www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অন্ধকারের মেয়েটি

আমিন সাহেবের আজও দেরি হলো অন্য সব দিনের মতই। একই নিয়মে অফিস থেকে বের হতে হতে সাড়ে পাঁচটা ছয়টা। এরপর অটোরিক্সা, বাস, রিক্সা এসব যান বাহনে করে বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় রাতের অন্ধকার নেমে আসে।
    এই রকম একদিন আমিন সাহেব ফিরছিলেন অফিস থেকে। বাসায় ঢোকার মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ। বড় রাস্তা পার হয়ে একটা মোড় যেখান থেকে বাসায় যাওয়ার ছয় ফুট প্রসস্ত ছোট  রাস্তা। এখানে শহুরে কোলাহল অনেক খানিই কম। তদুপরি সেই মুহূর্তে বিদ্যুৎ না থাকায় ঐ চিকন রাস্তাটাকে আরো বেশি নিরিবিলি মনে হচ্ছিল। অন্ধকারে তিন চার গজের মধ্যে মানুষ দেখা যায় কোন রকমে। কিন্তু চেনার উপায় নাই কিছুতেই।
   সেই চিকন রাস্তায় ঢোকার পর মাত্র কয়েক পা হাঁটলেন আমিন সাহেব। একটা মেয়ের কান্নার আওয়াজ এসে বাজল তার কানে। তিনি দেখলেন দুই গজ সামনেই একটা মেয়ে বড় চারতলা বাড়িটার প্রাচিরে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছেন। "আছেন"শব্দটি এই জন্য ব্যবহার করা হল যে মেয়েটিকে আমিন সাহেবের ভদ্র পরিবারের ও শিক্ষিত মনে হয়েছিল।
    আমিন সাহেব অবাক হলেন। এখানে প্রায় অন্ধকারে একটা মেয়ে কেন কাঁদছে? মেয়েটি মোবাইল ফোনে কথা বলছেন। দিনের বেলা হলে হয়তো বিষয়টা তার নজরেই আসতো না। যেহেতু তখন প্রায় রাত এমতাবস্থায় একটা মেয়ে অন্ধকারে দাড়িয়ে কাঁদছেন, একারনেই তিনি কৌতুহল ধরে রাখতে পারছেন না। কিন্তু কি করবেন তিনি। মেয়েটির সাথে কথা বলবেন নাকি না বলে সোজা চলে যাবেন বাসায় একথাই শুধু ভাবছেন বারবার।
      আমিন সাহেব দেখলেন মেয়েটি কারো সাথে কথা বলছেন মোবাইল ফোনে। তার কথার বেশির ভাগই কান্নাজরিত। এ কারনে আবার অনেক কথা বোঝাও যাচ্ছে না ঠিক মত। আমিন সাহেব একটু থেমে  তার কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করলেন।
    আমিন সাহেব মেয়েটির কথা শুণে যা বুঝলেন তাতে তার মনটা খারাপ হয়ে গেল নিমেষের মধ্যে। সেই সাথে ক্লান্ত শ্রান্ত হওয়ায় মাথাটাও যেন ঘুরতে শুরু করলো। আমিন সাহেব মেয়েটির কথা শুণে যা বুঝলেন তা হল এই রকম-
    মেয়েটি রাগ করে স্বামির ঘর থেকে বের হয়ে এসেছে। তার স্বামি একজন রাগি মানুষ। মেয়েটিকে মাঝে মাঝে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হয় মাঝে মাঝে। তার ঘরে ছোট সন্তান অাছে। বাড়ি দুরের কোন জেলায়। নিত্য নির্যাতনের এক পর্যায়ে সে অভিমান করে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছে। সম্ভবত শহরে তার কোন আত্নিয় স্বজন নাই। থাকলে এখানে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে না থেকে সেখানেই যেত নিশ্চয়ই।
    মেয়েটির স্বামি মোবাইলে তার অবস্থান জানার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কিছুতেই মেয়েটি নিজের অবস্থান বলছেন না। মেয়েটি কঠোর পণ করেছেন যে  আর বাসায় ফিরবে না। তার দু'চোখ যে দিকে যায় সে দিকেই চলে যাবেন।
     আমিন সাহেব চিন্তায় পরে গেলেন। এখন তার কি করা উচিৎ। তিনি কি সোজা বাসায় চলে যাবেন না কি মেয়েটির কাছে গিয়ে সমস্যার কথা জানতে চাবেন। নাকি তার গিন্নির কাছে নিয়ে গিয়ে তাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য অনুরোধ করবেন। কিন্তু তার গিন্নিই কি বিষয়টা সহজ ভাবে নেবেন। হয়ত না। নেয়ার কথাও বোধ হয় না। আবার মেয়েটির সাথে কথা বলতে গিয়ে কেউ যদি দেখে ফেলে তাহলে তারাই বা বিষয়টি কি ভাবে নেবেন। কেউ কি তার সম্পর্কে কুৎসা রটাবে নাকি মহৎ উদ্যোগের জন্য বলবেন "ধন্যবাদ আমিন সাহেব। সমাজে আপনার মতো আরো লোকের দরকার।"
       আমিন সাহেব সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না। তাছারা এই অন্ধকারে বেশিক্ষণ দাড়িয়ে চিন্তা করাটাকেও তিনি ঝুকিপূর্ণই মনে করলেন। শেষে যদি কেউ দেখে ফেলে।
    আমিন সাহেব আর এক মুহূর্তও দেরি করলেন না। বুদ্ধিমান কাপুরুষের মতো বীরদর্পে মাথা নীচু করে সোজা চলে এলেন বাসায়।
  বাসায় এসে কাউকে কিছু না বলে সোফায় বসে আছেন। মেয়ে দুটো এসে দাকে ঘিরে ধরল।
"বাবা, কি হয়েছে তোমার? কথা না বলে চুপ করে বসে আছো কেন?
"কিছু হয় নি মা, আমি ভাল আছি।
কিছুক্ষণ পর গিন্নিও প্রায় একই প্রশ্ন করল। আমিন সাহেবও প্রায় একই ধরনের উত্তর দিয়ে ঝামেলা এড়াতে চাইলেন।
আমিন সাহেব ভাবলেন অন্ধকারের সেই মেয়েটির কথা গিন্নিকে ধীরে সুস্থে বলেই ফেলবেন। হয়ত তার গিন্নির কিছুটা সহানুভুতির জন্ম হতেও পারে।
কিন্তু যদি সহজভাবে বিষয়টি না নেন বরং আমিন সাহেবকে উল্টো দুর্বল চিত্ত, মেয়েদের প্রতি দুর্বল এই সব ধারনা করে তবে তখন কি হবে।
 আমিন সাহেব একটু থেমে পরে মনে মনে বললেন, " থাক ও সব ঝামেলায় গিয়ে আর কাজ কি?  জগতে কয়জন আর অন্যের জীবন নিয়ে ভাবে"?।
      আজ প্রায় এক বছর পার হয়ে গেল সেই ঘটনার।মাঝে মাঝে মনে পরে সেই মেয়েটির কথা। কি হয়েছিল মেয়েটির? সে কি ফিরে গিয়েছিল অত্যাচারি স্বামীটির ঘরে নাকি অন্য কোথাও.......।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১২৩০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৭/০৫/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast