www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মেয়ে ও মায়া মাদক ও রাষ্ট্র ।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
প্রথম পর্ব

আমার মা বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে। আমি আমার আম্মুর সাথে ঢাকায় থাকি আর আব্বু থাকেন কানাডায়। আব্বু সেখানে গিয়ে অন্য মহিলার সাথে জড়িয়ে যায় । কারন সে নাকি ভীষণ একা । তাছাড়া ওই মহিলা সেখানের নাগরিকত্ব পেতে সহযোগিতা করবে। তবে যাওয়ার আগের দিন চোখের জলে বুক ভাসিয়ে বলে ছিল যেত দ্রুত সম্ভব দেশে এসে আমাদের নিয়ে যাবে। অবশ্যই আব্বু দেশে এসে ছিল তবে আমাদের নিতে নয়। এসে ছিল আম্মুকে তালাক দিতে । আমার আম্মু একটা স্কুলে শিক্ষকতা করেন। উনি খুবই আত্মসম্মানবোধ মানুষ। আব্বু যাওয়ার পর আস্তে আস্তে আচরণ পরিবর্তন হতে দেখে আম্মু বুঝতে পারে যে আব্বু দুরে সরে যাচ্ছে । তাই দেশে এসে বিনা বাঁধায় আব্বু তালাক নিতে পারে । এবং এটি কেউ জানলোও না । যা কিছু আত্মীয় স্বজন জেনেছে নানুর বাড়ির লোক হতে।

কদিন নানু আর মামা আমাদের বাসায় এসে খুব রাগারাগি করলো। মাহিনের এই সিদ্ধান্ত কেন তুই আমাদের জানালি না । আমরা জানলে মাহিন কিছুইতে দেশ হতে পালাতে পারতো না । পারতো না তোকে তালাক দিতে , কত বড় সাহস একটা মেয়ে আছে , সংসার আছে । আর সে কিনা কোন এক বাজে মহিলার পাল্লায় পড়ে তোকে তালাক দেয় । কত বড় অমানুষ , আমরা জানলে এমন ব্যবস্থা করতাম যেন দেশ হতে বের হতে না পারে । আর তোর শাশুড়ী বা কি বলে উনার এত গুণী ছেলের বিষয়। এই তুমি এবার চুপ করো ভাইয়া । আর মা মাহিনের কথা বলে কোন লাভ হচ্ছে তোমাদের । যেখানে সে নিজেকে অন্য একজনের সাথে জড়িয়ে ফেলেছে । সেখানে কেন আমি জোর করে থাকবো । আমি কি ওর করুণার পাত্র ।
আরে একটা মানুষ আমার সাথে থাকতে চাইতেছে না সেখানে জোর করে একজনের সাথে থাকা কত অপমান ও লজ্জা সেটা আমি বুঝি। আর আমিতো অপদার্থ নয় যে একা চলতে পারবো না । থাক তোর আত্মসম্মান নিয়ে । মা তুমি অযথা রাগ করছো। এতে নানু আরো রাগ করে । আর বলে এত বেশী বুঝো বলে তোমার জীবনটা আজ এত এলোমেলো । তোমাকে এই অবস্থায় রেখে মরলেও শান্তি পাবো না । আম্মু খুব রাগী বলে নানুর বাড়ির সবাই আম্মুকে খুব সমীহ করে চলে।


আব্বুর এই আচরণে দাদি খুব কষ্ট ফেল । দাদি এক রকম চুপ হয়ে গেল । এবং আব্বু আম্মুর তালাকের পর দাদি আমাদের গ্রামের বাড়ি চলে যায় । যাওয়ার আগে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না । বলে মা জলি বিভিন্ন জনের সাথে আমাদের বিভিন্ন সম্পর্ক হয়। পাশের বাসার লোকজনকে আমার মামা চাচা খালা ডাকি কেন । কারণ তাদের সাথে আমরা একটা সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করি । আর এইসব রক্তের সম্পর্ক হয় না তারপরও আমরা তাদের জন্য মায়া অনুভব করি । তাদের দুঃখে দুঃখ পাই , সুখে আমরা হাসি । মারে তোমার সাথে আমার ছেলে যে অন্যায় করেছে তার কোন প্রতিকার আমার কাছে নাই । ছেলে মেয়ে বড় হলে তাদের নিজের জগত হয় তখন তারা তাদের মত চলে। সেখানে মা বাবার আর কিছু করার থাকেনা । শুনো মা , তুমি মাহিনের বউ হিসাবে আমি তোমারও মা হয়ে ছিলাম । আজ তোমার আর মাহিনের তালাক না হয়ে যদি মাহিন মরে যেত তাহলে আমি তোমার মা‘ই থাকতাম। আর আজ মাহিন বেঁচে থেকেও আমি তোমার কেউ না (চোখ মুছে আঁছল দিয়ে) । (চলবে) I

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
২য় পর্ব

শোন মা জলি সম্পর্ক কাগজে কলমে লিখতভাবে হয় না । সম্পর্ক হয় মনের আদান প্রদান দিয়ে । আমি সারা জীবন তোমার শাশুড়ি মা‘ই থাকবো। আমাদের সম্পর্ক মা আর মেয়ের । আর এই সম্পর্ক থাকবে যুগ যুগান্তর । তুমি , আমি আর মৌরি এক আত্মা । তুমি আমার মা । তোমার মাঝে আমি আমার মা‘কে খুজে পেয়েছি। তোমার আচরণ , তোমার দায়িত্বজ্ঞান , তোমার প্রজ্ঞা ও প্রতিভা , তোমার ব্যক্তিত্ব ও কাজের প্রতি নিষ্ঠা এবং আমার প্রতি যত্ন । এইসবের কারণে তোমাকে আমার আমরণ শ্রদ্ধা করতে হবেই । আর মন চাইবে মরণের আগে তুমি এবং মৌরিকে কাছে পাওয়ার । বিকালের নরম নরম রৌদে দাদি আমি আর আম্মু বেলকনিতে বসা । আম্মু একটা ঔষধি গাছ এবং একটা পেয়ারা গাছ টবে লাগিয়েছে । আমি এইসব কথা না শুনে পেয়ারা তুলতে ব্যস্ত থাকি । পাশের বাসার ছাদে নয়ন ঘুড়ি উড়ানো নিয়ে ব্যস্ত। সে আম্মুকে ভয় পায় , আগে আমাদের বাসায় আসতো পড়তে । আম্মু রবীন্দ্র নাথ শুনে , এখনো স্লো সাউন্ডে বাজছে “আকাশের ওই মিটি মিটি তারার সাথ কইবো কথা নাইবা তুমি এলে”। দাদি কাঁদছে । আম্মু খুব শক্ত মনের মানুষ । আম্মু দাড়িয়ে আছে বিকালের নীল আকাশ পানে। আম্মু প্রায় আকাশ দেখে । তাই আমার মনে হয় আকাশ হতে আম্মু দৃঢ়তার শিক্ষা নেয় । কখনো দেখিনি মিথ্যা এবং চতুরতার আশ্রয় নিতে । সত্য এবং ন্যায়ে আম্মু কঠিন বলে কোন বিপদে ভেঙ্গে পড়ে না । কত সহজভাবে আব্বুকে এড়িয়ে চলছে অথচ হ্রদয়ের কান্না প্রকাশ করছে না । হয়তো আমি দেখছি না আম্মুর বরফ বরফ কষ্টগুলি।

আচ্ছা আম্মা আপনি ইচ্ছা করলে আমাদের সাথে এখানে থাকতে পারেন । নীরবতা ভেঙ্গে আম্মু দাদিকে বলে । এতে দাদির কান্না আরো বেড়ে যায় । না মা এই হয় না । কান্নারত অবস্থায় আম্মুর কথার জবাব দেয় দাদি । এতে আমার খুব মায়া হয় , আমি গিয়ে দাদিকে জড়িয়ে ধরি । এতে যেন পানির স্রোতে সাগরের বাঁধ ভেঙ্গে যায় । সেকি কান্না দাদি আর আমি । না আম্মু বিচলিত নয় । উনি গাছ দুইটার টবে পানি ঢালছেন । আমি রেগে গিয়ে আম্মুকে বলি দেখো আমি আর তুমি দাদির জন্য এই পানি। টবে যেমন পানি দিলে গাছ বাঁচবে তেমনি আমি আর তুমি পাশে থাকলে দাদি বাঁচবে। তখন আম্মু বলে আমিতো বলছি উনাকে এখানে থাকতে কিন্তু তোমার দাদি থাকতে রাজি না । থাকতে মন চায় মা কিন্তু নানাজন নানা কথা বলবে । আর আমি এখানে থাকলে মাহিন আমার সাথে যোগাযোগ করবে যা তোমার ভালো লাগবে না । শত হলেও আমি তার মা । আর তার অন্যায়ের সাজা মা হিসাবে আমিই ভোগ করি । এইটা আমার পাপ্য তাহলে ভাববো তুমি আমাকে ক্ষমা করেছো ।

না না আম্মা , আমি কখনোই আপনাকে অপরাধী মনে করিনি। মাহিনকেও না । যা হচ্ছে তা আমার কপালে লিখন। এই শহরে কত শত মানুষ আছে নিরহ , একা , সহায়-সম্বলহীন আমরা কি তার হিসাব রাখি । না হয় আমিও তাদের ভিতর একজন । আমি চাকরী করছি মৌরিকে নিয়ে কেটে যাবে বাকি জীবন । আপনি একদম ভাববেন না , শুধু দোয়া করবেন । হ্যা মা দোয়া ছাড়া আর কিবা করতে পারবো । তুমি দোয়া চাইতে হবে না , আর আমিও মুখে প্রকাশ করতে হবে না । এই যে তোমার প্রতি , মৌরির ভালোবাসা । তোমাদের কাছে না পাওয়ার কষ্ট , এটার জন্য মাহিন দায় তবে মা হয়ে তাকে আমি অভিশাপ দিচ্ছি না । কিন্তু মনের মালিকতো সৃষ্টা । তিনিই দোয়া-বদদোয়া মন বুঝে তিনিই নির্ধারণ করবেন। আমি এখানে থাকলে মাহিন আমার মাধ্যমে মৌরির সাথে যোগাযোগ করবে । দশজন দশ কথা বলবে । যেটা তোমার মানতে খারাপ লাগবে। আর আমি এখানে থাকলে সে তার নতুন সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। মা ও মেয়ের দায়িত্ব তোমার কাঁধে দিয়ে সে নিশ্চিত থাকবে । আমি তোমার জায়গায় থাকলে বলতাম তার মেয়ে তার কাছে নিয়ে যেতে। (চলবে) I

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৩য় পর্ব ।

বাচ্চার দায়িত্ব মা এবং বাবা দুইজনেরই । তুমি কি পারবে না মৌরিকে ছাড়া থাকতে ,মাহিন যখন সব ভুলে থাকতে পারবে তুমি কেন পারবে না । দাদি রাতে সব গুছিয়ে রাখে , সকালে চলে যাবে । সকালে আমি আর আম্মু দাদিকে রেলগাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আসি । দাদি চলে যায় গ্রামের বাড়িতে। দাদি আর আম্মুর একটা দারুণ মিল তা হল দুইজনে শক্ত মনের। কিন্তু আমার মন এদের কারো মত না । আমি এক বোতল পানি কিনে পান করে গলা সতেজ করি । মন চায় দাদির সাথে গ্রামে চলে যেতে । কিন্ত আম্মু !


স্বামী ও স্ত্রীর অবান্তর ইগোতে সন্তান যে কতটা মানসিক বিকালঙ্গ হয় তা উনাদের অজানা থাকে। তবে আমার বেলায় আমি আম্মুকে দোষ দিতে পারছি না । আম্মু আমার আব্বুকে অগাধ বিশ্বাস করেছেন । সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন , কানাডা যাওয়ার আগে আব্বু এমন ছিল না । আব্বু কানাডা গিয়ে অনেক দিন আমাদের কোন খোজ রাখেননি। তখন আম্মুই সংসার চালিয়েছেন ।
আমার আপনজন সবাই আছে অথচ আবার কেউ যেন নেই । আব্বু কি আর আসবে বাংলাদেশে , দাদি কি আর আসবে আমাদের বাসায় । ফোনে হয়তো কুশলাদি জানবো কিন্তু এক বৃত্তে আসা হবে না । আমার খুব কান্না করতে ইচ্ছে করছে । কিন্তু স্টেশনে এত মানুষের সামনে কাঁদলে আম্মুর খারাপ লাগবে । গাড়ি আসবে আবার চলে যাবে আমার আর চড়া হবে কিনা অজানা ।
কয়েক মাস পরে আব্বু ফোন দেয় তবে আমার সাথে কথা বলতে নয় । আমার সাথে সপ্তাহে দুইদিন কথা বলে। আব্বুর ফোন আসলেই আম্মু আমাকে ফোন দিয়ে দুরে সরে যান। আর কখনো জিজ্ঞাসা করেন না আব্বু কি বলেছে। আব্বু প্রতিবার কথার একটা পর্যায় এসে জানতে চান মৌরি তোমার আম্মু কেমন আছে । তখন আমার খুব রাগ হয় তাই তাচ্ছিল্য করে বলি ভালো!আর এখন রাখি বলেই ফোন কেটে দিই। ফোন আসার সাথে সাথে আমি রিসিভ করে হ্যালো বলতেই আব্বু বলে ফোন তোমার আম্মুকে দাওতো মা । তখন রাগ আসে , বলতে বাধ্য হই আম্মু কথা বলবে না । তখন আব্বু নরম সুর করে বলে মৌরি ফোনটা জলিকে দাও । আমি আম্মুর রুমে গিয়ে বলি আব্বু তোমাকে চাইছে আম্মু । উনি কোন কথা না বাড়িয়ে ফোন নিয়ে বলে মাহিন আমি জলি বলছি । আমি দেখলাম বেশ কিছু সময় চুপ থেকে হ্যা শুনছি বলো আম্মু ,তারপর সবশেষে বললো আচ্ছা ঠিক আছে আমি আম্মাকে ফোন করে বলে দিব । ফোন কথা বলে আম্মুর কোন ভাবাবেগ দেখি না । আমি চাই আব্বু যেন আম্মু কটু বলে শাসিয়ে দেয় । আমার রাগ ধরে রাখতে পারি বলে কান্না আসে । আমি দৌড়ে আমার রুমে এসে দরজা বন্দ করে জোরে ফ্যান চালিয়ে দিই। কাঁদতে থাকি বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে ।

আম্মু সূর্যের রশ্মি কখনো সহ্য করতে পারে না । বাহিরে বের হলেই সান-গ্লাস পরেই বের হতে হয়। আর আজ গ্লাস দিয়ে দেখা দিনের আলো সেই নারীকে মানুষের কুৎসিত কাজ সহ্য করতে হচ্ছে । খালি চোখে দেখছে দুনিয়া কত কণ্টক । আমার প্রতি , আম্মুর প্রতি আব্বুর কি একটুও মায়া হলো না। চারজন মানুষ এক ঘরে থেকে কত আনন্দ , কত হাসি মজার গল্প আছে । কত সহজে মানুষ সব ভুলে যায়। আজ দাদি গ্রামে নিঃসঙ্গ , অসহায় । আম্মু জীবন জীবিকার জন্য রোজ ছুটে চলা । আর আমি কলেজ হতে এসে নীরব ভূতের বাড়ির পাহারাদার । (চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৪র্থ পর্ব ।

আম্মু কেন তুমি আব্বুর সাথে কথা বলেছো। আম্মু সেই আগের মত ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে আমাকে কাছে টেনে নেয়। শুনো মা মৌরি , কোন অভিমান - অভিযোগ ,রাগ ও আবেগের অবিশিষ্ট মাত্রও তোমার আব্বুর প্রতি নাই । আমি ফোন রিসিভ না করলে উনি ভাববেন আমি তার জন্য কষ্ট পাই বলে রাগ করি । তোমার আব্বু আমার জীবনের কোথায়ও নাই। কথাটা শুনে আমার আবার কান্না পায় , আমি আরো জোরে কাঁদতে থাকি আম্মুর সামনে। আম্মু উঠে চলে যায় । আমি ভাবতাম আব্বু এসে একদিন হাত জোড় করে আম্মুর কাছে মাফ চাইবে আর আম্মু ক্ষমা করে দিবে। আমি এখন বুঝতে পারলাম আমার আম্মু আছে , আব্বু আছে কিন্তু আমরা আর কখনোই এক পরিবার হবো না । মনে হয় আমার জন্মটা তাদের ভুল ছিল। নিজের প্রতি মায় হয় না , করুণা হয়। এখন বুঝতে পারি আব্বু কেন আমার দুধ আনতে অনিহা করতো । কোথায় ভুল আম্মুর নাকি আমার , নাকি সৃষ্টিকর্তার । অথচ কখনো ঝগড়াও দেখি নাই দুইজনে। নাকি আব্বু আমার আম্মুকে মন হতে মেনে নিতে পারিনি । কিন্তু কেন । কিন্তু কেন আমাকে পৃথিবীতে আসতে হলো ! তাই হয়তো আব্বু কানাডা গিয়ে পালিয়ে বাঁচে। মিথ্যার আশ্রয়ে নিজের স্বাধীনতা নিয়ে খোজে। আব্বু নিজে ইচ্ছে করেই আমাদের সংসারটা ভেঙ্গে ফেলেছে , যা আর কখনো জোড়া লাগবে না ।


পরের দিন আম্মু দাদিকে ফোন করে এবং অনেক সময় ধরে কথা বলে। এক পর্যায় বলে আম্মা মাহিন আপনাকে নিয়ে অনেক চিন্তায় আছে। আপনি নাকি তার ফোন রিসিভ করেন না । আর আম্মা আপনি ফোন রিসিভ না করলে মাহিন বার বার আমার কাছে ফোন করবে যা আমার ভালো লাগবে না। আপনি ফোন রিসিভ করে যা বলার বলে দিবেন। দাদি প্রতিদিন ফোন দিয়ে আমাদের খোজ খবর নেয় । আম্মুর সাথে দীর্ঘক্ষন কথা বলে , মাঝে কান্নাকাটিও করে। বেড়াতে যেতে বলে কিন্তু আম্মু সময় করতে পারে না। তাই নানির বাসায় বেড়াতে যেতাম আগে । এখন আর সেখানেও যাওয়া হয় না। গেলে নানি আকাশ বাংলার খবর পড়া শুরু করে যেন । নানি মামা ও মামনি আমার সামনেই আব্বুকে নিয়ে নানা আজেবাজে কথা বলে যা শুনতে অরুচিকর । আর আম্মুকে বলে চাকরী করিস বলে কি হয়েছে , মৌরি কি তোর একার মেয়ে। মাহিনকে বলবি মৌরির সমস্ত খরচ দিতে । তোর একটা ভবিষ্যৎ নাই। শেষ বয়সে তোকে কে দেখবে , এখন কিবা এমন বয়স তোর । সারা জীবন কি একা থাকবি। আম্মু তখন খুব রেগে যায়। বলে আমার তোমাদের বাসায় আসাটা ভুল হয়েছে । বাসায়ই থাকা ভালো ছুটির দিনে । আর তখন নানি চুপ হয়ে যায়।

আমারও একদম ভালো লাগে না নানির বাসায়। তাই আসতেও মন চায় না তবুও আসি কারণ আমাদের কোথায়ও যাওয়ার তেমন একটা জায়গা নাই। আসলে প্রত্যেক মা তার সন্তানের ভালোটাই চিন্তা করে। যেমন আম্মু আমার জন্য দুনিয়া ছেড়ে দিতে পারে কিন্তু আমাকে না। মান মর্যদায় সন্তান যেত বড় হোক পিতামাতার কাছে সেই শিশুটি থাকে। সন্তানের বিপদে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী চিন্তিত হয় পিতামাতা অথচ এক সময় আমরা কতনা অবহেলা করি। ভুলে যাই আমি একদিন শিশু ছিলাম। তাঁরা বৃদ্ধ হয়ে এখন শিশুর মত আচরণ করছে । একদিন আমিও এই পর্যায় আসবো। সকালে উঠে দেখি সুর্য পুর্ব দিগন্তে উঠে জানান দিচ্ছে আলোর । আর দিন শেষে বুঝি না সুর্য এখন নাই এখন অন্ধকার ।


আব্বু আর আম্মুর তালাকের পর অন্য আত্নীয় স্বজন সবাই এড়িয়ে চলে , আড়চোখে দেখে। আর আমার মামনি খুব ভালো রান্না করে । তাই আমি বায়না ধরি নানির বাসায় যাওয়ার। মাঝে মাঝে মন চায় যেন পাখীর মত উড়াল দিই । মা আর মেয়ে কতই আর কথা বলা যায়। আম্মু সকালে অফিস চলে যায় , আমি উনার আগেই কলেজ চলে যাই । রাতে দেখা আর একসাথে খাওয়া এই মা মেয়ের মিলন । শুক্রবার আসলে আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকি আর ভাবি এই মা যদি আমার না থাকতো তাহলে কত না কষ্ট হতো । আম্মু একটু যদি নানির কথায় সায় দেয় তাহলে আমাকে কখনো তারা মেনে নিতো না । মা ছাড়া হয়ে দাদির সাথে গ্রামে চলে যেতে হতো। দাদি কি আর মায়ের অভাব পূরণ করতে পারতো। (চলবে)।


মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৫র্ম পর্ব ।
বছরের শেষ মাসে আমার আর আম্মুর লম্বা ছুটির দিন। একদিন রাতে খাবার শেষে আমি আর আম্মু ভাবতে লাগলাম কোথায় বেড়াতে যাওয়া যায়। কক্সবাজার , রাঙ্গামাটি নাকি সাজেক বেলী । মা মেয়ে ভাবতেছি আর ভাবতেছি এমন সময় আম্মু বললো মৌরি তোমার দাদির কাছে গেলে কেমন হয় । আমি আনন্দে লাফ দিয়ে উঠি , এবং আম্মুর গলা জড়িয়ে ধরে বলি ধন্যবাদ মামনি , তুমি সত্যিই অনেক অনেক ভালো। সকালে উঠে আম্মু আর আমি শপিং করলাম দাদির জন্য সহ। এবং পরের দিন সকালে উঠে রওয়ানা হলাম গ্রামের উদ্দেশে । আমি আর আম্মু যখন বাড়ির গেইটের সামনে রিক্সা হতে নামবো তখন পাশের বাড়ির এক চাচ্চু দেখতে পায়। উনি এসে আমাদের ব্যাগ রিক্সা হতে নামিয়ে গেইটের সামনে রেখে গেইটে ধুমধাম ধাক্কা দিতে লাগে। এবং চেঁচিয়ে দাদিকে ডাকতে লাগে। দেখো চাচী কে এসেছে , গেইট খোলো জলদি।

আমরা চাচার পিছনে দাঁড়িয়ে আছি । দাদি এসে গেইট খুলতে চোখ পড়লো আমাদের উপর । এমনি হাত বাড়িয়ে দিলো আমার দিকে , বললো মৌরি । আমি দৌড়ে গিয়ে দাদিকে জড়িয়ে ধরলাম। দাদি তখন কাঁপছে মনে হয় যেন এখনি পড়ে যাবে মাটিতে
অথচ দাদি শক্ত মনের মানুষ , না হলে একা একা বাড়িতে কিভাবে থাকেন। দাদি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বার বার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন । আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে আমাদের ভিতরে যেতে বলেন। আর আম্মুকে বলতে লাগলেন জলি মা , তুমি আমার সত্যিই মা । একমাত্র মা‘ই বুঝতে পারে সন্তান কি চায় । এখানে একা একা আমি যেন মরার আগেই মরে আছি। তোমরা এসে আমাকে অক্সিজেন দিলে । কথা বলতে বলতে আমরা ঘরে আসি , ড্রয়িং রুমে বসে দাদি আমাদের জন্য নাস্তা তৈরি করে । চাচ্চুকে বলে বাবারে আমার মার জন্য কচি নারিকেল নিয়ে আসো । গাছ হতে কিংবা বাজার হতে তুমি যেখান হতে পারো নিয়ে আসো। কচি নারিকেলের পানি আমার মায়ের খুব প্রিয়। আম্মু মুচকি হেসে বলে না থাক আম্মা আপনি এত অস্থির হবেন না । আমরা থাকবো কিছু দিন , আমাদের এখন ছুটির সময় । পরে খাওয়া যাবে , ভাই আপনি বসেন আমাদের সাথে। সত্যিই মা তোমরা থাকবে কিছু দিন আমার কাছে! জ্বী আম্মা , থাকবো ।

দাদি আনন্দে বার বার কেঁদে উঠছে । আমি এই রুম ওই রুম ছুটাছুটি করতেছি। এই ফাঁকে দাদি ড্রয়িং রুমে থাকা আব্বুর ছবিটা চাচাকে দিয়ে অন্যত্র সরিয়ে ফেললেন। দাদি মনে করে আম্মু এই ছবি দেখলে মন খারাপ করবে , এবং নিজেকে অপ্রস্তুত মনে করবে এইখানে। দাদি আম্মুকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে আর নানা প্রশ্নো করছে । মা যেমন নিজের মেয়েকে অনেক দিন পর দেখলে আদর যত্নে কমতি না হয় তার চিন্তায় থাকে , তার চেয়েও বেশী দাদি করছে। ভ্রমনের ক্লান্তি যেন উধাও দাদির বাড়িতে। আম্মু দাদিকে কাজে সাহায্য করতে চাইলে দাদি বারণ করে , আম্মু না শুনলে আদর মিশ্রিত দমক দেয়।

স্নিগ্ধ বিকাল , গ্রামের সবুজ প্রকৃতি । কৃষকদের ধান কাটা আর কৃষাণীদের দলবেধে উঠানে কাজ করা শ্যামল বাংলার চিরাচরিত প্রথা আমাকে ব্যাকুল করে। একদল ছেলেমেয়ে ধান কাটা জমিতে ধান কুড়িয়ে-পাওয়া ধান আমাকে দেখায়। আমি তাদের কাছে ডেকে ছবি তুলি মোবাইলে। আরেকটা ছেলে ইদুরের গর্তে ধান খোজে । হাঁড় কঙ্কাল ছেলেমেয়ে গুলির হাসি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সুন্দর । আমি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করি ফেলি । তারা ধান কুড়ানো রেখে আমার সাথে ছুটাছুটিতে মেতে উঠে। একটা লোক তিনজন লোক নিয়ে পাশ কেটে চলে যায়। আমি সালাম দিলে জবাব না দিয়ে পাশ কাটে। একটা ছেলে বলে আপা এইটা কবির মেম্বার । সরকারী সব চাল ডাল এই বেটা খায় । আমার বাপ কাজ করতে পারে না অসুখ তবুও একটু রিলিফও দেয় না। সবাই অনেক ভয় করে তাকে। আপনার দাদি আমাদের অনেক উপকার করে । আমার মা কাজ করে দিয়ে আসে দাদির । (চলবে) ।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৫১৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৭/০৫/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সঞ্জয় শর্মা ০৩/০৬/২০২০
    মুগ্ধ..

    পড়ার সময় চোখের সামনে যেন ফুটে উঠল চিত্র গুলো।
  • সিবগাতুর রহমান ১৪/০৫/২০২০
    অনেক ভালো লেগেছে
  • একদম যথাযথ সাবলিল উপস্থাপন।
  • রবিউল আলম ০৯/০৫/২০২০
    Nice
  • এত সুন্দর করে লিখেছেন যে মুগ্ধ হয়ে গেলাম
    • ফয়জুল মহী ০৭/০৫/২০২০
      সাহিত্যে আপনার বিচরণ সুখময় হোক ।
  • Fine
  • ভালো।
  • চমৎকার লিখেছেন।
 
Quantcast