করোনায় একজন প্রবাসী
করোনায় একজন প্রবাসী ।
৬ষ্ঠ পর্ব।
টেলিভিশনের রিমোট হাতে নিয়েই ফকির শাহ চালু করে টিভি এমনি গান চলতে থাকে । “আনা হাব্বাক গলতান ---”(আমার ভালোবাসা ভুল---) । ফকির শাহ আমাকে অর্থ বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু ক্ষুধায় আমার পেট জ্বলে আর ফকির শাহ আমাকে আরবী গানের অর্থ তালিম দেয়। মাথা গরম হয়ে গেলেও সয়ে যেতে হয় কারণ ফকির শাহ ভারতীয় বাঙ্গালী দুই/ একদিন খাবে তাই অনেক কিছু। আমি বলে ফেলি ফকির ভাই আর তোমার গান শুনতে আমার কাছে ভালো লাগছে না ক্ষুধায় আমার জান শেষ, চলো খেয়ে আসি । ফকির শাহ স্মিত মুখ বাঁকা করে সাথে আমিও। হোটেলে কাজ করার সময় সাড়ে বারটা হতে এক‘টার ভিতর খাওয়ার খেতে দিতো। কয়েক মাস এই নিদিষ্ট সময় খেতে খেতে এখন তাই ক্ষুধায় দেরি সহ্য হচ্ছে না। কয়েক দিন দুপুরে খেপছা (বার-বি- কিউ মোরগ এবং তৈলাক্ত ভাত ) খেতে ভালোই লেগেছে , রাতেও সেই একই খাবার। তবে এরাবিয়ান অনেক প্রসিদ্ধ খাবার বিক্রি হয় এই হোটেলে। শিক কাবাব ও তুর্কী সালাদ আমার প্রিয় হয়ে যায় কিন্তু দাম বেশী বলে কর্মীদের খেতে দেয় না । এই দেশের মানুষ কখনো কখনো প্রয়োজনের তুলনায় বেশী খাবার অর্ডার করে। আবার কখনো কখনো একটু আধটু খেয়ে চলে যায় । সেই খাবার কর্মী হিসাবে খাওয়া যায় আর আমার ভালো লাগতো বলে শিক কাবাব খেতে চাইতাম। এই দেশে তুর্কীস্থান , ইয়েমেন এবং আফগানিস্তানের মানুষ খাবার হোটেলের জমজমাট ব্যবসায় জড়িত। আফগানীদের বুকারী হোটেল বাঁশপতি চাউলের ভাত এবং সাথে ভেড়ার মাংস , স্যুপ ও কালো বেগুনের ভর্তা প্রসিদ্ধ এখানে। অনেক সময় দুপুরে খেতে গেলে লাইন ধরতে হয়, এইসবে অনেক বাংলাদেশীও কাজ করে। ম্যাকডোন্সাস, কেএফসি , পিৎজা হাট, টিক্কা কাবাব এইসব আমেরিকা ইউরোপের খাবার হোটেলের সাথে এরাবিয়ানদের হারফি ,কদু , মিসওয়ার ও আলি বাবা ফাস্ট ফুড় চলে সমান তালে। আরবী ভাষা লোকদের হোটেলের পাশাপাশি পাকিস্তানি , ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশী লোকদের খাবার হোটেল আছে। আছে হায়দারাবাদের মিষ্টি পান , চা , বিরায়ানি আছে পাকিস্তানের কড়াই (ভাজা মাংস) , বিরায়ানি ও পালুদা । আছে বাংলাদেশের চা সিংগারা , চমুছা ও তেহারি। বড় বড় শহরে গড়ে উঠেছে মিনি বাংলাদেশ রিয়াদে বাথা ও হারা , দাম্মামে সাইকো , জেদ্দায় গুরাইয়া । আছে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তবে এইসব সরকারিভাবে সৌদিয়ানদের নামে তালিকাভুক্ত , তাই তারা লভ্যাংশ পায় ঘরে বসে। ব্যবসা বাণিজ্যের পাশাপাশি বিয়েশাদিও করছে ভারত উপমহাদেশের লোক। মক্কায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা আছে বাংলাদেশের পাসপোর্টধারি , এদের ভিতর এমনও আছে সৌদিতে বসবাসের পঞ্চাশ বছর হয়েছে গিয়েছে , যে কারণে পরিবার পরিজন সবাই সৌদিতে। এরা নানা অপকর্মে জড়িত , এদের ভাষা চিটাং এর সাথে মিল হওয়ায় বুঝা যায় না তবে চিটাং এর লোক মক্কায় সবচেয়ে বেশী । এরা অনেকে ব্যবসা বাণিজ্য করে ভালো অবস্থানে আছে। মক্কা ও মদিনায় অনেকে বাড়ির ব্যবসায় জড়িত। রমজানে ওমরা আর কোরবানে হজ্জ এই দুই সময় বাড়ি ভাড়া এবং অন্যান্য কাজ জমজমাট থাকে বলে বৈধ অবৈধভাবে প্রচুর রোজগার করতে পারে সবাই । খাবার হোটেলে ,ফল ফ্রুটের দোকানে উপছে পড়া ভিড় থাকে । পাকিস্তানিরা চুল কাটে যেন কোদাল দিয়ে , আফগানিরা বড় বড় রুটি বিক্রি করে লাইন দিয়ে । বাংলাদেশিরা চুরি করে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাস্তায় কিংবা বাসায় পানি এবং আদা কাঁচা খাবার বিক্রি করে।
ফকির শাহ চ্যানাল পরিবর্তন করে এমবিসি বলিউড দেয়। শালমান খানের দাবাং চলতেছে আমি ও ফকির শাহ টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমি দেশে থাকতে ক্যাবল টিভিতে হিন্দি ছবি দেখার নেশায় ছিলাম। শালমান খানের কোন ছবিই দেখা বাদ পড়তো না এখনোও দাবাং ভাই আমাকে আকৃষ্ট করে । পেটের ক্ষুধা ভুলে আমি মাহীয়া গিলের চিকন কোমর দেখি । ভারতীয় নায়ক নায়কা ব্যায়াম করে স্লিম থাকে আমাদের দেশের তারা যেন এক একটা আঠার মোটা মোটা বস্তা । এমবিসি গ্রুপের অনেক চ্যানাল , এমবিসি টু ও এমবিসি এ্যাকশান এই দুইটি চ্যানেলে হলিউড ছবি প্রচার করে চব্বিশ ঘন্টা আর এমবিসি বলিউডে হিন্দি ছবি ও সিরিয়াল চব্বিশ ঘন্টা প্রচার করে। এইসব বিশ্বমানের চ্যানেলে বিজ্ঞাপণ যতসামান্য প্রচার করে যা আমাদের দেশের চ্যানেল চিন্তাও করতে পারবে না । এই মিশরী চ্যানেলের সমপর্ষায় আছে এলবিসি লেবাননের চ্যানেল। সৌদি আরব , আরব আমিরাত , ওমান ও বাহারাইনের বিনোদন কিংবা খবরের শত শত চ্যানেল চলে , শুধু চলে না আল জাজিরা । হাজার হাজার রিয়েল খরচ করে কার্ডের মাধ্যমে চালায় খেলার চ্যানেল। আমাদের দেশে যে রকম ক্রিকেট খেলা প্রিয় তাদের প্রিয় ফুটবল। আল হেলাল , নাসের ও ইত্তেহাদ সৌদি আরবের নামকরা ক্লাব । আমাদের দেশে নব্বই দশকে যেমন আবাহনী মোহামেড়ান এর খেলা হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তো । যেমন বাঘ এবং সিংহের লড়াই হতো সৌদিতেও ঠিক সেইরকম এখনো। আমেরিকা কিংবা ইউরোপীয় ক্লাবেরও প্রচুর সমর্থক আছে । বার্সালোনা এবং রিয়াল মাদ্রিদের খেলা হলেও উত্তজেনা দেখা যায় রাস্তাঘাটে । সৌদি আরব বিশ্ব কাপেও খেলেছে দুই একবার । তবে অনেক চেষ্টা করেছে কাতারে যেন বিশ্ব কাপ খেলা আয়োজন বিঘ্ন ঘটে তারা সফল হয়নি। মধ্যপাচ্যের রাজনীতিতে এরা কিন্তু শয়তানের বাবা ।
মানুষ হজ্জে গিয়ে শয়তানকে পাথর মারা হজ্জের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু ইয়েমেনে হাজার হাজার শিশু তাদের বোমার আঘাতে মারা যাচ্ছে অথচ তাদের কেউ পাথর মারার নেই। শিয়া সুন্নির নোংরা রাজনৈতিক খেলায় মেতে আছে ইরান ও সৌদি। আল্লাহের ঘর তাদের কাছে কতটুকু নিরাপদ । এই ঘরকে পুজি করে তারা যে রোজগার করছে তা ব্যবহার করছে অগণিত নিস্পাপ মানব শিশু হত্যায়। আমরা তাদের দেশের গিয়ে নিজেকে পাপ মুক্ত করতে চেষ্টা করি। কিন্ত তাদেরকে কে মুক্ত করবে পাপ হতে। ইসলামধর্মীয় মানুষের আরাধনার স্থান মক্কা মদিনা নিয়ে তারা গর্বিত । অলৌকিক পানি জমজম পুরা বিশ্বের মুসলিমের কাছে স্বর্গীয় গঙ্গা । যে পানি পৃথিবীর সব পানি হতে বিশুদ্ধ ও মান সম্মত যে পানিতে আল্লাহ মানব দেহের সব উপকারী উপধান দিয়ে দিয়েছেন । সেই পানির জায়গার মালিক সৌদি আরবে মানুষেরই বাক স্বাধীনতা নাই। তবে হাই আদেশ দিয়েছে পাপ্ত বয়স্ক নারী ইচ্ছামত আলাদা বাড়ি নিয়ে বসবাস করতে পারবে । মনে হয় বর্বর জাতি কামুকে একধাপ উপরে উঠলো। (চলবে)।
করোনায় একজন প্রবাসী ।
৭ম পর্ব।
ভাত খেতে খেতে টুকটাক কথা হয় ফকির শাহ এর সাথে। সে বুঝতে পারে আমি স্বস্তিবোধ করতেছি না কথা বলতে , তাই জলদি খেয়ে উঠে যাই। খাওয়া শেষে সিগারেট টানা আমার সেই পুরাতন অভ্যাস আজও ব্যতিক্রম হয়নি। ফকির শাহ সিগারেটে অভ্যস্ত নয় (অনেক ভালো অভ্যাস ) আমাকেও এই ধুমপান ছাড়তে হবে । অনেক চেষ্টা করি কিন্ত পারি না , আর হয়তো পারবো না । এই মরুভূমিতে ফকির শাহকে না ফেলে বোবা হয়ে যেতাম ছাগল আর ভেড়ার সর্দার হয়ে।
ঘুম আসে না একটুও ,হোটেলের কাজে আসার পর হতে দুপুরে ঘুম যাওয়ার সুযোগ হয়নি কিন্তু চোখ জুড়ে নেমে আসতো প্রচণ্ড অবসাদ । আর আজ ঘুমের সুযোগ পেয়েও ঘুম আসছে না , চোখে আসছে বাংলাদেশ । কিভাবে শোধ দিবো ঋণ , যদি ধরা পড়ি পুলিশের হাতে সব স্বপ্ন আশা ভরসা চুরমার হয়ে যাবে। কেন যে বিদেশ নামক বিপদে পা বাড়ালাম আজ টের পাচ্ছি , হাজারো মানুষ সৌদি আরব এসে বাড়ি ঘর দালান করেছে আর আমি প্রশান্ত মহাসাগরে ডুবতে বসেছি। বাদামতলীর সবজির আড়তেই আমি ভালো ছিলাম , নিজ দেশে লতাপাতা বিক্রি করে পেট চালানোও শান্তি এও সম্মানের। মা বাপ ভাইবোন ও বউ বাচ্চা নিয়ে শান্তিতে ছিলাম এখন বুঝতেছি। এখন আর আড়তদারও কাজে নিবে না । সৌদি হতে দেশে যাওয়াও আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে কারণ আমার নেই ইকামা (পরিচয় পত্র) বাংলাদেশি হিসাবে পাসপোর্টই আছে আমার কাছে। ইকামা না থাকলে জেল জরিমানা হবে তাও যদি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হই না হয় এইভাবে থাকতে হবে মাসের পর মাস বছরের পর বছর । ইকামা না থাকলে অসুখ বিসুখ হলে যেতে পারবো না কোন হাসপাতালে । ইস ! কেন যে মোস্তাক মিয়ার সাথে পরিচয় হলো ,কেন যে বিদেশ আসার কথা মাথায় আসলো । আজ আমার কান্নার আওয়াজও কেউ শুনবে না ।
আবুল কালাম উঠে যাও কাজ করতে হবে । চলো আমি তোমাকে গানাম (ভেড়া) এর কাজ দেখিয়ে দিবো আমারও অন্য কাজ আছে , ফকির শাহ আমাকে ডাকে তুলে বিকাল হয়ে যাওয়ায় । তুমি আমার সাথে খাওয়া দাওয়া করলেও রাতে ঘুমাবে বাহিরে খেইমায় (তাবু) কারণ গানাম (ভেড়া) পাহারায় থাকতে হবে । দুপুরে খেয়ে এখানে ঘুমাবে আর রাতে খেয়ে চলে যাবে এবং ঘুমানোর আগে গানাম দেখবে আবার রাতে উঠে একবার দেখবে । আমি চুপচাপ ফকির শাহর কথা শুনি সে যেটা বলতেছে ঠিক সেইভাবে কাজ করতে হবে কারণ সে পুরাতন হিসাবে সব জানে । কিন্তু এই গরমে কিভাবে খেইমায় ঘুমাবো ভয় মন খারাপ হয়ে গেল । জানি মানুষ অভাসের দাস , আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যাবে কিন্তু এই দুই /চার রাত ঘুমানো কঠিন হবে গরমের কারণে। ফকির শাহ পানির মোটর চালু করে খেজুর গাছ এবং অন্যান্য গাছে পানি ছেড়ে দেয় মাঝখানে দূর্বাঘাসে ফোয়ারার মত পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে অটোমেটিক । আমি ফকির শাহর সাথে খেজুর গাছসহ অন্য গাছে পানি ছেড়ে দিই । এখানে বাংলাদেশিরা বিভিন্নজন বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত কিন্তু রাই গানাম (ভেড়া পালক) খুর কম কারণ এই কাজ খুবই কষ্টকর । গভীর মরুভূমিতে ভেড়ার সাথেই তাবুতে থাকতে হয় মালিক দুই/একদিন পর পর খাবার ও পানি দিয়ে আসে আর মালিক না দিয়ে আসলে না খেয়ে পড়ে থাকতে হয় । তবে আমার ভাগ্য ভালো এসতারার (রেস্ট হাউজ ) এর সাথেই ভেড়া রাখা আর এসতারা হতে হেটে রোড়ে এসে দোকান হতে বাজার খরচ করা যায় ।
রেস্ট হাউজ হতে একটু দুরে গানামের সাবক (ভেড়ার ঘর ) চারিদিকে তারের বেড়া দেওয়া । পানির গাড়ি পাশেই রাখা ফকির শাহ গিয়েই পানি ছেড়ে দিল এমনি তৃষ্ণাত্ব কয়েকটা ভেড়া পানি খেতে চলে আসে হোতে (পানির পাত্র )। ফকির বলে আজ আমি সব কাজ করে তোমাকে দিখিয়ে দিবো , কাল হতে তুমি একা একা করবে তাই ভালো করে দেখে নাও। এখন খাদ্য পানি দেওয়া ছাড়া তেমন কাজ নাই কষ্ট হয় এবং কাজ বেশী হয় শীতের দিনে। তখন ৪বাচ্চা দেয় গানাম ,এখানে যেহেতু শীতকালে বৃষ্টি তাই শীত পড়ে বলে গানামের বাচ্চা সহ্য করতে পারে না মরে যায় এই জন্য বার বার দেখতে হয় গানাম। অনেক সময় বাচ্চা দেওয়ার পর পরই পরিস্কার করে দুধ খাওয়াতে হয় তখন এই প্রচণ্ড শীতে একা একা গানাম ধরতে কষ্ট হবে । খুব বিরক্ত লাগবে টকার জন্য এমন নোংরা কাজ সয়ে যেতে হয় । আবার শীত আসে আসে এমন সময় প্রচুর বৃষ্টি হলে মরুভূমিতে ঘাস জন্ম নেয় আর তখন সীমানাহীন মরুভূমিতে সৌদিয়ান গানাম নিয়ে এক স্থান হতে অন্য স্থানে দৌড়াতে থাকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য। তখন প্রচণ্ড হাওয়া ও শীতে কষ্ট হয় , মন চায় দেশে চলে যেতে কিন্তু মন চাইলে আর কি যাওয়া যায়। প্রচুর বৃষ্টি হলে ঘাসের সাথে কিছু কিছু অঞ্চলে আলুর মত একটা জিনিস মাটি ফেটে উঠে তাকে পেগা বলে রান্না করে খাওয়া যায় । ভালো করে পরিস্কার করে মাংসের সাথে রান্না করলে খুবই মজা হয় এইটি অত্যন্ত পুষ্টিকর করে সৌদিয়ান খুব পছন্দ করে । তখন গরিব সৌদি মরু অঞ্চলে খুজে বিক্রি করে ভালো পয়সা পায়।
হাফার আল বাতেন কুয়েতের সীমান্ত এলাকা তাই সেখানে কুয়েতিদের বসবাস বেশী। রাফা ,আর আর ইরাকের সীমান্ত । সৌদির সাথে বাহারাইন , কুয়েত , ইরাক , ইরান ,জর্দান এবং ইয়েমেন এর সীমান্ত । জেদ্দা হলো লোহিত মহাসাগরের তীরে যার একপাশে সুদান আর এই জেদ্দা হলো সৌদির সবচেয়ে বড় পর্যটন এলাকা। সাগরের কূল ঘেসে আছে রাজ প্রসাদ যার সুউচ্চ ঝর্ণা কয়েক কিলোমিটার দুর হতে দেখা যায় । হাফার আল বাতেন , রাফা ও আরআর শত শত ইরাকি আছে আশ্রিত যারা মরুভূমিতে তাবু টানিয়ে থাকে এরা ইরাক কুয়েত যুদ্ধের সময় আশ্রয় পেয়েছে। এর হতে কিছু লোক সৌদির নাগরিকত্ব পেয়েছে , যারা সরকারি চাকরী পাবে না দেশ ত্যাগও করতে পারবে না তবে বসবাস করতে পারবে ঘরবাড়ি করে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারবে। অনেক অনেক আগে বিভিন্ন দেশের যারা নাগরিকত্ব পেয়েছে তারা সব সুবিধা পাবে তবে এই সময় নাগরিকত্ব কেউ আর পাচ্ছে না । (চলবে ) ।
করোনায় একজন প্রবাসী ।
৮ম পর্ব।
এই সব ইরাকবাসীর তাবু আমাদের দেশের যাযাবর এর বস্তির মত । রৌদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে বস্তির কাঠ আর কাপড় জোড়াতালি হাজারের উপরে হয়েছে। হাফার আল বাতেন শহরের অতি দুরে আরআর রোড়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় হাজার হাজার বস্তি আছে এসব ইরাকিদের । বয়স পার হওয়া লাখো যুবক যুবতী এসব বস্তিতে বসবাস , দেনমোহরের চাপে পড়ে যৌবনকাল তছনছ তাদের । এরা ইরাকে ফিরে যায় না অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভয়ে তবে এরা বাহিরে সৌদিয়ানদের মত চলাফেরা করায় চিনা যায় না মরুদ্বিপের নিকৃষ্ট ঘরের বাসিন্দা যে। ছেলেমেয়ে এর বিয়ে শাদি না হলে এইসব ইরাকির কেউ কেউ দুই বউয়ের সংসারও করে । আরবী ভাষার লোকেরা নামাজে সুন্নত আদায় না করলেও চারটা বিয়ের যে সুন্নত আছে তা পালনে কম কসরত করে না । দেখে যেন মনে হয় টাকা আর আইন থাকলে দশটা বিয়ে করতো আর দশ মহিলার গর্ভে দশটা সন্তান জন্ম দিতে চেষ্টা করতো। বিয়ের পর হতে যেত দিন বউ সন্তান জন্মদানে সক্ষম ঠিক তেতদিন প্রতি বছরই সন্তান জন্ম দেয় । তবে আচার্য ব্যাপার হলো এইভাবে সন্তান জন্ম দিলেও আরো বহুকাল পরেও বাংলাদেশের মত এমন ঘনবসতিপূর্ণ হবে না। আগে আরো বেশী বেশী নাগরিক সুবিধা থাকলেও এখনো সরকার সঠিক পরিকল্পনা করে দেশকে পরিচালনা করার চেষ্টা করছে। যদিও বর্তমানে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা । এইবার বিশ্ব মহামারী করোনার প্রভাবে সব তছনছ হয়ে গিয়েছে তাই লক্ষ লক্ষ বিদেশী শ্রমিক হ্রাস করবে এবং সৌদিয়ান যেসব কাজ করতে সক্ষম সেইসব পদে তাদের নিয়োগ দিবে। সরকার তেলের উপর নির্ভরতা কমিয়ে আনার চেষ্টারত তাই কঠোর ধর্মীয় আইন শিথিল করে পর্যটক আকৃষ্ট করতে চাইতেছে । আগে নামাজের সময় সমস্ত কাজ বন্ধ করে দিয়ে রাস্তায় মৌলভিরা পুলিশ সাথে করে গাড়ি নিয়ে টহল দিতো আর হ্যান্ড মাইকে চিৎকার দিতো নামাজ নামাজ করে । কেউ নামাজ না পড়লে রাস্তায় ঘুরলে ধরে নিয়ে যেত নামাজ পড়ার ওয়াদা করিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে ছাড়তো আর এখন সেটা অতীত। বিদেশী শ্রমিকের বাসায় বাসায় মৌলভিরা হানা দিতো জুয়া খেলা আর নীল ছবির ভিডিও ক্যাসেট খোজার জন্য এখন সেটাও অতীত। আকর্ষণীয় জায়গা এবং উদার কালচার বিশ্বে তুলে ধরতে মরিয়া এখন সৌদি আরব।
সাগর তীরে গড়ে তুলবে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক শহর নিওম ( ) ৫০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে এই শহর গঠে তুলতে। সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে ভিশন ২০৩০, তবে সব উল্টাপাল্টা করে দিয়েছে বিশ্ব মহামারী করোনা । তারপরও তারা নিজের সম্পদ সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে দেশ পরিচালনায় ব্রত, তবে এই মহামারীর কবলে পড়ে অনেক বিদেশী শ্রমিক চাটাই করবে । আর আমরা দেশে ফেরত গিয়ে হয়তো না খেয়ে না পেয়ে হাহাকার করতে হবে । মধ্যপাচ্যে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে গিয়ে যুদ্ধের পিছনে খরচ করতে হচ্ছে মিলিয়ন মিলিয়ন রিয়াল । বিশেষ করে ইয়েমেন যুদ্ধে অনেক ব্যয় করতে হচ্ছে তারপরও সুষ্ঠুভাবে সমাধান হবে না আরেক কঠোর রাষ্ট ইরানের কারণে। ইয়েমেন সিরীয়া ও ইরাক আজ ধ্বংস মুসলিমদের এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় আর এই খেলা শুধু ক্ষমতার লোভেই । ইয়ানবু জাজান ইয়েমেনের সীমান্ত এলাকা জাজান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জায়গা । মাঝে মাঝে ইয়েমেনের শিয়ারা ( হুতি ) এইসব এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে থাকে যার কারণে ওইসব এলাকার মানুষ আতঙ্কের ভিতর থাকে। তবে সৌদি সাথে ইয়েমেনের সীমানা মহামারীকালীন ছাড়া সবসময় খোলা থাকে সাধারণ নাগরিক ভিসা নিয়ে বাসে চলাফেরা করতে কোন অসুবিধা হয় না । কুয়েত , আবু ধাবি , ওমান , বাহারাইনের নাগরিক এক দেশ হতে অন্যদেশে ভিসাহীন চলাফেরা করতে পারে এমন কি তারা সরকারি আইন মেনে ব্যবসা বাণিজ্য করছে। তুরস্ক ও মিশরের লোকজন স্থল পথে অনেকে যাতায়াত করে সৌদি আরব হতে তাদের অনেকে শ্রমিক শ্রেণীর।
সব ভেড়া এক জায়গা করে আটকানো রেখে তারপর খাবার দিতে হয় । অনেকগুলি পাত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে । এর মধ্যে কিছু পাত্রে গম আর কিছু পাত্রে ঘাস রাখে ফকির শাহ। ছোট ছোট বাচ্চা আলাদা করে বাঁধা রাখা হয়েছে যাতে খাবার খেতে অসুবিধা না হয় । খাবার দেওয়া শেষ হওয়ায় আমি ছেড়ে দিই ভেড়ার দল এমনি পাগলা কুকুরের মত দৌড় । একটার উপর একটা পড়ে কার আগে কে যাবে খেতে ! ফকির শাহ ঘাসের পাত্র পাহারা দিয়ে রাখলো আগে গম খেয়ে শেষ করার জন্য গম খাওয়া শেষ হলেই সরে যায় ফকির শাহ। কয়েকটা গানাম গম খেয়ে পানির দিকে ছুটে তবে দেরি করে না দৌড়ে ফিরে ঘাসের পাত্রে । এখন ছোট বাচ্চাও ছেড়ে দেয় দুধ খেতে তাই সব একসাথে । ভেড়ার দৌড়াদৌড়িতে ধুলাবালি উঠতে থাকে তাই গামছা দিয়ে ভালো করে মুখ বেধে নিতে হয়। গরম কালে কখনো কখনো প্রচণ্ডভাবে ধুলাবালি ঝড় হয় আর এইটি এতই জোরে আসে একদম অন্ধকার হয়ে যায় । এই ধুলাবালির কারণে মানুষের এ্যাজমা হয়ে যায় , হাঁচি কাশি হয়ে যায় ।
একটু দুরে কয়েকটা বেওয়ারিশ কুকুর গর্ত হতে উঠে এলো ফকির শাহ পাথর মেরে তাড়াতে গেল। এইসব পরিচয়হীন কুকুর মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ায় মরা ছাগল ভেড়ার খোজে। গরম সহ্য করতে না পারলে ভেড়ার পানির পাত্রে এসে ডুব দেয় তবে আমার ভয় রাতে তাবুতে ঢুকে কিনা তা নিয়ে । একটু পরে মাগরিব হবে ছাগল ভেড়া গম ঘাস খেয়ে শান্ত এখন ফকির ফিরে যায় তার কাজে আমিও তাবুতে হারিকেন জ্বালিয়ে দিই । (চলবে)
করোনায় একজন প্রবাসী ।
৯ম পর্ব ।
সব ভেড়া তারের বেড়ার ভিতর ঢুকানো হয় নিরাপদ রাখার জন্য। এখন সৌদিতে চুরি , ডাকাতি ও রাহাজানি হয় বিশেষ করে বাহিরের লোক রাস্তায় একা ফেলে টাকা পয়সা ও মোবাইল চিনতাই করে ক্ষেত্রবিশেষ গায়ে আঘাতও করে । বড় ছোট দোকান কিংবা শপিং মলে মুখোশ পরে ডাকাতি করে । অবশ্যই এখন রাস্তাঘাটে এবং শহরের আানাছে কানাছে সিসিটিভি লাগানো হচ্ছে । দোকানপাটে সিসিটিভি লাগানো ছাড়া এবং লাগানোর প্রমাণপত্র ছাড়া দোকান , ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালত করার অনুমতি দিচ্ছে না সরকার ।
নাইজেরিয়ান , সোমালিয়ান , ইথোপিয়ান এবং সুদানি ভয়ংকর সব কাজ করে । পাকিস্তানি মাদকের ব্যবসায় জড়িত ব্যাপকভাবে । আগে অনেক পাকিস্তানির শিরোচ্ছেদ করেছে শুধু মাদক ব্যবসার জন্য অবশ্যই অনেক দিন আগে তিন জন বাংলাদেশিও শিরোচ্ছেদ করেছে হত্যার দায়ে । এখানে পুরাতন লোহালক্কড় ও পুরাতন জিনিসপত্রের ব্যবসা করে অনেক বাংলাদেশি কোটি কোটি টাকা রোজগারর করেছে । ২০০৮ সালে রিয়াদে অপটিক ফাইবার চুরিতে ধরা পড়ে বাংলাদেশের লোক তখন হতে এই ব্যবসায় নজরদারি জোরদার করে । ফেনী সোনাগাজীর আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আবদুর রহিম এই ব্যবসায় জড়িত আছে এখনো এবং উনি একজন সফল ও সৎ ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিত ।
চারিদিকে ঘন কালো অন্ধকার আকাশ চাঁদহীন তারায় ভরপুর । কার্পেটটা বিছিয়ে দিয়ে বিছানা করলাম ঘুমানোর জন্য। গামছা কাঁধে নিয়ে বের হলাম ফকির শাহর কাছে যাওয়ার জন্য ,গোসল করে রাতে খেয়ে একবারে চলে আসবো । মরুভূমিতে এইরকম একা নিঃসঙ্গ নীরব হয়ে দিন মাস বছর পার করতেছে বহু মানুষ শুধু পরিবাবের সুখ সমৃদ্ধ জীবনের জন্য। ঝড় বৃষ্টি ,রৌদ খরা কিংবা শীতের বরফে আমার মত এমন শত শত রাখাল নিজেকে বিলীন করে মা বাপ , ভাই বোন , স্ত্রী ও সন্তানের মুখে অন্ন যোগান দিতে গিয়ে । এইসব রাখালের অাত্ন ত্যাগের মূল্য খুব কমই পায় । কখনো কখনো চরম অপমান অসম্মান , গৃহহীন কিংবা জীবনহানিও ঘটে ।
বাড়িতে টাকা লাগবে ছোট ছেলেটার জ্বর ভালো হচ্ছে না রাতে কাশির জন্য ঘুমাইতে পারে না । তাই শহরে কোন ভালো শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে হবে । কিন্তু মাসের মাঝখানে টাকা পাঠাবো কি করে তার উপর আমার আবার নতুন চাকরী । মনটা খুবই খারাপ লাগছে এই মরুভূমিতে কার কাছে টাকা চাইবো শহর এলাকা হলে লোকজনকে বলতে পারতাম কারো কাছে সাহায্য চাইতে পারতাম ।এইখানে ভেড়া আমি আর কলকাতার ফকির শাহ। তার সাথে ভাষার মিল হলেও আছে চিন্তা ও চেতনার অমিল । আর মাত্র দুই/একদিনের পরিচয়ে টাকা চাওয়াও ভালো লাগছে না । মন খারাপ হলে মুখে তা প্রকাশ পায় ফকির শাহ ধরতেে পারলো , মরুভূমিতে ভেড়ার রাখালর কাজে এসেছি বলে মন খারাপ করে আছি সে মনে করে আমিও কিছু বলি না । গোসল করে হালকা হলাম রং চায়ে চুমুক দিয়ে এয়ার কুলার বাতাসে এখন সজীব লাগছে অনেকটা ।
চায়ের কাপ হাতে খেইমায় (তাবুতে) বসলাম দুইজনে ফকির শাহ টেলিভিশনে এমবিসি বলিউড ধরলো অভিষেক অার ঐশ্বরিয়া রাই এর উমরাও ছবি চলছে । আমি রেখার উমরাও অগনিতবার দেখেছি কিন্তু ঐশ্বরিয়া রাই এর উমরাও দেখি নাই । এই ছবির গান “এই আখোকি মাস্তিমে----” আমার প্রিয় গান সাথে রেখার ক্ল্যাসিক্যাল নাচ । তবে এখন ঐশ্বরিয়ার ছবিটাই আগ্রহপূর্ণ হয়ে দেখলাম । আমাদের দেশে কেন যে এইরকম কালজয়ী ছবি বানাতে পারে না বুঝি না । ছবি শেষ হতেই ফকির শাহ বলে চলো আবুল কালাম খেয়ে নাও তুমি তাবুতে চলে যাও ঘুমাইতে । যদিও আমার ইচ্ছা হচ্ছে না যেতে তবুও যেতে হবে এইটা আমার চাকরী । একটা নতুন সকাল আশা করি প্রতিনিয়ত হয়তো আল্লাহ সেই আশা পূরণও করতে পারে । কাজ যখন নিয়েছি চেষ্টা করি , করে যেতে । (চলবে)
করোনায় একজন প্রবাসী ।
১০ম পর্ব।
এই মহামারীতে নিজেকে অসহায় ভাবছেন? একবার ভেবে দেখুন প্রবাসী বাংলাদেশীরা কেমন আছে এই করোনার মধ্যে কত প্রবাসী মারা গেছেন কেউ কি সঠিক হিসাব জানে? একটু ভাবুনতো পরিবারের সবাই বাংলাদেশে আর মাত্র একজনই জীবিকার সন্ধানে দেশের বাইরে ছিল।আজ সেই নেই অথবা সেই করোনায় আক্রান্ত! অসহায় কে? আপনি , নাকি নিঃসঙ্গ সেই প্রবাসী। এইসব মনে হলে ভয়ে বুক কাঁপতে থাকে কারণ এক গ্লাস গরম পানি করতে হলেও নিজেকে করতে হবে । নিজেকে নিজে দেখে রাখতে হবে , মনোবল অটুট রাখতে একটু সাহস দেওয়ার আপনজনহীন এই জীবনের নাম প্রবাস ।
যারা অনেক বছর কাজ করেছে তারাও আজ দিশাহারা । যৌথ পরিবারে বোন বিয়ে , ভাইদের লাইন , ঘরবাড়ি দালান করা আস্তে আস্তে মা বাবা বুড়া হয় তাদের ঔষুধ খরচ । এইদিকে নিজেই বুড়া , দুই পা খাড়ায় আর মাঝের ...... । তখন বিয়ে করে কোন রকম বাচ্চার বাবা হলেও বউ আইফোন পেয়ে পিরিত করে টাউনে ঘুরে ঘুরে। এর মাঝে ওয়ার্ক পারমিট (ইকামা) কোম্পানি হয়তো করবে না কারণ কোম্পানি দেওলিয়া , সরকারি ফিস বাড়িয়েছে বলেও অনেক কোম্পানি পারমিট করে না হয়ে পড়ে লোক অবৈধ । তবে একসময় এই লোকটাই কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছে। এই টাকা পরিবার খরচ করলেও বিদেশ হতে দেশেই গিয়েছে টাকাটা তাতে সমাজ দেশ উপকৃত হয়েছে। ৭১ সালে আপময় জনতা জীবনবাজি রেখে শত্রুর সাথে লড়াই করে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ চিনিয়ে এনেছে । আর এখন একদল জনগণ বিদেশে শরীরের ঘাম ঝরিয়ে টাকা রোজগার করে দেশে পাঠিয়ে দেশকে সমৃদ্ধশালী করে লাল সবুজ পতাকার মান ধরে রাখতে চেষ্টা করছে। তাই এরাও যোদ্ধা , রেমিটান্স যোদ্ধা ।
কিছু লোক চাকরী করে , ব্যবসা করে , ২০/২৫ বছর প্রবাস করে আজ ক্লান্ত , দেশে কোটি কোটি টাকা পাঠিয়েছে ভাগ্য সহায় ছিলো । এখন এই মহামারীতে বিদেশে মরে লাভ কি, বাঁচলে পরিবার নিয়ে বাঁচবো মরলেও পরিবার নিয়ে মরবো । এই ভেবে ভয়ে নিজ দেশে গিয়েছে এটা তার অপরাধ নয়। সব লোকের দেশে মরার অধিকার অবশ্যই আছে। নতুন লোক যারা বিদেশ এসেই অবৈধ হয়ে গেল তারা চলে গিয়ে ভালো করেছে তারা এমনিতেই জিন্দা লাশ। হাজার হাজার শ্রমিক ছাটাই হবে ভবিষ্যতে । প্রবাসী কোটি কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছে এতে পরিবার, দেশ উপকৃত হয়েছে। আমি যেহেতু দেশের নাগরিক আমি দেশে আসবোই , সরকার কিভাবে আমাকে সুরক্ষিত করবে সেটা সরকার ভাববে। আমি দেশের ক্ষতি করি নাই অতএব সরকার আমার ক্ষতি করতে পারেন না।
ইউরোপে মানুষ মধ্যপাচ্যের মত যাইতে পারে না। অনেক টাকার বিনিময় সাগর , পাহাড় , বন- জঙ্গল পার হয়ে তারপর যায়। আপনরা জানেন কত বাংলাদেশী সাগর মহাসাগরে ভেসে গিয়েছে। কত লোক তুর্কী বরফে আর আফ্রিকার জঙ্গলে সলিল সমাধি হয়েছে। এত কষ্ট করে গিয়ে কেউ ফেরত আসতে চাইবে না । আর আমাদের দেশ হতে উন্নত দেশে জীবনমান অনেক অনেক উন্নত। আরাম ছেড়ে দেশে গিয়েছে শুধু পরিবার নিয়ে মরতে এবং বাঁচতে। বৈধ কাগজপত্র না থাকলে চিকিৎসা পেতে অনেক কষ্টকর। অনেকের ডায়াবেটিস সহ আরো জটিল রোগও আছে তাই দেশে গিয়ে মা কিংবা মেয়ের কোলে মরাই এখন উত্তম। এই জন্য মহামারীর প্রথমে প্রবাসীদের হুমড়ি খেয়ে মাতৃভূমিতে যাওয়া ।
প্রায় ৫০০জন বাঙ্গালী সৌদিতে মারা গিয়েছে। এখন আর অভিবাসী নাগরিকদের পরিচয়ও প্রকাশ করছে না। বিভিন্ন আইনি জটিলতার কারণে দাফনও হয়নি বহু লাশের। বাবা মা হারিয়েছে সন্তান, ভাইবোন হারিয়েছে প্রিয় ভাই, ছেলেমেয়ে হারিয়েছে বাবা, আর বউটা হয়েছে বিধাবা। যার লাশ কিংবা কবর স্বপ্নেও আসবে না । এত লাঞ্ছনা গঞ্জনা সহ্য করে প্রবাসী দেশে গেলে বিমান বন্দরে আনসার আসে পাছায় মারতে ।
শুধু বিমান বন্দরে নয় প্রবাসীর সাথে চরম প্রতারণা করে নিজ ভাইবোন ও আত্মীয় স্বজন । সারা জীবনের সঞ্চয়ের যথাযথ হিসাব পায় না এমন কি হিসাব নিতে চাইলে ক্ষত্রবিশেষ মৃত্যুবরণও করে। সারা মাস কিংবা বছর নিজ সন্তানটাই চাপের উপর রাখে বাবা টাকা দাও টাকা দাও বলে। এই চাপের ফলে থাকতে হয় সর্বক্ষণ মানসিক অস্থিরতায় কারণ একজন বাবার কাছে সন্তানের সুখ শান্তিটাই মূর্খ । অথচ সেই সন্তান কখনোই পারে না বাবাকে ফিরিয়ে দিতে শান্তির পরশ। (চলবে )।
৬ষ্ঠ পর্ব।
টেলিভিশনের রিমোট হাতে নিয়েই ফকির শাহ চালু করে টিভি এমনি গান চলতে থাকে । “আনা হাব্বাক গলতান ---”(আমার ভালোবাসা ভুল---) । ফকির শাহ আমাকে অর্থ বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু ক্ষুধায় আমার পেট জ্বলে আর ফকির শাহ আমাকে আরবী গানের অর্থ তালিম দেয়। মাথা গরম হয়ে গেলেও সয়ে যেতে হয় কারণ ফকির শাহ ভারতীয় বাঙ্গালী দুই/ একদিন খাবে তাই অনেক কিছু। আমি বলে ফেলি ফকির ভাই আর তোমার গান শুনতে আমার কাছে ভালো লাগছে না ক্ষুধায় আমার জান শেষ, চলো খেয়ে আসি । ফকির শাহ স্মিত মুখ বাঁকা করে সাথে আমিও। হোটেলে কাজ করার সময় সাড়ে বারটা হতে এক‘টার ভিতর খাওয়ার খেতে দিতো। কয়েক মাস এই নিদিষ্ট সময় খেতে খেতে এখন তাই ক্ষুধায় দেরি সহ্য হচ্ছে না। কয়েক দিন দুপুরে খেপছা (বার-বি- কিউ মোরগ এবং তৈলাক্ত ভাত ) খেতে ভালোই লেগেছে , রাতেও সেই একই খাবার। তবে এরাবিয়ান অনেক প্রসিদ্ধ খাবার বিক্রি হয় এই হোটেলে। শিক কাবাব ও তুর্কী সালাদ আমার প্রিয় হয়ে যায় কিন্তু দাম বেশী বলে কর্মীদের খেতে দেয় না । এই দেশের মানুষ কখনো কখনো প্রয়োজনের তুলনায় বেশী খাবার অর্ডার করে। আবার কখনো কখনো একটু আধটু খেয়ে চলে যায় । সেই খাবার কর্মী হিসাবে খাওয়া যায় আর আমার ভালো লাগতো বলে শিক কাবাব খেতে চাইতাম। এই দেশে তুর্কীস্থান , ইয়েমেন এবং আফগানিস্তানের মানুষ খাবার হোটেলের জমজমাট ব্যবসায় জড়িত। আফগানীদের বুকারী হোটেল বাঁশপতি চাউলের ভাত এবং সাথে ভেড়ার মাংস , স্যুপ ও কালো বেগুনের ভর্তা প্রসিদ্ধ এখানে। অনেক সময় দুপুরে খেতে গেলে লাইন ধরতে হয়, এইসবে অনেক বাংলাদেশীও কাজ করে। ম্যাকডোন্সাস, কেএফসি , পিৎজা হাট, টিক্কা কাবাব এইসব আমেরিকা ইউরোপের খাবার হোটেলের সাথে এরাবিয়ানদের হারফি ,কদু , মিসওয়ার ও আলি বাবা ফাস্ট ফুড় চলে সমান তালে। আরবী ভাষা লোকদের হোটেলের পাশাপাশি পাকিস্তানি , ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশী লোকদের খাবার হোটেল আছে। আছে হায়দারাবাদের মিষ্টি পান , চা , বিরায়ানি আছে পাকিস্তানের কড়াই (ভাজা মাংস) , বিরায়ানি ও পালুদা । আছে বাংলাদেশের চা সিংগারা , চমুছা ও তেহারি। বড় বড় শহরে গড়ে উঠেছে মিনি বাংলাদেশ রিয়াদে বাথা ও হারা , দাম্মামে সাইকো , জেদ্দায় গুরাইয়া । আছে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তবে এইসব সরকারিভাবে সৌদিয়ানদের নামে তালিকাভুক্ত , তাই তারা লভ্যাংশ পায় ঘরে বসে। ব্যবসা বাণিজ্যের পাশাপাশি বিয়েশাদিও করছে ভারত উপমহাদেশের লোক। মক্কায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা আছে বাংলাদেশের পাসপোর্টধারি , এদের ভিতর এমনও আছে সৌদিতে বসবাসের পঞ্চাশ বছর হয়েছে গিয়েছে , যে কারণে পরিবার পরিজন সবাই সৌদিতে। এরা নানা অপকর্মে জড়িত , এদের ভাষা চিটাং এর সাথে মিল হওয়ায় বুঝা যায় না তবে চিটাং এর লোক মক্কায় সবচেয়ে বেশী । এরা অনেকে ব্যবসা বাণিজ্য করে ভালো অবস্থানে আছে। মক্কা ও মদিনায় অনেকে বাড়ির ব্যবসায় জড়িত। রমজানে ওমরা আর কোরবানে হজ্জ এই দুই সময় বাড়ি ভাড়া এবং অন্যান্য কাজ জমজমাট থাকে বলে বৈধ অবৈধভাবে প্রচুর রোজগার করতে পারে সবাই । খাবার হোটেলে ,ফল ফ্রুটের দোকানে উপছে পড়া ভিড় থাকে । পাকিস্তানিরা চুল কাটে যেন কোদাল দিয়ে , আফগানিরা বড় বড় রুটি বিক্রি করে লাইন দিয়ে । বাংলাদেশিরা চুরি করে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাস্তায় কিংবা বাসায় পানি এবং আদা কাঁচা খাবার বিক্রি করে।
ফকির শাহ চ্যানাল পরিবর্তন করে এমবিসি বলিউড দেয়। শালমান খানের দাবাং চলতেছে আমি ও ফকির শাহ টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমি দেশে থাকতে ক্যাবল টিভিতে হিন্দি ছবি দেখার নেশায় ছিলাম। শালমান খানের কোন ছবিই দেখা বাদ পড়তো না এখনোও দাবাং ভাই আমাকে আকৃষ্ট করে । পেটের ক্ষুধা ভুলে আমি মাহীয়া গিলের চিকন কোমর দেখি । ভারতীয় নায়ক নায়কা ব্যায়াম করে স্লিম থাকে আমাদের দেশের তারা যেন এক একটা আঠার মোটা মোটা বস্তা । এমবিসি গ্রুপের অনেক চ্যানাল , এমবিসি টু ও এমবিসি এ্যাকশান এই দুইটি চ্যানেলে হলিউড ছবি প্রচার করে চব্বিশ ঘন্টা আর এমবিসি বলিউডে হিন্দি ছবি ও সিরিয়াল চব্বিশ ঘন্টা প্রচার করে। এইসব বিশ্বমানের চ্যানেলে বিজ্ঞাপণ যতসামান্য প্রচার করে যা আমাদের দেশের চ্যানেল চিন্তাও করতে পারবে না । এই মিশরী চ্যানেলের সমপর্ষায় আছে এলবিসি লেবাননের চ্যানেল। সৌদি আরব , আরব আমিরাত , ওমান ও বাহারাইনের বিনোদন কিংবা খবরের শত শত চ্যানেল চলে , শুধু চলে না আল জাজিরা । হাজার হাজার রিয়েল খরচ করে কার্ডের মাধ্যমে চালায় খেলার চ্যানেল। আমাদের দেশে যে রকম ক্রিকেট খেলা প্রিয় তাদের প্রিয় ফুটবল। আল হেলাল , নাসের ও ইত্তেহাদ সৌদি আরবের নামকরা ক্লাব । আমাদের দেশে নব্বই দশকে যেমন আবাহনী মোহামেড়ান এর খেলা হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তো । যেমন বাঘ এবং সিংহের লড়াই হতো সৌদিতেও ঠিক সেইরকম এখনো। আমেরিকা কিংবা ইউরোপীয় ক্লাবেরও প্রচুর সমর্থক আছে । বার্সালোনা এবং রিয়াল মাদ্রিদের খেলা হলেও উত্তজেনা দেখা যায় রাস্তাঘাটে । সৌদি আরব বিশ্ব কাপেও খেলেছে দুই একবার । তবে অনেক চেষ্টা করেছে কাতারে যেন বিশ্ব কাপ খেলা আয়োজন বিঘ্ন ঘটে তারা সফল হয়নি। মধ্যপাচ্যের রাজনীতিতে এরা কিন্তু শয়তানের বাবা ।
মানুষ হজ্জে গিয়ে শয়তানকে পাথর মারা হজ্জের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু ইয়েমেনে হাজার হাজার শিশু তাদের বোমার আঘাতে মারা যাচ্ছে অথচ তাদের কেউ পাথর মারার নেই। শিয়া সুন্নির নোংরা রাজনৈতিক খেলায় মেতে আছে ইরান ও সৌদি। আল্লাহের ঘর তাদের কাছে কতটুকু নিরাপদ । এই ঘরকে পুজি করে তারা যে রোজগার করছে তা ব্যবহার করছে অগণিত নিস্পাপ মানব শিশু হত্যায়। আমরা তাদের দেশের গিয়ে নিজেকে পাপ মুক্ত করতে চেষ্টা করি। কিন্ত তাদেরকে কে মুক্ত করবে পাপ হতে। ইসলামধর্মীয় মানুষের আরাধনার স্থান মক্কা মদিনা নিয়ে তারা গর্বিত । অলৌকিক পানি জমজম পুরা বিশ্বের মুসলিমের কাছে স্বর্গীয় গঙ্গা । যে পানি পৃথিবীর সব পানি হতে বিশুদ্ধ ও মান সম্মত যে পানিতে আল্লাহ মানব দেহের সব উপকারী উপধান দিয়ে দিয়েছেন । সেই পানির জায়গার মালিক সৌদি আরবে মানুষেরই বাক স্বাধীনতা নাই। তবে হাই আদেশ দিয়েছে পাপ্ত বয়স্ক নারী ইচ্ছামত আলাদা বাড়ি নিয়ে বসবাস করতে পারবে । মনে হয় বর্বর জাতি কামুকে একধাপ উপরে উঠলো। (চলবে)।
করোনায় একজন প্রবাসী ।
৭ম পর্ব।
ভাত খেতে খেতে টুকটাক কথা হয় ফকির শাহ এর সাথে। সে বুঝতে পারে আমি স্বস্তিবোধ করতেছি না কথা বলতে , তাই জলদি খেয়ে উঠে যাই। খাওয়া শেষে সিগারেট টানা আমার সেই পুরাতন অভ্যাস আজও ব্যতিক্রম হয়নি। ফকির শাহ সিগারেটে অভ্যস্ত নয় (অনেক ভালো অভ্যাস ) আমাকেও এই ধুমপান ছাড়তে হবে । অনেক চেষ্টা করি কিন্ত পারি না , আর হয়তো পারবো না । এই মরুভূমিতে ফকির শাহকে না ফেলে বোবা হয়ে যেতাম ছাগল আর ভেড়ার সর্দার হয়ে।
ঘুম আসে না একটুও ,হোটেলের কাজে আসার পর হতে দুপুরে ঘুম যাওয়ার সুযোগ হয়নি কিন্তু চোখ জুড়ে নেমে আসতো প্রচণ্ড অবসাদ । আর আজ ঘুমের সুযোগ পেয়েও ঘুম আসছে না , চোখে আসছে বাংলাদেশ । কিভাবে শোধ দিবো ঋণ , যদি ধরা পড়ি পুলিশের হাতে সব স্বপ্ন আশা ভরসা চুরমার হয়ে যাবে। কেন যে বিদেশ নামক বিপদে পা বাড়ালাম আজ টের পাচ্ছি , হাজারো মানুষ সৌদি আরব এসে বাড়ি ঘর দালান করেছে আর আমি প্রশান্ত মহাসাগরে ডুবতে বসেছি। বাদামতলীর সবজির আড়তেই আমি ভালো ছিলাম , নিজ দেশে লতাপাতা বিক্রি করে পেট চালানোও শান্তি এও সম্মানের। মা বাপ ভাইবোন ও বউ বাচ্চা নিয়ে শান্তিতে ছিলাম এখন বুঝতেছি। এখন আর আড়তদারও কাজে নিবে না । সৌদি হতে দেশে যাওয়াও আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে কারণ আমার নেই ইকামা (পরিচয় পত্র) বাংলাদেশি হিসাবে পাসপোর্টই আছে আমার কাছে। ইকামা না থাকলে জেল জরিমানা হবে তাও যদি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হই না হয় এইভাবে থাকতে হবে মাসের পর মাস বছরের পর বছর । ইকামা না থাকলে অসুখ বিসুখ হলে যেতে পারবো না কোন হাসপাতালে । ইস ! কেন যে মোস্তাক মিয়ার সাথে পরিচয় হলো ,কেন যে বিদেশ আসার কথা মাথায় আসলো । আজ আমার কান্নার আওয়াজও কেউ শুনবে না ।
আবুল কালাম উঠে যাও কাজ করতে হবে । চলো আমি তোমাকে গানাম (ভেড়া) এর কাজ দেখিয়ে দিবো আমারও অন্য কাজ আছে , ফকির শাহ আমাকে ডাকে তুলে বিকাল হয়ে যাওয়ায় । তুমি আমার সাথে খাওয়া দাওয়া করলেও রাতে ঘুমাবে বাহিরে খেইমায় (তাবু) কারণ গানাম (ভেড়া) পাহারায় থাকতে হবে । দুপুরে খেয়ে এখানে ঘুমাবে আর রাতে খেয়ে চলে যাবে এবং ঘুমানোর আগে গানাম দেখবে আবার রাতে উঠে একবার দেখবে । আমি চুপচাপ ফকির শাহর কথা শুনি সে যেটা বলতেছে ঠিক সেইভাবে কাজ করতে হবে কারণ সে পুরাতন হিসাবে সব জানে । কিন্তু এই গরমে কিভাবে খেইমায় ঘুমাবো ভয় মন খারাপ হয়ে গেল । জানি মানুষ অভাসের দাস , আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যাবে কিন্তু এই দুই /চার রাত ঘুমানো কঠিন হবে গরমের কারণে। ফকির শাহ পানির মোটর চালু করে খেজুর গাছ এবং অন্যান্য গাছে পানি ছেড়ে দেয় মাঝখানে দূর্বাঘাসে ফোয়ারার মত পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে অটোমেটিক । আমি ফকির শাহর সাথে খেজুর গাছসহ অন্য গাছে পানি ছেড়ে দিই । এখানে বাংলাদেশিরা বিভিন্নজন বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত কিন্তু রাই গানাম (ভেড়া পালক) খুর কম কারণ এই কাজ খুবই কষ্টকর । গভীর মরুভূমিতে ভেড়ার সাথেই তাবুতে থাকতে হয় মালিক দুই/একদিন পর পর খাবার ও পানি দিয়ে আসে আর মালিক না দিয়ে আসলে না খেয়ে পড়ে থাকতে হয় । তবে আমার ভাগ্য ভালো এসতারার (রেস্ট হাউজ ) এর সাথেই ভেড়া রাখা আর এসতারা হতে হেটে রোড়ে এসে দোকান হতে বাজার খরচ করা যায় ।
রেস্ট হাউজ হতে একটু দুরে গানামের সাবক (ভেড়ার ঘর ) চারিদিকে তারের বেড়া দেওয়া । পানির গাড়ি পাশেই রাখা ফকির শাহ গিয়েই পানি ছেড়ে দিল এমনি তৃষ্ণাত্ব কয়েকটা ভেড়া পানি খেতে চলে আসে হোতে (পানির পাত্র )। ফকির বলে আজ আমি সব কাজ করে তোমাকে দিখিয়ে দিবো , কাল হতে তুমি একা একা করবে তাই ভালো করে দেখে নাও। এখন খাদ্য পানি দেওয়া ছাড়া তেমন কাজ নাই কষ্ট হয় এবং কাজ বেশী হয় শীতের দিনে। তখন ৪বাচ্চা দেয় গানাম ,এখানে যেহেতু শীতকালে বৃষ্টি তাই শীত পড়ে বলে গানামের বাচ্চা সহ্য করতে পারে না মরে যায় এই জন্য বার বার দেখতে হয় গানাম। অনেক সময় বাচ্চা দেওয়ার পর পরই পরিস্কার করে দুধ খাওয়াতে হয় তখন এই প্রচণ্ড শীতে একা একা গানাম ধরতে কষ্ট হবে । খুব বিরক্ত লাগবে টকার জন্য এমন নোংরা কাজ সয়ে যেতে হয় । আবার শীত আসে আসে এমন সময় প্রচুর বৃষ্টি হলে মরুভূমিতে ঘাস জন্ম নেয় আর তখন সীমানাহীন মরুভূমিতে সৌদিয়ান গানাম নিয়ে এক স্থান হতে অন্য স্থানে দৌড়াতে থাকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য। তখন প্রচণ্ড হাওয়া ও শীতে কষ্ট হয় , মন চায় দেশে চলে যেতে কিন্তু মন চাইলে আর কি যাওয়া যায়। প্রচুর বৃষ্টি হলে ঘাসের সাথে কিছু কিছু অঞ্চলে আলুর মত একটা জিনিস মাটি ফেটে উঠে তাকে পেগা বলে রান্না করে খাওয়া যায় । ভালো করে পরিস্কার করে মাংসের সাথে রান্না করলে খুবই মজা হয় এইটি অত্যন্ত পুষ্টিকর করে সৌদিয়ান খুব পছন্দ করে । তখন গরিব সৌদি মরু অঞ্চলে খুজে বিক্রি করে ভালো পয়সা পায়।
হাফার আল বাতেন কুয়েতের সীমান্ত এলাকা তাই সেখানে কুয়েতিদের বসবাস বেশী। রাফা ,আর আর ইরাকের সীমান্ত । সৌদির সাথে বাহারাইন , কুয়েত , ইরাক , ইরান ,জর্দান এবং ইয়েমেন এর সীমান্ত । জেদ্দা হলো লোহিত মহাসাগরের তীরে যার একপাশে সুদান আর এই জেদ্দা হলো সৌদির সবচেয়ে বড় পর্যটন এলাকা। সাগরের কূল ঘেসে আছে রাজ প্রসাদ যার সুউচ্চ ঝর্ণা কয়েক কিলোমিটার দুর হতে দেখা যায় । হাফার আল বাতেন , রাফা ও আরআর শত শত ইরাকি আছে আশ্রিত যারা মরুভূমিতে তাবু টানিয়ে থাকে এরা ইরাক কুয়েত যুদ্ধের সময় আশ্রয় পেয়েছে। এর হতে কিছু লোক সৌদির নাগরিকত্ব পেয়েছে , যারা সরকারি চাকরী পাবে না দেশ ত্যাগও করতে পারবে না তবে বসবাস করতে পারবে ঘরবাড়ি করে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারবে। অনেক অনেক আগে বিভিন্ন দেশের যারা নাগরিকত্ব পেয়েছে তারা সব সুবিধা পাবে তবে এই সময় নাগরিকত্ব কেউ আর পাচ্ছে না । (চলবে ) ।
করোনায় একজন প্রবাসী ।
৮ম পর্ব।
এই সব ইরাকবাসীর তাবু আমাদের দেশের যাযাবর এর বস্তির মত । রৌদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে বস্তির কাঠ আর কাপড় জোড়াতালি হাজারের উপরে হয়েছে। হাফার আল বাতেন শহরের অতি দুরে আরআর রোড়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় হাজার হাজার বস্তি আছে এসব ইরাকিদের । বয়স পার হওয়া লাখো যুবক যুবতী এসব বস্তিতে বসবাস , দেনমোহরের চাপে পড়ে যৌবনকাল তছনছ তাদের । এরা ইরাকে ফিরে যায় না অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভয়ে তবে এরা বাহিরে সৌদিয়ানদের মত চলাফেরা করায় চিনা যায় না মরুদ্বিপের নিকৃষ্ট ঘরের বাসিন্দা যে। ছেলেমেয়ে এর বিয়ে শাদি না হলে এইসব ইরাকির কেউ কেউ দুই বউয়ের সংসারও করে । আরবী ভাষার লোকেরা নামাজে সুন্নত আদায় না করলেও চারটা বিয়ের যে সুন্নত আছে তা পালনে কম কসরত করে না । দেখে যেন মনে হয় টাকা আর আইন থাকলে দশটা বিয়ে করতো আর দশ মহিলার গর্ভে দশটা সন্তান জন্ম দিতে চেষ্টা করতো। বিয়ের পর হতে যেত দিন বউ সন্তান জন্মদানে সক্ষম ঠিক তেতদিন প্রতি বছরই সন্তান জন্ম দেয় । তবে আচার্য ব্যাপার হলো এইভাবে সন্তান জন্ম দিলেও আরো বহুকাল পরেও বাংলাদেশের মত এমন ঘনবসতিপূর্ণ হবে না। আগে আরো বেশী বেশী নাগরিক সুবিধা থাকলেও এখনো সরকার সঠিক পরিকল্পনা করে দেশকে পরিচালনা করার চেষ্টা করছে। যদিও বর্তমানে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা । এইবার বিশ্ব মহামারী করোনার প্রভাবে সব তছনছ হয়ে গিয়েছে তাই লক্ষ লক্ষ বিদেশী শ্রমিক হ্রাস করবে এবং সৌদিয়ান যেসব কাজ করতে সক্ষম সেইসব পদে তাদের নিয়োগ দিবে। সরকার তেলের উপর নির্ভরতা কমিয়ে আনার চেষ্টারত তাই কঠোর ধর্মীয় আইন শিথিল করে পর্যটক আকৃষ্ট করতে চাইতেছে । আগে নামাজের সময় সমস্ত কাজ বন্ধ করে দিয়ে রাস্তায় মৌলভিরা পুলিশ সাথে করে গাড়ি নিয়ে টহল দিতো আর হ্যান্ড মাইকে চিৎকার দিতো নামাজ নামাজ করে । কেউ নামাজ না পড়লে রাস্তায় ঘুরলে ধরে নিয়ে যেত নামাজ পড়ার ওয়াদা করিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে ছাড়তো আর এখন সেটা অতীত। বিদেশী শ্রমিকের বাসায় বাসায় মৌলভিরা হানা দিতো জুয়া খেলা আর নীল ছবির ভিডিও ক্যাসেট খোজার জন্য এখন সেটাও অতীত। আকর্ষণীয় জায়গা এবং উদার কালচার বিশ্বে তুলে ধরতে মরিয়া এখন সৌদি আরব।
সাগর তীরে গড়ে তুলবে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক শহর নিওম ( ) ৫০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে এই শহর গঠে তুলতে। সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে ভিশন ২০৩০, তবে সব উল্টাপাল্টা করে দিয়েছে বিশ্ব মহামারী করোনা । তারপরও তারা নিজের সম্পদ সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে দেশ পরিচালনায় ব্রত, তবে এই মহামারীর কবলে পড়ে অনেক বিদেশী শ্রমিক চাটাই করবে । আর আমরা দেশে ফেরত গিয়ে হয়তো না খেয়ে না পেয়ে হাহাকার করতে হবে । মধ্যপাচ্যে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে গিয়ে যুদ্ধের পিছনে খরচ করতে হচ্ছে মিলিয়ন মিলিয়ন রিয়াল । বিশেষ করে ইয়েমেন যুদ্ধে অনেক ব্যয় করতে হচ্ছে তারপরও সুষ্ঠুভাবে সমাধান হবে না আরেক কঠোর রাষ্ট ইরানের কারণে। ইয়েমেন সিরীয়া ও ইরাক আজ ধ্বংস মুসলিমদের এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় আর এই খেলা শুধু ক্ষমতার লোভেই । ইয়ানবু জাজান ইয়েমেনের সীমান্ত এলাকা জাজান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জায়গা । মাঝে মাঝে ইয়েমেনের শিয়ারা ( হুতি ) এইসব এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে থাকে যার কারণে ওইসব এলাকার মানুষ আতঙ্কের ভিতর থাকে। তবে সৌদি সাথে ইয়েমেনের সীমানা মহামারীকালীন ছাড়া সবসময় খোলা থাকে সাধারণ নাগরিক ভিসা নিয়ে বাসে চলাফেরা করতে কোন অসুবিধা হয় না । কুয়েত , আবু ধাবি , ওমান , বাহারাইনের নাগরিক এক দেশ হতে অন্যদেশে ভিসাহীন চলাফেরা করতে পারে এমন কি তারা সরকারি আইন মেনে ব্যবসা বাণিজ্য করছে। তুরস্ক ও মিশরের লোকজন স্থল পথে অনেকে যাতায়াত করে সৌদি আরব হতে তাদের অনেকে শ্রমিক শ্রেণীর।
সব ভেড়া এক জায়গা করে আটকানো রেখে তারপর খাবার দিতে হয় । অনেকগুলি পাত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে । এর মধ্যে কিছু পাত্রে গম আর কিছু পাত্রে ঘাস রাখে ফকির শাহ। ছোট ছোট বাচ্চা আলাদা করে বাঁধা রাখা হয়েছে যাতে খাবার খেতে অসুবিধা না হয় । খাবার দেওয়া শেষ হওয়ায় আমি ছেড়ে দিই ভেড়ার দল এমনি পাগলা কুকুরের মত দৌড় । একটার উপর একটা পড়ে কার আগে কে যাবে খেতে ! ফকির শাহ ঘাসের পাত্র পাহারা দিয়ে রাখলো আগে গম খেয়ে শেষ করার জন্য গম খাওয়া শেষ হলেই সরে যায় ফকির শাহ। কয়েকটা গানাম গম খেয়ে পানির দিকে ছুটে তবে দেরি করে না দৌড়ে ফিরে ঘাসের পাত্রে । এখন ছোট বাচ্চাও ছেড়ে দেয় দুধ খেতে তাই সব একসাথে । ভেড়ার দৌড়াদৌড়িতে ধুলাবালি উঠতে থাকে তাই গামছা দিয়ে ভালো করে মুখ বেধে নিতে হয়। গরম কালে কখনো কখনো প্রচণ্ডভাবে ধুলাবালি ঝড় হয় আর এইটি এতই জোরে আসে একদম অন্ধকার হয়ে যায় । এই ধুলাবালির কারণে মানুষের এ্যাজমা হয়ে যায় , হাঁচি কাশি হয়ে যায় ।
একটু দুরে কয়েকটা বেওয়ারিশ কুকুর গর্ত হতে উঠে এলো ফকির শাহ পাথর মেরে তাড়াতে গেল। এইসব পরিচয়হীন কুকুর মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ায় মরা ছাগল ভেড়ার খোজে। গরম সহ্য করতে না পারলে ভেড়ার পানির পাত্রে এসে ডুব দেয় তবে আমার ভয় রাতে তাবুতে ঢুকে কিনা তা নিয়ে । একটু পরে মাগরিব হবে ছাগল ভেড়া গম ঘাস খেয়ে শান্ত এখন ফকির ফিরে যায় তার কাজে আমিও তাবুতে হারিকেন জ্বালিয়ে দিই । (চলবে)
করোনায় একজন প্রবাসী ।
৯ম পর্ব ।
সব ভেড়া তারের বেড়ার ভিতর ঢুকানো হয় নিরাপদ রাখার জন্য। এখন সৌদিতে চুরি , ডাকাতি ও রাহাজানি হয় বিশেষ করে বাহিরের লোক রাস্তায় একা ফেলে টাকা পয়সা ও মোবাইল চিনতাই করে ক্ষেত্রবিশেষ গায়ে আঘাতও করে । বড় ছোট দোকান কিংবা শপিং মলে মুখোশ পরে ডাকাতি করে । অবশ্যই এখন রাস্তাঘাটে এবং শহরের আানাছে কানাছে সিসিটিভি লাগানো হচ্ছে । দোকানপাটে সিসিটিভি লাগানো ছাড়া এবং লাগানোর প্রমাণপত্র ছাড়া দোকান , ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালত করার অনুমতি দিচ্ছে না সরকার ।
নাইজেরিয়ান , সোমালিয়ান , ইথোপিয়ান এবং সুদানি ভয়ংকর সব কাজ করে । পাকিস্তানি মাদকের ব্যবসায় জড়িত ব্যাপকভাবে । আগে অনেক পাকিস্তানির শিরোচ্ছেদ করেছে শুধু মাদক ব্যবসার জন্য অবশ্যই অনেক দিন আগে তিন জন বাংলাদেশিও শিরোচ্ছেদ করেছে হত্যার দায়ে । এখানে পুরাতন লোহালক্কড় ও পুরাতন জিনিসপত্রের ব্যবসা করে অনেক বাংলাদেশি কোটি কোটি টাকা রোজগারর করেছে । ২০০৮ সালে রিয়াদে অপটিক ফাইবার চুরিতে ধরা পড়ে বাংলাদেশের লোক তখন হতে এই ব্যবসায় নজরদারি জোরদার করে । ফেনী সোনাগাজীর আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আবদুর রহিম এই ব্যবসায় জড়িত আছে এখনো এবং উনি একজন সফল ও সৎ ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিত ।
চারিদিকে ঘন কালো অন্ধকার আকাশ চাঁদহীন তারায় ভরপুর । কার্পেটটা বিছিয়ে দিয়ে বিছানা করলাম ঘুমানোর জন্য। গামছা কাঁধে নিয়ে বের হলাম ফকির শাহর কাছে যাওয়ার জন্য ,গোসল করে রাতে খেয়ে একবারে চলে আসবো । মরুভূমিতে এইরকম একা নিঃসঙ্গ নীরব হয়ে দিন মাস বছর পার করতেছে বহু মানুষ শুধু পরিবাবের সুখ সমৃদ্ধ জীবনের জন্য। ঝড় বৃষ্টি ,রৌদ খরা কিংবা শীতের বরফে আমার মত এমন শত শত রাখাল নিজেকে বিলীন করে মা বাপ , ভাই বোন , স্ত্রী ও সন্তানের মুখে অন্ন যোগান দিতে গিয়ে । এইসব রাখালের অাত্ন ত্যাগের মূল্য খুব কমই পায় । কখনো কখনো চরম অপমান অসম্মান , গৃহহীন কিংবা জীবনহানিও ঘটে ।
বাড়িতে টাকা লাগবে ছোট ছেলেটার জ্বর ভালো হচ্ছে না রাতে কাশির জন্য ঘুমাইতে পারে না । তাই শহরে কোন ভালো শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে হবে । কিন্তু মাসের মাঝখানে টাকা পাঠাবো কি করে তার উপর আমার আবার নতুন চাকরী । মনটা খুবই খারাপ লাগছে এই মরুভূমিতে কার কাছে টাকা চাইবো শহর এলাকা হলে লোকজনকে বলতে পারতাম কারো কাছে সাহায্য চাইতে পারতাম ।এইখানে ভেড়া আমি আর কলকাতার ফকির শাহ। তার সাথে ভাষার মিল হলেও আছে চিন্তা ও চেতনার অমিল । আর মাত্র দুই/একদিনের পরিচয়ে টাকা চাওয়াও ভালো লাগছে না । মন খারাপ হলে মুখে তা প্রকাশ পায় ফকির শাহ ধরতেে পারলো , মরুভূমিতে ভেড়ার রাখালর কাজে এসেছি বলে মন খারাপ করে আছি সে মনে করে আমিও কিছু বলি না । গোসল করে হালকা হলাম রং চায়ে চুমুক দিয়ে এয়ার কুলার বাতাসে এখন সজীব লাগছে অনেকটা ।
চায়ের কাপ হাতে খেইমায় (তাবুতে) বসলাম দুইজনে ফকির শাহ টেলিভিশনে এমবিসি বলিউড ধরলো অভিষেক অার ঐশ্বরিয়া রাই এর উমরাও ছবি চলছে । আমি রেখার উমরাও অগনিতবার দেখেছি কিন্তু ঐশ্বরিয়া রাই এর উমরাও দেখি নাই । এই ছবির গান “এই আখোকি মাস্তিমে----” আমার প্রিয় গান সাথে রেখার ক্ল্যাসিক্যাল নাচ । তবে এখন ঐশ্বরিয়ার ছবিটাই আগ্রহপূর্ণ হয়ে দেখলাম । আমাদের দেশে কেন যে এইরকম কালজয়ী ছবি বানাতে পারে না বুঝি না । ছবি শেষ হতেই ফকির শাহ বলে চলো আবুল কালাম খেয়ে নাও তুমি তাবুতে চলে যাও ঘুমাইতে । যদিও আমার ইচ্ছা হচ্ছে না যেতে তবুও যেতে হবে এইটা আমার চাকরী । একটা নতুন সকাল আশা করি প্রতিনিয়ত হয়তো আল্লাহ সেই আশা পূরণও করতে পারে । কাজ যখন নিয়েছি চেষ্টা করি , করে যেতে । (চলবে)
করোনায় একজন প্রবাসী ।
১০ম পর্ব।
এই মহামারীতে নিজেকে অসহায় ভাবছেন? একবার ভেবে দেখুন প্রবাসী বাংলাদেশীরা কেমন আছে এই করোনার মধ্যে কত প্রবাসী মারা গেছেন কেউ কি সঠিক হিসাব জানে? একটু ভাবুনতো পরিবারের সবাই বাংলাদেশে আর মাত্র একজনই জীবিকার সন্ধানে দেশের বাইরে ছিল।আজ সেই নেই অথবা সেই করোনায় আক্রান্ত! অসহায় কে? আপনি , নাকি নিঃসঙ্গ সেই প্রবাসী। এইসব মনে হলে ভয়ে বুক কাঁপতে থাকে কারণ এক গ্লাস গরম পানি করতে হলেও নিজেকে করতে হবে । নিজেকে নিজে দেখে রাখতে হবে , মনোবল অটুট রাখতে একটু সাহস দেওয়ার আপনজনহীন এই জীবনের নাম প্রবাস ।
যারা অনেক বছর কাজ করেছে তারাও আজ দিশাহারা । যৌথ পরিবারে বোন বিয়ে , ভাইদের লাইন , ঘরবাড়ি দালান করা আস্তে আস্তে মা বাবা বুড়া হয় তাদের ঔষুধ খরচ । এইদিকে নিজেই বুড়া , দুই পা খাড়ায় আর মাঝের ...... । তখন বিয়ে করে কোন রকম বাচ্চার বাবা হলেও বউ আইফোন পেয়ে পিরিত করে টাউনে ঘুরে ঘুরে। এর মাঝে ওয়ার্ক পারমিট (ইকামা) কোম্পানি হয়তো করবে না কারণ কোম্পানি দেওলিয়া , সরকারি ফিস বাড়িয়েছে বলেও অনেক কোম্পানি পারমিট করে না হয়ে পড়ে লোক অবৈধ । তবে একসময় এই লোকটাই কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছে। এই টাকা পরিবার খরচ করলেও বিদেশ হতে দেশেই গিয়েছে টাকাটা তাতে সমাজ দেশ উপকৃত হয়েছে। ৭১ সালে আপময় জনতা জীবনবাজি রেখে শত্রুর সাথে লড়াই করে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ চিনিয়ে এনেছে । আর এখন একদল জনগণ বিদেশে শরীরের ঘাম ঝরিয়ে টাকা রোজগার করে দেশে পাঠিয়ে দেশকে সমৃদ্ধশালী করে লাল সবুজ পতাকার মান ধরে রাখতে চেষ্টা করছে। তাই এরাও যোদ্ধা , রেমিটান্স যোদ্ধা ।
কিছু লোক চাকরী করে , ব্যবসা করে , ২০/২৫ বছর প্রবাস করে আজ ক্লান্ত , দেশে কোটি কোটি টাকা পাঠিয়েছে ভাগ্য সহায় ছিলো । এখন এই মহামারীতে বিদেশে মরে লাভ কি, বাঁচলে পরিবার নিয়ে বাঁচবো মরলেও পরিবার নিয়ে মরবো । এই ভেবে ভয়ে নিজ দেশে গিয়েছে এটা তার অপরাধ নয়। সব লোকের দেশে মরার অধিকার অবশ্যই আছে। নতুন লোক যারা বিদেশ এসেই অবৈধ হয়ে গেল তারা চলে গিয়ে ভালো করেছে তারা এমনিতেই জিন্দা লাশ। হাজার হাজার শ্রমিক ছাটাই হবে ভবিষ্যতে । প্রবাসী কোটি কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছে এতে পরিবার, দেশ উপকৃত হয়েছে। আমি যেহেতু দেশের নাগরিক আমি দেশে আসবোই , সরকার কিভাবে আমাকে সুরক্ষিত করবে সেটা সরকার ভাববে। আমি দেশের ক্ষতি করি নাই অতএব সরকার আমার ক্ষতি করতে পারেন না।
ইউরোপে মানুষ মধ্যপাচ্যের মত যাইতে পারে না। অনেক টাকার বিনিময় সাগর , পাহাড় , বন- জঙ্গল পার হয়ে তারপর যায়। আপনরা জানেন কত বাংলাদেশী সাগর মহাসাগরে ভেসে গিয়েছে। কত লোক তুর্কী বরফে আর আফ্রিকার জঙ্গলে সলিল সমাধি হয়েছে। এত কষ্ট করে গিয়ে কেউ ফেরত আসতে চাইবে না । আর আমাদের দেশ হতে উন্নত দেশে জীবনমান অনেক অনেক উন্নত। আরাম ছেড়ে দেশে গিয়েছে শুধু পরিবার নিয়ে মরতে এবং বাঁচতে। বৈধ কাগজপত্র না থাকলে চিকিৎসা পেতে অনেক কষ্টকর। অনেকের ডায়াবেটিস সহ আরো জটিল রোগও আছে তাই দেশে গিয়ে মা কিংবা মেয়ের কোলে মরাই এখন উত্তম। এই জন্য মহামারীর প্রথমে প্রবাসীদের হুমড়ি খেয়ে মাতৃভূমিতে যাওয়া ।
প্রায় ৫০০জন বাঙ্গালী সৌদিতে মারা গিয়েছে। এখন আর অভিবাসী নাগরিকদের পরিচয়ও প্রকাশ করছে না। বিভিন্ন আইনি জটিলতার কারণে দাফনও হয়নি বহু লাশের। বাবা মা হারিয়েছে সন্তান, ভাইবোন হারিয়েছে প্রিয় ভাই, ছেলেমেয়ে হারিয়েছে বাবা, আর বউটা হয়েছে বিধাবা। যার লাশ কিংবা কবর স্বপ্নেও আসবে না । এত লাঞ্ছনা গঞ্জনা সহ্য করে প্রবাসী দেশে গেলে বিমান বন্দরে আনসার আসে পাছায় মারতে ।
শুধু বিমান বন্দরে নয় প্রবাসীর সাথে চরম প্রতারণা করে নিজ ভাইবোন ও আত্মীয় স্বজন । সারা জীবনের সঞ্চয়ের যথাযথ হিসাব পায় না এমন কি হিসাব নিতে চাইলে ক্ষত্রবিশেষ মৃত্যুবরণও করে। সারা মাস কিংবা বছর নিজ সন্তানটাই চাপের উপর রাখে বাবা টাকা দাও টাকা দাও বলে। এই চাপের ফলে থাকতে হয় সর্বক্ষণ মানসিক অস্থিরতায় কারণ একজন বাবার কাছে সন্তানের সুখ শান্তিটাই মূর্খ । অথচ সেই সন্তান কখনোই পারে না বাবাকে ফিরিয়ে দিতে শান্তির পরশ। (চলবে )।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
অনিতা মুদি ২৭/০৭/২০২০ভালো আছে
-
আব্দুর রহমান আনসারী ২৭/০৭/২০২০বাস্তবতার উপর চমৎকার লেখা। শুভেচ্ছা নেবেন।
-
Rahat ২৫/০৭/২০২০A lot of thanks for shared this post on public .
-
হাবিবা বেগম ২৫/০৭/২০২০খুব ভালো লাগল।
তবে একটা প্রশ্ন ছিল - পর্ব অনুযায়ী পোস্ট করা কি যায় এখানে?
ভালো থাকুন। -
আব্দুর রহমান আনসারী ২৫/০৭/২০২০Very nice
-
কুমারেশ সরদার ২৪/০৭/২০২০খুব ভালো
-
জানবক্স খান ২০/০৭/২০২০Yes, it's feel very interesting like exploration of middle east... carry on
-
সাঃ মোঃ সাখাওয়াত হোসেন ২০/০৭/২০২০😮😮😮
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ২০/০৭/২০২০great