www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ঈদে বাড়ি ফেরা

ট্রেন চলছে...
মুখোমুখি সিটে বসে আছি। এপাশে দু’জন ওপাশে দু’জন-
নিয়ম থাকলেও আমরা তিন তিন। বসার চেয়ে
দাঁড়ানো যাত্রী সংখ্যা বেশী। ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরা বলে কথা।
ওপাশে ষাটোর্ধ বেগানা পুরুষের গা ঘেষে ছাব্বিশের যুবতী মা,
তার পাশে জানালায় থুতনী ঠেকিয়ে বসেছে তার ছ’বছরের প্রজাপতি মেয়ে।
ট্রেনে এটাই প্রজাপতির প্রথম ভ্রমণ কিনা কে জানে, ভারি উৎফুল্ল সে...

ট্রেন চলছে...
আমার দৃষ্টি ছিলো ঘুনয়মান সবুজ প্রান্তরে... আর-
মন ছিলো তার থেকে অনেক অনেক দূরে...
যেখানে বর্ষা প্লাবিত নদীর স্রোতে নাচে বাতাসী মাছ,
দুরন্ত মাছরাঙা টুপ করে ধরে নিয়ে চলে যায় অরণ্য-বাথানে...
সদ্য ডিম থেকে বেরুনো ছানাপোনাদের কাছে!
যেখানে শান্ত দীঘির জলে পদ্মে পদ্মে মধু তোলে ক্ষুদে মৌমাছিরা  
রাঙা ঠোঁটে খড়কুটো কুড়োয় খয়েরী শালিক!
আহা! আমার গ্রাম! যেনো মা, আঁচল পেতে রয়েছেন
তাঁর সন্তানেরে কোলে তুলে নেয়ার অপেক্ষায়! কতোদিন পর গ্রামে ফেরা...

ট্রেন চলছে...
যুবতী মায়ের কপালের কাছে একগুচ্ছ চুল, বাতাসে অবাধ্য!
বার বার সেগুলোকে উপরে ঠেলে সরানোর বৃথা চেষ্টায়
এদিক ওদিক মুখ ঘোরানো!
চোখে চোখ! দৃষ্টি যেন ধারালো ছুড়ি! মেয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে
কিছু বললো সে- ওমনি প্রজাপতি তাকালো আমার দিকে। ইতস্ত মা
জানালায় হাত তুলে দূরে কিছু দেখালেন মেয়েকে,
সেটা যে আমার থেকে প্রজাপতিকে ফেরানোর কৌশল...
বুঝতে বাকি রইলো না! প্রজাপতি
মায়ের চোখে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো, সাথে
মায়ের ঠোঁট দুটো ঈদের চাঁদের মতো বাঁকা হয়ে দ্রুত স্বাভবেক হলো।
প্রজাপতি ব্যস্ত হলো দূরে মা যা দেখাতে চাইছেন...দেখতে!
কিন্তু তার চঞ্চল চোখজোড়া সহসা ফিরে এলো আমাতে!



ট্রেন চলছে...
মা-মেয়ে আড়চোখে ঘুরে ফিরে দেখছে আমাকে। হাসছে...
ফিসফিস করে কথাও বলছে নিজেদের মধ্যে। আমি ভীষণ বিব্রত বোধ করছি..
অস্বস্তি যেন মাদুর পেতে বসেছে আমার মাঝে...
বাসা থেকে বের হবার আগে অভ্যেস মতোই নিজেকে
দেখে নিয়েছি আয়নায়। অসংগতির কিছুই ছিলো না তখন
ষ্টেশনে পৌছার আগে পথে কোন বিপত্তি ঘটেনি,
টিকিট তো ন’দিন আগেরই কাটা ছিলো
কোন অনাকাংখিত ভীড় ঠেলতে হয়নি... তবে...!

পাশের যাত্রী আমার কাঁধে মাথা রেখে নাক ডেকে যাচ্ছে অ-বিরত,
না জানি কতো রাত ঘুমোয়নি বেচারা! সেটা
দেখেই কি অমন হাসছে মা-মেয়ে?
লোকটাকে আমার জাগাতে ইচ্ছে করলো না।
প্রজাপতি আবারও আমার দিকে তাকিয়ে ফিক্ করে হেসে ফেললো-
আমি জিজ্ঞেস করলাম-“কি নাম তোমার?”
সে নাম না বলে জিভ দেখালো- মা বললেন “আঙ্কেলকে নাম বলো!”
-চৈতি, চৈতালী রয়!

ট্রেন চলছে...
চৈতির সাথে ভাব হয়ে গেলো, মাকে ছেড়ে আমার-
কোলে এসে বসলো সে, এখনো স্কুলে যেতে শুরু করেনি, অথচ
বাংলা-ইংরেজী মিলে অনেকগুলো ছড়া তার মুখস্ত! স্পীকারে ঘোষণা হলো-
সম্মানীত যাত্রী সাধরণ........আমরা ময়মনসিংহ জংশনে......
আমার কাধে মাথা রাখা যাত্রীর ঘুম ভেংগে গেলো, সে..  ওপাশের ষাটোর্ধ
নামার জন্য ব্যধিব্যাস্ত! তারা উঠে দাঁড়াতেই যায়গা অন্য-দখল।
এই ফাঁকে চৈতি কোল থেকে আমার পাশেই জানালায় বসে গেলো।
ট্রেন থামলো ময়মনসিংহ ষ্টেশনে।
যাত্রি-কুলিদের ওঠামানা...হুড়োহুড়ি...
হকারের চিৎকার...বাদাম_বাদাম! এই...আইস-ক্রিম!
আমড়া_আমড়া_এই বরিশালের আমড়া! ছিল্যা-কাইট্টা লবন লাগাইয়া দেই!
এই আমড়া_আমড়া
-আঙ্কেল! আমি আমড়া খাবো!
মা ধমকালেন-“চৈ-তি! ভারি অসভ্য হয়েছিস! দাঁড়া, তোকে আমড়া খাওয়াচ্ছি! আয়... এদিকে আয়”
চৈতি আমাকে আকড়ে ধরলো তার কোমল হতে...
মেয়ের দিকে হেলে পড়লেন যুবতী মা কিন্তু মেয়েকে ছোঁয়ার আগেই...বুকের বসন স্থানান্তর হলো তার, মুর্হূতে কয়েক জোড়া চোখ...নিজেকে দ্রুত সামলালেন!
-আয়! আমড়া কিনে দিচ্ছি আমি...
-না না, আপনি দেবেন কেন? ও তো আমার কাছে চেয়েছে! আমি দিচ্ছি!
আমড়াওয়ালার সে...কি আগ্রহ! জানালার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো সে কাটা আমড়ায় লবন ছিটিয়ে চৈতির হাতে দিলো। বললাম
-আরো দুটো দাও!
-না না, আমি আমড়া খাই না! প্লিজ....
চৈতি বললো-
-আর একটা লবন ছাড়া দাও! আঙ্কেল এটা তুমি খাও! আমি লবন দিয়ে খেতে পারি না।
অগ্যতা লবন আমার...
নারীকন্ঠ স্পীকারে বেজে উঠলো...সম্মানীত যাত্রীবৃন্দ ঈদ মোবারক! আমরা এখন জামালপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবো...

ট্রেন চলছে...
শহরের কোলাহল ছেড়ে শান্ত-নিবিড় শ্যামল প্রান্তর ছুঁয়ে
আঁকাবাঁকা সমান্তরাল! মাথাটা ঝি ঝি করছে...চোখে ঘুম জড়িয়ে আসছে...
আর কিছু মনে নেই...
যখন জ্ঞান ফিরলো, মনে হলো-
আমি একটি হাসপাতালে...একজন নার্স আমার দিকে ডেবডেব করে তাকিয়ে ছিলো।
তাকে জিজ্ঞেস করলাম-“আমি কোথায়”!
-এটা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
-আমি তো আন্তনগর ট্রেন তিস্তা এক্সপ্রেসে ঈদ করতে বা..ড়ি,
মানে...লালমনিরহাটে যাচ্ছিলাম! এখানে এলাম কী..করে..?
-তা তো আমি জানিনা!
-আমার লাগেজপত্তর! টাকা-পয়সা...মোবাইল?
কিচ্ছু নেই!
পড়নের প্যান্ট-ছেড়া এবং নোংড়া, শার্ট নেই! গায়ের নীল গেঞ্জিটা কার জানিনা!  
-আজ কতো তারিখ?
-এগারো জুলাই!
হিসেব করলাম ঈদ হয়ে গেছে সাত জুলাই... মানে চারদিন আগে!
-একটা ফোন করা যাবে?
না জানি বাড়ির অবস্থা কি! উত্তরায় একটা খবর দেয়া দরকার।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮৪৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৩/০৭/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • পরশ ১৭/০৭/২০১৬
    ভাল
  • মোনালিসা ১৬/০৭/২০১৬
    ভাল
  • প্রিয় ১৫/০৭/২০১৬
    এটা প্রথমে তো কবিতা ছিল,গল্প কী করে হয়ে গেলো?আপনি তো দেখছি বেশ জাদুকর!
    • শ.ম. শহীদ ০২/০৯/২০১৭
      প্রতিটা কবিতাই একটি গল্প।
      আর মাথামন্ডু ছাড়া আধুনিক কবিতা তো...
      • প্রিয় ০৫/০৯/২০১৭
        ''প্রতিটি কবিতাই একটি গল্প।''--একথা মানতে পারলাম না কবি বন্ধু!কবিতা ও গল্প সাহিত্যের দুটি আলাদা আলাদা বিভাগ।
        ''আমার লিখন ফুটে পথধারে
        ক্ষণিক কালের ফুলে,
        চলিতে চলিতে দেখে যারা তারে
        চলিতে চলিতে ভুলে॥''---এটাকে কী ভাবে গল্প বলা যায় আমাকে একটু বলবেন????
        • শ.ম. শহীদ ০৫/০৯/২০১৭
          ওটা সহজ ভাবে বলা। আধুনিক নামের সব কবিতাকে আমি কবিতা বলে মানতে পারিনা। বিশেষ করে কবিতার আসরে অনেকেই যারা আধুনিক লেখেন। গদ্য-পদ্যের বিভেদ সেখানে নির্ণয় করা অনেক সময়ই অসাধ্য লাগে।
          গদ্যের অনেক বাক্য আছে শব্দকে এপাশ ওপাশ করে দিলেই পদ্য হয়ে যায় অথবা দু-চারটে শব্দ বাদ অথবা জুড়ে দিলে।
          সে যাই হোক। এটাকে আবৃত্তি করলে কবিতা আর সোজাসাপ্টা পড়ে গেলে গল্প। টু-ইন-ওয়ান! হা হা হা।

          আন্তরিক ধন্যবাদ আর ভালোবাসা আপনার জন্য।
  • পড়েছি।
  • পরশ ১৪/০৭/২০১৬
    খুব ভাল
  • পরশ ১৪/০৭/২০১৬
    দারুন
  • মোনালিসা ১৪/০৭/২০১৬
    সত্য
  • মোনালিসা ১৪/০৭/২০১৬
    ভাল
  • কষ্টের ফেরিওলা ১৪/০৭/২০১৬
    দারুন 👌
  • দারুণ অভিজ্ঞতার ছোট গল্প
 
Quantcast