মেয়ে ও মায়া মাদক ও রাষ্ট্র I
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৪১তম পর্ব।
মৌরি কেমন আছো মা মনি।
আমি ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন। দাদী ফোন করে ছিল উনিও ভালো আছে।
আমি ভালো আছি। আমি গ্রামের বাড়ি হতে আসার পর খুব ক্লান্ত ছিলাম তাই আর ফোন দেওয়া হয়নি।
আপনি নিরাপদে বাসায় এসেছেন আল্লাহর শোকর।
তোমার সব কিছু ঠিকমতো চলতেছে মা ।
জ্বি আম্মু, আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না । ভবিষ্যতে শুধু হাইটেক মাল্টি কোম্পানিতে একটা জব হলে হবে যেন আম্মুকে নিয়ে আসতে পারি তারপর মা মেয়ে একসাথে ইউরোপ আমেরিকা ঘুরে বেড়াবো।
হাঃ হাঃ হঃ। আল্লাহ যেন সেই স্বপ্ন পূরণ করে। তবে আমি আমার সোনার বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও ঘুরতে আরাম পাবো না । আমি দেশে ঘুরে বেড়াবো সাগরমুখী হয়ে, আমি ঘুরে বেড়াবো পাহাড়িয়া অঞ্চলে। পাহাড়ে দাঁড়িয়ে মেঘের সাথে মিতালি তালে সুখের বীনে বাজবে নজরুল। সাগর গর্ভে ছলাৎ - ছলাৎ পানির ঢেউয়ে সুর মিলিয়ে বাজবে মরমী ও লালনের সুর। তখন আমি দেখবো অপরূপ জন্মভুমি।ওহ ওহ আম্মু আজ আপনি কবি হয়ে গিয়েছেন।
যার জীবনটা করুণ সুরের বীন সে হবে আবার কবি। যার স্বামীটা লোভী। যার মা ভাই শুধু মানসিক যন্ত্রণা দেয় যার শাশুড়ী মা বৌমার জন্য প্রবাসে কান্নারত যার একমাত্র মেয়েটা বুকে নাই সে অনেক কষ্টে বেঁচে থাকে। সে কেমন করে কবি হবে মৌরি মনি।
আম্মু এমন করে বলো না তাহলে আমি কান্না করবো না না কান্নাকাটি করলে হবে না তোমার কান্না আমার বুকে করুণ সুর হয়ে বাজে। সারাদিন আর কিছু ভালো লাগবে না। একটা আদর দিয়ে রেখে দাও মা।
এই মেয়েটা যেন আমাকে বেঁচে থাকার অক্সিজেন দিচ্ছে। হাজার হাজার কিলোমিটার দুরে তার করুণ কন্ঠ আমার মন ও মেজাজ ব্যথিত করে প্রচণ্ডভাবে। আমি কিংবা অন্যজন শিউলীর মা বাবাকে যেত শান্তনা দিই তাদের মন শান্তনা খোঁজে পাবে না। তবে আস্তে আস্তে ভুলে যাবে অবশ্যই তার জন্য সময়ের দরকার। সন্তানকে অকৃত্রিম ও অমলিন যত্ন দিয়ে লালন পালন করে প্রতিটি পিতামাতাই আবার সেই সন্তানই একদিন ছেড়ে যায় পিতামাতাকে । এক সময় সন্তান পিতামাতাকে কৃত্রিম ভালোবাসা দিতেও কৃপণতা করে। যদিও পিতামাতাকে ত্যাগ করা এক সময় আমাদের দেশে কম ছিলো এখন আস্তে আস্তে বেড়ে যাচ্ছে। আর এটা ধনী গরিব, শিক্ষিত অশিক্ষিত সব পরিবারে হচ্ছে কম বেশী। এর পিছনে হয়তো বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে কিন্তু ঘরের কোণায় একটা রুম আর দুই বেলা ভাত এবং একটু যত্ন কেন এত দামী অত অধরা হয়ে যাচ্ছে জানি না। আমরা সবাইতো আজ সন্তান কাল মা অথবা বাবা তাহলে কেন এই সুন্দর সামাজিক বন্দন ভেঙ্গে চুরমার করছি আশ্রয় কেন্দ্রের অনেক মা বাবা সন্তানের জন্য নীরবে অশ্রু জল বিসর্জন দেয় , উদাসী হয়ে দিন কাটায়।
এই উদাসী পিতামাতার তালিকায় আছে ব্যবসায়ী ব্যাংকার,শিক্ষক অধ্যাপক, সরকারি বেসরকারি চাকরিজীবি, ধনী দরিদ্র, দিনমজুর, ড্রাইভার ও হেলপার। এইসব পিতামাতার আশ্রয়দাতাও কারো না কারো সন্তান, কারো না কারো বাবা। আজব দুনিয়া একজন সুশীল ও মানবিক আরেকজন অসুর ও অপরাধী । প্রতিটি পিতামাতারই আমার কাছে এক একটা গোলাপ। সন্তানদের বড় বড় মানুষ করে পিতামাতাই যায় পরের ঘরে। রিক্সা ঠেলে কিংবা ঠেলাগাড়ি ঠেলে সন্তানদের বড় করলেও কপালে সুখ আসে না। বাবা দিবসে ফেসবুক এবং টুইটারে বাবার প্রতি এত ভালোবাসা দেখি যে মাথাই টালমাটাল । আমিও সন্তান আপনিও সন্তান তাহলে এত বৃদ্ধ মানুষ যে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছে তারা কে বা কাহারা। প্রতিটি বৃদ্ধ মানুষই আমার কাছে স্বর্গ তাই আমি বলবো রোজ রোজ পুজা দিন স্বর্গের দুয়ারে।
একটা কথা বলার জন্য মনে করে ছিলাম।
কি এমন কথা যে বলতে ভয় পাচ্ছো । বলে বলতে পারো শিউলীর মা।
ঘরে যা আছে টাকা পয়সা এবং আরো কিছু ধার কর্জ করে একটা গরু কিনলে কেমন হয়।
তুমি ঠিক বলেছো কিন্তু আরো দশ/পনর হাজার টাকা লাগবে তা কোথায় পাবো।
আপনি এখন ধার কর্জ করতে পারলে পরে তা আস্তে আস্তে শোধ দিবো। এবং চাচীকে বলবো আর আমার মাকেও বলে কিছু নিবো।
ঠিক আছে দেখি চেষ্টা করে। (চলবে)।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৪২তম পর্ব।
এইদিক সেইদিক করে শিউলীর বাবা আমিন উদ্দিন গরু কিনে একটা। গরু নিয়ে এখন সময় কাটে আমিন উদ্দিনের । আস্তে আস্তে আবার সব স্বাভাবিক হচ্ছে আমিন উদ্দিন ও তার স্ত্রীর ।
একবার চাচীর সাথে কথা বলা দরকার। উনি কিছু টাকা দিলে কর্জটা তাড়াতাড়ি শোধ করা যাবে। আচ্ছা শিউলীর মা তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে , উনি মাত্র কিছুদিন আগেই টাকা দিলো এখন আবার বলাটা কি ঠিক হবে।
তা ঠিক বলেছেন, এখন আর কিভাবে শোধ দিবো ধার দেনা।
দিতে পারবো তুমি এত চিন্তা করো না।
হাঃ হাঃ হাঃ ঠিক আছে আমি আর চিন্তা করবো না। একটা কথা চিন্তা করি।
কি এমন কথা চিন্তা করো , শুনতে পারি। সন্তান লালন পালনে কিংবা মরণেও পিতামাতার জীবন ওলটপালট হয়ে যায়। যেন মনে হয় সন্তান না মরে পিতামাতার একজন মরে গিয়েও সন্তানটা বেঁচে থাকুক অথচ সেই সন্তানই একদিন সব ভুলে যায়। পিতামাতাকে নিজের কাঁধের বোঝা মনে করে। কত শত মা বাবা অতীত জীবনের মনে করে কান্না করে আমরা তার হিসাবও রাখি না। অথচ পৃথিবীর সব ধর্মই মানুষকে মানবিক হতে বলে।
শক্ত হাতে বারিন্দার গ্রিল ধরে উদাসী মনে আকাশ পানে চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন বৃদ্ধ বয়সী মা বাবারা। অশ্রুতে দুই চোখ থাকে ছলছল। হয়তো ফেলে আসা দিনগুলোতে ফিরে গিয়ে জীবনের হিসাব কষেন। ঠিক কোন জায়গায় ভুল ছিল? যে ভুলের শাস্তিস্বরূপ ছেলে, বউমা, মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনিতে ভরা সংসার থাকা সত্ত্বেও ঠাঁই এই বৃদ্ধাশ্রমে? জীবনের প্রথম ও শেষ বয়সে একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। দুই বয়সেই মানুষ শিশু হয়ে যায়, পরনির্ভরশীল হয়ে যায়। সমাজ ও পরিবারের কাছে প্রবীণেরা চায় সম্মান ও ভালোবাসা। জীবনের শেষ বেলায় সন্তানের সান্নিধ্য ও পরিজনের সঙ্গ খুব প্রয়োজন। কিন্তু পশ্চিমা সংস্কৃতির নির্মম ও কলঙ্কময় উপহার হিসেবে প্রবীণ নিবাস ও বৃদ্ধাশ্রম ছেয়ে যাচ্ছে সমাজের সব স্তরে, যা মানবতার নির্মম বন্দিশালা।
দীর্ঘ অপেক্ষার যেন শেষ নেই। সারাটি জীবন যে সংসার, সন্তান-সন্ততির কথা চিন্তা করে, তাদের মঙ্গলের জন্য মা বাবা দিনরাত পরিশ্রম করেন, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজেদের শখ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে হলেও সন্তানকে সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেন, আর সেই সংসার থেকে তাদের দূর করে দেওয়া হয়। সামান্যতম ঠাঁই, সহানুভূতি, ভালোবাসা তাঁরা পান না। বর্তমানে কাজের তাগিদে বা আরো বিভিন্ন কারণে একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে ছোট ছোট পরিবারে। শুধু স্বামী-স্ত্রী ও তাদের সন্তান নিয়ে গঠিত সেই পরিবার। এই আধুনিক সভ্যতার সব উপকরণ, ব্যক্তি ভোগ-বিলাসের সব উৎস দিয়ে সাজানো সেই সংসার, শুধু ঠাঁই হয় না প্রবীণ মা বাবার। রাস্তায়ও ফেলে যায় অসুস্থ বাবা মাকে,
চিকিৎসার অভাবে মারা যায় এমন নিষ্ঠুর সংবাদ প্রায় শুনা যায়। বাবা মা কর্মক্ষম হারিয়ে গেলে তাদের বোঝা ভাবতে শুরু করে সন্তান-সন্ততি।
অথচ বৃদ্ধ বয়সে বাবা মায়ের পাশ সন্তানদের ভরসা হিসেবে থাকার কথা। বাবা মা কখনো বোঝা নয় তারা অভিজ্ঞ বটবৃক্ষের মতো। তারা জীবনকে আরো খুব ভালো করে চেনেন। তাদের পরামর্শ সন্তান এর জীবনে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সহায়ক হয়।বাবা মায়ের প্রতি দায়িত্বে যেন কোনো ত্রুটি না হয় তা প্রত্যেক মানুষের ভাবা উচিত। অনেক সময় নিজের কর্মসংস্থান ও ভালো কাজের সুযোগের জন্য দূরে থাকতে হয়, সেই মুহূর্তেও যেন বাবা মায়ের সামান্য কষ্ট না হয়, তার সমস্ত বন্দোবস্ত করা প্রতিটি সন্তানের দায়িত্ব। আর আমি আপনি নিজের বাবা মায়ের সঙ্গে ঠিক যেভাবে আচরণ করবো, আমার চোখের মণি সন্তানও সেরকম ব্যবহার করা শিখবে। তাই নিজের ভবিষ্যতের কথা ভেবে হলেও নিজেকে পরিবর্তন করা দরকার। বাবা মা বোঝা না সবচেয়ে আপনজন, সন্তানের নির্ভরতার স্থান। তাই কোন মা বাবার ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম যেন না হয়, তাদের ঠিকানা যেন সন্তানের ভরা সংসারেই হয় ,সন্তানের হৃদয়ে হয়।
(চলবে)।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৪৩তম পর্ব।
ইউএইচডিপি নামে একটা সেবা প্রতিষ্ঠানে বৃদ্ধ মোজাম্মেল হক দম্পতি আশ্রিত আছেন বেশ কিছু দিন ধরে । উনাদের সন্তানেরা রেখে গিয়ে আর খোজ নিতেও আসে নাই কখনো।
“৬৩ বছর আমরা এক সাথে থাকি,
আজ পর্যন্ত কখনো তার গায়ে একটা ফুলের টোকাও তো দুরের কথা উচ্চস্বরে কথাও বলিনি।
আমার ডান হাতটা কাঁপে, ঠিক মত খাবার হাতে তুলে খেতে পারি না। আর তাই প্রায়ই মুখে তুলে খাইয়ে দেয় সে। অনেক অভাবের মাঝে আগেও ছিলাম, আমার স্ত্রী অনেক সুন্দরী ছিলো কখনোই অভাব আমাদের মাঝে দেয়াল হয়নি।।
এর মাঝে সন্তানরা বড় হলো, ভেবেছিলাম এবার হয়তো অবসর নিবো। জীবনটা অন্য সব বয়স্কদের মত মসজিদ আর বাসায় কেটে যাবে। অথচ তারা আমাদের ফেলে চলে গেলো। আবারো একা হয়েই রইলাম, তবে আমরা কখনোই একজন আরেকজন কে অসম্মান করিনি।“
ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার ভিতর বেড়ে উঠা সন্তানেরাও পিতামাতাকে সেবা কেন্দ্রে রেখে যান।বৃদ্ধ মোজাম্মেল হক এইসব কথা বলতে বলতে হু হু করে কেঁদে উঠেন এই কান্নাায় পরিবেশ ভারি হয়, এই কান্নায় আকাশ বাতাস সাক্ষী হয়। রাস্তায় হেঁটে যাওয়া অপরিচিত পথিক থমকে দাঁড়িয়ে জানালায় তাকায়। ডাষ্টবিনে খেতে আসা কাক ও কুকুর নিঃশব্দ হয়ে বুঝতে চায় মানবের কান্নার রহস্য। কাক ও কুকুর খাওয়া ছেড়ে চলে যায় হয়তো মোজাম্মেল হকের কান্না তাদের ব্যথিত করে। হয়তো অকৃতজ্ঞ সন্তানদের ঘৃণায়।
নাহিদ পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে সিটকে পড়ে জীবনের চেনা পথ হতে এতে তার জীবনের সৌন্দর্যহানি ঘটে ছেলে বেলায়। বাবার শাসন ও ভালোবাসা সে বুঝতে পারিনি মায়ের এক তরফা সীমাহীন প্রশ্রয়ের কারণে। মায়ের অতিরিক্ত ভালোবাসা ও প্রশ্রয় নাহিদকে করে তুলে বেপরোয়া ও বখাটে। বর্তমান কিশোর গ্যাং ঘটে উঠার পিছনে যেমন স্থানীয় ক্ষমতাবান লোভী নেতা দায়ী তেমনি পরিবারও দায়ী। নাহিদের বাবা ভালোবাসা ও শাসন দিয়ে নাহিদকে নিয়ম ও শৃঙ্খলা বদ্ধ রাখতে চেষ্টা করে ছিল। এতে যদি নাহিদের মা চুপি চুপি অন্যায় আবদার পূরণ না করতো বাবার মত ছেলেকে শৃঙ্খলায় রাখতো তাহলে তাকে আজ জীবনের অন্ধকার গলিতে হাবুডুবু খেতে হতো না। লেখাপড়ায় গাফিলতি করে রাজনৈতিক নেতার চালে পড়ে গ্রুপ নিয়ে ঘুরে বেড়ানো নাহিদ বাবার বকাবকি পছন্দ হয়নি বলে ঘর ছাড়ে । তারপরও কম চেষ্টা করেনি তাকে ঘরে ফিরিয়ে নিতে কিন্তু সে জড়িয়ে পড়ে মাদক নামক রাজ্যের সাথে আর এতে মাথার ছাতা সোবহান মিয়া। দিন দিন হয়ে উঠে ভয়ংকর নাহিদ।
প্রথম প্রথম মিটিং মিছিলে সীমাবদ্ধ থাকলেও আস্তে আস্তে হয়ে উঠে প্রচণ্ড অন্যায়কারি। আর সোবহান মিয়া সব অন্যায় হতে বাঁচিয়ে ব্যবহার করতে থাকে নিজের মত করে। মাদক, জুয়া ও অস্ত্র নাহিদের সান গ্লাস। একদিন সোবহান মিয়ার জমি দখল করতে গিয়ে মারামারি প্রতিপক্ষের হামলা মামলা হতে বাঁচতে পালিয়ে শিউলীদের এলাকায়। প্রেম ও বিয়ে তারপর আবার ফিরে আসে সোবহান মিয়ার কাছে। অল্প বয়সী বউয়ের উপর পড়ে সোবহান মিয়ার সুরমা লাগানো নজর। আকার ইঙ্গিতে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ও বলে কুনজরে সফল না হয়ে মাদকসেবী নাহিদকে পুলিশ দিয়ে জেলে পাঠায়। তারপর সোবহান মিয়া নিজের পরিবার ও পরিবেশ অনুকূল করতে করতে দেরী হওয়ায় শিউলী নিজের ইজ্জত আব্রু বাঁচানো জন্য ছুটতে ছুটতে জীবন হারায়।
সুজন, জামিন হয়ে গেল আল্লাহের কাছে শোকর।
হ্যাঁ শোকর আল্লাহর।
জেল হতে বাহির হয়ে শিউলীর মা বাবার সাথে দেখা করবো এবং শিউলীর কবর জিয়ারত করবো ।
খুবই ভালো হবে। তার আত্মা শান্তি পাবে।
জানি না শিউলীর মা বাবা কেমন আচরণ করবে। আরে বেটা নাহিদ, বোকা তুই ।
কেন , কি হলো।
শিউলীর মা বাবা তোকে দেখলে আনন্দিত হবে, খুশি হবে।
ওহ ! আচ্ছা আচ্ছা।
(চলবে)।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৪৪তম পর্ব।
দুপুর দুইটা বাজে এখন বাসায় চলে যাই। ফ্রেশ হয়ে খাবো একসাথে, আমি আম্মু সকালে বলে আসছি তুই আজ জামিন পেয়ে জেল হতে ছাড়া পাবি। নাকি হোটেলে খেয়ে ফেলবি , তোর ইচ্ছা।
চল বাসায় খাবো বহু দিন আন্টির হাতের রান্না খাওয়া হয়নি, তাহাছাড়া ফ্রেশও হতে হবে।
ঠিক আছে।
সুজন সোবহান মিয়ার ওখানে যাওয়া দরকার ।
হুম, তবে সেটা পরেও করতে পারবি। আজকের দিনটা বিশ্রাম কর। খেয়ে ঘুম দিতে হবে আমাকে, না হয় আমার মাথা ব্যথা করবে। এমনি সকালে রোদের ভিতর দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে বেশ সময়।
অনেক কষ্ট দিতেছি তোকে দোস্ত, যদি সম্ভব হয় এই অধমকে ক্ষমা করে দিবি। তোর কাছে আমি ঋণী থাকতে চাই জীবন অবসান হওয়া পর্যন্ত কারণ এই ঋণের মূল্য শোধ করার সেই ক্ষমতা আমার নাই। আরে এত আবেগী কথা বলতে হবে না। তুই আমার ভাই ও বন্ধু । তবে একটা জিনিস চাইবো সেটা হলো জীবনের কোন পর্যায়ই শিউলীর মা বাবাকে ভুলে যাবি না। যেতটুকু সম্ভব তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে চেষ্টা করবি। জীবনকে উপভোগ করা শ্রেয় তবে সেটা স্বাভাবিকভাবে এবং সামাজিকভাবে করাই উত্তম। আমি তোর ভালো চাই তাই মন্দ ত্যাগ করতে বলবো বাকিটা তোর ইচ্ছা এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর নির্ভর। আর ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।
এইসব বলে আমাকে লজ্জা দিবি না দোস্ত। আমি ভালো হলেও সোবহান মিয়াতো আর ভালো হবে না।আমি তাকে বাবার মত সম্মান করতাম বলে তার জন্য সব করেছি আর সে কিনা আমার বউ শিউলীর প্রতি কামনার চোখ দেয়। শিউলী আমাকে অনেক বলেছে আমি বিশ্বাস করি নাই তাই গুরুত্বও দিতাম না আসলে সোবহান মিয়ার জনদরদী ও সমাজ সেবক নেতার মুখোশে আমি অন্ধ ছিলাম। ভাবতেই খুব অবাক লাগে বৃদ্ধ একজন লোক মেয়ের বয়সী একজনের প্রতি কামুক নজর দিতে পারে।
আসলে নাহিদ ভালো মানুষের মুখোশ শুধু রাজনৈতিক নেতা নয় সমাজের আরো কিছু মানুষও এমন মুখোশ পরে আছে। এরা আমাদের নজরে মানবিক ও সৃজনী মানুষ। এদের ভিতর আছে মানুষ তৈরির কারিগর হুজুর ও মোল্লা ,শিক্ষক ও অধ্যাপক, ব্যবসায়ী ও চাকরীজীবি, একমাত্র মুখোশ বিহীন মানুষ হলো সমাজের নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া আমজনতা। সমাজের উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ছুটছে তো ছুটছে শুধু লোভের পিছনেই ছুটছে। কিছু মানুষের নৈতিকতার এত অধঃপতন হয়েছে যে এদের মানুষ ভাবতেও ঘৃণা হয়। এর ভিতর গুটি কিছু সর্বজন সম্মানিত লোক আছে ভয়ংকর পশুর চেয়েও খারাপ। এইসব মুখোশধারী লোককে পশু বললে যেন পশুরও অপমান হবে । এইসব বিবেকহীন নরপশুদের খবর আমরা মাঝে মাঝে টিভি নিউজে দেখি পেপার পত্রিকায় পড়ি। লজ্জাজনক এইসব খবরে থাকে শিক্ষক হয়ে ছাত্রীকে ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানি কিংবা বলৎকার কোন ছাত্রকে। মাধুর্যমণ্ডিত মুখে দাড়ি ও মাথায় টুপি দেওয়া ইসলামী লেবাসধারি মোল্লা খবরের শিরোনাম হয় মাদ্রাসার এতিম ছাত্রকে বলৎকারে। তখন মন চায় বলতে এরা মানুষ না।
শিক্ষক হলো সমাজের বিবেক। মোল্লা হলো সমাজের অক্সিজেন । এই দুষিত অক্সিজেন নিয়ে দুষিত বিবেকের শিক্ষা নিয়ে কখনো আদর্শ মানুষ হবে না আদর্শ সমাজ হবে না আর আদর্শ সমাজ না হলে আদর্শ রাষ্ট্র হবে না। দেশের সর্বস্তরের জনগণ মোল্লাদের সম্মান করে তারা সাধারণ দশজন হতে ইসলাম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখে তাই অসামাজিক কোন কাজে ধরা পড়লে হৈচৈ বেশী হয়। মানুষের মানতে কষ্ট হয় একজন মৌলভী পশু, মানুষের মানতে কষ্ট হয় একজন শিক্ষক ছাত্রীর ধর্ষক। এমনিতে সমাজে অনাচার বেড়েছে নীতিহীনতার কারণে। রাষ্ট্র আজ রুগ্ন বলে এক শ্রেণীর লোক প্রচণ্ড ক্ষমতাবান। আর ক্ষমতাবানদের যাতাকলে পিষ্ঠ হচ্ছে নিরহ জন। অথচ রাষ্ট্রই সব নাগরিকের মালিক। কিন্তু রাষ্ট্র কিছু লোকের মা কিছু লোকের মাসী মা আবার কিছু লোকের সৎমাও। বাকি কিছু লোকতো রাষ্ট্র নামক মায়ের সন্তানই না আর তারা হলো গরিব জনগণ। অথচ বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে গরিবই বেশী। মনে হয় গরিবের রাষ্ট্রের সন্তান বলে পরিচয় নাই বিধায় আইন আদালত তাদের কাছে থাকে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে আর অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সেবাতো স্বপ্নের রাণী। এমন কুলষিত লোক নিয়ে রাষ্ট্র কখনো চলতে পারে না। তাই এদের সীমাবদ্ধ করা সময়ের দাবি ।
সমাজপতিরা সমাজ সুন্দর করার কথা মুখে বলে কিন্তু কাজ করে উল্টোটা। সন্তাস ও মাদকের ধর্মবাবা কে খোজ নিলে আমরা লজ্জা পাবো ভয় পাবো কারণ এইসব ধর্মবাবারা সমাজের অধিপতি। কিন্তু আবার সবাই নয়, ভালো সুন্দর মন ও মননের সমাজপতিরা রাষ্ট্রের ধারক বাহক হতে পারে না অল্প কিছু অসুররের কারণে। সমাজকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আধুনিক ও সৃজনশীল করে বাসযোগ্য করার লোকও আমাদের দেশে বেশী মনে হয় তবুও কেন আমরা অশিক্ষা কুশিক্ষার হতে দুরে সরতে পারছি না তা প্রশ্নবোধক।
(চলবে )।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৪৫তম পর্ব।
আমাদের দেশে ভবঘুরে ও হাটে বাজারে গান গাওয়া অশিক্ষিত লোক আইন প্রণেতা হয়। চোরা কারবারী , মাদক কারবারী, মানব পাচারকারী ও জনগণের সম্পদ লুন্ঠনকারী নিজের আসল পরিচয় গোপন করে মুখোশ পরা লোকটি আইন প্রণেতা হয়। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র জীবনে সন্ত্রাসের নেতৃত্বদানকারী আইন প্রণেতা হয়। এইসব আইন প্রণেতাকে বিসিএস ডিগ্রীধারী স্যার স্যার করতে হয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো মদ খেয়ে মূর্খ নেতাই গালি দেয় একজন উচ্চ শিক্ষিত জেলা প্রশাসককে। আর জেলা প্রশাসক মূর্খ ও চরিত্রহীন নেতার ক্ষমতার ভয়ে জ্বি স্যার জ্বি স্যার করে। আরো মজার ব্যাপার হলো অনেক আইন প্রণেতা মহান সংসদে দাঁড়িয়ে মিথ্যা ভাষণ দেয় এবং অন্যের চামচামিতে সময় নষ্ট করে। প্রতিপক্ষকে অশালীন ভাষায় গালি দিয়ে সংসদে হইচই করে সময় অতিক্রান্ত করে আর এর ব্যয়ভার বহন করে সাধারণ জনগণ। তাই শিক্ষিত মেধাবী যুব সমাজ রাজনীতির প্রতি অনিহা প্রকাশ করে। এই কারণে রাজনীতি শালীনতা হারাচ্ছে। ফেনী জেলার পশুরাম উপজেলায় যে ভারতের সীমান্ত এলাকা সেখানে আছে মাদক ও চোরা কারবারীর শক্ত সিন্ডিকেট। ইউনিয়ন মেম্বার চেয়ারম্যান হতে উপজেলা চেয়ারম্যান পর্যন্ত এতে জড়িত। তারা এত শক্তিশালী যে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাকারি কর্মকর্তাকে মেরে ফেলার জন্য হামলা করে শেষ পর্যন্ত সেই কর্মকর্তা দেশ ছেড়ে দিয়ে জীবন বাঁচায়।
তবে মাদকের বিরুদ্ধে সরকার সাড়াশী অভিযান পরিচালনা করে। এতে শত শত লোক ক্রস ফায়ার দেওয়া হয়। কিন্তু নিজ দলীয় প্রভাবশালী বহাল তবিয়তে থাকে আর মাদকের বাণিজ্য করে। এই হলো আমার দেশ। এখানে শিশু শিক্ষায় আনন্দ নেই আছে গরুর মত এক গোয়ালে ঘাস খাওয়া। এখানে বিজ্ঞানবৃত্তিক কর্মময় শিক্ষার চিন্তা নেই আছে হাজারো কোটায় আবদ্ধ চাকরীর লাইন। এখানে ইংরেজি মাধ্যমের এতিমখানা নেই আছে কওমি নামে দোয়া দরুদ পড়ার মাদ্রসা। এখানে সরকারি মাদ্রসার আধুনিকীকরণ নেই আছে সরকারী মাদ্রসার কোন ভালো ছাত্রকে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা। এখানে আরো আছে জাল সনদে শিক্ষক হওয়া, ডাক্তার হওয়া, আরো আছে জাল সনদে বিদেশে গিয়ে ধরা পড়া । সবচেয়ে আজব যেটা আছো সেটা হলো জাল সনদের মুক্তিযোদ্ধা। এই মুক্তিযোদ্ধারা আসল দেশপ্রমিকের চেয়ে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা বেশি ভোগ করে। এতসব জালের ছড়াছড়িতে আসল নকল বুঝাই দায় এই হলো আমার সোনার বাংলাদেশ। এখানে মাদক বিক্রি করতে করতে নাম পাল্টে যায় হয়ে ইয়াবা যদু মধু। সে মাদকের টাকায় প্রাসাদ বানায় কোটি টাকার গাড়িতে চড়ে জন প্রতিনিধি হওয়ার জন্য ভোট চায় আর কারবারী হিসাবে ধরা পড়ে মরে যায় রাম রহিম।
শতশত দিবস আছে, মা দিবস ও বাবা দিবসের পাশাপাশি ভাই-বোন দিবসও আছে । অথচ আজব এই দেশে ভাই বোনের সম্পত্তি মেরে খায়। আসলে সব দিবস বাদ দিয়ে মন সাদা করণ ও মানবিক হওয়া দিবস পালন করা উচিত। আমাদের দেশে দিবসের কোন হিসাব নাই। নেতার জন্ম দিবস যেমন পালন হয় তেমনি আবার মৃত্যু দিবসও পালন হয়। এর ভিতর আরো আছে জেলে যাওয়া দিবস জেল হতে বাহির হওয়া দিবস আরো আছে বিদেশে যাওয়া দিবস এমকি দেশে আসা দিবসও পালন করা হয়। আর এতে অতি উৎসাহী অংশীদার থাকে মিডিয়া জগত। আবার মৃত নেতার কবরটিও কোটি কোটি টাকা খরচ করে দৃষ্টিনর্দন কারুশিল্প করা হয়। পৃথিবীর অন্য কোন দেশে মৃত নেতার কবরে এত অগাধ টাকা খরচ কিনা প্রশ্নবোধক। আরো বেশী টাকা খরচ করলেও কারো কিছু বলার অধিকার নেই যদি সেই টাকা নেতার নিজস্ব লোকজনের হয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে টাকা খরচ করে কবরে মার্বেল ও টাইলস লাগায় আমাদেরই দেশে।
আর এই সমস্ত টাকা দেশের জনগণের। দেশের জনগণের টাকা খরচ করে কবরকে এমন জোলুস করায় মৃত ব্যক্তির কোন উপকার হয় না কিংবা জনসাধারণের ভালোবাসাও নেতার প্রতি বাড়ে না তবুও ক্ষমতা পেলে এমন করে। দলবেধে যখন কবর জেয়ারতে যায় মনে হয় সেই দলেও মাদকসেবী কিংবা মাদক কারবারী নেহাৎ কমই থাকে না। এখন এমন যুগ য়াবা ইয়বাখোর দিনাজপুরে বাঁশের মাঁচায় শুয়ে হা করে আর সরাসরি মায়ানমারের ইয়াবার কারখানায় বসে বিক্রেতা ইয়াবা গ্রাহকের মুখে ছুঁড়ে মেরে খাইয়ে দিতে পারে।
(চলবে)
৪১তম পর্ব।
মৌরি কেমন আছো মা মনি।
আমি ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন। দাদী ফোন করে ছিল উনিও ভালো আছে।
আমি ভালো আছি। আমি গ্রামের বাড়ি হতে আসার পর খুব ক্লান্ত ছিলাম তাই আর ফোন দেওয়া হয়নি।
আপনি নিরাপদে বাসায় এসেছেন আল্লাহর শোকর।
তোমার সব কিছু ঠিকমতো চলতেছে মা ।
জ্বি আম্মু, আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না । ভবিষ্যতে শুধু হাইটেক মাল্টি কোম্পানিতে একটা জব হলে হবে যেন আম্মুকে নিয়ে আসতে পারি তারপর মা মেয়ে একসাথে ইউরোপ আমেরিকা ঘুরে বেড়াবো।
হাঃ হাঃ হঃ। আল্লাহ যেন সেই স্বপ্ন পূরণ করে। তবে আমি আমার সোনার বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও ঘুরতে আরাম পাবো না । আমি দেশে ঘুরে বেড়াবো সাগরমুখী হয়ে, আমি ঘুরে বেড়াবো পাহাড়িয়া অঞ্চলে। পাহাড়ে দাঁড়িয়ে মেঘের সাথে মিতালি তালে সুখের বীনে বাজবে নজরুল। সাগর গর্ভে ছলাৎ - ছলাৎ পানির ঢেউয়ে সুর মিলিয়ে বাজবে মরমী ও লালনের সুর। তখন আমি দেখবো অপরূপ জন্মভুমি।ওহ ওহ আম্মু আজ আপনি কবি হয়ে গিয়েছেন।
যার জীবনটা করুণ সুরের বীন সে হবে আবার কবি। যার স্বামীটা লোভী। যার মা ভাই শুধু মানসিক যন্ত্রণা দেয় যার শাশুড়ী মা বৌমার জন্য প্রবাসে কান্নারত যার একমাত্র মেয়েটা বুকে নাই সে অনেক কষ্টে বেঁচে থাকে। সে কেমন করে কবি হবে মৌরি মনি।
আম্মু এমন করে বলো না তাহলে আমি কান্না করবো না না কান্নাকাটি করলে হবে না তোমার কান্না আমার বুকে করুণ সুর হয়ে বাজে। সারাদিন আর কিছু ভালো লাগবে না। একটা আদর দিয়ে রেখে দাও মা।
এই মেয়েটা যেন আমাকে বেঁচে থাকার অক্সিজেন দিচ্ছে। হাজার হাজার কিলোমিটার দুরে তার করুণ কন্ঠ আমার মন ও মেজাজ ব্যথিত করে প্রচণ্ডভাবে। আমি কিংবা অন্যজন শিউলীর মা বাবাকে যেত শান্তনা দিই তাদের মন শান্তনা খোঁজে পাবে না। তবে আস্তে আস্তে ভুলে যাবে অবশ্যই তার জন্য সময়ের দরকার। সন্তানকে অকৃত্রিম ও অমলিন যত্ন দিয়ে লালন পালন করে প্রতিটি পিতামাতাই আবার সেই সন্তানই একদিন ছেড়ে যায় পিতামাতাকে । এক সময় সন্তান পিতামাতাকে কৃত্রিম ভালোবাসা দিতেও কৃপণতা করে। যদিও পিতামাতাকে ত্যাগ করা এক সময় আমাদের দেশে কম ছিলো এখন আস্তে আস্তে বেড়ে যাচ্ছে। আর এটা ধনী গরিব, শিক্ষিত অশিক্ষিত সব পরিবারে হচ্ছে কম বেশী। এর পিছনে হয়তো বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে কিন্তু ঘরের কোণায় একটা রুম আর দুই বেলা ভাত এবং একটু যত্ন কেন এত দামী অত অধরা হয়ে যাচ্ছে জানি না। আমরা সবাইতো আজ সন্তান কাল মা অথবা বাবা তাহলে কেন এই সুন্দর সামাজিক বন্দন ভেঙ্গে চুরমার করছি আশ্রয় কেন্দ্রের অনেক মা বাবা সন্তানের জন্য নীরবে অশ্রু জল বিসর্জন দেয় , উদাসী হয়ে দিন কাটায়।
এই উদাসী পিতামাতার তালিকায় আছে ব্যবসায়ী ব্যাংকার,শিক্ষক অধ্যাপক, সরকারি বেসরকারি চাকরিজীবি, ধনী দরিদ্র, দিনমজুর, ড্রাইভার ও হেলপার। এইসব পিতামাতার আশ্রয়দাতাও কারো না কারো সন্তান, কারো না কারো বাবা। আজব দুনিয়া একজন সুশীল ও মানবিক আরেকজন অসুর ও অপরাধী । প্রতিটি পিতামাতারই আমার কাছে এক একটা গোলাপ। সন্তানদের বড় বড় মানুষ করে পিতামাতাই যায় পরের ঘরে। রিক্সা ঠেলে কিংবা ঠেলাগাড়ি ঠেলে সন্তানদের বড় করলেও কপালে সুখ আসে না। বাবা দিবসে ফেসবুক এবং টুইটারে বাবার প্রতি এত ভালোবাসা দেখি যে মাথাই টালমাটাল । আমিও সন্তান আপনিও সন্তান তাহলে এত বৃদ্ধ মানুষ যে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছে তারা কে বা কাহারা। প্রতিটি বৃদ্ধ মানুষই আমার কাছে স্বর্গ তাই আমি বলবো রোজ রোজ পুজা দিন স্বর্গের দুয়ারে।
একটা কথা বলার জন্য মনে করে ছিলাম।
কি এমন কথা যে বলতে ভয় পাচ্ছো । বলে বলতে পারো শিউলীর মা।
ঘরে যা আছে টাকা পয়সা এবং আরো কিছু ধার কর্জ করে একটা গরু কিনলে কেমন হয়।
তুমি ঠিক বলেছো কিন্তু আরো দশ/পনর হাজার টাকা লাগবে তা কোথায় পাবো।
আপনি এখন ধার কর্জ করতে পারলে পরে তা আস্তে আস্তে শোধ দিবো। এবং চাচীকে বলবো আর আমার মাকেও বলে কিছু নিবো।
ঠিক আছে দেখি চেষ্টা করে। (চলবে)।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৪২তম পর্ব।
এইদিক সেইদিক করে শিউলীর বাবা আমিন উদ্দিন গরু কিনে একটা। গরু নিয়ে এখন সময় কাটে আমিন উদ্দিনের । আস্তে আস্তে আবার সব স্বাভাবিক হচ্ছে আমিন উদ্দিন ও তার স্ত্রীর ।
একবার চাচীর সাথে কথা বলা দরকার। উনি কিছু টাকা দিলে কর্জটা তাড়াতাড়ি শোধ করা যাবে। আচ্ছা শিউলীর মা তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে , উনি মাত্র কিছুদিন আগেই টাকা দিলো এখন আবার বলাটা কি ঠিক হবে।
তা ঠিক বলেছেন, এখন আর কিভাবে শোধ দিবো ধার দেনা।
দিতে পারবো তুমি এত চিন্তা করো না।
হাঃ হাঃ হাঃ ঠিক আছে আমি আর চিন্তা করবো না। একটা কথা চিন্তা করি।
কি এমন কথা চিন্তা করো , শুনতে পারি। সন্তান লালন পালনে কিংবা মরণেও পিতামাতার জীবন ওলটপালট হয়ে যায়। যেন মনে হয় সন্তান না মরে পিতামাতার একজন মরে গিয়েও সন্তানটা বেঁচে থাকুক অথচ সেই সন্তানই একদিন সব ভুলে যায়। পিতামাতাকে নিজের কাঁধের বোঝা মনে করে। কত শত মা বাবা অতীত জীবনের মনে করে কান্না করে আমরা তার হিসাবও রাখি না। অথচ পৃথিবীর সব ধর্মই মানুষকে মানবিক হতে বলে।
শক্ত হাতে বারিন্দার গ্রিল ধরে উদাসী মনে আকাশ পানে চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন বৃদ্ধ বয়সী মা বাবারা। অশ্রুতে দুই চোখ থাকে ছলছল। হয়তো ফেলে আসা দিনগুলোতে ফিরে গিয়ে জীবনের হিসাব কষেন। ঠিক কোন জায়গায় ভুল ছিল? যে ভুলের শাস্তিস্বরূপ ছেলে, বউমা, মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনিতে ভরা সংসার থাকা সত্ত্বেও ঠাঁই এই বৃদ্ধাশ্রমে? জীবনের প্রথম ও শেষ বয়সে একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। দুই বয়সেই মানুষ শিশু হয়ে যায়, পরনির্ভরশীল হয়ে যায়। সমাজ ও পরিবারের কাছে প্রবীণেরা চায় সম্মান ও ভালোবাসা। জীবনের শেষ বেলায় সন্তানের সান্নিধ্য ও পরিজনের সঙ্গ খুব প্রয়োজন। কিন্তু পশ্চিমা সংস্কৃতির নির্মম ও কলঙ্কময় উপহার হিসেবে প্রবীণ নিবাস ও বৃদ্ধাশ্রম ছেয়ে যাচ্ছে সমাজের সব স্তরে, যা মানবতার নির্মম বন্দিশালা।
দীর্ঘ অপেক্ষার যেন শেষ নেই। সারাটি জীবন যে সংসার, সন্তান-সন্ততির কথা চিন্তা করে, তাদের মঙ্গলের জন্য মা বাবা দিনরাত পরিশ্রম করেন, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজেদের শখ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে হলেও সন্তানকে সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেন, আর সেই সংসার থেকে তাদের দূর করে দেওয়া হয়। সামান্যতম ঠাঁই, সহানুভূতি, ভালোবাসা তাঁরা পান না। বর্তমানে কাজের তাগিদে বা আরো বিভিন্ন কারণে একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে ছোট ছোট পরিবারে। শুধু স্বামী-স্ত্রী ও তাদের সন্তান নিয়ে গঠিত সেই পরিবার। এই আধুনিক সভ্যতার সব উপকরণ, ব্যক্তি ভোগ-বিলাসের সব উৎস দিয়ে সাজানো সেই সংসার, শুধু ঠাঁই হয় না প্রবীণ মা বাবার। রাস্তায়ও ফেলে যায় অসুস্থ বাবা মাকে,
চিকিৎসার অভাবে মারা যায় এমন নিষ্ঠুর সংবাদ প্রায় শুনা যায়। বাবা মা কর্মক্ষম হারিয়ে গেলে তাদের বোঝা ভাবতে শুরু করে সন্তান-সন্ততি।
অথচ বৃদ্ধ বয়সে বাবা মায়ের পাশ সন্তানদের ভরসা হিসেবে থাকার কথা। বাবা মা কখনো বোঝা নয় তারা অভিজ্ঞ বটবৃক্ষের মতো। তারা জীবনকে আরো খুব ভালো করে চেনেন। তাদের পরামর্শ সন্তান এর জীবনে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সহায়ক হয়।বাবা মায়ের প্রতি দায়িত্বে যেন কোনো ত্রুটি না হয় তা প্রত্যেক মানুষের ভাবা উচিত। অনেক সময় নিজের কর্মসংস্থান ও ভালো কাজের সুযোগের জন্য দূরে থাকতে হয়, সেই মুহূর্তেও যেন বাবা মায়ের সামান্য কষ্ট না হয়, তার সমস্ত বন্দোবস্ত করা প্রতিটি সন্তানের দায়িত্ব। আর আমি আপনি নিজের বাবা মায়ের সঙ্গে ঠিক যেভাবে আচরণ করবো, আমার চোখের মণি সন্তানও সেরকম ব্যবহার করা শিখবে। তাই নিজের ভবিষ্যতের কথা ভেবে হলেও নিজেকে পরিবর্তন করা দরকার। বাবা মা বোঝা না সবচেয়ে আপনজন, সন্তানের নির্ভরতার স্থান। তাই কোন মা বাবার ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম যেন না হয়, তাদের ঠিকানা যেন সন্তানের ভরা সংসারেই হয় ,সন্তানের হৃদয়ে হয়।
(চলবে)।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৪৩তম পর্ব।
ইউএইচডিপি নামে একটা সেবা প্রতিষ্ঠানে বৃদ্ধ মোজাম্মেল হক দম্পতি আশ্রিত আছেন বেশ কিছু দিন ধরে । উনাদের সন্তানেরা রেখে গিয়ে আর খোজ নিতেও আসে নাই কখনো।
“৬৩ বছর আমরা এক সাথে থাকি,
আজ পর্যন্ত কখনো তার গায়ে একটা ফুলের টোকাও তো দুরের কথা উচ্চস্বরে কথাও বলিনি।
আমার ডান হাতটা কাঁপে, ঠিক মত খাবার হাতে তুলে খেতে পারি না। আর তাই প্রায়ই মুখে তুলে খাইয়ে দেয় সে। অনেক অভাবের মাঝে আগেও ছিলাম, আমার স্ত্রী অনেক সুন্দরী ছিলো কখনোই অভাব আমাদের মাঝে দেয়াল হয়নি।।
এর মাঝে সন্তানরা বড় হলো, ভেবেছিলাম এবার হয়তো অবসর নিবো। জীবনটা অন্য সব বয়স্কদের মত মসজিদ আর বাসায় কেটে যাবে। অথচ তারা আমাদের ফেলে চলে গেলো। আবারো একা হয়েই রইলাম, তবে আমরা কখনোই একজন আরেকজন কে অসম্মান করিনি।“
ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার ভিতর বেড়ে উঠা সন্তানেরাও পিতামাতাকে সেবা কেন্দ্রে রেখে যান।বৃদ্ধ মোজাম্মেল হক এইসব কথা বলতে বলতে হু হু করে কেঁদে উঠেন এই কান্নাায় পরিবেশ ভারি হয়, এই কান্নায় আকাশ বাতাস সাক্ষী হয়। রাস্তায় হেঁটে যাওয়া অপরিচিত পথিক থমকে দাঁড়িয়ে জানালায় তাকায়। ডাষ্টবিনে খেতে আসা কাক ও কুকুর নিঃশব্দ হয়ে বুঝতে চায় মানবের কান্নার রহস্য। কাক ও কুকুর খাওয়া ছেড়ে চলে যায় হয়তো মোজাম্মেল হকের কান্না তাদের ব্যথিত করে। হয়তো অকৃতজ্ঞ সন্তানদের ঘৃণায়।
নাহিদ পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে সিটকে পড়ে জীবনের চেনা পথ হতে এতে তার জীবনের সৌন্দর্যহানি ঘটে ছেলে বেলায়। বাবার শাসন ও ভালোবাসা সে বুঝতে পারিনি মায়ের এক তরফা সীমাহীন প্রশ্রয়ের কারণে। মায়ের অতিরিক্ত ভালোবাসা ও প্রশ্রয় নাহিদকে করে তুলে বেপরোয়া ও বখাটে। বর্তমান কিশোর গ্যাং ঘটে উঠার পিছনে যেমন স্থানীয় ক্ষমতাবান লোভী নেতা দায়ী তেমনি পরিবারও দায়ী। নাহিদের বাবা ভালোবাসা ও শাসন দিয়ে নাহিদকে নিয়ম ও শৃঙ্খলা বদ্ধ রাখতে চেষ্টা করে ছিল। এতে যদি নাহিদের মা চুপি চুপি অন্যায় আবদার পূরণ না করতো বাবার মত ছেলেকে শৃঙ্খলায় রাখতো তাহলে তাকে আজ জীবনের অন্ধকার গলিতে হাবুডুবু খেতে হতো না। লেখাপড়ায় গাফিলতি করে রাজনৈতিক নেতার চালে পড়ে গ্রুপ নিয়ে ঘুরে বেড়ানো নাহিদ বাবার বকাবকি পছন্দ হয়নি বলে ঘর ছাড়ে । তারপরও কম চেষ্টা করেনি তাকে ঘরে ফিরিয়ে নিতে কিন্তু সে জড়িয়ে পড়ে মাদক নামক রাজ্যের সাথে আর এতে মাথার ছাতা সোবহান মিয়া। দিন দিন হয়ে উঠে ভয়ংকর নাহিদ।
প্রথম প্রথম মিটিং মিছিলে সীমাবদ্ধ থাকলেও আস্তে আস্তে হয়ে উঠে প্রচণ্ড অন্যায়কারি। আর সোবহান মিয়া সব অন্যায় হতে বাঁচিয়ে ব্যবহার করতে থাকে নিজের মত করে। মাদক, জুয়া ও অস্ত্র নাহিদের সান গ্লাস। একদিন সোবহান মিয়ার জমি দখল করতে গিয়ে মারামারি প্রতিপক্ষের হামলা মামলা হতে বাঁচতে পালিয়ে শিউলীদের এলাকায়। প্রেম ও বিয়ে তারপর আবার ফিরে আসে সোবহান মিয়ার কাছে। অল্প বয়সী বউয়ের উপর পড়ে সোবহান মিয়ার সুরমা লাগানো নজর। আকার ইঙ্গিতে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ও বলে কুনজরে সফল না হয়ে মাদকসেবী নাহিদকে পুলিশ দিয়ে জেলে পাঠায়। তারপর সোবহান মিয়া নিজের পরিবার ও পরিবেশ অনুকূল করতে করতে দেরী হওয়ায় শিউলী নিজের ইজ্জত আব্রু বাঁচানো জন্য ছুটতে ছুটতে জীবন হারায়।
সুজন, জামিন হয়ে গেল আল্লাহের কাছে শোকর।
হ্যাঁ শোকর আল্লাহর।
জেল হতে বাহির হয়ে শিউলীর মা বাবার সাথে দেখা করবো এবং শিউলীর কবর জিয়ারত করবো ।
খুবই ভালো হবে। তার আত্মা শান্তি পাবে।
জানি না শিউলীর মা বাবা কেমন আচরণ করবে। আরে বেটা নাহিদ, বোকা তুই ।
কেন , কি হলো।
শিউলীর মা বাবা তোকে দেখলে আনন্দিত হবে, খুশি হবে।
ওহ ! আচ্ছা আচ্ছা।
(চলবে)।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৪৪তম পর্ব।
দুপুর দুইটা বাজে এখন বাসায় চলে যাই। ফ্রেশ হয়ে খাবো একসাথে, আমি আম্মু সকালে বলে আসছি তুই আজ জামিন পেয়ে জেল হতে ছাড়া পাবি। নাকি হোটেলে খেয়ে ফেলবি , তোর ইচ্ছা।
চল বাসায় খাবো বহু দিন আন্টির হাতের রান্না খাওয়া হয়নি, তাহাছাড়া ফ্রেশও হতে হবে।
ঠিক আছে।
সুজন সোবহান মিয়ার ওখানে যাওয়া দরকার ।
হুম, তবে সেটা পরেও করতে পারবি। আজকের দিনটা বিশ্রাম কর। খেয়ে ঘুম দিতে হবে আমাকে, না হয় আমার মাথা ব্যথা করবে। এমনি সকালে রোদের ভিতর দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে বেশ সময়।
অনেক কষ্ট দিতেছি তোকে দোস্ত, যদি সম্ভব হয় এই অধমকে ক্ষমা করে দিবি। তোর কাছে আমি ঋণী থাকতে চাই জীবন অবসান হওয়া পর্যন্ত কারণ এই ঋণের মূল্য শোধ করার সেই ক্ষমতা আমার নাই। আরে এত আবেগী কথা বলতে হবে না। তুই আমার ভাই ও বন্ধু । তবে একটা জিনিস চাইবো সেটা হলো জীবনের কোন পর্যায়ই শিউলীর মা বাবাকে ভুলে যাবি না। যেতটুকু সম্ভব তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে চেষ্টা করবি। জীবনকে উপভোগ করা শ্রেয় তবে সেটা স্বাভাবিকভাবে এবং সামাজিকভাবে করাই উত্তম। আমি তোর ভালো চাই তাই মন্দ ত্যাগ করতে বলবো বাকিটা তোর ইচ্ছা এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর নির্ভর। আর ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।
এইসব বলে আমাকে লজ্জা দিবি না দোস্ত। আমি ভালো হলেও সোবহান মিয়াতো আর ভালো হবে না।আমি তাকে বাবার মত সম্মান করতাম বলে তার জন্য সব করেছি আর সে কিনা আমার বউ শিউলীর প্রতি কামনার চোখ দেয়। শিউলী আমাকে অনেক বলেছে আমি বিশ্বাস করি নাই তাই গুরুত্বও দিতাম না আসলে সোবহান মিয়ার জনদরদী ও সমাজ সেবক নেতার মুখোশে আমি অন্ধ ছিলাম। ভাবতেই খুব অবাক লাগে বৃদ্ধ একজন লোক মেয়ের বয়সী একজনের প্রতি কামুক নজর দিতে পারে।
আসলে নাহিদ ভালো মানুষের মুখোশ শুধু রাজনৈতিক নেতা নয় সমাজের আরো কিছু মানুষও এমন মুখোশ পরে আছে। এরা আমাদের নজরে মানবিক ও সৃজনী মানুষ। এদের ভিতর আছে মানুষ তৈরির কারিগর হুজুর ও মোল্লা ,শিক্ষক ও অধ্যাপক, ব্যবসায়ী ও চাকরীজীবি, একমাত্র মুখোশ বিহীন মানুষ হলো সমাজের নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া আমজনতা। সমাজের উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ছুটছে তো ছুটছে শুধু লোভের পিছনেই ছুটছে। কিছু মানুষের নৈতিকতার এত অধঃপতন হয়েছে যে এদের মানুষ ভাবতেও ঘৃণা হয়। এর ভিতর গুটি কিছু সর্বজন সম্মানিত লোক আছে ভয়ংকর পশুর চেয়েও খারাপ। এইসব মুখোশধারী লোককে পশু বললে যেন পশুরও অপমান হবে । এইসব বিবেকহীন নরপশুদের খবর আমরা মাঝে মাঝে টিভি নিউজে দেখি পেপার পত্রিকায় পড়ি। লজ্জাজনক এইসব খবরে থাকে শিক্ষক হয়ে ছাত্রীকে ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানি কিংবা বলৎকার কোন ছাত্রকে। মাধুর্যমণ্ডিত মুখে দাড়ি ও মাথায় টুপি দেওয়া ইসলামী লেবাসধারি মোল্লা খবরের শিরোনাম হয় মাদ্রাসার এতিম ছাত্রকে বলৎকারে। তখন মন চায় বলতে এরা মানুষ না।
শিক্ষক হলো সমাজের বিবেক। মোল্লা হলো সমাজের অক্সিজেন । এই দুষিত অক্সিজেন নিয়ে দুষিত বিবেকের শিক্ষা নিয়ে কখনো আদর্শ মানুষ হবে না আদর্শ সমাজ হবে না আর আদর্শ সমাজ না হলে আদর্শ রাষ্ট্র হবে না। দেশের সর্বস্তরের জনগণ মোল্লাদের সম্মান করে তারা সাধারণ দশজন হতে ইসলাম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখে তাই অসামাজিক কোন কাজে ধরা পড়লে হৈচৈ বেশী হয়। মানুষের মানতে কষ্ট হয় একজন মৌলভী পশু, মানুষের মানতে কষ্ট হয় একজন শিক্ষক ছাত্রীর ধর্ষক। এমনিতে সমাজে অনাচার বেড়েছে নীতিহীনতার কারণে। রাষ্ট্র আজ রুগ্ন বলে এক শ্রেণীর লোক প্রচণ্ড ক্ষমতাবান। আর ক্ষমতাবানদের যাতাকলে পিষ্ঠ হচ্ছে নিরহ জন। অথচ রাষ্ট্রই সব নাগরিকের মালিক। কিন্তু রাষ্ট্র কিছু লোকের মা কিছু লোকের মাসী মা আবার কিছু লোকের সৎমাও। বাকি কিছু লোকতো রাষ্ট্র নামক মায়ের সন্তানই না আর তারা হলো গরিব জনগণ। অথচ বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে গরিবই বেশী। মনে হয় গরিবের রাষ্ট্রের সন্তান বলে পরিচয় নাই বিধায় আইন আদালত তাদের কাছে থাকে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে আর অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সেবাতো স্বপ্নের রাণী। এমন কুলষিত লোক নিয়ে রাষ্ট্র কখনো চলতে পারে না। তাই এদের সীমাবদ্ধ করা সময়ের দাবি ।
সমাজপতিরা সমাজ সুন্দর করার কথা মুখে বলে কিন্তু কাজ করে উল্টোটা। সন্তাস ও মাদকের ধর্মবাবা কে খোজ নিলে আমরা লজ্জা পাবো ভয় পাবো কারণ এইসব ধর্মবাবারা সমাজের অধিপতি। কিন্তু আবার সবাই নয়, ভালো সুন্দর মন ও মননের সমাজপতিরা রাষ্ট্রের ধারক বাহক হতে পারে না অল্প কিছু অসুররের কারণে। সমাজকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আধুনিক ও সৃজনশীল করে বাসযোগ্য করার লোকও আমাদের দেশে বেশী মনে হয় তবুও কেন আমরা অশিক্ষা কুশিক্ষার হতে দুরে সরতে পারছি না তা প্রশ্নবোধক।
(চলবে )।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৪৫তম পর্ব।
আমাদের দেশে ভবঘুরে ও হাটে বাজারে গান গাওয়া অশিক্ষিত লোক আইন প্রণেতা হয়। চোরা কারবারী , মাদক কারবারী, মানব পাচারকারী ও জনগণের সম্পদ লুন্ঠনকারী নিজের আসল পরিচয় গোপন করে মুখোশ পরা লোকটি আইন প্রণেতা হয়। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র জীবনে সন্ত্রাসের নেতৃত্বদানকারী আইন প্রণেতা হয়। এইসব আইন প্রণেতাকে বিসিএস ডিগ্রীধারী স্যার স্যার করতে হয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো মদ খেয়ে মূর্খ নেতাই গালি দেয় একজন উচ্চ শিক্ষিত জেলা প্রশাসককে। আর জেলা প্রশাসক মূর্খ ও চরিত্রহীন নেতার ক্ষমতার ভয়ে জ্বি স্যার জ্বি স্যার করে। আরো মজার ব্যাপার হলো অনেক আইন প্রণেতা মহান সংসদে দাঁড়িয়ে মিথ্যা ভাষণ দেয় এবং অন্যের চামচামিতে সময় নষ্ট করে। প্রতিপক্ষকে অশালীন ভাষায় গালি দিয়ে সংসদে হইচই করে সময় অতিক্রান্ত করে আর এর ব্যয়ভার বহন করে সাধারণ জনগণ। তাই শিক্ষিত মেধাবী যুব সমাজ রাজনীতির প্রতি অনিহা প্রকাশ করে। এই কারণে রাজনীতি শালীনতা হারাচ্ছে। ফেনী জেলার পশুরাম উপজেলায় যে ভারতের সীমান্ত এলাকা সেখানে আছে মাদক ও চোরা কারবারীর শক্ত সিন্ডিকেট। ইউনিয়ন মেম্বার চেয়ারম্যান হতে উপজেলা চেয়ারম্যান পর্যন্ত এতে জড়িত। তারা এত শক্তিশালী যে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাকারি কর্মকর্তাকে মেরে ফেলার জন্য হামলা করে শেষ পর্যন্ত সেই কর্মকর্তা দেশ ছেড়ে দিয়ে জীবন বাঁচায়।
তবে মাদকের বিরুদ্ধে সরকার সাড়াশী অভিযান পরিচালনা করে। এতে শত শত লোক ক্রস ফায়ার দেওয়া হয়। কিন্তু নিজ দলীয় প্রভাবশালী বহাল তবিয়তে থাকে আর মাদকের বাণিজ্য করে। এই হলো আমার দেশ। এখানে শিশু শিক্ষায় আনন্দ নেই আছে গরুর মত এক গোয়ালে ঘাস খাওয়া। এখানে বিজ্ঞানবৃত্তিক কর্মময় শিক্ষার চিন্তা নেই আছে হাজারো কোটায় আবদ্ধ চাকরীর লাইন। এখানে ইংরেজি মাধ্যমের এতিমখানা নেই আছে কওমি নামে দোয়া দরুদ পড়ার মাদ্রসা। এখানে সরকারি মাদ্রসার আধুনিকীকরণ নেই আছে সরকারী মাদ্রসার কোন ভালো ছাত্রকে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা। এখানে আরো আছে জাল সনদে শিক্ষক হওয়া, ডাক্তার হওয়া, আরো আছে জাল সনদে বিদেশে গিয়ে ধরা পড়া । সবচেয়ে আজব যেটা আছো সেটা হলো জাল সনদের মুক্তিযোদ্ধা। এই মুক্তিযোদ্ধারা আসল দেশপ্রমিকের চেয়ে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা বেশি ভোগ করে। এতসব জালের ছড়াছড়িতে আসল নকল বুঝাই দায় এই হলো আমার সোনার বাংলাদেশ। এখানে মাদক বিক্রি করতে করতে নাম পাল্টে যায় হয়ে ইয়াবা যদু মধু। সে মাদকের টাকায় প্রাসাদ বানায় কোটি টাকার গাড়িতে চড়ে জন প্রতিনিধি হওয়ার জন্য ভোট চায় আর কারবারী হিসাবে ধরা পড়ে মরে যায় রাম রহিম।
শতশত দিবস আছে, মা দিবস ও বাবা দিবসের পাশাপাশি ভাই-বোন দিবসও আছে । অথচ আজব এই দেশে ভাই বোনের সম্পত্তি মেরে খায়। আসলে সব দিবস বাদ দিয়ে মন সাদা করণ ও মানবিক হওয়া দিবস পালন করা উচিত। আমাদের দেশে দিবসের কোন হিসাব নাই। নেতার জন্ম দিবস যেমন পালন হয় তেমনি আবার মৃত্যু দিবসও পালন হয়। এর ভিতর আরো আছে জেলে যাওয়া দিবস জেল হতে বাহির হওয়া দিবস আরো আছে বিদেশে যাওয়া দিবস এমকি দেশে আসা দিবসও পালন করা হয়। আর এতে অতি উৎসাহী অংশীদার থাকে মিডিয়া জগত। আবার মৃত নেতার কবরটিও কোটি কোটি টাকা খরচ করে দৃষ্টিনর্দন কারুশিল্প করা হয়। পৃথিবীর অন্য কোন দেশে মৃত নেতার কবরে এত অগাধ টাকা খরচ কিনা প্রশ্নবোধক। আরো বেশী টাকা খরচ করলেও কারো কিছু বলার অধিকার নেই যদি সেই টাকা নেতার নিজস্ব লোকজনের হয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে টাকা খরচ করে কবরে মার্বেল ও টাইলস লাগায় আমাদেরই দেশে।
আর এই সমস্ত টাকা দেশের জনগণের। দেশের জনগণের টাকা খরচ করে কবরকে এমন জোলুস করায় মৃত ব্যক্তির কোন উপকার হয় না কিংবা জনসাধারণের ভালোবাসাও নেতার প্রতি বাড়ে না তবুও ক্ষমতা পেলে এমন করে। দলবেধে যখন কবর জেয়ারতে যায় মনে হয় সেই দলেও মাদকসেবী কিংবা মাদক কারবারী নেহাৎ কমই থাকে না। এখন এমন যুগ য়াবা ইয়বাখোর দিনাজপুরে বাঁশের মাঁচায় শুয়ে হা করে আর সরাসরি মায়ানমারের ইয়াবার কারখানায় বসে বিক্রেতা ইয়াবা গ্রাহকের মুখে ছুঁড়ে মেরে খাইয়ে দিতে পারে।
(চলবে)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
Biswanath Banerjee ১৪/১১/২০২০wonderfull
-
আব্দুল হক ১০/১১/২০২০ঠিক
-
পি পি আলী আকবর ১০/১১/২০২০সুন্দর
-
শ.ম.ওয়াহিদুজ্জামান ০৯/১১/২০২০সুন্দর।
-
মোঃ অমিত হাসান ০৯/১১/২০২০💚