চাই স্বপ্নে ভরা আনন্দময় শৈশব
কবি হওয়ার জন্য প্রয়োজন বেশি বেশি কবিতা পড়া। তেমনি, জ্ঞানী হওয়ার জন্য প্রয়োজন জ্ঞান অর্জন করা বা জ্ঞান আহরণ করা। জ্ঞান আহরণ করতে পারব সবচেয়ে বেশি বই পড়ার মাধ্যমে। তাই আমাদের বেশি বেশি বই পড়তে হবে এবং বই পড়ার জন্য নিজেকে সময় দিতে হবে। শৈশবকে গড়ে তুলতে হবে আনন্দময় ও স্বপ্নে ভরে তুলতে হবে। শৈশবের সময়ই একজন মানুষের তার পরবর্তী জীবনের ধাপ গুলো বেছে নেওয়ার মূল সময়। শৈশব সময়ের স্বপ্ন ও আনন্দ মিলেই এক সময় বৃহৎ একটি স্মৃতি গড়ে উঠবে।
আমাদের এই দেশে শতকরা ৬-৭ ভাগের বেশি মানুষ বই পড়তে পারে না। আমি বাধ্য হয়ে পড়া পাঠ্য বইয়ের কথা বলছি না, সস্তা বিনোদনসর্বস্ব বইয়ের কথাও না। বই বলতে বোঝাচ্ছি সেই বই, যা মানুষকে ভাবায়, তাকে তার চেয়ে বড় করে তোলে, এসব বই পড়া কঠিন বলে না-পড়ার মত্তকা পেলেই মানুষ পড়া থামিয়ে দেয়। আমাদের মধ্যে থেকে অনেকে হয়ত এরই মধ্যে তা করেছে। চাপে না পড়লে কে-ই বা পড়তে চাই বলুন? যে পড়তে পারে সে তো প্রতিভা । সেরা পাঠক তো সে-ই, যে নিজের স্বেচ্ছায় আনন্দে পড়ে পড়ার ভেতর দিয়ে নিজের বিকাশ দেখে পড়ে। পড়ার ভেতর দিয়ে নিজের বিকাশ দেখে বিষ্ময়ে হতবাক হয়।
আমার একটি বন্ধু রয়েছে নাম রিয়ান, সে আমার অনেক ভাল বন্ধু। সে তার বন্ধু, সহপাঠী এবং সকলকে সব সময় হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করে। সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণতা সৃষ্টি করে তোলে। সবাই তাকে, তার সেই গুনটির কারণে পছন্দ করে এবং আমিও ওকে অনেক ভালোবাসি। অনেকেই জিজ্ঞেস করে, কেন এসব কাজ করো ? সে উত্তর দেয়, আমি কখনো কারও মন খারাপ হয়ে আছে দেখতে পারিনা। নিজের আনন্দে এভাবে কাজ করার মানুষ পৃথিবীতে খুব বেশি নেই। অন্যের জন্য সত্যিকার বেদনা না থাকলে মানুষ এরকম কাজ করতে পারে না। সাধারণত মানুষ কাজ করে আদিষ্ট হয়ে নানান ঘটনা বা পরিস্থিতির চাপে । মানুষ বই পড়ে তার আনন্দে । এটাই তার শ্রেষ্ঠত্ব। তবে সবাই তা পারে না। খুব অল্প মানুষই পারে। তারা পড়ে নির্জলা ভালোবাসার টানে, আনন্দের জন্য বিকাশের স্বার্থে। এরাই উচ্চতর মানুষ । এরাই পৃথিবীকে পরিবর্তন করে সভ্যতাকে নতুন পথের খবর দেয়।
বই কোন সধারণ ব্যাপার নয়। এ বড় কঠিন জিনিস চিন্তা শক্তিহীন মানুষ বই পড়ে না। যে জাতি যত বেশি বই পড়ে সে জাতি তত ওপরে। বাংলাদেশ আজো নিচে পড়ে রয়েছে, কারণ আমরা তাদের মতো পড়ছি না। বই মনের হাজারো জানালা খুলে দিয়ে মানুষকে বড় পৃথিবীর বাসিন্দা করে তোলে। এসব জানালা আজো আমাদের বন্ধ হয়ে আছে। তাই সম্পূর্ণ জীবনকে আমরা আজো স্পর্শ করতে পারছি না। তাই আমাদের বইয়ের কাছে যাওয়া দরকার বই মানে কেবল তথ্য বা তত্ত্ব নয়, বই মানে স্বপ্ন, জীবনবোধ, প্রজ্ঞা, বই মানে স্ফুরণ, উন্মোচন, বৃদ্ধি ফুটে-ওঠা। কেন বইয়ের মাধ্যমে সব কিছু প্রেরিত হল ? সৃষ্টিকর্তা তো সর্বশক্তিমান, তিনি তো চাইলে টেলিভিশন বা সিনেমার মাধ্যমেও তা পাঠাতে পারতেন।
কেন তা করলেন না ? এর কারনটাইঃ বই ছাড়া আর কিছুই মানুষের গভীর মননজগৎকে পুরোপুরি ধারণ করতে পারে না। কেন মহানবী বললেন, “দরকারে জ্ঞানজর্নের জন্য চীনদেশে যাও । চীনদেশে তো তখন ইসলামধর্ম পড়ানো হত না, তা হলে কেন চীনে যেতে হবে ? যেতে হবে এজন্য যে, চীনে যাও মানে দূরে যাও, জানার জগৎকে আকাশ ভেঙ্গে লুট করে আনো, নিজেকে প্রসারিত করো, মনের জানালা খোলো বিশাল পৃথিবীটার একেবারে মাঝখানে গিয়ে দাঁড়াও।
সভ্যতার অগ্রযাত্রা তো রিলে-রেসের মতো একদল যাত্রা শেষ করে অন্য দলের হাতে মশাল দিয়ে চলে যাবে। শেষ হওয়ার আগে তাই একটু জোরে শোরে দৌড়াচ্ছি যাতে পরের জনের হাতে একটু আগে মশালটা তুলে দিতে পারি। এ প্রসঙ্গে একটা কথা আছে, “বই বা বইপ্রেম, এ জিনিস সবার মধ্যে থাকে না, কারো কারো মধ্যে থাকে”। মানুষ বই পড়তে চায় না, এ আমি বিশ্বাস করি না । আমি মনে করি, জন্মগতভাবেই অন্তত ছয়-সাত ভাগ লোক চিন্তাশীল স্বভাব নিয়ে জন্মায়। সারাক্ষনই তারা সিরিয়াস আর গভীর ব্যাপার খোঁজে, সে শিশু হলেও সে তা করে। টিভিতে হালকা নাচ গান অনুষ্ঠান হয়ত সে-ও দেখে। কিন্তু, তিনমাস দেখার পরেই সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তার জন্মগত সিরিয়াম মন এসবের পাশাপাশি ওর ভিতর বড় কিছু গভীর কিছু খুঁজতে থাকে। ওখানে না পেলে অন্য কোথাও খোঁজে এই সিরিয়াস মানুষদেরই নামই ‘পাঠক’ । তাই আমাদের উচিত চিন্তাশীল গভীর মানুষদের বিকাশের সুযোগ করে দেওয়া। বাকি তিরানববই বা চুরানববই ভাগ মানুষ এতে না এলেও খুব বড় কোনো ক্ষতি হয় না। গোটা পৃথিবী তাকিয়ে আছে ওই ছোট ছয় সাত ভাগের দিকে। তারা কি করছে না করছে, তার উপরে নির্ভর করছে ভবিষ্যতের পৃথিবী। পৃথিবীকে পথ দেখাচ্ছে তো এরাই, কাজেই ওই ছয়-সাত ভাগ লোক যদি জ্ঞান আহরণ করল তো গোটা মানব জাতির কাছেই পৌঁছাল। তাই আমাদের আজকের বাংলাদেশের শিক্ষিত মানুষদের শতকরা ছ’জন মানুষকে এর আওতায় আনতে হবে।
টিকটিকির মতো বাঁচার কোনো মানে নাই। বেঁচে থাকতে হবে যোদ্ধার মতো, বিজেতার মতো, কেবল তুচ্ছ রুটি আর মাখনের জন্য কি জীবন ? শুধু দুবেলা দুটো খেতে পারলেই কি মানুষের চলে ? জীবন অনেক বড় মানুষের মস্তিষ্কের রয়েছে বিশাল ক্ষমতা। সে এই বিশ্ব-মহাবিশ্বের সমান। সেই অফুরন্ত ধারণক্ষমতা নিয়ে মানুষ কত বড় আনন্দময় জীবনই না যাপন করতে পারে। পৃথিবীতে সেই বড় আর সুন্দর জীবনেই তো আমাদের স্বার্থকতা। শুধু ইঁদুরের মতো তেলাপোকার মতো বেঁচে থেকে কী হবে ? জীবন শুধু একবারের, এই জীবন তো আর ফিরে আসবে না। এই জীবনে তো আমাদের ভালোভাবে বাঁচতে হবে এবং সম্পূর্ণ করতে হবে। একে পরিপূর্ণতম সুপ্রচুরতম ভাবে ব্যবহার করতে হবে। জীবনকে সোনালি সম্ভারে ভরে দিতে হবে। জীবনের ওপর জয়ের পতাকা উড়িয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে।
আমাদের মতো ছেলেমেয়েরা প্রাইভেট পড়া আর কোচিং ক্লাসের জন্য দিন-রাত দৌড়ে বেড়ানো প্রশ্ন মুখস্ত, পরীক্ষার প্রস্তুতি এতসবের যাঁতাকল থেকে তারা কিছুতেই আর বেড়োতে পারছে না। বাবা মা সপ্তাহে মাত্র দুটো ঘন্টাও তাদের সন্তানদের মানুষ হবার জন্যে দিতে নারাজ। পারলে দিনে পঁচিশ ঘন্টা করেই এদের দিয়ে পাঠ্যবই মুখস্ত করাত । ইংল্যান্ডে ১৮১৮ সালে একটা আইন হয়েছিল। আইনটা হচ্ছে : দিনে বিশ ঘন্টার বেশি শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো যাবে না, কী ভয়ঙ্কর কথা ! মানেটা কী ? মানে আগে নিশ্চই বিশ ঘন্টারও বেশি তাদের খাটানো হত হয়ত বাইশ বা তেইশ ঘন্টাই ঘুমোতেও হয়ত দিত না। আমাদের অভিভাবকদের ভাবসাব অনেকটা এ্রমনি। শিশুর ¯িœগ্ধা নিষ্পাপ জীবনে নিংড়ে এরা কেবলি বার্ধক্যের লোল বৈষয়িকতা বের করতে চাচ্ছে। ক্লাস ফোরের ছেলেকে দিয়ে পি. এইচ. ডি-র অভিসন্দর্ভ লেখানোর কষ্ট করাচ্ছে।
মামা একদিন আমাকে একটি গল্প বলেছিলেন এক গ্রামে- ডাক্তার একজনের ফোঁড়া কেটেছে। অপারেশনের পর লোকটা ডাক্তারকে জিজ্ঞাস করল: ডাক্তার সাহেব, এখন বিছানায় শুয়ে থাকতে পারবতো ? ডাক্তার আঁতকে উঠলেন এত বড় অপারেশন, এখনই শুতে চাও, তোমার আর্স্পধা তো কম নয় ! শুতে পারো, কিন্তু শুলেই ফোঁড়া ফটাস। লোকটা তখন বলল ঃ তাহলে কি বসতে পারব ডাক্তার সাহেব ? ডাক্তার অবাক চোখে তাকালেন ঃ শুতেই তুমি পারছোনা সেখানে বসতে
চাও কোন সাহসে ? করুনভাবে সে তখন বলল ; তাহলে কি দাঁড়িয়ে থাকব, ডাক্তার সাহেব ? ডাক্তার বললেন : দাঁড়াতে পারো তবে সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু. উপায়হীন হয়ে সে জিজ্ঞেস করল তাহলে করবটা কি ডাক্তার সাহেব ? ডাক্তার কঠোর স্বরে বললেন- কিছুই করতে পারবানা। আমাদের অর্থাৎ শিশুদের অবস্থা আজ ঐ বেচারি রোগিটার মতো । কোচিং সেন্টার, প্রাইভেট টিচার আর পাঠ্যবই মুখস্ত করা ছাড়া আর কোনো কিছুই করতে পারবো না, কিছুই না ! তাহলে একজন শিশু মানুষ হবে কী করে ? সুন্দর জীবন কী করে তৈরী হবে তার শৈশব মানে তো বন্ধুত্ব আড্ডা, খেলাধুলা, স্বপ্ন, প্রজাপতির পেছনে ছুয়ে বেড়ানো, নীল আকাশ, খোলা মাঠ- কোথায় আজ এসব তাদের জীবনে ?
আমাদেরকে রাখা হচ্ছে ছকবাঁধা রুটিনের যাতাকলের নিচে আমাদের সুন্দর তরুন্যকে পিষ্ট করে। আমাদের সময় দিতে হবে বন্ধুত্বের, মেলামেশার, স্বপ্ন, আকাশ আর আনন্দের, আলসেমির আর অবকাশের সময়টাই আমাদের জীবনের সবচেয়ে সৃজনশীল সময়। এই সময়ই আমাদের জীবনের সবচেয়ে সৃজনশীল সময়। মানুষ উর্ধ্বশ^াসে লেজ তুলে দৌড়াচ্ছে তার মাথায় নতুন আইডিয়া আসে না। যে খুব বেশি কাজ করে তার মাথা নিরেট হয়ে যায়, কিন্তু দাঁত মাজতে মাজতে আমাদের মাথায় অনেক সময় নতুন আইডিয়া এসে পড়ে। কেন আসে ? কারণ অবসর আর আলসেমির ভেতর আমাদের মন তখন স্বপ্ন, কল্পনা, আর আনন্দের উপযোগী হয়ে যায়। এজন্যে বাথরুমে গোসল করতে গেলে গায়ক হয় না এমন মানুষ পৃথিবীতে বিরল। তোমরা লক্ষ্য করে দেখবে, কোন কিছু মাথায় আসছে না বা মনে পড়ছে না। সেই সময় তুমি বাথরুমে গেলে হঠাৎ করে মনে পড়ে যাবে।
পৃথিবীতে বহু বড় বড় চিন্তার জন্ম হয়েছে। আড্ডার অলস আর খোলামেলা পরিবেশ থেকে, আজকে পৃথিবী-জোড়া বানিজ্যিক সংস্কৃতিতে আড্ডার অবকাশ নেই। শুধু কাজ আর কাজ, বিশ^জুড়ে কোটি কোটি মানুষ দিন-রাত শুধু গুটিকয় মালিকের মুনাফা বাড়ানোর জন্যে নিজেদের দুলর্ভ মানবজন্ম উৎসর্গ করে চলেছে। ইবনে বতুতার জীবনের একটি গল্প রয়েছে। আটশ বছর আগে ইবনে বতুতা ভ্রমন করেছিলেন এশিয়া আফ্রিকা ইয়োরোপের ৭৫ হাজার মাইল। দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া ভ্রমনের সময় তিনি গিয়েছিলেন একটি দেশে খুব সম্ভব ইন্দোনেশিয়ায়। সেখানকার সুলতান তখন মুসলমান। সুলতানের সঙ্গে দেখা হলে সুলতান তাঁকে বললেন কাল বিকেলে সময় পেলে আসবেন, একটা মজার ব্যাপার দেখাব। সময়মতো উনি সেখানে যেতেই দেখেন জায়গাটা লোক লোকারন্য। সুলতান সম্মান করে তাঁকে পাশে বসালেন বসতেই তিনি এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখলেন, সুলতানের সামনে তৈরি করা একটি মঞ্চের ওপর একজন বলিষ্ঠ গোছের লোক দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে একটা ঝকঝকে তলোয়ার, তলোয়ারটার দু’ প্রান্ত দুহাতে ধরে সে তার ধারালো দিকটাকে ঘাড়ের ওপর চেপে ধরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। একসময় জনতাকে নীরব হতে নির্দেশ দেওয়া হলে গোটা এলাকায় পিনপতন নীরবতার সৃষ্টি হল সেই নীরবতার ভেতর থেকে লোকটা উঁচু গলায় সুলতানকে বলতে লাগল “সুলতান আমার পিতামহ আপনার পিতামহকে এমন ভালোবাসতেন যে আমার পিতামহ আপনার পিতামহের জন্যে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন আমার পিতা আপনার পিতাকে এমন ভালোবাসতেন যে আমার পিতা আপনার পিতার জন্যে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। আর দেখুন এই আমি আপনাকে এমন ভালোবাসি যে এই মুহূর্তে আমি আপনার জন্যে নিজের প্রিয় প্রাণ উৎসর্গ করে দিচ্ছি” বলেই দুহাতে ধরা ঘাড়ের ওপরকার তলোয়ারটা ধরে এমন জোরে। হ্যাচকাটান দিল যে তার মাথাটা বড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সামনে ছিটকে পড়ে গেল। বলা বাহুল্য তার মৃত্যৃর সঙ্গে সঙ্গে তার সন্তানদের সম্মান অর্থ পদমর্যাদা বহুগুন বেড়ে গেল এবং তার সন্তান আবার তৈরি হতে লাগল বর্তমান সুলতানের ভালোবাসায় জীবন আত্নাহুতি দেবার জন্যে। আজ সারা পৃথিবীর মানুষের অবস্থা ঐ মাথা কাটা মানুষটার মতো। মুষ্টিমেয় কিছু পুঁজিপুজির মুনাফা বাড়ানোর জন্যে দিন-রাত এভাবেই। তারা তাদের মাথা উৎসর্গ করছে।
আমাদের এই দেশে শতকরা ৬-৭ ভাগের বেশি মানুষ বই পড়তে পারে না। আমি বাধ্য হয়ে পড়া পাঠ্য বইয়ের কথা বলছি না, সস্তা বিনোদনসর্বস্ব বইয়ের কথাও না। বই বলতে বোঝাচ্ছি সেই বই, যা মানুষকে ভাবায়, তাকে তার চেয়ে বড় করে তোলে, এসব বই পড়া কঠিন বলে না-পড়ার মত্তকা পেলেই মানুষ পড়া থামিয়ে দেয়। আমাদের মধ্যে থেকে অনেকে হয়ত এরই মধ্যে তা করেছে। চাপে না পড়লে কে-ই বা পড়তে চাই বলুন? যে পড়তে পারে সে তো প্রতিভা । সেরা পাঠক তো সে-ই, যে নিজের স্বেচ্ছায় আনন্দে পড়ে পড়ার ভেতর দিয়ে নিজের বিকাশ দেখে পড়ে। পড়ার ভেতর দিয়ে নিজের বিকাশ দেখে বিষ্ময়ে হতবাক হয়।
আমার একটি বন্ধু রয়েছে নাম রিয়ান, সে আমার অনেক ভাল বন্ধু। সে তার বন্ধু, সহপাঠী এবং সকলকে সব সময় হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করে। সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণতা সৃষ্টি করে তোলে। সবাই তাকে, তার সেই গুনটির কারণে পছন্দ করে এবং আমিও ওকে অনেক ভালোবাসি। অনেকেই জিজ্ঞেস করে, কেন এসব কাজ করো ? সে উত্তর দেয়, আমি কখনো কারও মন খারাপ হয়ে আছে দেখতে পারিনা। নিজের আনন্দে এভাবে কাজ করার মানুষ পৃথিবীতে খুব বেশি নেই। অন্যের জন্য সত্যিকার বেদনা না থাকলে মানুষ এরকম কাজ করতে পারে না। সাধারণত মানুষ কাজ করে আদিষ্ট হয়ে নানান ঘটনা বা পরিস্থিতির চাপে । মানুষ বই পড়ে তার আনন্দে । এটাই তার শ্রেষ্ঠত্ব। তবে সবাই তা পারে না। খুব অল্প মানুষই পারে। তারা পড়ে নির্জলা ভালোবাসার টানে, আনন্দের জন্য বিকাশের স্বার্থে। এরাই উচ্চতর মানুষ । এরাই পৃথিবীকে পরিবর্তন করে সভ্যতাকে নতুন পথের খবর দেয়।
বই কোন সধারণ ব্যাপার নয়। এ বড় কঠিন জিনিস চিন্তা শক্তিহীন মানুষ বই পড়ে না। যে জাতি যত বেশি বই পড়ে সে জাতি তত ওপরে। বাংলাদেশ আজো নিচে পড়ে রয়েছে, কারণ আমরা তাদের মতো পড়ছি না। বই মনের হাজারো জানালা খুলে দিয়ে মানুষকে বড় পৃথিবীর বাসিন্দা করে তোলে। এসব জানালা আজো আমাদের বন্ধ হয়ে আছে। তাই সম্পূর্ণ জীবনকে আমরা আজো স্পর্শ করতে পারছি না। তাই আমাদের বইয়ের কাছে যাওয়া দরকার বই মানে কেবল তথ্য বা তত্ত্ব নয়, বই মানে স্বপ্ন, জীবনবোধ, প্রজ্ঞা, বই মানে স্ফুরণ, উন্মোচন, বৃদ্ধি ফুটে-ওঠা। কেন বইয়ের মাধ্যমে সব কিছু প্রেরিত হল ? সৃষ্টিকর্তা তো সর্বশক্তিমান, তিনি তো চাইলে টেলিভিশন বা সিনেমার মাধ্যমেও তা পাঠাতে পারতেন।
কেন তা করলেন না ? এর কারনটাইঃ বই ছাড়া আর কিছুই মানুষের গভীর মননজগৎকে পুরোপুরি ধারণ করতে পারে না। কেন মহানবী বললেন, “দরকারে জ্ঞানজর্নের জন্য চীনদেশে যাও । চীনদেশে তো তখন ইসলামধর্ম পড়ানো হত না, তা হলে কেন চীনে যেতে হবে ? যেতে হবে এজন্য যে, চীনে যাও মানে দূরে যাও, জানার জগৎকে আকাশ ভেঙ্গে লুট করে আনো, নিজেকে প্রসারিত করো, মনের জানালা খোলো বিশাল পৃথিবীটার একেবারে মাঝখানে গিয়ে দাঁড়াও।
সভ্যতার অগ্রযাত্রা তো রিলে-রেসের মতো একদল যাত্রা শেষ করে অন্য দলের হাতে মশাল দিয়ে চলে যাবে। শেষ হওয়ার আগে তাই একটু জোরে শোরে দৌড়াচ্ছি যাতে পরের জনের হাতে একটু আগে মশালটা তুলে দিতে পারি। এ প্রসঙ্গে একটা কথা আছে, “বই বা বইপ্রেম, এ জিনিস সবার মধ্যে থাকে না, কারো কারো মধ্যে থাকে”। মানুষ বই পড়তে চায় না, এ আমি বিশ্বাস করি না । আমি মনে করি, জন্মগতভাবেই অন্তত ছয়-সাত ভাগ লোক চিন্তাশীল স্বভাব নিয়ে জন্মায়। সারাক্ষনই তারা সিরিয়াস আর গভীর ব্যাপার খোঁজে, সে শিশু হলেও সে তা করে। টিভিতে হালকা নাচ গান অনুষ্ঠান হয়ত সে-ও দেখে। কিন্তু, তিনমাস দেখার পরেই সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তার জন্মগত সিরিয়াম মন এসবের পাশাপাশি ওর ভিতর বড় কিছু গভীর কিছু খুঁজতে থাকে। ওখানে না পেলে অন্য কোথাও খোঁজে এই সিরিয়াস মানুষদেরই নামই ‘পাঠক’ । তাই আমাদের উচিত চিন্তাশীল গভীর মানুষদের বিকাশের সুযোগ করে দেওয়া। বাকি তিরানববই বা চুরানববই ভাগ মানুষ এতে না এলেও খুব বড় কোনো ক্ষতি হয় না। গোটা পৃথিবী তাকিয়ে আছে ওই ছোট ছয় সাত ভাগের দিকে। তারা কি করছে না করছে, তার উপরে নির্ভর করছে ভবিষ্যতের পৃথিবী। পৃথিবীকে পথ দেখাচ্ছে তো এরাই, কাজেই ওই ছয়-সাত ভাগ লোক যদি জ্ঞান আহরণ করল তো গোটা মানব জাতির কাছেই পৌঁছাল। তাই আমাদের আজকের বাংলাদেশের শিক্ষিত মানুষদের শতকরা ছ’জন মানুষকে এর আওতায় আনতে হবে।
টিকটিকির মতো বাঁচার কোনো মানে নাই। বেঁচে থাকতে হবে যোদ্ধার মতো, বিজেতার মতো, কেবল তুচ্ছ রুটি আর মাখনের জন্য কি জীবন ? শুধু দুবেলা দুটো খেতে পারলেই কি মানুষের চলে ? জীবন অনেক বড় মানুষের মস্তিষ্কের রয়েছে বিশাল ক্ষমতা। সে এই বিশ্ব-মহাবিশ্বের সমান। সেই অফুরন্ত ধারণক্ষমতা নিয়ে মানুষ কত বড় আনন্দময় জীবনই না যাপন করতে পারে। পৃথিবীতে সেই বড় আর সুন্দর জীবনেই তো আমাদের স্বার্থকতা। শুধু ইঁদুরের মতো তেলাপোকার মতো বেঁচে থেকে কী হবে ? জীবন শুধু একবারের, এই জীবন তো আর ফিরে আসবে না। এই জীবনে তো আমাদের ভালোভাবে বাঁচতে হবে এবং সম্পূর্ণ করতে হবে। একে পরিপূর্ণতম সুপ্রচুরতম ভাবে ব্যবহার করতে হবে। জীবনকে সোনালি সম্ভারে ভরে দিতে হবে। জীবনের ওপর জয়ের পতাকা উড়িয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে।
আমাদের মতো ছেলেমেয়েরা প্রাইভেট পড়া আর কোচিং ক্লাসের জন্য দিন-রাত দৌড়ে বেড়ানো প্রশ্ন মুখস্ত, পরীক্ষার প্রস্তুতি এতসবের যাঁতাকল থেকে তারা কিছুতেই আর বেড়োতে পারছে না। বাবা মা সপ্তাহে মাত্র দুটো ঘন্টাও তাদের সন্তানদের মানুষ হবার জন্যে দিতে নারাজ। পারলে দিনে পঁচিশ ঘন্টা করেই এদের দিয়ে পাঠ্যবই মুখস্ত করাত । ইংল্যান্ডে ১৮১৮ সালে একটা আইন হয়েছিল। আইনটা হচ্ছে : দিনে বিশ ঘন্টার বেশি শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো যাবে না, কী ভয়ঙ্কর কথা ! মানেটা কী ? মানে আগে নিশ্চই বিশ ঘন্টারও বেশি তাদের খাটানো হত হয়ত বাইশ বা তেইশ ঘন্টাই ঘুমোতেও হয়ত দিত না। আমাদের অভিভাবকদের ভাবসাব অনেকটা এ্রমনি। শিশুর ¯িœগ্ধা নিষ্পাপ জীবনে নিংড়ে এরা কেবলি বার্ধক্যের লোল বৈষয়িকতা বের করতে চাচ্ছে। ক্লাস ফোরের ছেলেকে দিয়ে পি. এইচ. ডি-র অভিসন্দর্ভ লেখানোর কষ্ট করাচ্ছে।
মামা একদিন আমাকে একটি গল্প বলেছিলেন এক গ্রামে- ডাক্তার একজনের ফোঁড়া কেটেছে। অপারেশনের পর লোকটা ডাক্তারকে জিজ্ঞাস করল: ডাক্তার সাহেব, এখন বিছানায় শুয়ে থাকতে পারবতো ? ডাক্তার আঁতকে উঠলেন এত বড় অপারেশন, এখনই শুতে চাও, তোমার আর্স্পধা তো কম নয় ! শুতে পারো, কিন্তু শুলেই ফোঁড়া ফটাস। লোকটা তখন বলল ঃ তাহলে কি বসতে পারব ডাক্তার সাহেব ? ডাক্তার অবাক চোখে তাকালেন ঃ শুতেই তুমি পারছোনা সেখানে বসতে
চাও কোন সাহসে ? করুনভাবে সে তখন বলল ; তাহলে কি দাঁড়িয়ে থাকব, ডাক্তার সাহেব ? ডাক্তার বললেন : দাঁড়াতে পারো তবে সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু. উপায়হীন হয়ে সে জিজ্ঞেস করল তাহলে করবটা কি ডাক্তার সাহেব ? ডাক্তার কঠোর স্বরে বললেন- কিছুই করতে পারবানা। আমাদের অর্থাৎ শিশুদের অবস্থা আজ ঐ বেচারি রোগিটার মতো । কোচিং সেন্টার, প্রাইভেট টিচার আর পাঠ্যবই মুখস্ত করা ছাড়া আর কোনো কিছুই করতে পারবো না, কিছুই না ! তাহলে একজন শিশু মানুষ হবে কী করে ? সুন্দর জীবন কী করে তৈরী হবে তার শৈশব মানে তো বন্ধুত্ব আড্ডা, খেলাধুলা, স্বপ্ন, প্রজাপতির পেছনে ছুয়ে বেড়ানো, নীল আকাশ, খোলা মাঠ- কোথায় আজ এসব তাদের জীবনে ?
আমাদেরকে রাখা হচ্ছে ছকবাঁধা রুটিনের যাতাকলের নিচে আমাদের সুন্দর তরুন্যকে পিষ্ট করে। আমাদের সময় দিতে হবে বন্ধুত্বের, মেলামেশার, স্বপ্ন, আকাশ আর আনন্দের, আলসেমির আর অবকাশের সময়টাই আমাদের জীবনের সবচেয়ে সৃজনশীল সময়। এই সময়ই আমাদের জীবনের সবচেয়ে সৃজনশীল সময়। মানুষ উর্ধ্বশ^াসে লেজ তুলে দৌড়াচ্ছে তার মাথায় নতুন আইডিয়া আসে না। যে খুব বেশি কাজ করে তার মাথা নিরেট হয়ে যায়, কিন্তু দাঁত মাজতে মাজতে আমাদের মাথায় অনেক সময় নতুন আইডিয়া এসে পড়ে। কেন আসে ? কারণ অবসর আর আলসেমির ভেতর আমাদের মন তখন স্বপ্ন, কল্পনা, আর আনন্দের উপযোগী হয়ে যায়। এজন্যে বাথরুমে গোসল করতে গেলে গায়ক হয় না এমন মানুষ পৃথিবীতে বিরল। তোমরা লক্ষ্য করে দেখবে, কোন কিছু মাথায় আসছে না বা মনে পড়ছে না। সেই সময় তুমি বাথরুমে গেলে হঠাৎ করে মনে পড়ে যাবে।
পৃথিবীতে বহু বড় বড় চিন্তার জন্ম হয়েছে। আড্ডার অলস আর খোলামেলা পরিবেশ থেকে, আজকে পৃথিবী-জোড়া বানিজ্যিক সংস্কৃতিতে আড্ডার অবকাশ নেই। শুধু কাজ আর কাজ, বিশ^জুড়ে কোটি কোটি মানুষ দিন-রাত শুধু গুটিকয় মালিকের মুনাফা বাড়ানোর জন্যে নিজেদের দুলর্ভ মানবজন্ম উৎসর্গ করে চলেছে। ইবনে বতুতার জীবনের একটি গল্প রয়েছে। আটশ বছর আগে ইবনে বতুতা ভ্রমন করেছিলেন এশিয়া আফ্রিকা ইয়োরোপের ৭৫ হাজার মাইল। দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া ভ্রমনের সময় তিনি গিয়েছিলেন একটি দেশে খুব সম্ভব ইন্দোনেশিয়ায়। সেখানকার সুলতান তখন মুসলমান। সুলতানের সঙ্গে দেখা হলে সুলতান তাঁকে বললেন কাল বিকেলে সময় পেলে আসবেন, একটা মজার ব্যাপার দেখাব। সময়মতো উনি সেখানে যেতেই দেখেন জায়গাটা লোক লোকারন্য। সুলতান সম্মান করে তাঁকে পাশে বসালেন বসতেই তিনি এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখলেন, সুলতানের সামনে তৈরি করা একটি মঞ্চের ওপর একজন বলিষ্ঠ গোছের লোক দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে একটা ঝকঝকে তলোয়ার, তলোয়ারটার দু’ প্রান্ত দুহাতে ধরে সে তার ধারালো দিকটাকে ঘাড়ের ওপর চেপে ধরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। একসময় জনতাকে নীরব হতে নির্দেশ দেওয়া হলে গোটা এলাকায় পিনপতন নীরবতার সৃষ্টি হল সেই নীরবতার ভেতর থেকে লোকটা উঁচু গলায় সুলতানকে বলতে লাগল “সুলতান আমার পিতামহ আপনার পিতামহকে এমন ভালোবাসতেন যে আমার পিতামহ আপনার পিতামহের জন্যে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন আমার পিতা আপনার পিতাকে এমন ভালোবাসতেন যে আমার পিতা আপনার পিতার জন্যে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। আর দেখুন এই আমি আপনাকে এমন ভালোবাসি যে এই মুহূর্তে আমি আপনার জন্যে নিজের প্রিয় প্রাণ উৎসর্গ করে দিচ্ছি” বলেই দুহাতে ধরা ঘাড়ের ওপরকার তলোয়ারটা ধরে এমন জোরে। হ্যাচকাটান দিল যে তার মাথাটা বড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সামনে ছিটকে পড়ে গেল। বলা বাহুল্য তার মৃত্যৃর সঙ্গে সঙ্গে তার সন্তানদের সম্মান অর্থ পদমর্যাদা বহুগুন বেড়ে গেল এবং তার সন্তান আবার তৈরি হতে লাগল বর্তমান সুলতানের ভালোবাসায় জীবন আত্নাহুতি দেবার জন্যে। আজ সারা পৃথিবীর মানুষের অবস্থা ঐ মাথা কাটা মানুষটার মতো। মুষ্টিমেয় কিছু পুঁজিপুজির মুনাফা বাড়ানোর জন্যে দিন-রাত এভাবেই। তারা তাদের মাথা উৎসর্গ করছে।
উনিশ শতকের এক কবি লিখেছিলেন-
what is life if full of care, / we have no time to stand and stare
এ কী জীবন হল আজ আমাদের? সারাক্ষণ কেবল কাজ আর ব্যস্ততা শান্তিমতো দুদন্ড দাঁড়িয়ে এমন সুন্দর পৃথিবীটাকে দেখার বা উপভোগ করার সময়ই আমরা পাচ্ছি না। আগে দেখতাম বৃদ্ধরা রিটায়ার করলে অন্তত কিছু সময় পেত নাতি কোলে রাস্তায় হাঁটাহাঁটির বা তসবি হাতে আল্লাহবিল্লাহ করার। এখন কারো সময় নেই না বৃদ্ধের না যুবকের না শিশুর। আমাদের দেশে শিশুরাই আজ দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত। স্কুল, কোচিং, প্রাইভেট শিক্ষক আর মুখস্থের নির্দয় জাতাকলের নিচে শৈশবের আনন্দ গুঁড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের কথা অনেক ভেবে আমার মনে হয়েছে মানুষের গোটা জীবন আসলে তার শৈশবের সমান। এই সময় সে যে-মানুষটি হয়ে বড় হয় মৃত্যু পর্যন্ত সে-মানুষটিই সে থেকে যায়। সেই শৈশব থেকে আমাদের অর্থাৎ শিশুদের পুরোপুরিভাবে শৈশব এর অনুভূতি থেকে বঞ্চিত করে ফেলছে। তাই তারা এমন ফ্যাকাসে আর নিষ্প্রান একটা দুঃখী রোবট ছাড়া যেন কিছু নয়। জীবনকে দুদন্ডের স্বপ্নে অবকাশে ভরে দেওয়া এমন কঠিন কিছু নয় এতে জীবনটা মৌচাকের মতো সোনালি মধুতে ভরে ওঠে। দিনে ঘন্টা-দুই নিজেকে আনন্দের জন্যে রাখতে পারলেও জীবনকে সোনা দিয়ে মুড়ে ফেলা যায়। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে মাত্র দু’টি ঘন্টা এই একমুষ্টি অবসরও কি আমাদের শিশুদের দেবে না?
ডেল কার্নেগি একটা বইয়ে চমৎকার একটা কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন আমরা আজকের আমেরিকানরা সবাই সেলসম্যান, বিক্রেতা। এই কনজ্যুমারিজমের যুগে আমরা সবাই কিছু না কিছু উৎপাদন করি আর বিক্রি করি। আমি কারো কাছে স্মো বেচি তো সে আমার কাছে কলম বেচে আমি টেলিভিশন বিক্রি করিতো সে গাড়ি বিক্রি করে। আমাদের এই আমেরিকা আজ বিক্রেতাদের দেশ। সারাদিন আমরা অন্যদের কাছে কিছু-না-কিছু বিক্রি করি বলে তাদের দেখলেই আমাদের মিষ্টি করে হাসতে হয়। না হাসলে জিনিস বিক্রি হয় না। তাই আরও বেশি বেশি হাসি অথচ আশ্চর্য, যে আমরা সারাদিন অন্যদের জন্যে এত হাসি উপহার দিই। সন্ধায় আমরাই যদি স্ত্রী-ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বসে শুধু আধাঘন্টা সময় এমনি একটু হেসে কাটাতাম তাহলে আমাদের দেশে বিবাহবিচ্ছেদ অর্ধেক হয়ে যেত, গোটা জাতির জীবনই সুখে-আনন্দে ভরে উঠত কিন্তু দয়া করেও এটুকু করি না।
*অন্যদের মতো নিজের দিকেও তো কিছুটা তাকাতে হয় নিজের জন্যেও তো কিছুটা সময় চাই।
*আমাদের শৈশব আনন্দময় ও স্বপ্নে ভরে তুলতে হলে অভিভাবকদের যা যা করতে হবে।
১. প্রতিদিন না হোক সপ্তাহে অন্তত দু’ ঘন্টা সময় দিতে হবে।
২. বন্ধুদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোর বা মেলামেশার সুযোগ দিতে হবে।
৩. অবসরের কিছুটা সময় দিতে হবে।
৪. আমরা যেন জ্ঞান অর্জন করতে পারি, সেই জন্যে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি আরো বিভিন্ন ধরনের বই পড়তে পারি সেই সময় দিতে হবে।
৫. পরিবারের সঙ্গে যেন অন্তত একটা ঘন্টা আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়।
৬. কোচিং এবং প্রাইভেট পড়ার চাপ কমিয়ে ফেলতে হবে এসবের জন্য বেশি চাপ দেওয়া যাবে না।
আমাদের ওপর যেন মানসিক চাপ না পড়ে এমনভাবে পড়ার চাপ দেওয়া যাবে না। যেন মানসিক চাপ না পড়ে।
৭. আমাদেরকে বিনোদনের সঙ্গেও কিছুটা সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
৮. খেলাধুলা আমাদের জন্যে শারিরীকভাবে অনেক উন্নতি সাধন করতে সাহায্য করে। তাই আমাদের খেলাধুলা জন্যও কিছুটা সময় দিতে হবে।
আমাদের উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী যদি চলতে দেয় তাহলে আমরা খুবই মুক্ত এবং স্বাধীনভাবে জীবন-যাপন করতে পারব। নিজেদেরকে একটু সময় দিতে পারব। তাহলে গোটা জীবনই সুখ-শান্তি আর আনন্দে ভরে উঠবে।
অন্যদের মতো নিজের দিকেও তো কিছুই তাকাতে হয় নিজের জন্যেও তো কিছুটা সময় চাই কেবল এটুকুর অভাবে আমাদের শৈশব বরবাদ হয়ে যাচ্ছে। এমন মৌচাকের মতো জীবন পেয়েও বোলতার চাকের মতো রসহীন বিশুষ্ক হয়ে আমরা বেঁচে থাকছি। তাই সবাই নিজেদের জীবনকে এই ছোট্ট অবকাশ আর আনন্দের সময়টুকু অন্তত দিতে হবে। নিজের শৈশবের দিকেই খেয়াল রাখতে হবে। তবেই আমাদের শৈশব স্বনে ও আনন্দে ভরপুর হয়ে উঠবে।
*তুচ্ছ বা কোন কিছুর প্রতি কম অধিকারী বলে মেয়েদেরকে গন্য করা যাবে না। উপরোক্ত অধিকারগুলো তাদেরও প্রাপ্ত। তাদেরকে এসব অধিকার গুলো দেওয়া উচিৎ।
এভাবেই আমাদের শৈশব স্বপ্নেও অনেক আনন্দে ভরে উঠতে পারে।
ডেল কার্নেগি একটা বইয়ে চমৎকার একটা কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন আমরা আজকের আমেরিকানরা সবাই সেলসম্যান, বিক্রেতা। এই কনজ্যুমারিজমের যুগে আমরা সবাই কিছু না কিছু উৎপাদন করি আর বিক্রি করি। আমি কারো কাছে স্মো বেচি তো সে আমার কাছে কলম বেচে আমি টেলিভিশন বিক্রি করিতো সে গাড়ি বিক্রি করে। আমাদের এই আমেরিকা আজ বিক্রেতাদের দেশ। সারাদিন আমরা অন্যদের কাছে কিছু-না-কিছু বিক্রি করি বলে তাদের দেখলেই আমাদের মিষ্টি করে হাসতে হয়। না হাসলে জিনিস বিক্রি হয় না। তাই আরও বেশি বেশি হাসি অথচ আশ্চর্য, যে আমরা সারাদিন অন্যদের জন্যে এত হাসি উপহার দিই। সন্ধায় আমরাই যদি স্ত্রী-ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বসে শুধু আধাঘন্টা সময় এমনি একটু হেসে কাটাতাম তাহলে আমাদের দেশে বিবাহবিচ্ছেদ অর্ধেক হয়ে যেত, গোটা জাতির জীবনই সুখে-আনন্দে ভরে উঠত কিন্তু দয়া করেও এটুকু করি না।
*অন্যদের মতো নিজের দিকেও তো কিছুটা তাকাতে হয় নিজের জন্যেও তো কিছুটা সময় চাই।
*আমাদের শৈশব আনন্দময় ও স্বপ্নে ভরে তুলতে হলে অভিভাবকদের যা যা করতে হবে।
১. প্রতিদিন না হোক সপ্তাহে অন্তত দু’ ঘন্টা সময় দিতে হবে।
২. বন্ধুদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোর বা মেলামেশার সুযোগ দিতে হবে।
৩. অবসরের কিছুটা সময় দিতে হবে।
৪. আমরা যেন জ্ঞান অর্জন করতে পারি, সেই জন্যে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি আরো বিভিন্ন ধরনের বই পড়তে পারি সেই সময় দিতে হবে।
৫. পরিবারের সঙ্গে যেন অন্তত একটা ঘন্টা আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়।
৬. কোচিং এবং প্রাইভেট পড়ার চাপ কমিয়ে ফেলতে হবে এসবের জন্য বেশি চাপ দেওয়া যাবে না।
আমাদের ওপর যেন মানসিক চাপ না পড়ে এমনভাবে পড়ার চাপ দেওয়া যাবে না। যেন মানসিক চাপ না পড়ে।
৭. আমাদেরকে বিনোদনের সঙ্গেও কিছুটা সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
৮. খেলাধুলা আমাদের জন্যে শারিরীকভাবে অনেক উন্নতি সাধন করতে সাহায্য করে। তাই আমাদের খেলাধুলা জন্যও কিছুটা সময় দিতে হবে।
আমাদের উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী যদি চলতে দেয় তাহলে আমরা খুবই মুক্ত এবং স্বাধীনভাবে জীবন-যাপন করতে পারব। নিজেদেরকে একটু সময় দিতে পারব। তাহলে গোটা জীবনই সুখ-শান্তি আর আনন্দে ভরে উঠবে।
অন্যদের মতো নিজের দিকেও তো কিছুই তাকাতে হয় নিজের জন্যেও তো কিছুটা সময় চাই কেবল এটুকুর অভাবে আমাদের শৈশব বরবাদ হয়ে যাচ্ছে। এমন মৌচাকের মতো জীবন পেয়েও বোলতার চাকের মতো রসহীন বিশুষ্ক হয়ে আমরা বেঁচে থাকছি। তাই সবাই নিজেদের জীবনকে এই ছোট্ট অবকাশ আর আনন্দের সময়টুকু অন্তত দিতে হবে। নিজের শৈশবের দিকেই খেয়াল রাখতে হবে। তবেই আমাদের শৈশব স্বনে ও আনন্দে ভরপুর হয়ে উঠবে।
*তুচ্ছ বা কোন কিছুর প্রতি কম অধিকারী বলে মেয়েদেরকে গন্য করা যাবে না। উপরোক্ত অধিকারগুলো তাদেরও প্রাপ্ত। তাদেরকে এসব অধিকার গুলো দেওয়া উচিৎ।
এভাবেই আমাদের শৈশব স্বপ্নেও অনেক আনন্দে ভরে উঠতে পারে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০৫/০৪/২০১৭শিশুদের শৈশব আনন্দময় হোক।
-
সফিউল্লাহ আনসারী ০৪/০৪/২০১৭অসাধারণ একটি াপোস্ট...
ধন্যবাদ