মাছ চাই না। বড়শী চাই l
একটা জনপ্রিয় চাইনিজ ছোট গল্প। ছেলে মাছ খেতে চাইলো। সরাসরি মাছ দিলে, সে একবারই মাছ খাবে। সাময়িকভাবে খুশি হবে। বাবা তাকে সেই সুযোগ দিলেন না। মাছ না দিয়ে ধরিয়ে দিলেন একটা বড়শি। মাছ ধরা শিখিয়ে দিলেন। ছেলের প্রথম কয়েকটা দিন কষ্টে কাটলো।
কিন্তু মাছ ধরার কৌশলটা জানার কারণে সে সারা জীবন মাছ খেতে পারলো।
আপনি কী চাইবেন? মাছ? না কী মাছ ধরার কৌশল?
১. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল জাপান। যোগাযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি কোনো অবকাঠামোই তো অবশিষ্ট ছিল না। ছিল না তেমন কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ। দেশটি নিজের পায়ে দাঁড়াতে বিশ্বব্যাংক থেকে টাকা ধার নিলো। সেই টাকা দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, চিকিৎসার অবকাঠামো তৈরি করলো। শিনকানসেন (পৃথিবীর দ্রুততম ট্রেন) টানলো, বড় বড় শহরগুলোকে হাইওয়ে দিয়ে কানেক্ট করলো। শত শত ফ্লাইওভার তৈরি হলো, পাহাড়ের ভেতরে সমুদ্রের নিচে টানেল তৈরি হলো। মজার ব্যাপারটি হলো- বিদেশ থেকে কোনো শ্রমিক আমদানি করলো না।
কোম্পানিগুলোর ম্যানেজার বাইরে থেকে আনলো না। টয়োটা, হোন্ডা, তোসিবা, সনি, হিটাচি এমন শত শত কোম্পানি কাজ করে দিলো নিজেদের লোক দিয়ে। সিইও থেকে শুরু করে ম্যানেজার, শ্রমিক সবই জাপানি। নিজেদের কর্মদক্ষতা বাড়লো, অভিজ্ঞতা বাড়লো। এই কোম্পানিগুলো কোথাও টেন্ডারে অংশগ্রহণ করলে বা কোনো কর্মচারী চাকরিতে আবেদন করলে কেউ বলতে পারবে না- যাহ তোদের অভিজ্ঞতা নেই, আগে অভিজ্ঞতা নিয়ে আয়, তারপর চাকরি।
জিডিপি হু হু করে বাড়তে লাগলো। ধারের টাকা ফেরত দিয়ে ২০ বছরের মাথায় আমেরিকাকে, বিশ্বব্যাংকে উল্টো ঋণী করে ফেললো। শুরু থেকেই জাপান বাইরে থেকে কোনো প্রডাক্ট কেনেনি। টেকনোলজি আমদানি করেছে।
ধরুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যকলাপ ধারণ করার জন্য ক্যামেরা লাগবে। ওনারা তিনজন নয় ছয়জন লোক পাঠাবেন। ক্যামেরা যাচাই বাছাই করার জন্য নয়। ক্যামেরা কিভাবে বানাতে হয় সেই টেকনোলজি শিখে মগজে ভরে আনার জন্য। যেন দেশে এসে শুধু প্রধানমন্ত্রীর জন্যই নয়, সাধারণ জনগণ ও এফোর্ড করতে পারে এমন ক্যামেরা বানাতে পারেন। নিজ দেশে কাজে লাগলে অন্য দেশেও কাজে লাগবে। রপ্তানি করো, আরো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করো। জিডিপি বাড়াও।
মাছ চাইলেই মাছ নয়, মাছ ধরার কৌশলটা শিখিয়ে দাও।
২. মালয়েশিয়ার মাহাতির মুহম্মদ জাপানে পড়াশোনা করেছেন। ক্যাপাসিটি বিল্ড করার জাপানিদের এই কৌশলটি শিখে গেলেন। আশি ও নব্বইয়ের দশকে স্ট্রাটিজিক্যালি দলে দলে মালয় গোষ্ঠীকে বিদেশে পাঠালেন। পড়াশোনার জন্য। স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর জন্য। আমেরিকা, ইউরোপ আর জাপান। বিদেশ থেকে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই সেই বিদ্যা কাজে লাগানোর মতো জায়গায় সেট করে দিলেন। প্রোডাক্টিভিটি বাড়লো, আয় বাড়লো। ম্যানেজার শ্রেণির লোক তৈরি হলো। বিদেশ থেকে যা আমদানি করলো তা হলো শ্রমিক শ্রেণির লোক। যোগাযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসার অবকাঠামো তৈরি হলো। নিজের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ালেন। এখন আর মালয় ছাত্রদের তেমন বিদেশে যেতে হচ্ছে না। বরং বাইরে থেকে মালয়েশিয়াতে বিদেশি ছাত্র আসা শুরু করেছে। চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে হচ্ছে না।
জাপানি কোম্পানিগুলোকে ইনভেস্ট করার উইন উইন সিচুয়েশন তৈরি করে দিলেন। জাপানিরা ইনভেস্ট করলেন। গাড়ি কোম্পানি, হোম ইলেক্ট্রনিক্স কোম্পানি। মাহাতির এর দল স্ট্রাটিজিটা এমনভাবে করলেন যাতে টেকনোলজিটা ট্রান্সফার হয়। স্কিল ডেভেলপমেন্ট হয়। ৫০ বছরে জাপান যা টেকনোলজি ডেভেলপ করেছে তা যেন পাঁচ বছরে ট্রান্সফার হয়। তার ফলাফল দেখেন। ’৮৫-র দিকে মালয়েশিয়ান ব্র্যান্ডের প্রোটন সাগা (মিতসুবিশি জয়েন্ট ভেঞ্চার) গাড়ি বাজারে এলো।
আর আমরা আমাদের মন্ত্রী, এমপিদের জন্য বিনা ট্যাক্সে কিভাবে গাড়ি আমদানি করতে পারি সেই পলিসি বানিয়ে দিলাম। অথচ আমাদের প্রগতি, র্যাংগস বা সদ্য ওঠা ওয়ালটন দিয়ে গাড়ির ১০% জিনিস ও তৈরি করে শুরুটা করলে কেমন হতো? ইতিমধ্যে মেইড ইন বাংলাদেশ একটা ব্র্যান্ড বেরিয়ে আসতো না? কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান হতো না? টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট, স্কিল ডেভেলপমেন্ট হতো না? সেই শুরুটা আজো সম্ভব। বেটার লেইট দ্যান নেভার।
ক্যামেরা থেকে শুরু করে হোম-ইলেক্ট্রনিক্সের এমন কোনো জাপানি প্রোডাক্ট নেই যাতে মেইড ইন মালয়েশিয়া লেখা নেই। একবার ম্যানচেস্টার থেকে জাপানি ফ্লাইটে করে জাপান ফিরছি। মুসলিম হালাল ফুড অর্ডার দিয়ে রেখেছিলাম। দেখি বাক্সে হালাল একটা সিল দেয়া। লেখা Certified by MHCTA (Malaysian Halal Consultation and Training Agency)। কত জায়গায় এদের বিচরণ।
৩. ২০১০ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। বাংলাদেশের একজন নামকরা অর্থনিতিবিদ গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। জেমস ওয়াট নামের যে বৈজ্ঞানিক স্টিম ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছিলেন, তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন ইন্সট্রুমেন্ট মেকার ছিলেন। গ্লাসগো শহরটা ঘুরিয়ে দেখালেন। শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা, ওয়াটার সাপ্লাই, পার্ক, টাউন হল ইত্যাদি। গ্লাসগো সেন্ট্রাল রেলওয়ে স্টেশনটা তৈরি হয়েছে ১৮৭৯ সালে। অন্যান্য অবকাঠামোগুলোও একই সময়ের তৈরি। বৃটিশ সরকার আমাদের দেশগুলো থেকে ট্যাক্স কালেক্ট করেছেন আর ব্যয় করেছেন জনস্বার্থে। অর্থনিতিবিদ বললেন, আর আমাদের অবস্থা দেখেন- শাহজাহান সাহেব আমাদের অবকাঠামোতে মনোযোগ না দিয়ে বানালেন তাজমহল, নিজের জন্য। জনগণের জন্য নয়। শায়েস্তা খাঁ টাকায় আট মণ চাল খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। যারা কিনলো তাদের উপকার হলো, কিন্তু যে চাল তৈরি করলো সেই কৃষকের বারোটা বাজলো। আট মণ চাল মানে ১৪ মণ ধান। ১৪ মণ ধান বিক্রি করে মাত্র এক টাকা আয় হতো। গরিব কৃষক গরিবই রয়ে গেল।
১৯৯৬ সালের কথা l ভারতে আইটি সেক্টরে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বেড়েই চলছে। ভারতের সরকার বড় তিনটি কোম্পানির প্রধানদের ডাকলেন। ইনফোসিস, টাটা আর আজিম প্রেমজির উইপ্রোকে। ডেকে বললেন, দেশের উন্নতির জন্য আপনাদের কন্ট্রিবিউশন অনেক। সরকারের কাছে কী আপনাদের কিছু চাওয়ার আছে? তিন কোম্পানিই অবাক হলেন। বললেন, আমাদের একমাস সময় দেন। আমরা একটা লিস্ট দেব। ওনারা এক সপ্তাহ পরেই একটা উইশ লিস্ট দিলেন। তিন কোম্পানির তিন দাবি- (ক) Stay away from us (খ) Stay away from us (গ) Stay away from us।
জাপানের জাইকা আমাদের অনেক সাহায্য করেন। আমরা খুশি।
এই খুশিটাকে স্বল্পমেয়াদী না করে দীর্ঘমেয়াদী করা চাই। শুনে থাকবেন বছর দুই আগে জাপানি সরকারের সঙ্গে আমাদের ৬০ বিলিয়ন ইয়েন এর একটা চুক্তি সই হয়েছে। বলেন তো দেখি এই টাকা কী সাহায্য? না কী ধার? ধার নিচ্ছে কে ফেরত দিচ্ছে কে? আমরা যদি ধারই নিয়ে থাকি, তাহলে এই টাকাটা কন্ট্রোল করছে কে? প্ল্যান করছে কে, ইমপ্লিমেন্ট করছে কে? কতটাকার প্রোডাক্ট কিনছি? কত টাকার টেকনোলজি কিনছি? কতটাকার স্কিল ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে? টাকাটা ফেরত দিচ্ছি কবে?
জাপান আমাদের একটা বন্ধু দেশ। প্রোডাক্ট না চেয়ে টেকনোলজি চাইলে ওনারা ‘না’ করবেন না। আমরা মাছ চাচ্ছি না কি মাছ ধরার টেকনোলজি চাচ্ছি, এই সিদ্ধান্ত দেয়ার দায়িত্ব আমাদের।
লেখা# সংগ্রহ করা ।
কিন্তু মাছ ধরার কৌশলটা জানার কারণে সে সারা জীবন মাছ খেতে পারলো।
আপনি কী চাইবেন? মাছ? না কী মাছ ধরার কৌশল?
১. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল জাপান। যোগাযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি কোনো অবকাঠামোই তো অবশিষ্ট ছিল না। ছিল না তেমন কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ। দেশটি নিজের পায়ে দাঁড়াতে বিশ্বব্যাংক থেকে টাকা ধার নিলো। সেই টাকা দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, চিকিৎসার অবকাঠামো তৈরি করলো। শিনকানসেন (পৃথিবীর দ্রুততম ট্রেন) টানলো, বড় বড় শহরগুলোকে হাইওয়ে দিয়ে কানেক্ট করলো। শত শত ফ্লাইওভার তৈরি হলো, পাহাড়ের ভেতরে সমুদ্রের নিচে টানেল তৈরি হলো। মজার ব্যাপারটি হলো- বিদেশ থেকে কোনো শ্রমিক আমদানি করলো না।
কোম্পানিগুলোর ম্যানেজার বাইরে থেকে আনলো না। টয়োটা, হোন্ডা, তোসিবা, সনি, হিটাচি এমন শত শত কোম্পানি কাজ করে দিলো নিজেদের লোক দিয়ে। সিইও থেকে শুরু করে ম্যানেজার, শ্রমিক সবই জাপানি। নিজেদের কর্মদক্ষতা বাড়লো, অভিজ্ঞতা বাড়লো। এই কোম্পানিগুলো কোথাও টেন্ডারে অংশগ্রহণ করলে বা কোনো কর্মচারী চাকরিতে আবেদন করলে কেউ বলতে পারবে না- যাহ তোদের অভিজ্ঞতা নেই, আগে অভিজ্ঞতা নিয়ে আয়, তারপর চাকরি।
জিডিপি হু হু করে বাড়তে লাগলো। ধারের টাকা ফেরত দিয়ে ২০ বছরের মাথায় আমেরিকাকে, বিশ্বব্যাংকে উল্টো ঋণী করে ফেললো। শুরু থেকেই জাপান বাইরে থেকে কোনো প্রডাক্ট কেনেনি। টেকনোলজি আমদানি করেছে।
ধরুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যকলাপ ধারণ করার জন্য ক্যামেরা লাগবে। ওনারা তিনজন নয় ছয়জন লোক পাঠাবেন। ক্যামেরা যাচাই বাছাই করার জন্য নয়। ক্যামেরা কিভাবে বানাতে হয় সেই টেকনোলজি শিখে মগজে ভরে আনার জন্য। যেন দেশে এসে শুধু প্রধানমন্ত্রীর জন্যই নয়, সাধারণ জনগণ ও এফোর্ড করতে পারে এমন ক্যামেরা বানাতে পারেন। নিজ দেশে কাজে লাগলে অন্য দেশেও কাজে লাগবে। রপ্তানি করো, আরো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করো। জিডিপি বাড়াও।
মাছ চাইলেই মাছ নয়, মাছ ধরার কৌশলটা শিখিয়ে দাও।
২. মালয়েশিয়ার মাহাতির মুহম্মদ জাপানে পড়াশোনা করেছেন। ক্যাপাসিটি বিল্ড করার জাপানিদের এই কৌশলটি শিখে গেলেন। আশি ও নব্বইয়ের দশকে স্ট্রাটিজিক্যালি দলে দলে মালয় গোষ্ঠীকে বিদেশে পাঠালেন। পড়াশোনার জন্য। স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর জন্য। আমেরিকা, ইউরোপ আর জাপান। বিদেশ থেকে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই সেই বিদ্যা কাজে লাগানোর মতো জায়গায় সেট করে দিলেন। প্রোডাক্টিভিটি বাড়লো, আয় বাড়লো। ম্যানেজার শ্রেণির লোক তৈরি হলো। বিদেশ থেকে যা আমদানি করলো তা হলো শ্রমিক শ্রেণির লোক। যোগাযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসার অবকাঠামো তৈরি হলো। নিজের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ালেন। এখন আর মালয় ছাত্রদের তেমন বিদেশে যেতে হচ্ছে না। বরং বাইরে থেকে মালয়েশিয়াতে বিদেশি ছাত্র আসা শুরু করেছে। চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে হচ্ছে না।
জাপানি কোম্পানিগুলোকে ইনভেস্ট করার উইন উইন সিচুয়েশন তৈরি করে দিলেন। জাপানিরা ইনভেস্ট করলেন। গাড়ি কোম্পানি, হোম ইলেক্ট্রনিক্স কোম্পানি। মাহাতির এর দল স্ট্রাটিজিটা এমনভাবে করলেন যাতে টেকনোলজিটা ট্রান্সফার হয়। স্কিল ডেভেলপমেন্ট হয়। ৫০ বছরে জাপান যা টেকনোলজি ডেভেলপ করেছে তা যেন পাঁচ বছরে ট্রান্সফার হয়। তার ফলাফল দেখেন। ’৮৫-র দিকে মালয়েশিয়ান ব্র্যান্ডের প্রোটন সাগা (মিতসুবিশি জয়েন্ট ভেঞ্চার) গাড়ি বাজারে এলো।
আর আমরা আমাদের মন্ত্রী, এমপিদের জন্য বিনা ট্যাক্সে কিভাবে গাড়ি আমদানি করতে পারি সেই পলিসি বানিয়ে দিলাম। অথচ আমাদের প্রগতি, র্যাংগস বা সদ্য ওঠা ওয়ালটন দিয়ে গাড়ির ১০% জিনিস ও তৈরি করে শুরুটা করলে কেমন হতো? ইতিমধ্যে মেইড ইন বাংলাদেশ একটা ব্র্যান্ড বেরিয়ে আসতো না? কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান হতো না? টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট, স্কিল ডেভেলপমেন্ট হতো না? সেই শুরুটা আজো সম্ভব। বেটার লেইট দ্যান নেভার।
ক্যামেরা থেকে শুরু করে হোম-ইলেক্ট্রনিক্সের এমন কোনো জাপানি প্রোডাক্ট নেই যাতে মেইড ইন মালয়েশিয়া লেখা নেই। একবার ম্যানচেস্টার থেকে জাপানি ফ্লাইটে করে জাপান ফিরছি। মুসলিম হালাল ফুড অর্ডার দিয়ে রেখেছিলাম। দেখি বাক্সে হালাল একটা সিল দেয়া। লেখা Certified by MHCTA (Malaysian Halal Consultation and Training Agency)। কত জায়গায় এদের বিচরণ।
৩. ২০১০ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। বাংলাদেশের একজন নামকরা অর্থনিতিবিদ গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। জেমস ওয়াট নামের যে বৈজ্ঞানিক স্টিম ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছিলেন, তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন ইন্সট্রুমেন্ট মেকার ছিলেন। গ্লাসগো শহরটা ঘুরিয়ে দেখালেন। শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা, ওয়াটার সাপ্লাই, পার্ক, টাউন হল ইত্যাদি। গ্লাসগো সেন্ট্রাল রেলওয়ে স্টেশনটা তৈরি হয়েছে ১৮৭৯ সালে। অন্যান্য অবকাঠামোগুলোও একই সময়ের তৈরি। বৃটিশ সরকার আমাদের দেশগুলো থেকে ট্যাক্স কালেক্ট করেছেন আর ব্যয় করেছেন জনস্বার্থে। অর্থনিতিবিদ বললেন, আর আমাদের অবস্থা দেখেন- শাহজাহান সাহেব আমাদের অবকাঠামোতে মনোযোগ না দিয়ে বানালেন তাজমহল, নিজের জন্য। জনগণের জন্য নয়। শায়েস্তা খাঁ টাকায় আট মণ চাল খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। যারা কিনলো তাদের উপকার হলো, কিন্তু যে চাল তৈরি করলো সেই কৃষকের বারোটা বাজলো। আট মণ চাল মানে ১৪ মণ ধান। ১৪ মণ ধান বিক্রি করে মাত্র এক টাকা আয় হতো। গরিব কৃষক গরিবই রয়ে গেল।
১৯৯৬ সালের কথা l ভারতে আইটি সেক্টরে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বেড়েই চলছে। ভারতের সরকার বড় তিনটি কোম্পানির প্রধানদের ডাকলেন। ইনফোসিস, টাটা আর আজিম প্রেমজির উইপ্রোকে। ডেকে বললেন, দেশের উন্নতির জন্য আপনাদের কন্ট্রিবিউশন অনেক। সরকারের কাছে কী আপনাদের কিছু চাওয়ার আছে? তিন কোম্পানিই অবাক হলেন। বললেন, আমাদের একমাস সময় দেন। আমরা একটা লিস্ট দেব। ওনারা এক সপ্তাহ পরেই একটা উইশ লিস্ট দিলেন। তিন কোম্পানির তিন দাবি- (ক) Stay away from us (খ) Stay away from us (গ) Stay away from us।
জাপানের জাইকা আমাদের অনেক সাহায্য করেন। আমরা খুশি।
এই খুশিটাকে স্বল্পমেয়াদী না করে দীর্ঘমেয়াদী করা চাই। শুনে থাকবেন বছর দুই আগে জাপানি সরকারের সঙ্গে আমাদের ৬০ বিলিয়ন ইয়েন এর একটা চুক্তি সই হয়েছে। বলেন তো দেখি এই টাকা কী সাহায্য? না কী ধার? ধার নিচ্ছে কে ফেরত দিচ্ছে কে? আমরা যদি ধারই নিয়ে থাকি, তাহলে এই টাকাটা কন্ট্রোল করছে কে? প্ল্যান করছে কে, ইমপ্লিমেন্ট করছে কে? কতটাকার প্রোডাক্ট কিনছি? কত টাকার টেকনোলজি কিনছি? কতটাকার স্কিল ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে? টাকাটা ফেরত দিচ্ছি কবে?
জাপান আমাদের একটা বন্ধু দেশ। প্রোডাক্ট না চেয়ে টেকনোলজি চাইলে ওনারা ‘না’ করবেন না। আমরা মাছ চাচ্ছি না কি মাছ ধরার টেকনোলজি চাচ্ছি, এই সিদ্ধান্ত দেয়ার দায়িত্ব আমাদের।
লেখা# সংগ্রহ করা ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ধূসর প্রাচীর (তাহসিন নাবিল) ২৪/১১/২০২০
-
শ.ম.ওয়াহিদুজ্জামান ২৪/১০/২০২০অসাধারণ।
-
আমি-তারেক ১২/১০/২০২০Sundor bornona...!!:):)
-
মুহাম্মদ ইসলাম উদ্দিন শরীফ ৩০/০৯/২০২০অসাধারণ লেখনী, যারাই বড়শী নিবে তারাই লাভবান হবে।
-
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ২৮/০৯/২০২০চমৎকার উদাহরণ!
-
আব্দুর রহমান আনসারী ২৫/০৯/২০২০বেশ উপভোগ্য
-
রেদোয়ান আহমেদ ১৪/০৯/২০২০দারুণ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ০৭/০৯/২০২০বেশ উপভোগ্য
-
দীপঙ্কর বেরা ০৫/০৯/২০২০বাহ
সুন্দর -
রেদোয়ান আহমেদ ৩১/০৮/২০২০বেশ
-
শফিকুল মুহাম্মদ ইসলাম ৩০/০৮/২০২০Valo likhati pore, sadhubad jini likhechilen.
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ৩০/০৮/২০২০লেখকের নাম দিলে ভালো হতো।
বাস্তবসম্মত লেখা। -
আলম সারওয়ার ৩০/০৮/২০২০অসাধারণ লিখনি
ফয়জুল মহী,