন শুশুর সাহেব বুঝতে পারে তাই সব গুছিয়ে আমাকে বিছানা করে দেয় আমিও সাথে সাথে শুইয়ে পড়লাম।
(চলবে)।
মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র ।
৫৪তম পর্ব।
আজ যেতে দিবো না জামাইকে।
তা অবশ্যই।
একদিন না থেকে কেমন করে চলে যায়।
আপনি ফোনটা ধরেন, আমি মুরব্বিদের নিয়ে জিনিসপত্র দেখি জামাই কি নিয়ে আসছে।
এই শিউলীর মা, তোমাদের বাড়ি হতে ফোন দিয়েছে। আসসামুলাইকুম মা। আপনারা কেউ আসলেন না কেন, এত করে বললাম আসার জন্য।
আমার ইচ্ছা ছিল হঠাৎ করে শরীরটা খারাপ করায় আর যাওয়া হয়নি।
মা এখন রাখেন একটু কাজ আছে।
নাস্তা-পানি, খাওয়া-দাওয়া সব ঠিকমতো হয়েছে।
জ্বি হয়েছে, জামাই এখন ঘুমে উঠলে চা দিবো।
ঠিক আছে এখন রাখছি পরে কথা হবে ।
চাচী এই দেখেন জামাই এইসব নিয়ে আসছে। জিনিস দিয়ে আর কি করবো আমার নাতনীই নেই দুনিয়াতে। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন, উনার যা সুন্দর মনে হয়ে হয়েছে তাই উনি করেছেন, ধৈর্য্য ধরে দোয়া করো। আমরা সব দেখলাম তুমি এখন সব গুছিয়ে রাখো।
জামাই ঘুম হতে উঠে পড়েছে তুমি চা বানাতে যাও।আপনি উনাকে আমাদের নলকুপ দেখিয়ে দেন। শিউলীর মা-বাবার কথা-বার্তার ফাঁকে নাহিদ ঘর ঘুরে দেখে একবার আর এইটা দেখে শুশুর-শাশুড়ী দুই জনই হেসে উঠে, নাহিদ তা খেয়াল করে না।
আসেন বাবা ঘরের পিছনে নলকুপ আর বার্থরুম আছে, হাত মুখ ধুয়িয়ে আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন। আমি আপনার শাশুড়ীকে চা দিতে বলেছি।
রং চা দিলে ভালো হয়।
ঠিক আছে । (হাসি দিয়ে) রং চা আপনার পছন্দ। গ্রামের মানুষের আগের হতে স্বাস্থ্য সচেতনতা অনেক বেড়েছে যা দেখে খুব ভালো লাগলো। এক সময় গ্রামে খোলা বার্থরুম ছিলো, নলকূল ছিলো না এখন ঘরে ঘরে সব হচ্ছে মানুষ কষ্ট করে হলেও এইসব ব্যবস্থা করতেছে। এতে সরকারও যথেষ্ট সচেতন তাই স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশান এবং বিশুদ্ধ পানির জন্য সব রকম সহযোগিতা দিতেছে। স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে সরকার প্রতিটি পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষার বলয় গড়ে তুলতে চাইতেছে তাই এতে জনসাধারণের ব্যাপক অংশগ্রহণও বাড়ছে। এতে অনেক জীবাণুবাহী রোগ কমে যাবে। শিউলীদের পরিবারের মত দিনে এনে দিনে খাওয়া লোকজন স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশান ও গভীর নলকূল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ব্যবহার করা দেখে অন্যরাও শিখবে এবং অন্যরা হয়তো আগে হতে ব্যবহার করতেছে। বিশেষ করে উনাদের সব কিছু খুব পরিষ্কার দেখে ভালো লাগলো বার্থরুম অপরিষ্কার একদম অসহ্য লাগে।
শিউলীরা এক বোন এক ভাই আর মা-বাবাসহ ছোটোখাটো ছিমছাম পরিবার। সেখান হতে শিউলী আজ নেই সত্যিই খুবই নির্মম ও নির্দয় লীলা খেলা মহান অধিপতির। গরিবের সহায় সম্পদ ছিনতাই করার ক্ষমতা দিয়ে সম্পদশালীদের আরো বেপরোয়া করে স্বর্গে তাদের বিচরণ করার সুযোগ তোমার ইচ্ছায় হয়ে থাকে হে অধিপতি। গরিবের দুঃখ কষ্টের ভিতর বেড়ে উঠা সন্তানের অকাল মরণ সেটাও তোমার একান্ত ইচ্ছায় হয় হে সৃষ্টিকারী। তখন গরিব আর জীবনের গতির বাঁকে ঘুরে দাঁড়াতে পারে না তাই তাদের ক্ষয় হতে থাকে হৃদয়। তারপরও গরিব তোমাকে ভুলে যায় না , তোমার এই লীলা খেলার তরঙ্গ ঢেউয়ে জীবন নৌকার বৈঠা মারে সামন্য সুখ নামক আলোটার জন্য। আর এতে তারা সুখ নামক অমূল্য রত্ন পেয়ে গেলেও কৃতজ্ঞ চিত্তে তোমাকে স্বরণ ও প্রণাম করে। তাই উচিত শিউলীর পরিবারকে শক্তি দেওয়া আর আমাকে অর্থনৈতিক সামর্থ্য দাও যাতে আমি এই পরিবারের পাশে থাকতে পারি।
নাহিদকে চুপচাপ দেখে শিউলীর আব্বু পাশে এসে বসে তার মাথায় হাত রাখে। এমনি নাহিদ কেঁদে উঠে নীরবে, টপ টপ করে অশ্রুজল ঘরের মাটিতে পড়ে। জামাইয়ের কান্না দেখে শুশুর সাহেব দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে তবে হাত এখনো নাহিদের মাথার উপরে।
এমন সময় শাশুড়ী ট্রে করে চা নিয়ে আসে বলে এই নিন, জামাই শুশুর চা পান করেন।
রাতে সবাই মিলে আলাপ করবো। বিশেষ করে দুই তিন জন মানুষের সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই টেলিফোনে।
আমি এখন চলে যেতে হবে যে।
না বাবা এখন যেতে পারবেন না, আগামী কাল সকালে যাবেন।
জ্বি জামাই আপনার শাশুড়ী ঠিকই বলেছে।
আর কথা বলে লাভ নাই উনাদের আবদার রক্ষা করাই ভালো হবে।
শিউলী যখন বেঁচে নাই তখন আর আমাকে উনাদের কাছে মেলে ধরে কি লাভ, বরঞ্চ উনারা কষ্ট পাবে। শিউলী রূপসী হলেও গরিব ও অর্ধশিক্ষিত পরিবারের মেয়ে ছেলের বউ হিসাবে আমার নামী-দামী পিতা কখনো মেনে নিতো না যেতই আমি চাই। আর শিউলীর পরিবার গরিব হলে যদি জানে আমি পরিবার হতে বিছিন্ন তাহলে শিউলী থাকলে মেনে নিতো না আর এখন শুনলেও কষ্ট পাবে। তাই সবই গোপন থাকুক হৃদয়ের গভীরে।
(চলবে)
মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র ।
৫৫তম পর্ব।
ব্রাদার-ইন-ল টাও ছোট তার সাথে কথা বলে সময় কাটানো যাবে, একা একা চুপচাপ থেকে সময় অতিবাহিত করা কষ্টকর ব্যাপার। এমনিতে আমার স্বভাব নেই একদম চুপচাপ থাকা। মাঝে মাঝে বাড়ির দাদা-দাদী, চাচা-চাচীরা এসে দেখা করে গেলেও সন্ধ্যার পর সুনশান নীরব হয়ে বসে আছি। তবে গহিন গ্রামেও বিদ্যুৎ থাকায় বাড়ির আঙ্গিনা ও ঘরের উঠান আলোময় হওয়ায় বিদঘুটে অন্ধকার হতে বেঁচে গেলাম। কোনো কোনো ঘরের জানালা খোলা থাকায় বাচ্চাদের পড়ার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। আগে গ্রামে মায়েরা সন্ধ্যার পর ভাত খাওয়ানোর জন্য বাচ্চাদের তাগদা দিতো কারণ বাচ্চা না হয় ঘুয়িয়ে যাবে। আবার অনেক মাও সন্ধ্যার পর ঘুমিয়ে যেত কারণ সারা দিন কাজের চাপে ঘুম চোখে টলমল করতো। এখন তা আর নেই কাজের তাগিদও কম এবং মায়েরাও শিক্ষিত হওয়ায় অনেক সচেতন। আসলে গরিবের সত্যিকারের সম্পদ হলো বই আর শিক্ষা। দিনে তেমন একটা যুবক-যুবতী দেখা যায়নি দাদা-দাদী ও চাচা-চাচীদের ছাড়া। বেশ কয়েকজন চাচী এসে কথা বলেছে যে তারা মার্জিত, ভদ্র ও শিক্ষিত। দুই একজনতো খুবই স্মার্ট মহিলা, খুব সুন্দর শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা দেখে বুঝা যায় উনারা শালীন পরিবারের মানুষ।
একজন দাদাতো উনাদের বংশ মর্যাদা সম্পর্কে বিরাট এক কাহিনী শুনালেন। বাড়ির সামনে বড় পুকুর তার পাড়ে দুইধারে দুই পাকা ঘাট। ঘাটে মানুষ বসারও জায়গা আছে তাই ঘাটের দুই পাশে দুইটা নিম গাছ। এতে বুঝা মানুষের মন মানসিকা এবং রুচিবোধ। বাড়ির একপাশে বিশাল বড় মসজিদ তার পাশে নুরাণী মাদ্রাসা সব মিলিয়ে দাদা আমার পাক্কা খানদানী মানুষ। গ্রামের মানুষ সমীহ করে চলতো শিক্ষা-দীক্ষা, টাকাপয়সা ও প্রভাব- প্রতিপত্তি অগাধ থাকার কারণে। দাদা অতীতে এই বাড়ির মানুষের গৌরবজনক ইতিহাস শুনালেন। অনেক জায়গা জমির মালিক হওয়ায় গ্রামের কিংবা পাশের গ্রামের মানুষ উনাদের ক্ষেত খামারে কাজ করতো এবং জমি বর্গা চাষ করে তাদের পরিবার -পরিজন চলতো। আমি দাদার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি বুঝা যায় এতে দাদা খুশি হয়। দাদার সাথে কথা বলতে বলতে মাগরিবের আজান হয় দাদা তাড়াতাড়ি উঠে চলে যায় আমি সোফায় বসে দাদার চলে যাওয়া পরখ করি। ঘরের দরজা জানালা সব খোলা যেন সন্ধ্যার শীতল হাওয়া হু হু করে ঘরে ঢুকে ঘরকে শীতলতায় স্নান করাচ্ছে।
আমার যে চাচীটা কানাডা থাকে আর উনার ছেলের বউয়ের সাথে কথা বললে ভালো হতো।
জ্বি ফোন দিলে ভালো হতো আমিসহ কথা বলবো।
হ্যাঁলো ভাবী, আসসালামুলাইকুম। কেমন আছেন। আমি শিউলীর আব্বু।
ওয়ালাইকুম সালাম। জ্বি আমি ভালো আছি ভাই। আপনারা কেমন আছেন।
আমরাও ভালো আছি ভাবী। আমাদের জামাই বাবা সকালে আসছে আপনার সাথে কথা বলতে ফোন দিয়েছি। সকালে আপনি স্কুলে ব্যস্ত থাকেন বলে -----। এখন কথা বলা যাবে ভাবী।
জ্বি এখন আমি বাসায় ফ্রী আছি।
আচ্ছা জামাইকে দিচ্ছি। আর চাচীর কাছে ফোন এখন করা যাবে? নাকি পরে করবো, সেখানের সময়তো আমি জানি না কখন দিন আর কখন রাত। না থাক উনাকে ফোন দিতে হবে না আমি বলে দিবো।আচ্ছা জামাইয়ের সাথে কথা বলেন।
আসসালামুলাইকুম আন্টি। কেমন আছেন।
আমি ভালো আছি তুমি কেমন আছো, তোমার মা- বাবা কেমন আছে।
জ্বি সবাই ভালো আছে।
সময় সুযোগ করে একদিন আন্টির বাসায় আসিও। তোমার দাওয়াত যখন সময় হয় মন চায় চলে আসবে কোন অসুবিধা নাই।
ঠিক আছে আন্টি।
এইবার আপনার নানা শুশুর বাড়ীতে ফোন করি, আপনার নানী শাশুড়ী কথা বলবে বলেছে।
ঠিক আছে ফোন দেন, কথা বলবো সমস্যা নাই।
উনারা মুরব্বি মানুষ কথা বললে খুশি হবে, দোয়া করবে।
আমি আবার সময় করে আসবো তখন বেড়াতে যাবো আপনাদের সাথে নিয়ে।
হাঃ হাঃ হাঃ তাহলে ভালো হবে। সব সময় ফোন দিয়ে আপনার খবরাখবর জানাবেন এবং আমাদেরও খবর নিবেন। এখন ফোন নাম্বার আছে আমরাও ফোন দিবো আপনার খবর নিতে।
জ্বি অবশ্যই ।
(চলবে)।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
এস এম শাহনূর ১৫/১২/২০২০শুভ কামনা নিরন্তর।
-
এস এম শাহনূর ১৫/১২/২০২০শুণ কামনা নিরন্তর।
-
Md. Rayhan Kazi ১৪/১২/২০২০অসাধারণ
-
হাবিবা বেগম ১২/১২/২০২০বাস্তবতার গল্পটি চমৎকার
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ০২/১২/২০২০nice
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০২/১২/২০২০মনে হয় উপন্যাস!