নারী
জানলার পাশে দাঁড়িয়ে সূদুর নীল আকাশ দেখছে স্বস্তিকা, আজ তার বয়স চল্লিশ। জীবনের যাঁতাকলে পিষে যাওয়া এক নারী। একাকীত্ব তাকে যেন গ্রাস করেছে। অপেক্ষা শুধুই মৃত্যুর-
কিন্তু একদিন সবই ছিলো তার , বেঁচে থাকার ইচ্ছা, স্বপ্ন ভালোলাগা ভালোবাসা........।
বাবা মার হাত ধরে প্রথম কলকাতায় আসা। বাবা প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক , মা মাল্টিন্যাশনাল কম্পানিতে কর্মরতা। মায়ের সঙ্গে বাবার এতটুকু মিল নেই, তবু এক ছাদের তলায় , হঠাৎ একদিন সে জানতে পারে
তার মা ডিভোর্স চায় , তাকে ফেলে নতুন করে বাঁচতে চায়। মার এই চলে যাওয়াটা মন থেকে মেনে নিতে পারেনি তার বাবা, তাই অজানা পথে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় একদিন। ছোট্ট স্বস্তিকার কথা কেউ আর ভাবেনা।
জেঠুর দায়িত্বে তাকে পাঠানো হয় বডিং স্কুলে। বেঁচে থাকার অবলম্বনে স্কুলকেই আকড়ে ধরে সে। একাকীত্বে নিজেকে মানিয়ে নেই নিজেয়।
বেশ কয়েক বছর পার হয়, আজ সে আর ছোটো নয়, এক অপরূপ নারী।
শান্ত স্বভাব, সদা হাস্যময়। বাবার মতোই অধ্যাপক হতে চায় সে, তার মাথাতেও সাহিত্যের পোকা, ডাইরির পাতায় ভরিয়ে রাখে গল্প কবিতা।
এভাবে সময় পার হতে থাকে। গতিহীন জীবনের চলার পথে পরিচয় হয়
সৌভিকের সাথে। সৌভিকের মধ্যেই তার বাবাকে খুঁজে পায় সে। বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ দুটো মন একসময় হয়ে ওঠে জীবন সঙ্গী। প্রায় পাঁচ বছরের প্রেম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আরো বছর পাঁচ কেটে যায় আনন্দে, এর মধ্যেই তাদের সুখের জীবনে আসে নতুন অতিথি, তাদের ছোট্ট মেয়ে দিয়া।
স্বস্তিকা আজ যেন পরিপূর্ণ পুরনো অতীত তার আর মনে পড়ে। কিন্তু একি ভাগ্য মেয়ের যখন বছর দুই তখন হঠাতি একদিন অ্যাক্সিডেন্টে মৃত্যু হলো সৌভিকের। অন্ধকার নেমে এলো তার জীবনে। ছোট্ট দিয়া না বুঝলেও স্বস্তিকা জীবন সমুদ্রে হারিয়ে যায়, কি করবে সে, কি ভাবে মানুষ করবে ছোট্ট দিয়া কে? তার জেঠু জেঠিমা চায় আবার সে শুরু করুক নতুন জীবন। তার বারবারই মনে হয় নিজের জীবনের সুখে থেকে অনেক দামী তার মেয়ে,
অন্য কারোর আগমনে তাকে যদি কষ্ট পেতে হয়। মনে পরে মা ছাড়া কাটানো সেই ছোটোবেলার দিন গুলো। সে সিদ্ধান্ত নেয় তার সৌভিকের স্মৃতি আর একমাত্র মেয়ে কে নিয়েই সে বাঁচবে।
সৌভিকের স্মৃতি আগলে তার মনের মতো করে মানুষ করলো দিয়া। মা মেয়ের ভালোবাসা আবার ভুলিয়ে দেয় পুরনো সবকিছুকে।
ছোট্ট দিয়া আজ বেশ বড়ো, তার বিয়ে রক্তিমের সাথে। বাবা মার একমাত্র ছেলে রক্তিম সদ্য ইন্জ্ঞিয়ার, চাকরি জন্য বিদেশে পা দেবে, সঙ্গে দিয়া কেও নিয়ে যেতে চায়। স্বস্তিকার মন খারাপ, তবু মেয়ের ইচ্ছায় বাঁধ সাদেনি সে।
মেয়ে সন্তান একদিন তো চলেই যাবে। আজ স্বস্তিকা বড়ই একা ভীষণ একা
ডাইরির পাতায় হাত দিতেই হঠাৎ তার মনে পড়লো অনিরুদ্ধর কথা,
এক কবি সন্মেলনে দেখা হয়েছিলো দুজনের অবিকল সৌভিক। তাই খুব সহযেই ওদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। একদিন সে অনুভব করে অনিরুদ্ধ ভালোবাসে তাকে। বিভীষিকার মতোই সরে আসে স্বস্তিকা, কত বড় ভুল, দিয়াও মেনে নেয়না মা কে। স্বস্তিকা বারবার তার মে কে বোঝায় কোনোদিন সে নিজের কথা ভাবেনি।
আজ দিয়ার বিয়ে, জানলার কাছে দাঁড়িয়ে পুরনো কথা ভাবছিলো স্বস্তিকা,
ভাবনা গুলো আজ তার চোখ ভরিয়ে তুলেছে জলে।
মা, কে! ও তুই
বাড়ির কাজের মেয়ের ডাকে সম্বিত ফিরে পায় স্বস্তিকা,
মা দিদিমনি এসেছে তোমাকে প্রণাম করতে ।
চোখ মোছে স্বস্তিকা, ঘুরে হাসি মুখে জড়িয়ে ধরে মে কে
। দিয়া জোর করে তাদের সাথে স্বস্তিকা কেউ যেতে হবে।
দিয়ার কথায় একগাল হাসে স্বস্তিকা। আর নয় এবার তার নিজেকে
লুকিয়ে রাখার সময়। আজ যে সে হিসেবে বসবে, জীবনের হিসেব
কি পেয়েছে, কি হারিয়েছে তার হিসেই। নিজের জন্য সে কোনোদিন ভাবেনি।
কিন্তু আজ তার জন্য কেউ ভাবলো না।
অনিরুদ্ধর শেষ কথা গুলো আজো কানে বাজে" যদি তোমার কোনোদিন আমাকে প্রয়োজন হয় এসো আমার কাছে, আমি অপেক্ষায় থাকবো"
প্রয়োজন, ভীষণই প্রয়োজন ছিলো আজ অনিরুদ্ধের তার জীবনে, আজ আর স্বস্তিকার কোনো ভয় নেই স্বীকার করতে, সেও ভালোবেসে ছিলো তাকে
কিন্তু মুখ ফুটে বলেনি কোনোদিন।।
কিন্তু একদিন সবই ছিলো তার , বেঁচে থাকার ইচ্ছা, স্বপ্ন ভালোলাগা ভালোবাসা........।
বাবা মার হাত ধরে প্রথম কলকাতায় আসা। বাবা প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক , মা মাল্টিন্যাশনাল কম্পানিতে কর্মরতা। মায়ের সঙ্গে বাবার এতটুকু মিল নেই, তবু এক ছাদের তলায় , হঠাৎ একদিন সে জানতে পারে
তার মা ডিভোর্স চায় , তাকে ফেলে নতুন করে বাঁচতে চায়। মার এই চলে যাওয়াটা মন থেকে মেনে নিতে পারেনি তার বাবা, তাই অজানা পথে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় একদিন। ছোট্ট স্বস্তিকার কথা কেউ আর ভাবেনা।
জেঠুর দায়িত্বে তাকে পাঠানো হয় বডিং স্কুলে। বেঁচে থাকার অবলম্বনে স্কুলকেই আকড়ে ধরে সে। একাকীত্বে নিজেকে মানিয়ে নেই নিজেয়।
বেশ কয়েক বছর পার হয়, আজ সে আর ছোটো নয়, এক অপরূপ নারী।
শান্ত স্বভাব, সদা হাস্যময়। বাবার মতোই অধ্যাপক হতে চায় সে, তার মাথাতেও সাহিত্যের পোকা, ডাইরির পাতায় ভরিয়ে রাখে গল্প কবিতা।
এভাবে সময় পার হতে থাকে। গতিহীন জীবনের চলার পথে পরিচয় হয়
সৌভিকের সাথে। সৌভিকের মধ্যেই তার বাবাকে খুঁজে পায় সে। বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ দুটো মন একসময় হয়ে ওঠে জীবন সঙ্গী। প্রায় পাঁচ বছরের প্রেম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আরো বছর পাঁচ কেটে যায় আনন্দে, এর মধ্যেই তাদের সুখের জীবনে আসে নতুন অতিথি, তাদের ছোট্ট মেয়ে দিয়া।
স্বস্তিকা আজ যেন পরিপূর্ণ পুরনো অতীত তার আর মনে পড়ে। কিন্তু একি ভাগ্য মেয়ের যখন বছর দুই তখন হঠাতি একদিন অ্যাক্সিডেন্টে মৃত্যু হলো সৌভিকের। অন্ধকার নেমে এলো তার জীবনে। ছোট্ট দিয়া না বুঝলেও স্বস্তিকা জীবন সমুদ্রে হারিয়ে যায়, কি করবে সে, কি ভাবে মানুষ করবে ছোট্ট দিয়া কে? তার জেঠু জেঠিমা চায় আবার সে শুরু করুক নতুন জীবন। তার বারবারই মনে হয় নিজের জীবনের সুখে থেকে অনেক দামী তার মেয়ে,
অন্য কারোর আগমনে তাকে যদি কষ্ট পেতে হয়। মনে পরে মা ছাড়া কাটানো সেই ছোটোবেলার দিন গুলো। সে সিদ্ধান্ত নেয় তার সৌভিকের স্মৃতি আর একমাত্র মেয়ে কে নিয়েই সে বাঁচবে।
সৌভিকের স্মৃতি আগলে তার মনের মতো করে মানুষ করলো দিয়া। মা মেয়ের ভালোবাসা আবার ভুলিয়ে দেয় পুরনো সবকিছুকে।
ছোট্ট দিয়া আজ বেশ বড়ো, তার বিয়ে রক্তিমের সাথে। বাবা মার একমাত্র ছেলে রক্তিম সদ্য ইন্জ্ঞিয়ার, চাকরি জন্য বিদেশে পা দেবে, সঙ্গে দিয়া কেও নিয়ে যেতে চায়। স্বস্তিকার মন খারাপ, তবু মেয়ের ইচ্ছায় বাঁধ সাদেনি সে।
মেয়ে সন্তান একদিন তো চলেই যাবে। আজ স্বস্তিকা বড়ই একা ভীষণ একা
ডাইরির পাতায় হাত দিতেই হঠাৎ তার মনে পড়লো অনিরুদ্ধর কথা,
এক কবি সন্মেলনে দেখা হয়েছিলো দুজনের অবিকল সৌভিক। তাই খুব সহযেই ওদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। একদিন সে অনুভব করে অনিরুদ্ধ ভালোবাসে তাকে। বিভীষিকার মতোই সরে আসে স্বস্তিকা, কত বড় ভুল, দিয়াও মেনে নেয়না মা কে। স্বস্তিকা বারবার তার মে কে বোঝায় কোনোদিন সে নিজের কথা ভাবেনি।
আজ দিয়ার বিয়ে, জানলার কাছে দাঁড়িয়ে পুরনো কথা ভাবছিলো স্বস্তিকা,
ভাবনা গুলো আজ তার চোখ ভরিয়ে তুলেছে জলে।
মা, কে! ও তুই
বাড়ির কাজের মেয়ের ডাকে সম্বিত ফিরে পায় স্বস্তিকা,
মা দিদিমনি এসেছে তোমাকে প্রণাম করতে ।
চোখ মোছে স্বস্তিকা, ঘুরে হাসি মুখে জড়িয়ে ধরে মে কে
। দিয়া জোর করে তাদের সাথে স্বস্তিকা কেউ যেতে হবে।
দিয়ার কথায় একগাল হাসে স্বস্তিকা। আর নয় এবার তার নিজেকে
লুকিয়ে রাখার সময়। আজ যে সে হিসেবে বসবে, জীবনের হিসেব
কি পেয়েছে, কি হারিয়েছে তার হিসেই। নিজের জন্য সে কোনোদিন ভাবেনি।
কিন্তু আজ তার জন্য কেউ ভাবলো না।
অনিরুদ্ধর শেষ কথা গুলো আজো কানে বাজে" যদি তোমার কোনোদিন আমাকে প্রয়োজন হয় এসো আমার কাছে, আমি অপেক্ষায় থাকবো"
প্রয়োজন, ভীষণই প্রয়োজন ছিলো আজ অনিরুদ্ধের তার জীবনে, আজ আর স্বস্তিকার কোনো ভয় নেই স্বীকার করতে, সেও ভালোবেসে ছিলো তাকে
কিন্তু মুখ ফুটে বলেনি কোনোদিন।।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
নীল-অভিজিৎ ০৩/০৫/২০১৬
-
আব্দুল মান্নান মল্লিক ১৪/০৩/২০১৬বেশ ভালো লিখেছেন, ভালো লাগলো
-
পদ্মনীল ১৩/০৩/২০১৬বেশ
-
জয়শ্রী রায় মৈত্র ২৯/০২/২০১৬গল্পের থিম খুব সুন্দর । কিন্তু গল্প পরিবেশনে কয়েকটি বিষয়ে সচেতন হতে হবে । সেগুলো হল গল্পের কাহিনী যেন পাঠক পাঠিকাদের কাছে আকর্ষণীয় হয় গল্প বলার ঢঙে । এখানে কয়েকটি জায়গায় আরেকটু বিশদে যেতে হবে । বানান মুদ্রণও একটু দেখে নিতে হবে । শুভেচ্ছা রইল ।
-
suman ২৮/০২/২০১৬Besh valo laglo....ar ektu shomoy dile onoboddyo hoye uthto....kichu shahittyo....kichu bastobota...kichu upoma ...
-
হরিশ বর্মন (বুলবুলি) ২৬/০২/২০১৬ভালো লাগলো।
-
শান্তনু ব্যানার্জ্জী ২৫/০২/২০১৬ভালো লাগল দিদি । আমার পাতায় স্বাগত জানালাম ।
-
ধ্রুব রাসেল ২৫/০২/২০১৬তারুণ্যে স্বাগত। ভাল থাকুন, ভাল লিখুন।
-
মো:মনিরুল ইসলাম(মনির) ২৫/০২/২০১৬অনেক ভালোলাগলো
-
নির্ঝর ২৫/০২/২০১৬অসাধারণ হয়েছে
-
দেবব্রত সান্যাল ২৫/০২/২০১৬তারুণ্যে আপনাকে স্বাগত। আরও লিখুন। গল্প বলেন ভালো , আরেকটু দিতেলে যান। অনেকগুলো ছাপার ভুল আছে , দয়া করে শুধরে নিন।
শুভেচ্ছা রইল।